
রমজান মাসে একটি বিশেষ ক্যাম্পেইন নিয়ে যৌথভাবে কাজ করছে কোকা-কোলা বাংলাদেশ এবং সমাজকল্যাণবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। দান ও কৃতজ্ঞতার চেতনায় রমজান মাস উদযাপনে এক লাখ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সঙ্গে খাবার শেয়ার করাই এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য। ‘শেয়ার আ মিল টুগেদার’ নামক ক্যাম্পেইনটি প্রথম রমজান থেকে শুরু হয়ে চলবে ২৫ রমজান পর্যন্ত। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী জুড়ে প্রতিদিন চার হাজার মানুষের সঙ্গে খাবার শেয়ার করা হবে। কোকা-কোলা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তা জি তুং বলেন, ‘যখন প্রতিনিয়ত আমাদের হাজারো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, এমন সময় সবাই একত্র হয়ে একে অন্যকে সাহায্য করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
চার হাজার মানুষের সঙ্গে খাবার শেয়ার করার পাশাপাশি এই ক্যাম্পেইনের আওতায় মাসজুড়ে পাঁচ দিন বিশেষ ইফতারের আয়োজন করা হবে।
ক্রমেই বাড়ছে এসএমই বা ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ। ২০২২ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর তিন মাসে ৬০ হাজার ৬১২ কোটি টাকার ক্ষুদ্র বা এসএমই ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এরফলে ২০২২ সাল শেষে এসএমইতে ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। এ হিসাবে মোট বিতরণকৃত মোট ঋণের ২০ শতাংশ দেওয়া হয়েছে এসএমই খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তবে দেশে কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির প্রসার ঘটাতে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ১৬ মার্চ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মধ্যে মোট ব্যাংকঋণের ২৫ শতাংশ এসএমইতে বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এমন নির্দেশনার ফলে এসএমইতে ঋণ বিতরণ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
২০২২ সাল শেষে ব্যাংক খাতের মাধ্যমে বিতরণকৃত মোট ঋণস্থিতি ছিল ১৪ লাখ ৭৭ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা। ঋণ বিতরণের পরিমাণ আর না বাড়লেও শুধুমাত্র এ হিসাবেই আগামী বছরের মধ্যে এসএমইতে ঋণ দিতে হবে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এর ফলে ২০২৪ সালের মধ্যে এসএমই খাতে আরও পরিমাণ বাড়াতে হবে প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকা। তবে ঋণ বিতরণের যে প্রবৃদ্ধি রয়েছে, তাতে ২০২৪ সালের মধ্যে এসএমইতে আরও অন্তত এক লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করতে হবে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, কভিডকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এ ব্যবসায়ীরা যেন ক্ষতি সামলিয়ে টিকে থাকতে পারেন, সেজন্য সরকার তাদের কয়েক দফায় স্বল্পসুদে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ দিয়েছে। কভিড-১৯ এর প্রভাব এখন আর নেই, তাই নতুন বিনিয়োগের কারণে ঋণের পরিমাণও বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এসএমই ঋণের উপখাতে মাইক্রো ক্রেডিটে ৩৩ হাজার ৮৭৯ কোটি, ক্ষুদ্র উপখাতে এক লাখ ২৬ হাজার ৪৩৬ কোটি ও মাঝারি উপখাতে ৫৫ হাজার ৯৪৬ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরপরই বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হওয়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা দিচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে এসএমই ঋণ বিতরণে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যেহেতু ক্ষুদ্রঋণে ছোট ব্যবসায়ীরা এবং সাধারণ শ্রমিকরা লাভবান হয়, তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তৎপর রয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ বেড়েছে। দেশের অর্থনীতিতে ছোট ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তাই ছোট ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ছোট ঋণ আদায়ও ভালো। আগামীতে ছোট ঋণ বিতরণ আরও বাড়বে।’
তথ্যমতে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এসএমই খাতে দেওয়া ঋণ পেয়েছেন ১১ লাখ ২৪ হাজার ১৯৩ জন উদ্যোক্তা। আলোচ্য সময়ে এসমএই ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। ২০২১ সালে এসএমই ঋণের এই স্থিতি ছিল ২ লাখ ৫২ হাজার ৮২ কোটি টাকা। এক বছরে খাতটিতে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ বেড়েছে।
চলতি বছরের ১৬ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর এই নির্দেশনা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে সিএমএসএমই খাতে যে ঋণ বিতরণ করা হবে, তার ৫০ শতাংশ দিতে হবে কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোগে। আর নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে এ খাতে দেওয়া মোট ঋণের ১৫ শতাংশ ঋণ। সিএমএসএমই খাতে মোট যে ঋণ দেওয়া হবে, তার মধ্যে ৪০ শতাংশ যাবে উৎপাদনশীল খাতে, সেবা খাতে ২৫ শতাংশ ও ব্যবসা খাতে ৩৫ শতাংশ। এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের কম সুদে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য চালু করা হয়েছে একাধিক পুনঃঅর্থায়ন তহবিল। আবার এসএমই ঋণে গ্যারান্টি সুবিধাও দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ে এসএমই খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৭ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। পল্লী এলাকার এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয় ১৭ হাজার ৪২২ কোটি টাকার ঋণ। আলোচিত সময়ে জামানতবিহীন ঋণ ৮ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা দেওয়া হয়।
নিয়মিত এসএমই ঋণের পাশাপাশি কভিড-১৯ এর প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের স্বল্পসুদে ঋণ দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্যাকেজ থেকে প্রণোদনা প্যাকেজের প্রথম পর্যায়ের পর এবার দ্বিতীয় পর্যায়ের বিতরণ কার্যক্রম এর মধ্যে শেষ হয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা সিএমএসএমই খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকার রিফাইন্যান্স স্কিম গঠনের ঘোষণা দেয়। এ স্কিমের আওতায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছে থেকে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ সুদ নিতে পারবে। পাশাপাশি তারা এ স্কিমের আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ২ শতাংশ সুদে রিফাইন্যান্স পাবে। সে সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে স্কিমের আওতায় বিতরণ করা মোট ঋণের ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ কটেজ, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে সামগ্রিকভাবে বিতরণ করার শর্ত দেওয়া হয়। বাকি সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করতে বলা হয়। এছাড়া ঋণগুলোর কমপক্ষে ৭০ শতাংশ উৎপাদন ও সেবা খাতে এবং সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ব্যবসা খাতে প্রদান করা যাবে বলেও জানানো হয়েছিল। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট থেকে এ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে উৎপাদন, সেবা ও ব্যবসা খাতের ঋণের বিভাজনের হার সাময়িক শিথিল করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশে অকাল মৃত্যুর প্রায় ২০ শতাংশের জন্য বায়ুদূষণ দায়ী বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে বায়ুদূষিত ১০টি শহরের মধ্যে ৯টিই দক্ষিণ এশিয়ার। বায়ুদূষণে শীর্ষ ১০ শহরের মধ্যে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এর বড় পরিণতি রয়েছে। এমতাবস্থায় বায়ুদূষণ রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলেও পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘শুদ্ধ বায়ুর জন্য প্রচেষ্টা : দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ এবং জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলে বিশুদ্ধ বায়ুর জন্য অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাব্য এবং সাশ্রয়ী সমাধান রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ বাতাসের জন্য দেশগুলোর নীতি এবং বিনিয়োগের সমন্বয় প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব। বৃহত্তর অগ্রগতির জন্য কৃষি, আবাসিক রান্না ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকেও নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণ বেড়েই চলেছে। যার ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে। এই অঞ্চল সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এবং দরিদ্র হওয়ায় কাচ এবং ছোট ধূলিকণার মতো কিছু সূক্ষ্ম কণা বায়ুতে মিশে আছে। এর ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান থেকে ২০ গুণ বেশি। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি বছর আনুমানিক ২০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। এই ধরনের চরম বায়ুদূষণের প্রভাবে শিশুদের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়। একইসঙ্গে বায়ুদূষণ স্বাস্থ্যসেবা খরচ, উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং কাজের দিন নষ্ট হয়ে যায়।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ভুটানের বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এর বড় পরিণতি রয়েছে। তিনি বলেন, অঙ্গীকার, সঠিক পদক্ষেপ এবং নীতির মাধ্যমে বায়ুদূষণ মোকাবিলা করা সম্ভব।
আবদুলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশ এরইমধ্যে দূষণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ম অনুমোদনসহ বায়ুর মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী জাতীয় পদক্ষেপের পাশাপাশি, আন্তঃসীমান্ত সমাধানগুলো গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষণমূলক কাজ এবং নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে বায়ুদূষণ কমাতে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সহায়তা করছে।
দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বব্যাংকের আঞ্চলিক পরিচালক সিসিলি ফ্রুম্যান বলেন, দূষণ একটি শহর, রাষ্ট্র বা জাতীয় সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সমন্বিতভাবে দেশগুলো যদি একসঙ্গে কাজ করে তাহলে বায়ুদূষণের আশঙ্কাজনক মাত্রা কমাতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং আরও কয়েকটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বায়ুর মান উন্নত করতে নীতি গ্রহণ করেছে। কিন্তু, জেলা ও দেশ পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, ঢাকা শহরের বায়ু মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে বায়ুদূষণের জন্য বাংলাদেশ একাই দায়ী নয়। বাংলাদেশের বায়ুদূষণের পেছনে প্রতিবেশী দেশগুলোরও দায় রয়েছে। প্রতিবেশী দেশের কোনো শহর বেশি দূষিত হলে তার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। কারণ, পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে ভেসে আসা বায়ু ঠেকানো তো সম্ভব না। বায়ুদূষণ রোধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে হবে।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান উৎস হচ্ছে নির্মাণকাজ। সরকার আইন করে পোড়ানো ইট পর্যায়ক্রমে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। ব্লক ইট ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই এখন পর্যন্ত তা ব্যবহার করছে না। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুল হামিদ বলেন, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় করে পরিবেশ অধিদপ্তর বায়ুদূষণ রোধে কাজ করছে। দেশের ভেতরের বায়ুদূষণের উৎসগুলো বন্ধে এরই মধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা এবং কালো ধোঁয়া নির্গত হয়, এমন যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন, ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা।
ভোক্তাদের নিত্যদিনের বাজারে চাহিদার শীর্ষে থাকা ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ে রোজা শুরুর আগে থেকেই চলছে সমালোচনা। সব মহলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রোজা শুরুর আগের দিন ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে এক বৈঠকে নামমাত্র দাম কমান শীর্ষ ব্যবসায়ীরা। তবে বাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর বাজারগুলোতে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বাজারে ভোক্তার কর্মকর্তাদের অভিযানের সময় ১৯০ টাকা করে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করতে দেখা যায়। কিন্তু ভোক্তার কর্তাদের বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়া নিশ্চিত হলে পাল্টে যায় বাজারের চিত্র। এ যেন কর্মকর্তাদের পাহারায় মুরগি ব্যবসায়ীদের লুকোচুরি খেলা। কর্মকর্তারা বেরিয়ে গেলে সেই একই মুরগি ২০০-২১০ টাকা বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল মঙ্গলবার সকালের দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সে সময় ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে মুরগির দাম সর্বোচ্চ ১৯০ টাকায় বিক্রির নির্দেশ দেয় সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
অভিযানের পর বেশি দামে বিক্রি বিষয়ে কারওয়ান বাজারের মুরগি ব্যবসায়ীরা জানান, ভোক্তার কর্তাদের নির্দেশ অনুযায়ী মুরগি বিক্রি করলে ব্যবসা গুটিয়ে ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হবে। বর্তমানে বেশি দামে মুরগি কিনে আনতে হয়। ক্রয় অনুযায়ী প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ টাকায় দরে বিক্রি করে তাদের কোনো মুনাফা হয় না।
কারওয়ান বাজারের মুরগি বিক্রেতা আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভোক্তা অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেটরা আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের দোকানে দোকানে অভিযান পরিচালনা করেন। মূল্য নির্ধারণ করে যান। যদি ২০০-২১০ টাকা বিক্রি না করি তাহলে পরিবার চলবে কী দিয়ে?’
কারওয়ান বাজারে আসা মুসায়ীব নামে এক ক্রেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাজারে সব পণ্যের দাম হু হু করে বাড়ে। এসব দেখার কেউ নেই। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরের বাজার তদারকির কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ভোক্তার অভিযানের সময় মুরগি ১৯০ বিক্রি হয়েছিল। তাদের বাজার ত্যাগের পরপর আগের মতোই বেশি দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। বাজার তদারকিমূলক অভিযান আমরা সবসময় করে থাকি। তবে নির্ধারিত মূল্যের বাইরে কোনো ব্যবসায়ী বেশি দামে কোনো পণ্য বিক্রি করলে তা খতিয়ে দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশের স্টার্টআপগুলোতে ৮০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ এসেছে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি বলেন, স্টার্টআপ ধীরে ধীরে ওঠে না, রকেটের গতিতে উঠে। বিকাশ, নগদ ও শপআপ এরই মধ্যে বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) মিলনায়তনে দেশের উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপদের জন্য সর্ববৃহৎ আয়োজন বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্টের (বিগ) তৃতীয় পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের তরুণদের মেধার ঘাটতি নেই, তাদের প্রয়োজন সহযোগিতা। বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্টের মাধ্যমে আমরা সেই সুযোগ করে দিচ্ছি। তরুণ উদ্ভাবকেরা শুধু দেশের নয়, বিশ্বের সমস্যা সমাধান করবে। এসময় দেশের সমস্যাগুলোর প্রযুক্তিনির্ভর সমাধান দিয়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় তরুণ উদ্ভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান পলক।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার জন্য আমরা ইনোভেশন অ্যান্ড অন্ডার প্রেনিউরশিপ একাডেমি প্রকল্প চালু ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছি। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেশে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গড়ে উঠবে। পাশাপাশি আগামীতে বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় হাব এ পরিণত হবে।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু ইনোভেশন গ্র্যান্ট ২০২৩ এর পুরস্কার হিসেবে সেরা একটি স্টার্টআপকে দেওয়া হবে বিশেষ সম্মাননা ও গ্র্যান্ট হিসেবে ১ কোটি টাকা অনুদান। বাকি নির্বাচিত তালিকার সেরা ৫০ স্টার্টআপের প্রত্যেককে দেওয়া হবে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান। এছাড়া স্টার্টআপদের জন্য রয়েছে বিনিয়োগ পাওয়ার সুবিধাসহ নানা সুযোগ। অর্থাৎ সেরা ৫১টি স্টার্টআপকে মোট ৬ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।