
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হবে ‘ইনভেস্টমেন্ট হাব’। বিশে^র বড় বড় বিনিয়োগকারীকে সামনে তুলে ধরা হবে সুযোগ ও সক্ষমতার চিত্র। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো ও শিল্প খাতে বিনিয়োগের তথ্য। বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ বিজনেস সামিট আয়োজন করছে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
১১ থেকে ১৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলন হবে। আগামীকাল শনিবার সামিটের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে বর্তমান বোর্ড এ সামিট আয়োজন করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআইয়ের বোর্ডরুমে বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে জসিম উদ্দিন জানান, সামিটে অংশগ্রহণ করতে দেশি-বিদেশিসহ ৭৫৫ জন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে বিদেশিদের রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা ২০০। সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যসহ আটটি দেশের মন্ত্রীরা প্রতিনিধিদল নিয়ে সামিটে আসছে। তিনি জানান, দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের সব সুযোগ-সুবিধা সামিটে তুলে ধরা হবে। সামিটে ১৫টি ব্যবসায়ী সংগঠন এবং ১৫টি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে। তারা তাদের সেক্টরের ব্যবসায়িক বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধাগুলো তুলে ধরবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করতে একটি ফ্ল্যাগশিপ বিজনেস ইভেন্ট হিসেবে কাজ করবে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি ও সামর্থ্য, বাজার সম্ভাবনা এবং উদীয়মান খাতগুলোকে তুলে ধরা হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।
জসিম উদ্দিন বলেন, ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এবার সামিটের যাত্রা শুরু হলো। আগামীতে বোর্ড প্রতি দুই বছর পরপর কিংবা সম্ভব হলে প্রতি বছর সামিটের আয়োজন অব্যাহত রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, অর্থনীতি এবং সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোকে বৈশ্বিক ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক, নীতিনির্ধারক, বাজার বিশ্লেষক, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তুলে ধরা বাংলাদেশ বিজনেস সামিট আয়োজনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সামিটে স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এমন ১০ ব্যক্তিকে ১০টি ক্যাটাগরিতে বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে উৎপাদিত সেরা পণ্যগুলোকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে সামিটের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৩’।
বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বিদেশি ঋণের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল সরকার। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে উন্নয়ন ব্যয় মেটাচ্ছে সরকার। এতে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিচ্ছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিভল্ভমেন্ট (নতুন টাকার জোগান) ফান্ড থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় প্রায় শতভাগ বেশি। অবশ্য গত ডিসেম্বরে এ তহবিল থেকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ আরও বেশি ছিল। গেল দুই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিশোধে মনোযোগী হয়েছে সরকার।
প্রতি সপ্তাহের রবি ও মঙ্গলবার সরকার তার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের জন্য নিলামের ব্যবস্থা করে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যদি নিলামে বন্ড বা বিল কিনতে ব্যর্থ হয় তাহলে তা ডিভল্ভমেন্ট করা হয়। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন টাকার রিজার্ভ থেকে সরকারকে ঋণ দেওয়া হয়। এটিকেই নতুন টাকা ছাপিয়ে ঋণে হিসেবে গণ্য করে অনেকেই। গেল বছর কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর মানুষের ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর আস্থার সংকট তৈরি হয়। পাশাপাশি ব্যাংকে টাকা রাখলে ফেরত পাওয়া যাবে না এমন গুজবেও বড় প্রভাব পড়ে ব্যাংক খাতে। এতে দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকই তারল্য সংকটে পড়ে। যে কারণে সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড কিনতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিভল্ভমেন্ট ফান্ড থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের শুরুতে ছিল ৫৩ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা, যা চলতি ফেব্রুয়ারি শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে এই ফান্ডে ঋণ নেওয়া বেড়েছে ৯৯ দশমিক ১৪ শতাংশ।
আর অর্থবছরের শুরুতে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ডসহ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের স্থিতি ছিল ৫৯ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এই ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২১ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসেই সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার ঋণ নেয়। এর মধ্যে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ড থেকে (নতুন টাকা ছাপিয়ে) ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। অবশ্য জানুয়ারিতে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ডে কিছু অর্থ পরিশোধ করলেও ফেব্রুয়ারিতে আবারও ওই তহবিল থেকে ঋণ নেয়।
জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ১৯ হাজার ১২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করে, যার মধ্যে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ডের ১২ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকাও ফেরত দিয়েছে। পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে আবারও ডিভল্ভমেন্ট ফান্ড থেকে ৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা নতুন ঋণ নেয় সরকার। জানুয়ারিতে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ডে সরকারের ঋণ ছিল ৪৮ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। যদিও সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫ হাজার ৪১১ কোটি টাকা পরিশোধ করায় গত মাসের চেয়ে এই খাতে ঋণ কমেছে ১ হাজার ৪১ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বিশ^ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলতি অর্থ বছর ডলার বিক্রির কারণে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে এসেছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধারের প্রবণতা বাড়িয়েছে। অপর দিকে সরকার ট্রেজারি বন্ড ও বিলের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিভল্বমেন্টের মাধ্যমে ঋণ নিচ্ছে। এতে মানি ক্রিয়েশন বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৩৪ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। আর গত ফেব্রুয়ারিতে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ব্যাংক খাতে সরকারের নতুন ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণ ২ লাখ ১০ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট-ঘাটতি পূরণে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। আগের অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য সরকারের। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকেও ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।
বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য ক্রস-বর্ডার রেমিট্যান্সসেবা সহজতর করার লক্ষ্যে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের সঙ্গে একটি রেমিট্যান্স বিতরণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ব্যাংক এশিয়া। গত ৭ মার্চ ব্যাংক এশিয়া টাওয়ারে ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও এমডি আদিল চৌধুরীর উপস্থিতিতে ব্যাংকের ডিএমডি এস এম ইকবাল হোছাইন এবং নগদ-এর চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শেখ আমিনুর রহমান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তির আওতায় বিদেশে অবস্থানরত ব্যাংক এশিয়ার অংশীদার এক্সচেঞ্জ হাউজ/এমটিও/ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের পাঠানো রেমিট্যান্স সরাসরি সংশ্লিষ্ট নগদ ওয়ালেটে জমা হবে, যা সুবিধাভোগী তার প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য অ্যাকাউন্টে লেনদেন বা উত্তোলন করতে পারবে।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আদায়ে তলানিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বিশে^ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়া নেপাল, ভুটান, ভারতের চেয়েও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে কর আদায়ে কর অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ‘কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, যা বাস্তবায়নে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পটি আগামী রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের কথা রয়েছে।
কর আদায়ে পিছিয়ে থাকায় বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবেও আইএমএফসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীরা কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে বলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে কর-জিডিপির অনুপাত ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর শর্ত মানলে ২০২৪ সালের মধ্যে এ অনুপাত ১৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে, যার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১ হাজার ৬৮৬ কোটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের আইডিএ প্রোগ্রামের আওতায় এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে।
প্রকল্পটির ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, এর মোট ব্যয়ের ৪২ শতাংশই ব্যয় হবে প্রায় ৯১ হাজার বর্গফুটের চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ভবন নির্মাণে। এ ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৭১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট প্রশিক্ষণ একাডেমি ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ৪১৬ কোটি টাকা। এ দুটি ভবণ নির্মাণের কারণ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর বলছে, দেশের ৯০ ভাগ আমদানি-রপ্তানি এ বন্দরের মাধ্যমে হয়। ২০১৯ সালে এ বন্দরে ৪৫ হাজার ৭০০ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে সাত হাজার মানুষ সেবা নিতে আসেন। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমস চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের নিকটবর্তী কলকাতা বলয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো ছাড়াও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কথা বিবেচনায় চট্টগ্রাম কাস্টমসের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করে এনবিআর।
প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি বাস্তবায়নে পরামর্শক সেবায় ব্যয় হবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা, ২ লাখ বর্গফুটের চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের আবাসিক ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ১৩৩ কোটি টাকা, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণে ৬০ কোটি, চট্টগ্রাম কাস্টমসের জন্য ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি কিনতে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের জন্য ১৫ কোটি এবং চারটি গাড়ি ভাড়ায় ৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বেনাপোল স্থলবন্দরগুলোর ব্যয়সাশ্রয়ী, অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং সহনশীল বাণিজ্যিক অবকাঠামোর উন্নয়ন; আন্তর্জাতিক মানদ- ও সর্বোত্তম ব্যবহারবিধি মোতাবেক আধুনিক শুদ্ধ পদ্ধতি গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাাণিজ্যিক ব্যয় কমানো, বাণিজ্য সম্প্রসারণমূলক শুল্ক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং রূপকল্প-২০৪১-এর আলোকে বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়ানো, সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নয়ন এবং শুষ্ক বিভাগের মানবসম্পদ, আর্থিক এবং অবকাঠামোগত সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে সব পর্যায়ে শুল্ক প্রশাসনের সক্ষমতা বাড়ানো এবং যথাযথ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে কাস্টমস পরিষেবার কার্যকারিতা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা এর মূল উদ্দেশ্য।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ছিল জিডিপির ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা হল জিডিপির ১৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। শক্তিশালী এবং গতিশীল কর-কাস্টম প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে পারলে এটি অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে করে এনবিআর।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার জন্য বাংলাদেশকে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কিছু নিয়ম বিশেষ করে শুল্ক সংরক্ষণ ও প্যারা-শুষ্কসংক্রান্ত বিধি মেনে চলতে হবে, যেগুলো এতদিন শিথিল ছিল। ভবিষ্যতে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও কঠোর বিধিসম্পন্ন বৈশ্বিক বাণিজ্যিক পরিবেশের সম্মুখীন হওয়ার জন্য ও তা মেনে চলার জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে। বহুপক্ষীয় নিয়মকানুন মেনে চলার পাশাপাশি উন্নত শুল্ক অবকাঠামো ও প্রশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন হবে রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের অন্যতম কৌশল।
গত ৫ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপালের মধ্যে আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রোগ্রামের আওতায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে এ দেশগুলো মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়বে। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ও সেবার মান বৃদ্ধি করা হবে। সব অংশীজন যেমন ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স গেস শিপিং এজেন্টসের পাশাপাশি নারী ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। প্রশিক্ষণ একাডেমিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে সব কাস্টমস কর্মকর্তার দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। সর্বোপরি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রকল্পটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বিধায় এটি জাতীয় ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
দেশে পাটবীজের যে চাহিদা তার বড় অংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। মূলত পাশর্^বর্তী দেশ ভারত থেকে এ বীজ আমদানি করা হয়। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাট ও পাট জাতীয় (মেস্তা ও কেনাফ) ফসলের বীজের বার্ষিক চাহিদা নির্ধারিত হয়েছে ৬ হাজার ৩৬৯ টন। এরমধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা হবে প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন বীজ, যা মোট চাহিদার ৮১ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৯তম সভায় ভারত থেকে পাট বীজ আমদানির এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আগামী অর্থবছরে কৃষকের চাহিদার প্রেক্ষিতে অবশিষ্ট ১ হাজার ৩০০ টন পাট বীজ সরবরাহ করবে বিএডিসি। সভায় জানানো হয়, ২০২৩-২৪ বছরে প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট, মেস্তা ও কেনাফ ফসল চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে চাষের জন্য মোট পাট বীজের চাহিদা হলো প্রায় ৬ হাজার ৪০০ টন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬০০ টন ভারতীয় তোষা পাটের জাত জেআরও-৫২৪ এবং ৫৭৬ টন মেস্তা/কেনাফের বীজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দেশ রূপান্তরের হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আমদানির অনুমতি পাওয়ায় ইতিমধ্যেই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাট বীজ আমদানি শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার বন্দর দিয়ে চলতি বছরের প্রথম পাটবীজের চালান ভারত থেকে বন্দরে প্রবেশ করে। ওই দিন বন্দর দিয়ে ১১টি ট্রাকে ২৪৯ টন পাট বীজ আমদানি হয়েছে। আর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রক্রিয়া শেষে আমদানিকৃত এসব পাটের বীজ ছাড় করে নিয়েছেন আমদানিকারকরা। বৃহস্পতিবারও পাট বীজ আমদানি হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হায়াৎ মোহাম্মদ শেরেগুল বলেন, দেশে পাট বীজের যে চাহিদা রয়েছে তার বেশিরভাগই ভারত থেকে আমদানি করা হয়। ইতিমধ্যেই জয়পুরহাট, বগুড়া, যশোর, ঢাকা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আমদানিকারকরা আমদানির অনুমতি (আইপি) পেয়েছেন। তিনি জানান, ভারত থেকে প্রতি টন পাট বীজ ৪০০-৫০০ ডলার মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে। এসব পাট বীজের জার্মিনেশন টেস্ট রিপোর্ট পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার বন্দর থেকে ছাড়করণ করে আমদানিকারকদের নিকট সরবরাহ করা হচ্ছে।
চলতি ২০২২-২৩ উৎপাদন বছরে পাঁচ হাজার টন পাট বীজ আমদানির অনুমতির বিপরীতে প্রকৃত আমদানি হয়েছিল ৪ হাজার ১৬৬ টন।
আগামী দুই বছরে দুই হাজার ইউনিয়নে নারী ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখতে কাজ করবে গ্রামীণফোন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের চেতনার সঙ্গে একাত্ম হয়ে গ্রামীণফোন ডিজিটাল প্রতিপাদ্যের অধীনে ‘ইন্টারনেট এর দুনিয়া সবার’ শীর্ষক একটি দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যার লক্ষ্য লিঙ্গ সমতায় উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার। গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় গ্রামীনফোন।
দুই বছরব্যাপী এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে সারা দেশে উঠান বৈঠক আয়োজিত হবে। যার মাধ্যমে যেসব নারীর প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ নেই কিংবা সীমিত সুযোগ রয়েছে তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হবে এবং তাদের ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন করা হবে। ২ হাজার ইউনিয়নের গ্রাম ও প্রান্তিক অঞ্চলের নারীদের বিশেষ এ উঠান বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে যেখানে ইন্টারনেট তাদের জীবনকে কীভাবে উন্নত করতে পারে এবং সম্ভাবনা উন্মোচনে সাহায্য করতে পারে তা নিয়ে সচেতন করা হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।