
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ফাইন্যান্স (বিডি ফাইন্যান্স) কোম্পানি ২০২২ সাল সমাপ্ত বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সর্বশেষ বছরে বিডি ফাইন্যান্সের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ২৫ পয়সা, যা আগের বছরে ছিল ১ টাকা ৩৬ পয়সা। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ১৭ টাকা ৪১ পয়সা। আগামী ৩০ এপ্রিল বেলা ১১টায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) হবে। এজিএমের জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ এপ্রিল।
সরকারের বেঁধে দেওয়া ঋণের সুদহারের সীমা তুলে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী জুনের মধ্যে সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। একই সময়ে ডলারের বিনিময় হারও বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার ‘সবুজ প্রবৃদ্ধি ও মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়ানো’বিষয়ক এক সেমিনারে এসব কথা বলেছেন গভর্নর। রাজধানীর একটি হোটেলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদ এড়াতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সে অনুযায়ীই এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতি। এ কারণে করোনার অভিঘাতও দ্রুত কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব হিসেবে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যায়। এ কারণে সুদের হারও বেড়েছে বলে জানান গভর্নর। অবশ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তিনি বলেন, আগামী জুন নাগাদ ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক হবে। সুদের হারও বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
মধ্যম আয়ের ফাঁদ এড়াতে পণ্যে বৈচিত্র্য আনা প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারেও গুরুত্ব দিতে হবে। পণ্যের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। সিএমএসএমই কার্যক্রমেও বিশেষ সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। এতে আঞ্চলিক বৈষম্যও কমবে। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে এডিবির আরও সহায়তা চান গভর্নর।
বাংলাদেশের সঙ্গে এডিবির অংশীদারিত্বের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদ এড়াতে বাংলাদেশকে অন্তত চারটি বিষয়ে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এগুলো হচ্ছে কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলোকে (সিএমএসএমই) ঋণসহায়তাসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দেওয়া। এ ধরনের শিল্পের মাধ্যমেই বেশি কর্মসংস্থান হয়ে থাকে, আঞ্চলিক বৈষম্যও দূর হয়। সতর্কতার অন্য তিন বিষয় হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ এবং রপ্তানি বাজারের জন্য পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিভিত্তিক মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিবেশসহ সবুজ উন্নয়ন পরিকল্পনা।
সেমিনারে বক্তব্য রাখেন সফররত এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া, সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক মহাপরিচালক কেনিচি ইয়োকোয়ামা, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, প্রধানমন্ত্রীর মুুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, জলবায়ু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সলিমুল হক, এমসিসিআইর সাবেক সভাপতি নিহাদ কবীর। পৃথক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেভিড হিউম ও টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াসুয়োকি সাওদা।
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের পর মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদে পড়ে থাকার বিভিন্ন দেশের উদাহরণ রয়েছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উত্তরণের পর এ ফাঁদ কীভাবে এড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা আছে বিভিন্ন মহলে।
আলোচনায় এডিবি প্রেসিডেন্ট গত দেড় দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পর ২০২৬ সালে এলডিসি কাতার থেকে উত্তরণের সঠিক পথে রয়েছে। এ উত্তরণ টেকসই করতে এডিবির সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথা জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর মুুখ্য সচিব বলেন, টেকসই উন্নয়নে প্রকল্পে এবং দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় জাতীয় অভিযোজন কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ৫০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে।
এডিবির ডিজি বলেন, মধ্যম আয়ের দেশের ফাঁদ এড়াতে বাংলাদেশের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলা। কারণ প্রতি বছর খরা, বন্যা, লবণাক্ততা, নদীভাঙনের কারণে বছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১ দশমিক ৩ শতাংশ কম হয়। আগামীতে এ হার ২ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তার বিবেচনায় অন্য চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে জিডিপির অনুপাতে কম রাজস্ব, সুশাসনে ঘাটতি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন। এ ছাড়া গণপরিবহনের দুর্বলতার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
নিহাদ কবীর বলেন, উৎপাদন ব্যবস্থায় সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে দেশে। সবচেয়ে বেশি সবুজ প্রযুক্তির কারখানা এখন বাংলাদেশেই বেশি। তবে বাড়তি এ বিনিয়োগের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। বিশ্বসম্প্রদায়কে বিষয়টি আমলে নিতে হবে। বেসরকারি খাতের পক্ষে সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বিনিয়োগ উন্নয়নে এডিবির ঋণ সহায়তা চান তিনি।
বাংলাদেশের মূল উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়াতে এডিবি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া। এডিবি বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব প্রসারিত করবে জানিয়ে আসাকাওয়া বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে এডিবি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মূল উন্নয়ন অগ্রাধিকারের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা। গত দেড় দশক ধরে বেসরকারি খাতের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে স্থির ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে বাংলাদেশের। দেশটির এ রূপান্তরিত হওয়া আমি প্রত্যক্ষ করেছি। বাংলাদেশের কাছে এডিবি আরও সমৃদ্ধ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন প্রত্যাশা করে। টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশকে আরও বড় আকারে সহায়তা করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আর্থিক নিষেধাজ্ঞায় পড়তে হয় রাশিয়াকে। ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে অর্থ লেনদেন নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। এ কারণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দেওয়া রাশিয়ার ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা যাচ্ছে না। সংকট নিরসনে রাশিয়া তাদের নিজস্ব মুদ্রা রুবল ও চীনের ইউয়ানে ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশকে। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি বাংলাদেশ ও রাশিয়া।
এমন পরিস্থিতিতে গত ১৩ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতাবিষয়ক আন্তঃসরকারি কমিশনের চতুর্থ অধিবেশন। তিন দিনব্যাপী ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেছে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা। বৈঠকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কারণ এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভার্চুয়ালি না করে সরাসরি আলোচনা চায় বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইআরডির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ভার্চুয়াল বৈঠকে রূপপুরের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এ বিষয়টি ভার্চুয়াল বৈঠকে সমাধান করা সম্ভব নয়। কারণে ভার্চুয়াল বৈঠকে প্রযুক্তিগত অনেক ধরনের সমস্যা থাকে, এ ছাড়া কমিউনিকেশনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তৈরি হয়। সে কারণে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, লেনদেনের বিষয়ে আলোচনার জন্য তাদের বাংলাদেশে আসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। মার্চের শেষ সপ্তাহে আসার কথা। তবে তারা আসবে কি না সেটা নিশ্চিত নয়। কারণ তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা অনেক চিন্তাভাবনা করে মুভমেন্ট করছে। কিন্তু বাংলাদেশ চায় লেনদেনের বিষয়টি সরাসরি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে।
রূপপুরে রাশিয়ার ১ হাজার ১৩৮ কোটি ডলার ঋণের শর্ত অনুযায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে শুধু সুদ এবং এরপর থেকে সুদ ও আসল কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। ঋণের ৪৯৭ কোটি ডলার ছাড় করা হয়েছে। বাকি রয়েছে ৬৪১ কোটি ডলার। বছরে দুটি কিস্তিতে রাশিয়াকে রূপপুরের জন্য অর্থ দিয়ে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর গত বছর মার্চ থেকে লেনদেন ঝামেলার কারণে এখন অবধি কোনো অর্থ রাশিয়াকে দিতে পারেনি বাংলাদেশ।
পরবর্তীকালে রূপপুরের ঋণ পরিশোধ নিয়ে বাংলাদেশকে গত বছর ২৩ জুন প্রথম চিঠি দেয় রাশিয়া। ওই চিঠিতে দুই দেশের মধ্যে হওয়া আন্তঃসরকার ঋণচুক্তির (আইজিসিএ) ধারা সংশোধনের প্রস্তাব দেয় দেশটি। এরপর ওই বছরের ১০ আগস্ট আরেকটি চিঠি দেয় রাশিয়া। এতে মার্কিন ডলার ও ইউরোতে লেনদেন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে রুবলে লেনদেনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এর মধ্যে বিষয়টি সুরাহা করতে বেশ কয়েকবার বৈঠকও হয়েছে। বৈঠকে রাশিয়ার পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল, চীনা মুদ্রা ইউয়ানে অর্থ লেনদেন করার। কিন্তু ইউয়ান থেকে রুবলে লেনদেন করতে গেলে দুবার ট্রানজেকশন ফি দিতে হতো বাংলাদেশকে। সে জন্য এ প্রস্তাবে রাজি হয়নি বাংলাদেশ।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, আন্তঃসরকারি কমিশনের চতুর্থ অধিবেশনের প্রথম দিনের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল আর্থিক, বিদ্যুৎ এবং জ¦ালানি খাত। এ ছাড়া বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক খাতের সহযোগিতা ও বিনিয়োগের বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রেল ও কৃষি, প্রাণিসম্পদ, সাইবার নিরাপত্তা, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে রাশিয়ার বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া যৌথভাবে সার কারখানা, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) প্রকল্প স্থাপন, জ¦ালানি পরিশোধন কারখানা স্থাপন, চামড়া ও চামড়াজাত কারখানা, ওষুধ এবং পর্যটন খাতে বিনিয়োগও ছিল আলোচ্য বিষয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকিং লেনদেন সহজীকরণ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, শিল্প, মহাকাশ ও উপগ্রহ এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতি খাতে উভয়পক্ষ বিভিন্ন সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা প্রদানের জন্য বরাবরের মতো আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকেও যেসব এলাকায় রাশিয়ার বিনিয়োগ সহযোগিতা প্রয়োজন সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে দুই দেশের প্রতিনিধিরা।
এ বিষয়ে ইআরডির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম অধিবেশনে যেসব আলোচ্যসূচি ছিল, তাতে তেমন কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেগুলোই পরের দুই অধিবেশনেও আলোচনা হয়েছে। এমনকি এবারের অধিবেশনেও গত তিন অধিবেশনের প্রায় একই আলোচ্যসূচি রয়েছে। তবে কোনো অগ্রগতি নেই। আগের অধিবেশনগুলোর গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোও বাস্তবায়ন হয়নি। তারা তাদের বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেছে, আমরাও আমাদের যেসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে সেসব জায়গায় বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে।
অধিবেশনের শেষ দিন বুধবার প্রটোকল সই হওয়ার কথা রয়েছে, যাতে দুই দেশের দুদিনের আলোচ্য বিষয়গুলোসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে।
সব অর্থনৈতিক সহযোগিতা আন্তঃসরকার কমিশনের মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়া হবে এ শর্তে কমিশনটি ২০১৭ সালে গঠিত হয়। পরে ২০১৮ সালে মস্কোতে কমিশনের প্রথম সভা, ২০১৯ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় সভা হয়। কিন্তু করোনার বিধিনিষেধের কারণে ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে তৃতীয় বৈঠক হয়।
তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক ক্রেতাদের চাপে অর্থ খরচ করে অনেক উদ্যোগ নিতে বাধ্য হলেও বাংলাদেশের উৎপাদকরা সেই তুলনায় পণ্যের দাম পাচ্ছেন না বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের উপস্থিতির সুযোগ আমি বলতে চাই, দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশকে ভয়াবহ চাপ দেওয়া হয়েছে ‘তোমার কাঠামোগত উন্নত করো, অগ্নিনিরাপত্তা উন্নত করো, শিশুশ্রমিক মুক্ত হও, এটা করো, সেটা করো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবকিছু করছি। এসব করতে অনেক টাকা লাগে, অনেক বিনিয়োগ লাগে। কিন্তু ক্রেতারা এসে যখন দরদাম করে, তখন আমরা মূল্যটা পাই না। আপনাদের মান বজায় রাখতে যেসব কাজ আমাদের করতে হয়, যে পরিমাণ বিনিয়োগে আমরা বাধ্য হই, সেই বিবেচনায় আমরা প্রত্যাশা করি আপনাদের উচিত আমাদের পুরস্কৃত করা এবং অন্তত গ্রহণযোগ্য দামটা আমাদের দেওয়া।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত নর্ডিক দেশের রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশ্য করে তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান বলেন, ‘খুবই কম লাভের হার নিয়ে কাজ করছে পোশাকশিল্প এবং সেটা সংকুচিত হয়েছে মহামারীর আগে-পরে। নর্ডিক দেশের রাষ্ট্রদূতদের উপস্থিতিতে আমি এ সুযোগটা নিতে চাই যে, এটা আপনারা আপনাদের যেসব কোম্পানি ব্যবসা করতে আসে, তাদের বলতে পারেন, বিশেষ করে ন্যায্যমূল্যের বিষয়টি। এই মুহূর্তে দামের হার উৎপাদকদের জন্য খুব একটা ন্যায্য নয়।’
তৈরি পোশাকের আবর্জনা ‘রিসাইক্লিং’ নিয়ে বাংলাদেশে নর্ডিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এনসিসি) আয়োজিত এ আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান।
ঢাকায় তিন নর্ডিক দেশ সুইডেন, নরওয়ে ও ডেনমার্ক দূতাবাসের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছিল অনুষ্ঠানের সহআয়োজক। সুইডিশ কোম্পানি এইচ অ্যান্ড এমসহ বিভিন্ন পোশাক ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
তৈরি পোশাকের বৈশ্বিক খুচরা বিক্রেতা এইচঅ্যান্ডএম গ্রুপ, ইকিয়া, লিন্ডেক্স এবং সুইডেন ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্ট কাউন্সিলের সমন্বয়ে গঠিত ‘সাসটেইনেবল ফ্যাশন প্ল্যাটফর্মের’ পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, তৈরি পোশাকে মোট ব্যবহৃত কাপড়ের ৩৫-৪০ শতাংশ উৎপাদন পর্যায়ে আবর্জনা হয়ে যায়। বাকি অংশও ব্যবহারের পর আবর্জনায় পরিণত হয়। সে কারণে এটাকে সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্যে রিসাইক্লিংয়ে নিয়ে আসতে হবে।
ঢাকায় সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ড্রা বার্গ ফন লিন্ডে অনুষ্ঠানে বলেন, ‘তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎস হওয়ার কারণে বাংলাদেশকেও রিসাইক্লিংয়ের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এটা শুধু পরিবেশ ও জলবায়ুর স্বার্থে নয়, অর্থনৈতিক সুযোগও। এর মাধ্যমে হতে পারে নতুন খাতে সূচনা।’
অন্যদের মধ্যে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড ৪৬৩ মিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পেতে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির মেয়াদ হবে ১৫ বছর। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেড হল ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস পিএলসি, স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড, নেব্রাস পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিভি এবং জিই ক্যাপিটাল গ্লোবাল এনার্জি ইনভেস্টমেন্ট বিভির যৌথ উদ্যোগ।
সোনারগাঁয়ে অবস্থিত ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার ৫৮৪ মেগাওয়াট গ্যাসভিত্তিক কমবাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট। প্রকল্পটিতে ৭৫:২৫ ঋণ ইক্যুয়িটি অনুপাতে অর্থায়ন করা হবে। এতে ইউনিক হোটেলের ৩৭ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্থনেতিক স্বার্থ রয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, সার্ভ ইসিএ বেকড লেন্ডার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক থেকে ২৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক থেকে ১১০ মিলিয়ন ডলার, ডয়েচে ইনভেস্টিশনস থেকে ৪৫ মিলিয়ন ডলার এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট থেকে ৩৮ মিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে।
শামীম এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিমিটেডের মোট শেয়ারের ৩০ শতাংশ বা ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮ হাজার ১৬০টি শেয়ার অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা লিমিটেড। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য হবে ১০ টাকা। এ বিষয়ে বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) করে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন চাইবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি। গতকাল এক মূল্যসংবেদনশীল তথ্যে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের কোম্পানিটি। ২০১৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সি পার্ল বিচ রিসোর্টের পরিশোধিত মূলধন ১২০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১২ কোটি ৭ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৪৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ শেয়ার। ২০২২ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।