
রমজানে নোট জালকারী চক্রের অপতৎপরতা রোধে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য বিশেষ কয়েকটি নির্দেশনা পালন করতে বলা হয়েছে। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট থেকে এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়।
রমজানে রাজধানীর ৫৮ স্থানে জাল নোট প্রতিরোধে ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসংবলিত ভিডিও বিভিন্ন ব্যাংককে জনগণের সামনে প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে নির্দেশনায়।
এতে বলা হয়, ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসংবলিত ভিডিও চিত্র রমজান মাসে ঢাকা শহর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখাগুলোর নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বিভাগীয় শহরের গুরুত্বপূর্ণ জনসমাগমস্থল, রাস্তার মোড়ে সন্ধ্যার পর কমপক্ষে এক ঘণ্টা করে প্রচার করতে হবে। দেশের ব্যাংকগুলোর শাখায় টিভি মনিটরগুলোতে ভিডিও চিত্রটি পুরো ব্যাংকিং সময়ে প্রদর্শন করতে হবে।
খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব খুলতে কোনো রকমের ফি বা চার্জ লাগবে না। বিশেষ করে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজস্ব পণ্য বিক্রি ও শ্রমনির্ভর অতিক্ষুদ্র বা ভাসমান উদ্যোক্তা, প্রান্তিক পেশায় নিয়োজিত সেবা প্রদানকারীদের জন্য সহজ শর্তে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ‘ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব’ নামের পরিচালিত এ হিসাবে এখন থেকে ন্যূনতম জমা রাখতে হবে না। পাশাপাশি এ হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ কোনো ধরনের ফি আদায় করতে পরবে না ব্যাংক।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ’ থেকে দেশে কার্যরত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, শ্রমনির্ভর অতিক্ষুদ্র ও ভাসমান উদ্যোক্তা, বিভিন্ন প্রান্তিক পেশায় নিয়োজিত সেবা প্রদানকারী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজস্ব তৈরি বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত পণ্য বিক্রেতা ও সেবা প্রদানকারীদের ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমে আনতে ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হিসাব বলে বিবেচনা করতে বলা হয়েছে।
এসব হিসাবের ন্যূনতম জমার বাধ্যবাধকতা এখন থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত থাকবে। অর্থাৎ ন্যূনতম কোনো অর্থ এই হিসাবে রাখতে হবে না। এ হিসাবে এক হাজার টাকা থাকলে গ্রাহক চাইলে পুরো টাকা তুলতে পারবেন। অন্যান্য হিসাবে ন্যূনতম একটা অঙ্কের টাকা রাখতে হয়।
এছাড়া ব্যক্তিক রিটেইল হিসাবের বিপরীতে কোনো ধরনের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ফি আদায় না করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগ ‘ব্যক্তিক রিটেইল হিসাব’ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে।
ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণের নতুন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য লাইবর কিংবা এসওএফআর-এর মতো বন্ডের সুদহারের ভিত্তিতে দেশে ব্যাংকঋণের হার নির্ধারণ করা হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মেয়াদের সরকারি ট্রেজারি বন্ডের গড় সুদহার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। এর সঙ্গে অতিরিক্ত সুদ যোগ করে ব্যাংকঋণের হার নির্ধারিত হবে।
গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিষয়ক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ট্রেজারি বন্ডকে ভিত্তি হিসেবে ধরে বাণিজ্যিক ঋণের সুদহার চালু হলে বর্তমানের এক অঙ্কের (সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ) সুদব্যবস্থা বাতিল হয়ে যাবে। তাহলে বিনিয়োগের জন্য বাড়তি সুদ আরোপ করতে পারবে ব্যাংকগুলো।
বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে সাধারণত লাইবর কিংবা এসওএফআর রেট ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। বিদেশে লাইবর কিংবা এসওএফআর-এর সঙ্গে নির্ধারিত সুদ যোগ করে মোট সুদহার নির্ধারণ করা হয়। ঠিক একই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে সরকারি পাঁচ ধরনের ট্রেজারি বন্ডের সুদহারের গড় সুদহারের সঙ্গে একটি রেট নির্ধারণ করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই রেট চার থেকে পাঁচ শতাংশের মধ্যে রাখার চিন্তা করছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দুই বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার হচ্ছে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এছাড়া পাঁচ বছর মেয়াদি ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, দশ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং ২০ বছর মেয়াদি ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার হচ্ছে ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ এই পাঁচ ধরনের বন্ডের সুদহারের গড় ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। এই রেটের সঙ্গে যদি বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ শতাংশ করিডর রেট নির্ধারণ করে দেয় তাহলে ব্যাংকঋণের সুদহার হবে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে এক লাফে চার শতাংশীয় পয়েন্ট বৃদ্ধি পাবে ব্যাংকঋণের সর্বনিম্ন সুদহার। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আইএমএফের ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণ করতেই এই সিদ্ধান্তের কথা ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আগামী অর্থবছরের মুদ্রানীতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, নতুন মুদ্রানীতিতে পলিসি রেট ও ঋণের সুদহার নির্ধারণের বিষয়ে কাজ চলছে। ব্যাংকঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে রেফারেন্স রেট ও করিডর রেট নিয়ে প্রাথমিকভাবে চিন্তা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। রেফারেন্স রেট হবে মূলত বন্ডের সুদহারের গড় সুদহার। আর করিডর রেট বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা রয়েছে। দুটো যোগ করে যে রেট হবে সেটাই হবে ব্যাংকঋণের সুদহার।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য জুনের তৃতীয় সপ্তাহ নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেদিনই ঋণের সুদহার বেঁধে দিয়ে বর্তমানের নির্দেশনা বাতিল করে সুদহারের নতুন ব্যবস্থা প্রচলনের ঘোষণা দিতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, নতুন মুদ্রানীতি নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। আগামী জুনের তৃতীয় সপ্তাহে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হবে। চলমান মুদ্রানীতির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও আগামী মুদ্রানীতি কী কী থাকবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে আজকের বৈঠকে।
তিনি আরও বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে ব্যাংকঋণের সুদহার কী করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এখানে ব্যান্ডিং ও রেফারেন্সের রেটের কথা ভাবা হচ্ছে। এসব বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আগামী মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে বিস্তারিত ঘোষণা করা হবে।
এর আগে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আয়োজনে আন্তর্জাতিক বিজনেস সামিটে ব্যাংকঋণের সুদহারে পরিবর্তন আসছে এমন ইঙ্গিত দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। ওই অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসিগত কাজ করছে। চাহিদা কমিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
এছাড়া ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার চেষ্টার কথা জানিয়ে একাধিক হার বাদ দেওয়ার কথা জানান গভর্নর। বিনিময় হার হবে বাজারভিত্তিক ও এক। শিগগির একটি বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ব্যবস্থা দেখা যাবে বলে ব্যবসায়ীদের আশ^াস দেন। তিনি আরও বলেন, সুদের হার নিয়েও কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে আমানতের সুদের হারের ফ্লোর ও সিলিং প্রত্যাহার করেছি। বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণ করে করিডর প্রথা চালু করা হবে। শিগগির আমরা এ নতুন উদ্যোগ চালু করতে সক্ষম হব।
উল্লেখ, ২০২০ সালে ১ এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া অন্য সব ধরনের ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই নির্দেশনা এখনো কার্যকর রয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ফান্ডের (ইডিএফ) অনাদায়ী অর্থের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৪ শতাংশ জরিমানা সুদ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এমন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
২০১৭ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ইডিএফের ঋণের মূল, অর্জিত সুদের পদ্ধতি ও আদায়ের বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছিল। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যদি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কোনো ব্যাংক ইডিএফ ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে না পারে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার ক্লিয়ারিং হিসাব থেকে তা কেটে নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা ব্যাংকগুলোর অনুমোদিত ডিলাররা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বয় করে নেবে।
তবে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্দেশনা অনুযায়ী ইডিএফের ঋণের সঠিক ব্যবহার করা হচ্ছে না। রপ্তানিকারকদের জন্য ইডিএফ থেকে নেওয়া ঋণের অর্থ সময়মতো পরিশোধ করা হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ইডিএফ থেকে রপ্তানিকারকদের জন্য নেওয়া ঋণ সময়মতো পরিশোধ করতে বিলম্ব হলে মেয়াদোত্তীর্ণ অংশের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ দ- সুদ দিতে হবে। ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর অথরাইজড শাখাগুলো (এডি) ঋণের অর্থসহ সুদ ও দ- সুদ বাংলাদেশ ব্যাংককে দেবে।
বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত এ তহবিল গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে। ১৯৮৯ সালে মাত্র ৩৮ লাখ ৭২ হাজার ডলার নিয়ে গঠিত ইডিএফের আকার দিন দিন বেড়ে তা কিছুদিন আগে ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। আর ইডিএফসহ রিজার্ভের অর্থ দিয়ে গঠিত তহবিলের পরিমাণ ৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে।
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি ইডিএফের ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ৩ শতাংশ সুদে অর্থ দেওয়ার কথা জানায়। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ নেবে রপ্তানিকারকরা। এতদিন ইডিএফ থেকে ব্যাংকগুলো ২ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে রপ্তানিকারকদের কাছে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করত।
করোনায় ২০২০ সালের এপ্রিলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রথমবারের মতো ইডিএফ ঋণের সুদের হার ২ শতাংশে নামিয়ে আনে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে সুদের হার ছয় মাসের লন্ডন ইন্টার-ব্যাংক অফারড রেটের (লাইবর) সঙ্গে দেড় শতাংশ যুক্ত করে নির্ধারণ করা হতো।
এর মধ্যে গত ১ জানুয়ারি গঠন করা হয় ১০ হাজার কোটি টাকার ‘রপ্তানি সহায়ক প্রাক অর্থায়ন তহিবল (ইএফপিএফ)’। ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে সরাসরি ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তারা ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে, যার মেয়াদ হবে ১৮০ দিন।
বিশ্বে যেসব দেশ জিডিপির তুলনায় সবচেয়ে কম রাজস্ব আয় করে, সেসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এর পরও রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, তা কোনো বছরই পূরণ হয় না। বিগত বছরগুলোর মতো এবারও রাজস্ব ঘাটতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এর পরও প্রতি অর্থবছরই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ হিসাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রাজস্ব ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা।
অবশ্য লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি থাকলেও আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি রয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১২ দশমিক ১২ শতাংশ বেশি। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে একই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ।
অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, বৈশি^ক মন্দার প্রভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। মূল্যস্ফীতি সামাল দেওয়ার পাশাপাশি কিছু পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যরোধে রাজস্বে ছাড় দেওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি বেড়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত রাজস্ব ঘাটতি ২২ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা হয়েছে, যা গত জানুয়ারি মাসের চেয়ে ৫ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বেশি। এ মাস পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। এর পরিমাণ ১৩ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। এরপরই রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে মূসক ঘাটতি ৫ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। সবচেয়ে কম ঘাটতি হয়েছে আয়কর ও ভ্রমণ করে ৩ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।
এনবিআরের ২০২২-২৩ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে ১ লাখ ১১ হাজার, স্থানীয় পর্যায়ে মূসক ১ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ এবং আয়কর ও ভ্রমণ করে ১ লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার ১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূসকে সবচেয়ে বেশি ৮২ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা, আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্বে ৭৩ হাজার ১৩ কোটি টাকা এবং আয়কর ও ভ্রমণ করে ৬৩ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। এ মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূসকে সবচেয়ে বেশি ৭৬ হাজার ৪০১ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ৬০ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা এবং ৫৯ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায় থেকে।
এর আগের অর্থবছরে একই সময় পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূসকে ৬৬ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে ৫৬ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা এবং আমদানি ও রপ্তানি পর্যায় থেকে আদায় হয়েছে ৫৬ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা।
রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার প্রধান কারণ ডলার সংকট। বৈশি^ক মন্দার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গিয়েছে।
এবারের রোজায় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমে যাবে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। উচ্চ মূল্যের কারণে মানুষ গত বছরের রোজার তুলনায় এ বছর কেনাকাটা কমিয়ে দেওয়ায় এ চাহিদা কমতে পারে। গতকাল রবিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ষষ্ঠ সভায় এসব তথ্য জানায় বাণিজ্য মন্ত্রণলায়। মন্ত্রণালয়ের অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের লিখিত পরামর্শে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, রোজায় ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডালসহ অন্যান্য পণ্যের যে চাহিদা রয়েছে, আমদানিকারকদের কাছে তার চেয়ে বেশি মজুদ রয়েছে।
দেশে ভোজ্য তেলের (সয়াবিন, পাম ও সরিষা) বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টন, স্থানীয় উৎপাদন ২ লাখ ৩ হাজার টন। বছরে ২০ লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেল আমদানি করা হয়। এই খাতে কয়েক ধাপে শুল্ক প্রত্যাহারের পর বর্তমানে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত আছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি মাসে এক লাখ ৪০ হাজার টন থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টন ভোজ্য তেলের চাহিদা থাকলেও রোজায় তা দ্বিগুণ বেড়ে তিন লাখ টনের চাহিদা তৈরি হয়। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, আদানি গ্রুপের বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও বসুন্ধরা গ্রুপ মিলিয়ে ভোজ্যতেলের মজুদ রয়েছে ৩ লাখ দুই হাজার ১৬৩ টন, পাইপলাইনে আছে আরও ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৫ টন।
দেশে বছরে ২০ লাখ টন চিনির চাহিদার বিপরীতে দেশের আখ থেকে আসে ৩০ হাজার টন। প্রতি বছর ২০-২২ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করা হয়। সেখান থেকে পরিশোধনকালে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ‘সিস্টেম লস’ হয়। চিনি আমদানিতে প্রতি টনে ৩ হাজার টাকা সিডি, ৩০ শতাংশ আরডি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ৪ শতাংশ এটি রয়েছে। সব মিলিয়ে চিনিতে ৬১ শতাংশ শুল্ক ছিল। সর্বশেষ এসআরও মাধ্যমে সিডি শূন্য ও আরডি ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।
সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ ও দেশবন্ধু গ্রুপ মিলিয়ে চিনির মজুদ আছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৫৬৩ টন; পাইপলাইনে আছে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৫০ টন।
দেশে মসুর ডালের চাহিদা আছে ৬ লাখ টন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় ২ লাখ ২০ হাজার টন, আমদানি হয় প্রায় ৪ লাখ টন। মাসিক চাহিদা ৪০ হাজার টন হলেও রোজার মাসে চাহিদা হয় ১ লাখ টন। মসুর ডাল আমদানিতে কোনো শুল্ক নেই।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দাবি করেন, রোজার প্রথম দিকে অধিক হারে কেনাকাটা করে মজুদ করেন ভোক্তারা। এতে অনেক সময় সাময়িক দাম বেড়ে যায়। পুরনো অভ্যাসবশত এমন কেনাকাটা না করলে দাম বাড়বে না। এমনকি ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কিছু কিছু পণ্যের দাম রোজায় কমতেও পারে। বিশেষ করে রোজার প্রথম সপ্তাহে চিনির দাম কমতে পারে। সভায় চিনি ছাড়াও ভোজ্য তেল, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর, ডিম ও ব্রয়লার মুরগি নিয়ে আলোচনা হয়। রোজার শুরুতে চিনির দাম কমার আভাস দিলেও সয়াবিন তেলে দাম কমানোর ‘সুযোগ দেখছেন না’ টিপু মুনশি।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে দাম নির্ধারণ করেছি (সয়াবিন তেল), অনেক হিসাব করে দেখেছি, দাম কমানোর সুযোগ আমরা পাচ্ছি না। আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দেশে আবার ডলারের দাম বেড়ে গিয়ে সেবা সমন্বয় হয়ে যায়। তবে বাড়ার কোনো কারণও এই সময়ের মধ্যে তৈরি হয়নি।’
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।