
এখন বাংলাদেশ থেকে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ায় ফ্রি কল করে উদ্বিগ্ন পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক ও সিরিয়ায় কলের ক্ষেত্রে কোনো কলচার্জ প্রযোজ্য হবে না।
প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ থেকে তুরস্ক এবং সিরিয়ার আইএসডি আউটগোয়িং কল করার চার্জ ফ্রি করে দিয়েছে, যাতে সবাই তাদের প্রিয়জনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। একই সঙ্গে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা থেকে যারা বেঁচে ফিরছেন, তাদের গল্প যেমন মর্মাহত করেছে, তেমনি নতুন আশার সঞ্চারও করছে। ভয়াবহ এ ভূমিকম্প নিয়ে ইতিমধ্যেই শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার, দিয়েছে প্রয়োজনীয় সহায়তা।
নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দাম নিয়ে উৎপাদনকারী ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের বচসায় বেরিয়ে এসেছে বিভিন্ন পর্যায়ে মূল্য নির্ধারণের ফাঁকফোকর। মিল গেটে বেশি দাম রাখা, চালানে যে দর লেখা হয় তার চেয়ে বেশি নেওয়া, বিভিন্ন পর্যায়ে কেনা দর লুকিয়ে রাখার মতো বিষয়গুলো নিজেদের বক্তব্যেই তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।
আসন্ন রমজান উপলক্ষে পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এমন তথ্য উঠে আসে ব্যবসায়ীদের বক্তব্যে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের বিভিন্ন পর্যায়ের বিক্রিতে সঠিক দাম উল্লেখ করে রসিদ দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে পাইকারি ও উৎপাদকদের বচসার মধ্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ‘কালো ব্যবসা’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, পণ্য কেনাবেচার সময় রসিদ না দেওয়া কিংবা এক দামের রসিদ দিয়ে অন্য দাম নেওয়াÑ এগুলো ব্যবসায়ের কালো অধ্যায়। লাভ করবেন আর কাগজ দেবেন না, এটা হবে না। তবে এফবিসিসিআই সভাপতির এমন বক্তব্যের পর বচসায় জড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে জসিম উদ্দিন বলেন, নীতিনৈতিকতা নিয়ে ব্যবসা করতে হবে। খারাপ কিছু মানুষ থাকতে পারে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। অল্প কিছু ব্যবসায়ীর এমন আচরণের কারণে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের দুর্নাম হয়। বিক্রির সময় রসিদ না দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে এফবিসিসিআই একটি কমিটি গঠন করে কাজ করবে বলে সভায় ঘোষণা দেন তিনি।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসানসহ ব্যবসায়ী নেতারা। এ ছাড়া মেঘনা, সিটি, টিকেসহ বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন খাতের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাজারে সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পরিশোধিত চিনি ও খোলা ভোজ্য তেল কেন বিক্রি করা হয়? এর উত্তরে তারা বলেন, মিলের মালিকরা তাদের সরকারনির্ধারিত ক্রয়মূল্যের রসিদ দেন না।
তবে মিল মালিকরা দ্রুতই এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে এটা নিয়ে বচসায় জড়ান উভয় পক্ষের ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সভায় জানান, তারা বেসরকারি মিলগুলো থেকে সরকার-নির্ধারিত ক্রয়মূল্যে পরিশোধিত চিনি ও খোলা সয়াবিন তেল কিনতে পারেন না। যে দামে কেনেন, তার সঠিক রসিদও মিলগুলো দেয় না। এ কারণে বাধ্য হয়ে তাদের সরকারনির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়। কিন্তু কেউ দামের রসিদ চাইলে তারা দেখাতে পারেন না।
আসন্ন রোজায় পণ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে সভায় তেল ও চিনি ব্যবসায়ীরা মূল্য নির্ধারণ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়ান। বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, মিলগুলো আমাদের রসিদ দিচ্ছে এক দরে, আর টাকা নিচ্ছে অন্য দরে। এসব সত্য কথা বলার জন্য আবার আমাদের মিল গেটে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী।
পাইকারি ব্যবসায়ীদের এ অভিযোগের বিষয়ে মিলগুলোর কাছে জানতে চান এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। এ অভিযোগ অস্বীকার করে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, যারাই পণ্য কিনছেন, তারা নিয়মিত ক্রয়ের রসিদ নিচ্ছেন। যিনি রসিদ পান না, তিনি তো পণ্যই নেন না। কারণ, রসিদ ছাড়া পণ্য বিক্রি হয় না।
দিনাজপুর চেম্বারের পক্ষ থেকে বলা হয়, পাইকারি বিক্রেতারা মেমো দেন না। মেমো দিলেও সেখানে সঠিক দাম উল্লেখ থাকে না। মাঠ পর্যায়ে প্রশাসন সক্রিয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেক হয়রানি হচ্ছেন।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, ‘চিনির দাম কীভাবে নির্ধারণ করা হয়, পাইকারি ব্যবসায়ী হিসেবে তা আমরা জানি না। আবার সরকারনির্ধারিত মূল্যে আমরা মিল থেকে কিনতেও পারি না। তারা রসিদও দেন না। তাহলে আমরা কীভাবে নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করব? উৎপাদকরা যদি মেমো দিতে না পারেন, তাহলে পাইকারি পর্যায়ে মেমো পাবেন না এবং খুচরা পর্যায়ে মেমো পাবেন না। এভাবে হাইড করেই ব্যবসা চলছে। আমি জরিমানার ঝুঁকি নিয়েই ব্যবসা করছি। এ সমস্যার সমাধানে উৎপাদন (মিল), পাইকারি ও খুচরা, তিন পর্যায়েই দাম সুনির্দিষ্ট করে দেওয়ার দাবি জানান এ পাইকারি বিক্রেতা।
এ সময় সেখানে উপস্থিত সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র অ্যাসিসটেন্ট জেনারেল ম্যানেজার তসলিম শাহরিয়ার দাবি করেন, পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি সঠিক নয়। তারা অবশ্যই ইনভয়েস দেন। সেখানে বিক্রির তথ্য উল্লেখ থাকে।
এ সময় বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। মিলগুলোর প্রতিনিধিরা বলেন, ‘আপনারা রসিদ (ইনভয়েস) না পেলে পণ্য কিনবেন না। এর উত্তরে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, প্রশ্নটা রসিদ পাওয়া নিয়ে নয়, নির্ধারিত মূল্যের রসিদ পাচ্ছি কি না, সেটাই দেখার বিষয়। তখন মিলগুলোর প্রতিনিধিদের একজন বলেন, তাহলে আপনি আমাদের থেকে পণ্য নিয়েন না।’
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে উৎসবের সময় পণ্য বিক্রিতে ছাড় দেওয়া হয়। আর আমাদের দেশে উল্টো মূল্যবৃদ্ধি পায়। রমজান মাস এলে দাম বাড়ে, এই বদনাম থেকে বের হতে চাই।’
সভায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, রমজান ও পরবর্তী এক-দুই মাসের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ রয়েছে। সুতরাং সরবরাহের ঘাটতির কারণে মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই।’
তেল রিফাইনারি ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানে সরবরাহ ঠিক রাখতে চিনির আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। মেঘনা গ্রুপের সিনিয়র কর্মকর্তা তসলিম শাহরিয়ার বলেন, আমদানি শুল্ক না কমালে চিনির দাম কমানো সম্ভব না।
নির্দিষ্ট হারে কর প্রদান সাপেক্ষে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন না তোলার বিধানটি ফের চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। একই সঙ্গে কোম্পানি শেয়ারের লভ্যাংশ থেকে উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল করার পাশাপাশি ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত লভ্যাংশ ১ লাখ টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে সিএসই। অপর দিকে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হারের পার্থক্য বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
গতকাল আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নতুন ভবনের সম্মেলনকক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন ডিএসই ও সিএসইর প্রতিনিধিরা।
সরকার ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে এক বছর বিনিয়োগ রাখার শর্তে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অব্যাহত রেখেছিল। একইসঙ্গে এই নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল যে, যারা অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা বৈধ করে নেবে, তাদের কাছে অর্থেক উৎস সম্পর্কে কোনো কর্তৃপক্ষই জানতে চাইবে না। তবে গত বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত আয়ের টাকা কর দিয়ে সাদা করার সুযোগও বাতিল করা হয়। তবে পুঁজিবাজারে কালো টাকার বিনিয়োগ তেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে না এলেও শর্তসাপেক্ষে বিধানটি ফের চালুর দাবি জানিয়েছে সিএসই।
কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ ছাড়াও জিরো কুপন বন্ডের মতো অন্যান্য বন্ডের আয়কে কর অব্যাহতি প্রদান করা ও ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছে সিএসই। আর ডিএসই তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের ব্যবধান বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এনবিআরকে প্রস্তাব দিয়েছে। ডিএসই জানায়, বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হারের পার্থক্য সাড়ে সাত শতাংশ। এই করহারের ব্যবধান সাড়ে ১২ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব দিয়েছে ডিএসই। এছাড়া লেনদেনের ক্ষেত্রে বর্তমানে শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কাটা হয়। সেখান থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক শূন্য ১৫ শতাংশ করতে চায় ডিএসই।
অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের করপোরেট করের হার ৩৭ দশমিক ৫ থেকে ৩০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। গতকাল এনবিআরে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) মার্চেন্ট ব্যাংকের করপোরেট হার ২৫ শতাংশ করার পাশাপাশি পুঁজিবাজারে গতিশীলতা আনতে লভ্যাংশের ওপর কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য জমা দেন মিজান চৌধুরী।
প্রাক-বাজেট আলোচনায় স্বাস্থ্য বীমার প্রসারে এ খাতের ওপর থেকে ট্যাক্স রহিত করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি ইমাম শাহিন বলেন, বীমা আইনে জীবন বীমা পলিসির প্রিমিয়ামের কোনো ভ্যাট প্রদান করতে হয় না। আবার এককভাবে স্বাস্থ্য বীমা করলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করতে হয়। কিন্তু কোনো বীমা গ্রহীতা জীবন বীমার সঙ্গে স্বাস্থ্য বীমা যুক্ত করে পলিসি করলে স্বাস্থ্য বীমার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করতে হয়। এতে প্রিমিয়ামের মাত্রা বেড়ে যায়। স্বাস্থ্য বীমার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে, এর ওপর ট্যাক্স রহিত করার প্রস্তাব করেন তারা। এছাড়া জীবন বীমা পলিসি হোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ ট্যাক্স প্রত্যাহারের প্রস্তাবও করে সংগঠনটি।
সবার দাবি শোনার প্রেক্ষাপটে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমি আশা করব যার যার ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে যেন দাবি না আসে। আমরা যতটুকু গ্রহণ করতে পারব তা করব। আপনাদের যে প্রস্তাবনাগুলো দিয়েছেন তা দেখলাম, নিশ্চিত থাকতে পারেন প্রতিটি প্রস্তাব আমরা যাচাই করে দেখব। সবকিছুর মূলভিত্তি থাকবে রাজস্ব আদায়, ব্যবসা সহজীকরণ, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, শিল্পায়ন তৈরি করা ইত্যাদি।
আলোচনায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মো. ওমর ফারুক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাত্বিক আহমেদ, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড ডি রোজারিও প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অংশ নেন।
ইআরএফের প্রস্তাব নতুন কর আরোপ না করে করের আওতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে অর্থনীতি বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো, রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করা, বকেয়া আদায়ে জোর দেওয়া, ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করাসহ আগাম কর রিফান্ড ব্যবস্থা শক্তিশালী করা, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়টি বিবেবচনায় রেখে শুল্কহার যৌক্তিক করার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সীমিত আয়ের জনগণকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি।
গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, আগামী ৪ বছরের মধ্যে পুরোপুরি না হলেও ৭৫ শতাংশ লেনদেন অনলাইনভিত্তিক (ক্যাশলেস) করার চেষ্টা করছি। মানুষ নগদ টাকার ব্যবহার যত কম করবে; অর্থনৈতিক কার্যক্রম তত বাড়বে। গতকাল বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে এক সমঝোতা স্মারকের অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন গভর্নর।
এই সমঝোতার ফলে বিডার ওয়ান স্টপ সার্ভিসে বাংলাদেশ ব্যাংকের আট সেবা পাওয়া যাবে। এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছে আরও তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংক। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে পাঁচ পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সভাপতিত্ব করেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া। ব্যবসা সহজীকরণ নিশ্চিত করতে আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিডা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে ১৫০টি পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বর্তমানে ওয়ান স্টপ সার্ভিসে ৬৭টি পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে এবং খুব শিগগিরই আরও ১২টি পরিষেবা যুক্ত হবে।
সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে আটটি সেবা বিডার ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে তার মধ্যে রয়েছে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় মেয়াদি ঋণ গ্রহণের অনুমতি, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার দেশ থেকে বিদেশে, বিদেশ থেকে দেশে এবং বিদেশ থেকে বিদেশে হস্তান্তরের অনুমোদন, বিদেশ থেকে কোনো কোম্পানির লভ্যাংশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা। পরামর্শক ফি বিদেশে পাঠানোর অনুমতি।
টেক্সটাইল মিলগুলোর ফেলে দেওয়া বর্জ্য দিয়ে দেশেই মোটা সুতা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু কারখানাগুলো গার্মেন্টস ঝুট ও টেক্সটাইলের বর্জ্য রপ্তানি হওয়ায় তারা উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার করতে না পারার ঝুঁকিতে রয়েছে। এমন অবস্থায় ঝুট রপ্তানি বন্ধের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিল অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
গতকাল রবিবার বিটিএমএর আয়োজনে ‘১৭তম ঢাকা আন্তর্জাতিক টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস মেশিনারিজ এক্সিবিশন’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।
বিটিএমএর সঙ্গে এ এক্সিবিশনের যৌথ আয়োজক তাইওয়ানের চান চাও ইন্টারন্যাশনাল। আগামী ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দিনব্যাপী ১৭তম ডিটিজি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। বিটিএমএর নেতারা জানান, মাঝে কয়েক বছর ঝুট রপ্তানি বন্ধ থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা আবার খুলে দেওয়া হয়েছে এবং সে কারণেই ঝুটের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যেসব কারখানা ঝুট পুনঃ প্রক্রিয়াজাত করে সুতা তৈরি করে, সেই সব দেশীয় সুতার মিল ঝুটের অভাবে বিপাকে পড়েছে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, ২০টির মতো কারখানা ঝুট কাপড় থেকে পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে প্রথমে তুলা, তারপর সুতা তৈরি করছে বলে তিনি জানান। বাংলাদেশে এখনো কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহার খুবই কম করা হচ্ছে। তাই যেসব কারখানা ঝুট কাপড় ব্যবহার করে সুতা তৈরি করে, তাদের সুবিধা দিতে ঝুটের রপ্তানি বন্ধের জন্য তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, বর্তমানে দেশে স্পিনিং মিলের সংখ্যা ৫১০Ñযার সুতা উৎপাদন ক্ষমতা ৩৮০ কোটি কেজি। দেশে প্রায় ছোট-বড় মিলিয়ে ওভেন ফেব্রিকের মিল রয়েছে প্রায় ২০ হাজার; যাদের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৭০০ কোটি মিটার। এ খাতে বর্তমানে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
বিটিএমএর তথ্য মতে, তৈরি পোশাক শিল্পের বিশেষত রপ্তানিমুখী নিট পোশাক খাতের সুতার চাহিদার ৮০ শতাংশ এবং রপ্তানিমুখী ওভেন পোশাক শিল্পের ফেব্রিকের প্রায় ৬০ শতাংশ সরবরাহ করছে সুতা ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে তারা স্থানীয়ভাবে ৭ বিলিয়ন মিটার সুতার সম্পূর্ণই জোগান দিচ্ছে, যার মূল্য ৯ বিলিয়ন ডলারের মতো।
খোকন জানান, ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয়ের তৈরি পোশাক ও কপিং থেকে রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে ৪৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ এসেছে টেক্সটাইল ও ব্লগিং থেকে।
২০০৪ সাল থেকে ক্ষুদ্র পরিসরে এই প্রদর্শনীর যাত্রা শুরু হয়। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী কভিড-১৯ ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এ বছর অনেক প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে না। তবে এ বছর বিশ্বের প্রায় ৩৫ দেশের প্রখ্যাত ১২০০ টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস মেশিনারি কোম্পানি অংশ নিচ্ছে।
মসজিদ ও মাদ্রাসায় ইমামদের সচেতনতা বার্তা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মিরপুরে পিএসসি (পুলিশ স্টাফ কলেজ) কনভেনশন হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকার মসজিদের ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মতবিনিময় সভায় ডিএনসিসি এলাকার এক হাজার ইমাম ও খতিব অংশগ্রহণ করেন।
উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশে ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘আমরা মসজিদে গিয়ে ওয়াক্ত নামাজের সময়, জুমার নামাজের সময় মনোযোগ দিয়ে আপনাদের বয়ান শুনি। আপনারাই পারেন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আপনারাই পারেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। আপনারা মানুষকে জানাবেন বর্ষাকালে এডিস মশার প্রকোপ বেড়ে যায়। এডিস মশার কামড়ে জ্বর হয়, মৃত্যু হয়। জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়। অতএব কোনোভাবে যেন পানি জমে না থাকে’।
মেয়র আরো বলেন, ‘এডিস মশা যখম কামড় দেবে, মশা কিন্তু চিনবে না কে মেয়র, কে কাউন্সিলর, কে ইমাম আর কে খতিব। এডিস মশা সবার জন্যই হুমকি। অতএব এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। একমাত্র সচেতনতা পারে ডেঙ্গু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। যদিও সিটি করপোরেশন থেকে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যকরী লার্ভিসাইডিং করছি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছি। কিন্তু সবার সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, মাটির পাত্র, খাবারের প্যাকেট, অব্যবহৃত কমোড এগুলো দেখিয়ে উপস্থিত ইমামদের সচেতন করেন।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে লাখো লাখো মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার খতিব রয়েছেন। ইমাম ও খতিবরা মসজিদে মুসুল্লিদের ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে সচেতন করলে এই ভয়াবহ মশাবাহিত রোগ থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যেকোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির ও অন্যান্য সাধারণ মানুষের বক্তৃতা থেকে ইমামদের বক্তৃতা বেশি কার্যকর হবে। মসজিদে বিশেষ করে জুমার নামাজের সময় বয়ানে, খুতবায় মুসুল্লিরা ইমামগণের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন। আপনাদের বার্তা মানুষের মনে গেথে থাকে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমানের সঞ্চালনায় ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, কাউন্সিলর, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদকে বহুবার ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন করিম বেনজেমা। ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচেও তাই করলেন। তার গোলে ড্র করে মৌসুম শেষ করেছে রিয়াল।
ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নামে অ্যাথলেটিক ক্লাবের সঙ্গে। ম্যাচের প্রথমার্ধটা গোল শূন্য থেকে যায়। এই সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
তবে বিরতি থেকে ফিরে চার মিনিটের মাথায় গোল পেয়ে যায় অ্যাথলেটিক। ৪৯ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় একাধিক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে লক্ষ্য বরাবর শট নেন ওয়েন সানচেত। তবে তিবু কুর্তোয়া দারুণভাবে সেটা প্রতিহত করেন। কিন্তু তিনি উল্লাসটা খুব দ্রুত করে ফেলেন, বলের দিকে তার নজর ছিল না। আর সেই সুযোগটা নেন সানচেত। আদায় করে নেন গোল।
সেই গোল হজম করে হার দিয়ে মৌসুম শেষের শঙ্কায় পড়েছিল রিয়াল। তবে প্রতিবার যেমন শেষবেলায় ত্রাতা হতেন বেনজেমা, এবারও তাই হলেন। গোল শোধ করতে মরিয়া মাদ্রিদিয়ানরা সেটা আদায় করে ৭২ মিনিটে। তবে সেটা নিজেদের পায়ের জাদুর নৈপুণ্যে নয়। ডি বক্সের ভেতরে মিলিতাওকে ফাউল করেন জুরি বারচিকে। হলুদ কার্ডের সঙ্গে জরিমানা হিসেবে গুনেন পেনালটি। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন বেনজেমা।
গোলের পরে তাকে নিয়ে সতীর্থরা মেতে উঠেন উল্লাসে। কারণ এটাই যে ছিল তার শেষ ম্যাচ। বিদায়ী ম্যাচটা গোল করে রাঙালেন বেনজেমা।
রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ১৪ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন ২০২২'র ব্যালন ডি'অর জয়ী করিম বেনজেমা। ক্লাবের তরফ থেকে আজ এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, 'রিয়াল মাদ্রিদ এবং আমাদের অধিনায়ক করিম বেনজেমা এই ক্লাবের হয়ে তার অসাধারণ ও অবিস্মরণীয় ক্যারিয়ারের ইতি টানার জন্য রাজি হয়েছে।'
মেসি, সুয়ারেজ ও নেইমার একসঙ্গে তিন মৌসুম খেলেছেন বার্সেলোনায়। ২০১৪ সালে লিভারপুল থেকে সুয়ারেজ বার্সায় আসার পর এবং ২০১৭-তে নেইমার পিএসজিতে পাড়ি জমানো পর্যন্ত ‘এমএসএন’ এর রাজত্ব ছিল বার্সেলোনায়। সে সময়ে এই তিনজন মিলে ৩৬৪ গোল করার পাশাপাশি অ্যাসিস্ট করেছেন ১৭৩টি। এই ত্রয়ী বার্সাকে দুটি লা লিগা খেতাব, তিনটি কোপা দেল রে এবং একটি করে সুপারকোপা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, উয়েফা সুপার কাপ ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন।
সুয়ারেজ-নেইমার বার্সা ছেড়ে চলে গেলে মাঠের জুটি ভাঙলেও বন্ধুত্ব অটুট এমএসএনের। সেদিন মেসিকে মাঠে দর্শকরা দুয়ো ধনি দলে তার প্রতিবাদ করেছেন সুয়ারেজ নেইমার। মেসির পিএসজি ছাড়ার পর নেইমার বন্ধুর প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন, সুয়ারেজও জানিয়েছেন সাধুবাদ।
নেইমার ইনস্টাগ্রামে একটি বিদায় নোট পোস্ট করেছেন মেসিকে উদ্দেশ্য করে, 'ভাই.. আমরা যেমন ভেবেছিলাম তেমনটা হয়নি কিন্তু আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছিলাম। তোমার সাথে আরও ২ বছর ভাগ করে নিতে পারাটা আনন্দের ছিল। তোমার পরবর্তী। তোমার নতুন অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা এবং সুখী হও। তোমাকে ভালোবাসি।'
উত্তরে মেসি বলেছেন, 'ধন্যবাদ নে! সব কিছুর পরও আমরা একসাথে খেলা উপভোগ করেছি এবং প্রতিদিন ভাগ করে নিয়েছি। তোমার জন্য শুভ কামনা। তুমি কিছু পাগলাটে, কিন্তু মানুষ তুমি দারুন।আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নেইমার।'
আর এই বার্তা পড়ে সুয়ারেজ লিখেছেন,' কি সুন্দর বার্তা মেসি। নেইমারের সাথে আপনাকে আবার একসাথে দেখে খুব ভালো লাগলো। একে অপরের প্রতি এই ভালবাসা, সর্বদা সবকিছুতে একে অপরকে সমর্থন করা আরও সুন্দর! আমি তোমাদের ভালোবাসি বন্ধুরা।'
তিনজনের এই বার্তা পড়ে একটা কথাই বলতে হয়, বন্ধুত্বের জয় হোক।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।