
ডলার সংকট, আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পারাসহ বিশে^ উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই বাংলাদেশের রপ্তানি আয় আবারও ৫০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধিতে ভর করে নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫১৩ কোটি ডলার। এ নিয়ে টানা তিন মাস দেশের রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলার ছাড়াল। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিদেশি মুদ্রা নিয়ে চরম সংকটের মধ্যে দেশের রপ্তানি আয় নিয়ে এমন সুখবর এলো। জানুয়ারিতে প্রবাসী আয়েও ভালো প্রবৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশ। এর ফলে বিদেশি মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই খাতে প্রবৃদ্ধি থাকায় কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসছে। এতে করে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপও কমবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ইপিবি জানুয়ারি মাসের রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, গত জানুয়ারি মাসে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসের তুলনায় ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ৩ লাখ ৩৪ হাজার ২০৯ কোটি টাকার সমান। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি।
ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে তৈরি শোক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়াবিহীন জুতা, প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। তবে এ সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল এবং হিমায়িত খাদ্যের রপ্তানি কমেছে।
২০২২ সালের বিশে^ করোনার প্রাদুর্ভাব কমে আসতে না আসতেই ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়। সব দেশে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ কমতে থাকে। এ সময় বিশে^ জ¦ালানির দাম বাড়তে থাকায় বাংলাদেশেও দফায় দফায় দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে সরকারের কৃচ্ছ্র সাধনের কারণে দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। লোডশেডিংয়ের কারণে দিনের একটি বড় সময় উৎপাদন ব্যাহত হয়। আর গ্যাসের অভাবে ১২ ঘণ্টা উৎপাদন বন্ধ ছিল শিল্পকারখানায়। বিদ্যুতের সমস্যার কিছুটা সমাধান হলেও এখনো দেশজুড়ে গ্যাসের সংকট রয়ে গেছে। এতে করে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হয়, উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যায়। এসব সংকটের মধ্যেই রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে, অর্থাৎ জুলাই-আগস্টে ৮৫৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। প্রবৃদ্ধি ছিল ২৫ শতাংশ। যদিও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। অক্টোবরে রপ্তানি ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে নভেম্বরে আবার ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরে রপ্তানি। ডিসেম্বরে রপ্তানি হয় ৫৩৭ কোটি ডলারের পণ্য। এটিই দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি।
ইপিবির প্রকাশ করা তথ্যে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ২ হাজার ৭৪১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। আলোচ্য সময়ে নিট পোশাকের রপ্তানিতে ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ওভেন পোশাকে ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ সময়ে নিটওয়্যার পণ্য রপ্তানি ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর ওভেন পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ২৪৫ কোটি ডলার। উভয় ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে যথাক্রমে ১২ দশমিক ৭ এবং ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে পোশাক পণ্য রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৪২ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি।
তৈরি পোশাকের বাইরে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ৭৩ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৬৯ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ কম। আবার ৫৫ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হলেও তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ কম।
রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে বিদেশি ঋণ ও ব্যাংক ব্যবস্থার পাশপাশি সঞ্চয়পত্র থেকেও ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। কিন্তু সুদের হার কমাসহ নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। সে কারণে উন্নয়ন কর্মকা-সহ অন্যান্য খরচ মেটাতে এ খাত থেকে কোনো ঋণ নিতে পারছে না সরকার। উল্টো আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ করছে সরকার। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
তথ্য মতে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) যত টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। উল্টো ৩ হাজার ১০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা সরকার তার কোষাগার ও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমে যাওয়ায় সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হতে হবে। এতে করে ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
সদ্য সমাপ্ত বছরের শেষ ডিসেম্বরে সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৫ হাজার ৫৪২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এ সময় আগের বিক্রয়কৃত সঞ্চয়পত্রের মূল বাবদ পরিশোধ করা হয় ৩ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা ও সুদ বাবদ ৩ হাজার ৭৯৯ কোটি টাকা পরিশোধ করে। অর্থাৎ ডিসেম্বরে সরকার আসল ও সুদসহ মোট ৭ হাজার ৩৩ কোটি টাকা পরিশোধ করে। এতে শুধু ডিসেম্বরেই সঞ্চয়পত্র থেকে টাকা সংগ্রহের পরিবর্তে উল্টো ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা কোষাগার কিংবা ধার করে পরিশোধ করেছে সরকার। এর আগের মাস নভেম্বরেও সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সংগ্রহ করা অর্থের চেয়ে ৯৭৮ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছিল।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের অক্টোবরেও সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি তো হয়ইনি; বরং উল্টো ৯৬৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরেও সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৭০ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল। এ নিয়ে টানা চার মাস সঞ্চয়পত্রে ঋণাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তার আগের মাস আগস্টে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল মাত্র ৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৯৩ কোটি ১১ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। গত বছরের জুলাইয়ে বিক্রির অঙ্ক ছিল ২ হাজার ১০৪ কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতি মেটাতে চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এই খাত থেকে কোনো ঋণ পায়নি সরকার, উল্টো ৩ হাজার ১০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা কোষাগার ও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করেছে। এ অর্থ বছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। সেখানে প্রথম ছয় মাসে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে পূর্বের বিক্রয়কৃত সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৪৩ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা।
এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে সরকার সংগ্রহ করেছিল ২০ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা; অর্থাৎ পুরো অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের যে পরিমাণ অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার চেয়ে ৪৮৭ কোটি টাকা বেশি সংগ্রহ করা হয়ে ছিল। গত অর্থবছরে বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সরকার ২০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল। এই টাকা সরকার উন্নয়ন কর্মকা-সহ অন্যান্য খরচ করেছিল। সে কারণে ব্যাংক থেকে খুব একটা ঋণ নিতে হয়নি।
রমজান মাসকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে। যার পরিমাণ গত বছরের জানুয়ারির তুলনায় অনেক বেশি। তারপরও বিভিন্ন মাধ্যমে এলসি খোলার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন। এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সদ্য সমাপ্ত জানুয়ারি মাসে এলসি খোলার তথ্য প্রকাশ করে মুখপাত্র জানান, রমজান মাসে পাঁচটি পণ্যের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। আর বাজার স্বাভাবিক রাখতে এসব পণ্য আমদানিতে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তথ্য মতে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ টন চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এক বছর আগের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯৩ টন। সুতরাং এ বছরের জানুয়ারিতে ৫৪ হাজার ৪৪৮ টন বেশি চিনির ঋণপত্র খোলা হয়েছে।
একইভাবে ভোজ্য তেল আমদানির জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৩ টনের ঋণপত্র খোলা হয়েছে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে। কিন্তু ২০২২ সালের জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৬০ টন। এ বছর ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৬৭ টন ছোলা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলেছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। এক বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৯৬ টন। অর্থাৎ এ বছরের জানুয়ারিতে সোলার এলসি কিছুটা কমেছে। ৪২ হাজার ৫৬৩ টন পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খুললেও গত বছরের একই সময় ছিল ৩৬ হাজার ২২৬ টন। এ বছর ২৯ হাজার ৪৮২ টনের খেজুরের ঋণপত্র খোলা হয়েছে এ বছর আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ১৬ হাজার ৪৯৮ টন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যাপ্ত ডলার সহায়তা করছে বলেও দাবি করে তিনি বলেন, চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৯২০ কোটি বা ৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ইতিহাসে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত পরিমাণ ডলার বিক্রি হয়নি। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময় রিজার্ভ থেকে ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন বা ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছিল।
তিনি জানান, দেশের মধ্যে ডলারের তীব্র সংকট চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ডলারের এ সংকট কাটাতে উচ্চাভিলাষী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিতের পাশাপাশি বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও সংকট কাটছে না। এ কারণে জরুরি আমদানি দায় মেটাতেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবুও আটকে থাকছে কোটি কোটি টাকার পণ্য। ডলার সংকটে আমদানিকারকদের চাহিদা মেটাতে পারছে না অধিকাংশ ব্যাংক। এসব সমস্যার সমাধান দিতে অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ৯২০ কোটি বা ৯ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ থেকে ডলার সহায়তা দেওয়ার কারণে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ার পরও রিজার্ভ কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করেছে। ফলে দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ কমে ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে অবস্থান করছে।
মুখপাত্র আরও জানান, পণ্য পরিবহন ও সাপ্লাই নিশ্চিত করা গেলে রমজানে কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না। এ ছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধিতেও আমরা বিশেষ নজর রেখেছি। গত নভেম্বর মাস থেকে প্রতি মাসে ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময় ছিল ২৯ বিলিয়ন।
রেমিট্যান্স ও এক্সপোর্ট মিলিয়ে গত সাত মাসে আমাদের ৪৪ বিলিয়ন ডলারের আয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেজবাউল হক। কিন্তু এই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার পুরোটা হাতে এসে পৌঁছায়নি। কারণ অন্য রপ্তানি করার পর টাকা পরিশোধের জন্য ১২০ দিন সময় পেয়ে থাকেন বিদেশি আমদানিকারকরা। তবে এর বিপরীতে আমদানি বিল পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা পরিবর্তন বিষয়ে প্রশ্ন করলে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই হঠাৎ কোনো নীতিমালায় পরিবর্তন আনা যায় না। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ কভিড ও বৈশ্বিক ঋণের সুদ হারের ঊর্ধ্বগতি অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। ফলে আমরা আস্তে আস্তে সংস্কারের দিকে হাঁটছি। সংস্কারের অংশ হিসেবে ভোক্তাঋণের সুদহার ৯ থেকে ১২ শতাংশে উন্নীত করার উদাহরণ দেন তিনি। সার্বিকভাবে পণ্য আমদানিতে স্বস্তির বার্তা দিতেই আজকের এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মেজবাউল হক।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক সেহেলী সাবরীন বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকেই ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কাজ করেছে।
এরই ধারাবাহিকতায় আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকায় আসছেন। ফুটবল তারকা মেসির ঢাকা আসা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত প্রথম সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।
জ্বালানি তেলের সংকট নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সংকট মোকাবিলায় মধ্যপ্রাচ্যসহ বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এতে বাংলাদেশের জ¦ালানি খাতের চলমান সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ও জাপান সফর নিয়ে এখনো কাজ চলছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বাংলাদেশ সফর নিয়েও কাজ চলছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২০২৩ সালের ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশকে ‘অতিথি রাষ্ট্র’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
সকল কূটনীতিকের ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী রীতিনীতি মেনে চলা উচিত বলেও জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র।
ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটের প্রভাব পড়েছে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে। নানা কারণে আমানত কমে যাওয়ায় ঋণ বিতরণও কিছুটা কমেছে। গত ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশে, যা চলতি অর্থবছরের অন্য মাসগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বেসরকারি খাতে ঋণ ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু গত ছয় মাসের কোনোটিতেই সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি ব্যাংক খাত। অবশ্য গত কয়েক বছরের মধ্যে চলতি অর্থবছরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা পরবর্তী সময়ে ঋণের চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে। নতুন করে বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়ীরা। তাছাড়া ডলারের দাম বাড়ার কারণে বেশি ঋণের প্রয়োজন হচ্ছে। এতে নভেম্বরে কিছুটা বেড়েছে ঋণ প্রবৃদ্ধি। গত বছরের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ১৪ লাখ ২৬ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। এ মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তথ্যমতে এই প্রবৃদ্ধি নভেম্বরের চেয়েও কম। কারণ নভেম্বর মাসে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের করা প্রাক্কলনের চেয়েও কম। এর আগের অর্থবছর ২০২১-২০২২-এ প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। তখনো প্রাক্কলিত হারের চেয়ে কম ঋণ বিতরণ হয়েছিল।
জানা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ছাড়িয়েছিল ১১ শতাংশ। পরের মাসে ফেব্রুয়ারিতে খাতটিতে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৭২ শতাংশে। এরপরে মার্চে সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ১১ দশমিক ২৯ শতাংশে। এরপর ক্রমাগত বাড়তে থাকে ঋণ প্রবৃদ্ধি। জুলাই মাসে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশে। আগস্টে ঋণ প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশে। এর পরের মাস সেপ্টেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি আরও কমে ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। অক্টোবরে ১৩ দশমিক ৯১ ও নভেম্বরে ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে দাঁড়ায়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর থেকে এমনিতেই ঋণের চাপ বেড়েছে। কারণ, ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের মধ্যে। এজন্য অনেকেই নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াচ্ছেন। গত চার মাসে ডলারের দাম ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ফলে আমদানিকারকদের ঋণপত্রের মূল্য বেড়ে গেছে। এতে ঋণও বাড়ছে। আবার চলতি বছর আবাসন, গাড়ি ও ব্যক্তিগত ঋণও বেশ বেড়েছে। এসবের প্রভাব পড়েছে ঋণ বিতরণে।
সাধারণভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকে। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে
ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, স্টক ডিলারদের ঋণের প্রভিশনে শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে এ ধরনের ঋণের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ প্রভিশন রাখতে বলা হয়েছে। এতদিন ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারদের ব্যাংকঋণের নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) ২ শতাংশ রাখার নিয়ম ছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ বিআরপিডি এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে।
সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০১২ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং স্টক ডিলারদের ঋণের জন্য ২ শতাংশ প্রভিশন রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। তবে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ১ শতাংশ প্রভিশন সাধারণ সংরক্ষণ করতে হবে। নতুন এ নির্দেশনা আগামী ৩০ মার্চ থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।