
যাত্রীসেবার মান ও যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ১০০টি মিটার গেজ যাত্রীবাহী ক্যারেজ পুনর্বাসন’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন প্যাকেজের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেও ঠিকাদার পাচ্ছে না রেলওয়ে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়ভাবে এসব ক্যারেজ সংস্কার করতে চায় সংস্থাটি। তবে করোনার সময় কাজ করতে ও ঠিকাদার নিয়োগ দিতে না পারায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
ব্যয় বাড়ানোর কারণ হিসেবে রেলওয়ে বলছে, চুক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন প্যাকেজের মূল্য সংশোধন, বর্তমান বাজারদরের ভিত্তিতে স্থানীয় ও বৈদেশিক মালামালের মূল্য নির্ধারণ, বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে কিছু খাত বাদ দিয়ে আবার নতুন খাত সংযোজন করার কারণে এর ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। কিন্তু প্রকল্পের মাঝপথেই ব্যয় ১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে মেয়াদও এক বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুমোদনের সময় এর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৪ কোটি ১১ লাখ টাকা, প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে যাত্রীবাহী গাড়ির মেরামত ব্যাকলগ ও গাড়ির প্রাপ্যতা বাড়বে। বাড়বে যাত্রীসেবার মান ও রেলওয়ের রাজস্ব।
প্রকল্প সংশোধনের ব্যাখ্যায় রেলওয়ে বলছে, প্রকল্পের কাজে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলেও কোনো দরপত্র পাওয়া যায়নি। ফলে বিভিন্ন মালামাল স্থানীয় পর্যায় থেকে সংগ্রহ করতে হবে। তবে রেলওয়ে দাবি করেছে, প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় ও বৈদেশিক মুদ্রা সমন্বয়ের প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক কোনো দরদাতা না পেলেও বৈদেশিক মুদ্রার সমন্বয় করতে চায় সংস্থাটি।
তবে প্রকল্প পরিচালক তাপস কুমারের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে চাইলে জানা যায়, পদোন্নতি পেয়ে অন্য স্থানে বদলি হয়েছেন। নতুন প্রকল্প পরিচালক মাত্রই যোগ দেওয়ায় তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি।
রেলওয়ে প্রকল্প সংশোধনের আরেকটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে, করোনা মহামারীর কারণে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রস্তাবিত অধিকাংশ মালামালের দাম বেড়ে গেছে। ফলে বেড়ে যাওয়া দরে মালামাল সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। যেসব প্যাকেজের মালামাল সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না, তার জন্য নতুন দরে প্রকল্পটি সংশোধনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, উন্মুক্ত দরপত্রের কারণে দেশের অধিকাংশ প্যাকেজে অনেক মালামালের দাম কমেছে। আবার কোনো কোনো প্যাকেজের মালামালের দাম বেড়েছে। চুক্তিমূল্য অনুযায়ী, বিভিন্ন প্যাকেজের দাম সংশোধন করার প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
মূল প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) মোট ১২৮টি প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। সংশোধনীতে তা কমিয়ে ১১৭টি প্যাকেজে আনা হয়েছে। এর মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পাওয়া প্রকল্পের আওতায় গাড়ি কেনার প্যাকেজ বাদ দেওয়া হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে ৯০৭টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ বা ক্যারেজ এবং প্রায় ২ হাজার ৫৩০টি ওয়াগন আছে। এই ক্যারেজ ও ওয়াগনগুলোর কোনো ধরনের মেরামতসহ যেকোনো কাজের জন্য একমাত্র স্থাপনা হলো পাহাড়তলী ক্যারেজ ও ওয়াগান কারখানা। এই কারখানায় ২ হাজার ১২৬ জনবল মঞ্জুরির বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন প্রায় ১ হাজার ১০০ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক।
আবার ক্যারেজ ও ওয়াগনগুলোর প্রায় ৫০ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের বেশি, যেগুলো আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত। এসব ক্যারেজকে কাজের উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় মেরামতকাজে সময় ও অর্থ দুটিই বেশি লাগে। কিন্তু পাহাড়তলী কারখানায় জনবলের স্বল্পতা ও বাড়তি অর্থের সংস্থান না থাকার কারণে বেশি মেরামত প্রয়োজন হওয়া গাড়িগুলোর কাজ পড়ে থাকে। এতে করে ভারী গাড়িগুলোর কাজ জমে ব্যাকলগ তৈরি হয়েছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, ১০০টি জিওএইচ ওভারডিউ গাড়ি প্রাইভেট এজেন্সির মাধ্যমে পুনর্বাসনের জন্য ৭৮ কোটি ৫৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনে বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। প্রকল্পটি অনুমোদন হয় ২০২০ সালে। অনুমোদনের সাত মাস পর কাজ শুরু এবং মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় কাজ বন্ধ থাকে। এখন প্রকল্পটির মেয়াদ ও ব্যয় দুটিই বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
ডলার সংকেটর কারণে বীজ আমদানি বন্ধ হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএ)। প্রয়োজনীয় ডলার না মেলায় সামনের দিনগুলোতে ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে বীজ আমদানি করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন বিএসএ উপদেষ্টা আনোয়ার ফারুক।
১১ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠেয় তিন দিনের ‘বাংলাদেশ সিড কংগ্রেস’ সামনে রেখে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আনোয়ার ফারুক বলেন, আমরা যখন হাইব্রিড বীজ উৎপাদন, আমদানি শুরু করি; তখন অনেক সমালোচনা ছিল। কিন্তু আজ আমরা নিজেদের প্রয়োজনে হাইব্রিড বীজ আনছি। তখন সবাই বলত, প্রাইভেট সেক্টরের কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, এটা ঠিক নয়। প্রাইভেট সেক্টর না থাকলে আজ সবজির ফলন এত ভালো হতো না। সবজির বীজের ৯০ শতাংশ সরবরাহ করছে প্রাইভেট সেক্টর।
বিএসএর এই উপদেষ্টা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য অন্যদের মতো ডলার ক্রাইসিস আমরাও মোকাবিলা করছি। এর জন্য আমরা সামনে বীজ আমদানি করতে পারব না। সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সরকারকে বারবার বলছি, আমরা যেন খাবারটাকে প্রাধান্য দিই।
মানসম্মত বীজ ছাড়া যে কৃষিতে ভালো ফলন সম্ভব নয়, তা মনে করিয়ে দিয়ে সাবেক এই কৃষি সচিব বলেন, একটি জমিতে ফসল বাড়বে কি কমবে, তার মূল বিষয় হলো কোয়ালিটি বীজ। বীজ উন্নত না করতে পারলে ফলন বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। তবে বীজ ব্যবসাকে শক্তিশালী করার জন্য সিড সার্টিফিকেশন এজেন্সিকে আরও সচেতন হতে হবে।
এসময় বিএসএর সিনিয়র সহসভাপতি ড. আলী আফজাল বলেন, বলা হয় ফলন বাড়ছে না সেভাবে। কিন্তু কৃষকের জ্ঞানমানকে যদি একটু আপডেট করা যায়, তাহলে বর্তমান প্রযুক্তি দিয়েই ফলনটা বাড়ানো যাবে। ২০০৯ সালে দেশের মোট বীজ চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ ছিল মানসম্পন্ন বীজ, বর্তমানে এ হার ৩৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে আলু, সবজি, ভুট্টা, ধান, পাট ইত্যাদি বীজের ক্ষেত্রে এ হার ৫৯ দশক ২ শতাংশ।
দেশে এখন বছরে সাড়ে ১২ লাখ টন বীজের প্রয়োজন জানিয়ে এই সরবরাহকারী বলেন, মোট বীজের ৫৩ শতাংশই সরবরাহ করে বেসরকারি খাত। ধান বীজের ৪৪ শতাংশ, হাইব্রিড ধানের ৯৭ শতাংশ, ভুট্টার ৯৯ শতাংশ, সবজি বীজের ৮৬ শতাংশ, আলু বীজের ৭৪ শতাংশ, পাট বীজের ৮৩ শতাংশ বীজ আসে বেসরকারি খাত থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামী ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ সিড কংগ্রেস ২০২৩’ হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত এ মেলায় দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণ কর্মী, বীজ ডিলার, বীজ ব্যবসায়ী, বীজ শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কৃষিবিদ, ব্যাংকার, শিক্ষক ও কৃষক প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলা এ মেলায় জনা পঞ্চাশেক বিদেশি প্রতিনিধি থাকবেন। মেলায় মোট ১৩টি প্যাভিলিয়ন ও ৬০টি স্টল থাকবে, যার মধ্যে ১০টি বিদেশি স্টল থাকবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন সব প্রতিষ্ঠানের স্টল মেলায় থাকছে বলে সম্মেলনে জানানো হয়।
বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা থেকে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী রাখতে অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে রপ্তানির সম্প্রসারণ, পণ্যের বৈচিত্র্যায়ণ, নতুন বাজারের সন্ধান, দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষীক বাণিজ্য চুক্তি, কৃত্রিম তন্তুর পোশাকের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধি প্রভৃতিতে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
গতকাল বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) আয়োজিত এক সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।
বেপজা আয়োজিত ‘সম-সাময়িক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চিত্র : বাংলাদেশের ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। করোনা পরবর্তী বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে যে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ তৈরি হয়েছে তা বিশ্লেষণপূর্বক উত্তরণের সম্ভাব্য উপায় এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার ফলে সৃষ্ট সুযোগকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তার উপায় খুঁজতে বেপজা এই সেমিনারের আয়োজন করে। বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) আলী রেজা মজিদ সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, আমেরিকা-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ, করোনা মহামারী, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রভৃতির মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরেও এই ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং একই সঙ্গে রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যায়ণ ও সম্প্রসারণে মনোযোগী হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, “আমাদের মোট রপ্তানির প্রায় ৮৬ শতাংশ তৈরি পোশাক নির্ভর যার বাজার মূলত ইউরোপ, আমেরিকা। রপ্তানির সম্প্রসারণে আমাদের মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এ জাতীয় অপ্রচলিত বাজারের সন্ধান করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বর্তমান সরকার বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছেন উল্লেখ করে তিনি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষির আহ্বান জানান। দেশের বেসরকারি খাতকে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি উল্লেখ করে তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, বেপজার নেতৃত্বে ইপিজেডের বিনিয়োগকারী ও অন্যান্য শিল্প উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে সরকারের কাছে ব্যবসা পরিচালনা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা উত্থাপন করলে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার স্বার্থে তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা হবে।
সেমিনারে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, সারা বিশ্ব বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক চালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি বলেন, “কভিড-১৯ মহামারীর জন্য কঠোর লকডাউনের পর চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সেইসঙ্গে অর্থনৈতিক পরাশক্তিদের অবরোধ-পাল্টা অবরোধ বিশ্বকে অর্থনৈতিক অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলেছে। জ¦ালানি সংকট, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি বিশ্ব বাণিজ্যকে মন্দার দিকে ধাবিত করেছে।” তিনি আরও বলেন, এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ঢেউ বাংলাদেশেও লেগেছে।
নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে যার ফলে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর রপ্তানি চাহিদা কমে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, চলমান অর্থনৈতিক উত্থান-পতন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো অন্বেষণ করাই এই সেমিনারের উদ্দেশ্য।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) এর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক।
তিনি বলেন, কয়েকটি বিষয় অর্থনীতির রাশ টেনে ধরতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য মন্দা, অস্থিতিশীল পণ্য মূল্য ও লাগামহীন মুদ্রাস্ফীতি, দীর্ঘ জ¦ালানী সংকট, আমেরিকা-চীন বাণিজ্য সংকট ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক জোটসমূহের কার্যকারিতা হ্রাস প্রভৃতি। বাহ্যিক এইসব প্রভাবকের সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বিষয়াদি যেমন মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ প্রভৃতি যুক্ত হয়ে দেশের অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে, তিনি উল্লেখ করেন।
ড. রাজ্জাক স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের জন্য অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, রপ্তানি বৃদ্ধি করতে আমাদের পণ্যের বৈচিত্র্যায়ণ করতে হবে এবং প্রাকৃতিক তন্তুর পোশোক ছাড়াও কৃত্রিম তন্তুর পোশাক (ম্যান মেইড ফাইবার) উৎপাদন ও রপ্তানিতে গুরুত্ব দিতে হবে। রপ্তানি সম্প্রসারণে ইপিজেডের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইপিজেডের মাধ্যমে বৈদেশিক বিনিয়োগ আহরণের পাশাপাশি গ্লোবাল ভ্যালু চেইন সমন্বিতকরণ, অধিকতর কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণ, প্রযুক্তির আত্তীকরণ এবং আন্তর্জাতিক শিল্প স্থানান্তরের বিষয়ে তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
সেমিনারে প্যানেল বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ ইপিজেড ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশন (বেপজিয়া)-এর প্রেসিডেন্ট এস এম খান বর্তমান ব্যবসায়িক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা পরিচালনায় যেসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং আগামী দিনগুলোতে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন সে বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য হোসেন আহমদ করোনা মহামারী পরবর্তী অবস্থা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার তথা এনবিআর যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সে বিষয়ের উপর আলোচনা করেন এবং সিঙ্গেল উইন্ডোর মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা সহজ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে সবুজ শিল্প, আইসিটি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। গতকাল বৃহস্পতিবার চীনা দূতাবাসে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এফবিসিসিআই‘র প্রতিনিধি দল সৌজন্য সক্ষাৎ করতে গেলে এমন পরামর্শ দেন।
চীন থেকে উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল সামিটে অংশ নেবে বলেন ও আশ্বাস দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। এ সময় তিনি দুদেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বিটুবি এবং নেটওয়ার্কিং সেশনের ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করেন।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরতে জাতীয় ও বৈশ্বিক ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী, নীতিনির্ধারক, বাজার বিশ্লেষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যেখানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ ক্ষেত্রগুলোর বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত আহরণ এবং বিশ্লেষণের সুযোগ পাবেন উদ্যোক্তারা।
বর্তমানে ক্যানুলা আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক সয়াবিন ও পাম তেলের দ্বিগুণ। তাই কানাডা থেকে ক্যানুলা আমদানির ক্ষেত্রে সয়াবিন ও পাম তেলের সমপরিমাণ আমদানি শুল্ক নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়েছেন কানাডার ব্যবসায়ীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলসের নেতৃত্বে কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশনের (সিসিসি) প্রতিনিধিদল কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের কাছে এমন অনুরোধ জানান।
কানাডার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক ক্যানুলা তেলে আমদানি শুল্ক বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন। মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, কানাডা বাংলাদেশে পটাশিয়াম সার বিক্রি অব্যাহত রাখবে। এছাড়া বাংলাদেশে ডাল রপ্তানি, কৃষি প্রক্রিয়াজাতে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ থেকে শাক-সবজি নেওয়ার বিষয়েও আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ-কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে ও বাণিজ্য সহজতর করতে কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশনের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করছেন। কৃষিমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও অবরোধের কারণে গতবছর পটাশিয়াম সার নিয়ে বিশ্বব্যাপী চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। আমরা বেলারুশ থেকে পটাশিয়াম সার কিনতে পারিনি। তখন সরকারের প্রচেষ্টায় কানাডা আমাদের জরুরি ভিত্তিতে ৫ লাখ টন পটাশিয়াম সার প্রদান করে। যার ফলে রবি মৌসুমে ও চলমান বোরো মৌসুমে সার সংকট দেখা দেয়নি।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রুহুল আমিন তালুকদার, কানাডা প্রতিনিধিদলের সদস্য কানাডা দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর এঞ্জেলা ডার্ক, ট্রেড কমিশনার কামাল উদ্দিন, কানাডিয়ান কমার্শিয়াল করপোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কিম ডগলাস ও পরিচালক এন্টনি রিজক উপস্থিত ছিলেন।
ফার্নিচারশিল্পে অনবদ্য সাফল্যের জন্য দেশের সুপরিচিত ফার্নিচার ব্র্যান্ড হাতিল ২০২৩-২৪ সেশনের সুপারব্র্যান্ডস বাংলাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
সুপারব্র্যান্ডস ওয়ার্ল্ডওয়াইড ৯০টি দেশে পণ্যবাজার ও ব্র্যান্ড নিয়ে গবেষণা করে এবং সুপারব্র্যান্ডস বাংলাদেশ সুপারব্র্যান্ডস ওয়ার্ল্ডওয়াইডের একটি প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থা। ব্র্যান্ডগুলো এই সম্মানসূচক স্বীকৃতি তাদের বিজনেস কমিউনিকেশন থেকে শুরু করে প্যাকেজিংয়ে ব্যবহার করে থাকে।
সম্প্রতি স্থানীয় একটি হোটেলে সুপারব্র্যান্ডস বাংলাদেশের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে হাতিলের চেয়ারম্যান ও এমডি সেলিম এইচ রহমান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন, যিনি এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন। এতে অংশ নেন সুপারব্র্যান্ডস বাংলাদেশের এমডি শরিফুল ইসলাম, হাতিলের পরিচালক মাহফুজুর রহমান, অর্থ পরিচালক মিজানুর রহমান প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।