
সর্বোচ্চ অনলাইন বিল সংগ্রহের জন্য ব্র্যাক ব্যাংককে স্বীকৃতি দিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। ভিসা ও মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসার বিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংক প্রথম স্থান অধিকার করেছে। ১৬ মার্চ ঢাকার এক অনুষ্ঠানে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য এই প্রশংসাপত্র হস্তান্তর করা হয়। ব্র্যাক ব্যাংক গত কয়েক বছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, ডিপিডিসি, ডেসকো, জীবন বীমা করপোরেশনসহ বেশ কটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পেমেন্ট গেটওয়ে ও এপিআই সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন ভ্যালু-অ্যাডিং কালেকশন এবং পেমেন্ট সলিউশন তৈরি করে ট্রানজেকশন ব্যাংকিংয়ের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। বিজ্ঞপ্তি
দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুসহ আরও ২১টি মেগা প্রকল্প নিতে চায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে তাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ সাতটি মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।
সম্প্রতি সেতু বিভাগের মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর ত্রিপক্ষীয় সভায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সভায় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব মিজ ফাতিমা ইয়াসমিন, সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন এবং অর্থ বিভাগ, সেতু বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উল্লেখ করা হয়, রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন এবং এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের জন্য ৩০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে সেতু বিভাগ ১টি ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প ও ৬টি মেগা প্রকল্প, অর্থাৎ ৭টি চলমান অনুমোদিত প্রকল্পসহ মোট ২৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। যার ব্যয় প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ২৪১ কোটি টাকা।
৩০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যানের ২১টি প্রকল্প প্রক্ষেপণের বিষয়ে সেতু বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) রাহিমা আক্তার গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাস্টারপ্ল্যানের একটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল; সেখানে সারা দেশে আমাদের সেতু কর্তৃপক্ষের কতগুলো প্রকল্প হতে পারে পরবর্তী ২৫ বছরে এটারই একটা সমীক্ষা চলছে। এটির আইডেন্টিফিকেশন এখনো চলছে। তবে সেটা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’
তিনি বলেন, ফ্রান্সের একটি কোম্পানি এর সমীক্ষা করছে। সমীক্ষা করলে বোঝা যাবে মূল ব্যয় কত হতে পারে।
২১টি নতুন মেগা প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের একজন প্রকৌশলী বলেন, ‘আমাদের ৩০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যানে এগুলো আছে। আমাদের প্ল্যানিং এটা দেখে।’ তিনি বলেন, ‘পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া সেতু নির্মাণের পরিকল্পনাও এর মধ্যে আছে। এটাতে আমাদের সেতুর স্টাডিও করা আছে।’
সভায় প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলন ও ২০২৪-২৫ অর্থবছর হতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রক্ষেপণের ওপর অর্থ বিভাগের উপসচিব (বাজেট অধিশাখা-১৬) টি কে এম মোশফেকুর রহমান উল্লেখ করেন, ২য় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনায় (২০২১-৪১) পরিবহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো বিনির্মাণ খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে।
সভায় এটিও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাব। সেই আলোকে নিয়মিতভাবে ডিপিপি সংশোধন, প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি, প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল বৃদ্ধি, প্রকল্প সাহায্য ব্যয়ে ধীরগতি ইত্যাদি বিষয় পরিহার করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। ২য় পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনায় (২০২১-৪১) সেতু বিভাগের জন্য যে কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতা জোরদারকরণ। প্রকল্প প্রণয়নকালে প্রকল্পে সময়ক্ষেপণ ও ব্যয় বৃদ্ধি এড়ানো, ক্রয় নীতিমালা উন্নয়ন, প্রকল্প ডিজাইনে অধিকতর মনোযোগ প্রদান, প্রকল্পগুলোর প্রাসঙ্গিকতা, গুণগত মান, অর্থের প্রাপ্যতা ও বাস্তবায়ন সক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনা করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অন্যতম কৌশল হলো সব চলমান প্রকল্পের সময়মতো বাস্তবায়ন। ব্যয় বহুল প্রকল্পে সময়ক্ষেপণ ও ব্যয় বৃদ্ধি এড়াতে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে টার্নকি মডেল (এ পদ্ধতিতে প্রকল্প প্রণয়ন থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত পুরো দায়িত্ব একক প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়) অনুসরণ এবং চুক্তিতে বিশেষ প্রবিধান রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। অন্যান্য কৌশলের মধ্যে রয়েছে পিপিপি কার্যক্রমের সক্ষমতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধিকরণ এবং নতুন করে ব্যয়বহুল প্রকল্প গ্রহণের বিষয়টিকে নিরুৎসাহিত করা। গৃহীতব্য প্রকল্পসমূহে যে ব্যয় প্রক্ষেপণ করা হয়েছে তা থেকে প্রতীয়মান নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আওতায় অর্থায়ন করা হবে বিরাট চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া মেগা প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে নির্মাণ ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে হ্রাস করা এবং টেকসই ও গুণগত মান বিবেচনায় যোগাযোগ অবকাঠামোর মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করা প্রয়োজন।
সভায় উল্লেখ করা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অপেক্ষা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রাক্কলনে ২৩ শতাংশ বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট অপেক্ষা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পরিচালন বাজেট প্রাক্কলনে ৩৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অপেক্ষা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেতু বিভাগ কর্তৃক উন্নয়ন বাজেটে ২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রস্তাব করা হয়েছে।
সভায় সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে পদ্মা বহুমুখী সেতু ও কর্ণফুলী টানেলের জন্য জিওবি চাহিদার ১০০% অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ এবং অন্যান্য অনুমোদিত প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।
সভায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য সেতু বিভাগের উন্নয়ন বাজেট মোট ৮ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে অনুমোদিত প্রকল্পের জন্য সরকারের তহবিল থেকে ৬ হাজার ১৯ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য ২ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা এবং অননুমোদিত প্রকল্পের জন্য জিওবি থোক বরাদ্দ ২৮১ কোটি টাকা।
বিভিন্ন সংকটে দেশে উৎপাদন কমেছে। বিনিয়োগের জায়গা সংকুচিত হওয়ার কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রয়োজনেও ভাটা পড়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১২ দশমিক ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আগস্টে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ০৭ শতাংশে। তবে সেপ্টেম্বরে ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে আবার ১৩ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে।
এরপর অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয় ১৩ দশমিক ৯১ শতাংশ করে। বেসরকারি খাতের ঋণের এই প্রবৃদ্ধি ডিসেম্বরে আরও কমে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৮৯ শতাংশে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এই খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে আসে ১২ দশমিক ৬২ শতাংশে এবং ফেব্রুয়ারিতে আরও কমে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ১৪ শতাংশে।
আর্থিক সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এসবের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে, ডলার সংকট বেশ ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। এ সংকট সমাধানে সরকার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করছে। এতে রিজার্ভের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মানদ-ে হিসাব করলে রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমে দাঁড়াবে ২৩ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের করা প্রাক্কলনের চেয়েও কম। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৪ দশমিক ১০ ভাগ। এর আগের অর্থবছর ২০২১-২০২২ এ প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ৮০ ভাগ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে তা ছিল অনেক কম।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) পেট্রোলিয়াম ছাড়া ক্যাপিটেল মেশিনারি, ভোগ্যপণ্য, মধ্যবর্তী পণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ব্যাপকহারে কমেছে। এ সময় ক্যাপিটেল মেশিনারির জন্য এলসি খোলা হয় ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারের। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজেট ঘাটতি একটি সাধারণ ঘটনা। সরকারের উচিত বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের জন্য সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা এবং কাঠামোগত সংস্কার করা।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) আয়োজিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনার মূল বক্তব্য উপস্থাপনায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এনবিআরকে বাংলাদেশে মোট কর ব্যয়ের একটি ব্যাপক মূল্যায়ন করতে হবে। বাজেটে সামাজিক ব্যয় সংরক্ষণও বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং ক্রমাগত ডলার সংকটের কারণে বাজেট প্রণয়নে সামষ্টিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা বলেন। এই কারণগুলো কম আমদানি, বিনিয়োগ এবং ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে পরিচালিত করবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত মজুরি হ্রাসের সঙ্গে পরিবারের চাহিদা হ্রাস পাবে। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএমসিসিআই সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির। তিনি বলেন, প্রতি বছর মাত্র ৩ মিলিয়ন মানুষ তাদের ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয় তবে এই সংখ্যা বাড়ানো উচিত। তিনি নন-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য করপোরেট কর হার কমানোর এবং বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনা করে ব্যক্তির জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা বিদ্যমান ৩ লাখ থেকে ৫ লাখে উন্নীত করার অনুরোধ জানান।
বিএমসিসিআই সভাপতি বলেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশের প্রায় ৬০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। তিনি এই বিনিয়োগের জন্য একটি আর্থিক উৎস ম্যাপিং করার আহ্বান জানান। আমাদের রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য, আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণের দিকে যেতে হবে এবং নতুন সম্ভাব্য খাতগুলো অন্বেষণ করতে হবে।
খেলাপির চাপে দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে দেশের ব্যাংক খাত। এ খাতে বর্তমানে দৃশ্যমান খেলাপির পরিমাণ ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু মামলার দীর্ঘসূত্রতায় এর আড়ালে বড় অঙ্কের খেলাপি আটকা আছে অর্থঋণ আদালতে। এমন পরিস্থিতিতে খেলাপি ঋণের অর্থ উদ্ধারে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি ব্যাংক নির্বাহীদের। ব্যাংকের শীর্ষ কর্তাদের অংশগ্রহণে আজ রবিবার অনুষ্ঠিতব্য ব্যাংকার্স সভার আলোচ্যসূচিতে অর্থঋণ আদালতের মামলার সর্বশেষ পরিস্থিতির বিষয়ে এজেন্ডা রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
চলতি বছরের প্রথম সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে তফসিলভুক্ত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতামত দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া সভায় সব ব্যাংকের বাংলা কিউআর কোড চালু, নতুন অর্থবছরের মুদ্রানীতি এবং ব্যাংকারদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণসহ বিবিধ বিষয় আলোচ্যসূচিতে রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম ব্যাংকার্স সভা রবিবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মুদ্রানীতি, খেলাপিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।’
ব্যাংকার্স সভার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঋণখেলাপির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ কমাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ দেশের অভ্যন্তরেও নানা চাপ রয়েছে। কিন্তু এটা নানা চেষ্টা করেও কমানো যাচ্ছে না। আর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে যে, অর্থঋণ আদালতে মামলার দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নিয়ে অনেক গ্রাহক ইচ্ছাকৃত খেলাপি বনে যাচ্ছেন। এতে খেলাপি লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। এই খেলাপি কমাতে আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির বিকল্প দেখছেন না তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০০৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। যা ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। আর ২০০৩ সালের গঠনের পরে থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থঋণ আদালতে দায়েরকৃত মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার। এসব মামলায় দাবি তথা আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি অর্থঋণ আদালতে এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি মামলা সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজারটি ও এসব মামলায় নিষ্পত্তি অর্থের পরিমাণ ৮২ হাজার কোটি টাকা হলেও প্রকৃত আদায় ২১ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থঋণ আদালতে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৭২ হাজার এবং আটকে থাকা অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা।
একই প্রতিবেদন জানা গেছে, ২০২২ সালে অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলা বেড়েছে ১৪ হাজার ৪৫২টি। একই সময়ে ব্যাংকের দাবি করা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ৩৫ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা। তবে গত বছরের শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) মামলা বেড়েছে ৮ হাজার ৩৪৪টি। এ সময় দাবি করা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ১৯ হাজার ১৮৭ কোটি টাকা।
সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফজাল করিম বলেন, ‘‘বিদ্যমান ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন’ সংশোধন হলে আমরা সেই অনুযাযী ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে খেলাপি কমাতে আমরা তৎপরতা বৃদ্ধি করেছি। এবং গত ডিসেম্বর প্রান্তিকে আগের তুলনায় খেলাপি কমেছে এবং কিছুটা হলেও খেলাপি ঋণ আদায় বেড়েছে। আর ব্যাংকার্স সভায় এজেন্ট উপস্থাপনের আগে বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। যখন খেলাপি ঋণের আদায় বা নিষ্পত্তি নিয়ে কথা উঠবে তখন পরিস্থিতি বুঝে বিস্তারিত বলা যাবে।’’
এর আগে গত মঙ্গলবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন, ২০২৩-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. মাহমুদুল হোসাইন খান খসড়া আইনের বিধিবিধান সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানান।
১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ভিত্তিতে বর্তমানে দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এটাকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগী করার জন্য সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে কাজ করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সংশোধন প্রক্রিয়া চলাকালে সরকার আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করে। এ অবস্থায় ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্ত হিসেবে আইএমএফ দ্রুত ব্যাংক কোম্পানি (সংশোধন) আইন বাস্তবায়নের তাগাদা দিয়েছে।
মিনিসোর হেডকোয়ার্টার সম্প্রতি তাদের ‘গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার্স সামিট ফোরাম’-এ বাংলাদেশকে সেরা দেশ হিসেবে পুরস্কৃত করেছে। মিনিসো তার অন্যান্য ডিজাইনের পণ্য মার্কেটিং মডেল এবং উদ্ভাবনী ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলের কারণে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ বেশ কটি বিভাগে এর দ্রুত প্রবৃদ্ধি হয়েছে। মিনিসোর চেয়ারম্যান মি. ইয়ে গ্লোবাল সামিট ফোরামে বাংলাদেশে সফলতার বিষয়টি গুরুত্বসহ নিয়েছেন। মিনিসো বাংলাদেশের পরিচালক শাহ রাইদ চৌধুরী, চৌধুরী আসিফুজ্জামান ও এম আর খান শাহিনের উপস্থিতিতে মিনিসো গ্লোবালের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট হুয়াং ও এশিয়া-অস্ট্রেলিয়ার হেড অব সেলস সুসান সেন পুরস্কারটি তুলে দেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।