বিজিএমইএ নির্বাচন: ফোরামের নতুন নেতা এ বি এম সামছুদ্দিন
আরিফুর রহমান তুহিন | ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:২৮
শেষ পর্যন্ত প্যানেল নেতা খুঁজে পেল পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা ফোরাম। সংগঠনটির সাবেক সহসভাপতি ও হান্নান গ্রুপের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম সামছুদ্দিনের নেতৃত্বে সম্মিলিত পরিষদের ফারুক হাসানের বিপক্ষে লড়বে ফোরাম। ফারুক হাসান জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর ভুতপূর্ব সহসভাপতি। আগামী ৪ এপ্রিল নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
ফোরাম নেতারা জানিয়েছেন, আগামী দু’একদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেল ঘোষণা করা হবে। প্যানেলে বর্তমান বোর্ডের ফোরামের অধিকাংশ সদস্যই থাকছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন এক ঝাঁক তরুণ ও খ্যাতনামা রপ্তানিকারক।
ফোরাম নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান সভাপতি ড. রুবানা হক আগামী নির্বাচনে প্যানেল লিডার হতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ সময়ে এসে বেকে বসেন। যদিও রুবানা হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেছেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ ফোরাম নেতাদের ইচ্ছাধীন। তিনি বর্তমানে সব সদস্যের সভাপতি।
ফোরামের সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্যানেল নেতা হিসেবে সামছুদ্দিন সাহেবকে মনোনীত করেছি। এখন আমরা প্যানেল গোছানো ও নির্বাচনি কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। দু’একদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেল ঘোষণা করা হবে।’
প্যানেলে কারা থাকছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এতদিন যেহেতু সমঝোতার ভিত্তিতে বোর্ড চলছে তাই স্বাভাবিকভাবেই উভয় পক্ষকে (সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম) অন্তত ৪০ শতাংশ নতুন প্রার্থী দিতে হবে। আমাদের ক্ষেত্রেও তেমনই হবে।’
প্যানেল নেতা হিসেবে এ বি এম শামসুদ্দিনের মতামত জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি গত ২ বোর্ডে না থাকলেও বিজিএমইএতে আমি নতুন না। ১৯৯৬ সাল থেকে বিজিএমইএর সঙ্গে আছি। আমি যখন সহসভাপতি ছিলাম তখন দেশে সামরিক সরকার ছিল। দেশের পোশাক খাতে প্রথম ধাক্কাটা ওই সময়েই এসেছিল। আমি সে সময়ে আমার দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করেছি। আমি বিশ্বাস করি সম্মানিত সদস্যরা আমাকে ও আমার প্যানেলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।’
ফোরাম নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত নির্বাচন থেকেই ফোরামের মধ্যে একটা বিভক্তি চলে আসছিল। বিজিএমইএ নির্বাচনে মূলত দুটি পক্ষ অংশ নেয়। রানা প্লাজা ধ্বসের পর শিল্পের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের নির্বাচনে ফোরাম থেকে সভাপতি হয়। প্রয়াত মেয়র ও বিজিএমইএর সভাপতি আনিসুল হক ছিলেন ফোরাম সভাপতি। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রূপা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল ইসলাম প্যানেল নেতা হওয়ার কথা। তবে নাটকীয়ভাবে প্যানেল ঘোষণার সময় আনিসুল হকের স্ত্রী ড. রুবানা হককে প্যানেল লিডার ঘোষণা করা হয়। ততদিনে আনিসুল হক বেঁচে ছিলেন না। এর পর থেকে প্যানেল দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
আগামী নির্বাচনে কে ফোরামের প্যানেল লিডার হবেন তা নিয়ে আবারো বিপত্তি বাধে। একটি পক্ষ চাইছিলেন শহীদুল ইসলাম এবার নির্বাচনে নেতৃত্বে দিক। তবে আরেকটি অংশ রুবানা হককেই পুনরায় প্যানেল নেতা করতে চেয়েছিলেন। এসব নিয়ে যখন টানাটানি চলছিল ঠিক তখনই রুবানা হক পর্ষদ ৬ মাস মেয়াদ বাড়ানোর বিল পাশ করে। তবে সাবেক সভাপতিরা এতে আপত্তি জানায়। বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রীও যেহেতু সাবেক সভাপতিদের একজন তাই মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনটি আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাননি রুবানা পর্ষদ।
ফোরাম নেতারা জানিয়েছেন, মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নিয়ে আপত্তি ওঠার পর থেকে প্যানেল লিডার হতে আপত্তি জানায় রুবানা হক। এরপর ফোরাম নেতারা শহীদুল ইসলামের কাছে যায়। প্রায় দুই বছর শহীদুল ইসলামের খোঁজ না নিয়ে নির্বাচনের মাত্র ৩ মাস আগে প্যানেল নেতা করতে যাওয়ায় তিনিও ক্ষুদ্ধ হন। তিনি ফোরামকে জানান, ‘সভাপতি হওয়ার জন্য নয়, ব্যবসা, দেশ ও সম্মানের জন্য রাজনীতি করি। এবার আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না।’ এরপর বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ ও সহসভাপতি (অর্থ) এম এ রহিমকেও প্যানেল নেতা হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ সময়ে এসে কেউ এই ঝুঁকি নিতে রাজি হননি। সবশেষ এ বি এম সামছুদ্দিনকে প্যানেল নেতা মনোনিত করা হয়। নির্বাচনী প্রচারে ফোরামের ক্ষুদ্ধ অংশ থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। তবে এদের কেউই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। যদিও ফোরাম থেকে অন্তত শহীদুল ইসলামকে প্রার্থী করার বিষয়ে জোর চেষ্টা চলছে।
ফোরাম মহাসচিব ও বিজিএমইএর পরিচালক আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ‘ছোটখাটো দ্বন্দ্ব পরিবারের মধ্যেও থাকে। এগুলো সব দূর হয়ে গেছে। এখন আমরা সবাই একসাথে। সামছুদ্দিন সাহেব করোনাকালে বোর্ডে না থেকেও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছিলেন। আমাদের প্যানেলে ফোরামের পক্ষ থেকে বর্তমান বোর্ডে যারা আছেন তাদের অধিকাংশই থাকছেন। এছাড়া দেশের শীর্ষ রপ্তানিকারকদের নিয়েই এবারের প্রার্থী তালিকা করতে যাচ্ছি। সামছুদ্দিন সাহেব অভিজ্ঞ মানুষ। আমরা বিশ্বাস করি, ভোটাররা অভিজ্ঞতার দাম দেবেন।’
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
আরিফুর রহমান তুহিন | ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:২৮

শেষ পর্যন্ত প্যানেল নেতা খুঁজে পেল পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা ফোরাম। সংগঠনটির সাবেক সহসভাপতি ও হান্নান গ্রুপের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম সামছুদ্দিনের নেতৃত্বে সম্মিলিত পরিষদের ফারুক হাসানের বিপক্ষে লড়বে ফোরাম। ফারুক হাসান জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএর ভুতপূর্ব সহসভাপতি। আগামী ৪ এপ্রিল নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
ফোরাম নেতারা জানিয়েছেন, আগামী দু’একদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেল ঘোষণা করা হবে। প্যানেলে বর্তমান বোর্ডের ফোরামের অধিকাংশ সদস্যই থাকছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন এক ঝাঁক তরুণ ও খ্যাতনামা রপ্তানিকারক। ফোরাম নেতারা জানিয়েছেন, বর্তমান সভাপতি ড. রুবানা হক আগামী নির্বাচনে প্যানেল লিডার হতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ সময়ে এসে বেকে বসেন। যদিও রুবানা হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেছেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ ফোরাম নেতাদের ইচ্ছাধীন। তিনি বর্তমানে সব সদস্যের সভাপতি।
ফোরামের সভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্যানেল নেতা হিসেবে সামছুদ্দিন সাহেবকে মনোনীত করেছি। এখন আমরা প্যানেল গোছানো ও নির্বাচনি কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি। দু’একদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেল ঘোষণা করা হবে।’
প্যানেলে কারা থাকছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এতদিন যেহেতু সমঝোতার ভিত্তিতে বোর্ড চলছে তাই স্বাভাবিকভাবেই উভয় পক্ষকে (সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম) অন্তত ৪০ শতাংশ নতুন প্রার্থী দিতে হবে। আমাদের ক্ষেত্রেও তেমনই হবে।’
প্যানেল নেতা হিসেবে এ বি এম শামসুদ্দিনের মতামত জানতে চাইলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি গত ২ বোর্ডে না থাকলেও বিজিএমইএতে আমি নতুন না। ১৯৯৬ সাল থেকে বিজিএমইএর সঙ্গে আছি। আমি যখন সহসভাপতি ছিলাম তখন দেশে সামরিক সরকার ছিল। দেশের পোশাক খাতে প্রথম ধাক্কাটা ওই সময়েই এসেছিল। আমি সে সময়ে আমার দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে পালন করেছি। আমি বিশ্বাস করি সম্মানিত সদস্যরা আমাকে ও আমার প্যানেলকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।’
ফোরাম নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত নির্বাচন থেকেই ফোরামের মধ্যে একটা বিভক্তি চলে আসছিল। বিজিএমইএ নির্বাচনে মূলত দুটি পক্ষ অংশ নেয়। রানা প্লাজা ধ্বসের পর শিল্পের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের নির্বাচনে ফোরাম থেকে সভাপতি হয়। প্রয়াত মেয়র ও বিজিএমইএর সভাপতি আনিসুল হক ছিলেন ফোরাম সভাপতি। তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রূপা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল ইসলাম প্যানেল নেতা হওয়ার কথা। তবে নাটকীয়ভাবে প্যানেল ঘোষণার সময় আনিসুল হকের স্ত্রী ড. রুবানা হককে প্যানেল লিডার ঘোষণা করা হয়। ততদিনে আনিসুল হক বেঁচে ছিলেন না। এর পর থেকে প্যানেল দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
আগামী নির্বাচনে কে ফোরামের প্যানেল লিডার হবেন তা নিয়ে আবারো বিপত্তি বাধে। একটি পক্ষ চাইছিলেন শহীদুল ইসলাম এবার নির্বাচনে নেতৃত্বে দিক। তবে আরেকটি অংশ রুবানা হককেই পুনরায় প্যানেল নেতা করতে চেয়েছিলেন। এসব নিয়ে যখন টানাটানি চলছিল ঠিক তখনই রুবানা হক পর্ষদ ৬ মাস মেয়াদ বাড়ানোর বিল পাশ করে। তবে সাবেক সভাপতিরা এতে আপত্তি জানায়। বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রীও যেহেতু সাবেক সভাপতিদের একজন তাই মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনটি আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাননি রুবানা পর্ষদ।
ফোরাম নেতারা জানিয়েছেন, মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন নিয়ে আপত্তি ওঠার পর থেকে প্যানেল লিডার হতে আপত্তি জানায় রুবানা হক। এরপর ফোরাম নেতারা শহীদুল ইসলামের কাছে যায়। প্রায় দুই বছর শহীদুল ইসলামের খোঁজ না নিয়ে নির্বাচনের মাত্র ৩ মাস আগে প্যানেল নেতা করতে যাওয়ায় তিনিও ক্ষুদ্ধ হন। তিনি ফোরামকে জানান, ‘সভাপতি হওয়ার জন্য নয়, ব্যবসা, দেশ ও সম্মানের জন্য রাজনীতি করি। এবার আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না।’ এরপর বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফয়সাল সামাদ ও সহসভাপতি (অর্থ) এম এ রহিমকেও প্যানেল নেতা হওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ সময়ে এসে কেউ এই ঝুঁকি নিতে রাজি হননি। সবশেষ এ বি এম সামছুদ্দিনকে প্যানেল নেতা মনোনিত করা হয়। নির্বাচনী প্রচারে ফোরামের ক্ষুদ্ধ অংশ থাকবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। তবে এদের কেউই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। যদিও ফোরাম থেকে অন্তত শহীদুল ইসলামকে প্রার্থী করার বিষয়ে জোর চেষ্টা চলছে।
ফোরাম মহাসচিব ও বিজিএমইএর পরিচালক আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ‘ছোটখাটো দ্বন্দ্ব পরিবারের মধ্যেও থাকে। এগুলো সব দূর হয়ে গেছে। এখন আমরা সবাই একসাথে। সামছুদ্দিন সাহেব করোনাকালে বোর্ডে না থেকেও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ছিলেন। আমাদের প্যানেলে ফোরামের পক্ষ থেকে বর্তমান বোর্ডে যারা আছেন তাদের অধিকাংশই থাকছেন। এছাড়া দেশের শীর্ষ রপ্তানিকারকদের নিয়েই এবারের প্রার্থী তালিকা করতে যাচ্ছি। সামছুদ্দিন সাহেব অভিজ্ঞ মানুষ। আমরা বিশ্বাস করি, ভোটাররা অভিজ্ঞতার দাম দেবেন।’