
প্রান্তিক পর্যায়ে খামারগুলোতে ব্রয়লার মুগির মাংস উৎপাদনের খরচ ১৫০-১৬০ টাকা হলেও বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে তা অন্তত আরও ২০ টাকা কম। কিন্তু ভোক্তাপর্যায়ে মুরগির কেজি ২৫০-২৬০ টাকা বিক্রি করা উচিৎ নয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর টিসিবি ভবনে ‘পাইকারি ও খুচরা পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
ভোক্তার মহাপরিচালক বলেন, মুরগির উৎপাদন খরচ যেখানে ১৬৭ টাকা সেখানে মুরগির মূল্য ২৫০ টাকা কেন তা খতিয়ে দেখা হবে খুব দ্রুত। তিনি আরও বলেন, দোকানে অবশ্যই মূল্য তালিকা থাকতে হবে, ক্রয়-বিক্রয় রশিদ থাকতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে বাজার কমিটিকে দায়ী করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে ব্যবসা করবেন তবে তা যেন বাজারকে অস্থিতিশীল না করে।
খামারে মুগির মাংস উৎপাদন নিয়ে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও কাজী ফার্মস লিমিটেডের পরিচালক কাজী জাহান বলেন, প্রতিটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ প্রায় ৩৫-৪০ টাকা। যা ৬০ টাকায় বিক্রি করে আগের বছরের লোকসান পুষাচ্ছেন তারা। এ ছাড়া প্রতিকেজি মুরগি ১৪০-১৫০ টাকায় উৎপাদন করে পাইকারিতে ২০০ টাকা বিক্রি করছে তারা। এ কারণে বাজারে মুরগির দাম বেড়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
সভায় অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাজারের ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ের ওপর ভিত্তি করে যদি ব্যবসায়ীরা দাম নির্ধারণ করতে চায় সেটা কৃষি বিপণন আইনের ব্যত্যয় হবে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কত লাভ করা যাবে সেটাও নির্ধারণ আছে। সেলস ম্যানেজমেন্ট ঠিক নেই। আমরা আইন অনুযায়ী কাজ করব।
বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে বিদেশি ঋণের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল সরকার। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে উন্নয়ন ব্যয় মেটাচ্ছে সরকার। এতে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর সরকারের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিচ্ছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিভল্ভমেন্ট (নতুন টাকার জোগান) ফান্ড থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় প্রায় শতভাগ বেশি। অবশ্য গত ডিসেম্বরে এ তহবিল থেকে দেওয়া ঋণের পরিমাণ আরও বেশি ছিল। গেল দুই মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিশোধে মনোযোগী হয়েছে সরকার।
প্রতি সপ্তাহের রবি ও মঙ্গলবার সরকার তার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের জন্য নিলামের ব্যবস্থা করে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যদি নিলামে বন্ড বা বিল কিনতে ব্যর্থ হয় তাহলে তা ডিভল্ভমেন্ট করা হয়। এর বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন টাকার রিজার্ভ থেকে সরকারকে ঋণ দেওয়া হয়। এটিকেই নতুন টাকা ছাপিয়ে ঋণে হিসেবে গণ্য করে অনেকেই। গেল বছর কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর মানুষের ব্যাংক ব্যবস্থার ওপর আস্থার সংকট তৈরি হয়। পাশাপাশি ব্যাংকে টাকা রাখলে ফেরত পাওয়া যাবে না এমন গুজবেও বড় প্রভাব পড়ে ব্যাংক খাতে। এতে দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকই তারল্য সংকটে পড়ে। যে কারণে সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড কিনতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিভল্ভমেন্ট ফান্ড থেকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের শুরুতে ছিল ৫৩ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা, যা চলতি ফেব্রুয়ারি শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে এই ফান্ডে ঋণ নেওয়া বেড়েছে ৯৯ দশমিক ১৪ শতাংশ।
আর অর্থবছরের শুরুতে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ডসহ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের স্থিতি ছিল ৫৯ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে এই ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২১ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৬ মাসেই সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৬৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার ঋণ নেয়। এর মধ্যে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ড থেকে (নতুন টাকা ছাপিয়ে) ঋণের পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। অবশ্য জানুয়ারিতে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ডে কিছু অর্থ পরিশোধ করলেও ফেব্রুয়ারিতে আবারও ওই তহবিল থেকে ঋণ নেয়।
জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ১৯ হাজার ১২৭ কোটি টাকা পরিশোধ করে, যার মধ্যে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ডের ১২ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকাও ফেরত দিয়েছে। পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে আবারও ডিভল্ভমেন্ট ফান্ড থেকে ৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা নতুন ঋণ নেয় সরকার। জানুয়ারিতে ডিভল্ভমেন্ট ফান্ডে সরকারের ঋণ ছিল ৪৮ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়ায় ৫২ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। যদিও সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৫ হাজার ৪১১ কোটি টাকা পরিশোধ করায় গত মাসের চেয়ে এই খাতে ঋণ কমেছে ১ হাজার ৪১ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বিশ^ব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চলতি অর্থ বছর ডলার বিক্রির কারণে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে এসেছে। এ জন্য ব্যাংকগুলো প্রতিনিয়তই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধারের প্রবণতা বাড়িয়েছে। অপর দিকে সরকার ট্রেজারি বন্ড ও বিলের বিপরীতে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিভল্বমেন্টের মাধ্যমে ঋণ নিচ্ছে। এতে মানি ক্রিয়েশন বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সরকার ব্যাংক খাত থেকে ৩৪ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। আর গত ফেব্রুয়ারিতে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ৮০২ কোটি টাকা। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ব্যাংক খাতে সরকারের নতুন ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণ ২ লাখ ১০ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট-ঘাটতি পূরণে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। আগের অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য সরকারের। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকেও ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।
বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য ক্রস-বর্ডার রেমিট্যান্সসেবা সহজতর করার লক্ষ্যে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের সঙ্গে একটি রেমিট্যান্স বিতরণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ব্যাংক এশিয়া। গত ৭ মার্চ ব্যাংক এশিয়া টাওয়ারে ব্যাংক এশিয়ার প্রেসিডেন্ট ও এমডি আদিল চৌধুরীর উপস্থিতিতে ব্যাংকের ডিএমডি এস এম ইকবাল হোছাইন এবং নগদ-এর চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার শেখ আমিনুর রহমান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ চুক্তির আওতায় বিদেশে অবস্থানরত ব্যাংক এশিয়ার অংশীদার এক্সচেঞ্জ হাউজ/এমটিও/ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের পাঠানো রেমিট্যান্স সরাসরি সংশ্লিষ্ট নগদ ওয়ালেটে জমা হবে, যা সুবিধাভোগী তার প্রয়োজন অনুযায়ী অন্য অ্যাকাউন্টে লেনদেন বা উত্তোলন করতে পারবে।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় কর আদায়ে তলানিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বিশে^ তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়া নেপাল, ভুটান, ভারতের চেয়েও পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে কর আদায়ে কর অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ‘কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, যা বাস্তবায়নে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পটি আগামী রবিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের কথা রয়েছে।
কর আদায়ে পিছিয়ে থাকায় বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবেও আইএমএফসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীরা কর-জিডিপির অনুপাত বাড়াতে বলেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে কর-জিডিপির অনুপাত ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর শর্ত মানলে ২০২৪ সালের মধ্যে এ অনুপাত ১৪ শতাংশে উন্নীত করতে হবে, যার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে সরকার।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘কাস্টমস আধুনিকায়ন ও অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্পটির বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১ হাজার ৬৮৬ কোটির ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা দেবে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের আইডিএ প্রোগ্রামের আওতায় এ ঋণ দেওয়া হচ্ছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে।
প্রকল্পটির ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, এর মোট ব্যয়ের ৪২ শতাংশই ব্যয় হবে প্রায় ৯১ হাজার বর্গফুটের চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ ভবন নির্মাণে। এ ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হবে ৭১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট প্রশিক্ষণ একাডেমি ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ৪১৬ কোটি টাকা। এ দুটি ভবণ নির্মাণের কারণ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর বলছে, দেশের ৯০ ভাগ আমদানি-রপ্তানি এ বন্দরের মাধ্যমে হয়। ২০১৯ সালে এ বন্দরে ৪৫ হাজার ৭০০ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে সাত হাজার মানুষ সেবা নিতে আসেন। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমস চাহিদার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের নিকটবর্তী কলকাতা বলয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো ছাড়াও মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কথা বিবেচনায় চট্টগ্রাম কাস্টমসের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করে এনবিআর।
প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, এটি বাস্তবায়নে পরামর্শক সেবায় ব্যয় হবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা, ২ লাখ বর্গফুটের চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের আবাসিক ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ১৩৩ কোটি টাকা, কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণে ৬০ কোটি, চট্টগ্রাম কাস্টমসের জন্য ল্যাবরেটরি যন্ত্রপাতি কিনতে ব্যয় হবে ১৩০ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের জন্য ১৫ কোটি এবং চারটি গাড়ি ভাড়ায় ৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বেনাপোল স্থলবন্দরগুলোর ব্যয়সাশ্রয়ী, অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই এবং সহনশীল বাণিজ্যিক অবকাঠামোর উন্নয়ন; আন্তর্জাতিক মানদ- ও সর্বোত্তম ব্যবহারবিধি মোতাবেক আধুনিক শুদ্ধ পদ্ধতি গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বাাণিজ্যিক ব্যয় কমানো, বাণিজ্য সম্প্রসারণমূলক শুল্ক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন এবং রূপকল্প-২০৪১-এর আলোকে বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়ানো, সাংগঠনিক কাঠামোর উন্নয়ন এবং শুষ্ক বিভাগের মানবসম্পদ, আর্থিক এবং অবকাঠামোগত সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে সব পর্যায়ে শুল্ক প্রশাসনের সক্ষমতা বাড়ানো এবং যথাযথ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রবর্তনের মাধ্যমে কাস্টমস পরিষেবার কার্যকারিতা এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা এর মূল উদ্দেশ্য।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সরকার রাজস্ব আয় বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ছিল জিডিপির ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা হল জিডিপির ১৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। শক্তিশালী এবং গতিশীল কর-কাস্টম প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে পারলে এটি অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মনে করে এনবিআর।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে আসার জন্য বাংলাদেশকে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার কিছু নিয়ম বিশেষ করে শুল্ক সংরক্ষণ ও প্যারা-শুষ্কসংক্রান্ত বিধি মেনে চলতে হবে, যেগুলো এতদিন শিথিল ছিল। ভবিষ্যতে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও কঠোর বিধিসম্পন্ন বৈশ্বিক বাণিজ্যিক পরিবেশের সম্মুখীন হওয়ার জন্য ও তা মেনে চলার জন্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করতে হবে। বহুপক্ষীয় নিয়মকানুন মেনে চলার পাশাপাশি উন্নত শুল্ক অবকাঠামো ও প্রশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন হবে রপ্তানিমুখী শিল্পায়নের অন্যতম কৌশল।
গত ৫ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়। প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত এবং নেপালের মধ্যে আঞ্চলিক ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এগিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রোগ্রামের আওতায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে এ দেশগুলো মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়বে। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা ও সেবার মান বৃদ্ধি করা হবে। সব অংশীজন যেমন ব্যবসায়ী, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স গেস শিপিং এজেন্টসের পাশাপাশি নারী ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। প্রশিক্ষণ একাডেমিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হলে সব কাস্টমস কর্মকর্তার দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। সর্বোপরি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রকল্পটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বিধায় এটি জাতীয় ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হবে ‘ইনভেস্টমেন্ট হাব’। বিশে^র বড় বড় বিনিয়োগকারীকে সামনে তুলে ধরা হবে সুযোগ ও সক্ষমতার চিত্র। এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো ও শিল্প খাতে বিনিয়োগের তথ্য। বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ বিজনেস সামিট আয়োজন করছে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)।
১১ থেকে ১৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ সম্মেলন হবে। আগামীকাল শনিবার সামিটের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এফবিসিসিআইয়ের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে বর্তমান বোর্ড এ সামিট আয়োজন করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআইয়ের বোর্ডরুমে বাংলাদেশ বিজনেস সামিটের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে জসিম উদ্দিন জানান, সামিটে অংশগ্রহণ করতে দেশি-বিদেশিসহ ৭৫৫ জন আবেদন করেছেন। এর মধ্যে বিদেশিদের রেজিস্ট্রেশনের সংখ্যা ২০০। সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যসহ আটটি দেশের মন্ত্রীরা প্রতিনিধিদল নিয়ে সামিটে আসছে। তিনি জানান, দেশের ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের সব সুযোগ-সুবিধা সামিটে তুলে ধরা হবে। সামিটে ১৫টি ব্যবসায়ী সংগঠন এবং ১৫টি প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে। তারা তাদের সেক্টরের ব্যবসায়িক বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধাগুলো তুলে ধরবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে আরও ত্বরান্বিত করতে একটি ফ্ল্যাগশিপ বিজনেস ইভেন্ট হিসেবে কাজ করবে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তি ও সামর্থ্য, বাজার সম্ভাবনা এবং উদীয়মান খাতগুলোকে তুলে ধরা হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।
জসিম উদ্দিন বলেন, ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এবার সামিটের যাত্রা শুরু হলো। আগামীতে বোর্ড প্রতি দুই বছর পরপর কিংবা সম্ভব হলে প্রতি বছর সামিটের আয়োজন অব্যাহত রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণ, অর্থনীতি এবং সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোকে বৈশ্বিক ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, উদ্ভাবক, নীতিনির্ধারক, বাজার বিশ্লেষক, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তুলে ধরা বাংলাদেশ বিজনেস সামিট আয়োজনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সামিটে স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এমন ১০ ব্যক্তিকে ১০টি ক্যাটাগরিতে বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে উৎপাদিত সেরা পণ্যগুলোকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে সামিটের অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ এক্সপো ২০২৩’।
দেশে পাটবীজের যে চাহিদা তার বড় অংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। মূলত পাশর্^বর্তী দেশ ভারত থেকে এ বীজ আমদানি করা হয়। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পাট ও পাট জাতীয় (মেস্তা ও কেনাফ) ফসলের বীজের বার্ষিক চাহিদা নির্ধারিত হয়েছে ৬ হাজার ৩৬৯ টন। এরমধ্যে ভারত থেকে আমদানি করা হবে প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন বীজ, যা মোট চাহিদার ৮১ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে জাতীয় বীজ বোর্ডের ১০৯তম সভায় ভারত থেকে পাট বীজ আমদানির এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আগামী অর্থবছরে কৃষকের চাহিদার প্রেক্ষিতে অবশিষ্ট ১ হাজার ৩০০ টন পাট বীজ সরবরাহ করবে বিএডিসি। সভায় জানানো হয়, ২০২৩-২৪ বছরে প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট, মেস্তা ও কেনাফ ফসল চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে চাষের জন্য মোট পাট বীজের চাহিদা হলো প্রায় ৬ হাজার ৪০০ টন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬০০ টন ভারতীয় তোষা পাটের জাত জেআরও-৫২৪ এবং ৫৭৬ টন মেস্তা/কেনাফের বীজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দেশ রূপান্তরের হাকিমপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আমদানির অনুমতি পাওয়ায় ইতিমধ্যেই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাট বীজ আমদানি শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার বন্দর দিয়ে চলতি বছরের প্রথম পাটবীজের চালান ভারত থেকে বন্দরে প্রবেশ করে। ওই দিন বন্দর দিয়ে ১১টি ট্রাকে ২৪৯ টন পাট বীজ আমদানি হয়েছে। আর গতকাল বৃহস্পতিবার প্রক্রিয়া শেষে আমদানিকৃত এসব পাটের বীজ ছাড় করে নিয়েছেন আমদানিকারকরা। বৃহস্পতিবারও পাট বীজ আমদানি হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট হায়াৎ মোহাম্মদ শেরেগুল বলেন, দেশে পাট বীজের যে চাহিদা রয়েছে তার বেশিরভাগই ভারত থেকে আমদানি করা হয়। ইতিমধ্যেই জয়পুরহাট, বগুড়া, যশোর, ঢাকা, সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আমদানিকারকরা আমদানির অনুমতি (আইপি) পেয়েছেন। তিনি জানান, ভারত থেকে প্রতি টন পাট বীজ ৪০০-৫০০ ডলার মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে। এসব পাট বীজের জার্মিনেশন টেস্ট রিপোর্ট পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার বন্দর থেকে ছাড়করণ করে আমদানিকারকদের নিকট সরবরাহ করা হচ্ছে।
চলতি ২০২২-২৩ উৎপাদন বছরে পাঁচ হাজার টন পাট বীজ আমদানির অনুমতির বিপরীতে প্রকৃত আমদানি হয়েছিল ৪ হাজার ১৬৬ টন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১১ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১২ হাজার ৬৯৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এ খাতে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ এবং মাসিক ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের হিসাবে এ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার। আর মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগীর সংখ্যাও ১ লাখ বাড়িয়ে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার এবং মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার বাড়িয়ে ২৯ লাখ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৯০০ ও ৯৫০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৫ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮৮০ করা হচ্ছে। এ জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২০ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৬২০ করা হচ্ছে।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৯৩০ বাড়ানো হয়েছে এবং বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৫০ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৩৮০ জন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা আরও রয়েছে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রমে উপকারভোগীর ভাতার হার দৈনিক ২০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন চালুর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে। শিগগির একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করা হবে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের অধিক বয়স্ক সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।