
প্রান্তিক পর্যায়ে খামারগুলোতে ব্রয়লার মুগির মাংস উৎপাদনের খরচ ১৫০-১৬০ টাকা হলেও বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে তা অন্তত আরও ২০ টাকা কম। কিন্তু ভোক্তাপর্যায়ে মুরগির কেজি ২৫০-২৬০ টাকা বিক্রি করা উচিৎ নয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর টিসিবি ভবনে ‘পাইকারি ও খুচরা পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ভোক্তার মহাপরিচালক বলেন, মুরগির উৎপাদন খরচ যেখানে ১৬৭ টাকা সেখানে মুরগির মূল্য ২৫০ টাকা কেন তা খতিয়ে দেখা হবে খুব দ্রুত। তিনি আরও বলেন, দোকানে অবশ্যই মূল্য তালিকা থাকতে হবে, ক্রয়-বিক্রয় রশিদ থাকতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে বাজার কমিটিকে দায়ী করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে ব্যবসা করবেন তবে তা যেন বাজারকে অস্থিতিশীল না করে।
খামারে মুগির মাংস উৎপাদন নিয়ে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক কাজী জাহান বলেন, প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ প্রায় ৩৫-৪০ টাকা। যা ৬০ টাকায় বিক্রি করে আগের বছরের লোকসান পুষাচ্ছেন তারা। এ ছাড়া প্রতিকেজি মুরগি ১৪০-১৫০ টাকায় উৎপাদন করে পাইকারিতে ২০০ টাকা বিক্রি করছে তারা। এ কারণে বাজারে মুরগির দাম বেড়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
সভায় অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাজারের ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ের ওপর ভিত্তি করে যদি ব্যবসায়ীরা দাম নির্ধারণ করতে চায় সেটা কৃষি বিপণন আইনের ব্যত্যয় হবে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কত লাভ করা যাবে সেটাও নির্ধারণ আছে। সেলস ম্যানেজমেন্ট ঠিক নেই। আমরা আইন অনুযায়ী কাজ করব।
বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বিদেশি ঋণের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল সরকার। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে উন্নয়ন ব্যয় মেটাচ্ছে সরকার। এতে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিচ্ছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিভল্ভমেন্ট (নতুন টাকার জোগান) ফান্ড থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় প্রায় শতভাগ বেশি। অবশ্য গত ডিসেম্বরে এ তহবিল থেকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ আরও বেশি ছিল। গেল দুই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিশোধে মনোযোগী হয়েছে সরকার।
প্রতি সপ্তাহের রবি ও মঙ্গলবার সরকার তার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের জন্য নিলামের ব্যবস্থা করে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যদি নিলামে বন্ড বা বিল কিনতে ব্যর্থ হয় তাহলে তা ডিভল্ভমেন্ট করা হয়। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন টাকার রিজার্ভ থেকে সরকারকে ঋণ দেওয়া হয়। এটিকেই নতুন টাকা ছাপিয়ে ঋণে হিসেবে গণ্য করে অনেকেই। গেল বছর কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর মানুষের ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর আস্থার সংকট তৈরি হয়। পাশাপাশি ব্যাংকে টাকা রাখলে ফেরত পাওয়া যাবে না এমন গুজবেও বড় প্রভাব পড়ে ব্যাংক খাতে। এতে দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকই তারল্য সংকটে পড়ে। যে কারণে সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড কিনতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিভল্ভমেন্ট ফান্ড থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের শুরুতে ছিল ৫৩ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা, যা চলতি ফেব্রুয়ারি শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে এই ফান্ডে ঋণ নেওয়া বেড়েছে ৯৯ দশমিক ১৪ শতাংশ।
আর অর্থবছরের শুরুতে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ডসহ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের স্থিতি ছিল ৫৯ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এই ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২১ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসেই সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার ঋণ নেয়। এর মধ্যে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ড থেকে (নতুন টাকা ছাপিয়ে) ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। অবশ্য জানুয়ারিতে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ডে কিছু অর্থ পরিশোধ করলেও ফেব্রুয়ারিতে আবারও ওই তহবিল থেকে ঋণ নেয়।
জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ১৯ হাজার ১২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করে, যার মধ্যে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ডের ১২ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকাও ফেরত দিয়েছে। পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে আবারও ডিভল্ভমেন্ট ফান্ড থেকে ৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা নতুন ঋণ নেয় সরকার। জানুয়ারিতে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ডে সরকারের ঋণ ছিল ৪৮ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। যদিও সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫ হাজার ৪১১ কোটি টাকা পরিশোধ করায় গত মাসের চেয়ে এই খাতে ঋণ কমেছে ১ হাজার ৪১ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বিশ^ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলতি অর্থ বছর ডলার বিক্রির কারণে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে এসেছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধারের প্রবণতা বাড়িয়েছে। অপর দিকে সরকার ট্রেজারি বন্ড ও বিলের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিভল্বমেন্টের মাধ্যমে ঋণ নিচ্ছে। এতে মানি ক্রিয়েশন বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৩৪ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। আর গত ফেব্রুয়ারিতে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ব্যাংক খাতে সরকারের নতুন ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণ ২ লাখ ১০ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট-ঘাটতি পূরণে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। আগের অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য সরকারের। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকেও ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।
বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য ক্রস-বর্ডার রেমিট্যান্সসেবা সহজতর করার লক্ষ্যে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের সঙ্গে একটি রেমিট্যান্স বিতরণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ব্যাংক এশিয়া। গত ৭ মার্চ ব্যাংক এশিয়া টাওয়ারে ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও এমডি আদিল চৌধুরীর উপস্থিতিতে ব্যাংকের ডিএমডি এস এম ইকবাল হোছাইন এবং নগদ-এর চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শেখ আমিনুর রহমান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তির আওতায় বিদেশে অবস্থানরত ব্যাংক এশিয়ার অংশীদার এক্সচেঞ্জ হাউজ/এমটিও/ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের পাঠানো রেমিট্যান্স সরাসরি সংশ্লিষ্ট নগদ ওয়ালেটে জমা হবে, যা সুবিধাভোগী তার প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য অ্যাকাউন্টে লেনদেন বা উত্তোলন করতে পারবে।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আদায়ে তলানিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বিশে^ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়া নেপাল, ভুটান, ভারতের চেয়েও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে কর আদায়ে কর অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ‘কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, যা বাস্তবায়নে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পটি আগামী রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের কথা রয়েছে।
কর আদায়ে পিছিয়ে থাকায় বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবেও আইএমএফসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীরা কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে বলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে কর-জিডিপির অনুপাত ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর শর্ত মানলে ২০২৪ সালের মধ্যে এ অনুপাত ১৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে, যার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১ হাজার ৬৮৬ কোটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের আইডিএ প্রোগ্রামের আওতায় এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে।
প্রকল্পটির ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, এর মোট ব্যয়ের ৪২ শতাংশই ব্যয় হবে প্রায় ৯১ হাজার বর্গফুটের চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ভবন নির্মাণে। এ ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৭১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট প্রশিক্ষণ একাডেমি ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ৪১৬ কোটি টাকা। এ দুটি ভবণ নির্মাণের কারণ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর বলছে, দেশের ৯০ ভাগ আমদানি-রপ্তানি এ বন্দরের মাধ্যমে হয়। ২০১৯ সালে এ বন্দরে ৪৫ হাজার ৭০০ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে সাত হাজার মানুষ সেবা নিতে আসেন। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমস চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের নিকটবর্তী কলকাতা বলয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো ছাড়াও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কথা বিবেচনায় চট্টগ্রাম কাস্টমসের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করে এনবিআর।
প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি বাস্তবায়নে পরামর্শক সেবায় ব্যয় হবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা, ২ লাখ বর্গফুটের চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের আবাসিক ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ১৩৩ কোটি টাকা, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণে ৬০ কোটি, চট্টগ্রাম কাস্টমসের জন্য ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি কিনতে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের জন্য ১৫ কোটি এবং চারটি গাড়ি ভাড়ায় ৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বেনাপোল স্থলবন্দরগুলোর ব্যয়সাশ্রয়ী, অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং সহনশীল বাণিজ্যিক অবকাঠামোর উন্নয়ন; আন্তর্জাতিক মানদ- ও সর্বোত্তম ব্যবহারবিধি মোতাবেক আধুনিক শুদ্ধ পদ্ধতি গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাাণিজ্যিক ব্যয় কমানো, বাণিজ্য সম্প্রসারণমূলক শুল্ক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং রূপকল্প-২০৪১-এর আলোকে বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়ানো, সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নয়ন এবং শুষ্ক বিভাগের মানবসম্পদ, আর্থিক এবং অবকাঠামোগত সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে সব পর্যায়ে শুল্ক প্রশাসনের সক্ষমতা বাড়ানো এবং যথাযথ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে কাস্টমস পরিষেবার কার্যকারিতা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা এর মূল উদ্দেশ্য।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ছিল জিডিপির ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা হল জিডিপির ১৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। শক্তিশালী এবং গতিশীল কর-কাস্টম প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে পারলে এটি অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে করে এনবিআর।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার জন্য বাংলাদেশকে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কিছু নিয়ম বিশেষ করে শুল্ক সংরক্ষণ ও প্যারা-শুষ্কসংক্রান্ত বিধি মেনে চলতে হবে, যেগুলো এতদিন শিথিল ছিল। ভবিষ্যতে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও কঠোর বিধিসম্পন্ন বৈশ্বিক বাণিজ্যিক পরিবেশের সম্মুখীন হওয়ার জন্য ও তা মেনে চলার জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে। বহুপক্ষীয় নিয়মকানুন মেনে চলার পাশাপাশি উন্নত শুল্ক অবকাঠামো ও প্রশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন হবে রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের অন্যতম কৌশল।
গত ৫ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপালের মধ্যে আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রোগ্রামের আওতায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে এ দেশগুলো মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়বে। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ও সেবার মান বৃদ্ধি করা হবে। সব অংশীজন যেমন ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স গেস শিপিং এজেন্টসের পাশাপাশি নারী ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। প্রশিক্ষণ একাডেমিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে সব কাস্টমস কর্মকর্তার দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। সর্বোপরি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রকল্পটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বিধায় এটি জাতীয় ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হবে ‘ইনভেস্টমেন্ট হাব’। বিশে^র বড় বড় বিনিয়োগকারীকে সামনে তুলে ধরা হবে সুযোগ ও সক্ষমতার চিত্র। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো ও শিল্প খাতে বিনিয়োগের তথ্য। বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ বিজনেস সামিট আয়োজন করছে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
১১ থেকে ১৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলন হবে। আগামীকাল শনিবার সামিটের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে বর্তমান বোর্ড এ সামিট আয়োজন করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআইয়ের বোর্ডরুমে বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে জসিম উদ্দিন জানান, সামিটে অংশগ্রহণ করতে দেশি-বিদেশিসহ ৭৫৫ জন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে বিদেশিদের রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা ২০০। সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যসহ আটটি দেশের মন্ত্রীরা প্রতিনিধিদল নিয়ে সামিটে আসছে। তিনি জানান, দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের সব সুযোগ-সুবিধা সামিটে তুলে ধরা হবে। সামিটে ১৫টি ব্যবসায়ী সংগঠন এবং ১৫টি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে। তারা তাদের সেক্টরের ব্যবসায়িক বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধাগুলো তুলে ধরবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করতে একটি ফ্ল্যাগশিপ বিজনেস ইভেন্ট হিসেবে কাজ করবে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি ও সামর্থ্য, বাজার সম্ভাবনা এবং উদীয়মান খাতগুলোকে তুলে ধরা হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।
জসিম উদ্দিন বলেন, ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এবার সামিটের যাত্রা শুরু হলো। আগামীতে বোর্ড প্রতি দুই বছর পরপর কিংবা সম্ভব হলে প্রতি বছর সামিটের আয়োজন অব্যাহত রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, অর্থনীতি এবং সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোকে বৈশ্বিক ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক, নীতিনির্ধারক, বাজার বিশ্লেষক, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তুলে ধরা বাংলাদেশ বিজনেস সামিট আয়োজনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সামিটে স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এমন ১০ ব্যক্তিকে ১০টি ক্যাটাগরিতে বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে উৎপাদিত সেরা পণ্যগুলোকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে সামিটের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৩’।
দেশে পাটবীজের যে চাহিদা তার বড় অংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। মূলত পাশর্^বর্তী দেশ ভারত থেকে এ বীজ আমদানি করা হয়। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাট ও পাট জাতীয় (মেস্তা ও কেনাফ) ফসলের বীজের বার্ষিক চাহিদা নির্ধারিত হয়েছে ৬ হাজার ৩৬৯ টন। এরমধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা হবে প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন বীজ, যা মোট চাহিদার ৮১ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৯তম সভায় ভারত থেকে পাট বীজ আমদানির এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আগামী অর্থবছরে কৃষকের চাহিদার প্রেক্ষিতে অবশিষ্ট ১ হাজার ৩০০ টন পাট বীজ সরবরাহ করবে বিএডিসি। সভায় জানানো হয়, ২০২৩-২৪ বছরে প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট, মেস্তা ও কেনাফ ফসল চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে চাষের জন্য মোট পাট বীজের চাহিদা হলো প্রায় ৬ হাজার ৪০০ টন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬০০ টন ভারতীয় তোষা পাটের জাত জেআরও-৫২৪ এবং ৫৭৬ টন মেস্তা/কেনাফের বীজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দেশ রূপান্তরের হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আমদানির অনুমতি পাওয়ায় ইতিমধ্যেই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাট বীজ আমদানি শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার বন্দর দিয়ে চলতি বছরের প্রথম পাটবীজের চালান ভারত থেকে বন্দরে প্রবেশ করে। ওই দিন বন্দর দিয়ে ১১টি ট্রাকে ২৪৯ টন পাট বীজ আমদানি হয়েছে। আর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রক্রিয়া শেষে আমদানিকৃত এসব পাটের বীজ ছাড় করে নিয়েছেন আমদানিকারকরা। বৃহস্পতিবারও পাট বীজ আমদানি হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হায়াৎ মোহাম্মদ শেরেগুল বলেন, দেশে পাট বীজের যে চাহিদা রয়েছে তার বেশিরভাগই ভারত থেকে আমদানি করা হয়। ইতিমধ্যেই জয়পুরহাট, বগুড়া, যশোর, ঢাকা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আমদানিকারকরা আমদানির অনুমতি (আইপি) পেয়েছেন। তিনি জানান, ভারত থেকে প্রতি টন পাট বীজ ৪০০-৫০০ ডলার মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে। এসব পাট বীজের জার্মিনেশন টেস্ট রিপোর্ট পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার বন্দর থেকে ছাড়করণ করে আমদানিকারকদের নিকট সরবরাহ করা হচ্ছে।
চলতি ২০২২-২৩ উৎপাদন বছরে পাঁচ হাজার টন পাট বীজ আমদানির অনুমতির বিপরীতে প্রকৃত আমদানি হয়েছিল ৪ হাজার ১৬৬ টন।
শনিবার ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস। বাঙালি জাতির জীবনে ১৯৭১ সালের এ দিন শেষে এক বিভীষিকাময় ভয়াল রাত নেমে এসেছিল। এদিন মধ্যরাতে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত ‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নীলনকশা অনুযায়ী বাঙালি জাতির কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার রাত ১০টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়েছে।
এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে গণহত্যা দিবসের ওপর আলোচনা সভা হবে। এ ছাড়াও সারা দেশে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গীতিনাট্য এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশনের মিনিপোলগুলোতে গণহত্যার ওপর দুর্লভ আলোকচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র প্রচার করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।
বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা মুছে দেওয়ার চেষ্টায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তারপর ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ব্যাপক গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই নাম অপারেশন সার্চলাইট।
এ অভিযানের নির্দেশনামা তৈরি করেন পাকিস্তানের দুই সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। নির্দেশনামার কোনো লিখিত নথি রাখা হয়নি। গণহত্যার সেই পুরো নির্দেশ মুখে মুখে ফরমেশন কমান্ডার বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হয়। অনেক পরে, ২০১২ সালে মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি’ নামে আত্মজীবনী প্রকাশ করেন। অ·ফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস প্রকাশিত সে আত্মজীবনীতে প্রথমবারের মতো অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে কিছু তথ্য প্রকাশিত হয়।
অপারেশন সার্চলাইট কীভাবে পরিকল্পিত হয়, ১৯৭১ সালের সেই স্মৃতিচারণ করে রাজা লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউজে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চ‚ড়ান্ত করি।’ পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার করা হলো আরও ৩০০০ লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চলল মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করল ঘরবাড়ি, দোকানপাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হলো। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠল শকুনতাড়িত শ্মশান ভ‚মি।’
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয় : ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্তে¡ও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে। সকাল থেকেই সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হেলিকপ্টারযোগে তারা দেশের বিভিন্ন সেনানিবাস পরিদর্শন করে বিকেলের মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে ফিরে আসেন।
ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানাতে অবস্থানরত ২২তম বালুচ রেজিমেন্টকে পিলখানার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিতে দেখা যায়। মধ্যরাতে পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। হানাদার বাহিনী ট্যাঙ্ক ও মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেতসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল নেয়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক-মর্টারের গোলায় ও আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজীর জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্বে থাকা সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থেও এ সংক্রান্ত একটি বিবরণ পাওয়া যায়। সিদ্দিক সালিক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল নিয়াজীর পাশেই ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে অনুগত পাকিস্তানি হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তার চক্রান্ত তিনি খুব কাছে থেকেই দেখেছেন। ২৫ মার্চ, অপারেশন সার্চলাইট শুরুর মুহ‚র্ত নিয়ে তিনি লিখেন ‘নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এমন আঘাত হানার নির্ধারিত মুহ‚র্ত (এইচ-আওয়ার) পর্যন্ত স্থির থাকার চিহ্ন বিলুপ্ত হয়ে গেল। নরকের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল।’
পাকিস্তানি হায়েনাদের কাছ থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯ জন শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যার সবচেয়ে বড় ঘটনাটি। এখানে হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সব পদক্ষেপ চূড়ান্ত করে গোপনে ঢাকা ত্যাগ করে করাচি চলে যান। সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে ২৬ মার্চ (২৫ মার্চ মধ্যরাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যেকোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র লড়াই শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ণ বিজয় অর্জন করে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের।
কাল ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা দিবস। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হতে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। দিনটি উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
দিনের প্রথম প্রহর থেকে মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। দিনটি উপলক্ষে এর মধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ধুয়ে-মুছে, ফুল আর রং-তুলির আঁচড়ে প্রস্তুত করেছে গণপূর্ত বিভাগ।
গণপূর্ত বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, দিনটি উপলক্ষে স্মৃতিসৌধের মিনার থেকে শুরু করে পায়ে চলার পথ সবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। রং-তুলির আঁচড় পড়েছে ফুলের টপসহ না স্থাপনায়। এর মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত রেখেছে গোটা সৌধ এলাকা।
স্বাধীনতা দিবসে সৌধ এলাকা ছাড়াও পুরো উপজেলায় সেজেছে নতুন সাজে। সড়ক-মহাসড়ক ছাড়াও ভবনগুলো সাজানো হয়েছে লাল-সবুজ বাতিতে।
সাভার উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, দিবসটি পালন করতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর উপজেলা চত্বরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করেছে নানা অনুষ্ঠান।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সাদা পোশাকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছেন। গোটা সৌধ এলাকায় বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এ ছাড়াও সড়ক-মহাসড়কে বসানো হয়েছে নিরাপত্তাচৌকি। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
নাম আছে কিন্তু নিবন্ধন নেই। বেশির ভাগেরই কার্যালয় নেই। বছরের পর বছর চলে ইচ্ছেমতো কমিটি দিয়ে। এ নিয়ে আছে কোন্দল। দলাদলিতে সংগঠন ভেঙে একই নামে হয় আরেক সংগঠন। রয়েছে শাখা সংগঠন। ব্যবহার করা হয় মুক্তিযুদ্ধের লোগো। সংগঠনের নেতাদের অনেকে ব্যবহার করেন ভিজিটিং কার্ড। নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনৈতিক কাজের অভিযোগ।
নানা দাবিতে কালেভদ্রে এসব সংগঠনকে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দেওয়া ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামে এমন গুরুত্বহীন ও নামসর্বস্ব অগণিত সংগঠন গড়ে উঠেছে দেশজুড়ে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলসহ (জামুকা) বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, এমন অবৈধ সংগঠনের সংখ্যা শতাধিকের বেশি। এর মধ্যে কিছু সংগঠন নেতিবাচক নানা কারণে প্রায়ই আলোচনায় আসে।
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নামে জামুকার আড়াইশোর বেশি নিবন্ধিত সংগঠনের বেশির ভাগেরই অস্তিত্ব নেই। এ নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। এখন মুক্তিযুদ্ধের নামে নিবন্ধনহীন এসব সংগঠন চেতনা বাস্তবায়ন তো করছেই না, উল্টো মুক্তিযুদ্ধের সম্মান হচ্ছে ভূলুণ্ঠিত। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধ এসব সংগঠনকে আশকারা ও প্রশ্রয় দেন ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা ও জনপ্রতিনিধি। তবে দীর্ঘ দিন ধরে জামুকার নাম ভাঙিয়ে এসব চললেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, জামুকা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদারকি নেই।
ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, প্রজন্ম লীগের নামে একাধিক সংগঠন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা লীগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, শহীদ খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, মুক্তিযুদ্ধ ফ্রন্ট, শহীদ সন্তান ৭১ ফাউন্ডেশন, মুক্তিযোদ্ধা নাতি-নাতনী সংসদ, ৭১-এর সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ এমন নানা নামে সংগঠনের খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে এক নামের আদলে একাধিক সংগঠনও রয়েছে।
‘প্রজন্ম লীগ’ নামটি ব্যবহার করে কয়েক বছরে দলাদলি ও কোন্দলে বেশ কয়েকটি সংগঠন হয়েছে। এর মধ্যে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম’ লীগ নামেই রয়েছে একাধিক সংগঠন। এ ছাড়া ‘বাংলাদেশ আওয়ামী প্রজন্ম লীগ’, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্বা প্রজন্ম লীগ’ নামে রয়েছে কয়েকটি সংগঠন। একসময় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়কেন্দ্রিক এসব সংগঠনের পোস্টার ও তৎপরতা ছিল। এখনো আছে, তবে সমালোচনার মুখে কিছুটা সীমিত। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়কেন্দ্রিক ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন আলোচনায় আসে ২০১৯ সালের শেষদিকে। যদিও বিরোধের জের ধরে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে পৃথক আরেকটি সংগঠন করেছে একটি পক্ষ। তবে তাদের তৎপরতা এখন আর আগের মতো নেই। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান’ নামে একটি সংগঠন জামুকা থেকে নিবন্ধন নিয়েছিল কয়েক বছর আগে। জামুকার সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এক নামে দুটি সংগঠন হওয়ায় সংগঠনের নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। আর নানা নেতিবাচক কর্মকা-ে এসব সংগঠন নিয়ে তারাও বিব্রত।
জামুকার মহাপরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সংগঠন চালাতে অবশ্যই জামুকার অনুমোদন লাগবে। ওদের বিষয়ে যতটুকু জানি এদের রেকর্ড ভালো নয়। কিন্তু আমাদের তো কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবমূল্যায়নের জন্য এ ধরনের সংগঠন করা হয় এবং খুব সচেতনভাবেই এদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়। কেননা কিছু লোকের উদ্দেশ্যই হলো মানুষ যেন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে। এ সংগঠনগুলো সে কাজটিই করছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আর রাজনৈতিক দলগুলোর নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ কিছু করে তাহলে সেটি রাজনৈতিক দলগুলো দেখবে।’ তিনি বলেন, ‘এরা যদি অনৈতিক কাজে জড়িত হয় তাহলে এটি ফৌজদারি অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। জামুকা এ বিষয়ে শক্ত ভূমিকা নিতে পারে।’
জামুকা থেকে গত ১৬ বছরে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ২৭০টি সংগঠন নিবন্ধন নিয়েছে। কিন্তু দু-একটি ছাড়া বাকিগুলোর তেমন কোনো অস্তিত্ব নেই। নানা অভিযোগে অন্তত ৬টি সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে। এত বেশিসংখ্যক সংগঠনের কাজ ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে সচেতন মহলে। এ নিয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক দেশ রূপান্তর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর ইতিমধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে এসব সংগঠনের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছে জামুকা। নানা অভিযোগ ও বিতর্কের মুখে তিন বছর ধরে নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ রেখেছে সংস্থাটি।
সরেজমিনে যা জানা গেল : রাজধানীর গুলিস্তান ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউকেন্দ্রিক কয়েকটি সংগঠনের কার্যালয় রয়েছে। সম্প্রতি ঠিকানা অনুযায়ী বেশ কয়েকটি কার্যালয় ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে দেশ রূপান্তর। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ নামে একটি সংগঠনের দেওয়া ঠিকানায় (১০ গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ) একটি ভবনের দোতলায় দুদিন গিয়ে দেখা যায়, ছোট একটি কার্যালয় থাকলেও সেটি তালাবদ্ধ। ভবনসংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেন, মাঝেমধ্যে অফিসে কিছু লোকজনকে দেখা গেলেও বেশির ভাগ দিনই এটি বন্ধ থাকে।
একই ভবনে ‘শহীদ সন্তান ৭১ ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠনের ঠিকানায় গিয়ে এ ধরনের কোনো কার্যালয়ের অস্তিত্ব মেলেনি। সংগঠনের সাইনবোর্ডে লেখা একটি মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে এর নির্বাহী সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন হাজি মো. এমদাদুল হক নামের এক ব্যক্তি। নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে এই ব্যক্তি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’-এর অফিসটি তারা সংগঠনের নামে ব্যবহার করেন। জামুকার অনুমোদন না থাকলেও আবেদন করা আছে। বিভিন্ন দিবসে তারা নানা কর্মসূচি পালনসহ অসহায় মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কল্যাণে কাজ করেন। তবে এখন সংগঠনের কার্যক্রম কিছুটা কম বলে জানান তিনি।
প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য ভাতা চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা নাতি-নাতনী সংসদ’ নামে একটি সংগঠন প্রায়ই কর্মসূচি পালন করে। সামাজিক যোগযোগমাধ্যমেও সক্রিয় দেখা যায়। ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ’ নামে একটি সংগঠনের শাখা সংগঠন এটি। সংগঠনটির সভাপতি পরিচয় দেওয়া মো. জাহাঙ্গীর আলম জয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের অনেক মুক্তিযোদ্ধা বঞ্চিত ও নির্যাতিত হচ্ছেন। তাদের হয়ে আমরা মানবিক কারণে কর্মসূচি পালন করি। কোনো মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তাদের সন্তানরা ভাতা পান। কিন্তু নাতি-নাতনিরা কেন বঞ্চিত হবেন?’ গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের ছয়তলায় ‘শহীদ খেতাবপ্রাপ্ত ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান’ নামে একটি সংগঠনের ঠিকানায় সম্প্রতি একাধিকবার গিয়ে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জামুকার চেয়ারম্যান আ ক ম মোজাম্মেল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ রকম বহু সংগঠন দেশে আছে। এদের বিষয়ে নানা অভিযোগ শুনি। এগুলোর বিষয়ে একটাই সিদ্ধান্ত এরা অবৈধ ও ভাঁওতাবাজি ছাড়া কিছু নয়। এদের কোনো সৎ উদ্দেশ্য নেই। এটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে উল্টোটা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের মান সম্মানকে এরা ভূলুণ্ঠিত করছে। মুক্তিযুদ্ধের নামে কেউ এমন করুক এটা মানা যায় না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চাইলেও এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারি না। এটি করতে পারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কিংবা কেউ অভিযোগ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে সুনির্দিষ্টভাবে কেউ অভিযোগ করলে এদের আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।’
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার নির্যাসে ভাববাদী গীতি ও চারণ কবিরা, সাধু সন্ন্যাসীরা যে বাণী ও বয়ান রেখে গিয়েছেন তা অনুভবের আয়নায় প্রতিফলনের সময় ফুরিয়ে যায় না। কেননা ‘দিন থাকতে দ্বীনের সাধনা’র কথা ভুলিয়ে দেওয়ার প্রথম প্রয়াস আদি মানব মানবীর জীবনে স্বর্গ থেকে বিদায়ের কারণ হিসেবেই এসেছিল, এখনো যা আছে অব্যাহত। শিক্ষা নেওয়ার জন্যই ইতিহাস অধ্যয়ন, সময়ের উত্থান পতনের পটভূমি বোঝাবার জন্য অতীত রোমন্থন, কিন্তু সেই ইতিহাস যদি প্রতিষ্ঠা ও নির্মাণের নামে চর্বিত চর্বনে বিকৃত বিকারগ্রস্ত করা হয় তাহলে অতীত অনুসরণের মৌল ভূমিকায় ঘটে বিপত্তি। যে অনুসরণ বারবার ভুলিয়ে দিয়ে যায় সময়ের প্রবহমানতাকে, অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে বর্তমানকে দায় দায়িত্বহীন করার প্রয়াস প্রচেষ্টায় ভবিষ্যতের জন্য শুধু অন্ধকার অপেক্ষা করে। মানব সভ্যতার উত্থান বিকাশ ও পতনের নাড়ি নক্ষত্র ঘাঁটলে এ সত্যটাই বেরিয়ে আসে যে, মানুষই সভ্যতা সমৃদ্ধির স্রষ্টা, আবার এই মানুষই তার ধ্বংসকারী। বলাবাহুল্য মানুষই মানুষের শত্রু, যে শত্রুতা আদি মানব-মানবীর প্রথম সন্তানেরা পোষণ করতে প্ররোচিত হয়েছিলেন অশুভ প্রবণতা প্রবৃত্তির দ্বারা। এ প্ররোচনা এখনো চলছে, চলছে বলেই স্বার্থান্ধ হয়ে অতীতের কাছে আশ্রয় মাঙতে গিয়ে বর্তমানকে উপেক্ষার উপলক্ষ মিলে যায় এবং ভবিষ্যৎ কেন কীভাবে অগ্রসরমান হবে সে বিবেচনার সুযোগ হয় হাতছাড়া। এ কথা মাথায় রাখতে হবে যে আজকের বর্তমানই একদিন অতীত হবে, বর্তমানকে সময়ের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ভবিষ্যতে এখনকার কর্মসাফল্য দিয়ে তখনকার জাত কুল মান রক্ষা করা কঠিন হবে।
আত্মশুদ্ধি আর খোদার নৈকট্য অর্জনের অসীম রহমত ও কল্যাণের সওগাত নিয়ে সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান আমাদের মধ্যে সমুপস্থিত। আল কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মাহে রমজানে রোজা পালন বা সিয়াম সাধনাকে ‘পরহেজগারি অর্জনের জন্য’ ফরজ বা অবশ্য পালনীয় বলে বিধান দিয়েছেন। বলা হয়েছে ‘পূর্ববতী সম্প্রদায়ের জন্যও একই বিধান ছিল।’ অর্থাৎ রোজা পালন শুধু কোরআনের বিধান ঘোষিত হওয়ার পর থেকে প্রবর্তিত হয়নি। আত্মশুদ্ধি ও বিধাতার নৈকট্য লাভের জন্য কৃচ্ছ্র সাধনের এই এবাদত হিসেবে শুধু ইসলামেই নয়, স্থান কাল পাত্র ভেদে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মিক নির্বাণ লাভের এ সাধনা বিদ্যমান।
সিয়াম সাধনায় আত্মশুদ্ধির চেতনা জাগ্রত হয়। কর্মফলের দ্বারা আল্লাহ্ প্রদত্ত নেয়ামতের স্থায়িত্বের হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে, আল কোরআনের এ ঘোষণা উপলব্ধি থেকেই আত্ম তাগিদ অনুভূত হয়। ৮ সংখ্যক সুরা আনফাল-এর ৫৩ আয়াতে ঘোষিত হয়েছে ‘যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদের যে সম্পদ দান করেন তিনি তা পরিবর্তন করবেন’। ১৩ সংখ্যক সুরা আর রা’দ-এর ১১ আয়াতে আরও স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘মানুষের জন্য তার সম্মুখে ও পশ্চাতে একের পর এক প্রহরী থাকে; তারা আল্লার আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে। এবং আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে।’
আল্লাহ্র নিয়ামত স্থায়িত্বের যে নিয়ম বা মূল নীতি তা হলো কোনো ব্যক্তি বা জাতিকে যে নেয়ামত দান করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা ফিরিয়ে নেওয়া হয় না, যে পর্যন্ত না নিজের বা নিজেদের অবস্থা ও কার্যকলাপকে পরিবর্তিত করে আল্লার আজাবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সুতরাং নেয়ামত প্রাপ্তির পর তার জন্য শুকরিয়া আদায় করা, সচেতন দায়িত্ব পালনের দ্বারা এর মর্যাদা রক্ষা করা এবং নিজেদের মধ্যে সংশোধনীয় বিষয়গুলোর ব্যাপারে সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
কোনো কোনো সময় আল্লাহ্ তায়ালা তার নিয়ামত এমন কোনো কোনো লোক বা সম্প্রদায়কে দান করেন, যে তার নিজের বা নিজেদের আমল বা কর্মের দ্বারা তার যোগ্য নয়, কিন্তু প্রদত্ত হওয়ার পর যদি সে নিজের আমল বা কর্মধারা সংশোধন করে কল্যাণের দিকে ফেরানোর পরিবর্তে মন্দ কাজের দিকে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে পড়ে, তখন প্রদত্ত নিয়ামত তার বা তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
আল্লাহমানুষকে বিবেক বুদ্ধি ও ভালো মন্দ জ্ঞানসহ সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তার প্রিয় বান্দা বিপথগামী হয়ে তার অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হোক এটা তিনি চান না, তা সত্ত্বেও কেউ সঠিক ও কল্যাণের পরিবর্তে মন্দ ও অভিশপ্ত পথ নির্বাচন এবং সেখানে অনড় অবস্থান করলে; আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও তার আনুগত্য ত্যাগ করে কুকর্ম, কুচরিত্র ও অবাধ্যতার পথ বেছে নিলে তার পরিণতি হয় দুঃখজনক। যে গজব নেমে আসে তা থেকে আত্মরক্ষার কোনো উপায় থাকে না। কোনো ব্যক্তি বা জাতির জীবনে কল্যাণকর পরিবর্তন ততক্ষণ পর্যন্ত সূচিত হয় না, যতক্ষণ এই কল্যাণকর পরিবর্তনের জন্য নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে নিজেদের তার যোগ্য করে না তোলা হয়।
আল কোরআনের ২৫ সংখ্যক সুরা আল ফোরকানের ৬৩ থেকে ৭৭ নম্বর আয়াতসমূহে আত্মশুদ্ধি লাভের কয়েকটি গুণ ও দোষের লক্ষণ বর্ণিত হয়েছে। প্রথম ৬টি গুণাবলির মধ্যে আনুগত্যের মূলনীতি এবং পরবর্তী গুণাবলিসমূহ গোনাহ ও অবাধ্যতা থেকে পরিত্রাণ প্রত্যাশার/প্রচেষ্টার নীতিমালা বর্ণিত হয়েছে।
১) নিজের বিশ^াস, চিন্তাচেতনা, ইচ্ছা ও আকাক্সক্ষা, আচার-আচরণ ও স্থিরতাকে সৃষ্টিকর্তার আদেশ ও অভিপ্রায়ের অনুগামী রেখে তার আদেশ-নিষেধ পালনের জন্য সদা সচেষ্ট থাকা।
২) নম্রতা সহকারে চলাফেরা করা চলন-বলন আচার-আচরণে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা। যে পালনকর্তার ভরসা করে না এবং সবসময় দুনিয়ার লাভ-লোকসানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন থাকে, সে সব সময় বিভ্রান্তিতে থাকে, দুঃখই ভোগ করে।
৩) কথাবার্তায় নিরাপত্তার সঙ্গে সব সময় সচেতন থাকা উচিত। সালামের জবাব দেওয়া, কারও মনে আঘাত লাগতে পারে, বিরূপ ভাব ও সংক্ষোভের উদ্রেক করতে পারে এমন সংলাপ পরিহার করা। সুবচন ও সুশীল আচরণ কখনই বিত-ার জন্ম দেয় না।
৪) ইবাদতে রাত্রি জাগরণ। যে সময় নিদ্রা ও বিশ্রামের সে সময়ে কষ্টকর হওয়া সত্ত্বেও নামাজে দাঁড়ানোর মতো উত্তম কিছুই নেই। এ ইবাদত লোক দেখানোর জন্য নয় এবং এখানে নাম-যশের আশঙ্কা নেই।
৫) দিবারাতে ইবাদতে মশগুল হয়েও নিশ্চিত হয়ে বসে না থাকা। আল্লাহকে ভয় করা, জীবিকা অন্বেষণ ও তার সাহায্য কামনা করা।
৬) ব্যয় করার সময় অপব্যয় না করা, আয়-ব্যয়ের মধ্যে সমতা বজায় রাখা। বৈধ ও অনুমোদিত কাজে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাও অন্যায় এবং অপব্যয়। রাসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ব্যয় করতে গিয়ে মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করা মানুষের বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। যে ব্যক্তি ব্যয়ের সময় মধ্যবর্তিতা ও সমতার ওপর কায়েম থাকে, সে কখনো ফকির ও অভাবগ্রস্ত হয় না।
৭) শিরক সর্ববৃহৎ গোনাহ। দুনিয়ার ভালোমন্দে কাউকে নিয়ন্ত্রক ভাবাও শিরক।
৮) কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা না করা এবং ব্যভিচারের নিকটবর্তী না হওয়া।
৯) তওবা করা। কঠোর অপরাধী যদি তওবা করে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে সৎকর্ম করতে থাকে, তবে আল্লাহ তার মন্দ কর্মসমূহকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন।
১০) মিথ্যা ও বাতিল মজলিশে যোগ না দেওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়া। যদি কেউ মিথ্যা ও বাতিল মজলিশের নিকটবর্তী হয়ে পড়ে তবে গাম্ভীর্য ও ভদ্রতা সহকারে তা এড়িয়ে বা পরিহার করে চলে যাওয়া উচিত।
১১) আল্লার আয়াত ও শরিয়তের বিধানাবলি শুধু পাঠ করা যথেষ্ট নয়, শ্রবণশক্তি ও অন্তদৃষ্টি-সম্পন্ন মানুষের উচিত এগুলো সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা।
১২) নিজ সন্তান-সন্ততি ও স্ত্রীর জন্য আল্লার কাছে দোয়া করা। তাদের আল্লাহর আনুগত্যে মশগুল দেখা।
কোনো কিছুর বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকা উচিত। মাত্রা অতিক্রম করলে অনেক ভালো জিনিস মন্দ রূপ বা আকার ধারণ করতে পারে। যেমন মাত্রা অতিক্রম করলেই সাহস হঠকারিতায়, আত্মউৎসর্গ আত্মহত্যায়, প্রতিযোগিতা হিংসায়, ধর্মভীরুতা ধর্মান্ধতার পরিণত হতে পারে। অবস্থা বিশেষে সমালোচনা পরচর্চায়, প্রশংসা চাটুবাদে, তেজ ক্রোধে, দেশপ্রেম দেশদ্রোহিতার স্তরে নেমে আসতে পারে। সব দেশ সমাজ সংসারে, রাজনীতি সমাজনীতি অর্থনীতির অবকাঠামোয় এটি প্রায়শই লক্ষ করা যায়।
নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্রা যেমন সবার পছন্দ তেমনি সুরের মধ্যে পঞ্চম-স্বরই মিষ্ট এবং শ্রেষ্ঠ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বারবার বলেছেন তোমরা কোনো কিছুতেই সীমালঙ্ঘন কোরো না। আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীকে ভালোবাসেন না। লোকমান হাকিম তার ছেলেকে উপদেশের ছলে বলেছেন, ‘মাটিতে হাঁটবে মধ্যম মেজাজে আর তোমার স্বর হওয়া উচিত মোলায়েম, স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই নিকৃষ্ট।’
করোনাকালে এ শিক্ষা সবাই পেয়েছে যে, স্বাস্থ্যবিধি মানা মানে খাওয়া-দাওয়া, চলাচলে, চাওয়া-পাওয়ায়, মেলামেশা, আগ্রহ-আকাক্সক্ষার ক্ষেত্রে একটা পরিমিত বোধ মেনে চলা। নিয়মনিষ্ঠা পালন ও সহনশীলতা প্রকাশ যে কোনো বিশৃঙ্খল পরিবেশে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। অধিক ভোজনেই অধিকাংশ রোগবালাইয়ের কারণ। মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা সরবরাহে সমস্যা সৃষ্টি করে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। অধিক পরিশ্রমে মন ও শরীর ভেঙে পড়ে। অতি কথনে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। অতিরিক্ত সব কিছু খারাপ। অতিভক্তি চোরের লক্ষণ এর চেয়ে সত্যবাক্য আর নেই।
লেখক: সাবেক সচিব ও এনবিআরের চেয়ারম্যান
মানহানির মামলায় দণ্ডিত কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধীকে লোকসভায় অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার লোকসভা সচিবালয় তাকে অযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় তার পার্লামেন্টের সদস্যপদও খারিজ হয়ে গেল। কংগ্রেস নেতা রাহুল লোকসভায় কেরালার ওয়েনাড আসনের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।
এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রায় ঘোষণার দিন থেকেই রাহুল আর পার্লামেন্টের সদস্য থাকার যোগ্য নন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটকের কোলারে এক জনসভায় পলাতক ব্যবসায়ী নীরব মোদি ও ললিত মোদির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নামের মিল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেছিলেন রাহুল। ‘সব চোরের পদবি মোদি হয় কী করে’ রাহুলের এই মন্তব্যের জেরে বিজেপি বিধায়ক ও গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুরনেশ মোদি মানহানির মামলাটি করেছিলেন। চার বছর আগে করা ওই মানহানির মামলায় গত বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয় গুজরাটের সুরাটের একটি আদালত। সাজা হলেও রাহুল জামিনে রয়েছেন, তাকে আপিল করার সুযোগ দিতে রায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
গতকাল রায়ের পরদিন স্বল্প সময়ের জন্য লোকসভায় গিয়েছিলেন রাহুল। তিনি সেখানে দলীয় এমপিদের এক বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে তার মা, কংগ্রেসের পার্লামেন্টারি দলের প্রধান সোনিয়া গান্ধীও ছিলেন। বেশ কিছু ইস্যুতে হট্টগোলের কারণে শুরুর কয়েক সেকেন্ড পরই লোকসভার অধিবেশন দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়, রাহুলও এরপর পার্লামেন্ট ছেড়ে বেরিয়ে যান।
রাহুল গান্ধীকে কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে এদিন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলোর সাংসদরা দিল্লির বিজয় চক থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন অভিমুখে মিছিল শুরু করলেও পুলিশ বাধায় তা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি।
শুক্রবার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যেই ‘গণতন্ত্র বিপদে’ লেখা ব্যানার নিয়ে তাদের মিছিল শুরু হয়েছিল। পুলিশ নেতাদের আটক করে বাসে কাছাকাছি একটি থানায় নিয়ে যাওয়ায় মিছিলটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
পুলিশ বলছে, বিরোধী দলীয় এমপিদের মিছিলটির অনুমতি ছিল না। তা ছাড়া প্রেসিডেন্টও বৈঠকের জন্য এমপিদের কোনো সময় দেননি।
আদানি-হিনডেনবার্গ ইস্যু তদন্তে যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটির দাবি জানানো এই বিরোধী দলগুলো প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদি মুর্মুর সাক্ষাৎ চেয়েছে। দলগুলো বলছে, ধনী শিল্পপতি গৌতম আদানির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথিত বন্ধুত্ব নিয়ে আলোচনা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতেই ২০১৯ সালে করা একটি মানহানির মামলায় রাহুল গান্ধীকে কারাদণ্ড দিয়ে যে শোরগোল তোলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশোধমূলক রাজনীতির কারণে রাহুলকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে শুক্রবার একাধিক রাজ্যে কংগ্রেস বিক্ষোভও দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
কংগ্রেসের ভাষ্য, রাহুলকে চুপ করিয়ে দিতেই এই দণ্ড দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের সরকার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলোকে অপব্যবহার করে বিরোধীদের দমন করতে চাইছে।
তবে বিজেপি বলছে, ‘চোর’ মন্তব্যে পিছিয়ে পড়া ‘মোদি’ সম্প্রদায়কে অপমান করায় স্বাধীন বিচার বিভাগ রাহুলকে দণ্ড দিয়েছে, এখানে তাদের হাত নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশের অপরাধীরা আগে ভারতে গিয়ে আত্মগোপন করত। এরপর জানা গেল, সেখান থেকে দেশে অপরাধ ঘটায় তারা। কারও কারও নেপালে অবস্থানের কথাও জানা যায়। ভারতকে নিরাপদ মনে না করায় আরব আমিরাতের দুবাই বেছে নিচ্ছে অপরাধীরা। সেখানে তারা আস্তানা গেড়েছে।
পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দেশের অপরাধজগতের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীরা অপরাধ করেই দুবাই চলে যাচ্ছে। সেখানে বসেই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কলকাঠি নাড়ছে। এখন বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরাও দুবাইকে কেন্দ্র করে নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। সেখানে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যও আছে। তাদের কেউ কেউ সোনার কারবারও করছেন। ওই দেশে ভারতের দুর্ধর্ষ অপরাধী দাউদ ইব্রাহিমের শিষ্যত্ব নেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ওইসব অপরাধীর তথ্য জানার পরও তাদের ফেরত আনতে পারছেন না। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিসের’ দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে পুলিশকে। তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ধরতে রেড নোটিস জারি হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যাকাণ্ডের পর অনেকে পার পেয়ে গেছে। যদিও মামলাটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তবে নতুন করে আলোচিত মামলাটির পুনঃতদন্ত করার কথা ভাবছে পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, ২০২২ সালের ২৪ মার্চ সড়কে গুলি চালিয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যা করা হয়। গুলিতে নিহত হন এক কলেজছাত্রী। চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের মূল হোতা সুমন শিকদার ওরফে মুসা ঘটনার রাতেই দেশ ছেড়ে চলে যায় দুবাইয়ে। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান ও জয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মুসা চলে যায় ওমানে। জিসান ও জয় এখনো দুবাইতেই বসবাস করছে। যদিও ওমান থেকে মুসাকে ওই বছরের ৯ জুন ইন্টারপোলের মাধ্যমে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে পুলিশ সদর দপ্তর। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ফের আলোচনায় আসে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও হিরো আলমের দুবাই সফরকে কেন্দ্র করে। তারা বনানীতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের আসামি আরাভ খান নামধারী রবিউল ইসলামের সোনার দোকান উদ্বোধন করতে সেখানে যান। দুবাই যাওয়ার কারণে সাকিব ও হিরো আলমকে যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হতে পারে। এ ছাড়া ‘প্লেজার ট্যুরের’ জন্য এখন দেশের শিল্পপতিদের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে দুবাই। কারণ ঢাকাকে তারা নিরাপদ মনে করছেন না। পাশাপাশি দেশে আটক সোনার চালানের ৮০ শতাংশ জব্দ হচ্ছে দুবাইফেরত বিভিন্ন এয়ারলাইনস থেকে। সব মিলিয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে দুবাই।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীরা যে দেশেই থাকুক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে আটক করার পর দুবাই থেকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফেরত আনতে চেয়েছিল পুলিশ। সম্প্রতি আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি আরাভকে দুবাই থেকে ফেরত আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি অল্প সময়ে সুখবর দেওয়া সম্ভব হবে।’
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, সম্প্রতি আলোচনায় আসা আরাভ খানকে দেশে ফেরাতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি ভারতের পাসপোর্টধারী। দেশে তার নামে ১২টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ওইসব পরোয়ানার কপি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠানোর পর দ্রুতই তাকে ফেরানো সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এর আগে জিসান ও জয়কে দুবাই থেকে ফেরত আনার উদ্যেগ নিয়েও আনতে পারেনি। টের পেয়ে তারা দুবাই ছেড়ে কানাডায় চলে যায়। তারা আবার দুবাই এসেছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে।
ওই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে বিতর্কিত মডেল, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা এই দেশে অপরাধ করে দুবাই গিয়ে আস্তানা গাড়েন। ইতিমধ্যে পুলিশ একটি তালিকা করেছে। ওই তালিকায় গুলশান ও বনানী এলাকার মডেলের সংখ্যা বেশি। বছরখানেক আগে গ্রেপ্তার হওয়া ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকেন। তাদের সঙ্গে অপরাধ জগতের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের সখ্য আছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য আছে। এমনকি বনানীতে পুলিশ কর্মকর্তা মামুন হত্যাকান্ডে তাদেরও সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ উঠেছিল। ঘটনার পর পিয়াসা, রাজ ও আরাভকে আটকও করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের এক বড় মাপের নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তার অনুরোধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে পুনরায় তদন্ত করা হতে পারে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংগীতশিল্পী, এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী ও কয়েকজন মডেল নিয়মিত দুবাই আসা-যাওয়া করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসী ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন ধরা পড়েছে। আবার কেউ ক্রসফায়ারে মারা গেছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তাড়া খেয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপনে আছে কেউ কেউ। আত্মগোপনে থেকেই তারা অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাই রয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় আছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। এ নিয়ে পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আলাদাভাবে বৈঠক হয়েছে। ওইসব বৈঠকে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করার পরও কেন তারা ধরা পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে। ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাই চলে যায়। সেখান থেকেও ঢাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তার সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল, কামরুল হাসান হান্নান, ইব্রাহীম, রবিন ও শাহাদৎ হোসেন বেশিরভাগ সময় দুবাই থাকে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বন্দিবিনিময় চুক্তি থাকায় বেশ কয়েকজন শীর্ষ অপরাধীকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শাহাদৎ, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলার আসামি নুর হোসেনসহ অনেকেই কলকাতায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। নুর হোসেন ছাড়া অন্য সন্ত্রাসীদের দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। সুব্রত, মোল্লা মাসুদ ও শাহাদৎ ভারতে সুবিধা করতে না পেরে মুম্বাই হয়ে দুবাই চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার অপরাধজগতের এক সন্ত্রাসী এ প্রতিবেদককে বলেন, অপরাধীরা এখন আর ভারত যেতে চায় না। কারণ ওই দেশে শান্তিতে থাকা যায় না। ফলে সবাই এখন দুবাইমুখী হচ্ছে। দুবাইয়ে সবাই নিরাপদে থাকতে পারছে।