
টেক্সটাইল মিলগুলোর ফেলে দেওয়া বর্জ্য দিয়ে দেশেই মোটা সুতা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু কারখানাগুলো গার্মেন্টস ঝুট ও টেক্সটাইলের বর্জ্য রপ্তানি হওয়ায় তারা উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারার ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন অবস্থায় ঝুট রপ্তানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
গতকাল রবিবার বিটিএমএর আয়োজনে ‘১৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস মেশিনারিজ এক্সিবিশন’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
বিটিএমএর সঙ্গে এ এক্সিবিশনের যৌথ আয়োজক তাইওয়ানের চান চাও ইন্টারন্যাশনাল। আগামী ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দিনব্যাপী ১৭তম ডিটিজি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। বিটিএমএর নেতারা জানান, মাঝে কয়েক বছর ঝুট রপ্তানি বন্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা আবার খুলে দেওয়া হয়েছে এবং সে কারণেই ঝুটের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যেসব কারখানা ঝুট পুনঃ প্রক্রিয়াজাত করে সুতা তৈরি করে, সেই সব দেশীয় সুতার মিল ঝুটের অভাবে বিপাকে পড়েছে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০টির মতো কারখানা ঝুট কাপড় থেকে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে প্রথমে তুলা, তারপর সুতা তৈরি করছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশে এখনো কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহার খুবই কম করা হচ্ছে। তাই যেসব কারখানা ঝুট কাপড় ব্যবহার করে সুতা তৈরি করে, তাদের সুবিধা দিতে ঝুটের রপ্তানি বন্ধের জন্য তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, বর্তমানে দেশে স্পিনিং মিলের সংখ্যা ৫১০Ñযার সুতা উৎপাদন ক্ষমতা ৩৮০ কোটি কেজি। দেশে প্রায় ছোট-বড় মিলিয়ে ওভেন ফেব্রিকের মিল রয়েছে প্রায় ২০ হাজার; যাদের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৭০০ কোটি মিটার। এ খাতে বর্তমানে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
বিটিএমএর তথ্য মতে, তৈরি পোশাক শিল্পের বিশেষত রপ্তানিমুখী নিট পোশাক খাতের সুতার চাহিদার ৮০ শতাংশ এবং রপ্তানিমুখী ওভেন পোশাক শিল্পের ফেব্রিকের প্রায় ৬০ শতাংশ সরবরাহ করছে সুতা ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে তারা স্থানীয়ভাবে ৭ বিলিয়ন মিটার সুতার সম্পূর্ণই জোগান দিচ্ছে, যার মূল্য ৯ বিলিয়ন ডলারের মতো।
খোকন জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয়ের তৈরি পোশাক ও কপিং থেকে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৪৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ এসেছে টেক্সটাইল ও ব্লগিং থেকে।
২০০৪ সাল থেকে ক্ষুদ্র পরিসরে এই প্রদর্শনীর যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯ ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এ বছর অনেক প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে না। তবে এ বছর বিশ্বের প্রায় ৩৫ দেশের প্রখ্যাত ১২০০ টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস মেশিনারি কোম্পানি অংশ নিচ্ছে।
নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে উৎপাদনকারী ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের বচসায় বেরিয়ে এসেছে বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণের ফাঁকফোকর। মিল গেটে বেশি দাম রাখা, চালানে যে দর লেখা হয় তার চেয়ে বেশি নেওয়া, বিভিন্ন পর্যায়ে কেনা দর লুকিয়ে রাখার মতো বিষয়গুলো নিজেদের বক্তব্যেই তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।
আসন্ন রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এমন তথ্য উঠে আসে ব্যবসায়ীদের বক্তব্যে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের বিভিন্ন পর্যায়ের বিক্রিতে সঠিক দাম উল্লেখ করে রসিদ দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে পাইকারি ও উৎপাদকদের বচসার মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ‘কালো ব্যবসা’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, পণ্য কেনাবেচার সময় রসিদ না দেওয়া কিংবা এক দামের রসিদ দিয়ে অন্য দাম নেওয়াÑ এগুলো ব্যবসায়ের কালো অধ্যায়। লাভ করবেন আর কাগজ দেবেন না, এটা হবে না। তবে এফবিসিসিআই সভাপতির এমন বক্তব্যের পর বচসায় জড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে জসিম উদ্দিন বলেন, নীতিনৈতিকতা নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। খারাপ কিছু মানুষ থাকতে পারে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। অল্প কিছু ব্যবসায়ীর এমন আচরণের কারণে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের দুর্নাম হয়। বিক্রির সময় রসিদ না দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে এফবিসিসিআই একটি কমিটি গঠন করে কাজ করবে বলে সভায় ঘোষণা দেন তিনি।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসানসহ ব্যবসায়ী নেতারা। এ ছাড়া মেঘনা, সিটি, টিকেসহ বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাজারে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পরিশোধিত চিনি ও খোলা ভোজ্য তেল কেন বিক্রি করা হয়? এর উত্তরে তারা বলেন, মিলের মালিকরা তাদের সরকারনির্ধারিত ক্রয়মূল্যের রসিদ দেন না।
তবে মিল মালিকরা দ্রুতই এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে এটা নিয়ে বচসায় জড়ান উভয় পক্ষের ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সভায় জানান, তারা বেসরকারি মিলগুলো থেকে সরকার-নির্ধারিত ক্রয়মূল্যে পরিশোধিত চিনি ও খোলা সয়াবিন তেল কিনতে পারেন না। যে দামে কেনেন, তার সঠিক রসিদও মিলগুলো দেয় না। এ কারণে বাধ্য হয়ে তাদের সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়। কিন্তু কেউ দামের রসিদ চাইলে তারা দেখাতে পারেন না।
আসন্ন রোজায় পণ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে সভায় তেল ও চিনি ব্যবসায়ীরা মূল্য নির্ধারণ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়ান। বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, মিলগুলো আমাদের রসিদ দিচ্ছে এক দরে, আর টাকা নিচ্ছে অন্য দরে। এসব সত্য কথা বলার জন্য আবার আমাদের মিল গেটে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের এ অভিযোগের বিষয়ে মিলগুলোর কাছে জানতে চান এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এ অভিযোগ অস্বীকার করে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, যারাই পণ্য কিনছেন, তারা নিয়মিত ক্রয়ের রসিদ নিচ্ছেন। যিনি রসিদ পান না, তিনি তো পণ্যই নেন না। কারণ, রসিদ ছাড়া পণ্য বিক্রি হয় না।
দিনাজপুর চেম্বারের পক্ষ থেকে বলা হয়, পাইকারি বিক্রেতারা মেমো দেন না। মেমো দিলেও সেখানে সঠিক দাম উল্লেখ থাকে না। মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন সক্রিয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেক হয়রানি হচ্ছেন।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, ‘চিনির দাম কীভাবে নির্ধারণ করা হয়, পাইকারি ব্যবসায়ী হিসেবে তা আমরা জানি না। আবার সরকারনির্ধারিত মূল্যে আমরা মিল থেকে কিনতেও পারি না। তারা রসিদও দেন না। তাহলে আমরা কীভাবে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করব? উৎপাদকরা যদি মেমো দিতে না পারেন, তাহলে পাইকারি পর্যায়ে মেমো পাবেন না এবং খুচরা পর্যায়ে মেমো পাবেন না। এভাবে হাইড করেই ব্যবসা চলছে। আমি জরিমানার ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসা করছি। এ সমস্যার সমাধানে উৎপাদন (মিল), পাইকারি ও খুচরা, তিন পর্যায়েই দাম সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার দাবি জানান এ পাইকারি বিক্রেতা।
এ সময় সেখানে উপস্থিত সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার তসলিম শাহরিয়ার দাবি করেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি সঠিক নয়। তারা অবশ্যই ইনভয়েস দেন। সেখানে বিক্রির তথ্য উল্লেখ থাকে।
এ সময় বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। মিলগুলোর প্রতিনিধিরা বলেন, ‘আপনারা রসিদ (ইনভয়েস) না পেলে পণ্য কিনবেন না। এর উত্তরে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রশ্নটা রসিদ পাওয়া নিয়ে নয়, নির্ধারিত মূল্যের রসিদ পাচ্ছি কি না, সেটাই দেখার বিষয়। তখন মিলগুলোর প্রতিনিধিদের একজন বলেন, তাহলে আপনি আমাদের থেকে পণ্য নিয়েন না।’
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে উৎসবের সময় পণ্য বিক্রিতে ছাড় দেওয়া হয়। আর আমাদের দেশে উল্টো মূল্যবৃদ্ধি পায়। রমজান মাস এলে দাম বাড়ে, এই বদনাম থেকে বের হতে চাই।’
সভায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, রমজান ও পরবর্তী এক-দুই মাসের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ রয়েছে। সুতরাং সরবরাহের ঘাটতির কারণে মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।’
তেল রিফাইনারি ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানে সরবরাহ ঠিক রাখতে চিনির আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র কর্মকর্তা তসলিম শাহরিয়ার বলেন, আমদানি শুল্ক না কমালে চিনির দাম কমানো সম্ভব না।
নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান সাপেক্ষে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন না তোলার বিধানটি ফের চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। একই সঙ্গে কোম্পানি শেয়ারের লভ্যাংশ থেকে উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল করার পাশাপাশি ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত লভ্যাংশ ১ লাখ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে সিএসই। অপর দিকে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হারের পার্থক্য বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
গতকাল আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন ভবনের সম্মেলনকক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন ডিএসই ও সিএসইর প্রতিনিধিরা।
সরকার ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে এক বছর বিনিয়োগ রাখার শর্তে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রেখেছিল। একইসঙ্গে এই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল যে, যারা অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা বৈধ করে নেবে, তাদের কাছে অর্থেক উৎস সম্পর্কে কোনো কর্তৃপক্ষই জানতে চাইবে না। তবে গত বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা কর দিয়ে সাদা করার সুযোগও বাতিল করা হয়। তবে পুঁজিবাজারে কালো টাকার বিনিয়োগ তেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে না এলেও শর্তসাপেক্ষে বিধানটি ফের চালুর দাবি জানিয়েছে সিএসই।
কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ ছাড়াও জিরো কুপন বন্ডের মতো অন্যান্য বন্ডের আয়কে কর অব্যাহতি প্রদান করা ও ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে সিএসই। আর ডিএসই তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এনবিআরকে প্রস্তাব দিয়েছে। ডিএসই জানায়, বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হারের পার্থক্য সাড়ে সাত শতাংশ। এই করহারের ব্যবধান সাড়ে ১২ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই। এছাড়া লেনদেনের ক্ষেত্রে বর্তমানে শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়। সেখান থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ করতে চায় ডিএসই।
অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের করপোরেট করের হার ৩৭ দশমিক ৫ থেকে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। গতকাল এনবিআরে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট হার ২৫ শতাংশ করার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে গতিশীলতা আনতে লভ্যাংশের ওপর কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য জমা দেন মিজান চৌধুরী।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় স্বাস্থ্য বীমার প্রসারে এ খাতের ওপর থেকে ট্যাক্স রহিত করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ইমাম শাহিন বলেন, বীমা আইনে জীবন বীমা পলিসির প্রিমিয়ামের কোনো ভ্যাট প্রদান করতে হয় না। আবার এককভাবে স্বাস্থ্য বীমা করলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করতে হয়। কিন্তু কোনো বীমা গ্রহীতা জীবন বীমার সঙ্গে স্বাস্থ্য বীমা যুক্ত করে পলিসি করলে স্বাস্থ্য বীমার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করতে হয়। এতে প্রিমিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। স্বাস্থ্য বীমার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে, এর ওপর ট্যাক্স রহিত করার প্রস্তাব করেন তারা। এছাড়া জীবন বীমা পলিসি হোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ ট্যাক্স প্রত্যাহারের প্রস্তাবও করে সংগঠনটি।
সবার দাবি শোনার প্রেক্ষাপটে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমি আশা করব যার যার ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে যেন দাবি না আসে। আমরা যতটুকু গ্রহণ করতে পারব তা করব। আপনাদের যে প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছেন তা দেখলাম, নিশ্চিত থাকতে পারেন প্রতিটি প্রস্তাব আমরা যাচাই করে দেখব। সবকিছুর মূলভিত্তি থাকবে রাজস্ব আদায়, ব্যবসা সহজীকরণ, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, শিল্পায়ন তৈরি করা ইত্যাদি।
আলোচনায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মো. ওমর ফারুক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাত্বিক আহমেদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশ নেন।
ইআরএফের প্রস্তাব নতুন কর আরোপ না করে করের আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করা, বকেয়া আদায়ে জোর দেওয়া, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করাসহ আগাম কর রিফান্ড ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়টি বিবেবচনায় রেখে শুল্কহার যৌক্তিক করার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সীমিত আয়ের জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি।
গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, আগামী ৪ বছরের মধ্যে পুরোপুরি না হলেও ৭৫ শতাংশ লেনদেন অনলাইনভিত্তিক (ক্যাশলেস) করার চেষ্টা করছি। মানুষ নগদ টাকার ব্যবহার যত কম করবে; অর্থনৈতিক কার্যক্রম তত বাড়বে। গতকাল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে এক সমঝোতা স্মারকের অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন গভর্নর।
এই সমঝোতার ফলে বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিসে বাংলাদেশ ব্যাংকের আট সেবা পাওয়া যাবে। এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে আরও তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে পাঁচ পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সভাপতিত্ব করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। ব্যবসা সহজীকরণ নিশ্চিত করতে আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিডা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ১৫০টি পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বর্তমানে ওয়ান স্টপ সার্ভিসে ৬৭টি পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে এবং খুব শিগগিরই আরও ১২টি পরিষেবা যুক্ত হবে।
সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে আটটি সেবা বিডার ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে তার মধ্যে রয়েছে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় মেয়াদি ঋণ গ্রহণের অনুমতি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার দেশ থেকে বিদেশে, বিদেশ থেকে দেশে এবং বিদেশ থেকে বিদেশে হস্তান্তরের অনুমোদন, বিদেশ থেকে কোনো কোম্পানির লভ্যাংশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা। পরামর্শক ফি বিদেশে পাঠানোর অনুমতি।
এখন বাংলাদেশ থেকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় ফ্রি কল করে উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক ও সিরিয়ায় কলের ক্ষেত্রে কোনো কলচার্জ প্রযোজ্য হবে না।
প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক এবং সিরিয়ার আইএসডি আউটগোয়িং কল করার চার্জ ফ্রি করে দিয়েছে, যাতে সবাই তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা থেকে যারা বেঁচে ফিরছেন, তাদের গল্প যেমন মর্মাহত করেছে, তেমনি নতুন আশার সঞ্চারও করছে। ভয়াবহ এ ভূমিকম্প নিয়ে ইতিমধ্যেই শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার, দিয়েছে প্রয়োজনীয় সহায়তা।
মৌলভীবাজারে 'চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিক বান্ধব চা শিল্প' প্রতিপাদ্য নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে তৃতীয়বারের মতো 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন করা হয়েছে।
গতকাল রবিবার (০৪ জুন) শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে আয়োজিত 'জাতীয় চা দিবস' উদযাপন এবং 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
দেশে প্রথমবারের মতো চালুকৃত 'জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৩' প্রদান করা হয়। আটটি ক্যাটাগরিতে আট ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় পুরস্কার। বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
৮ ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন (০১) একর প্রতি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী চা বাগান- ভাড়াউড়া চা বাগান (০২) সর্বোচ্চ গুণগত মানসম্পন্ন চা উৎপাদনকারী বাগান- মধুপুর চা বাগান (০৩) শ্রেষ্ঠ চা রপ্তানিকারক- আবুল খায়ের কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লি. (০৪) শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রায়তন চা উৎপাদনকারী- মো. আনোয়ার সাদাত সম্রাট (পঞ্চগড়) (০৫) শ্রমিক কল্যাণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা বাগান- জেরিন চা বাগান (০৬) বৈচিত্র্যময় চা পণ্য বাজারজাতকরণের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেট লি. (০৭) দৃষ্টিনন্দন ও মানসম্পন্ন চা মোড়কের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ চা প্রতিষ্ঠান/কোম্পানি- গ্রিন ফিল্ড টি ইন্ডাস্ট্রিজ লি. (০৮) শ্রেষ্ঠ চা পাতা চয়নকারী (চা শ্রমিক)- উপলক্ষী ত্রিপুরা, নেপচুন চা বাগান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়াও চা বোর্ডের কর্মকর্তা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন বাগানের মালিক ও চা শ্রমিকরা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ও আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে বিয়ের প্রলোভনে ডেকে নিয়ে মেয়ে (১৭) ও তার মাকে (৪০) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে মেয়ের প্রেমিকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সোমবার (০৫ জুন) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও শিবগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, গতকাল রবিবার (০৪ জুন) ভোরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত তিনজনকে আটক করা হয়। পরে সন্ধ্যায় তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। আর গত শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর শিবগঞ্জের পৌর এলাকার মাগুরার মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনায় অভিযুক্ত ও আটককৃতরা হলেন প্রেমিক শিবগঞ্জ পৌর পিঠালিতলা মহল্লার বাসিন্দা সেলিম রেজা (২৫)। তার বন্ধু ও একই গ্রামের বাসিন্দা মো. হাসান (২৪) এবং ভ্যানচালক পিঠালিতলা মহল্লার মো. মেহেরুল (৩০)।
পুলিশ জানায়, শনিবার (০৩ মে) রাত ৮টার পর ওই এলাকার (পৌর মর্দনা গ্রামের পাশে) একটি মাঠের পাশের পাটক্ষেতে মা ও মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর ফেলে যায় অভিযুক্ত মেয়ের প্রেমিক সেলিম এবং তার বন্ধু হাসান। এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশের তল্লাশিতে রবিবার (৪ জুন) ভোরে ওই মাঠ থেকে উদ্ধার হয় মা ও মেয়ে। এরপর তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার ভোরে পুলিশের অভিযানে আটক হয় সেলিম ও হাসান।
এদিকে মা ও মেয়েকে রিকশাভ্যানে করে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে আটক হয় মেহেরুল। এ ঘটনায় মেয়ের মা গত রবিবার সকালে আটক তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় আসামিদের গত রবিবার আদালতে হাজির করা হলে ধর্ষণে অভিযুক্ত প্রেমিক সেলিম ও তার সহযোগী হাসান দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে একই দিন সন্ধ্যায় আদালত সকল আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পরিদর্শক সুকোমল চন্দ্র দেবনাথ জানান, রং নাম্বার থেকে মোবাইল ফোনে প্রথম পরিচয় হয় ভুক্তভোগী তরুণী ও সেলিম রেজার। পরে তাদের মধ্যে প্রেম হয়। একপর্যায়ে গত শনিবার রাতে মেয়েকে দেখা ও বিয়ের কথা বলে মা-মেয়েকে শিবগঞ্জে ডেকে নিয়ে আসে সে। পরে ভ্যানচালকের মাধ্যমে মা ও মেয়েকে ওই মাঠের পাশের পাটক্ষেতে নিয়ে যায় সেলিম। সেখানে মা ও মেয়েকে সেলিম ও হাসান ধর্ষণের পর ফেলে রেখে যায়।
তিনি আরও জানান, স্ত্রী ও মেয়ের খোঁজ না পেয়ে মেয়ের বাবা একই দিন রাতেই ঘটনাটি শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ রাতেই উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান শুরু করে। পরে ভুক্তভোগী মেয়ের মায়ের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। রবিবার ভোরে ওই মাঠ থেকে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। পরে একই দিন ভোরেই অভিযান চালিয়ে সেলিম, হাসান ও মেহেরুলকে আটক করা হয়। রবিবার সকালে মেয়ের মা বাদী হয়ে থানায় মামলা করলে পুলিশ আসামিদের আদালতে পাঠায়। মা ও মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে সম্পন্ন হয়।
মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার একসঙ্গে তিন মৌসুম খেলেছেন বার্সেলোনায়। ২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে সুয়ারেজ বার্সায় আসার পর এবং ২০১৭-তে নেইমার পিএসজিতে পাড়ি জমানো পর্যন্ত ‘এমএসএন’ এর রাজত্ব ছিল বার্সেলোনায়। সে সময়ে এই তিনজন মিলে ৩৬৪ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৭৩টি। এই ত্রয়ী বার্সাকে দুটি লা লিগা খেতাব, তিনটি কোপা দেল রে এবং একটি করে সুপারকোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন।
সুয়ারেজ-নেইমার বার্সা ছেড়ে চলে গেলে মাঠের জুটি ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট এমএসএনের। সেদিন মেসিকে মাঠে দর্শকরা দুয়ো ধনি দলে তার প্রতিবাদ করেছেন সুয়ারেজ নেইমার। মেসির পিএসজি ছাড়ার পর নেইমার বন্ধুর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, সুয়ারেজও জানিয়েছেন সাধুবাদ।
নেইমার ইনস্টাগ্রামে একটি বিদায় নোট পোস্ট করেছেন মেসিকে উদ্দেশ্য করে, 'ভাই.. আমরা যেমন ভেবেছিলাম তেমনটা হয়নি কিন্তু আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছিলাম। তোমার সাথে আরও ২ বছর ভাগ করে নিতে পারাটা আনন্দের ছিল। তোমার পরবর্তী। তোমার নতুন অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা এবং সুখী হও। তোমাকে ভালোবাসি।'
উত্তরে মেসি বলেছেন, 'ধন্যবাদ নে! সব কিছুর পরও আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি এবং প্রতিদিন ভাগ করে নিয়েছি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি কিছু পাগলাটে, কিন্তু মানুষ তুমি দারুন।আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নেইমার।'
আর এই বার্তা পড়ে সুয়ারেজ লিখেছেন,' কি সুন্দর বার্তা মেসি। নেইমারের সাথে আপনাকে আবার একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো। একে অপরের প্রতি এই ভালবাসা, সর্বদা সবকিছুতে একে অপরকে সমর্থন করা আরও সুন্দর! আমি তোমাদের ভালোবাসি বন্ধুরা।'
তিনজনের এই বার্তা পড়ে একটা কথাই বলতে হয়, বন্ধুত্বের জয় হোক।
পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদকে বহুবার ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন করিম বেনজেমা। ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচেও তাই করলেন। তার গোলে ড্র করে মৌসুম শেষ করেছে রিয়াল।
ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে। ম্যাচের প্রথমার্ধটা গোল শূন্য থেকে যায়। এই সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
তবে বিরতি থেকে ফিরে চার মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় অ্যাথলেটিক। ৪৯ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে লক্ষ্য বরাবর শট নেন ওয়েন সানচেত। তবে তিবু কুর্তোয়া দারুণভাবে সেটা প্রতিহত করেন। কিন্তু তিনি উল্লাসটা খুব দ্রুত করে ফেলেন, বলের দিকে তার নজর ছিল না। আর সেই সুযোগটা নেন সানচেত। আদায় করে নেন গোল।
সেই গোল হজম করে হার দিয়ে মৌসুম শেষের শঙ্কায় পড়েছিল রিয়াল। তবে প্রতিবার যেমন শেষবেলায় ত্রাতা হতেন বেনজেমা, এবারও তাই হলেন। গোল শোধ করতে মরিয়া মাদ্রিদিয়ানরা সেটা আদায় করে ৭২ মিনিটে। তবে সেটা নিজেদের পায়ের জাদুর নৈপুণ্যে নয়। ডি বক্সের ভেতরে মিলিতাওকে ফাউল করেন জুরি বারচিকে। হলুদ কার্ডের সঙ্গে জরিমানা হিসেবে গুনেন পেনালটি। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন বেনজেমা।
গোলের পরে তাকে নিয়ে সতীর্থরা মেতে উঠেন উল্লাসে। কারণ এটাই যে ছিল তার শেষ ম্যাচ। বিদায়ী ম্যাচটা গোল করে রাঙালেন বেনজেমা।
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন ২০২২'র ব্যালন ডি'অর জয়ী করিম বেনজেমা। ক্লাবের তরফ থেকে আজ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'রিয়াল মাদ্রিদ এবং আমাদের অধিনায়ক করিম বেনজেমা এই ক্লাবের হয়ে তার অসাধারণ ও অবিস্মরণীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানার জন্য রাজি হয়েছে।'
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।