
আবাসন খাতে লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান বিপ্রপার্টি এবং পূবালী ব্যাংকের মধ্যে সাম্প্রতিক একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার ফলে গ্রাহকরা হোম লোন বিষয়ে এখন আরও অধিক সুবিধা পেতে যাচ্ছেন। অংশীদারত্বমূলক চুক্তিটির ফলে বিপ্রপার্টির গ্রাহকরা বিশেষ সুদের হার এবং ব্যতিক্রমী প্রক্রিয়ায় স্বল্প সময়ের মধ্যে হোম লোন নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি গত মঙ্গলবার মতিঝিলের পূবালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিপ্রপার্টির পক্ষ থেকে এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সিইও মার্ক নসওয়ার্দি, জিএম খান তানজিল আহমেদ এবং ব্যবস্থাপক মো. ইমরান মুন্না। অন্যদিকে পূবালী ব্যাংকের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ এশা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান, শাহ নেওয়াজ খানসহ অন্য কর্মকর্তারা।
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় বিপ্রপার্টির সিইও মার্ক নসওয়ার্দি বলেন, আমাদের গ্রাহকদের জন্য হোম লোন বিষয়ে অধিক সমাধান প্রদানের চেষ্টা করছি, যা তাদের আবাসন খাতবিষয়ক লক্ষ্য অর্জনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং আত্মবিশ্বাসমূলক করার সুযোগ সৃষ্টি করবে। বিজ্ঞপ্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
কর আদায় নিশ্চিতের জন্য ক্যাশলেস লেনদেন বড় পরিসরে চালু করার আহ্বান জানিয়েছে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ফিকি)। আগামী অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা করে সংস্থাটি বলছে, ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার রোডম্যাপ প্রয়োজন। যাতে এটি সবাই অনুসরণ করতে পারে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান। সম্মেলনে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট এবং আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর খসড়া নিয়ে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করে ফিকি। ফিকির নেতারা মনে করেন, করপোরেট এবং সংস্থাগুলোর জন্য নগদ লেনদেন সীমিত করা দেশের উন্নয়নকে সীমাবদ্ধ করবে, কারণ বাংলাদেশ এখনো পুরোপুরি নগদহীন লেনদেন করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। সরকারের উচিত কোম্পানিগুলোর নগদ লেনদেনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ না করে তার খরচের ন্যূনতম শতাংশ ব্যয় করার অনুমতি দেওয়া। যেন পরবর্তী পাঁচ বছরে ধীরে ধীরে তারা শতভাগ নগদহীন লেনদেনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।
ফিকি নেতারা বলেন, নতুন অর্থবছরে কার্বোনেটেড পানীয় শিল্পের (বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি) ন্যূনতম কর দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মোট প্রাপ্তির ৫ শতাংশ বা ৮ গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে কোমল পানীয়ের দাম বাড়বে ৩০ শতাংশেরও বেশি। এ খাতে ইতিমধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পরোক্ষ কর দিতে হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। তাই কার্বোনেটেড বেভারেজে ন্যূনতম ১ শতাংশ কর আরোপের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
ফিকি সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, আয়কর রিটার্ন জমা হওয়ার পর অ্যাপের মাধ্যমে কনফারমেশন বার্তা পাওয়া যায়। কিন্তু প্রচলিত আয়কর আইন সেটাকে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ হিসেবে মানে না। ডিজিটাল যুগে অ্যাপে পাওয়া বার্তাকে গ্রহণ করা প্রয়োজন। গাড়ি কেনার ওপর যে কর আরোপ হয়েছে, তা শুধু ব্যক্তির ওপর বহাল করা উচিত বলে মনে করে ফরেন চেম্বার।
বক্তব্যে ফিকি সভাপতি বলেন, কিছু বিধান বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা এবং ব্যক্তির প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত ভ্যাট এবং লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর করের বোঝা বাড়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিস্থিতি এড়াতে পারে, এমন সমাধানের বিষয়ে আমাদের কিছু সুপারিশ রয়েছে। আমরা আশা করি যে, সুপারিশগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং চেম্বারকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অব্যাহত সমর্থন রেখে করবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
বক্তারা বলেন, খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর বিধানগুলোর গভীর ও বিস্তৃত পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কারণ এ আইনের কিছু বিধান আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিবেচনায় অযৌক্তিক। আমরা আশা করেছিলাম নতুন আইনে ন্যূনতম করের বিধানগুলো ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে। তার পরিবর্তে সেগুলো উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, ধার্য করের বিধান থেকে একটি অনুবিধি বাদ দেওয়া। এ অনুবিধির অনুপস্থিতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে এবং বিধানটি তার কার্যকারিতা হারাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর মতো একই বিধান প্রস্তাবিত আইনে বা বিধিতে অব্যাহত না থাকলে আধুনিক বাণিজ্যে ডিস্ট্রিবিউটরদের সরবরাহের ওপর করের বোঝা, আমদানিকরা পণ্যের সরবরাহ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, প্রণোদনা বোনাস অতিরিক্ত লভ্যাংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি কোম্পানির ওপর আরও করের বোঝা চাপিয়ে দেবে এবং পরবর্তী সময়ে কর্মচারীদের উপার্জনের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যবসায়িক ক্ষতির বিপরীতে অন্য আয় সচল রাখার অনুমতি না দেওয়া করের চেতনার বিরুদ্ধে যায়। পাশাপাশি বিদেশি ঋণের সুদের ওপর করের বিধান এবং তৃতীয়পক্ষের বিক্রেতার দ্বারা আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ দিতে ব্যর্থতার জন্য তার সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দিতে অননুমোদন দেওয়ার বিধানটি বাদ দেওয়া উচিত।
খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩ অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীরা এখন থেকে ডব্লিউপিপিএফ, মিউচুয়াল ফান্ড এবং লভ্যাংশ থেকে আয়ের ওপর আর কোনো ছাড় পাবেন না। লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্স (এলএফএ) এখন থেকে করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা কি আদৌ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে কি না এবং সেটা থেকে কর ছাড় পাওয়া যাবে কি না, সে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা নেই। মিউচুয়াল ফান্ড/ইউনিট তহবিল এবং সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বেসরকারি স্বীকৃত ভবিষ্যৎ তহবিলে কর আরোপ করা কর্মীদের আয় হ্রাস করবে এবং সরকারি ভবিষ্যৎ তহবিলকে করমুক্ত হিসেবে রাখার বিষয়টি বৈষম্য সৃষ্টি করবে।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফিকির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুর রশিদ, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি দিপাল আবেবিক্রম, নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবীর প্রমুখ।
মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করে বীমা খাতের কোম্পানির শেয়ারদর। আয় বাড়ার তেমন কোনো তথ্য না থাকার পরও পরবর্তী দুই সপ্তাহের কিছুটা বেশি সময়ে বীমা খাতের বাজার মূলধন প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে যায়। এ সময়ে কারসাজির কারণে বেশ কিছু বীমা কোম্পানির শেয়ারদর দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ে। তবে মুনাফা তুলে নেওয়া শুরু হলে বীমা খাতের প্রভাবে এখন পুরো পুঁজিবাজারে পতন চলছে। টানা পতনের পাশাপাশি লেনদেনও ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে।
টানা চতুর্থ দিনে দরপতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। আর এ সময়ে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে বীমা খাতের শেয়ার। তালিকাভুক্ত ৫৭ বীমা কোম্পানির মধ্যে দুটির দরবৃদ্ধি ও পাঁচটির দর অপরিবর্তিত থাকার পরও গত চার কার্যদিবসে এ খাতের সার্বিক দরপতন হয়েছে ১০ শতাংশের বেশি। গতকালের দরপতনের শীর্ষ ২০ শেয়ারের মধ্যে ১৬টি এবং চারদিনের দরপতনে ১৮টিই ছিল বীমা খাতের।
যদিও গতকাল দিনের লেনদেন শুরু হয়েছিল ঊর্ধ্বমুখী ধারায়। তবে মুনাফা তুলে নেওয়ার চাপ ও নতুন বিনিয়োগে অনেকে সতর্কতা অবলম্বন করায় ক্রেতা ছিল কম। এ কারণে ধারাবাহিক দরপতনে ফিরে যায় বাজার। এতে ডিএসইএক্স সূচক হারিয়েছে আরও ২৪ পয়েন্ট। এ নিয়ে সপ্তাহের প্রথম চার দিনে সূচকটি হারাল ৭৮ পয়েন্ট।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রথম ঘণ্টার শেষে সকাল ১১টায় ১২১ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ৩১টির দর কমে কেনাবেচা হচ্ছিল। মাঝে ১৬০ শেয়ারের বেশি দর বেড়ে কেনাবেচা হয়। কিন্তু শেষ হয় ৪৫ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১১৭টির দরপতনে। লেনদেনে আসা আরও ১৭৫ শেয়ারের দর অপরিবর্তিত বা ফ্লোর প্রাইসে পড়ে ছিল। ক্রেতার অভাবে ৫৫ শেয়ারের কোনো লেনদেনই হয়নি। সবমিলিয়ে ডিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে ৭২৩ কোটি টাকার শেয়ার।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল বীমা খাতের ৫৭ শেয়ারের মধ্যে ৩৭টির দর কমেছে, বেড়েছে ৯টির। গড়ে এ খাতের শেয়ারদর কমেছে সোয়া ৩ শতাংশ। খাতওয়ারি দরপতনে এটাই ছিল সর্বোচ্চ। দরপতনের শীর্ষে ছিল থাকা সোনালী লাইফ, ইউনিয়ন, মেঘনা লাইফ, গ্লোবাল, প্রাইম লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফের শেয়ারদর ৮ থেকে ১০ শতাংশ পতন হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বীমার শেয়ারগুলোর দর বেড়েছিল সবচেয়ে বেশি। গত ১৭ মে বীমা খাতের বাজার মূলধন ছিল ১৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা, যা টানা বৃদ্ধি পেয়ে গত ৮ জুন ১৯ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এরপর ১১ জুন থেকে বড় বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতায় এ শেয়ারগুলো বেশি দর হারাচ্ছে। গত চার কার্যদিবসে বীমা খাতের বাজার মূলধন নেমে এসেছে ১৭ হাজার ৪০২ কোটি টাকায়।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল দরপতনের শীর্ষে থাকা সোনালী লাইফের শেয়ারদর মাত্র এক মাসে ৮৪ শতাংশ বেড়ে গত ১১ জুন ১১৮ টাকায় উঠেছিল। দরপতনে শেয়ারটির দর এখন ৯৫ টাকায় নেমেছে। একইভাবে ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্সের দর ৫৭ শতাংশ বেড়ে গত ৪ জুন ৬২ টাকায় ওঠার পর এখন ৫১ টাকায় নেমেছে। এক মাসেরও কম সময়ে মেঘনা লাইফের দর দ্বিগুণ বেড়ে গত ৮ জুন ১৩৮ টাকা ছাড়ায়। এরপর টানা দরপতনে ৯৬ টাকায় নেমেছে। গত চারদিনে এ শেয়ারটির সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ দর হারিয়েছে। গত চারদিনের দরপতনে এর পরের অবস্থানে থাকা রূপালী লাইফ ২২ শতাংশ, প্রগতি লাইফ ২১ শতাংশ, পপুলার লাইফ ২১ শতাংশ, প্রগ্রেসিভ লাইফ প্রায় ২০ শতাংশ দর হারিয়েছে।
অবশ্য দরপতনের মধ্যেও ২৩ শতাংশ দর বেড়েছে জিকিউ বলপেনের। ১০ থেকে ১৯ শতাংশ দর বেড়েছে খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, পেপার প্রসেসিং, ইমাম বাটন, স্টাইল ক্রাফট, সি পার্ল, মুন্নু এগ্রো মেশিনারিজ, ইয়াকিন পলিমার এবং আজিজ পাইপসের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে মোট ২০ একর জমিতে সাড়ে চার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে চীনের প্রতিষ্ঠান ফুজিয়ান মেংবা ইনভেস্টমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটি স্টিল কনস্ট্রাকশন উপাদান বা নির্মাণ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত করে থাকে। তাদের বিনিয়োগের ফলে কর্মসংস্থান হবে ১ হাজার ৩৫০ জনের। গতকাল বুধবার বেজা কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে জমি বরাদ্দের চুক্তি করেছে বেজা।
ফুজিয়ান সাধারণত সেতুর জন্য স্টিল স্ট্রাকচার, বিম, স্টিল ট্রাস, বক্স কলামসহ অবকাঠামো খাতের ভারী যন্ত্রপাতি তৈরি করে থাকে। ৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগে এম এস রড, অ্যাঙ্গেল, চ্যানেলসহ নির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুত করবে প্রতিষ্ঠানটি। ১০৬ টাকা হারে এ বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৭৭ কোটি টাকা।
বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, বেজা বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব সুস্থ পরিবেশ গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে। মিরসরাইতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পনগর নির্মিত হচ্ছে। এর ফলে এদেশে শিল্পায়নের অভূতপূর্ব বিপ্লব সাধিত হবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যসমূহ পূরণ হবে। এছাড়াও দেশি ও বিদেশি প্রযুক্তির মেলবন্ধনের ফলে দক্ষ এবং কারিগরি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অনলাইনে সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। দ্রুত শিল্প স্থাপনের জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বেজা সাধ্যমতো সম্পন্ন করছে। বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরের বাকি উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত সমাপ্ত করতে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সহযোগিতা কামনা করেন।
বেজার পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন নির্বাহী সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মো. মজিবর রহমান, ফুজিয়ানের পক্ষে ওয়াং ইউয়ান ইয়াও।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই ও ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় প্রায় ৩০ হাজার একর জমির ওপর একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্পশহর - ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। এ শিল্পনগরে বিশ্বমানের সব সুবিধাদি থাকবে যেমনÑ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সমুদ্রবন্দর, কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা/পানি শোধনাগার, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল ইত্যাদি। এ লক্ষ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহযোগিতায় সংযোগ সড়ক, ভূমি উন্নয়ন, ব্রিজ নির্মাণসহ বিনিয়োগবান্ধব সব স্থাপনা নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ইতিপূর্বে ৫ জন চীনা বিনিয়োগকারী জমি বরাদ্দ পেয়েছেন। এছাড়া সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ৮ জন চীনা বিনিয়োগকারী জমি বরাদ্দ পেয়েছেন।
দেশে এসেছে ভিভোর ওয়াই সিরিজের নতুন স্মার্টফোন ভিভো ওয়াই৩৬। চলতি বছর এটি ভিভোর ওয়াই সিরিজের তৃতীয় স্মার্টফোন। তুলনামূলক কম বাজেটে একটু ভিন্ন লুক আর শক্তিশালী ব্যাটারির এই স্মার্টফোন সবার নজর কাড়ার মতোই।
ভাইব্রেন্ট গোল্ড এবং মেটিওর ব্ল্যাক এই দুই কালারে মিলবে ভিভো ওয়াই৩৬। ওয়াই সিরিজের স্মার্টফোনগুলোর মতো ভিভো ওয়াই৩৬ এর দামও হাতের নাগালে রেখেছে ভিভো। এর দাম রাখা হয়েছে ২৬,৯৯৯ টাকা।
ভিভো ওয়াই৩৬-তে আছে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ প্রসেসর। পাশাপাশি ৮ জিবি র্যাম এবং আরও অতিরিক্ত ৮জিবি র্যামের বিশাল স্টোরেজ এর মান নিশ্চিত করবে শতভাগ। একসঙ্গে ২৭টি অ্যাপ রাখা যাবে ব্যাকগ্রাউন্ডে। ভিভো ওয়াই৩৬-এ আছে পাঁচ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ারের শক্তিশালী ব্যাটারি। ফাস্ট চার্জিংয়ের জন্য রয়েছে ৪৪ ওয়াটের টাইপ-সি ফাস্ট চার্জার।
৬.৬৪ ইঞ্চির ফুল এইচডিপ্লাস এলসিডি ডিসপ্লে পাওয়া যাবে ভিভো ওয়াই৩৬ স্মার্টফোনে। এর ডিসপ্লের রিফ্রেশ রেট ৯০ হার্জ যা কাজ করবে যথেষ্ট দ্রুত ও নির্ভুলভাবে। এতে আছে ৫০ এমপি রিয়ার ক্যামেরা+২ এমপি বোকেহ এবং ১৬ এমপি ফ্রন্ট ক্যামেরা। ভিভো ওয়াই৩৬-এর ডাবল এক্সপোজার মোড ব্যবহার করে দুটো ছবিকে একসঙ্গে দারুণভাবে কম্পোজ করা সম্ভব। বিজ্ঞপ্তি
দেশে যখন চিনির দাম প্রতি কেজি ১৩০ টাকা অতিক্রম করছে, ঠিক সে সময় সিঙ্গাপুরের এক ঠিকাদারের কাছে ৫১ টাকা ৬২ পয়সা দরে চিনি পেয়েছে সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবি। গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে সিঙ্গাপুরের ওই ঠিকাদারের কাছ থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একই বৈঠকে টিসিবির জন্য সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্তও হয়েছে। তেল ও চিনি ক্রয়ে মোট ব্যয় হবে ১৯৩ কোটি ৬১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা।
আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য তেল ও চিনি কিনবে সরকার। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহবুব বিস্তারিত জানান। অতিরিক্ত সচিব বলেন, টিসিবির জন্য সিঙ্গাপুরের প্রিন্সিপাল মেট্রিস প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ১২ হাজার ৫০০ টন চিনি ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখানে প্রতি টন চিনির মূল্য ধরা হয়েছে ৪৭৭.৯৪ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৯ লাখ ৪৪ হাজার ২৫০ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৬৪ কোটি ৫২ লাখ ১৯ হাজার টাকা। এছাড়া সিটি এডিবয়েল লিমিটেড থেকে ৮০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৬১ টাকা ৩৭ পয়সা। আর মোট খরচ হবে ১২৯ কোটি ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
ভারতের বিপক্ষেই খেলেছিলেন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এবার বিশ্বকাপটাই ভারতে, যে ধর্মশালা দিয়ে শুরু হবে বিশ্বকাপ অভিযান, সেখানেই আছে বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরির কৃতিত্ব। হিমালয়ের কোলে, ছবির মতো সুন্দর সেই মাঠে আবারও খেলবে বাংলাদেশ, কিন্তু খেলবেন না তামিম ইকবাল।
অনেক নাটকীয়তার পর অবশেষে বিশ্বকাপ দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলনে নিরাবেগ কণ্ঠে একের পর এক নাম পড়ে শোনাননি প্রধান নির্বাচক, গভীর রাতে কোনো ইমেইলেও আসেনি খেলোয়াড় তালিকা। বিশ্বকাপগামী ১৫ ক্রিকেটারের প্রত্যেকের হাতে হাতে সুন্দর করে বাক্সবন্দি বিশ্বকাপ জার্সি তুলে দেওয়ার ভিডিও নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নির্বাচিতদের পরিচিত করেছে বিসিবি। এজন্য বিসিবির সংশ্লিষ্টরা বাহবা পেতেই পারেন, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড যেমনটা হৃদয় জিতে নিয়েছে ক্রিকেটারদের পরিবারের আপনজনদের দিয়ে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করিয়ে।
কারা থাকছেন আর কারা থাকছেন না, তা নিয়ে খুব বড় কোনো চমক ছিল না বিশ্বকাপ দলে। সবাই শুধু একটাই কোটি টাকার প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন। তামিম ইকবাল শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ দলে আছেন নাকি নেই। অবসর, প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে প্রত্যাবর্তন, ব্যক্তিগত কাজে দুবাই ভ্রমণ, ইংল্যান্ডে ইনজেকশন, দেশে অনুশীলন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক ইনিংসে ব্যাট করে ৪৪ রান এবং পরে নিজেকে আবারও পুরোপুরি ফিট নয় বলে পরের ম্যাচে বিশ্রাম। স্বভাবতই এই তামিম ইকবালকে বিশ্বকাপে দেখতে চাইবেন না কোনো কোচ এবং অধিনায়ক। সোমবার গভীর রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বাসায় সাকিবের ছুটে যাওয়া এবং সিডনি থেকে নেমে তড়িঘড়ি করে বোর্ড সভাপতির বাসায় কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পা রাখাই প্রমাণ করে, বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ তৎপরতা।
তামিমের মতো ক্রিকেটারকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সহজ নয়। নিঃসন্দেহে দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, ওয়ানডেতে ১৪টা সেঞ্চুরি। হুট করে অবসর নিলে যাকে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রী। সাক্ষাৎকারেও তামিম বলেছেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগের কথাও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেশাদারির কাছে হার মেনেছে আবেগ, যুক্তির কাছে হেরে গেছে অতীত। তামিম নামটা আছে বিশ্বকাপ দলে, তবে পদবিটা ইকবাল নয়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তানজিদ হাসান তামিমকে নিয়েই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাকিব আল হাসান, যার বয়স আর তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় কাছাকাছি।
২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল অতিমানবীয়। ৬০৬ রান আর ১১ উইকেট। তবু দল হলো অষ্টম। গোটা আসর চোটজর্জর অধিনায়ককে বইল দল। প্রতিটি সকাল শুরু হতো এক অনিশ্চয়তা নিয়ে, খেলতে পারবেন তো মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা? শুরুর দিকে নতুন বলে কোনো উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ গড়েছে রানের পাহাড়। সেই অভিজ্ঞতা কী করে ভুলবেন সাকিব। অস্ট্রেলিয়ান জেমি সিডন্স আর অধিনায়ক সাকিব এজন্যই ২০১১ সালের বিশ্বকাপে দলে রাখেননি চোটগ্রস্ত মাশরাফীকে। হাথুরুসিংহে জাতীয়তায় শ্রীলঙ্কান হলেও অস্ট্রেলিয়ায় থাকতে থাকতে হয়ে গেছেন তাদের মতোই পেশাদার। তাই তো কঠিন সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।
কাল বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন জাতীয় নির্বাচকরা। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার ও আবদুর রাজ্জাক। তামিমকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে মিনহাজুল শুনিয়েছেন মুখস্থ কথাই, ‘আপনারা তো এবারের বিশ্বকাপের দলটা এরই মধ্যে পেয়ে গেছেন। তামিম ইকবালের তো অনেক দিন ধরেই ইনজুরি নিয়ে চিন্তা আছে। নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর... সবকিছু বিবেচনা করেই, সবাই আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। বিশ্বকাপে অনেক দিনের ব্যাপার। অনেক ম্যাচ আছে।’
তামিমের চোটটা তো নতুন নয়। অনেক দিন ধরেই এ চোট নিয়ে তিনি ভুগছেন, নিজের ইচ্ছামতো ভারতের বিপক্ষে সিরিজ, আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ এসব থেকে নিজেকে সরিয়েও রেখেছিলেন। চিকিৎসাও করিয়ে আনা হয়েছে। সবকিছু জেনেশুনে কেন তাকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে সুযোগ দেওয়া এবং ম্যাচ খেলিয়ে বাদ দেওয়া এ প্রসঙ্গে মিনহাজুলের উত্তর, ‘দেখুন, কিছু কিছু ইনজুরি আছে আপনি ঝুঁকি নিতে পারেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট কিন্তু বেকায়দায় পড়বে। আপনি দেখুন, নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ খেলার পর দ্বিতীয় ম্যাচে... প্রথম ম্যাচ খেলেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটা খেলেছে... এরপর কিন্তু শেষ ম্যাচে বিশ্রাম দিতে হয়েছে।’
‘তামিম অন্যতম সেরা। কিন্তু চোটের দুশ্চিন্তা থাকলে নিজেকে মেলে ধরা কঠিন। মেডিকেলের সঙ্গে আলোচনা করেছি, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। এটা আগেই বলেছি, এখন দল ঘোষণা করা হয়েছে’বলছিলেন প্রধান নির্বাচক। বিসিবি সভাপতি বা সাকিব ও কোচের সঙ্গে আলাপ হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কী আলাপ হয়েছে সেটা তো এখানে প্রকাশ করব না।’
১০ দলের বিশ্বকাপে দশম দল হিসেবে বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ। কেন এত দেরি, ফ্লাইটে ওঠার ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে বিশ্বকাপের দল দেওয়া হলো কেন এ নিয়ে হাবিবুল বাশারের ব্যাখ্যা, ‘আমাদের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা তো আমাদের সঙ্গের ব্যাপার। দল নির্বাচন করতে যখন বসি... খেলোয়াড় হিসেবে তামিমের... আমরা সুস্থ-সবল তামিমকে পেতে... এটা নিয়ে আমাদের শেষমুহূর্ত পর্যন্ত ভাবতে হয়েছে। তাই দেরি হয়েছে।’
তামিমের বাদ পড়ার ডামাডোলে হারিয়ে গেছে মাহমুদউল্লাহর ফেরাটাও। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছিলেন। তার বদলে অনেক বিকল্প খুঁজেও শেষ পর্যন্ত ঘুরেফিরে আবার তার কাছেই ফিরলেন নির্বাচকরা। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ৪৯ আর ২১ রানের দুটো ইনিংসেই হয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। প্রধান নির্বাচক বললেন, ‘আগেই বলেছি, বিশ্বকাপের আগে যেকোনো খেলোয়াড়কে যেকোনো সিরিজে দেখব। ও পরিকল্পনাতেই ছিল। নিউজিল্যান্ড সিরিজে দেখেছি।’
২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগে, মাত্র দুই ম্যাচ দেখে সৌম্য সরকারকে দলে নিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। তানজিদ তামিম আর তানজিম সাকিব নিজেদের ভাগ্যবান ভাবতে পারেন। যথাক্রমে মাত্র পাঁচ আর দুই ম্যাচ খেলে তারা বিশ্বকাপ যাত্রার সঙ্গী হয়েছেন। এমন নয় যে, এ স্বল্প সময়ে দারুণ কিছু করে দেখিয়েছেন, প্রধান কারণ বিকল্পের অভাব।
শুধু তামিম ইকবালই নয়, দলের লজিস্টিক ম্যানেজারের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তার বড় ভাই ও সাবেক খেলোয়াড় নাফিস ইকবালকেও। তামিমের অবসর-কা-ে তিনি বিসিবি সভাপতির মেসেজের জবাব দেননি, যা পাপন নিজে বলেছেন গণমাধ্যমে। হয়তো তারই প্রতিশোধ, সেই সঙ্গে ড্রেসিংরুমের সঙ্গে তামিমের সব সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া।
অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন তামিম, দুটি ম্যাচ খেললেন। কিন্তু যেভাবে বাদ পড়লেন, তাতে মনে হতে পারে অবসরের সিদ্ধান্তটাই ছিল সঠিক। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগামীতেও তামিমের দলে ফেরাটা বোধহয় অনিশ্চিতই হয়ে গেল।
তামিম প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে দলটা কেমন হয়েছে দেখা যাক। পাঁচ পেসার, দুই অফ স্পিনার, দুই বাঁহাতি স্পিনার মিলিয়ে বোলিং আক্রমণটা নেহায়েত খারাপ নয়। লিটন দাসের সঙ্গে তানজিদ তামিম অথবা মেকশিফট ওপেনার মিরাজ। সহঅধিনায়কের পদ থেকে বাদ পড়েছেন লিটন, সেটা করা হয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তকে। সাকিব, মুশফিক, তাওহীদ হৃদয়দের নিয়ে মিডল অর্ডারের পর ফিনিশার রোলে মাহমুদউল্লাহ। এ নিয়েই ধর্মশালায় আফগানদের বিপক্ষে লড়াইয়ের শুরু। প্রত্যাশা অনেক বড়, প্রস্তুতি গোলমেলে। ভরসা একটাই, শুরুর আগে পরিস্থিতি এমন গোলমেলে হলেই কেন যেন ভালো করে বাংলাদেশ!
বিশ্বকাপ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন (সহঅধিনায়ক), তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, হাসান মাহমুদ, শরীফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, তানজিদ হাসান, তানজিম হাসান ও মাহমুদউল্লাহ।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের কারণে চলমান রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে নতুন করে উত্তাপ তৈরি হয়েছে। দুই দলের এ পাল্টাপাল্টি আলটিমেটামের মূল টার্গেট ঢাকা দখলে নেওয়া। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসা নিতে বিদেশ পাঠাতে রবিবার বিএনপি ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। পাল্টা জবাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও একই পথে হেঁটেছে। বিএনপিকে ‘আগুন সন্ত্রাস, অপরাজনীতি ও নাশকতার রাজনীতি’ ছাড়ার জন্য সোমবার ৩৬ দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এরপর পাল্টা ৩৬ ঘণ্টার হুঁশিয়ারি এসেছে বিএনপির কাছ থেকে।
তার আগে গত শনিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে আবেদন করলে অনুমতির বিষয়টি দেখা যাবে। তবে তার কাছে এরকম কোনো কাগজপত্র আসেনি। ওইদিনই খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার বলেছেন, সরকারের মনোভাব ইতিবাচক হলে তারা আবারও আবেদন করবেন।
পরদিন রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলটিমেটাম দেন। ওইদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে বিএনপি বলছে, সরকার চাইলে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই দলের রাজনীতি ও ঘোষিত আলটিমেটাম মাঠের রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে সম্পর্কে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। বিএনপির আলটিমেটামের ফল কী হবে আর আওয়ামী লীগেরও দীর্ঘ ৩৬ দিনের আলটিমেটাম কেন এ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভেতর বেশ কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এমন পাল্টাপাল্টি আলটিমেটাম। ঢাকায় বিএনপির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার কৌশলের অংশ হিসেবেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে দলটি আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতেই তার পাল্টা জবাব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
দুই দলের ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারা। ঢাকার রাজনীতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ থেকে বের করে আনতে না পারলে রাজনীতিতে জুতসই অবস্থান সৃষ্টি করতে পারবে না বিএনপি।
সারা দেশের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেয়ে ঢাকা শহর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাজনৈতিক জয়-পরাজয় নির্ধারণ অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিএনপির ওই শীর্ষসারির নেতারা। তাই বিএনপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসাকে ইস্যু করে নেতাকর্মীদের ঢাকায় ডেকে পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। পর্যাপ্ত নেতাকর্মী ঢাকায় ঢুকে গেলে অবস্থা বুঝে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তাই ইস্যু খালেদার চিকিৎসা, কিন্তু লক্ষ্য ঢাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৩৬ দিনের আলটিমেটামের পেছনে রয়েছে নভেম্বরে তফসিল ঘোষণার আগপর্যন্ত ঢাকায় নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখা। সেই সঙ্গে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশনা দিয়ে রাখা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে ততই ষড়যন্ত্রের নীল নকশা আঁকছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণের শান্তি যেন বিঘিœত না হয়, সেজন্যই আমরা বিএনপির কর্মসূচির দিন মাঠে থাকি। বিএনপিকে জনগণ বিশ্বাস করে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে সত্যিই নিতে চাইলে আলটিমেটাম কেন দেবে বিএনপি? আইনি জটিলতা নিরসন করে বিদেশ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-সহিংসতানির্ভর রাজনীতি করে, বিশ্বাস করে। তারা পাকিস্তানের প্রেতাত্মা।’ তিনি বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা করাতে চাইলে কেন বিএনপি আইনি প্রক্রিয়ায় যাচ্ছে না? তার কিছু হলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের দায় নিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দুই দলের ঘোষিত আলটিমেটামকে কথার বাকযুদ্ধ হিসেবে নিয়েছেন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় এগুলো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অবস্থান ধরে নেওয়া যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে তাদের কোনো গা নেই। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে সেটাই স্পষ্ট করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিতে হলে আইনগতভাবে যেতে হবে। নির্বাহী কোনো সিদ্ধান্তে এ সুযোগ দেওয়া হবে না। ফলে আলটিমেটাম মূলত নিষ্ফল হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দাবি আদায় করার জন্য জনগণ থেকে দাবি উঠতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত জনগণকে রাস্তায় নামাতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না।’ তিনি বলেন, ‘এখন যেসব বক্তব্য এগুলো মঞ্চের বাকযুদ্ধ।’
বিএনপির আলটিমেটাম নিয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম সম্পর্কে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি (গতকাল মঙ্গলবার) সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষ করে এসেছি।’ আলটিমেটামের পেছনে ঢাকা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় তো আমরা সভা-সমাবেশ করছিই।’
জানতে চাইলে বিএনপির আরেক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আলটিমেটাম সম্পর্কে ক্লিয়ার কিছু জানি না।’
বিএনপিকে ‘অপরাজনীতি’ ছাড়তে ৩৬ দিন সময় বেঁধে দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ সময়ের মধ্যে ‘সঠিক পথে’ না এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির ‘অপরাজনীতির কালো হাত’ গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে আলটিমেটাম দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটি বিএনপির জন্য শেষ বার্তা।’ গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় এবং যাত্রাবাড়ীতে পৃথক সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। উত্তরার সমাবেশে ওবায়দুল কাদের এ আলটিমেটাম দেন।
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি দুই সপ্তাহের কর্মসূচি নিয়ে এখন রাজপথে আছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগও ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আগামী ৪ অক্টোবর পর্যন্ত সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ঢাকায় গত সোমবার দুটি সমাবেশ হয়।
এর আগে থেকেই ঢাকায় বিএনপির কর্মসূচির দিন শান্তি সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির সভা-সমাবেশের বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন করলেও মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি।
তামিম ইকবাল দলে না থাকাতে যেন অনেকেরই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! আবার বিশ্বকাপের দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অন্তর্ভুক্তিতেও অনেকের চোখ কপালে! দল ঘোষণার পর যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্বাচকরা এলেন সংবাদ সম্মেলনে, তখন আলোচনায় শুধু ছিলেন এই দুজনেই। তাদের এই বিরহ বেদনায় চাপা পড়ে যায় অনেক প্রশ্ন। লিটন দাসকে বাদ দিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত কেন সহ-অধিনায়ক! বাড়তি কোনো ওপেনার ছাড়া কিংবা পাঁচ পেসারকে নিয়ে কেন দল গড়া?
প্রায় মিনিট পনেরোর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরে ফিরে এসেছে একই প্রশ্ন। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও ঘুরেফিরে বন্দী ছিলেন একই কথার বৃত্তে। প্রশ্নোত্তর শেষে বেরিয়ে যান তিন নির্বাচক। যেতে যেতে কথা হয় তাদেরই একজন হাবিবুল বাশারের সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল চাপা পড়া সেইসব প্রশ্নের উত্তর।
শুরুতেই জানতে চাওয়া হয় লিটনকে বাদ দিয়ে শান্তকে কেন সহ-অধিনায়ক করা হয়েছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ একটা কারণ। আর লিটনের অনাগ্রহও তাকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর একটি কারণ। লিটন নিজেও চায় না নেতৃত্বের চাপ নিতে। সে একটু ব্যাটিংয়ে বেশি মনোযোগ দিতে চায়।’
বিশ্বকাপ দলে বিকল্প ওপেনার না থাকার কারণও জানা গেল এই নির্বাচকের কথায়। তিনি জানালেন, ‘আমরা ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে মিরাজকে ভাবছি।’
বিকল্প ওপেনার হিসেবে বিশেষজ্ঞ কাউকে না নেওয়ায় একজন বাড়তি বোলার দলে রাখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে শেখ মেহেদি হাসান সুযোগ পেয়েছেন সে কারণে। পাশাপাশি জায়গা হয়েছে পাঁচ পেসারেরও। এর পেছনে বাশার ভারতের কন্ডিশনের কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ভারতে এখন আর্লি সিজন। উইকেট সতেজ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই পাঁচজন পেসার দরকার হবে।’
যেতে যেতে আরও বাংলাদেশ দলের সাবেক এই অধিনায়ক মুখোমুখি হলেন, এই দলটা বিশ্বকাপে কেমন করবে? এই প্রশ্নটা শুনেই ঘুরে দাঁড়ালেন হাবিবুল। উত্তরে মজা করে বললেন, ‘চ্যাম্পিয়ন হবে এই দল।’ এরপর একটু গাম্ভীর্য ফিরিয়ে এনে যোগ করলেন, ‘আমি এদের অনেক দিন ধরে দেখছি। ওরা কয়টা ম্যাচ জিতবে জানি না। তবে বিশ্বকাপে প্রতিটি দলকে ভোগাবে, এটা জানি।’
নাজিবা হুসাইনি মারা যান ২০১৭ সালে জুলাই তালেবানের আত্মঘাতী বোমা হামলায়। ক’দিন পরেই তার বিয়ে হওয়ার কথা। বাগদত্তা হোসাইন রেজাই ভাবছিলেন নাজিবার স্মৃতির প্রতি কীভাবে সম্মান জানানো যায়। তিনি একটি গ্রন্থাগার করলেন দাইকুন্ডির প্রদেশের নিলি শহরে, যে-শহরে ২৮ বছর বয়সী নাজিবার জন্ম ও শৈশব কেটেছে। ‘নাজিবা হুসাইনি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি’ দিনে দিনে ১২ হাজারেরও বেশি ভলিউমের সংগ্রহশালা এবং একটি কম্পিউটার ল্যাবে পরিণত হয়। সেখানে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়। আফগানিস্তানের প্রতিটি প্রদেশে আরও গ্রন্থাগার তৈরির পরিকল্পনা ছিল রেজাইয়ের। কিন্তু তালেবান দেশের ওপর পুনরায় দখল সুসংহত করার পর ‘নাজিবা হুসাইনি মেমোরিয়াল লাইব্রেরি’তে আক্রমণ হয়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ভবনের ভেতরে ভাঙচুর চলছে এবং সংগ্রহগুলো নষ্ট করা হচ্ছে। রেজাই এখন ইতালি প্রবাসী। তার মতে, যা ঘটেছে তাতে তিনি ‘বিধ্বস্ত’। তিনি বলেছেন, ‘আমরা যা কিছু তৈরি করেছি সব একটা দুঃস্বপ্নের মতো শেষ হয়ে গেছে।’ লাইব্রেরি বললে আমাদের কল্পনায় ভেসে ওঠে, নিরাপদ ও নির্মল একটি ঘর, যেখানে শান্ত ও সুস্থির পরিবেশে অধ্যয়ন চলছে। আফগানিস্তানে সেই লাইব্রেরি ও আর্কাইভ হামলার শিকার হয়েছে। গ্রন্থাগারিকরা ফিরে আসতে পারছেন না পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে।
কাবুলের পাবলিক লাইব্রেরি এবং সেখানকার ন্যাশনাল আর্কাইভ চলমান রয়েছে বটে। তবে কর্মীসংখ্যা সীমিত এবং কোনো পরিষেবা নেই বললেই চলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারগুলো বন্ধ। কাবুলের বাইরেও অনেক লাইব্রেরি নাই হয়ে গেছে। লাইব্রেরির অনেক সরকারি কর্মচারী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায়। নারী কর্মচারীদের কাজ করার অনুমতি নেই। সরকারের উপ-সংস্কৃতিমন্ত্রী জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সম্প্রতি তার মন্ত্রণালয়কে লাইব্রেরি ভবনগুলো আবার খুলতে বলেছেন। তবে লাইব্রেরিতে নারী কর্মজীবীদের সংখ্যা ছিল বেশি, তারা আবার আগের ভূমিকায় ফিরতে পারবেন কি না জানা যায়নি। নারী গ্রন্থাগারিক থাকলে নারীরা লাইব্রেরিতে আসতে উৎসাহিত হন। কারণ গ্রন্থাগার তাদের অধ্যয়নের একটি নিরাপদ জায়গা। ন্যাশনাল আর্কাইভসের প্রাক্তন পরিচালক মাসুমা নাজারি বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের পাঠাগারগুলো মেয়েদের জন্য নিরাপদ ও ভালো জায়গা। পরিবারের সদস্যরা তাদের মেয়েদের সহপাঠী ও বন্ধুদের সঙ্গে লাইব্রেরিতে পড়তে, দেখা করতে এবং কথা বলতে যেতে বাধা দেয় না। লাইব্রেরিতে পড়ার ফাঁকে তারা নতুন নতুন শিক্ষার খোঁজ পায়, হাসতে, কাঁদতে এবং জীবনের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ পায়। যদি তালেবান নারীদের এখানেও নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে তারা এই নিরাপদ জায়গাটি হারাবে। আফগান মেয়েদের থেকে লাইব্রেরি কেড়ে নেওয়া উচিত নয়।’
তালেবান শাসনের প্রথম সময়েও দেশটিতে সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ হয়েছিল। লাইব্রেরি এবং আর্কাইভগুলোও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অ-পশতু ভাষায়, বিশেষ করে ফার্সি ভাষায় উপকরণ পড়া নিষিদ্ধ ছিল। কাবুলের ১৮টি গ্রন্থাগারের মধ্যে ৮টি তখন ধ্বংস হয়ে গেছে, আরও ৭টি ধর্মীয় ভবনে রূপান্তরিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ১২ আগস্ট তালেবান ‘হাকিম নাসের খোসরো বলখি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ হাতে নিয়ে নেয়, যার কেন্দ্রস্থলে একটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক লাইব্রেরি ছিল। কেন্দ্রের দরজায় তারা রকেট লঞ্চার ও মেশিনগানের মতো ভারী অস্ত্রশস্ত্র স্থাপন করে। লতিফ পেদ্রাম ছিলেন গ্রন্থাগারিক, প্রধানত ফার্সি পা-ুলিপির ৫৫ হাজার ভলিউমের সংগ্রহশালা সেই লাইব্রেরিটি ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর মতো শক্তি তার ছিল না। তালেবানের পতনের পর ন্যাশনাল লাইব্রেরির পরিচালক ফজলুল্লাহ কোদসি বলেছেন, ‘‘আফগানিস্তানের আইনি কোডের প্রতিটি কপি ধ্বংস হয়ে গেছে। ফার্সি ভাষার মহাকাব্য ‘শাহনামা’ পড়া থামাতে কিংবা এ-জাতীয় নিষিদ্ধ বই আছে কি না, তার জন্য ঘরে ঘরে অনুসন্ধান চালিয়েছিল তালেবান।” পেদ্রাম সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে জানান, ‘যদি তারা আমাকে ধরে ফেলতে পারত, ঘটনাস্থলেই মৃত্যুদণ্ড দিত।’ পরবর্তী সময়ে বাইরের তহবিল ও অভ্যন্তরীণ উদ্যোগের ফলে গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ সেক্টর পুনরুজ্জীবিত হতে থাকে। রাষ্ট্রপতি হামিদ কারজাই জাতীয় আর্কাইভগুলো পুনরায় চালু করেছিলেন, ফলে যথাযথ রেকর্ড রাখার অনুশীলন শুরু হয়। তালেবান ক্ষমতায় আরোহণের সময় আবারও আর্কাইভটি আক্রান্ত হয়। এমনকি লুটপাটও করা হয়। পরিচালককে আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ফেসবুকে তালেবানের কাছে একটি অনুরোধ পোস্ট করতে দেখা যায়। পরে আফগানিস্তানের জাতীয় জাদুঘরের পরিচালক মোহাম্মদ ফাহিম রহিমি একটি বিবৃতি জারি করেন যে, তিনি ও তার কর্মীরা প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে তালেবান-সরকারের সমর্থন পেয়েছেন।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ছিল সমগ্র অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সাল নাগাদ ২ লাখেরও বেশি ভলিউম সংগৃহীত হয়। প্রায় ৫০ জন গ্রন্থাগারিক নিয়োগ করা হয়েছিল। ইরান, তাজিকিস্তান, পাকিস্তান, ভারত এবং অন্যান্য জায়গা থেকেও পণ্ডিতরা সংগ্রহগুলো ব্যবহার করতে আসতেন। আফগানিস্তানে সোভিয়েত যুদ্ধের সময় এটি জাতীয় গ্রন্থাগারে পরিণত হয়। সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের পরে গ্রন্থাগারটি ধ্বংসের মুখে পড়ে এবং পুনর্নির্মাণের কাজও শুরু হয়। নব্বইয়ের শেষের দিকে তালেবান তা বন্ধ করে দেয়। গ্রন্থাগার চত্বরে গোলাগুলিও হয়েছে। অনেক ঐতিহাসিক নথি, প্রাচীন বই ও পা-ুলিপির অবৈধ পথে পাচার হয়ে যায়। গ্রন্থাগারটি গত বছর আগস্টের মাঝামাঝি থেকে বন্ধ রয়েছে। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র লাইব্রেরি ব্যবহারে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন, ‘সেখানে বই পড়তাম, লিখতামও। মাঝে মাঝে বন্ধুরা মিলে টেবিলের চারপাশে বসে আফগানিস্তানের উন্নয়ন ও বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলতাম। এখন সব স্বপ্নের মতো মনে হয়।’ অনেক তরুণ এখন বিভিন্ন নথি ও ফুটেজ সংগ্রহ করে পশ্চিমাদের বিভিন্ন অনলাইন লাইব্রেরি ও ইন্টারনেট আর্কাইভে রাখছে। তারা আফগান ওয়েবসাইটেও আর্কাইভ করার চেষ্টা করছে, যাতে দেশের ডিজিটাল উপায়ে হলেও নথিগুলো রক্ষা করা যায়।
তথ্যের সহজলভ্যতা থেকে শুধু নাগরিকরাই উপকৃত হয় না, নিপীড়ক শাসককেও তার সুবিধা দেয়। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় কর বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তথ্য-সংগ্রহের কাজটি ছিল সম্ভবত জনগণের ওপর ব্যাপক নজরদারির প্রথম উদাহরণ। নাৎসি জার্মানি ও স্টালিনবাদী রাশিয়াও নাগরিকদের ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করত এবং বিস্তারিতভাবে নথিভুক্ত করে রাখত। অথচ আফগানিস্তানে নাগরিকদের স্কুলের রেকর্ড ধ্বংস করার খবর প্রকাশ পেয়েছে যেন, ডকুমেন্টেশন বর্তমান সরকারের হাতে না পড়ে, কেননা, তাতে তারা শাস্তির মুখে পড়তে পারে। অনেক বইয়ের দোকানি নিজেরা তাদের স্টক ধ্বংস করেছে, কেননা, তা ধর্মবিরোধী বিবেচিত হতে পারে। গ্রন্থাগার কেবল আক্রমণের মাধ্যমেই ধ্বংস হয় না, তহবিলের অভাবেও হতে পারে। অক্সফোর্ডের ওরিয়েন্টাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক আরেজু আজাদ বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আফগানিস্তানে গ্রন্থাগার ও সংরক্ষণাগার রক্ষায় সমর্থন দিতে হবে। আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং এর সাংস্কৃতিক ইতিহাসের জ্ঞান সংরক্ষণ দেশের শান্তির ও রাষ্ট্র গঠনের একটি মৌলিক ভিত্তি।’
লেখক : বোডলির গ্রন্থাগারিক এবং ‘বার্নিং দ্য বুকস : অ্যা হিস্ট্রি অব নলেজ আন্ডার অ্যাটাক’ গ্রন্থের লেখক।
ফাইনান্সিয়াল টাইমস থেকে ভাষান্তর : মনযূরুল হক
জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলের ২৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর স্ট্যানফোর্ডের দুই পিএইচডির ছাত্রের হাত ধরে যাত্রা শুরু। ভাড়া করা গ্যারেজে জন্ম নেওয়া সেই গুগল আজ বিশ্বের বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন; পরিণত হয়েছে ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানিতে। কীভাবে দরজা আটকাবেন বা কীভাবে কাটবেন আনারস— গুগলে উত্তর পাবেন না এমন প্রশ্ন খুঁজে মেলা ভার। তাইতো মানুষের কাছে এত জনপ্রিয় ও প্রয়োজনীয় একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে গুগল।
আজ ২৭ সেপ্টেম্বর গুগল ২৫তম জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বিশেষ ডুডল তৈরি করে বর্ণাঢ্য আকারে উদ্যাপন করেছে দিবসটি। এবারের ডুডলটি তৈরি করা হয়েছে এর বিবর্তনের থিম ধরে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গুগলের লোগোর পরিবর্তন উঠে এসেছে ডুডলে।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের দুই শিক্ষার্থী ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিনের প্রকল্প হিসেবে শুরু করেছিল এ সার্চ ইঞ্জিন। নিজেরদের ছাত্রাবাসে বসেই কাজ শুরু করেন দুজন। বড় আকারের সার্চ ইঞ্জিনের প্রোটোটাইপ তৈরি করার পর একটি ভাড়া করা গ্যারেজে অফিস স্থাপন করেন তারা। এখন সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন ও ইন্টারনেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে গুগল।
চলুন গুগল নিয়ে একটা মজার তথ্য জানাই আপনাদের। আমাদের সবার পরিচিত নাম গুগল নামটি কিন্তু ইচ্ছা করে দেননি ল্যারি ও ব্রিন। গুগল নামটি আসলে এসেছে গাণিতিক হিসাবের গোগল (googol) ভুল করে লেখার মাধ্যমে, যার মানে হলো ১ এর পর ১০০টি শূন্য। এ নিয়ে এখন গল্প প্রচলিত আছে যে, একজন প্রকৌশলী বা ছাত্র আসল নামের বদলে এই ভুল বানানটি লিখেছিলেন। সেই ভুল নামই পুরো দুনিয়ার সামনে চলে আসে। কেন এই নাম বেছে নিয়েছিলেন ল্যারি আর সের্গেই? তাদের ওয়েবসাইট যে বিপুল পরিমাণ উপাত্ত ঘাঁটাঘাঁটি, অনুসন্ধান করবে, সেটা এই নাম দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন তারা। সেই ভুল নামই গুগল!
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।