
মো. হাবিবুর রহমান সম্প্রতি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের এমডি ও সিইও হিসেবে যোগদান করেছেন। ইতিপূর্বে তিনি ইউনিয়ন ব্যাংক এবং সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের এএমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে এনসিসি ব্যাংক এবং যমুনা ব্যাংকের ডিএমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। হাবিবুর রহমান ১৯৮৯ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে তার বর্ণাঢ্য ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। বিজ্ঞপ্তি
ঋণ-জিডিপির অনুপাত এখনো বিপৎসীমায় আসেনি। তবে বিদেশি ঋণে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো রপ্তানিনির্ভর শিল্পগুলোকে আকৃষ্ট করতে না পারলে ঋণ পরিশোধের সংকট দেখা দিতে পারে। গতকাল শনিবার ব্র্যাক সেন্টারে দুই দিনব্যাপী ৬ষ্ঠ সানেম বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, একটি মেগা প্রকল্প একবার শুরু হলে সময়মতো শেষ করা প্রয়োজন কারণ বাস্তবায়নে বিলম্ব অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, ‘মেগা প্রকল্পের সময়, আর্থিক প্রতিশ্রুতি, খরচ পুনরুদ্ধার এবং অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করা প্রয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, দেশে বৈদেশিক রিজার্ভের সংকট চলছে। এটি মোকাবিলায় আরও শক্তিশালী নীতি প্রয়োজন। দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা জোরদার করতে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার আওতা বাড়াতে হবে। এ খাতে আরও আর্থিক সংস্থান করতে হবে। তার মতে, বিদেশি ঋণ নিয়ে ভুল হিসাবের মধ্যে আছি। বর্তমান জিডিপির তুলনায় মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ যদি বিপৎসীমা অতিক্রম নাও করে, তবুও ঋণ পরিশোধের যে সম্ভাব্য সংকট তা দূর করা সম্ভব।
দেশের অর্থনীতি চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই খারাপ হতে শুরু করে। সেটির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকেই বেশি দায়ী করা হচ্ছে। তবে সম্মেলনে অংশ নেওয়া অর্থনীতিবিদরা বলেন, গত কয়েক মাস ধরে অর্থনীতির যে চাপ, তার নেপথ্যে বৈশ্বিক পরিস্থিতির চেয়ে অভ্যন্তরীণ দায়ই বেশি। রিজার্ভের সংকট সমাধান করা আমাদের মতো আমদানিনির্ভর দেশের জন্য কঠিন।
অনুষ্ঠানে ‘বিল্ডিং রেজিলেন্স টু শক: প্রসপারিটি, চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড প্রসপেক্ট’ শীর্ষক সেশনের প্যানেল আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বৈশ্বিক সমস্যাকে চিহ্নিত করা হয়, যা ঠিক নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ সংকটের কারণেই অর্থনীতি বর্তমান অবস্থায় পড়েছে। এই সমস্যা স্বীকার করে উত্তরণের জন্য কাজ করতে হবে।
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তার বক্তব্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ বড় কথা নয়; বরং দেখতে হবে, প্রবণতা কী। রিজার্ভের প্রবণতা নিচের দিকে নামতে থাকলে ঠেকানো কঠিন। দেশের রিজার্ভ একসময় ৩০০ কোটি ডলারও ছিল। তাই বলছি, পরিমাণ অনেক সময় বড় সমস্যা নয়, প্রবণতাটাই বড় কথা।’
সম্মেলনে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ঋণ দিতে এবার আইএমএফ বেশি শর্ত দেয়নি।’
তার এ বক্তব্য উদ্ধৃত করে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘অনেক দশক ধরে দেখেছি, কাগজে সই করলেই কি খেলাপি ঋণ কমে যাবে? এটা সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক ব্যাপার। খেলাপি ঋণ কমানোর শর্ত দেওয়ার মাধ্যমে আইএমএফের আমলাতন্ত্র খুশি, আমরাও খুশি।’
প্রথম সেশনে সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, ‘আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং টার্নিং পয়েন্ট। এই ঋণ পাওয়ার ফলে এখন অন্যান্য দাতা সংস্থা বাংলাদেশের ব্যাপারে আস্থা পাবে। তাদের কাছে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়া সহজ হবে।’
দেশের অর্থনীতি ঠিক করতে চারটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতিতে যেসব আঘাত এসেছে সেগুলোর কোনটিতে প্রাধান্য দেওয়া উচিত, তা খুঁজে বের করতে হবে। এ বিষয়ে সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে কাজ করবে এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক পরিম-লে এসব আঘাতের প্রভাব কেমন, তার ওপর জোর দিতে হবে।’
প্যানেল আলোচনায় সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার কোটিতে, এখন তা ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি ছাড়িয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে। অন্যদিকে কর-জিডিপি অনুপাত এখনো আগের জায়গায় রয়ে গেছে, যা বাড়াতে হবে। অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর বলেন, বর্তমান সংকটে শিক্ষা ও পুষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও কাটছাঁট করে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ। ফলে নিজে থেকেই সক্ষমতা হারাচ্ছেন তারা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশের বেশি। এসময় বেসরকারি খাতে শিক্ষাব্যবস্থার বিকাশে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
শামসুল আলমের এই কথা প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সজ্জন ব্যক্তি। কিন্তু শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি ব্যয়ের বিকল্প নেই, বেসরকারি খাত থাকবে পরিপূরক হিসেবে। ভারত ও নেপালে শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয় ৫ শতাংশের বেশি। শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা এখন সমান।
বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো গত একটি বছর কঠিন যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্যও। বিশ্ববাজারে পণ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যতে আরও বেশি প্রভাব, ডলার সংকট, রিজার্ভের ক্রমাগত পতন, প্রবাসী আয়ে ভাটা ইত্যাদির কারণে গত এক যুগের মধ্যে অর্থনীতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনৈতিক এই সংকট থেকে বের হয়ে আসতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ থেকে সরকার যে ঋণ নিচ্ছে, সেটি দেশের জন্য ইতিবাচক হবে বলেও মনে করেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আইএমএফ আমাদের আর্থিক খাতে যেসব সংস্কার প্রস্তাব করেছে সেগুলো যৌক্তিক। তাদের (আইএমএফ) পরামর্শে আর্থিক খাতে ধারাবাহিক সংস্কার করা হচ্ছে। এসব প্রস্তাব আমরা ইতিবাচকভাবে নেওয়ায় এখন অন্যান্য দাতা সংস্থাও ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে।’
গত ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদনের বিষয়টি বিজ্ঞপ্তিতে জানায় আইএমএফ। দুই দিন পরেই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার জমা পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে। এই ঋণ নিতে সংস্থাটির ৩০টি শর্ত মানতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এর অন্যতম হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানিতে ভর্তুকি কমানো।
বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় দেশের শিল্প কাঁচামাল সংকটে পড়েছে। টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নে অনেক শিল্প লোকসানে পড়েছে। দেশের অর্থনীতির সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে দেশ রূপান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার ফারজানা লাবনীর সঙ্গে আলোচনাকালে এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি ও বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন
করোনার আঘাত কাটিয়ে উঠতে না উঠতে বিশ্ব অর্থনীতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখতে হলে নগদ সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি রাজস্ব ছাড়সহ সব ধরনের নীতি-সহায়তা দিতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন মো. জসিম উদ্দিন।
ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, বিশ্বমন্দার মধ্যেও আমাদের দেশের অর্থনীতি একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে। রপ্তানি আয় বাড়ছে। প্রবাসী আয় মোটামুটি হয়েছে। এখন অর্থনীতি গতিশীল রাখতে হলে কোনো একটি খাতের ওপর নির্ভরশীল থাকলে হবে না। তৈরি পোশাক শিল্পসহ শিল্পের প্রায় সব খাতে সমান গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে। কোন খাতে কী প্রয়োজন তা চিহ্নিত করতে হবে। প্রয়োজনে এসব খাতের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। শিল্পের সব খাতের সমস্যার সমাধান করতে এফসিসিআই-এর প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাখতে হবে।
আগামী বাজেট হবে আমাদের টিকে থাকার বাজেট, এমন মত জানিয়ে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ঋণদানকারী সংস্থার যতই সুপারিশ থাকুক না কেন ব্যবসায়ীদের মতামত গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী বাজেটে কর অবকাশ সুবিধা ও কর অব্যাহতির আওতা বাড়াতে হবে। অর্থ সহায়তা নিতে গিয়ে আমাদের স্বার্থের বিরোধী কিছু করা যাবে না।
বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান জুগিয়েছেন। অনেকটা শূন্য থেকে গড়ে তুলেছেন একাধিক প্রতিষ্ঠান। বাবাকে হারান মাত্র ১৩ বছর বয়সে। শুধু নিজের জন্য নয়, ব্যবসায়ী সমাজের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ প্লাস্টিক ও রাবার ফাউন্ডেশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন একাধিকবার। বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিজেকে জড়িয়েছেন বেঙ্গল গ্রুপের এই কর্ণধার। প্রায় ৩০ বছর আগে ২০/২৫ জন কর্মচারী নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন তার প্রতিষ্ঠানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্লাস্টিক দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও এখন বেঙ্গল নামে ব্যাংক, কেমিক্যাল, বস্ত্র, খাদ্যসহ নানা খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বেঙ্গল গ্রুপের বার্ষিক টার্ন ওভার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। স্থানীয় বাজার ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত নানা পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। চীন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ ৩০টি দেশে এ গ্রুপের পণ্য রপ্তানি হয়।
জসিম উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর দেশের শ্রমবাজারে প্রায় ২০ লাখ লোক যোগ হচ্ছে। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটে নতুন কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। দেশের ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগমুখী করতে হবে। দেশের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে এলে বিদেশিরা আগ্রহী হয়। দেশ-বিদেশে বিনিয়োগকারী আকৃষ্ট করতে সরকার থেকে বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশের নিশ্চয়তা দিতে গুরুত্ব বাড়াতে হবে।
ব্যবসায়ী এ নেতা বলেন, বাংলাদেশে শিল্পায়নের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এখন চীনসহ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসছে। এখন বিনিয়োগের সবচেয়ে বাধার একটি জ্বালানি সংকট ও মূল্য। প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা তো আছেই। বিরাজমান সমস্যার সমাধান না হলে দেশে নতুন কর্মসংস্থানসহ কারখানা গড়ে উঠবে না। তবে একদিনে এসব হবে না। সময় লাগবে। তবে আশার কথা বাংলাদেশ কিন্তু আগের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে।
বর্তমান প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের ৫৫ শতাংশের বেশি বেঙ্গল গ্রুপের এমন দাবি করে বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্ববাজারে এ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তৈরি প্লাস্টিকের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। পণ্য বৈচিত্র্যকরণে এ দেশের প্লাস্টিক শিল্প ভালো অবস্থানে রয়েছে। বেঙ্গল প্লাস্টিক থেকে সর্বদাই পণ্য বহুমুখীকরণের চেষ্টা করা হয়। বাড়িঘর, অফিস-আদালত সব জায়গার প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা হয়।
প্লাস্টিক শিল্পকে ধ্বংস করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্বব্যাপী যেখানে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বেড়ে চলছে, সেখানে আমাদের দেশে কিছু মানুষ এ ব্যবসা বন্ধ করার দাবি করে থাকেন। এটা আসলে ষড়যন্ত্র। প্লাস্টিকপণ্য আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি করলে মানুষের ও পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তার প্রমাণ মিলেছে। আমেরিকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রতিজনে ১৩০ কেজি, সিঙ্গাপুরে ৫০ কেজি। সেখানে বাংলাদেশে তিন কেজি। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ না করে বরং তা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন ব্যবসায়ী এই নেতা।
এফবিসিসিআইয়ের এ নেতা বলেন, পোশাক, পাট, খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন খাতে রয়েছে বেঙ্গল গ্রুপের বিচরণ। গুণগত মানের কারণে এ দেশের পাটের চাহিদা থাকলেও পণ্য বৈচিত্র্যকরণে এ দেশের পাট শিল্প পিছিয়ে পড়ছে। বড় অঙ্কের পাটের বস্তা অবিক্রীত পড়ে থাকে। এর মূল কারণ পণ্যে বৈচিত্র্যকরণ নেই। বহু পুরনো পাটের বস্তা এখন আর বিশ্ববাজার চায় না। দেশের মধ্যেও পাটের ব্যাগ বা বস্তা বিক্রি কমে গিয়েছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আর বিক্রিই হবে না। আইন করা হয়েছে মোড়কীকরণে পাটপণ্য ব্যবহারে। কিন্তু আইন মানছে কই? আইন করে একটি পণ্য বাজারজাত করা সম্ভব নয়। এটা রুচি ও পছন্দের ওপর নির্ভরশীল। ভোক্তার কাছে আকর্ষণীয় করে পাটজাতপণ্য উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে।
জসিম উদ্দিন বলেন, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বেঙ্গল গ্রুপ বিস্কুটসহ নানা জাতীয় খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করছে। এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের প্রস্তুত করা খাদ্যপণ্যের চেয়ে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা খাবারের মান ভালো এটা সব সময় ঠিক না। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে।
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবাকে হারান। বড় ভাই তরুণ মোর্শেদ আলম সংসারের হাল ধরেন। শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। নোয়াখালী থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকেই অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। বাবা নির্মাণ ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু বড় ভাই প্লাস্টিকের ব্যবসা শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে অনার্সের ছাত্র থাকাকালীন জসিম উদ্দিনের বড় ভাই মোর্শেদ আলমের ব্যবসায় যোগ দেন।
ইউএস চেম্বার অব কমার্সের ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের (ইউএসবিবিসি) পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এক্সিলারেট এনার্জির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভেন কোবোস। গত ৩১ জানুয়ারি ইউএসবিবিসি তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়।
ইউএস চেম্বার অব কমার্সে ইউএসবিবিসি হচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে মার্কিন ব্যবসায়ীদের নীতিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার একটি ব্যবসায়িক অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে এবং নীতি-পরামর্শ প্রদান করে।
কোবোস ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের বোর্ডে শুরু থেকেই কাজ করছেন এবং ইউএস-বাংলাদেশ এনার্জি টাস্ক ফোর্সের সহসভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কোবোস এমন একসময়ে বোর্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যখন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাংলাদেশ আরও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং ইউএসবিবিসি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ ‘কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর’ উদযাপন করছে। বিজ্ঞপ্তি
দেশের বাজারে সোনার দাম কিছুটা কমানো হয়েছে। স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম কমানো হয়েছে। সব থেকে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ১৬৭ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম হয়েছে ৯২ হাজার ২৬২ টাকা। আজ রবিবার থেকে সোনার এই নতুন দাম কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
এর আগে দুই মাসের ব্যবধানে দেশের বাজারে ছয় দফা সোনার দাম বাড়ে। এতে দেশের বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছে যায় দামি এই ধাতুটি। সর্বশেষ ১৫ জানুয়ারি দাম বাড়ার মাধ্যমে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম হয় ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা। এর আগে কখনো দেশের বাজারে সোনার ভরি ৯৩ হাজার টাকা স্পর্শ করেনি। রেকর্ড দাম হওয়ার পর এখন সোনার দাম কিছুটা কমল। এখন বাজুসের নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ১ হাজার ১৬৭ টাকা কমিয়ে ৯২ হাজার ২৬২ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ১ হাজার ১০৮ টাকা কমিয়ে ৮৮ হাজার ৬৩ টাকা করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৯৯২ টাকা কমিয়ে ৭৫ হাজার ৪৬৬ টাকা করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ৮১৬ টাকা কমিয়ে ৬২ হাজার ৮৬৭ টাকা করা হয়েছে।
লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে বাণিজ্য বাড়াতে কাজ করবে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও জোরদারে একসঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ ও ব্রাজিল। যৌথ উদ্যোগ এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য এগিয়ে নিতে সম্প্রতি ব্রাজিলিয়ান ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সির (অ্যাপেক্স ব্রাজিল) সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে দেশের এই শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন।
ব্রাজিলে অবস্থিত অ্যাপেক্স ব্রাজিলের প্রধান কার্যালয়ে গত বুধবার এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এফবিসিসিআইর পক্ষে সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং অ্যাপেক্স ব্রাজিলের পক্ষে বিজনেস ডিরেক্টর আনা পাওলা রেপেজ্জা এতে সই করেন।
চুক্তির আওতায় অর্থনৈতিক উন্নয়নবিষয়ক তথ্য, ব্যবসা-বাণিজ্যসংক্রান্ত দক্ষতা, কৌশল এবং প্রযুক্তি বিনিময়ে কাজ করবে উভয় দেশ। এই সমঝোতা দুই দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, স্টার্টআপ, ইনকিউবেশন সেন্টার, গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ সব অংশীজনের সক্ষমতা উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে এফবিসিসিআই ও অ্যাপেক্স ব্রাজিল।
সমঝোতা অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের প্রতিনিধিদলের সফরে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক যোগাযোগ স্থাপনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে অ্যাপেক্স ব্রাজিল ও এফবিসিসিআই ।
এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সহযোগিতা উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদারে ভূমিকা রাখবে।
এফবিসিসিআইর ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’-এ যোগ দিতে ব্রাজিলের ব্যবসায়ী নেতাদের আমন্ত্রণ জানান মো. জসিম উদ্দিন।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।