
সামুদ্রিক ও উপকূলীয় মৎস্য সম্পদের বৃহত্তর অন্বেষণ এবং সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর দরিদ্রতা কমানোর লক্ষ্যে ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল মৎস্য অধিদপ্তর। প্রায় পুরো অর্থায়নই ছিল বিশ^ব্যাংকের। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বিদেশি ঋণের এ প্রকল্পের প্রায় অর্ধেকই ক্রয় পরিকল্পনার বাইরে রয়েছে। অর্থনীতির এমন সংকটকালে কম গুরুত্বের এ প্রকল্পের বেহিসেবি ব্যয় নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, আদতে কোনো উপকার হচ্ছে না, প্রকল্পটি শুধু দেশের বিদেশি ঋণের বোঝাই বাড়াবে। প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অগুরুত্বপূর্ণ এসব প্রকল্প বারবার মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।
পাঁচ বছর মেয়াদি এ প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনে সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এ সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকা, যার প্রায় পুরো অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক।
দেশের উপকূলের ৭৫টি উপজেলার ৭৫০টি ইউনিয়নের মাছচাষিদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল। বিশেষ করে নৌযানচালক ও মাছচাষি বা শিকারিদের লাইসেন্স সিস্টেম চালু করার কথা ছিল। জেলেদের ১ লাখ ৫০ হাজার স্মার্ট কার্ড দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত এ খাতে তেমন একটা ব্যয় হয়নি। এ ছাড়া সামুদ্রিক মৎস্য-সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান আধুনিকায়ন, তিনটি ন্যাশনাল ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান প্রণয়ন, চকরিয়ার বাঁধে বনায়ন ছাড়াও ১০০ মডেল মৎস্যজীবী গ্রাম প্রতিষ্ঠার কথা রয়েছে।
কিন্তু প্রকল্পটির পুরো অর্থ সময় মতো শেষ করতে না পেরে নানান অজুহাতে প্রকল্পটির মেয়াদ ও সময় দুটিই বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী ডিপিপির প্রাক্কলিত ব্যয় ২ হাজার ৪৫৭ কোটি ৫৪ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকাল আরও দুই বছর বাড়িয়ে জুন ২০২৫ পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটি আজকের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রকল্পটির আগের ব্যয় বিশ্লেষণে অনেক অসংগতি দেখা গেছে। নতুন ব্যয়ের অর্ধেকই ক্রয় পরিকল্পনার বাইরে। যেমন ক্রয় পরিকল্পনায় ৪৩টি পণ্য প্যাকেজের জন্য ১৮১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, ৫১টি পূর্ত প্যাকেজের জন্য ৮৩০ কোটি টাকা এবং ৪৩টি সেবা প্যাকেজের জন্য ১৯৪ কোটি টাকা, ১৩টি নন-কনসালট্যান্সি প্যাকেজের জন্য ১০৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা রয়েছে। কিন্তু ক্রয় পরিকল্পনায় ১ হাজার ২৩০ কোটি টাকা টেন্ডার আইটেম হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রকল্পের অবশিষ্ট ১ হাজার ২২৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা নন-টেন্ডার আইটেম হিসেবে রাখা হয়েছে অর্থাৎ এগুলো ক্রয় পরিকল্পনার বাইরে। এই ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা কেন ক্রয় পরিকল্পনার বাইরে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মূল ডিপিপিতে ফিজিক্যাল কন্টিজেন্সি ও প্রাইস কন্টিজেন্সি খাতে কোনো অর্থ বরাদ্দ না থাকলেও প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপিতে ফিজিক্যাল কন্টিজেন্সি খাতে ২৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা ও প্রাইস কন্টিজেন্সি খাতে ৯৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করে রাখা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শেষপর্যায়ে এসে এ দুই খাতে ১১৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার ব্লক অ্যালোকেশন রাখার যৌক্তিকতা কী, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই দুই খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে।
প্রকল্পটির সর্বশেষ মেয়াদে এ প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। কিন্তু ক্রয় পরিকল্পনায় ১০টি পণ্য, ৬টি সেবা এবং ৭টি নন-কনসালট্যান্সি প্যাকেজের কমপ্লিশন অব কন্ট্রাক্টের শেষ সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের জুনেই। চুক্তির শেষ সময়সীমা প্রকল্পের মেয়াদের শেষ সময়সীমার অন্তত ১/২ মাস আগে পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
প্রকল্পটির জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে ২৪ কোটি ডলারে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও মূল অনুমোদিত ডিপিপিতে ১৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যবহৃত হয়। অব্যবহৃত বাকি ৫ কোটি ২১ লাখ ডলার প্রকল্পটিতে ব্যবহার করার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সম্মতি দেওয়ায় ডিপিপি সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, শুধু বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তার অবশিষ্ট ডলার অথবা টাকা ব্যবহার করার জন্য আদৌ প্রকল্পটির সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক আবদুল আলিম।
গত বছর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর অর্থসংকটে পড়ে বাংলাদেশ। ওই সময় সরকার সিদ্ধান্ত নেয় অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প আপাতত না হাতে নেওয়ার জন্য বা যেসব প্রকল্প চলমান আছে কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ না তা আপাতত স্থগিত বা শেষপর্যায়ে থাকলে দ্রুত শেষ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা কোনো নির্দেশনার ধারে-কাছেও নেই। একের পর এক প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়ানোর জন্য আবেদন নিয়ে আসছেন, যেগুলো বেশির ভাগই অগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।
বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে প্রাক্কলিত ব্যয়ে পাঁচ বছর মেয়াদের প্রকল্পটি ২০১৮ সালের অক্টোবরে অনুমোদন করে একনেক। ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক অগ্রগতি ৪৫০ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা মূল প্রাক্কলিত ব্যয়ের ২৪ শতাংশ।
একটি ব্যাংক কী পরিমাণের ঋণ বিতরণ করতে পারবে, তার একটি সীমা বেঁধে দেওয়া আছে। আমানতকারীর ন্যূনতম সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ঋণ বিতরণে এমন সীমারেখা টেনে দেওয়া হলেও অনেক ব্যাংকই তা মানছেনা। আমানত এবং ঋণের যে ভারসাম্যপূর্ণ শৃঙ্খলা থাকা দরকার, সেটা ভেঙে গেছে ১৭ ব্যাংকের। আগ্রাসী ঋণ দিয়ে প্রচলিত ও শরিয়াহভিত্তিক এসব ব্যাংক প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। আগ্রাসী ঋণ বিতরণ করায় ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। আমানতকারীদের জন্যও বাড়তি ঝুঁকি বয়ে এনেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। মূলত অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বেনামি ঋণের কারণেই ১৭ ব্যাংকের ঋণশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, প্রচলিত ধারার ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের মধ্যে ৮৭ টাকা এবং ইসলামী ধারার ব্যাংক সর্বোচ্চ ৯২ টাকা ঋণ দিতে পারে। এটাকে ব্যাংকিং পরিভাষায় অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেশিও (এডিআর) বা ঋণ-আমানত অনুপাত সীমা বলা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে সীমার বাইরে ঋণ দিলে ঋণশৃঙ্খলা বিঘিœত হয়। এছাড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের চিত্রও এখন খুব একটা সন্তোষজনক নয়। এমতাবস্থায় অতিরিক্ত ঋণ দিয়ে যদি খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যায় তাহলে ব্যাংকের পাশাপাশি আমানতকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ জরুরি।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এবি ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৯৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ব্যাংকটির ইসলামিক উইন্ডোর এডিআর দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। প্রচলিত ধারার স্টান্ডার্ড ব্যাংক ১০০ টাকার আমানতের মধ্যে ৯৬ টাকারও বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। ওয়ান ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৮৯ শতাংশ। গত জানুয়ারি পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের এডিআর ৯১ দশমিক ১৭ শতাংশ। শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক সিটি ব্যাংক সীমার অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ করেছে। আলোচিত সময়ে আইএফআইসি ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৮৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এনআরবি ব্যাংকও সীমার অতিরিক্ত ঋণ দিয়েছে। এছাড়া কমিউনিটি ব্যাংকের এডিআর ৮৮ দশমিক ২৮ শতাংশ।
তবে প্রচলিত ধারার চাইতে ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো আগ্রাসী ঋণ বিতরণে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। এক্সিম ব্যাংক তাদের জমাকৃত আমানতের চেয়েও বেশি ঋণ দিয়েছে। গত ২৬ জানুয়ারি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটির এডিআর দাঁড়িয়েছে ১০০ দশমিক ২৮ শতাংশ। চতুর্থ প্রজন্মের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ১০২ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর বাইরে অন্যান্য ইসলামী ব্যাংকগুলোর এডিআর দাঁড়িয়েছে ৯৩ থেকে ১০৪ শতাংশ। দি প্রিমিয়ার ব্যাংকের ইসলামিক উইন্ডোর এডিআর দাঁড়িয়েছে ১৫৫ শতাংশ। আর কমার্স ব্যাংকের ইসলামিক উইন্ডোর এডিআর ১৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে কত টাকা ঋণ দিতে পারবে এর একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। তবে ব্যাংকগুলোর এ অনুপাত বিভিন্ন সময় ওঠানামা করে। কারণ কোনো ব্যাংকের যদি বড় একটি আমানত আসে তাহলে তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়। একইভাবে হঠাৎ করে কোনো গ্রাহক আমানত তুলে নিলে তখন ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। তখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এডিআর সীমার বাইরে চলে যায়। এছাড়া ঋণ আদায়ে বিশেষ ছাড় দিলেও এটা হতে পারে। বিষয়টি সাময়িক এবং আপেক্ষিক। তবে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ব্যাংক এডিআর সীমার বাইরে থাকলে সে ব্যাংককে অবশ্যই চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে। অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জানান, ঋণ দেওয়ার যে সীমা বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক তা নিঃসন্দেহে অনেক হিসাব-নিকাশ করে দিয়েছে এবং তা যথেষ্ট বৈশ্বিক মানের। সে সীমা অতিক্রম করা ঠিক নয়। এতে ব্যাংক খাতে ঝুঁকি তৈরি করবে। বিশেষ করে আমানতকারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকবেন। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।
ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত আইনে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে টানা পাঁচবার এডিআর সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও অনেক ব্যাংক এটি সমন্বয় করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে গতিশীলতা আনা, ব্যাংকিং খাতের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে এডিআর ২ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরেও সীমা লঙ্ঘন করে আমানতকারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।
অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অনলাইন আয়কর নিবন্ধন বা ই-টিআইএন ব্যবস্থা। গত মঙ্গলবার রাত থেকে সার্ভার বন্ধ। তা বন্ধ থাকায় ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএন নিতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। ফলে ই-টিআইএন নিতে আগ্রহীরা বিপাকে পড়েছেন। বর্তমানে সনাতন পদ্ধতিতে কর কার্যালয়ে গিয়ে কাগজের ফরম পূরণ করে টিআইএন নেওয়া যায় না। এনবিআরের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে টিআইএন নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হার্ডডিস্কের সমস্যার কারণে বন্ধ টিআইএন সার্ভার। জানা যায়, অনেক দিন থেকেই সার্ভার ব্যবস্থা আপডেট করা হয়নি। এ ছাড়া সার্ভার দেখভালে থাকা প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে এনবিআরের চুক্তিও শেষ হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখন কোনো ফি ছাড়াই আছে। তাই সেবার মান নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।
সূত্র জানায়, অনলাইনে আয়কর নিবন্ধনের পুরো ব্যবস্থাই ঝুঁকির মধ্যে। ডিজিটাল এই ব্যবস্থা তৈরিতে এনবিআরকে কারিগরি সহযোগিতা দেয় সিনেসিস আইটি নামে একটি দেশীয় কোম্পানি। দুই বছর আগে শেষ হয়েছে দুপক্ষের চুক্তির মেয়াদ। কিন্তু সার্ভার বুঝে নেয়নি এনবিআর। চুক্তি না থাকলেও সেবা দিচ্ছে সিনেসিস আইটি। যদিও বিল দিচ্ছে না এনবিআর। কোম্পানিটির টাকা পরিশোধে এনবিআরের বোর্ড প্রশাসনকে একাধিকবার চিঠি দেন এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সদস্য। কিন্তু বোর্ড প্রশাসন রাজি হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অনিশ্চয়তার মুখে ই-টিআইএন সার্ভার।
আয়কর নিবন্ধনব্যবস্থা এখন পুরোপুরি অনলাইন। ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো ই-টিআইএন ব্যবস্থা চালু করা হয়। গত ১০ বছরে সার্ভার নানা সময়ে অল্প কিছুক্ষণের জন্য বিকল হলেও এত দীর্ঘ সময় ধরে বিকল থাকেনি বলে জানা গেছে। কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, এই ই-টিআইএন সিস্টেম অনেক দিন ধরে পরিচর্যা করা হয়নি।
ইনকাম ট্যাক্স ডট জিওভি ডট বিডি নামের সাইটটিতে গত মঙ্গলবার রাত থেকেই ঢোকা যাচ্ছে না। সমস্যার সমাধানে গত বুধবার থেকে রাজস্ব ভবনে দফায় দফায় জরুরি বৈঠকে বসছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, হার্ডওয়্যার সমস্যায় বন্ধ রয়েছে আয়কর নিবন্ধনসেবা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুধু এবারই নয়, এর আগেও কয়েকবার বন্ধ ছিল ই-টিআইএন সার্ভার। ভেন্ডরের সঙ্গে চুক্তি না থাকায় সার্ভার সচল করতে নানা ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে এনবিআরকে।
সূত্র জানিয়েছে, এনবিআরকে কল সেন্টার সেবা দেওয়ারও আগ্রহ দেখিয়েছিল সিনেসিস আইটি। কিন্তু তারা বেশি ফি দাবি করায় রাজি হয়নি এনবিআর।
এ বিষয়ে সিনেসিস আইটি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার আমিনুল বারী শুভ্র বলেন, বকেয়ার জন্য এনবিআরের সেবা কোনো দিন বন্ধ ছিল না। এটা সম্পূর্ণ হার্ডওয়্যার ফেইলিউর সমস্যা। আর হার্ডওয়্যারের সেবা দেয় অন্য ভেন্ডর। তিনি আরও বলেন, আমাদের টিম কাজ করছে শিগগিরই এই সেবা আবার চালু হবে।
এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, একটি সেবা প্রযুক্তিনির্ভরতায় পরিচালিত হলে অবশ্যই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আরও তৎপরতার সঙ্গে সব সময় নজরদারিতে রাখা উচিত। কারণ কোনো সমস্যা হলেই তো সাধারণ মানুষ সমস্যায় পড়বে।
২০২২ সালের বার্ষিক আয়ে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলালিংক। নিয়মিত ফোরজি নেটওয়ার্কে বিনিয়োগ করায় ভালো ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তারা জানান, নেটওয়ার্কের গতি ৪০ শতাংশ সম্প্রসারণের ফলে ডিজিটাল সাইটের সংখ্যা বেড়ে বর্তমানে ১৪ হাজার ১০০ অতিক্রম করে।
গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস এসব তথ্য প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত বছর টফির দৈনিক সক্রিয় ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৫২ লাখ, যা পূর্ববতী বছরের তুলনায় ৫ গুণ বেশি।
এ ছাড়া ২০২২ সালে বাংলালিংকের আয় পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৫ হাজার ৩৭৪ কোটিতে দাঁড়ায়। টানা তিন প্রান্তিকে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে।
এ সময় বাংলালিংক বোর্ডের গ্রুপ চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কান তেরজিওগু বলেন, দেশে ভিওনের ধারাবাহিক বিনিয়োগের সুস্পষ্ট ফলাফল দেখে আমি আনন্দিত। টানা তিন প্রান্তিকে বাংলালিংকের দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি গ্রাহকদের আস্থা বৃদ্ধিতে আমাদের সাফল্যের প্রমাণ। বাংলালিংক স্মার্ট বাংলাদেশের বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস বলেন, সমগ্র দেশে বিস্তৃত অপারেটর বাংলালিংক ২০২২ সালে ডিজিটাল পাওয়ার হাউজ হিসেবে প্রবৃদ্ধির নতুন যুগের সূচনা করেছে।
তিনি বলেন, বছরটিতে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার টেলিকম খাতের প্রবৃদ্ধির হারের দ্বিগুণ। নেটওয়ার্কের সর্বোচ্চ গতি এবং দেশব্যাপী বিস্তৃতি নিয়ে আমরা এই বছর গ্রাহকদের সেরা মানের সংযোগ দিতে প্রস্তুত।
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সাধারণ বীমা খাতের কোম্পানি সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যার পুরোটাই নগদ। গতকাল সোমবার ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে দুই টাকা তিন পয়সা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ২ টাকা ৪১ পয়সা। এ ছাড়া, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৯ টাকা ৪৮ পয়সা।
এই লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য আগামী ২৮ মে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করবে কোম্পানিটি। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৬ এপ্রিল।
অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে দুটি ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে কাজ করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এর একটি মোংলায়, অপরটি চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে। এর বাইরে কুষ্টিয়া, পঞ্চগড়, নীলফামারীর মতো দুই দেশের সীমান্তবর্তী আরও কিছু স্থানে ভারতীয় বিনিয়োগ চায় বেজা। এ জন্য সেসব অঞ্চলে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্য কাজ করছে বেজা।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগের বিষয়ে ভারতের ব্যবসায়ী সংগঠন ভারত চেম্বার অব কমার্সের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরীসহ সংগঠনটির অন্য নেতারা।
ইউসুফ হারুন বলেন, বেজা দুটি ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে কাজ করছে। এর একটি দুটি দেশের সীমান্তবর্তী স্থান মোংলায় এবং অপরটি চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মিরসরাইয়ে।
তিনি জানান, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর জন্য প্রকল্প পরিকল্পনা ছাড়াও আইনি দলিলাদি প্রস্তুতির কাজ চলমান রয়েছে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।