
প্রায় তিন বছর ধরে প্রি-পেইড মিটারের মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহার করছিলেন ঢাকার মোহাম্মদপুরের মনসুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মাহনুর ইসলাম লিজা। চলতি মাসে টাকা রিচার্জ করতে গেলে গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয় এখন থেকে তাকে পোস্ট পেইড বিল দিতে হবে। কী কারণে তাকে প্রি-পেইড থেকে পোস্ট পেইডে যেতে হলো তাও জানেন না তিনি। তবে তাকে এখন একই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করেও প্রায় দ্বিগুণ টাকা গুনতে হবে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের এমন খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের কারণে লিজার মতো ওই এলাকার কয়েক হাজার গ্রাহক এখন চরম ভোগান্তির শিকার।
ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠন ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, তিতাসের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। এগুলো দীর্ঘদিনের। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এখন তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, ‘তারা (তিতাস) নিজেরা মিটার দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে। আমরা বারবার বলেছি মিটার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হোক, যাতে গ্রাহক পছন্দমতো মিটার কিনতে পারেন। কিন্তু তা না করে গ্রাহককে জিম্মি করা হয়েছে। এখন তারা গ্যাস দেবে না। উল্টো গ্যাসের দাম আদায় করবে। এটা ভয়ংকর রকমের অপরাধ। তিতাস গ্রাহককে লুণ্ঠন করছে নানা উপায়ে। ২০১৫ সালের কমিশনের আদেশে সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার কথা বলা হলেও তারা তা পারেনি। এগুলো ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।’
তিতাস গ্যাসের গ্রাহক মাহনুর ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত বৃহস্পতিবার তার বাসায় গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারে টাকা রিচার্জ করতে ব্যাংকে গেলে তাকে একটি নোটিস দেখানো হয়। তাতে লেখা সাময়িকভাবে তিতাসের কার্ড রিচার্জ বন্ধ। ওই নোটিসে উল্লেখ করা যোগাযোগ নম্বরে ফোন দেওয়ার পর শনিবার তিতাস গ্যাসের কর্মী তার বাসায় গিয়ে প্রি-পেইড মিটারটি খুলে পোস্ট পেইড সংযোগ দিয়ে দেন। এজন্য কিছু টাকাও তাকে দিতে হয়েছে।
ভুক্তভোগী মাহনুর বলেন, ‘ইচ্ছে হলো মিটার লাগাবে আবার খুলবে এটা কোন ধরনের কথা? কারিগরি কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হলে গ্রাহক হিসেবে তা জানার অধিকার আমার আছে। কিন্তু তিতাস কর্তৃপক্ষ আগে-পরে এখন পর্যন্ত কিছুই জানায়নি। এমনকি কবে নাগাদ প্রি-পেইড মিটার ফিরে পাব কিংবা আদৌ পাব কি না তাও জানি না।’
‘এক হাজার টাকা রিচার্জ করলে দুই মাস বা কখনো কখনো তারও বেশি সময় ধরে গ্যাস ব্যবহার করতে পারি। আর এখন আমাকে একই পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে প্রতি মাসে প্রায় ১১শ টাকা দিতে হবে। কারণ পোস্ট পেইডে বিল ফিক্সড। তিতাসের কারণে কেন আমাকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে’ যোগ করেন তিনি।
ওই এলাকার আরেক ভুক্তভোগী লিলি জানান, তিনিও আগে থেকে কিছুই জানতেন না। কার্ড রিচার্জ করতে গেলে তাকে গ্যাসের পোস্ট পেইড সংযোগ দেওয়া হয়। ফলে তাকে এখন থেকে প্রতি মাসে দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে।
গত জানুয়ারি থেকে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে ধানমণ্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকার একাধিক বাসিন্দার অভিযোগ, এমনিতেই ঠিকমতো গ্যাস পাওয়া যায় না। তার ওপর এখন আবার বাড়তি টাকা গুনতে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী সেবায় কোনো ব্যাঘাত ঘটলে তা আগে থেকেই মাইকিং করে কিংবা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গ্রাহককে জানানোর কথা থাকলে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ তা করেনি বলে অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দাদের।
জানতে চাইলে তিতাসের মেট্রো ঢাকা বিপণন ডিভিশন (উত্তর) এর মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইমাম উদ্দীন শেখ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সার্ভারে সমস্যার কারণে ৮ হাজার ৬শ গ্রাহক এ ধরনের সমস্যার মুখে পড়েছেন। সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির কাজ শুরু হবে। তবে সমাধানের আগ পর্যন্ত গ্রাহককে পোস্ট পেইড গ্রাহকদের মতো প্রতি মাসে নির্ধারিত বিল পরিশোধ করতে হবে।’
কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান হবে তা জানতে চাইলে তিনি তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি।
ইমাম উদ্দীন সার্ভার জটিলতার কথা বললেও তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ মোল্লাহ্ জানালেন মিটারের সমস্যার কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, একেবারে শুরুর দিকে পাইলটিং প্রকল্পের আওতায় ওই মিটারগুলো সরবরাহ করা হয়েছিল। এখন তাতে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ওই মিটার আর আমদানি করা হচ্ছে না। ফলে নতুন করে আবার মিটার স্থাপন করা হবে। ধারাবাহিকভাবে এই কাজ করতে কিছুটা সময় লাগবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাসের দু’জন কর্মকর্তা জানান, যে কোম্পানির কাছ থেকে ওই সেবা নেওয়া হয়েছিল তারা এখন আর এ ধরনের ব্যবসা করে না। ফলে ওই কোম্পানির কাছ থেকে কোনো সাপোর্ট নেওয়া যাচ্ছে না। নতুন করে এক লাখ প্রি-পেইড মিটার আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো আসার ওপর তা পর্যায়ক্রমে ওইসব গ্রাহকদের দেওয়া হবে।
কবে নাগাদ এই মিটার আনা হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি কেউ। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি এখনো অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। অনুমোদন পাওয়া ও অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষ করে মিটার আমদানি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
এদিকে তিতাসের অপর এক কর্মকর্তা জানান, গ্যাসের প্রি-পেইড মিটারগুলোর স্থায়িত্ব ২০ বছর। প্রতি মাসে মিটার ভাড়া বাবদ ১০০ টাকা করে নেওয়া হয় গ্রাহকের কাছ থেকে। কিন্তু ৩-৪ বছরের মধ্যে এসব মিটার অকেজো হয়ে যাওয়াকে অস্বাভাবিক বলে মনে করেন তিনি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য (পেট্রোলিয়াম) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন। কারিগরি কারণে কোনো সমস্যা হলে যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেবেন।
বর্তমানে একজন পোস্ট পেইড গ্রাহককে দুই চুলার জন্য নির্দিষ্ট হারে প্রতি মাসে ১ হাজার ৮০ টাকা এবং এক চুলার জন্য ৯৯০ টাকার বিল দিতে হয়। সাধারণত একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার হয় তার চেয়ে বেশি হিসাব ধরে দাম নির্ধারণের কারণে গ্রাহকের প্রায় দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয়। অনেক সময় পুরো মাসে কোনো গ্যাস ব্যবহার না করেও বিল দিতে হয় একই পরিমাণে। কিন্তু প্রি-পেইড গ্রাহককে ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে বিল পরিশোধ করতে হয়।
এদিকে গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়া, গ্যাসের অপচয় রোধসহ নানা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও দেশে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন কার্যক্রম চলছে খুবই ধীরগতিতে।
২০২৫ সালের মধ্যে আবাসিক গ্রাহকদের শতভাগ প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। ২০১১ সালে এই কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত তিতাসের মাত্র ৩ লাখ ২৮ হাজার আবাসিক গ্রাহক এই সুবিধার আওতায় এসেছে। অথচ এ খাতে প্রতিষ্ঠানটির মোট গ্রাহক রয়েছে ২৮ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৮ জন। গত ৬ মাসের বেশি সময় ধরে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
দ্রুত গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটার দিতে বিতরণ কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) তাগিদ দিয়েছে একাধিবার। প্রি-পেইড মিটারের ধীরগতি নিয়ে কয়েক দফা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি।
২০২১ সালে বিইআরসির এক হিসাবে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে। মিটার বসানো হলে এই চুরি ঠেকানো সহজ হয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, প্রি-পেইড মিটার বসালে গ্রাহকপ্রতি গড়ে অন্তত ৩০ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে। এতে গ্রাহকের আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি দেশে চলমান গ্যাস সংকটও কিছুটা কমবে।
অভিযোগ উঠেছে তিতাসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ আয় যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য প্রি-পেইড মিটার স্থাপনে গড়িমসি করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক কারণে দেশের বাজারে পণ্যের দামের বাড়ন্ত অবস্থা ঠেকাতে আগামী বাজেটে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং সরকারের আয় বাড়াতে ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মানতে গিয়ে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে অনেক খাতে খরচ বাড়বে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।
নির্বাচনের আগের শেষ বাজেট হওয়ায় ব্যবসায়ীদের খুশি করতেও কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতায় তার সুফল কতটা মিলবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের আয় বাড়েনি বললেই চলে। আগামী বাজেটে আয় বাড়াতে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। এতে অনেক খাতে খরচ আরও বাড়বে। নির্বাচনের আগে শেষ বাজেট হওয়ায় নির্বাচনী চমক হিসেবেও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বৈশ্বিক কারণে এসবের সুফল পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা একবার দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা শুরু করলে তা আর কমাতে চায় না।’
গত মাস ছয়েক ধরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৮-৯ শতাংশের ঘরে। সরকার দাম কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও সেসবের সুফল তেমন পাওয়া যায়নি। এক বছর ধরে সব ধরনের চালের দাম বেশি। আটা, ময়দা, চিনি, ভোজ্য তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ। দাম বাড়তি বলে মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ অনেক খাবার সাধারণ আয়ের পরিবারগুলো খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতেও আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, চিনি, ফল, লবণের দাম কমানোর চেষ্টা করা হয়নি।
আইএমএফের শর্তে রাজস্ব সুবিধা কমানোয় পাউরুটি, বিস্কুট, সাবান, শ্যাম্পু, প্রক্রিয়াজাত খাবারের দাম বাড়বে। ভ্যাটের হার বাড়ানোয় মিষ্টির দামও বাড়বে। দেশে উৎপাদিত জুতা, স্যান্ডেলের দাম কমানো হচ্ছে না। আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়বে। আগামী অর্থবছরেও চেইন শপ থেকে পণ্য কিনতে হলে ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশের সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ বাড়তি দিতে হবে ক্রেতাকে। খামারে চাষ করা ৩০ লাখ টাকার বেশি মাছ বিক্রিতে ১৫ শতাংশ রাজস্ব থাকছে। একই সঙ্গে বড় মাছ আমদানিতেও সম্পূরক শুল্ক আসছে। শুল্ক-করের মারপ্যাঁচে আমদানিকৃত ও দেশে চাষ করা বড় মাছের দাম কমানোর সুযোগ থাকছে না। আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট প্রস্তাব ও প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী অর্থবছরে মোবাইল ব্যবহারে খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশি কোম্পানির মোবাইলের উৎপাদন পর্যায়ে তিন স্তরে ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নিজেরা যন্ত্রপাতি বানিয়ে উৎপাদন করলে ৩ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। সংযোজন করলে দুভাবে ভ্যাট আরোপ হবে। কমপক্ষে দুটি যন্ত্রাংশ নিজেরা বানিয়ে মোবাইল উৎপাদন করলে ৫ শতাংশ এবং সব যন্ত্রাংশ আমদানি করে সংযোজন করলে সাড়ে ৭ থেকে ১০ শতাংশ ভ্যাট বসতে পারে। অন্যদিকে ফ্রিজ তৈরির উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানি এবং স্থানীয় ক্রয়ের ক্ষেত্রে কর ছাড় সুবিধা রয়েছে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ সুবিধা বাড়ানো না হলে এ পণ্যের দামও বাড়বে। আমদানিকৃত মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেলের দাম কমাতে কিছু থাকছে না। আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার প্রভাব এড়াতে বাজেটে কিছু না থাকায় দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিলে ভ্রমণকর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সব ধরনের পরিবহনে যাতায়াতে খরচ বাড়ছে। আগামী বাজেটে গাড়ির মালিকদের খরচ অনেকটা বাড়ানো হয়েছে। একাধিক গাড়ি আছে এমন করদাতাদের দ্বিতীয় গাড়ির নিবন্ধন ও নবায়নের সময় ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত কার্বন কর দিতে হতে পারে। একই সঙ্গে উচ্চ সিসির অর্র্থাৎ দামি গাড়ির শুল্ক হার বাড়ানো হতে পারে। ২০০১ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির সম্পূরক শুল্ক ২০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ ও ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত ৩৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ শতাংশ করা হতে পারে। বিদ্যমান আইনে অগ্রিম কর ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা; এ হিসাব ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে অর্থ বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আবাসন খাতে নিবন্ধন ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে এনবিআর। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের এতে আপত্তি আছে। প্রস্তাব কার্যকর হলে আগামী অর্থবছরে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম বাড়বে। ধোঁয়া ও ধোঁয়াহীন তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। আমদানিকৃত মদের দাম কমাবে না। বিলাসবহুল অনেক পণ্যের শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
আমদানি শুল্ক বাড়ানোয় বিদেশি খেলনার দাম বাড়বে। দেশি খেলনার দাম কমবে না। বিউটি পার্লারের খরচ, প্রসাধনী ও জুয়েলারির দাম বাড়বে। সোনার দাম কমাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোতে প্রিন্টিং প্লেট, লিফট, সোলার প্যানেল, মিটার, কম্পিউটার প্রিন্টার, টোনার, বিদেশি চকলেট, বাটার, চিজ, প্রক্রিয়াজাত ও রেডি টু কনজিউম কফির দাম বাড়তি থাকছে। বিদেশি গ্যাস লাইটার ও দেশলাই আমদানি খরচও বাড়তি থাকতে পারে। বোতলজাত পানি ও বাসাবাড়িতে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত ওয়াটার পিউরিফায়ারের দামও বেশি থাকতে পারে।
ক্লাডউ সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও ফ্রিল্যান্সিং খাতে রাজস্ব ছাড় না দেওয়ায় খরচ কমছে না।
সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামী বাজেটে কৃষি যন্ত্রপাতিতে রাজস্বের থাবা বসানো হয়নি। তবে বৈশি^ক কারণে দাম বাড়লে তা ঠেকানোর পদক্ষেপ নেই।
আগামী বাজেটে মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডের উৎপাদনে আগ্রহী করতে দেশি শিল্পের সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে ছাড় দেওয়া হয়েছে। দেশি শিল্পে চাহিদা বেশি এমন অনেক কাঁচামালের আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, লোহার রড, স্ক্র্যাব, মোটরসাইকেল ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, নির্মাণসামগ্রী, টেক্সটাইল, চামড়া খাত, পাটশিল্প, দেশি টেলিভিশন, এসি, মোবাইল, ওষুধ ও অটোমোবাইল শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে ছাড় থাকছে। সম্পূর্ণ আমদানিকৃত মোটরসাইকেলের চেয়ে দেশে সংযোজিত বা উৎপাদিত মোটরসাইকেল শিল্পে বেশি সুবিধা থাকছে। মোটরসাইকেল উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে নিম্ন হারে শুল্ক হার বহাল থাকছে। জ্বালানি খাতে দফায় দফায় দাম বাড়ানোয় শিল্প খাতে সংকট বেড়েছে। জ্বালানির ১৩ পণ্যে অগ্রিম কর অব্যাহতি দিয়ে দাম বাড়ার ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। দেশে উৎপাদিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সার্ভার, মাদারবোর্ড এবং সফটওয়্যার উন্নয়নে বিদ্যমান সুবিধ বহাল থাকছে।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, এনটিটিএন, ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিস, ওয়েব লিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিকস ডিজাইন, ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি অ্যান্ড প্রসেসিং, ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিকস, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস, আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, সফটওয়্যার ল্যাব টেস্ট সার্ভিস, কল সেন্টার সার্ভিস, ওভারসিজ মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিস, ডকুমেন্ট কনভারশন, রোবোটিকস প্রসেস আউটসোর্সিং ও সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস খাতে খরচ বাড়ানো হয়নি।
দেশে নিত্যপণ্যের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী সবজি ও মাছ-মাংসের দাম। পেঁপের দাম কিছুটা কমলে গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা। গ্রীষ্মকালীন সবজি-বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, চিচিঙ্গা, পটোল, করলাসহ অধিকাংশ সবজি ৬০-৮০ টাকার নিচে মিলছে না। এ ছাড়া মাছ বাজারেও দেখা গেছে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। মাংসের বাজার স্থিতিশীল থাকলে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যেই।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এবারে অনাবৃষ্টির কারণে খরিপ মৌসুমে সবজির উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে জোগান কম থাকায় সবজির মূল্য তরতর করে বাড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, হাতিরপুল ও কলাবাগান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে অধিকাংশ সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৬০, বরবটি ৬০-৬৫, ৪০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০, টমেটোর কেজি ৫৫-৬০, কাঁচা মরিচ ১২০-১৩০, ঢেঁড়স ৬০, আকারভেদে প্রতি লাউ-চাল কুমড়া ৬০-৭০, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৬০, পটোল ৮০ ও বেগুনের কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে হাতিরপুল বাজারের সবজি ব্যবসায়ী হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাইকারি বাজারে বাড়তি দাম দিয়ে সবজি কিনতে হয়। সবজির দাম বেশি হলে আমাদের বিক্রি করতে সমস্যা হয়। প্রায় সময় দাম নিয়ে ক্রেতার সঙ্গে তর্কে জড়াতে হয়।
এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২২০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। প্রতি কেজি পাঙাশ ২২০-২৩০, তেলাপিয়া মাছ ২২০, ২০ টাকা বেড়ে নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৪০, কার্পজাতীয় মাছ ২৩০-২৬০, ট্যাংরা মাছের কেজি ৭০০, জাটকার কেজি ২৫০-২৬০, চাষের কৈ ২৫০, হাইব্রিড পুঁটি ২৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে শান্তিনগর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আজাদ কিছুটা ক্ষোভের স্বরে বলেন, ‘এহন ডর করে ঘরে মাছ লইয়া যাইতে। পইত্তেক হপ্তাহে মাছের দাম বাড়ে। ঘরে একটা ছোড ছাওয়াল আছে। ওর জন্য মাছ নিবার পরি না। হারাদিন মাছ বেইচ্চা যা ইনকাম করি, পরের দিন মোকামে গেলে লাভের টাকা চালান খাডাইতে হয়। দেশে এত মাছে হয়, তবুও কেন দাম বাড়ে তাই বুঝি না। তবে মাছের দাম বাইড়ার যাওয়ার জন্য মোকামের ব্যাপারীরাই দায়ী।’
মুরগি ও মাংসের বাজারে গিয়ে একই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০, লেয়ার মুরগির কেজি ৩৪০-৩৫০ ও পাকিস্তানি কক মুরগি ৩০০-৩২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ঈদের আগের বাড়তি দামে গরু ও খাসির মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। সিটি করপোরেশনের বাজারগুলোতে ৫০ টাকা কমে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা করে বিক্রি হলে রাজধানীর অন্য বাজারগুলোতে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৮০০, ছাগলের মাংস ১ হাজার ও খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে ডিমের বাজার ঘুরে কোনো সুখবর পাওয়া যায়নি। বাড়তি দামে প্রতি হালি ডিম ৫০ ও প্রতি ডজন ডিম ১৪৭-১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাগান এলাকার ডিম বিক্রেতা শান্ত বলেন, ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও খাদ্য একই চেইনের অংশ। বাজারে খাদ্যের দাম বেশি থাকায় মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে। পাইকারদের থেকে প্রতি পিস ডিম কেনা পড়ে ১১ টাকা। দোকান পর্যন্ত ডিম নিয়ে আসতে আরও তিন ধাপে খরচ যুক্ত হয়। সব খরচ মিলিয়ে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে এক হালি ডিমের বিক্রয় মূল্য দাঁড়ায় ৫০ টাকা। এর নিচে ডিম বিক্রি করলে লোকসানে পড়তে হবে।
এ ছাড়া গতকালও বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার ২৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে দীর্ঘ ৭ বছর পর গত ৮ মে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামে। তবে দু’দিনের মাথায় আবার ৩০ বিলিয়নের ঘর অতিক্রম করে। গত ১০ মে বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া ঋণের ৫০ কোটি ৭০ লাখ ডলার যোগ হওয়ায় দ্রুত তা বেড়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ২৫ মে রিজার্ভ ছিল ৪২ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। এর মানে গত এক বছরে কমেছে ১২ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। দেশের ইতিহাসে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০২১ সালের আগস্টে। তবে করোনা পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে তা দ্রুত কমতে থাকে।
রিজার্ভ যেন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় না নামে সেজন্য আমদানি কমানোর উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে সরকার।
আইএমএফের প্রতিশ্রুত ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের প্রথম কিস্তি এরই মধ্যে ছাড় হয়েছে। সব শর্ত পালন করতে পারলে দ্বিতীয় কিস্তি মিলতে পারে আগামী নভেম্বরে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সাধারণত সরকারি এলসির দায় মেটাতে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে। চলতি অর্থবছর এরই মধ্যে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। এলসি খোলায় কড়াকড়ি, ডলার না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে এখন কম দর দেখিয়ে আমদানি করছে। এর প্রভাবে গত মার্চ পর্যন্ত আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। অবশ্য একই সময় পর্যন্ত রপ্তানি বেড়েছে ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
রেমিট্যান্সেও ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আছে। তবে আর্থিক হিসাবে আগের বছরের উদ্বৃত্ত থেকে বড় অংকের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। যে কারণে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি অনেক বেড়ে ৮ দশমিক ১৭ শতাংশে উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক শিগগির দেশে একটি ডিজিটাল ব্যাংক চালু করার পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, শিগগিরই আমরা দেশে ডিজিটাল ব্যাংক চালু করব। আমরা খুব শিগগরিই একটি অনলাইন রিয়েল-টাইম ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা করছি।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রথম ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন সামিট-২০২৩-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেড ‘ব্যাংকিং অন ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
আব্দুর রউফ তালুকদার তার বক্তব্যে জানান, তারা জাতীয় ডেবিট কার্ড প্রদানের খুব কাছাকাছি। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো কর্পোরেট গভর্ন্যান্স এবং নন-পারফর্মিং লোন।
তিনি বলেন, আমাদের কর্মীবাহিনীকে পরিকল্পনামাফিক সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সংস্কৃতিগত পরিবর্তন আনতে হবে এবং নৈতিকতা ও ভালো অনুশীলন প্রয়োগ করতে হবে। নির্দেশিকা প্রবর্তন এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এবং সিইও’দের শক্তিশালী ভূমিকা সমস্যার সমাধান করতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, আমরা সফলভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প অর্জনে পদক্ষেপ নিচ্ছি।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের (৪আইআর) যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) হস্তক্ষেপের কারণে সারা বিশ্বে ব্যাংকিং কার্যক্রম সামগ্রিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। সুতরাং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে ব্যাংকারদের ডিজিটালি প্রস্তুত হতে হবে।
দেশের ব্যাংকিং শিল্পের ডিজিটাল রূপান্তর যাত্রার লক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন সামিট’-এ বাংলাদেশের ৪৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে প্রায় ১৫০ জন অংশগ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশে ডিজিটাল আর্থিক সেবা বিকাশের মূল প্রবণতাগুলির উপর আলোকপাত করাই সম্মেলনের লক্ষ্য । সম্মেলনে আলোকপাত করা বিভিন্ন কৌশলের বিশ্লেষণ, ব্যাঙ্কগুলোকে দ্রুত ডিজিটাল রূপান্তরের পথ খুজতে সহায়তা করতে পারে। ব্যাংকিং শিল্পের রূপান্তর ও বিকাশের ক্ষেত্রে মূল্যবান ধ্যান-ধারনা তুলে ধরাই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য।
কোরবানির ঈদের বাকি আরও এক মাসের বেশি। কিন্তু এর মধ্যেই বিভিন্ন মসলার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানেই কোনো কোনো মসলার দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। বিশেষ করে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে আদার দাম আকাশ ছুঁয়েছে। এক মাস আগেও আমদানি করা যে আদা ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়। আর ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ পৌঁছেছে ৮০ টাকায়। দাম বেড়েছে জিরা, এলাচ ও গোলমরিচেও। এসব মসলার দাম কেজিতে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আদার দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের দাবি, গত এক মাস ধরে চীন থেকে আদা আমদানি বন্ধ। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকেও আমদানি হচ্ছে কম।
তবে ক্রেতা ও ভোক্তা অধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে কোনো পণ্যের দাম বাড়াতে সরবরাহ সংকটের দরকার হয় না। ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেন। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় একই কাজ বারবার করেন তারা। আদার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। চীন থেকে আদা না এলেও মিয়ানমার থেকে প্রচুর আদা আসছে দেশে। তদরকির অভাবেই ভোক্তাদের ভোগান্তি হয়।
গত মঙ্গলবার রাজধানীর শ্যামবাজার, কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও মগবাজার এলাকার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি চীনা আদা বিক্রি হচ্ছিল ৫০০-৫৫০ টাকায়। তিন দিন আগেও আদা বিক্রি হয়েছে ৪৬০ এবং এক মাস আগে চীনা আদার কেজি ছিল ২২০ টাকা। প্রতি কেজি বার্মিজ ৩৫০ থেকে ৩৮০, ইন্দোনেশিয়ার ৩৮০-৪০০, ভিয়েতনামের ৩০০ ও দেশি আদা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
আদার দামের বিষয় জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ইমাম আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, শ্যামবাজারে আদার দাম বেশি পড়ায় কারওয়ান বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ বাজারে অনেক ব্যবসায়ী শ্যামবাজার থেকে আদা কেনেন। বাজারে এখন চায়না আদার সংকট দেখা দিয়েছে। পাইকারদের কাছে চায়না আদা নেই। দুয়েকজনের কাছে পাওয়া যাচ্ছে। তারাও কেজিপ্রতি ৫৫০-৬০০ টাকা দাম হাঁকাচ্ছেন।
শ্যামবাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে চায়না আদা নেই। হাতেগোনা কয়েকজনের কাছে পাওয়া গেলেও তারা প্রতি কেজি চায়না আদার দাম হাঁকাচ্ছেন ৫০০-৫২০ টাকা করে।
জানতে চাইলে শ্যামবাজারের নূর মসলা বিতানের ম্যানেজার মোহাম্মদ মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে এ বছর আদার উৎপাদন কম হয়েছে। আমদানিও কম হয়েছে। এজন্য দাম অনেক বেশি। কোরবানি ঈদের আগে আদার দাম কমার সম্ভাবনা নেই। ঈদের আগে চীন থেকে আদা আমদানি না হলে পাইকারিতেই প্রতি কেজি আদা ৪০০ টাকা করে বিক্রি করতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক রাসেল আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, অন্যান্য ফসলের থেকে মসলাজাত পণ্য আদার ফলন কম হয়ে থাকে। তবে আমাদের প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাজশাহী, দিনাজপুর ও মানিকগঞ্জসহ অন্যান্য জেলার নতুন করে আদার চাষ শুরু হয়েছে। যা আগামী অর্থবছরে চাহিদার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, দেশে আদার চাহিদা প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার টন। গত অর্থবছরে দেশে আদার উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার টন। এ বছর উৎপাদন কমে হয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরে চাহিদার বেশিরভাগ আদা উৎপাদন হবে বলে বিশ্বাস করছি। আদা যেহেতু দীর্ঘমেয়াদি ফসল, যার ফলে আমরা সাথী ফসল হিসেবে আদার চাষের জন্য কৃষকদের আগ্রহী করে তুলছি। তারই অংশ হিসেবে ফল বাগানগুলোতে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করছি। দেশের মানুষের কাছে মোটা আদার চাহিদা থাকায় আমরা পাহাড়ি আদার চাষ করছি।
এদিকে মসলার বাজার ঘুরে দেখা যায়, লবঙ্গ ও দারুচিনি আগের দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে জিরা, এলাচ ও গোলমরিচের দাম বেড়েছে ১০০-৪০০ টাকা পর্যন্ত। ৪০০ টাকা বেড়ে জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। গোলমরিচের কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯৫০-১০০০ হাজার টাকা করে। ইন্ডিয়ান এলাচ কেজিতে ১ হাজার টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা করে। যা কয়েক দিন আগেও ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য এলাচের মধ্যে মানভেদে ভিয়েতনামের এলাচের কেজিপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়।
শিপমেন্ট ভাড়া ও আন্তর্জাতিক বাজারে জিরা, গোলমরিচ ও এলাচের দাম বৃদ্ধির কারণ দাবি করে ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম বাড়ায় দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। বর্তমানের এলাচ ও জিরার কেজিতে ২০০-৩০০ টাকা বেড়েছে।
কারওয়ান বাজারের শরীয়তপুর স্টোরের স্বত্বাধিকারী আক্তার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে মসলার মধ্যে জিরা ও ভারতীয় এলাচের দাম বেড়েছে। আমদানিকারকদের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে এ মসলার দাম বেড়েছে। তাই দেশের বাাজরেও এর প্রভাব কিছুটা পড়তে শুরু করেছে।
হঠাৎ করে মসলার বাজার অস্থির হওয়ার বিষয় জানতে চাইলে ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ব্যবসায়ীরা অতিমুনাফাখোর। বরাবরের মতো তাদের নানা অজুহাত থাকেই। বাজারে বিক্রি হওয়া ৫০০ টাকার আদা তারা আমদানি করেছে মাত্র ৫৮ টাকা করে। কিন্তু সরকার মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
সফররত চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা, কানেকটিভিটি, ইন্দো-প্যাসিফিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনলাইন জুয়া এবং মাদক পাচারের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়েইডংয়ের দুই দদফা বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন চীনা ভাইস মিনিস্টার। তবে বৈঠক শেষে ঢাকা কিংবা চীন কোনো পক্ষই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেনি।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা থেকে পররাষ্ট্র সচিব ও চীনা ভাইস মিনিস্টার প্রতিনিধিদল নিয়ে বের হন। সেখান থেকে ওয়েইডং যান পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। সেখানে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের সামনে চীনের একটি প্রতিনিধিদল পদ্মা সেতু নিয়ে ভাইস মিনিস্টারকে চায়নিজ ভাষায় বিস্তারিত ব্রিফ করেন। ব্রিফ শেষে গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠেন ওয়েইডং এবং তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল। সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনতো।
রোহিঙ্গা ইস্যু : বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উঠেছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে কাজ করে আসছে চীন। ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডংয়ের সফর মূলত গত ১৮ এপ্রিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-চীন বৈঠকের ফলোআপ। একই সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ইতিমধ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা করাতে পেরেছে চীন। এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে সেটি চীনের জন্য ভালো একটি অর্জন হবে। সেজন্য চীনের বিশেষ আগ্রহ আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া তারা এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বৈঠকে ভাইস মিনিস্টার উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকার হবে। পাইলট প্রজেক্টের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজ নিজ প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে “যান এবং দেখুন” এবং বাংলাদেশে “আসুন এবং কথা বলুন” সফরের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে চীনা পক্ষ।’
জিডিআই : বৈঠকে চীনের নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফরের সময় জিডিআই বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন। জিডিআই উদ্যোগে বাংলাদেশ যুক্ত হোক, চীন এটি চায় এবং এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগে বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষ বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নিয়মিত স্টাফপর্যায়ের আলোচনা ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
দুই দেশের মধ্যে সফর করার প্রস্তাব : উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফরে চীনের আগ্রহের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেছিলেন। এরপর আর কোনো উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফর হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে বেইজিং কর্র্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, সান ওয়েইডংকে গত নভেম্বরে এশিয়াবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর আগে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকায় ভাইস মিনিস্টার হিসেবে এটি তার প্রথম সফর। তবে ১০ বছর আগে তিনি ভিন্ন পদে বাংলাদেশ সফর করেছেন।
আজ রবিবার চীনের ভাইস মিনিস্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। গত শুক্রবার রাতে প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান চীনের ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডং। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে চীনা ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং উল্লেখ করেন, তিনি ১০ বছর পর বাংলাদেশ সফর করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন দেখে খুবই মুগ্ধ। উভয় প্রতিনিধিদল পারস্পরিক স্বার্থ এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। চীনা পক্ষ ‘এক চীননীতি’তে অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক বৈঠক বিনিময় স্মরণ করেছেন, যা সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও গভীর করেছে।
এতে আরও বলা হয়, বৈঠকে কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় চীনের টিকা সহায়তার জন্য বাংলাদেশ আবারও ধন্যবাদ জানিয়েছে। উভয় পক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। এ সময় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায় চীন।
উভয় পক্ষই বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। এ ছাড়া গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনা পক্ষ গ্রীষ্মকালীন ফল আমদানিতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং হিমায়িত খাবার আমদানিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার আওতায় শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, ফুটওয়্যার, পোশাক ইত্যাদির মতো অন্যান্য রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা ভাইস মিনিস্টার চট্টগ্রামে চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-গুয়াংঝু সরাসরি ফ্লাইট আবার চালুর জন্য চীনা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে সময়মতো আলোচনার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষ নিয়মিত কনস্যুলার পরামর্শ চালু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজিতে উদ্ভাবনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, জননিরাপত্তা ইস্যুতে সংলাপ আয়োজনে দুই পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশ চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।