
বিদেশি মুদ্রার সংকটে অনেক ক্ষেত্রেই কৃচ্ছসাধন করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। উন্নয়ন কর্মকান্ড কমিয়ে আনার পাশাপাশি আমদানিও সীমিত করা হয়েছে। তারপরও জরুরি ও প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। ব্যয়ের চাপ সামাল দিতে উন্নয়ন সহযোগীসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে যখন বিদেশি ঋণের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তখন উল্টো চিত্র দেখা দিয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে। এমনকি ঋণের প্রতিশ্রুতি আরও বেশি কমেছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করবে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ৩৭৮ কোটি ডলার। অথচ ২০২১-২২ অর্থ বছরের একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছিল ৪১৭ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমেছে ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। প্রায় ৩৯ কোটি ৫৩ লাখ ডলার অর্থছাড় কমেছে।
অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার বড় অবমূল্যায়নের কারণে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রেও চাপে পড়েছে সরকার। আগের চেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ১০৫ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের সমপরিমাণ ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১০৪ কোটি ৩ লাখ ডলার। ডলারে পরিশোধের পরিমাণ মাত্র ১ কোটির একটু বেশি হলেও টাকার হিসেবে পরিমাণটি তুলনামূলক বেশি। ডলারের দাম বাড়ায় ১ হাজার ২৬১ কোটির বেশি টাকা খরচ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এ খাতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার ১৪০ কোটি টাকা টাকার বেশি। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ৮ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকার বেশি। উল্লেখ্য বর্তমানে প্রতি ডলার ১০৭ টাকা এবং গত বছর একই সময় ৮৬ টাকার কাছাকাছি ছিল।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগী দেশ জাপান। দেশটি ৯২ কোটি ১৬ লাখ ডলার অর্থছাড় করেছে। এরপরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অর্থছাড় করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), ৫৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। বিশ^ব্যাংকের আইডিএ প্রোগ্রামের আওতায় অর্থছাড় হয়েছে ৫৪ কোটি ডলারের বেশি। চীন থেকে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার, রাশিয়া থেকে ৪৩ কোটি ৯৮ লাখ ডলার, ভারত থেকে ১৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার ও অন্য সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থছাড় হয়েছে ৩৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার।
এ ছয় মাসে ঋণচুক্তির পরিমাণও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত ১৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলারের ঋণচুক্তি হয়েছে। যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে ঋণচুক্তি হয়েছিল প্রায় ৪৪০ কোটি ডলারের। এক বছরের ব্যবধানে ঋণচুক্তির হার কমেছে অর্থাৎ ৫৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ৩৮ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করলেও এবার করেছে মাত্র ৩৪ লাখ ডলারের। বিশ^ব্যাংক গত বছর ছয় মাসে ৫০ কোটির চুক্তি করলেও এবার করেছে মাত্র ৩০ কোটি ডলারের। মধ্যপ্রাচ্য থেকে কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এখনো ঋণচুক্তিতে এগিয়ে আসেনি। তবে যথারীতি এডিবি ঋণচুক্তি করে যাচ্ছে। এ বছর সংস্থাটি ঋণচুক্তি করেছে ৮৩ কোটি ৮২ লাখ ডলারের, এর আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ৮১ কোটি ৯২ লাখ ডলার। ইউরোপীয় ইউনিয়নের উন্নয়ন সহযোগীরাও এবার ঋণচুক্তি কম করেছে। এ সময় ইইউ থেকে চুক্তি হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৩ লাখ ডলারের, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৯১ কোটি ৪১ লাখ ডলার। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়েছে ২৫ কোটি ডলারের, আগের বছর তা ছিল ১৭৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
ঋণ চুক্তির পরিমাণ কমলেও এ সময়ে ঋণচুক্তির অপেক্ষায় আলোচনায় বা পাইপলাইনে রয়েছে ৯৭২ কোটি ডলার। সবচেয়ে বেশি আসবে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান থেকে ২৫৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার, বিশ^ব্যাংক থেকে ২৩৫ কোটি ২০ লাখ ডলার, এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে আসবে ১৭৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ পেয়েছিল বাংলাদেশ, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। আড়াই বছরের করোনা মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চাপে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দিতে কম সুদের বিশাল অঙ্কের এই ঋণ বেশ অবদান রেখেছিল।
কিন্তু সেই জোয়ার আর নেই। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভের অন্যতম উৎস বিদেশি ঋণপ্রবাহে ভাটা পড়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে ঋণ-সহায়তা ধীরে ধীরে কমছে।
নগদ টাকার ব্যবহার শূন্যে আনতে সপ্তাহখানেক আগে যাত্রা শুরু করেছিল ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’। সার্বজনীন ডিজিটাল লেনদেন করতে সম্প্রতি চালু হয়েছে বাংলা কিউআর কোড। এক কিউআর কোডের মাধ্যমেই সব ধরনের গ্রাহক মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর মতিঝিলের ফুটপাতের ফল বিক্রেতা, চা দোকান, মুচি-মুদি ও হোটেলসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মার্চেন্ট ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ১০ দিন না যেতেই কিউআর কোড ব্যবহারে অনীহা দেখা গেছে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে। ব্যবসায়ীদের হিসাব খুলে দেওয়া হলেও লেনদেনের অবস্থা একেবারেই নগণ্য। বেশিরভাগ ক্রেতাই কিউআর কোডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করছেন না বলেও জানিয়েছেন কয়েকজন দোকানি। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর তদারকি বা প্রচারণাও তেমন লক্ষ করা যাচ্ছে না। এতে বাংলা কিউআর কোডের মাধ্যমে সার্বজনীন ডিজিটাল লেনদেনের প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
‘সার্বজনীন পরিশোধ সেবায় নিশ্চিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ’ সেøাগানকে সামনে রেখে গত ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর মতিঝিল এলাকার ১ হাজার ২০০ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে কিউআর কোড সরবরাহ করা হয়। গতকাল রবিবার দেখা গেছে, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের মধ্যে কিউআর কোড ব্যবহারে আগ্রহ নেই। এখনো টাকায় লেনদেন করছেন। বিষয়টি না বোঝায় বেশিরভাগ ব্যবসায়ী সরবরাহ করা কিউআর কোড রাখছেন চোখের আড়ালে। বিক্রেতারা বলছেন, যেকোনো পণ্য কিনতেই তাদের নগদ অর্থ ব্যবহার করতে হচ্ছে। কেউ অনলাইনে পরিশোধ করলে টাকা তোলা নিয়ে তাদের বাড়তি ঝামেলায় পড়তে হয়। যে কারণে নগদ অর্থ বিনিময়েই আগ্রহ। আবার কেউ কেউ বলছেন, এ পদ্ধতি ভালো। এতে নগদ টাকার ঝামেলা নেই।
মতিঝিল এলাকার এসব দোকানের ক্রেতারা বলছেন, এমন মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করা বাড়তি ঝামেলা। মোবাইল ফোনে ক্যাশ ইন করব, দোকানি চেক করে দেখবে এতে সময়ের প্রয়োজন। আবার দোকানিরাও বুঝছেন না কিউআর কোড কী। এতে নগদ টাকাই ভরসা রাখছি।
কথা হয় জুতা সেলাইয়ের কাজ করা রাকেশ রিশির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ক্যাশলেস লেনদেনের জন্য কিউআর কোডে মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে, এটা ভালো দিক। তবে এ মাধ্যমে লেনদেনের ঝামেলাও আছে। সবাই এর সঙ্গে পরিচিত না। আবার আমাকে আপনি টাকা দেবেন কিন্তু এক হাজার কম হলে আমি বুথ থেকে ওঠাতে পারব না। এতে আমার এক হাজার টাকা পড়ে থাকবে, আবার ওঠাতে গিয়েও ৯ টাকা কাটবে। আমার কাস্টমারের জন্য দুই মাধ্যমই আছে। নগদ টাকাও দিতে পারেন আবার চাইলে ক্যাশলেস লেনদেনও করতে পারেন। কিন্তু ১০ জনের ৯ জনই বুঝতে পারছেন না এ লেনদেনের ব্যাপারে, তাই আগ্রহ নেই তাদের।’
কথা হয় ক্ষুদ্র দোকানি শেফালী দাশের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কিউআর কোডে আগ্রহ নেই মানুষের। ১০ দিন হলেও এখন পর্যন্ত ৩৯৫ টাকা লেনদেন হয়েছে মাত্র। তাও প্রথম দিন হিসাব খুলে দেওয়ার সময় ব্যাংকের লোকজনই করেছে।’
ফুটপাতে কাপড় বিক্রেতা হাবিব, জুতো বিক্রেতা আবুল কালাম আজাদ, কাপড় বিক্রেতা আবদুল খালেক, খেজুর বিক্রেতা সালমান রাজুসহ কয়েকজন জানান, ক্রেতাদের বলেছেন এ মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে কিন্তু ৪০-৫০ টাকার বিল কেউ মোবাইল মাধ্যমে পরিশোধ করতে চায় না। সবাই নগদ টাকা দিতে চায়।
বিক্রেতাদের মতো একই অভিজ্ঞতা ক্রেতাদেরও। মতিঝিলে অফিস থেকে ফেরার সময় ফল কিনতে এসেছিলেন রাফসান আহমেদ। তিনি ফল কেনার পর কিউআর কোডের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ না করে নগদ টাকা দিলেন বিক্রেতাকে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো চলতি পথে এটা কিনেছি। দাঁড়ানোর বাড়তি সময় নেই। পছন্দ না হলেও এ ক্রেতার কাছে কিনতাম না।’ সুলাইমান নামে অন্য এক ক্রেতা বলেন, ‘আমি দাম পরিশোধ করব কীভাবে সেটাই বুঝছি না। দোকানিও আমাকে বোঝাতে পারছে না। আমার কাছে নগদ টাকাই আস্থা বেশি।’
এ নিয়ে কথা হয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে কিউআর কোডের মাধ্যমে লেনদেনের ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছি না। দোকানির বুঝতে সমস্যা হচ্ছে আবার ক্রেতার আগ্রহ কম। তবে লেনদেনের ডিজিটাল এ উদ্যোগটি ভালো ছিল সবার জন্য। এতে নগদ টাকার ওপরে চাপ কমে আসবে।’
নগদ লেনদেনবিহীন বাংলাদেশ বা ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার যাত্রা শুরুর ১০ দিনেই কিউআর কোডগুলো উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার যাত্রা শুরু হয়েছে। প্রথম দিকে কোনো মাধ্যমই জনপ্রিয়তা পায় না। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে যাত্রা ২০১১ সালের দিকে হলেও জনপ্রিয়তা আসে ২০১৮-তে। এটিও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হবে।’ তবে ব্যাংকগুলো তদারকির অভাব ও প্রচারণা কম হওয়ায় অনাগ্রহের কারণ হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
মেজবাউল হক আরও বলেন, ‘পণ্য বা সেবামূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে নগদ অর্থ, কার্ড বা চেক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নগদ অর্থে পরিশোধ ঝুঁকিপূর্ণ, চেক পরিশোধ সময়সাপেক্ষ, জটিল। কিউআর কোড ব্যবহারে ১০ টাকাও ট্রান্সফার করা যায়। এতে বাড়তি টাকা কেউ নিতে পারবে না বা নেওয়া হচ্ছে না। সবাইকে এ নিয়ে আরও সচেতন করতে হবে। সবাই মিলে সচেতন করতে পারলেই এটিও জনপ্রিয়তা পাবে। এখানে আরও ব্যাংকের সংযুক্ত করতে চাই। আমরা আগামীতে আরও কয়েকটি জেলা শহরকে যুক্ত করব।’
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। চুরি হওয়া এই অর্থ উদ্ধারে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্টে চলমান মামলা অগ্রগতি ও অর্থ উদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা করতে ফিলিপাইনে অবস্থান করছে বাংলাদেশের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল। সেখানে কোর্টের আদেশ অনুযায়ী, বাদীপক্ষ (বাংলাদেশ) ও আসামিপক্ষের মধ্যে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র।
সূত্র বলছে, এই সফরে অর্থ উদ্ধারে অগ্রগতি বিষয়ে ফিলিপাইনের আইন বিভাগ, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগসহ বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করবেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল। যার নেতৃত্ব দেওয়ার কথা রয়েছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসের। এজন্য গতকাল রবিবার ফিলিপাইনে পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। এর আগে গত শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, বিএফআইইউ ও সিআইডির দুজন করে কর্মকর্তা দেশটিতে গিয়েছেন বলেও নিশ্চিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া ফিলিপাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাদের সঙ্গে সেখানে যোগ দেবেন। প্রতিনিধিদল ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবে। এ সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা ছাড়াও ফিলিপাইনের মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠান ফিলরেমের সম্পত্তি ক্রোকের এক মামলায় সাক্ষ্য দেবে। মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্সের আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আবেদনের বিষয়ে এ শুনানি হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, মামলাসংক্রান্ত বিষয়গুলোর দেখভাল করছেন বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। নতুন কোনো সংবাদ থাকলে জানানো হবে। তবে প্রতিনিধিদল ফিলিপাইন গিয়েছে নিশ্চিত করেন তিনি।
গত ১৩ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির মামলা চলতে বাধা নেই মর্মে রায় দেয় নিউইয়র্ক সুপ্রিম কোর্ট। ওই রায়ে ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আরসিবিসিসহ অন্যদের সমঝোতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্ট। কিন্তু গত ২০ জানুয়ারি ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি) রায়ের বিরুদ্ধে ‘মোশন টু ডিসমিস’ বা মামলা না চালানোর জন্য আপিল করে। তবে কোর্টের পক্ষ থেকে সমঝোতার জন্য দুই পক্ষকে নির্দেশ দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল আসামিপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করতে ফিলিপাইন সফরে গিয়েছেন।
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। টাকা হাতিয়ে নিতে হ্যাকাররা আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা সুইফটে অর্থ স্থানান্তরের ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠান। এর মধ্যে মাত্র দুই কোটি ডলার উদ্ধার করা হয় শ্রীলঙ্কা থেকে। পরে ফিলিপাইনে নেওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে ক্যাসিনো মালিক কিম অং দেড় কোটি ডলার ফেরত দেয়। আর বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে চলে যায়, যা এখনো ফেরত পায়নি বাংলাদেশ। এ ঘটনার পর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক আরসিবিসি ও নিজেদের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দায়ী করে আসছে। তবে ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল ব্যাংক শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নবনির্মিত রাজস্ব ভবন আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল রবিবার এনবিআরের সম্মেলন কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভাগ থেকে প্রতিষ্ঠানটির কাছে রাজস্ব ভবনটি হাস্তান্তর করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। উপস্থিত ছিলেন প্রকল্প পরিচালক ও কর কমিশনার মো. লুৎফুল আজীম এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্যসহ অন্য কর্মকর্তারা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষে প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মঞ্জুরুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ১২ তলার রাজস্ব ভবনটি আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনটি উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে হবে রাজস্ব সম্মেলন।
জাপানের রাষ্ট্রদূত আইওয়ামা কিমিনোরি বলেছেন, জাপান সরকার বাংলাদেশকে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আগামী ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
গতকাল রবিবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির অফিসে তার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন ঢাকায় নবনিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, জাপানের অনেক বিনিয়োগ আছে এখানে, বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়াতে আগ্রহী। ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (ইপিএ) স্বাক্ষরের জন্য করণীয় ঠিক করতে সরকারি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করছে জাপান।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের বড় উন্নয়ন সহযোগী। জাপানও এখানে বিনিয়োগ করেছে। জাপানের কাছ থেকে আরও বড় ধরনের বিনিয়োগ আশা করে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জাপানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ও দক্ষ নেগোসিয়েশনের সুবিধার্থে একটি জয়েন্ট স্টাডি গ্রুপ কাজ করার জন্য প্রস্তুত। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর এফটিএ বা পিটিএর মতো বাণিজ্য সহযোগিতা চুক্তি করে উভয় দেশের ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য কাজ করা হবে।
এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) নূর মো. মাহবুবুল হক উপস্থিত ছিলেন।
পরে টিপু মুনশি জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নবনির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এর আগে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনকে লাইসেন্স হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে সরকার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় ব্যবসায়ীদের। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেনাপোল, হিলি ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে গত সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। ট্রান্সপোর্ট খরচ, ট্যাক্স পরিশোধ ও লেবার খরচসহ আমদানিকরদের হাতে ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা। যা ভারতের বাজারে ১৪-১৫ রুপি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে এখানেও মধ্যস্বত্বভোগীর কারসাজি রয়েছে। দেশি পেঁয়াজের মতো কয়েক হাত ঘুরে অস্বাভাবিক দামে ২৭ টাকার পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকায়। তবে আমদানি করা পেঁয়াজ এখনো খুচরা বাজারে পৌঁছায়নি।
গতকাল মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়। প্রথম দিনে ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। গতকাল দ্বিতীয় দিন শেষে আইপি বা আমদানি অনুমোদনের পরিমাণ ৪ লাখ ৩৩ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।
দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। চলতি বছর পেঁয়াজের নিট উৎপাদন ধরা হচ্ছে ২৪ লাখ ৫৩ হাজার টন। ফলে বাকি পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৬৫ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। গতকাল কৃষি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থলবন্দর হয়ে ১ হাজার ২৮৮ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে।
চলতি বছর পেঁয়াজের দর রোজার ঈদের পর থেকেই বাড়তে শুরু করেছিল। এক মাসের ব্যবধানে তা ৩০ থেকে ৮০ টাকায় উঠে যায়। গত কয়েক দিন ধরে ১০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছিল।
কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে এতদিন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি কৃষি মন্ত্রণালয় না দিলেও পরিস্থিতি দেখে রবিবার সায় দেয়। পরদিনই পাইকারি বাজারে এর প্রভাব দেখা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আসা শুরু হলে পাইকারিতে দাম কমে যায় এক ধাক্কায় ৩০ টাকা। প্রতি কেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য এখন ৪৫ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয় বলে সরকার মনে করে। আর প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে যে পেঁয়াজ দেশে এসেছে, সেগুলো কেনা প্রতি কেজি ২১ থেকে ২২ টাকার মধ্যে ছিল বলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সব খরচ মিলিয়ে বন্দর পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের ক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ২৭ টাকায়। আমদানিকারকরা কেজিপ্রতি ২ টাকা লাভে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ২৯ টাকায় বিক্রি করছেন। স্থানীয়রা আরও ৫ টাকা লাভে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ঢাকার পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন ৩৪ টাকায়। ঢাকার পাইকাররা শ্যামবাজারে সেই পেঁয়াজ বিক্রি করেন ৫০-৫৬ টাকায়। শ্যামবাজার ব্যবসায়ীর হাতবদল হয়ে কারওয়ান বাজার পাইকারি মার্কেটে এসে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা করে।
ভোমরা স্থলবন্দরের আমদানিকারক আমির হামজা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারতীয় বাজার থেকে ১৪-১৫ রুপিতে কিনে সব খরচসহ বন্দর পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৭ টাকা। কেজিতে ২ টাকা লাভে ভোমরা স্থলবন্দরের স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ২৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
হিলির বন্দর এলাকার আরেক ব্যবসায়ী আহমেদ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মূলত আমদানিকারকদের থেকে আমরা পেঁয়াজ কিনে থাকি। আমাদের কাছ থেকে ঢাকার ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ সংগ্রহ করেন। কেজিপ্রতি ৩১-৩২ টাকা আমাদের কেনা পড়ে। ঘরভাড়া, লেবার খরচসহ প্রতি কেজি পেঁয়াজে সামান্য লাভ করে ৩৪-৩৫ টাকা বিক্রি করতে হয়। এর নিচে বিক্রি করলে আমাদের ৭০-৮০ পয়সার মতো লোকসান হয়।’
গতকাল রাজধানীর শ্যামবাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ বাছাই করে দুই ভাগে বিক্রি করছেন শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা। আকারে কিছুটা ছোট পেঁয়াজের কেজি ৪০-৪৫ ও ভালো মানের পেঁঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৬ টাকায়।
শ্যামবাজারের মেসার্স নিউ সেবা এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার শেখর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আজই (গতকাল) আমদানি করা পেঁয়াজের চালান শ্যামবাজারে এসেছে। হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী ভারতীয় পেঁয়াজ পেলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ী আমদানি করা এসব পেঁয়াজ পাননি। বেশ কিছু পেঁয়াজ ট্রাকে পচে যাওয়ায় দুই ভাগে তা বিক্রি হয়েছে। তুলনামূলক ভালো প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪০-৪৫ ও ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৬ টাকা করে।’
জানতে চাইলে শ্যামবাজার পেঁয়াজ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি মোহাম্মদ মাজেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে ভারতের বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৫ রুপিতে। সেই হিসাবে সব খরচ মিলিয়ে আমাদের দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে ৩৫-৩৬ টাকায় ভোক্তারা কিনতে পারবেন। তবে এ পেঁয়াজ কেন ৫০ টাকার ওপর বিক্রি হচ্ছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’
এদিকে ভারত থেকে আসা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৬০ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা গেছে কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের। পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ময়না মিঞা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভারতীয় পেঁয়াজ দেশের বাজারে আসায় আমাদের অনেক লস হয়েছে। আগের কেনা দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা করে লস দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আমদানি করা যেসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তা শ্যামবাজার থেকে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। মার্কেটে ক্রেতা না থাকায় সব খরচ মিলিয়ে প্রতি কেজিতে ২ টাকা লাভ করতেও এখন কষ্ট হচ্ছে।’
এদিকে খুচরা বাজারগুলোতে খবর নিয়ে জানা যায়, এখনো ভারত থেকে আসা আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে প্রবেশ করেনি। আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে না এলেও দেশি পেঁয়াজের দামে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা দরে। যা গত তিন দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১০০-১০৫ টাকায়।
এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ আসায় স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের দাম কমেছে বলে জানান দিনাজপুর ও সাতক্ষীরা প্রতিনিধি। তাদের তথ্যমতে, সোমবার বিকেলে ভোমরা বন্দর দিয়ে ২৮৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও ৫০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
অন্যদিকে হাকিমপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের হিলি বন্দর দিয়ে গত দুদিনে ১৬ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা দরে। আর দেশি পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে খরচ বাড়ছে। কোনো যাত্রী আকাশপথে ভ্রমণ করলেই তাকে দিতে হবে ২০০ টাকার কর। একই সঙ্গে বিদেশগামী বিমানযাত্রীদের কর ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাজেট উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এদিকে পর্যটন খাত ও বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
পর্যটন খাত : অর্থমন্ত্রীর তার
বক্তৃতায় বলেন, ডলার সাশ্রয়ের জন্য অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ হ্রাস করা, কৃচ্ছ্রতার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নতুন রাজস্ব আয়ের খাত তৈরি করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ কর ৬৭ শতাংশ বাড়িয়ে ২ হাজার, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার এবং অন্যান্য দেশে ৫০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে।
পর্যটন খাত নিয়ে ব্যাপক পরিকল্পনা : অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় আরও বলেছেন, পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের আবাসন ও বিনোদন সুবিধা নিয়ে কক্সবাজার জেলায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, নাফ ট্যুরিজম পার্ক এবং সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় দেশের পর্যটনশিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে এ শিল্পকে সহায়তা করার জন্য সরকার ১ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছে। বাংলাদেশে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে উন্নয়নে সরকারি অর্থায়নে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে একটি পর্যটন মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যটনের উন্নয়ন ও বিকাশের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ৩৬টি জেলার পর্যটন ব্র্যান্ডিং অনুসারে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার পর্যটন এলাকার ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো সংরক্ষণে এবং পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিষয়ে ডকুমেন্টারি ও টেলিভিশন কমার্শিয়াল প্রস্তুত করা হচ্ছে।
বিমানবহর সম্প্রসারণ ও বিমানবন্দর উন্নয়ন : অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, সরকার দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিমান পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আকাশপথে যাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় চলতি বছরে মালদ্বীপ ও কানাডার টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের
তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বর্তমানে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই কাজ চলছে। কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার লক্ষ্যে রানওয়ে সম্প্রসারণ ও নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করে সেখানে একটি আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া দেশের অন্যান্য অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবকাঠামো, রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে, হ্যাঙ্গার ও আমদানি-রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণের শেডগুলো সংস্কার ও উন্নয়নসাধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।