
কোরবানির সময়ে প্রায় বিনে পয়সায় পাওয়া চামড়া দিয়ে বছরে বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রা আয় করে বাংলাদেশ। তবে এ আয়ের কোনো ধারাবাহিকতা নেই। এক বছর প্রবৃদ্ধি হলে পরের বছরই তা ঋণাত্মক ধারায় নামে। মূলত চামড়া শিল্পনগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতাসহ অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা ও ভূরাজনৈতিক কারণে এ খাতটির রপ্তানি আয়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। যদিও তৈরি পোশাকের পর সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে চামড়া খাতকে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে টানা দুই অর্থবছরের ঋণাত্মক ধারার পর করোনায় প্রাণ ফিরে পায় চামড়া খাত। এতে করে ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চামড়া খাত। তবে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে অন্য অনেক খাতের মতো চামড়াও প্রবৃদ্ধি হারিয়ে লক্ষ্যমাত্রা থেকে দূরে চলে গেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশে প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি কমেছে ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। পাশাপাশি চামড়ার তৈরি জুতা রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, হাজারীবাগ থেকে সাভারে চামড়া শিল্প স্থানান্তরের পর থেকেই খাতটির বিকাশ থমকে গেছে। উল্টো সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন না হওয়ায় সেখানে স্থানান্তর হওয়া ট্যানারি শিল্পগুলো ফিনিশড চামড়া রপ্তানি করতে পারছে না। একসময় ইউরোপ বাংলাদেশের চামড়ার প্রধান বাজার হিসেবে থাকলেও কেন্দ্রীয় ইটিপি সম্পন্ন না হওয়ায় সেখানে রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই কমমূল্যে সেমি-ফিনিশড চামড়া চীনে রপ্তানি করতে হচ্ছে ট্যানারিগুলোকে। এতে করে চামড়ায় রপ্তানি আয় যেমন কমে গেছে, তেমনি চামড়াসংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোও দুর্বল হয়ে পড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে এ সম্ভাবনাময়ী খাতটি বাঁচাতে সরকারের বিশেষ নজরের দাবি ব্যবসায়ীদের।
ইপিবির তথ্য বলছে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বিদেশে প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি হয়েছে ১২ কোটি ৩৪ লাখ ৩৭ হাজার ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে এ রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ১৩ লাখ ৬৯ হাজার ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিদেশে প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি কমেছে ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ছিল ২৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাভারের চামড়া শিল্পনগরী কমপ্লায়েন্সে না আসার অজুহাতে বায়াররা এখান থেকে চামড়া কিনছে না। শুধু চীনের কোম্পানিগুলো এখান থেকে কম দামে চামড়া নিচ্ছে। এখন চামড়া শিল্প চীননির্ভর হয়ে গেছে।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিইটিপি ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণসহ আরও কিছু টেকনিক্যাল কাজ পায় একটি চীনা প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালের মার্চে কোম্পানিকে ২৪ মাস সময় দিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০২১ সাল পর্যন্ত তারা ওই কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। পরে প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করে তাদের থেকে দায়িত্ব বুঝে নেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত আর সিইটিপি ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন হয়নি। এ কারণে বিদেশি বড় বড় বায়ার আমাদের এখানে আসছে না। আমরা ভালো দামে চামড়া বিক্রি করতে পারছি না।
এদিকে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে বিদেশে চামড়ার তৈরি জুতা রপ্তানিও কমেছে। এ সময় চামড়ার তৈরি জুতা রপ্তানি হয়েছে ৭০ কোটি ৩৮ লাখ ৮ হাজার ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে এ রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭৫ কোটি ৬১ লাখ ৪৮ হাজার ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিদেশে চামড়ার তৈরি জুতা রপ্তানি কমেছে ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩২ দশমিক ২৪ শতাংশ।
তবে বিদায়ী অর্থবছরে চামড়া ও চামড়ার জুতা রপ্তানি কমলেও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ১৭ দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু এরপরও সামগ্রিকভাবে চামড়া, চামড়াজাত পণ্য ও চামড়ার তৈরি জুতার সামগ্রিক রপ্তানি ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমেছে। যদিও আগের অর্থবছর এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৩২ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
কমপ্লায়েন্স চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তুলতে ২০০৩ সালে প্রকল্প নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিসিক, যা ২০০৫ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। শুরুতে ট্যানারি মালিকদের হাজারীবাগ ছেড়ে যাওয়ার অনীহা প্রকল্পে বাস্তবায়নে বিলম্ব ঘটায়। পরে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া ও সরকারের কড়া নির্দেশনার কারণে মালিকরা ট্যানারি স্থানান্তরে রাজি হয়। উন্নত চামড়া শিল্প গঠনে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রকল্পের আওতায় সিইটিপি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১০ সালে প্রকল্প সংশোধন করে। সে সময় সিইটিপি ও ডাম্পিং ইয়ার্ড নির্মাণসহ আরও কিছু টেকনিক্যাল কাজ পায় একটি চীনা প্রতিষ্ঠান। ২০১২ সালের মার্চে কোম্পানিকে ২৪ মাস সময় দিয়ে কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
প্রকল্পের চতুর্থ সংশোধনীতে এসপিজিএস কম্পোনেন্টটি বাদ দিয়ে সময় জুন ২০২১ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু নিয়োজিত চীনা ঠিকাদার কোম্পানিটি সময়মতো কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। নানা অজুহাতে এ কোম্পানি সময় বাড়াতে থাকে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষও কোম্পানিটির কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে শিল্পনগরীর কোনো সুবিধাই নিশ্চিত না করে ট্যানারিগুলোকে বারবার স্থানান্তরের সময়সীমা বেঁধে দিতে থাকে শিল্প মন্ত্রণালয়। তাতেও কাজ না হওয়ায় উচ্চ আদালত হাজারীবাগের কারখানাগুলোর গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার আদেশ দেওয়ার পর ২০১৭ সালের এপ্রিলে কারখানাগুলো একযাগে স্থানান্তরিত হয়।
ধারাবাহিক বাড়তে থাকা মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় লেনদেন কিছুটা কমেছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ লেনদেন কম হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি বছরের মে মাসে মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। আগের মাস এপ্রিলে এই লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১৬ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা বা ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো ঈদ বা অন্য কোনো উৎসব থাকলে লেনদেন বেড়ে যায়। এখানে প্রবাসী আয়ও আসে। পাশাপাশি শহর থেকে গ্রামে কেনাকাটায় মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় টাকা পাঠিয়ে থাকেন। তবে উৎসবের পর কিছুটা কমে আসে। পরে আবারও বেড়ে যায়। এপ্রিল মাসে মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর হওয়ায় ওই মাসে লেনদেন অনেক বেশি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছিল ৮৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। আগস্ট মাসে কিছুটা কমে লেনদেন হয়েছিল ৮৭ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। এরপরে সেপ্টেম্বরে ৮৭ হাজার ৬৩৫ কোটি, অক্টোবরে ৯৩ হাজার ১৩ কোটি, নভেম্বরে ৯২ হাজার ১২৫ কোটি এবং ডিসেম্বরে লেনদেন হয়েছিল ৯৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১ লাখ ৫৯৩ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এরপরে ফেব্রুয়ারি মাসে লেনদেন ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা কমেছে। এই মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ৯৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। এছাড়া মার্চ মাসে ১ লাখ ৮ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
আলোচিত সময়ে (মে ২০২৩) মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় নিবন্ধিত হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ কোটি ৩৯ লাখ ৭০ হাজারে। এটি তার আগের মাস এপ্রিলে হিসাব সংখ্যা ছিল ২০ কোটি ৬ লাখ ৮৯ হাজার ২১০টি।
মে শেষে পুরুষ গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৭৯ লাখ ৪১ হাজার ৫২৮ জন। অপরদিকে নারী গ্রাহক ৮ কোটি ৫৪ লাখ ৯৭ হাজার ২২৯ জন। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৭০ হাজার ৩৪০ জন। অতিদ্রুত শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং দেশের ব্যাংকিং সেবায় নতুন সম্ভাবনা এনে দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে বিরাট এক গতি সঞ্চার করেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই সেবা। একইসঙ্গে নতুন কর্মসংস্থান যোগ হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ, ডাচ-বাংলার রকেট, ইউসিবির ইউক্যাশ, নগদ, মাইক্যাশ, শিওর ক্যাশ ইত্যাদি। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১১ সালের ৩১ মার্চ ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সহপ্রতিষ্ঠান রকেট-এর মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। এরপর মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা হয় ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিকাশের।
মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে শুধু লেনদেন নয়, নতুন নতুন সেবাও যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো (রেমিট্যান্স) ইত্যাদি। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতনও এখন দেওয়া হচ্ছে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
একসময় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা ছিল স্বপ্নের মতো। ব্যাংকিং সেবা পেতে যেতে হতো শহরে কিংবা বড় কোনো হাটবাজারে। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। যাত্রা শুরুর মাত্র ১০ বছরে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক বেড়ে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৪৩ হয়েছে। গ্রাহক বাড়ায় আমানতও বাড়ছে। চলতি বছরের পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি আমানত জমা পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে দেশব্যাপী পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে এজেন্টের সংখ্যা ১৫ হাজার ৪৭৩ জন। এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট বেড়ে হয়েছে ২১ হাজার ২১৬টি। বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্য বলছে, সব এলাকায় ব্যাংকের শাখা না থাকলেও এখন সারা দেশের মানুষ ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছে। ব্যাংকগুলো শাখার পরিবর্তে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মতো বিকল্প সেবার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় কমছে। এতে গ্রামীণ মানুষ আরও বেশি অর্থনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছেন। চলতি ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত জমা পড়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে আমানত জমা হয়েছিল ১ লাখ ২৪ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় আমানত বেড়েছে ৩০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।
আলোচিত এ সময়ে এজেন্টের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১ হাজার ৩১১ কোটি টাকা।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে ব্রাজিল। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালা জারি করে। পরে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয়। নীতিমালা অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রত্যেক এজেন্টের একটি চলতি হিসাব থাকতে হয়। এ সেবার মাধ্যমে ছোট অঙ্কের অর্থ জমা ও উত্তোলন করা যায়।
বর্তমান দেশে এ সেবার গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৪৩ হাজার ২৭৩টি। দেশব্যাপী পাড়া-মহল্লা ও হাটবাজারে এরকম এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৪৭৩টি। আর এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট বেড়ে হয়েছে ২১ হাজার ২১৬টি। এজেন্ট ব্যাংকিং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয়সাশ্রয়ী হওয়ায় জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এজেন্ট আউটলেটে একজন গ্রাহক সহজেই তার হাতের আঙুলের স্পর্শের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। তাই গ্রামীণ জনপদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যকরী একটি উদ্যোগ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ প্রদান ও আদায় এবং এককালীন জমার কাজও করেন এজেন্টরা। তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন উপযোগ সেবার বিল পরিশোধের পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোর অর্থও উত্তোলন করা যায়। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারেন এসব এজেন্ট। তবে এখনো বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের কোনো সুযোগ নেই এজেন্টদের।
মূল্যস্ফীতির আশঙ্কায় বিশ্ববাজারে চালের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে ভারত। গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক এ দেশটি তাদের বেশিরভাগ জাতের চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। ভারতের সরকারের এ পদক্ষেপের ফলে বিশ্ববাজারে ইতিমধ্যে আকাশচুম্বী হওয়া চালের দাম আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার বাসমতি ছাড়া অন্য সব ধরনের চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছে। এর কারণ দেশীয় বাজারে মূল্যবৃদ্ধি এবং কর্তৃপক্ষ মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি এড়াতে চায়। ব্লুমবার্গকে এ তথ্য প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ব্যক্তিরা।
ভারতের সরকারের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ চাল রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। এ ধরনের পদক্ষেপ অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম কমাতে সহায়ক হলেও বিশ্বজুড়ে চালের দামে আরও বেশি উল্লম্ফনের ঝুঁকি তৈরি করবে।
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকেরই প্রধান খাবার ভাত। বিশ্বজুড়ে চাল সরবরাহের প্রায় ৯০ শতাংশের ভোক্তা এশিয়া। বৈরী আবহাওয়া এল নিনো ফিরে আসায় চালের উৎপাদন ব্যাহত হবে আশঙ্কায় ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে চালের দাম গত দুই বছরে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।
বিশ্বজুড়ে চাল বাণিজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশই যায় ভারত থেকে। দেশটির সরকার কিছু জাতের চালের রপ্তানিতে লাগাম টানার চেষ্টা করছে। গত বছর দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটি ভাঙা চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল। এরপর দেশটির সরকার সাদা এবং বাদামি চালের চালানোর ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। পাশাপাশি গম ও চিনির রপ্তানিও সীমিত করে ফেলে দেশটি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলেও দেশটির খাদ্য, বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ। বিশ্বের শতাধিক দেশে চাল সরবরাহ করে ভারত। দেশটির চালের বৃহত্তম ক্রেতারা তালিকায় রয়েছে আফ্রিকার দেশ বেনিন, চীন, সেনেগাল, কোট ডি’আইভরি এবং টোগো।
ইন্দোনেশিয়া, চীন এবং ফিলিপাইনের মতো আমদানিকারক কিছু দেশ চলতি বছরে অত্যন্ত আক্রমণাত্মক উপায়ে বিপুল পরিমাণ চাল মজুদ করছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) মতে, গত সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে ধান উৎপাদনের জন্য পরিচিত বিশ্বের কিছু অঞ্চলে ভয়াবহ খরার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা বিশ্ববাজারে চালের সরবরাহ নিয়ে সৃষ্ট উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
ভারতের বাজারে খাদ্যমূল্য ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধির কারণে গত জুন মাসে দেশটিতে ভোক্তা মূল্যস্ফীতির রেকর্ড হয়েছে। এরপরই দেশটির সরকার বিভিন্ন জাতের চালের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা নিয়েছে। দেশটির খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, চলতি বছর রাজধানী নয়াদিল্লিতে খুচরা চালের দাম প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর দেশ জুড়ে চালের দাম গড়ে প্রায় ৮ শতাংশ বেড়েছে। এ বছরের শেষের দিকে ভারতের কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তার আগে খাদ্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটির ক্ষমতাসীন সরকারের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে পারে বলে শঙ্কা করছেন অনেকে।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশে দুটি নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে পিকেএসএফের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে জাতিসংঘের গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ)। প্রায় ৫ কোটি ডলার তহবিল সংবলিত বাংলাদেশের অরক্ষিত উপকূলীয় মানুষের জন্য স্থিতিশীল বসতবাড়ি এবং জীবিকা সহায়তা (আরএইচএল) প্রকল্পটি উপকূলীয় অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জন্য অভিঘাত সহনশীল আবাসন নির্মাণে সহায়তা প্রদান এবং প্রায় ৩ কোটি ডলারের খরাসংক্রান্ত জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পটি খরাপ্রবণ অঞ্চলের মানুষের অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে অনুষ্ঠিত জিসিএফের ৩৬তম পর্ষদ সভায় প্রকল্প দুটির অনুমোদন দেওয়া হয়। জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জের আওতায় জিসিএফ গঠিত হয় এবং পিকেএসএফ বাংলাদেশে জিসিএফের ‘ডিরেক্ট একসেস এনটিটি (ডিএই)’ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান।
উপকূলীয় সাত জেলার প্রায় চার লাখ মানুষের সহনশীলতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পাঁচ বছর মেয়াদি আরএইচএল প্রকল্প জলবায়ু-সহিষ্ণু আবাসন নির্মাণ, লবণাক্ততা-সহিষ্ণু জীবিকায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে।
অন্যদিকে ইসিসিসিপি-খরা প্রকল্পের আওতায় উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খরাপ্রবণ তিন জেলার দুই লাখেরও বেশি মানুষের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, পুকুর ও খাল পুনর্খনন, খরাসহিষ্ণু শস্যবিন্যাস অনুসরণ ও উপযুক্ত শস্যের জাত বিতরণ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এর আগে জিসিএফের অর্থায়নে বাংলাদেশে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে পিকেএসএফ।
ব্যাংকে না গিয়ে কিংবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াই ঘরে বসে মুহূর্তেই বিকাশ অ্যাপ থেকে ব্যাংকের মাসিক সঞ্চয় সেবা নেওয়ার সুযোগ থাকায় নারীদের মধ্যে বাড়ছে সঞ্চয় প্রবণতা। কয়েক মুহূর্তেই বিকাশ অ্যাপ থেকে পছন্দমতো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয় সেবা খোলা, মাসিক কিস্তি জমা দেওয়াসহ সবকিছু হাতের মুঠোয় থাকায় সব শ্রেণির গ্রাহকের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই সেবা। বিশেষ করে নারীদের জন্য তৈরি করেছে বাড়তি সুবিধা। ফলে, ডিজিটাল এই সুবিধা নিয়ে এখন পর্যন্ত তিন লাখের বেশি নারী বিকাশের মাধ্যমে চারটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন মেয়াদের সঞ্চয় সেবা গ্রহণ করেছেন, নিশ্চিত করছেন তার এবং পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা।
বর্তমানে বিকাশ অ্যাপে সেভিংস সেবার মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ঢাকা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ও সিটি ব্যাংকের মাসিক সঞ্চয় সেবা নিতে পারছেন গ্রাহকরা। মাসিক ৫০০, ১,০০০, ২,০০০ এবং ৩,০০০ টাকা কিস্তিতে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ চার বছর মেয়াদে মাসিক সঞ্চয় সেবা নেওয়ার সুযোগ আছে বিকাশ অ্যাপ থেকে।
বিকাশ অ্যাপে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে, জমা দেওয়া, সঞ্চয়ের মেয়াদোত্তীর্ণ হলে বা ম্যাচিউরড হয়ে যাওয়ার পর মুনাফাসহ সম্পূর্ণ টাকা বিকাশ অ্যাপেই আনতে পারছেন গ্রাহকরা। এমনকি সঞ্চয়ের যেকোনো পর্যায়ে টাকা তুলে নিতে চাইলে তাও বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমেই করতে পারবেন গ্রাহক। প্রতি মাসে টাকা জমার তারিখের আগে অ্যাপে টাকা রাখার নোটিফিকেশনও পান গ্রাহক। আবার কত টাকা জমেছে, কতটুকু লাভ পাচ্ছেন তার লাইভ তথ্যও দেখে নিতে পারেন যখন ইচ্ছে। মুনাফাসহ সঞ্চয়ের টাকা ক্যাশ আউট করতে গ্রাহকের কোনো খরচও নেই। বিজ্ঞপ্তি
সাত বছর পর ভারতের মাটিতে অবতরণ পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে তারা গিয়েছিল সেখানে। তারপর এবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে। টুর্নামেন্ট শুরুর এক সপ্তাহ আগে তারা পৌঁছালেন দেশটিতে। সেখানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলে।
বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে।
বাবর আজমরা সেখানে পৌঁছানো মাত্রই উচ্ছ্বসিত জনতা ভিড় করেন। হায়দ্রবাদের বিমানবন্দরের বাইরে তাদের দেখে অনেকেই চিৎকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। বাবরের নাম উচ্চারণ করতও শোনা গেছে এসময়। পুলিশ উৎসুক জনতাকে আটকে রেখেছিল।
রাজনৈতিক বৈরি সম্পর্কের কারণে দুই দলের দেখা হয় না দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে। বিশ্ব মাতানো ক্রিকেটার থাকলেও পাকিস্তানিরা খেলতে পারে না আইপিএলে। কারণ ঐ একটাই। তবে বৈশ্বিক বা মহাদেশীয় ইভেন্টে তাদের ঘিরে আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। সেটা দেখা গেছে এশিয়া কাপেও।
বিশ্বকাপ খেলতে আজ বাংলাদেশ উড়াল দিয়েছে ভারতে। সেই টুর্নামেন্টে সেমিফাইনাল খেলার স্বপ্ন দেখে টাইগাররা। তামিম ইকবাল নেতৃত্ব ছাড়ার পর সাকিব আল হাসানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে অধিনায়কত্বের ভার। আর আজই জানা গেল, বিশ্বকাপের পর একদিনও তিনি অধিনায়কত্ব করবেন না।
গত ১১ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান। তখনই বলা হয়েছিল, সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপ ও ভারত বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি।
দেশের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘এই বিশ্বকাপই শেষ। এরপর একদিনও (অধিনায়কত্ব) করবো না। যে কারণে আমি এশিয়া কাপের আগে নিতে চাইনি। এরপরও এটা না। আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হাসতে চাই, খেলতে চাই, পারফর্ম করতে চাই। এই একটা কারণে আমি করতে চাইনি।’
সাকিব যোগ করেন, ‘আর কোনে কারণ নেই। বেস্ট হয় যদি অধিনায়ক না থাকি। অধিনায়কত্ব কি আমার কোনো ভেল্যু এড করতেছে ক্যারিয়ারে এই স্টেজে এসে? আমি তো মনে করি না।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
বিশ্বকাপে তামিম ইকবালকে ওপেন থেকে সরিয়ে মিডল অর্ডারে ব্যাট করার প্রস্তাব দিয়ে ফোন করেছিলেন, তামিমের ভাষায় 'বোর্ডের টপ লেভেল' এবং 'ক্রিকেটের সাথে বেশ ইনভলভড' একজন।
তিনি তামিমকে বলেন, ''তুমি তো বিশ্বকাপে যাবা, তোমাকে তো ম্যানেজ করে খেলতে হবে। তুমি এক কাজ করো। তুমি প্রথম ম্যাচ খেলো না আফগানিস্তানের সঙ্গে।'
তিনি আবার বলেন, আচ্ছা তুমি যদি খেলোও, আমরা এমন একটা পরিকল্পনা করছি, তুমি যদি খেলোও, তাহলে নিচে ব্যাট করবে।''
তামিমের এমন বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে, কেই সেই বোর্ড কর্মকর্তা? এক টিভি সাক্ষাৎকারে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'আমি এটা জানিনা।'
পরক্ষণেই তিনি বলেন, 'তবে যদি কেউ বলে থাকে, আমি সিউর তিনি অথোরাইজড পার্সন। আর এরকম কিছু বলে থাকলে আমি খারাপ কিছু বলেছে বলে আমি মনে করিনা। টিমের কথা চিন্তা করেই বলেছে। টিম কম্বিনেশন নিয়ে কথা বলে থাকলে দোষের কি আছে। আমার তো মনে হয় না দোষের কিছু আছে। নাকি এরকম কোনো প্রস্তাব দেয়া যাবে না। নাকি আপনি যা চাইবেন তাই করতে পারবেন?।'
বিশ্বমঞ্চে দেশের ক্রিকেটের দূত বলা যায় সাকিব আল হাসানকে। বর্ণিল এক ক্যারিয়ার গড়েছেন তিনি। তিন ফরম্যাটেই তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। দেশের এই তারকা ক্রিকেটার নিজের পঞ্চম বিশ্বকাপে যাচ্ছেন দলের অধিনায়ক হিসেবে। সেই টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই জানা গেল কবে তিনি অবসর নিচ্ছেন।
দেশের একটি ক্রীড়াভিত্তিক টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের অবসরের সময় জানিয়েছেন। তার ইচ্ছে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর অবসর ঘোষণা করার। একইসঙ্গে তিন ফরম্যাটকে বিদায় জানাতে চান দেশের ক্রিকেটের এই তারা।
নেতৃত্ব ছাড়া ও অবসরের প্রসঙ্গ টেনে সাকিব বলেন, ‘আজকে এখন এই অবস্থায় বলছি, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত ওয়ানডে খেলবো। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে টি-টোয়েন্টিকে বিদায় দেবো। টেস্টের অবসর শিগগিরই। তবে একেক ফরমেট একেক সময় ছাড়লেও আনুষ্ঠানিক অবসর ঘোষণা করবো ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর।’
অধিনায়কত্ব নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দলে পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলার ও ছিল না! কারন পরের দিনে সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকী রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা! মানুষের সাইলকোলজি এমন কেনও! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!’
সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপের আগে একাধিক সিরিজে বিশ্রামের কথা বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলের বাইরে রাখা হয়। শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপেও দলে ফেরানো হয়নি তাকে। যেহেতু সাকিবের নেতৃত্বে সেই আসরে খেলেছে বাংলাদেশ, তাই অনেকের ধারণা সাকিবের চাওয়াতেই দলের বাইরে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে সাকিব এসব কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমার অধিনায়কত্ব নেওয়ার ইচ্ছা ছিল না! আমি কখনও ভাবিও নাই কেউ ওই সময় অধিনায়ক ছেড়ে দিবে! তারপর আমাকে এশিয়া কাপের দল পাঠালো! আমি দেখলাম রিয়াদ ভাই দলে নেই! আমার কিছু বলারও ছিল না! কারন পরের দিন সবাই রওনা দিয়েছে! আমাকে সবাই বলতেছে আমি নাকি রিয়াদ ভাইকে নেইনি! এইসব হাস্যকর কথা!'
দলের ভেতরের কথা ভালোভাবে না জেনেই মানুষ যেভাবে সমালোচনা করে সেটাকে হাস্যকর বলেছেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক সমালোচকদের মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, 'মানুষের সাইলকোলজি এমন কেন! আমি কিছু জানি না! তাও আমার দোষ দেওয়া হয়েছে!'
অধিনায়ক একা যে দল নির্বাচন করেন না সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, 'রিয়াদ ভাইয়ের যে ডেডিকেশন ছিল তার দলের প্রতি যে অবদান ছিল। দলের হয়ে খেলার যে ইচ্ছে ছিল, সবকিছু সবাই দেখতে পেরেছে। আমার দায়িত্বতো পুরো দলটা নির্বাচন করার না। এমনটা হলে এশিয়া কাপের একদিন পরেই এনাউন্স করে দল দিয়ে দিতে পারতাম। এটা অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেক বিষয় চিন্তা করতে হয়। অনেক কিছু চিন্তা করে দলটা গড়তে হয়।'
পুলিশের পদোন্নতির তালিকায় থাকা পদ কাটছাঁট করায় অসন্তোষ কমছে না। এ নিয়ে পুলিশ কর্তারা একাধিক বৈঠক করছেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে এলে পদোন্নতি নিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। পুলিশের অসন্তোষ ঠেকাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগও নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিকেলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে পদোন্নতির পদ আরও বাড়াতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠি পেয়ে জনপ্রশাসনও কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, পদোন্নতির সংখ্যাটি প্রধানমন্ত্রী ঠিক করে দিয়েছিলেন। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে পুলিশকে বিব্রত করেছে। অন্য ক্যাডাররা একের পর এক পদোন্নতি পেলেও পুলিশ পিছিয়ে আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিনিয়র সচিব আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।
এদিকে ক্যাডারদের পাশাপাশি নন-ক্যাডারদেরও পদোন্নতির বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। ইতিমধ্যে সাব-ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরদের পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে পুলিশ সদর দপ্তর বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে। পদোন্নতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তিন দিন আগে পদোন্নতি পেতে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। ওই সময় রাজধানীর ৫০ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ও আইজিপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পুলিশের ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের পদোন্নতির বিষয়ে আমরা কাজ করছি। যাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্যতা আছে তারা অবশ্যই পদোন্নতি পাবেন। বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির পদ বাড়াতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করি শিগগির বিষয়টি সুরাহা হবে। নন-ক্যাডারদের কর্তারাও কিছুদিন আগে আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের বিষয়টিও সমাধান হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পুলিশের জন্য যা করেছে, অতীতের কোনো সরকারই তা করেনি। পুলিশের কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পুুলিশের পদোন্নতির তালিকা কাটছাঁটের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইজিপিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওইদিন বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পুলিশের পদোন্নতির বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুর-এ- মাহবুবা জয়া।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ রাষ্ট্রের আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাবাহিনী প্রধানতম বাহিনী, যা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত। নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পেশাদায়িত্ব ও শৃঙ্খলা রক্ষায় তদারকি ও ব্যবস্থাপনা এ বাহিনীর নেতৃত্বের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব প্রদানে পুলিশ সুপার থেকে তদূর্ধ্ব পদে পর্যাপ্তসংখ্যক পদ এবং দক্ষ জনবল থাকা বাঞ্ছনীয়। পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক (গ্রেড-৩) ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (গ্রেড-২) তুলনামূলক কম। বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকে (বিদ্যমান পদে অতিরিক্ত) অতিরিক্ত উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে উপপুলিশ মহাপরিদর্শক এবং উপপুলিশ মহাপরিদর্শক হতে অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদোন্নতি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হবে। প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদানের জন্য পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপারনিউমারারি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃজনের প্রস্তাবে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) থেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পর্যন্ত ৭২০ কর্মকর্তার পদোন্নতি পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল পুলিশ সদর দপ্তর। তালিকাটি সংশোধন করতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। পরে পুলিশ সদর দপ্তর ৫২৯টি পদ চূড়ান্ত করে আরেকটি তালিকা পাঠায়। সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন।
ওই কর্মকর্তা বলেন, গত ১ আগস্ট এ প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় তালিকা কাটছাঁট করেছে। অতিরিক্ত আইজিপি পদে দুজন, ডিআইজি পদে ৫০ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি পদে ১৪০ ও পুলিশ সুপার পদে ১৫০ জনকে পদোন্নতি দিতে ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় জনপ্রশাসন। পুলিশের তালিকায় ছিল অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) ১৫, অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-২) ৩৪, ডিআইজি ১৪০, অতিরিক্ত ডিআইজি ১৫০ ও এসপি ১৯০ পদে পদোন্নতি দিতে। এ তালিকা কাটছাঁট হওয়ায় পুলিশে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ অসন্তোষ এখনো অব্যাহত আছে। অসন্তোষ ঠেকাতে আবার জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পুলিশে সংখ্যাতিরিক্ত (সুপারনিউমারারি) পদোন্নতিতে অতিরিক্ত আইজিপি, ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি ও এসপি পদে পদোন্নতির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫২৯টি সুপারনিউমারারি পদ সৃষ্টি করতে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন। পদোন্নতির বিষয়ে সিগন্যাল আসার পর ২০ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে এ-সংক্রান্ত একটি সভা হয়েছিল। সভায় অতিরিক্ত সচিবসহ (পুলিশ ও এনটিএমসি) পুলিশের মহাপরিদর্শক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, পুলিশে বর্তমানে একজন অতিরিক্ত আইজিপির পদ খালি রয়েছে। সুপারনিউমারারি পদে অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে ১৫ ও ১৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮, ২০, ২১, ২২ ও ২৪তম ব্যাচের প্রায় সবাই ডিআইজি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। পাশাপাশি ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের এসপি হিসেবে পদোন্নতির বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, নন-ক্যাডাররা পদোন্নতি পাবেন। সাব-ইন্সপেক্টর থেকে ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টর থেকে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সুপারনিউমারারি পদে বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতোই নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা হবে। ইন্সপেক্টর থেকে এএসপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কারা পাবেন তার তালিকা তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলো ছিল পুলিশ পরিদর্শকদের (ইন্সপেক্টর) ১০ বছর পূর্তিতে ষষ্ঠ গ্রেড দেওয়া। ১০ বছর পূর্তিতে ব্যাজ থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রেড পরিবর্তন করা। ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতি না হলে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া। সাব-ইন্সপেক্টরদের (এসআই) ক্ষেত্রেও একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে এসআই/সার্জেন্ট পদটি দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তাদের র্যাংক ব্যাজের নীল বা লাল ফিতা তুলে নেওয়া। কনস্টেবলদের বিভাগীয় পরীক্ষায় একবার পাস করলে সেখান থেকে প্রমোশন লিস্ট করে ক্রমান্বয়ে পদোন্নতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে মন্ত্রীর কাছে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বাংলাদেশের কিছু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর আজ শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী ব্যক্তিদের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপের পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করার ঘোষণা পর তিনি এ তথ্য জানান। তবে কতজনের ওপর এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তা তিনি জানাননি ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘আমরা যখন এই ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার ঘটনাবলির ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে। সতর্কতার সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনার পর আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের সদস্য ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছি।’
মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এসব ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় আসা ব্যক্তিদের নাম আমরা প্রকাশ করব না।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ভিসা রেকর্ড গোপনীয়।
ব্রায়ান শিলার এই কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ (শুক্রবার) স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত থাকা বাংলাদেশি ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার পদক্ষেপ নিচ্ছে। এ ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলের সদস্য রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয় তার সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে প্রমাণিত অতিরিক্ত ব্যক্তিরাও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে। এর মধ্যে বর্তমান এবং প্রাক্তন বাংলাদেশী কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমাদের আজকের পদক্ষেপগুলি শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করার জন্য এবং বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চায় তাদের সমর্থন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।’
মে মাসে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে ভিসানীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্থনি ব্লিংকেন ওই ঘোষণা দেন।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।