
২০২১-২২ অর্থবছরেও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলিতভাবে নিট মুনাফা হয়েছিল ১ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। কিন্তু বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে লাভে থাকা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান মুনাফা থেকে ছিটকে পড়ায় চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পরিচালনায় সরকারকে লোকসান গুনতে হয়েছে ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। লোকসানে শীর্ষে রয়েছে জ্বালানি খাতের বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগের বিপিডিবিসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে যোগাযোগ ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো মুনাফা করেছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় উঠে এসেছে এসব তথ্য।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের (২৩ মে পর্যন্ত) হিসেবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। লোকসানের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন বা টিসিবি। চলতি বছরের ২৩ মে পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানের লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা।
সমীক্ষার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরেও বিপিসির লাভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। এই প্রতিষ্ঠান লোকসানের মুখ দেখা শুরু করে ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে। টানা সাত বছর মুনাফায় থাকার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে ফের লোকসানে পড়ে। এ সময় লোকসান হয় ১ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। শুধু লোকসানই নয়, এ মুহূর্তে ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন দেশের বকেয়াও মেটাতে পারছে না সরকারি এ সংস্থাটি।
২০২১-২২ অর্থবছরেও ৮৫৪ কোটি টাকা লাভ করা প্রতিষ্ঠান টিসিবিকে এ বছর লোকসান গুনতে হয়েছে ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ সংকটের কারণে সরকারি এ প্রতিষ্ঠান বেশ ঘাটতিতে পড়েছিল। তবে সরকারি প্রণোদনা থাকা সত্ত্বেও এ প্রতিষ্ঠানটিকে বিপুল পরিমাণের লোকসান গুনতে হয়েছে।
এ বছর প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা লোকসানে থাকা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ২০২১-২২ অর্থবছরেও লোকসান গুনেছিল মাত্র ৩ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। এই প্রতিষ্ঠান ২০২০-২১ অর্থবছরে লাভের মুখ দেখেছিল ১৪৫ কোটি টাকা। বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে গ্রাহকের কাছে বিক্রি করতে হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পরিমাণ বেড়েছে।
লোকসানে থাকা অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের বিএসএফআইসি ৬৭৮ কোটি টাকা, বিজেএমসি ২৪৮ কোটি টাকা।
তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান লোকসানে থাকলেও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই অল্প হলেও মুনাফা করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে যোগাযোগ বিভাগের প্রতিষ্ঠানগুলো, যাদের মুনাফার অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা। তা ছাড়া সেবা খাতের প্রতিষ্ঠান যেমন বিএসটিআই, ইপিবি বা বিটাকের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারের মুনাফা এসেছে ৮৭৪ কোটি টাকা। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লাভ করেছে বেজা, ৩৭৫ কোটি টাকা। এই তালিকায় আরও রয়েছে বিআরইবি, বিআইআরসি, বেপজাসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্যমতে, বিপিসির ইতিহাসে সর্বোচ্চ লোকসান ছিল ২০১১-১২ অর্থবছরে। ওই বছর সংস্থাটি লোকসান গুনে ১১ হাজার ৩৭১ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৯ হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও ২০১০-১১ অর্থবছর ৮ হাজার ৮৪০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা লোকসান দেয় বিপিসি। তবে ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে লোকসান কমে সংস্থাটির। ওই দুই অর্থবছর বিপিসির লোকসান ছিল যথাক্রমে ৪ হাজার ৮৩২ কোটি ৩৬ লাখ ও ২ হাজার ৩২১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে আসায় এরপর টানা আট বছর মুনাফা করেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিপিসি মুনাফা করে ৪ হাজার ১২৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। পরের অর্থবছর তা আরও বেড়ে হয় ৯ হাজার ৪০ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছর ৮ হাজার ৬৫৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। তবে উচ্চ মুনাফার পরও দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম না কমানোয় সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার। এতে অনেকটা বাধ্য হয়ে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয় ২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল।
এর প্রভাবে পরের অর্থবছর বিপিসির মুনাফা কিছুটা কমে যায়। এতে ২০১৭-১৮ অর্থবছর ৫ হাজার ৬৪৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা মুনাফা করে বিপিসি। ২০১৮-১৯ অর্থবছর তা আরও কিছু কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। তবে করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করে। এতে ২০১৯-২০ অর্থবছর বিপিসির মুনাফা কিছুটা বেড়ে হয় ৫ হাজার ৬৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর ২০২০-২১ অর্থবছর তা রেকর্ড ৯ হাজার ৫৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় পৌঁছায়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সারা বিশ্বে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দেয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ওঠানামা করে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করলে গত অর্থবছরের শুরু থেকে ডিজেলে লোকসান গুনতে শুরু করে বিপিসি। এতে ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়। ওই অর্থবছর ফার্নেস অয়েলের দামও ছয়বার বাড়ানো হয়। পাশাপাশি জেট ফুয়েল ও মেরিন ফুয়েলের দাম বাড়ানো হয় বেশ কয়েকবার। এরপরও আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে থাকায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে সব ধরনের তেলে লোকসান গুনতে শুরু করে বিপিসি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত আগস্টে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বাড়ানো হয়। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনের খুচরা মূল্য দাঁড়ায় ১১৪, পেট্রোল ১৩০ ও অকটেন ১৩৫ টাকা। তবে আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমানোর কারণে কিছুটা লোকসান কমে বিপিসির। এতে ওই মাসেই সব ধরনের তেলের দাম পাঁচ টাকা হারে কমানো হয়। এরপরও ডিজেলে বড় অঙ্কের লোকসান গুনছে বিপিসি। তবে অকটেনে কিছু মুনাফা করে সংস্থাটি। তবে বিপিসি বিক্রি করা জ্বালানি তেলের মধ্যে ডিজেলের পরিমাণই প্রায় ৮০ শতাংশ। এতে সংস্থাটির লোকসান কমানো যায়নি।
প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরে মৃতপ্রায় এমারেল্ড। আর স্বল্প সময়ের উৎপাদন দিয়েই গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিয়া মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার হচ্ছে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ দেখা। এরই অংশ হিসেবে স্বল্প সময়ের উৎপাদন দিয়ে আমরা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করেছি, যাতে ‘জেড’ ক্যাটাগরি থেকে বের করে আনা যায়। এখন লক্ষ্য হচ্ছে ভালো লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা।
মিয়া মামুন আরও বলেন, মূলত এমারেল্ডের তেল জাপানে রপ্তানির উদ্দেশ্যেই আমরা কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করেছি। একটি রুগ্ণ কোম্পানিকে স্বাভাবিক উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি চেয়ারম্যানের সহায়তায় এখন আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি জাপানে রপ্তানির জন্য। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই এটি সম্ভব হবে বলে মনে করছি। কিছু কমপ্লায়েন্স ইস্যু ছিল, যা আসন্ন এজিএমে সমাধান হয়ে যাবে। এরপর তেল রপ্তানিতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
গত ১ জুন এমারেল্ড অয়েলের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। কোম্পানিটির আগের উদ্যোক্তা বাদে অন্য সবাই এ লভ্যাংশ পাবেন। ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে দীর্ঘদিন বিদেশে পলাতক থাকায় আগের উদ্যোক্তাদের সব শেয়ার ফ্রিজ করা আছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৫ সালে ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল কোম্পানিটির তৎকালীন পর্ষদ। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোম্পানিটির প্রধান উদ্যোক্তা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেষ্টায় ২০২১ সালে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে। বন্ধ থাকা কোম্পানিটিতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসে জাপান-বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেড। মিনোরির নতুন বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে পুনরায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফেরে এমারেল্ড অয়েল। কোম্পানিটির রাইস ব্র্যান তেলের দুটি ইউনিটের একটি সচল রয়েছে, যেখান থেকে এখন প্রতিদিন প্রায় ৪৫ টন ক্রুড অয়েল উৎপাদন হচ্ছে। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি। কোম্পানিটি উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের সহায়তা দেন এসইসি চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে এসইসি চেয়ারম্যান ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, শুধু এমারেল্ড নয় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, রিং সাইন টেক্সটাইলসহ প্রায় ২০টির মতো পুরনো বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানি আমরা পুনর্গঠিত করেছি। এরমধ্যে অনেকগুলো কোম্পানি নতুন ব্যবস্থাপনায় উৎপাদনে ফিরেছে। পুরনো বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিগুলো সচলে আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে আরও প্রায় ২০টি কোম্পানি উৎপাদনে ফিরবে। এখন বড় বড় গ্রুপগুলো পুরনো বন্ধ থাকা এসব কোম্পানি নিতে চাইছে। কারণ নতুন করে জমি, যন্ত্রপাতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগসহ পুরো প্রক্রিয়া শেষে উৎপাদন শুরু করতে অনেক সময় ও অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু পুরনো কোম্পানি ছয় মাসের মধ্যে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনা যায়।
এসইসি চেয়ারম্যান বলেন, পুরনো কোম্পানিগুলো বন্ধ থাকায় দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছিল। মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনের মাধ্যমে সেসব কোম্পানি এখন বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফিরছে, শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিচ্ছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে। এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
এদিকে দেশজুড়ে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেক ব্যবহার করতে পারছিল না এমারেল্ড অয়েল। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন সংকট কাটাতে গত ১১ মে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন রাইস হাস্ক (ধানের তুষ) বয়লার সংযোজন করেছে কোম্পানিটি। এর ফলে এখন থেকে টানা ২৪ ঘণ্টা ধানের কুড়ার তেল উৎপাদন করতে পারবে এমারেল্ড অয়েল। এর ফলে প্রতিদিন অন্তত ২০০ টন রাইস ব্র্যান ক্রাশিং করা যাবে, যা থেকে ৪০-৪৫ টন তেল পাওয়া যাবে। বয়লার স্থাপনের কারণে পরিশোধিত তেল উৎপাদন সর্বোচ্চ ৭০ টনে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা একটি কোম্পানি এখন পুরোপুরি বাণিজ্যিক উৎপাদন চালাচ্ছে। মুনাফাও হচ্ছে। প্রথম বছরের স্বল্প উৎপাদন থেকে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশও ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি ২৪ ঘণ্টা সচল রাখার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কাঁচামাল, জ্বালানি থেকে সবকিছু অনুকূলে থাকায় এটি এখন আমাদের আরও বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে।
এদিকে নতুন বিনিয়োগের বিপরীতে গত ১০ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের আরও ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে এসইসি, যা মিনোরি বাংলাদেশের নামে ইস্যু করা হবে। এর আগে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ শেয়ার কেনে মিনোরি বাংলাদেশ। নতুন শেয়ার বরাদ্দ হলে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় উন্নীত হবে।
এমারেল্ড অয়েলকে সফলভাবে বাণিজ্যিক উৎপাদনে ফিরিয়ে আনার পর ২০২২ সালের জানুয়ারিতে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি ফু-ওয়াং ফুডসের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা তুলে দেওয়া হয় মিনোরির হাতে। এটিরও ধারাবাহিক উন্নতি দেখা গেছে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি ও মুনাফা বাড়ছে।
বৈশ্বিক চলমান পরিস্থিতিতে এবারের বাজেট গুরুত্বপূর্ণ। এই বাজেট বাস্তবায়ন করাটাই সরকারের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। গতকাল শনিবার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ব্র্যাক বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকস ফোরাম ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর বাজেট পরবর্তী এক ‘পোস্ট বাজেট ডায়ালগ ফিসকাল ইয়ার ২০২৩-২৪’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সভায় আলোচক হিসেবে অংশ নেন ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের প্রফেসর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, আইপিডিসি ফিনান্স-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম এবং স্নেহাশিষ মাহমুদ অ্যান্ড কোং-এর পার্টনার স্নেহাশিষ বড়ুয়া, এফসিএ।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অনেক রূপকল্পের কথা বলা হয়েছে। আছে নানা অর্জন আর প্রত্যাশার কথা। কিন্তু কোনো বিষয়েই সুর্নিদিষ্ট দিকনির্দেশনা নেই এ মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, বাজেট নিয়ে আমরা যারা আলোচনা করছি, তা নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনা হবে না। কারণ বাজেট ধরতে গেলে ইতিমধ্যে পাস হয়ে গেছে। দুই একটি জায়গায় পরিবর্তন আসলে আসতে পারে। বাজেট একটা মূল্যবান জিনিস।
তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি করমুক্ত আয়ের সীমা যেটা সাড়ে ৩ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে সেটা ঠিক আছে। কিন্তু দুই হাজার টাকা যা মিনিমাম কর ধরা হয়েছে এটা কেন? রিটার্ন দিলেই দুই হাজার টাকা দিতে হবে। এটাকে আমার সাংঘর্ষিক মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৬ শতাংশ। বর্তমানে রয়েছে ৯ শতাংশ, এটা ৬ শতাংশে আনা সম্ভব না। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ধরা হয়েছে। কিন্তু ৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি থেকে কীভাবে এত বড় হ্রাস করা হবে তার কোনো নির্দেশনা নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেপো রেট বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। সেটা কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করেনি।
তিনি আরও বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ যথাযথ ব্যবহার হচ্ছে কি না প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ যারা এখানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা, তারা হন না। আর যারা আসার কথা না, তার চলে আসেন। এ সমস্যাগুলো সমাধানে বাজেট বক্তব্যে কোনো মেসেজ পাইনি। তাই এর সুফল পাওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকে যায়।
তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ৬ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এক বছরে কীভাবে এটা বাড়াবে তা বোধগম্য না। এছাড়া রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্জন হবে না। এডিপির লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন করাও সম্ভব না।
তিনি বলনে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে যে সমস্যা, তার কোনো উল্লেখযোগ্য বক্তব্য দেখিনি বাজেটে।
কিছু সেবা পেতে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে টিআইএনধারীদের রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা করের বিধান রাখা হয়েছে। এটি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা হলেও সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের সংগঠন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) নেতারা প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এই টাকা তো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যাবে। এজন্য আমাদের গর্ব করা উচিত। বেতনের সঙ্গে এটার কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টা করজাল বাড়ানোর জন্য একটা নিজস্ব উদ্ভাবনী উদ্যোগ।’
হুমায়ুন কবির আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যখন থেকে ই-টিআইএন চালু হয়েছে, তখন থেকেই এই দুই হাজার টাকার নিয়ম চালু করা প্রয়োজন ছিল।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আইসিএবি। সেখানে প্রশ্নোত্তর পর্বে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হুমায়ুন কবির এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বাজেট নিয়ে নিজেদের ভাবনা সাংবাদিকদের সমনে তুলে ধরেন আইসিএবির সভাপতি মো. মনিরুজামান। স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শুভাশীষ বসু। আর বাজেটের ট্যাক্স, ভ্যাট ও কাস্টমস খাতের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান স্নেহাশীষ, মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, একটা সেবা (রিটার্ন ডকুমেন্ট) কি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিনা পয়সায় দিয়ে দেবে? তারা ই-টিআইএন চালু করল, সিস্টেম তৈরি করল, ব্যক্তির আয়কর হিসাবের ফাইল তৈরি করলÑ এসব সেবা কি এমনি এমনি হয়ে যাবে। আর আপনি যদি রিটার্ন জমা না দেন, তাহলে আপনার থেকে দুই হাজার টাকা নেবে কী করে?
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আয়ের পরিমাণ নির্বিশেষে ন্যূনতম করের পরিমাণ দুই হাজার টাকা হবে। বর্তমানে ৩৮ ধরনের সেবা নিতে হলে রিটার্ন জমার রসিদ লাগে। ফলে নতুন প্রস্তাব অনুসারে, এসব সেবা নিতে হলে রিটার্ন জমার জন্য ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে আইসিএবির সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক মতামত দেওয়ার সুযোগটা কম। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, থিংকট্যাংক বা অন্য যারাই এটা নিয়ে সমালোচনা করছেন, তারা এই সিদ্ধান্তের গভীরতা বিশ্লেষণ করেননি।’
আইসিএবি নেতারা বলেন, আমদানির বর্তমান অবস্থা যদি বজায় থাকে, তাহলে একটা স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি হবে। আর ডলার-সংকটসহ অন্যান্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে, তা আরও ইতিবাচক হবে। আর যদি বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো বিশেষ করে জ্বালানি সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হয়, তাহলে নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা, বর্তমান বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানই প্রশ্নের মুখে পড়বে।
সংকটে নিমজ্জিত অর্থনীতি উদ্ধারের দাবিকে পাশ কাটিয়ে তৈরি করা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়েছে। যেখানে মোকাবিলার কোনো কৌশল নেই, নেই বাস্তবায়নের পথনকশাও অস্পষ্ট। বাজেটের আকার, বরাদ্দ, শুল্ক ও করের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। আগামী অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা করে গতকাল শনিবার এমন মন্তব্য করেছে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি)।
সংগঠনের নেতারা এ সময় বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির ব্যবস্থা করতে হবে। আইবিএফবি মনে করে, ন্যূনতম ২০০০ টাকা কর আহরণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি হবে। সেই সঙ্গে বাড়বে জালিয়াতিও।
এ সময় বক্তব্যে আইবিএফবির প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন রশিদ বলেন, করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাতে টাল-মাটাল বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাবিত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সুরক্ষা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং টেকসই উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে একটি বহুমুখী, বাস্তবায়নযোগ্য এবং দিক নির্দেশনামূলক বাজেটের বিকল্প নেই।
ঈদের পরের মাসেও রেমিট্যান্স প্রবাহের উন্নতি হয়নি। প্রবাসীরা মে মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে ১৬৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। আগের মাস এপ্রিলে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৮ কোটি ডলার। আর আগের বছরের মে মাসে ১৮৮ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছর রেমিট্যান্স কমেছে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতে পছন্দ করেন। খোলাবাজারের তুলনায় ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম কম দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যাংকে যাওয়া ও লাইনে দাঁড়ানোর কোনো ঝামেলা নেই হুন্ডিতে। বাড়িতে এসে টাকা পৌঁছে দেয় তারা। তাই গ্রাহকদের কাছে ব্যাংকের চেয়ে হুন্ডিই বেশি জনপ্রিয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর ঈদ ও রমজানকে কেন্দ্র করে ব্যাংকিং চ্যানেলে বাড়ে প্রবাসী আয়। তবে এবার ঈদের মাস এপ্রিলে মাত্র ১৬৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে যা ছিল ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের ওপরে।
রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিট্যান্স আয় আনতে ফরম ফি পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে- বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া, রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করার পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা এবং রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোর চার্জ মওকুফ করা।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।
প্রাচীন সময় থেকে মানুষের খাদ্যতালিকায় জায়গা করে নিয়েছে চীজ বা পনির। গরুর দুধের তৈরি পনিরে শরীরকে সুস্থ রাখার প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাওয়া যায়।
বর্তমানে সময়ের সাথে সাথে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পনিরের ব্যবহার। আর তাই বিস্কিট থেকে শুরু করে পাউরুটি, পাস্তা, পিৎজা অনেক কিছুতেই পনির ব্যবহার হয়।
পনিরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের মতে, ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে রয়েছে:
শক্তি - ৩৬২ কিলোক্যালরি
প্রোটিন – ৫.১৭ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট - ৫০ গ্রাম
ক্যালসিয়াম - ৬৯ মিলিগ্রাম
সোডিয়াম - ১৮১ মিলিগ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড – ৩.৪৫ গ্রাম
কোলেস্টেরল - ৩৪ মিলিগ্রাম
এটি প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস। পনিরের বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্য সুবিধা রয়েছে।
পনির ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এবং প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এটি বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অনেক উপকারি। পনিরে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পনির খেলে অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করা যায়।
পনির ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শক্তিশালী ও মজবুত দাঁত তৈরিতে অবদান রাখে। পনিরে থাকা কেসিন ফসফোপেপটাইড উপাদান দাঁতের গহ্বর কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া চিউইং চিজ মুখের পিএইচ মাত্রা বাড়াতে পারে এবং সামগ্রিক মৌখিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।
পনিরে অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড যেমন কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিডের সমৃদ্ধ উৎস। কোরিয়া ইউনিভার্সিটি এবং ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা এক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ফ্যাটি অ্যাসিডে ক্যান্সার প্রতিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ ছাড়া এই ফ্যাটি অ্যাসিড এথেরোস্ক্লেরোসিস এর বিকাশ রোধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে।
পনিরে কনজুগেটেড লিনোলিক অ্যাসিড এবং স্ফিংগোলিপিড রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। মিলান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে স্ফিংগোলিপিড মানুষের কোলন ক্যান্সারকে বাধা দিতে পারে।
এ ছাড়া পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম নির্দিষ্ট ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্যতালিকাগত ক্যালসিয়াম কোলোরেক্টাল ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশ উপকারি।
পনিরে থাকা ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি প্রসবের সময় সংকোচনকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া উকের দুধ পান করানোর সময় ক্যালসিয়াম পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ করে পনির। এটি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রূণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ সরবরাহ করে।
কিছু ধরণের পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কার্যকারিতা বাড়াতে পরিচিত। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে পনির শরীরের প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এটি অসুস্থতা এবং রোগ কমাতে পারে।
প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুরক্ষিত পনির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে। এটি বয়স্কদেরমধ্যে ইমিউনোসেনেসেন্স (প্রতিরোধ ব্যবস্থার ধীরে ধীরে দুর্বল হওয়া) প্রতিরোধ করতে পারে।
পনির সেলেনিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস যা থাইরয়েড ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সেলেনিয়ামের থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে ভাইরাসের বিকাশকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে।
চেডার পনির হল এক ধরনের হার্ড পনির। এটি খাদ্যতালিকায় যোগ করলে তা থাইরয়েড রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
পনিরের আশ্চর্যজনক স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির মধ্যে একটি হল মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করা। বিশেষ করে ক্যামেমবার্ট জাতের পনির এই ধরনের কাজ করে থাকে। ক্যামেমবার্ট পনির প্রদাহজনক সাইটোকাইনের মাত্রা কমাতে পারে। এটি আলঝাইমার রোগের ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে।
পনির ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। এতে থাকা ভিটামিন বি কোষের বিপাক এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে এটি উজ্জ্বল ত্বকের পাশাপাশি ত্বকের দাগ কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
যাদের গরুর দুধে অ্যালার্জি আছে তাদের পনির এড়ানো উচিত। এটি অ্যালার্জি, ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথার কারণ ও হতে পারে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (অতিরিক্ত পনির খাওয়া) কার্ডিওভাসকুলার রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে।
পনিরের স্বাস্থ্য উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ও রয়েছে। যেমন,
কিছু লোকের দুধের প্রোটিন যেমন কেসিনে অ্যালার্জি থাকে। এটি সারা শরীর জুড়ে একটি প্রদাহজনক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে এবং ত্বকে ফুসকুড়ি, সাইনাস কনজেশন এবং ব্রণ জ্বলতে পারে।
অনেকের ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা থাকে। সেক্ষেত্রে তাদের পনির না খাওয়াই শ্রেয়। কারণ ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা গ্যাস, পেট ফোলাভাব এবং ডায়রিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। অনেক সময় এর কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যও হতে পারে।
প্রচুর পরিমাণে পনির খাওয়ার ফলে মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হতে পারে। পুরনো পনিরে থাকা টাইরামিন উপাদান কিছু ব্যক্তির মধ্যে মাইগ্রেনকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
যারা মোনোমাইন অক্সিডেস ইনহিবিটরস (MOIs) গ্রহণ করছেন তাদের পনির খাওয়া এড়ানো উচিত। এই ওষুধগুলি হতাশার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এসব ওষুধ পুরনো বা বয়স্ক পনিরে থাকা উপাদান টাইরামিনের সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
ঠান্ডা-সর্দি-কাশির সমস্যায়, মেদ কামনো, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, বিভিন্ন সংক্রমণ রুখতে মধু খুবই উপকারী। এর পাশাপাশি মধু কিছুটা অ্যান্টিসেপ্টিকেরও কাজ করে। বাজারে এখন নানা রঙের মোড়কে মধু পাওয়া গেলেও বহু নামী কোম্পানির মধুতেও ভেজাল থাকে। তাহলে খাঁটি মধু চিনবেন কী করে? কয়েকটি সাধারণ পদ্ধতিতেই বোঝা যায় মধু খাঁটি না কি ভেজাল মেশানো। দেখে নিন, খাঁটি মধু চিনে নেওয়ার কিছু উপায়।
- এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মধু দিন। তার পরে গ্লাসটি আস্তে আস্তে নাড়াতে থাকুন। মধু যদি খাঁটি হয় তবে এটি গোলকার পিণ্ডের মতো হয়ে গ্লাসের নিচে বসে যাবে এবং পানির সঙ্গে মিশবে না। তবে মধু যদি পানির সঙ্গে তাড়াতাড়ি মিশে যায়, তা হলে সেটি নকল।
- এক টুকরো কাগজের ওপর কয়েক ফোঁটা মধু দিন। খাঁটি মধু হলে তা ছড়িয়ে পড়বে না এবং কাগজে শোষিত হবে না। এক জায়গায় অক্ষত থাকবে। এতে কাগজ হালকা চটচটে হয়ে যেতে পারে। তবে মধু যদি খাঁটি না হয়, তাহলে তা দ্রুত কাগজ শুষে নেবে এবং কাগজে ভেজা দাগ পড়ে যাবে।
- মধু খাঁটি কিনা তা পরীক্ষা করতে, আপনার বুড়ো আঙুলে এক ফোঁটা মধু নিন। যদি খুব চটচট করে এবং আঠালো মনে হয়, তবে সেই মধু খাঁটি। তবে মধু যদি পানির মতো লাগে, তাহলে তা নকল।
- খাঁটি মধুতে খুব মিষ্টি এবং মনোরম সুগন্ধ রয়েছে। অল্প পরিমাণে মধু মুখে দিয়ে দেখুন, যদি তাতে ফুল বা ফলের মতো মিষ্টি গন্ধ থাকে, তবে তা খাঁটি। আর মধু ভেজাল হলে তার স্বাদ অতিরিক্ত মিষ্টি হতে পারে, অথবা মধুতে আরও কিছু উপাদান থাকার কারণে তার স্বাদ কম হতে পারে।
- মধু খাঁটি অথবা নকল কি না, তা বোঝার আরও এক সহজ রাস্তা হল, মধুতে ফেনা হচ্ছে কি না সেটা দেখা। যদি খুব ফেনা হয় তাহলে তাতে ভেজাল মেশানো।
- মোমবাতির সলতে মধুতে ডুবিয়ে সেটা জ্বালানোর চেষ্টা করুন। যদি তা জ্বালাতে সক্ষম হন, তা হলে বুঝবেন এই মধু খাঁটি। আর যদি মোমবাতি না জ্বলে, তাহলে সেই মধুতে ভেজাল রয়েছে।
- এক টুকরো পরিষ্কার সাদা কাপড়ে কয়েক ফোঁটা মধু ফেলে অপেক্ষা করুন খানিকক্ষণ। তারপর পানি দিয়ে তা ধুয়ে ফেলুন। যদি মধুর দাগ একেবারে উঠে যায়, তবে সেই মধু একেবারেই খাঁটি নয়। কারণ মধুর দাগ সহজে যায় না।
নিজের গান দিয়ে ইউটিউব চ্যানেলের যাত্রা শুরু করলেন ক্লোজআপ তারকা নোলক বাবু।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর বনশ্রীর এক রেস্তোরায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের উদ্বোধন করেন এ গায়ক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার মা।
নোলক বাবুর ইউটিউব চ্যানেলে উন্মুক্ত হয়েছে তার নতুন গান 'মানুষ'। গানের কথা লিখেছেন তরুন সিং, সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। গানটির সংগীতায়োজন হৃষিকেশ রকি।
নোলক বাবু বলেন, গানটি গাইতে পেরে আমি মুগ্ধ।
চলমান সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগে খেলতে নেমে দুই দলের মাঝে হাতাহাতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেদের শেষ ম্যাচে আজ শুক্রবার রাত দশটার দিকে মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের ক্রিজে নেমেছিলেন মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ ও দীপঙ্কর দীপনের টিম।
খেলা চলাকালীন সময়ে দীপঙ্কর দীপনের দলের খেলোয়াড়দেরকে প্রথমে উস্কানি দিতে থাকে রাজের টিম। এরপর তাদের দলের লোকজন এসে দীপনের টিমের এক প্লেয়ারকে মাঠ থেকে তুলে নিয়ে মারধর করতে থাকে। এরপর দীপনের টিমের খেলোয়াড়রা উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং চেয়ার ছুঁড়াছুড়ি শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই দলের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়।
দীপনের দলের খেলোয়াড়দের একজন অভিনেতা মনির হোসেন শিমুল অভিযোগ তুলে বলেন, তারা বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। এটা কোন ধরণের সিসিএল খেলা?
অন্যদিকে একই দলের আরেক খেলোয়াড় চিত্রনায়ক জয় চৌধুরী বলেন, রাজ ভাইয়ের টিম থেকে আমাদের দলের উপর আক্রমণ শুরু করে। তারা বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসেছে। আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যে একজনকে তুলে নিয়ে মারধর করতে শুরু করে। এরমধ্যে মৌসুমী হামিদ আহত হন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল রাজের দলের পক্ষ থেকে অভিযোগটি অস্বীকার করা হয়। তারা জানান, প্রয়োজন মনে করলে তারা পরে মন্তব্য দেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে উৎসাহ দিতে তিনদিন ব্যাপী সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগ (সিসিএল) আয়োজন করা হয়েছে। এতে মোট ১৬ টি দল অংশ নিয়েছে। আগামীকাল ফাইনালের মধ্য দিয়ে এ আসর সমাপ্ত হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।