
গ্লোবাল স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিভো দেশে নিয়ে আসছে ওয়াই৩৬। ওয়াই সিরিজের এই নতুন স্মার্টফোনে মিলবে ক্রিস্টাল গ্লাসের নান্দনিকতা যা ওজনেও বেশ হালকা। এর ব্যাক সাইডের কভারে আছে সোনালি ও সবুজের মিশ্রণ। ভাইব্রেন্ট গোল্ড এবং মিটিওর ব্ল্যাক এই রঙে পাওয়া যাবে ওয়াই৩৬। এতে রয়েছে ওয়াই সিরিজের নতুন আকর্ষণ ৪৪ ওয়াটের ফ্লাশ চার্জার। ওয়াই সিরিজের স্মার্টফোনগুলোর মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন চার্জার।
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ প্রসেসর ও ৮জিবি র্যাম স্টোরেজের কারণে ওয়াই৩৬ এর কার্যক্ষমতা বেশ ভালো। চাইলে এর স্টোরেজ সক্ষমতা বাড়ানো যাবে আরও ৮ জিবি পর্যন্ত। এতে কোনো বাধা ছাড়াই চলবে ২৭টিরও বেশি অ্যাপ। একসঙ্গে একাধিক অ্যাপ খুব সহজেই ব্যবহার করা যাবে। দুর্দান্ত স্মার্টফোনটির ক্যামেরার মুডে আসছে নতুন সংযোজন ডাবল এক্সপোজার। দুইটি ছবিকে এক করে কাজ করাটা সহজ করে দেবে। এতে আছে ৫০ এমপি রিয়ার ক্যামেরা+২ এমপি মাইক্রোক্যামেরা, ১৬ এমপি ফ্রন্ট ক্যামেরা।
ভিভো একটি প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যা মানুষের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে স্মার্ট ডিভাইস ও ইন্টেলিজেন্ট সার্ভিসের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদন করে। মানুষ আর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করাই প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য। অনন্য সৃজনশীলতার মাধ্যমে ভিভো ব্যবহারকারীদের হাতে যথোপযুক্ত স্মার্টফোন ও ডিজিটাল আনুষঙ্গিক তুলে দিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধকে অনুসরণ করে ভিভো টেকসই উন্নয়ন কৌশল বাস্তবায়ন করেছে; সমৃদ্ধ ও দীর্ঘস্থায়ী বিশ^মানের প্রতিষ্ঠান হওয়াই যার ভিশন। বিজ্ঞপ্তি
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানি, এলএনজি এবং কয়লার ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধির ফলে ঝুঁকি তীব্র হয়েছে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং ভর্তুকির বোঝা বাড়াচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব এড়াতে ব্যয়বহুল এলএনজিকে নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভ দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। এজন্য অন-শোর এবং অফ-শোর উভয় অনুসন্ধান কার্যক্রমে দ্রুত অগ্রসর হওয়া উচিত। পাশাপাশি পারমাণবিক এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দিতে হবে।
গতকাল শনিবার ঢাকায় ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের (আইসিসিবি) বার্ষিক সভায় এমন মত দেওয়া হয়। সভায় কার্যনির্বাহী বোর্ডের প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইসিসিবির সহসভাপতি এ কে আজাদ, কার্যনির্বাহী বোর্ডের সদস্য তপন চৌধুরী, কুতুব উদ্দিন আহমেদ, আফতাবুল ইসলাম, আনওয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ), ফজলুল হক, নাসের এজাজ বিজয়, ব্যারিস্টার সামীর সাত্তার, সংগঠনের মহাসচিব আতাউর রহমান প্রমুখ।
আইসিসিবি সভাপতি বলেন, ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হচ্ছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের বাংলাদেশকে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা পালন করতে হবে। তাই সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই সুশাসনের দিকে নজর দিতে হবে, যা এখনো বৈশ্বিক সূচকের অনেক নিচে রয়েছে।
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, বড় স্বপ্নপূরণের পেছনে বড় চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বাংলাদেশ বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতির মাধ্যমে কভিড মহামারীর সংকট থেকে নিজেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করেছে। কিন্তু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
সভায় আইসিসিবি কার্যনির্বাহী বোর্ড অর্থনীতির বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে কিছু মূল সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছে। বোর্ড মনে করে, মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপযুক্ত আর্থিক ও রাজস্বনীতি থাকা উচিত। বাংলাদেশের রপ্তানি বাজার ও পণ্যে বৈচিত্র্য আনা এবং এশিয়ার প্রধান দেশগুলোর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) স্বাক্ষর করার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে।
আইসিসিবি বোর্ডের মতে, বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ উৎসাহিত করার জন্য অবকাঠামো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কিছু অনুমান অনুসারে, বাংলাদেশকে বন্দর ও সড়ক নির্মাণ, পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রেললাইন স্থাপন, বিদ্যুৎ-উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা স্থাপন, অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য ইউটিলিটি ও সেবা প্রদান ইত্যাদি খাতে আগামী দশকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া খরচের পাশাপাশি সময় বাঁচাতে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।
খেলাপি ঋণ প্রসঙ্গে সভায় বলা হয়, এর পরিমাণ গত ১০ বছরে তিন গুণ হয়েছে। খেলাপি ঋণ সমস্যা মোকাবিলায় ব্যাংকিং খাতে আরও কঠোর ঋণ নীতি এবং তার প্রয়োগ করা প্রয়োজন। কৃষি খাতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ৭ কোটির বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্যই বিশ্বব্যাপী অভিযোজন প্রযুক্তিগুলোকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং জলবায়ু অভিযোজনযোগ্যতার নতুন উদাহরণে আরও মনোনিবেশ করতে হবে। বাংলাদেশের ডিজিটাল অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ২০৪১ সালের মধ্যে আমাদের জাতি স্মার্ট বাংলাদেশ হয়ে উঠবে। যদিও দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে মানবসম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের শিল্পের জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে।
মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্পর্কে আইসিসিবি বলেছে, তৈরি পোশাক (আরএমজি), হালকা প্রকৌশল এবং ইলেকট্রনিকস, চামড়া ও পাদুকা এবং কৃষিখাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মতো শ্রম-উদ্দীপক শিল্পে কর্মীদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। বিভিন্ন এন্টারপ্রাইজ এজন্য চাহিদাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে এবং দক্ষতায়ন ঘাটতি পূরণে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
আইসিসিবির এজিএমে ২০২২ সালের নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন অনুমোদন এবং ২০২৩ সালের জন্য নিরীক্ষক নিয়োগ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নবম (সহকারী পরিচালক) ও দশম (কর্মকর্তা) গ্রেডে প্রবেশন কর্মকর্তাদের পরবর্তী পদোন্নতির জন্য প্যানেলভুক্তির ক্ষেত্রে ফিডার পদে চাকরিকাল দুই বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর করা হয়েছে। নীতিমালাটি নিয়ে পক্ষপাতিত্ব ও বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে, যা সংবিধান, উচ্চ আদালত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরিবিধির সরাসরি লঙ্ঘন। এমন বিধির ফলে নবম ও দশম গ্রেডের প্রবেশন পদের কর্মকর্তারা চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ যুগ্ম পরিচালক হতে পারবেন, যা ভুক্তভোগীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি করেছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নতুন নীতিমালায় কর্মকর্তা বা সমমান পদ থেকে সহকারী পরিচালক বা সমমান এবং সহকারী পরিচালক পদ থেকে উপপরিচালক বা সমমান পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ন্যূনতম চাকরিকাল ধরা হয়েছে পাঁচ বছর। নতুন নীতিমালার আগে এসব কর্মকর্তার পরবর্তী পদে প্যানেলভুক্তির জন্য আড়াই বছর (দুই প্যানেল বা দুই এসিআর সমমান) লাগত। সেই সুবাদে ২০১৯ সালে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও আড়াই বছরে পরবর্তী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। সেই হিসাবে পরবর্তী ব্যাচের প্রবেশন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ২০২৩ সালের অক্টোবরের মধ্যে হওয়ার কথা থাকলেও নতুন নীতিমালার কারণে তাদের প্যানেলভুক্তি হতেই তিন-চার বছর বিলম্ব হবে।
সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে। অথচ একটি প্রবেশন পদ (দশম গ্রেড) থেকে আরেকটি প্রবেশন পদে (নবম গ্রেড) পদোন্নতিতে ন্যূনতম চাকরিকাল পাঁচ বছর নির্ধারণ সংবিধান পরিপন্থী। আবার ‘ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টস’ মানদণ্ড অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকারদের সঙ্গে কোনো বৈষম্য করা যাবে না। একইভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদোন্নতি নীতিমালার ১৭ নম্বর বিধিতে বলা হয়েছে, পদোন্নতির যোগ্য কর্মকর্তা পাওয়া না গেলে এবং শূন্যপদ পূরণ আবশ্যক হলে ফিডার পদের কর্মকর্তাকে ন্যূনতম তিন বছর চাকরি করা সাপেক্ষে চলতি দায়িত্ব দেওয়া যাবে। আর সহকারী পরিচালক পদে সরাসরি নিয়োগ ও পদোন্নতির কোটা ১:১ অনুসরণ করেই শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। কিন্তু সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতির জন্য কর্মকর্তা পদে ন্যূনতম চাকরিকাল পাঁচ বছর নির্ধারণ করায় ৭০০টিরও বেশি সহকারী পরিচালক পদ দীর্ঘকাল শূন্য থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের ৪২৫তম সভায় নবম বা তদূর্ধ্ব গ্রেডভুক্ত পদে পদোন্নতির নীতিমালায় সব নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান নতুন নীতিমালা প্রকাশে একচ্ছত্র প্রভাব খাটিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গভর্নরকেও অন্ধকারে রাখা হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী সাইদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এটা বাংলাদেশ ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের বিষয়। এটা আপনাদের জানার কী দরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড বা ম্যানেজমেন্ট যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটা হবে। কর্মকর্তাদের ক্ষোভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি কারও ক্ষোভ থাকে তাহলে তারা গভর্নরকে সরাসরি বা চিঠি দিয়ে জানাবে। সাংবাদিকদের কাছে এসব খবর যাবে কেন?
সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী, ‘কোনো কর্মচারী সাধারণত যেই আইনে নিয়োগ পান তিনি সেই বিধি মোতাবেক পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু নতুন পদোন্নতি নীতিমালায় আপিল বিভাগের রায়কে অবজ্ঞা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। উদাহরণস্বরূপ, চলতি বছরের এপ্রিলে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজিএ) কর্তৃপক্ষ ‘নন-গেজেটেড এমপ্লয়িজ রিক্রুটমেন্ট রুলস-১৯৮৩ বাতিল করে ২০২৩ সালের একটি নিয়োগ বিধিমালা জারি করলেও আপিল বিভাগের রায় মেনে আগের আইনে নিয়োগপ্রাপ্তদের পদোন্নতিতে আগের নিয়ম চালু রেখেছে।
ভুক্তভোগী কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, প্রবেশন পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পরবর্তী পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সাধারণত দুই থেকে আড়াই বছর লাগে। কম সময় বিবেচনায় বুয়েট ও আইবিএর মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের মেধাবীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা বা সহকারী পরিচালক যোগ দেন। কিন্তু পদোন্নতির নতুন শর্তে তারা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এ অবস্থায় আগামীতে মেধাবীরা মুখ ফিরিয়ে নেবেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের কর্মকর্তা ব্যাচে যোগদানকালে অভ্যন্তরীণ পদোন্নতি ও সরাসরি নিয়োগের অনুপাত ছিল ৩:১। কিন্তু ২০০১ সালে বিশেষ মহলের প্রভাবে ১:১ হয়। এতে সহকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি পেতে তাদের ৮ থেকে ৯ বছর লেগে যায়। ফলে বর্তমানে অফিসার-৯৯ ব্যাচ যুগ্ম পরিচালক (পঞ্চম গ্রেড) পদে থাকলেও একই বছরের সহকারী পরিচালক ব্যাচ পরিচালক (তৃতীয় গ্রেড) হয়েছেন। বর্তমানে ১৯৯৯ সালের অফিসার ব্যাচ এবং তাদের ১৫ বছর পর ২০১৪ সালে নবম গ্রেডে যোগ দেওয়া সহকারী পরিচালক ব্যাচ একই পদে (যুগ্ম পরিচালক) রয়েছেন। একইভাবে, ২০১৭ সালের অফিসার ব্যাচ ২০১৯ সালে পদোন্নতি পেলেও একই বছরে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ব্যাচকে জ্যেষ্ঠতা প্রদানের জন্য পুলিশি তদন্ত ছাড়াই তড়িঘড়ি যোগদান করানো হয়, যা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২০১৪ সালের ‘জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ’ ধারার পরিপন্থী। এদিকে দেড় বছর আগে প্রকাশিত অফিসার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি কুক্ষিগত করে নতুন করে তিনটি সহকারী পরিচালক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রাখা হয়েছে। ফলে চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে ও পরে নতুন অফিসার ব্যাচের সামনে কমপক্ষে আটটি সহকারী পরিচালক ব্যাচ চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার ২০১৮ সালের সহকারী পরিচালক ব্যাচকে দ্রুত যোগ দেওয়ার জন্য একই বছরের ক্যাশ অফিসার ব্যাচকে প্যানেল ইয়ারের ১১ দিন পর যোগ দেওয়ানো হয়। ফলে ক্যাশ অফিসার ব্যাচটির পদোন্নতি এক বছর পিছিয়ে যায়।
কৃষিজমির টপ সয়েল কেটে সাবাড় করছে ইটভাটার মালিকরা। এতে উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষিজমি। আর এসব ইট পোড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে কয়লা। বিশ্বব্যাপী যেখানে কয়লার ব্যবহার কমে আসছে সেখানে আমরা ইট পোড়াতে তা ব্যবহার করছি। বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। এমন পরিস্থিতি উত্তরণে ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে ব্লক ইট। ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে সরকারের সব উন্নয়ন প্রকল্পে এই ব্লক ইটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক। একইসঙ্গে দেশের সব ইটভাটাও পরিবেশ উপযোগী ভাটায় রূপান্তর করতে হবে।
ব্লক ইট সম্পূর্ণ পরিবেশ উপযোগী উল্লেখ করে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘ইতিমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে ব্লক ইটের ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে। এখন নতুন করে যেসব প্রকল্প অনুমোদন পাচ্ছে সেগুলোতে এই ব্লকের শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।’
ব্লক ইট কেন পরিবেশসম্মত এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা জানান, ব্লক ইট তৈরিতে মাটির প্রয়োজন হয় না। একইসঙ্গে তা পোড়াতে কাঠ কিংবা কয়লার ব্যবহার নেই। ফলে তা শতভাগ পরিবেশ উপযোগী। এতে বায়ুদূষণ যেমন হচ্ছে না তেমনিভাবে কৃষিজমির টপ সয়েলও রক্ষা পাচ্ছে ইটভাটার হাত থেকে।
মাঠ পর্যায়ে এই ইট নিয়ে গবেষণা করেছে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল রিসার্চ অফিসার মো. নাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্লক ইট নিয়ে আমাদের গবেষণা রয়েছে। সেই গবেষণায় উঠে এসেছে ব্লক ইটের ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে আমরা খাদ্য ঘাটতি পুষিয়ে আনতে পারব। কারণ ইটভাটায় জমির টপ সয়েল চলে যাওয়ায় কৃষিজমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। তা থেকে কৃষিজমিকে রক্ষা করতে হবে।’
এছাড়া নদীর বালি দিয়ে এই ব্লক ইট তৈরি করা যায় বলে নদীর তলদেশ থেকে মাটি ড্রেজিং করে নিয়ে আসা হলে নদীর গভীরতা যেমন বাড়বে তেমনিভাবে এসব বালি আবারও ব্যবহার উপযোগী হচ্ছে। তাই ত্রিমুখী লাভ পাওয়া যাচ্ছে এই ব্লক ইট দিয়ে। ইট পোড়ানো হচ্ছে না বলে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, নদীর নাব্য বাড়ছে এবং কৃষিজমি রক্ষা পাচ্ছে।’
কীভাবে তৈরি হয় ব্লক ইট?
সিমেন্ট, বালি ও নুড়ি পাথরের সমন্বয়ে তৈরি হয় ব্লক ইট। ব্লক ইট দুই ধরনের। একটি হলো সাধারণ ইটের মতো অপরটি হলো মাঝখানে খালি। এজন্য একটিকে বলা হয় সলিড ব্লক এবং অপরটিকে বলা হয় ব্লক। এসব ইট কীভাবে তৈরি হয় তা দেখতে সম্প্রতি যাওয়া হয় ফখরিজ গ্রিন বিল্ডিংয়ের কারখানায়। চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী পোর্ট লিংকের পেছনে গড়ে তোলা সেই কারখানায় গিয়ে দেখা যায়Ñ বালি, নুড়ি পাথর ও সিলেট বালি স্তূপাকারে রয়েছে। এখান থেকে কারখানার ভেতরে তিনটি ডেস্কে তিনটি আইটেম রাখা হয়েছে। বেল্টে এসব আইটেমগুলো নিচে নেমে আসে। এগুলো একটি পয়েন্টে গিয়ে মিশ্রিত হয়। সেখানে এগুলোর সঙ্গে সিমেন্ট মেশানো হয়। আর তারপরই যে সাইজের ব্লক তৈরি করা হবে সেই ডায়াতে চলে যায়। ডায়াগুলো একটি ট্রের মধ্যে সেট করা থাকে। ট্রে পূর্ণ হলে তা মেশিন থেকে বের হয়ে বেল্টে জমা হয়। সেখান থেকে গাড়ি করে তা কারখানার সেলফে রেখে দেওয়া হয়। সেলফে একদিন থাকার পর তা কারখানার বাইরে উন্মুক্ত আকাশের নিচে রাখা হয় পানি দেওয়ার জন্য। প্রতি ঘণ্টায় ৫ হাজার ব্লক তৈরি করা সম্ভব এই প্রক্রিয়ায়।
আর্থিকভাবে কি সাশ্রয়ী?
১৬ ইঞ্চি বাই ১০ ইঞ্চির একেকটি হলো ব্লক সাধারণ পাঁচটি ইটের সমান। এক হাজার ‘হলো ব্লকে’র বিক্রয়মূল্য ৪৮ হাজার টাকা। সাধারণ ভালো মানের এক হাজার ইটের দাম বর্তমানে প্রায় ১৩ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৫ হাজার ইটের দাম ৬৫ হাজার টাকা হওয়ার কথা। তাই আর্থিকভাবে অবশ্যই ‘হলো ব্লক’ সাশ্রয়ী। আর ‘হলো ব্লক’ সাধারণ ভবনের দেয়ালে লাগানো হয়। মাঝখানে খালি থাকার কারণে বাইরের শব্দগুলো প্রবেশ করতে পারে না। হলো ব্লকগুলো তিন ধরনের সাইজের রয়েছে। ঘরের সীমানা দেয়াল ও ভেতরের দেয়ালের জন্য পৃথক পৃথক সাইজের ‘হলো ব্লক’ রয়েছে।
এছাড়া সলিড ব্লকগুলো সাধারণ একেকটি ইটের সমান। দামও সাধারণ ইটের সমান। প্রতি হাজার সলিড ব্লক ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। তবে ওজন কম বলে তা ভবনের জন্য সাশ্রয়ী।
চট্টগ্রামে সবার আগে এ ধরনের পরিবেশসম্মত ইট তৈরি করে ফখরিজ গ্রিন বিল্ডিং রিসোর্সেস লিমিটেড। হলো ব্লক সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোছাইনি তাহের ফখরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও পোড়ানো ইট ব্যবহৃত হয় না। তাহলে তা আমাদের দেশে কেন হবে না? সেই চিন্তা থেকে আমরাও পরিবেশসম্মত ইট প্রস্তুতে এগিয়ে আসি। বাজারে খুব চাহিদাও রয়েছে। এছাড়া দেশের মেগা প্রকল্প ও শিল্পকারখানাগুলোতে পেভমেন্টের (ফ্লোরে ইটের পরিবর্তে ব্যবহৃত ব্লক) চাহিদা খুব বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ব্লকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কৃষিজমি ও পাহাড়গুলো যেমন রক্ষা পাবে তেমনিভাবে পরিবেশও সুরক্ষা পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলে সেটি মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। দেশে বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের কষ্ট হলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবারের বাজেটে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ক্রমবর্ধমান আয়বৈষম্যের কারণে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি হতে পারে। রিজার্ভের পতনের কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
গতকাল শনিবার ঢাকার এফডিসিতে এবারের বাজেট টেকসই উন্নয়নে সহায়ক হবে কি না, এ বিষয়ে এক ছায়া সংসদে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। ইউসিবি পাবলিক পার্লামেন্ট শিরোনামে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের রিজার্ভের হিসাব অতিরঞ্জিত, যা আন্তর্জাতিক মানের নয়। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপির টার্গেট ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হলেও তা বাস্তবতা বিবর্জিত। বাংলাদেশে কর আহরণের পরিমাণ বিশে^র সর্বনিম্ন। তাই অধিক কর আহরণের জন্য সুস্পষ্ট পরিকল্পনা দারকার। বিদ্যুৎ, গ্যাসের সমস্যা দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যাহত হবে। এবারের বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী পাচারকৃত টাকা দেশে ফেরত না আসা প্রসঙ্গে টাকা পাচার না হওয়ার যে মন্তব্য করেছেন, তা সঠিক নয়। ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাবে অপরিশোধিত ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। এ অবস্থার উত্তরণ না হলে আমানতকারীদের আস্থাহীনতা বাড়বে। জাতীয় সংসদে সরকারি দলের একক আধিপত্য থাকায় বাজেট নিয়ে কার্যকর আলোচনা হয় না। এ ছাড়া বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় জনঅংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয়।
দেশের অপার সম্ভাবনাময় খাতগুলোর মধ্যে মৎস্য খাত অন্যতম। এ খাতকে এগিয়ে নিতে অনেককেই গভীর সমুদ্র থেকে মাছ ধরার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা মাছ না ধরে বারবার লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করছেন। মৎস্য খাতকে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাত এগিয়ে না এলে সরকারিভাবেই সমুদ্রের মাছ ধরার ব্যবস্থা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। গতকাল শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড সি ফুড শো ২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অবহিতকরণ কর্মশালা ও প্রেস মিটে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
রেজাউল করিম বলেন, সমুদ্রের টুনা ফিশসহ বেশি কিছু মাছ বিদেশে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। এজন্যই আমরা বিভিন্ন ব্যক্তিদের লাইসেন্স দিয়েছি। তারা যদি কাজ না করে সরকারিভাবেই জাহাজ ব্যবস্থা করে আমরা মাছ ধরার ব্যবস্থা করব।
তিনি বলেন, এমন একটি সুন্দর ও প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা উত্তরকালে অন্যান্য সম্পদের পাশাপাশি মৎস্য-সম্পদের কথা বলেছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন মাছ হবে দ্বিতীয় প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সম্পদ। আজকে বাস্তবতা সেখানে এসে পৌঁছেছে। সামনে আমাদের অপার সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে মৎস্য। এ খাত এগিয়ে যেতে হলে সরকারি-বেসরকারি খাত সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, এখানে জার্মানি, স্পেনসহ অন্যান্য দেশের মাছ আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা আসবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তাদের কাছে আমাদের মৎস্য খাতের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরতে হবে। মাঠপর্যায়ে তাদের কাজ করার সুযোগ ও ক্ষেত্র তুলে ধরতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।