
মাগুরার প্রাচীন রেলওয়ে তৈরি করা হয়েছিল সেই ব্রিটিশ আমলে, ১৮৭২ সালে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আর সংস্কার হয়নি। প্রায় ৪৭ বছর পর মাগুরা জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে ২০১৮ সালে ১ হাজার ২০২ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে জমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় এ জেলাকে ঢাকার রেলওয়ের সঙ্গে যুক্ত করার স্বপ্ন ফিকে হতে চলেছে মাগুরাবাসীর।
প্রকল্পটির প্রথম মেয়াদের চার বছরেও জমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান। এমনকি পরবর্তী সময়ে দুই বছর বাড়ানো হলেও সেই মেয়াদও প্রায় শেষের দিকে। প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার ৫ বছরেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। সম্প্রতি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) করা নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
‘মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর ব্রডগেজ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির আইএমইডির প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাগুরা জেলায় প্রায় ১১ কিলোমিটার রেললাইন তৈরি করার জন্য ১১২ একর ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রমে তেমন অগ্রগতি নেই। প্রকল্পটি গ্রহণের সময় জমি অধিগ্রহণের অদূরদর্শিতার প্রমাণও স্পষ্ট হয়েছে। বাস্তবে প্রায় ২৪ কিলোমিটারের রেললাইনের জন্য ১১২ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এতে ব্যয় হবে ১৯৫ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প প্রস্তাবে এ খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।
মূলত জমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণেই প্রকল্পটির কাজ অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে। জমি অধিগ্রহণ দেরিতে হওয়ার কারণ হিসেবে রেলওয়ে বলছে, জমি অধিগ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে মাগুরা জেলা প্রশাসককে ১৫৫ কোটি টাকা এবং ফরিদপুর জেলা প্রশাসককে ৪০ কোটি টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী ফরিদপুর ডিসিকে আরও ৪০ কোটি ৩০ লাখ টাকা দিতে হবে। কিন্তু ডিপিপিতে জমি অধিগ্রহণের জন্য আর কোনো টাকা বরাদ্দ নেই। এখন প্রকল্প সংশোধন ছাড়া ফরিদপুরের ডিসিকে টাকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আইএমইডি তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ডিপিপিতে ব্যয়ের হিসাব ঠিকমতো করা হয়নি। এতে ডিপিপির গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ২৯ মে একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। পরবর্তী সময়ে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় এবং বাস্তবায়নকাল ১ মে ২০১৮ থেকে ৩০ এপ্রিল ২০২৪ নির্ধারিত হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অন্যান্য প্রকল্পের মতো কভিড ১৯-এর কারণে এ প্রকল্প কার্যক্রমেও বিঘœ সৃষ্টি করে। কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের কর্মস্থল ও প্রকল্প সাইট থেকে বহুদিন দূরে থাকতে হয়েছে, যা প্রকল্পের অগ্রগতি ও কার্যক্রমে বিঘœ সৃষ্টি করেছে।
প্রকল্পটি ধীরগতির কারণ হিসেবে তারা আরও বলছেন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দ্রব্যের দাম সমন্বয়ের জন্য কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে। ফলে কাজের অগ্রগতি খুবই মন্থর। মূল ডিপিপিতে চন্দনা ব্রিজের স্প্যান ছিল তিনটি এবং পরিমাপ ছিল ৯০ মিটার, যা নির্মাণ-সংক্রান্ত সম্ভাব্যতা যাচাই করে তৈরি করা। কিন্তু বাস্তবে সেই ডিজাইন অনুসারে ব্রিজ নির্মাণ করতে গেলে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ডিজাইন পরিবর্তন করে ১২০ মিটার করা প্রয়োজন পড়ে। এখন অসুবিধা হলো ব্রিজটির কাজ সম্পন্ন করতে ব্যয় ও সময় উভয়ই বৃদ্ধি পাবে। সম্ভাব্যতা যাচাই করার সময় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে করা হয়নি।
প্রকল্প অগ্রগতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত মোট আর্থিক অগ্রগতি ৪৩৪ কোটি টাকা। বাস্তব (ভৌত) অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। সময় অতিক্রান্ত বিবেচনায় প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতির তুলনায় আর্থিক অগ্রগতি পিছিয়ে আছে।
ভূমি অধিগ্রহণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ ও ছাড় করে ভূমি অধিগ্রহণ ত্বরান্বিত করা আবশ্যক। এছাড়া রেল, ব্রিজের গার্ডার এখনো সংগ্রহ করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী প্রকল্পের নিয়মিত পিআইসি ও পিএসসি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কিছু ঝুঁকিও চিহ্নিত করেছে আইএমইডি। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বাড়ার কারণে প্রকল্পের কার্যক্রম ধীরগতিতে চলছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ আবারও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া চন্দনা নদীতে ব্রিজ ফাউন্ডেশনে সমস্যা হচ্ছে যা দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন।
বাংলায় প্রথম দর্শনা থেকে জগতি পর্যন্ত ৫৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপিত হয় ১৮৬২ সালে। পরবর্তী সময়ে ১৯৩২ সালের জানুয়ারি মাসে মধুখালী থেকে কামারখালী ঘাট পর্যন্ত রেললাইন নির্মিত হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ এ শাখা লাইনটি বন্ধ হয়ে যায়।
প্রকল্পের কার্যক্রম মূলত ২টি প্যাকেজে বাস্তবায়িত হচ্ছে। মে ২০২৩ পর্যন্ত প্যাকেজ ২টির ভৌত অগ্রগতি ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। মে ২০২৩ পর্যন্ত প্রকল্পের ক্রমপুঞ্জিত ভৌত অগ্রগতি ৪০ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম।
নির্মাণকালে প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের প্রাক্কলন ব্যয় বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হচ্ছে। আইএমইডি বলছে, নির্দিষ্ট স্পেসিফিকেশন মেনে, প্রকল্পের জন্য সংগ্রহ করা মালামাল বা উপকরণের গুণগতমান নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া ও নিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রকল্পের নির্মাণাধীন কয়েকটি মূল উপাদান রয়েছে, যেগুলো হচ্ছে- একটি ১৯ দশমিক ৯০ কিলোমিটার ব্রডগেজ ট্র্যাক নির্মাণ; একটি ৪.৯ কিমি লুপ লাইনের উন্নয়ন; চন্দনা সেতু (৯০ মিটার) এবং গড়াই সেতু (৫৪৯ মিটার) বিস্তৃত দুটি বড় সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
কভিড-১৯ মহামারীর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এসএমই) সহায়তা করতে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডকে ৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ^ব্যাংকের প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএফসি এ তথ্য জানিয়েছে।
আইএফসি মনে করছে, এই ঋণসহায়তা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে এবং ব্র্যাক ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার তারল্য বাড়াতে সহায়তা করবে। তারা বলেছে, এই ঋণসহায়তা ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই গ্রাহকদের চলতি মূলধন ও বাণিজ্য অর্থায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের প্রাইম ব্যাংকের অনুকূলে একই ধরনের ঋণ দিয়েছিল আইএফসি। এবার ব্র্যাক ব্যাংককে দেওয়া এই ঋণে স্থানীয় ব্যাংক ও এসএমইগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা অর্থায়নের চাহিদা পূরণে অন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণে অবদান রাখবে।
জনস্বাস্থ্য সংকটের সময় বিশেষ করে কভিডের সময় কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করতে আইএফসি ৮ বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক কভিড-১৯ ফাস্ট ট্র্যাক অর্থায়ন প্যাকেজ ঘোষণা করে। এই নতুন বিনিয়োগ কভিড-১৯ এর পর ক্ষতিগ্রস্ত বা সংকটে থাকা কোম্পানিগুলোর জন্য চলতি মূলধন সমাধানের জন্য করা হচ্ছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে উদীয়মান বাজারের ব্যাংকগুলোতে বছরে ২ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্প ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) প্রাইভেট সেক্টর উইন্ডোর মিশ্রণ অর্থায়ন সুবিধার অংশ।
ব্র্যাক ব্যাংক বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাংক এবং এই দেশের একমাত্র এসএমই-ফোকাসড ব্যাংক।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আমাদের এসএমই এবং করপোরেট গ্রাহকরা কভিড-১৯ এর বিরূপ প্রভাব থেকে আসা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এছাড়া বিদেশি মুদ্রার অপর্যাপ্ত জোগানের কারণে তাদের নিয়মিত বাণিজ্য পরিচালনায় বাড়তি সমস্যা হচ্ছে।
কভিড-১৯ মহামারীর পর বিশ্বে অর্থনৈতিক ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে, যার পেছনে ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহসহ নানা কারণ রয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার জন্য আইএফসির পোর্টফোলিও ম্যানেজার জুন ইয়ং পার্ক বলেন, বাংলাদেশের মতো রপ্তানি খাত চালিত অর্থনীতির দেশগুলো যারা নানা সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক সংকটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার মুখে পড়েছে, তাদের ব্যাংকিং খাতে আইএফসি সহায়তা করে আসছে। ব্র্যাক ব্যাংকের মতো যাদের উল্লেখযোগ্য এসএমই পোর্টফোলিও রয়েছে বাংলাদেশের এমন মুখ্য ব্যাংকিং পার্টনারদের আইএফসি অবিচল সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। ব্র্যাক ব্যাংকের সঙ্গে আইএফসির গত ১৯ বছরের মূলধন এবং ঋণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত আইএফসি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধিতে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের অধিক বিনিয়োগ করেছে, যার ফলে এদেশের নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কভিড সংকটের শুরু থেকে আইএফসি এ দেশের বিভিন্ন ব্যাংক এবং কোম্পানিকে ৩৬ কোটি ডলারের চলতি মূলধন ও তারল্য সহায়তা দিয়েছে।
বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের জন্য নিযুক্ত আইএফসির কান্ট্রি ম্যানেজার মার্টিন হল্টম্যান বলেন, তিন বছর লম্বা সময় করোনার প্রভাবের মধ্যে থাকার পর বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা চ্যালেঞ্জিং বাজার পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। ব্র্যাক ব্যাংককে সহায়তার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করতে এবং মহামারী পরবর্তী টেকসই অর্থনৈতিক দৃশ্যপটের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।
রাজধানীর হাটে হাটে বসেছে জাল টাকা শনাক্তকরণের ব্যাংকিং বুথ। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রামে মোট ১০টি হাটে চলছে স্মার্ট পেমেন্ট কর্মসূচি, যার মাধ্যমে নগদ টাকা ছাড়াই কোরবানির পশু কেনাবেচা করছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। এতে কমে এসেছে নগদ টাকা বহন ও ছিনতাইয়ের ঝুঁকি।
প্রতি বছর কুরবানির ঈদকেন্দ্রিক পশু কেনাবেচায় বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়। এর বেশিরভাগই সম্পন্ন হয় নগদ টাকায়। কিন্তু স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের পশুরহাটগুলোতে ক্যাশলেস লেনদেন চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে পশু কেনাবেচায় মোবাইল অথবা অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন যে কেউ। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যেই ঢাকা উত্তর এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করেছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিনিধিরা জানান, এ বছর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলে মোট দশটি হাটে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ স্মার্ট হাট’ কর্মসূচি চলছে। উত্তরা দিয়াবাড়ি স্মার্ট হাট কার্যক্রম প্রতিনিধিত্ব করছে ব্র্যাক ব্যাংক। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ৫৬টি লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে টাকার লেনদেন হয়েছে ৯৩ লাখ। এটিএম বুথ এবং পস সিস্টেমের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করছেন পশুর ক্রেতারা। অন্যদিকে পশু বিক্রির টাকা এজেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিতে পারছেন বেপারীরা। এতে করে দুই পক্ষই উপকৃত হচ্ছে বলে দাবি ব্যাংকারদের। কারণ কোনো পক্ষকেই মোটা অঙ্কের এই টাকা বহন করতে হচ্ছে না। নগদ টাকা ছাড়াই কেনাবেচা সম্পন্ন হচ্ছে কোরবানির পশু।
দেশের লেনদেন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ঘটলেও স্বল্পমেয়াদি পশুর হাটের বিপুল পরিমাণ লেনদেনের অধিকাংশই নগদ অর্থে সংঘটিত হয়। ফলে একদিকে নগদ অর্থের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয় এবং ব্যাংক, এটিএমসমূহে অর্থ জোগান দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত নোট ছাপানো ও সরবরাহের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে, নগদ অর্থের এই ব্যাপক লেনদেনের ফলে বিভিন্ন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যেমনÑ জাল টাকার বিস্তার, চুরি-ছিনতাই ইত্যাদি নানা ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পায়। ফলে এই সময়ে পশু ক্রেতা-বিক্রেতার অর্থের নিরাপত্তা বিধান, অপরাধী শনাক্তকরণ এবং জাল টাকা শনাক্তকরণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
এসব সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ২০২২ সালে কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক ঢাকায় অবস্থিত ৬টি পশুর হাটে লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে পাইলট কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সেই পাইলট কার্যক্রমে প্রায় ৩৩ কোটি টাকার লেনদেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পাদিত হয়। সফলভাবে এই পাইলট কার্যক্রম পরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সালের কোরবানির পশুর হাটেও একই কার্যক্রম চলমান রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কোরবানির হাটে লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেশ কয়েকটি হাটে ব্র্যাক ব্যাংকের বুথ রয়েছে। কোরবানির পশু ক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্র্যাকের বুথে টাকা লেনদেন হচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত পঞ্চাশের অধিক লেনদেন হয়েছে। এটা আরও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আর বিকাশের কমিউনিকেশন ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, বিকাশে লেনদেনের ক্ষেত্রে ৩০ হাজার টাকা লিমিট রয়েছে। কিন্তু কোনো মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত পেমেন্ট করা যায়। যে কারণে কোরবানির হাটে বিকাশের মাধ্যমে লেনদেন হচ্ছে।
২০২২ সালের মতো চলতি বছরও কোরবানির ঈদকেন্দ্রিক কার্যক্রমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সহায়তায় তৃণমূল পর্যায়ে পশু বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় এবং আলোচ্য কার্যক্রমের বিষয়ে ডিজিটাল মাধ্যমে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে প্রান্তিক পর্যায়ের পশু খামারিদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা হয়। এ লক্ষ্যে ঢাকার বাইরে ২৬টি জেলায় (রাজবাড়ী, শেরপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নড়াইল এবং সাতক্ষীরা) ১০টি ব্যাংক (এবি, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক, ইস্টার্ন, আইএফআইসি, ইসলামী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, দি সিটি, ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক) এবং ৩টি এমএফএস প্রোভাইডার (বিকাশ, নগদ এবং ইউপে) কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
স্মার্ট কোরবানির হাট কার্যক্রমের পরিকল্পনায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৮টি হাট এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২টি হাটে বিভিন্ন পেমেন্ট স্কিম প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান (ভিসা, মাস্টারকার্ড এবং এমেক্স) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে একটি করে ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ স্থাপিত হবে যেখানে ব্যাংক এবং এমএফএসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ক্রেতা ও বিক্রেতাদের ডিজিটাল লেনদেনের সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবেন। উক্ত হাটগুলোতে পশু ক্রেতা ও বিক্রেতারা আর্থিক লেনদেন ডিজিটাল মাধ্যমে (ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড, এমএফএস, মোবাইল ফোনে ব্যবহার্য অ্যাপ্লিকেশন, বিশেষভাবে বাংলা কিউআর) পরিচালনার সুযোগ পাবেন যা নগদ অর্থ বহনের ঝুঁকি, নকল ছেঁড়া/ফাটা নোট সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এসএমই খাতের সার্বিক উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এর অংশ হিসেবে গতকাল ডিসিসিআই ও বিসিকের মধ্যে এক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার এবং বিসিক চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমান নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
অনুষ্ঠানের ঢাকা চেম্বার সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেন, এ চুক্তির আওতায় ডিসিসিআইয়ের নতুন সদস্যপদ গ্রহণ, সদস্যপদ নবায়ন এবং ‘কান্ট্রি অব অরিজিন (সিও)’ প্রভৃতি সেবা বিসিকের ওএসএস পোর্টালের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে, যার ফলে বিসিকের সদস্যবৃন্দ ওএসএসের মাধ্যমে ডিসিসিআইয়ের সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এ সমঝোতা চুক্তির ফলে বিসিকের ঢাকাভিত্তিক যেকোনো সদস্য ঢাকা চেম্বারের সদস্য হতে পারবেন বলে জানান সামীর সাত্তার। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশে বিশেষ করে এসএমই খাতের সার্বিক উন্নয়নে সমঝোতা স্মারকটি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে এবং এর কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর জোরারোপ করেন।
বিসিক চেয়ারম্যান মুহ. মাহবুবর রহমান বলেন, বিসিক প্রতিষ্ঠানলগ্ন থেকেই দেশে দ্রুত শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজ করে আসছে এবং বর্তমানেও তা অব্যাহত রেখেছে। সমঝোতা স্মারকটি বিসিক এবং ঢাকা চেম্বারের সদস্যদের মধ্যকার সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি সারা দেশে শিল্পায়ন সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বিসিক চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে বিসিক তাদের নিজস্ব ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস)-এর মাধ্যমে নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের ২৯টি সেবাসহ সরকারি অন্য প্রতিষ্ঠানের ১৩টি সেবা প্রদান করে আসছে।
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান), সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলী, পরিচালক মালিক তালহা ইসমাইল বারী, এম মোশাররফ হোসেন, বিসিক পরিচালক (দক্ষতা ও প্রযুক্তি) কাজী মাহবুবুর রশিদ, উপমহাব্যবস্থাপক (সাব-কন্ট্রাক্টিং সেল) প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
ডলার সংকটে আমদানি দায় পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এমন পরিস্থিতিতে ডলার সাশ্রয় ও সরবারহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে আমদানি দায় পরিশোধের সময় বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাক টু ব্যাংক এলসি, শিল্পের কাঁচামাল ও কৃষিপণ্য আমদানিতে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকের এডি শাখাগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শিল্পের কাঁচামাল, ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে আমদানি, কৃষি উপকরণ ও রাসায়নিক সার আমদানির দায় পরিশোধে মেয়াদ ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৩৬০ দিন করা হয়েছে। ফলে এসব পণ্যের আমদানি মূল্য চলতি বছরের ৩০ জুনের পরিবর্তে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিশোধ করতে পারবে। তবে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে নেওয়া ঋণে আমদানি মূল্য পরিশোধে এই সুযোগটি থাকবে না।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট কাটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ সামাল দিতে উপায় খুঁজছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে আমদানির দায় পরিশোধের সময় বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি ডলারের সংকট কাটাতে বিভিন্ন পণ্যে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত মার্জিন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে ডলার সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছর রেকর্ড ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যার পুরোটাই নগদ। ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাববছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে গতকাল এ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য আগামী ১০ আগস্ট বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য রেকর্ড দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ জুলাই। ২০২১ সালে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য মোট ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল, যার মধ্যে ৬ শতাংশ বোনাস।
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।