
এইচএস কোড সুস্পষ্টকরণে সংশ্লিষ্ট পণ্যের বর্ণনা বিশ্ব কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউসিও) নিয়ম অনুযায়ী বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। গতকাল রবিবার বিকেলে আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আয়োজিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব জানানো হয়।
সংগঠনের পক্ষে সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, রপ্তানিকারক দেশ থেকে পণ্যের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা ডব্লিউসিও'র নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশের কাস্টমস সিস্টেমে আপডেট করা হয় না। এর ফলে এইচএস কোড ঠিক থাকলেও পণ্যের বর্ণনার ভিন্নতার কারণে কাস্টমস কর্মকর্তা জরিমানা করেন। এ ছাড়া এইচএস কোড সুস্পষ্টকরণের অভাবে অহেতুক কাস্টমস হয়রানির মাধ্যমে ব্যবসায় খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন ঘটায়।
এ সময় এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, কথায় কথায় আমাদের শুনতে হয় আমরা এইচএস কোড নিয়ে হয়রানি করছি। এছাড়া জরিমানার পরিমাণ অযৌক্তিক। আমাদের কনসেপ্ট হলো সিএন্ডএফ এজেন্ট, আমদানিকারক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যারা কাস্টমসের সঙ্গে যুক্ত থাকেন; তারা আইন-কানুন খুব ভালো করে জানেন। তারা আনাড়ি নন। সুতরাং মিথ্যা ঘোষণার বিষয়টি আসছে সেখানে দাবি করা হয় অজ্ঞানে, ভুল করে এবং স্বেচ্ছায় করে না।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এইচএস কোড ভুল হয়ে গেলে আমরা ধরে নেই ইচ্ছাকৃত হচ্ছে। মানিলন্ডারিং এবং কর ফাঁকির জন্য ভুল করা হয় এইচএস কোড। এই কনসেপ্ট কাজ করে আমাদের। এই জায়গাটা থামাতে হলে জরিমানার পরিমাণ বা শাস্তির বিধান একটু শক্ত হওয়া দরকার। সে কারণে আমরা শাস্তি দেই। এ সময় ব্যবসায়ীদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা চেম্বার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে, লিস্টেড এবং নন-লিস্টেড কোম্পানির মধ্যকার কর হারের ব্যবধান কমানোর পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নন-লিস্টেড কোম্পানির কর্পোরেট করের হার আরও ২.৫% কমানো। ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকায় উন্নীত করা, কর ও মুসক প্রদান সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়গুলি সহজে সমাধানের লক্ষ্যে ‘ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম (আইটিএএস)’ এবং ‘ইন্টিগ্রেটেড ভ্যাট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম (আইভিএএস)’ প্রবর্তন করা।
প্রস্তাবনায় আরও জানানো হয়, ভ্যাটের আওতা বর্হিভূত ব্যবসায়ের বার্ষিক টার্নওভারে ঊর্ধ্বসীমা ৩ কোটি টাকা হতে বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা নির্ধারণ, ব্যাংকে আমানতের উপর ১০-১৫% উৎসে করা কর্তন প্রত্যাহারের আহ্বান জানানোসহ ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
এর আগে সকালে কৃষি ও সেবা খাতের ১৪টি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিল। আলোচনায় ড্রেস মেকার্স অ্যাসোসিয়েশন টেইলারিং অ্যান্ড টেইলার্স সেবা খাতে ৩০ শতাংশ মূল্য ভিত্তি ধরে নীট মূল্য সংযোজন ভিত্তিতে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ মুসক ধার্য করার প্রস্তাব দেন।
ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইমরান হোসেন খামার মালিকদের আগামী ২০ বছরের জন্য আয়কর রেয়াত ও দেশীয় উৎপাদিত দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য ও মাংসের উপর সকল ভ্যাট প্রত্যাহার চেয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশ মাংসে স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে সাফটা চুক্তি থেকে হিমায়িত মাংস আমদানি বাতিল ও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন মোহাম্মদ ইমরান।
বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি স্ট্রিট ফুড সহ সকল খাদ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনা ও শতভাগ রেস্তোরাঁকে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের আওতায় আনার প্রস্তাব দিয়েছেন। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের ক্যান্টিনে ভ্যাট হার ১ শতাংশ ও ক্যাটারিং সার্ভিসে খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে ভ্যাট হার ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ এগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) কৃষিজ পণ্য সরবরাহের বিপরীতে উৎসে কর কর্তনে অব্যাহতি প্রদান,কৃষি প্রক্রিয়াজাতকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান উপকরণ হিসেবে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করেছে।
হজ এজেন্সিস অব বাংলাদেশ (হাব) এজেন্সিগুলোর জন্য শুল্ক মুক্ত সুবিধায় গাড়ি কেনার সুবিধা প্রদানের আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সিকিউরিটি সার্ভিসেস কোম্পানীজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন কর্পোরেট কর, মুসক, উৎস কর ও টার্নওভার কর শূন্য শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) তাদের প্রস্তাবে জানায়, রেজিস্ট্রেশন রি-নিউ করতে হলে ৫০ হাজার টাকা কর দিতে হয়। এই কর থেকে অব্যাহতি চায় বায়রা।
বাংলাদেশ অটো রাইস মিলস অ্যাসোসিয়েশন ১০ কোটির নিচে মূলধন হলে ৫ বছরের জন্য কর অব্যাহতি চায়। এ ছাড়া সবক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কর নির্ধারনের প্রস্তাব তাদের।
এ ছাড়া আগত অন্যান্যরা কাস্টমস ডিউটি মওকুফ, আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম কর অব্যাহতি, মিথ্যা তথ্যের অজুহাতে কাস্টমস জরিমানা বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানান।
ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবনা শুনে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে তা বিবেচনা করা হবে। আমি আপনাদের রাস্তা সহজ করব, ছাড় দেব কিন্তু কমপ্লায়েন্সে কোনো ছাড় দেব না। এই জায়গাটায় আমরা আরও বেশি কঠোর হবো।
দেশের বাজারে সোনার দাম কিছুটা কমল। স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পাকা সোনা) দাম কমার পরিপ্রেক্ষিতে এ দাম কমানো হলো। সব থেকে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৪৯ টাকা কমিয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ভালো মানের প্রতি ভরি সোনার দাম হয়েছে ৯৬ হাজার ৬৯৫ টাকা।
আগামীকাল সোমবার (২৯ মে) থেকে সোনার এ নতুন দাম কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে ফ্ল্যাট ও প্লটের নিবন্ধন ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এখন নিবন্ধন ফি ১০ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ। এর মধ্যে বিদ্যমান গেইন ট্যাক্স ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে এনবিআর। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে বাড়বে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম।
এ ছাড়া আবাসন ব্যবসায়ীরা আগামী বাজেটে বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা দেওয়ার দাবি জানালেও তা আমলে আনেনি এনবিআর।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন আগামীকালের দায়িত্বশীলদের দৈনিক দেশ রূপান্তরে।
২০৪০ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে নিকোটিন-নির্ভর বিকল্প পণ্যসমূহ ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাজারজাতকরণের সুপারিশ করেছেন দেশি ও আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও নীতিপ্রণেতারা।
পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও ধূমপানের ক্ষতি হ্রাসের জন্য প্রচলিত সিগারেটের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পরামর্শ দেন গবেষকরা।
রাজধানীতে তামাকের ক্ষতি হ্রাসকরণ বিষয়ে আয়োজিত এক সম্মেলনে তারা বলেন, তামাকের ক্ষতি হ্রাস ধারণাটি প্রাপ্ত বয়স্ক ধূমপায়ীদের ধূমপান ছাড়াতে বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল উপায়। এর মাধ্যমে যারা ধূমপান ছাড়তে আগ্রহী, তারা প্রচলিত সিগারেটের বিকল্প হিসেবে তুলনামূলক কম ক্ষতিকর পণ্য (রিডিউসড রিস্ক প্রোডাক্ট) ব্যবহার করে। এই সকল পণ্য থেকে প্রচলিত সিগারেটের মতো টার তৈরী হয় না। যার ফলে এই পণ্যগুলো প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর।
সম্মেলনে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন অর্থ, শিল্প, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে ধূমপানের হার কমিয়ে আনতে দেশগুলো সরকার এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় কম ক্ষতিকর পণ্যসমূহ যেমন ভেপ, ই-সিগারেট, স্নুস ইত্যাদি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করছে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এবং ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) প্রণয়নের অন্যতম পথিকৃৎ ডা. ডেরেক ইয়াক বাংলাদেশের এফসিটিসি তৈরীর পেছনে অবদানের প্রশংসা করে বলেন, ক্ষতিহ্রাস কৌশল আগে থেকেই এফসিটিসির অংশ ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন বাংলাদেশে হয়নি। বাংলাদেশের সুযোগ রয়েছে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য ক্ষতিহ্রাস কৌশলকে প্রাধান্য দেওয়ার। এতে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে ধূমপানের ক্ষতি হ্রাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ওয়ার্ল্ড মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব ডা. ডিলন হিউম্যান বলেন, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান লক্ষ্য হলো রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং রোগের কারণে অকাল মৃত্যু ঠেকানো।
তিনি বলেন, এতদিনের প্রচলিত তামাক নিয়ন্ত্রণ কৌশল দিয়ে বাংলাদেশকে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত করা সম্ভব হবে না।
ডা. হিউম্যান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক তিনজন মহাপরিচালকের একজন এবং জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। তাঁর মতে, বর্তমানে বিশ্বে ১৪০ কোটি ধূমপায়ী আছে, যার দুই কোটি বাংলাদেশে। প্রচলিত তামাক নিয়ন্ত্রণ কৌশল এদের জন্য মৃত্যুর পরোয়ানার শামিল। এমন পরিস্থিতি উত্তোরণে তামাকের ক্ষতি হ্রাসে সমন্বিত কৌশল, বিজ্ঞান এবং কম ক্ষতিকর বিকল্পের নিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন ডিলন।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও তামাকের ক্ষতি হ্রাস নিয়ে ৭০টির বেশি গবেষণায় কাজ করা ডা. কনসটেন্টিনোস ফার্সিলিনোস বলেন, ইউকে হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির গবেষণায় ধূমপানের ক্ষতিহ্রাস কৌশলের বিকল্প ভেপিং সাধারণ সিগারেটের তুলনায় ৯৫ শতাংশ কম ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ভেপিং এবং নিকোটিন চুইংগাম ধূমপানের আসক্তি কাটানোর জন্য অন্যতম সহায়ক হিসেবে গবেষণায় প্রমাণিত। ধূমপানের এসব বিকল্প পণ্য বাংলাদেশের বাজারে সহজলভ্য এবং একটি ঝুঁকি আনুপাতিক নীতিমালা বাস্তবায়ন করা গেলে প্রচুর মানুষকে ধূমপানের মতো ক্ষতিকর নেশা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
নিউজিল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মারেওয়া গ্লোভার, যিনি ধূমপানের আসক্তি কাটানো নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করছেন, আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য কিংবা সুইডেনের মতো যদি বাংলাদেশ তামাকের ক্ষতি হ্রাস করতে চায় তবে ক্ষতি হ্রাসে সহায়ক পণ্যগুলো নিষিদ্ধ না করে একটি সুষ্ঠু কাঠামোর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক ধূমপায়ীদের কাছে সহজলভ্য করতে হবে।
ওয়ার্ল্ড মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এবং আফ্রিকা মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ডা. হোসি লেটলেপে তামাকের ক্ষতি হ্রাস কৌশল ও সেবাকে মৌলিক মানবাধিকার হিসেবে বিবেচনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ভোক্তাদের অধিকার আছে স্বাস্থ্য বিষয়ক সঠিক তথ্য পাওয়ার।
ডা. হোসির মতে, ধূমপায়ীদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস ছাড়তে বিকল্পে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা পেশায় যুক্ত ব্যক্তিদের করণীয় অনেক। তিনি বলেন, ভোক্তা এবং রোগীদের সঠিক তথ্য এবং পণ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানাতে হবে। যদি তারা ধূমপান একেবারে ছাড়তে না পারে তবে তাদের তুলনামূলক কম ক্ষতিকর পণ্য বেছে নিতে সহায়তা করতে হবে।
আলোচকেরা বলেন, বাংলাদেশ সকল বাধা মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সুপরিচিত এবং বিশ্বের অন্যতম দ্রুত ক্রম বর্ধন অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের প্রয়োজন উন্নত বিশ্বে সাফল্য লাভ করেছে এমন নির্ভরযোগ্য ও পরীক্ষিত ক্ষতি হ্রাস কৌশল অনুসরণ করা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তামাকমুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এশিয়া এবং সারা বিশ্বের কাছে একটি রোল মডেল হয়ে উঠবে।
সম্মেলনে ভোক্তাদের পক্ষ্ থেকে আলোচনায় অংশ নেন ভয়েস অব ভেপার্স বাংলাদেশের মুখপাত্র মাসুদ উজ জামান, ওয়ার্ল্ড ভেপার্স আলিয়ান্স এর পরিচালক মাইকেল ল্যান্ডাল ও গবেষণা সংগঠন উই আর ইনোভেশন এর প্রধান ফ্রেডরিকো ফার্নান্ডেজ।
বৈশ্বিক কারণে দেশের বাজারে পণ্যের দামের বাড়ন্ত অবস্থা ঠেকাতে আগামী বাজেটে জোরালো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং সরকারের আয় বাড়াতে ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মানতে গিয়ে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যাতে অনেক খাতে খরচ বাড়বে। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়বে বলে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।
নির্বাচনের আগের শেষ বাজেট হওয়ায় ব্যবসায়ীদের খুশি করতেও কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতায় তার সুফল কতটা মিলবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মানুষের আয় বাড়েনি বললেই চলে। আগামী বাজেটে আয় বাড়াতে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। এতে অনেক খাতে খরচ আরও বাড়বে। নির্বাচনের আগে শেষ বাজেট হওয়ায় নির্বাচনী চমক হিসেবেও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বৈশ্বিক কারণে এসবের সুফল পাওয়া কঠিন। এ ছাড়া ব্যবসায়ীরা একবার দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা শুরু করলে তা আর কমাতে চায় না।’
গত মাস ছয়েক ধরে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৮-৯ শতাংশের ঘরে। সরকার দাম কমাতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও সেসবের সুফল তেমন পাওয়া যায়নি। এক বছর ধরে সব ধরনের চালের দাম বেশি। আটা, ময়দা, চিনি, ভোজ্য তেলের দাম প্রায় দ্বিগুণ। দাম বাড়তি বলে মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ অনেক খাবার সাধারণ আয়ের পরিবারগুলো খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতেও আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলা, বুট, ডাল, হলুদ, মরিচ, ভুট্টা, আটা, ময়দা, ভোজ্য তেল, চিনি, ফল, লবণের দাম কমানোর চেষ্টা করা হয়নি।
আইএমএফের শর্তে রাজস্ব সুবিধা কমানোয় পাউরুটি, বিস্কুট, সাবান, শ্যাম্পু, প্রক্রিয়াজাত খাবারের দাম বাড়বে। ভ্যাটের হার বাড়ানোয় মিষ্টির দামও বাড়বে। দেশে উৎপাদিত জুতা, স্যান্ডেলের দাম কমানো হচ্ছে না। আমদানিকৃত পণ্যের দাম বাড়বে। আগামী অর্থবছরেও চেইন শপ থেকে পণ্য কিনতে হলে ভ্যাটের সর্বোচ্চ হার ১৫ শতাংশের সঙ্গে আরও ৫ শতাংশ বাড়তি দিতে হবে ক্রেতাকে। খামারে চাষ করা ৩০ লাখ টাকার বেশি মাছ বিক্রিতে ১৫ শতাংশ রাজস্ব থাকছে। একই সঙ্গে বড় মাছ আমদানিতেও সম্পূরক শুল্ক আসছে। শুল্ক-করের মারপ্যাঁচে আমদানিকৃত ও দেশে চাষ করা বড় মাছের দাম কমানোর সুযোগ থাকছে না। আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট প্রস্তাব ও প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী অর্থবছরে মোবাইল ব্যবহারে খরচ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশি কোম্পানির মোবাইলের উৎপাদন পর্যায়ে তিন স্তরে ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নিজেরা যন্ত্রপাতি বানিয়ে উৎপাদন করলে ৩ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। সংযোজন করলে দুভাবে ভ্যাট আরোপ হবে। কমপক্ষে দুটি যন্ত্রাংশ নিজেরা বানিয়ে মোবাইল উৎপাদন করলে ৫ শতাংশ এবং সব যন্ত্রাংশ আমদানি করে সংযোজন করলে সাড়ে ৭ থেকে ১০ শতাংশ ভ্যাট বসতে পারে। অন্যদিকে ফ্রিজ তৈরির উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানি এবং স্থানীয় ক্রয়ের ক্ষেত্রে কর ছাড় সুবিধা রয়েছে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এ সুবিধা বাড়ানো না হলে এ পণ্যের দামও বাড়বে। আমদানিকৃত মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার ও মোটরসাইকেলের দাম কমাতে কিছু থাকছে না। আন্তর্জাতিক বাজারের অস্থিরতার প্রভাব এড়াতে বাজেটে কিছু না থাকায় দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিলে ভ্রমণকর ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সব ধরনের পরিবহনে যাতায়াতে খরচ বাড়ছে। আগামী বাজেটে গাড়ির মালিকদের খরচ অনেকটা বাড়ানো হয়েছে। একাধিক গাড়ি আছে এমন করদাতাদের দ্বিতীয় গাড়ির নিবন্ধন ও নবায়নের সময় ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত কার্বন কর দিতে হতে পারে। একই সঙ্গে উচ্চ সিসির অর্র্থাৎ দামি গাড়ির শুল্ক হার বাড়ানো হতে পারে। ২০০১ থেকে ৩০০০ সিসি পর্যন্ত গাড়ির সম্পূরক শুল্ক ২০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ শতাংশ ও ৩০০১ থেকে ৪০০০ সিসি পর্যন্ত ৩৫০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ শতাংশ করা হতে পারে। বিদ্যমান আইনে অগ্রিম কর ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা; এ হিসাব ক্ষেত্রবিশেষে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে অর্থ বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আবাসন খাতে নিবন্ধন ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে এনবিআর। আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের এতে আপত্তি আছে। প্রস্তাব কার্যকর হলে আগামী অর্থবছরে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম বাড়বে। ধোঁয়া ও ধোঁয়াহীন তামাকজাত পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। আমদানিকৃত মদের দাম কমাবে না। বিলাসবহুল অনেক পণ্যের শুল্ক হার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
আমদানি শুল্ক বাড়ানোয় বিদেশি খেলনার দাম বাড়বে। দেশি খেলনার দাম কমবে না। বিউটি পার্লারের খরচ, প্রসাধনী ও জুয়েলারির দাম বাড়বে। সোনার দাম কমাতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোতে প্রিন্টিং প্লেট, লিফট, সোলার প্যানেল, মিটার, কম্পিউটার প্রিন্টার, টোনার, বিদেশি চকলেট, বাটার, চিজ, প্রক্রিয়াজাত ও রেডি টু কনজিউম কফির দাম বাড়তি থাকছে। বিদেশি গ্যাস লাইটার ও দেশলাই আমদানি খরচও বাড়তি থাকতে পারে। বোতলজাত পানি ও বাসাবাড়িতে পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত ওয়াটার পিউরিফায়ারের দামও বেশি থাকতে পারে।
ক্লাডউ সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও ফ্রিল্যান্সিং খাতে রাজস্ব ছাড় না দেওয়ায় খরচ কমছে না।
সারের দাম বাড়ানো হয়েছে। আগামী বাজেটে কৃষি যন্ত্রপাতিতে রাজস্বের থাবা বসানো হয়নি। তবে বৈশি^ক কারণে দাম বাড়লে তা ঠেকানোর পদক্ষেপ নেই।
আগামী বাজেটে মেড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ডের উৎপাদনে আগ্রহী করতে দেশি শিল্পের সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে ছাড় দেওয়া হয়েছে। দেশি শিল্পে চাহিদা বেশি এমন অনেক কাঁচামালের আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, লোহার রড, স্ক্র্যাব, মোটরসাইকেল ও গাড়ির যন্ত্রাংশ, নির্মাণসামগ্রী, টেক্সটাইল, চামড়া খাত, পাটশিল্প, দেশি টেলিভিশন, এসি, মোবাইল, ওষুধ ও অটোমোবাইল শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে ছাড় থাকছে। সম্পূর্ণ আমদানিকৃত মোটরসাইকেলের চেয়ে দেশে সংযোজিত বা উৎপাদিত মোটরসাইকেল শিল্পে বেশি সুবিধা থাকছে। মোটরসাইকেল উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ আমদানিতে নিম্ন হারে শুল্ক হার বহাল থাকছে। জ্বালানি খাতে দফায় দফায় দাম বাড়ানোয় শিল্প খাতে সংকট বেড়েছে। জ্বালানির ১৩ পণ্যে অগ্রিম কর অব্যাহতি দিয়ে দাম বাড়ার ধাক্কা সামলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। দেশে উৎপাদিত কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সার্ভার, মাদারবোর্ড এবং সফটওয়্যার উন্নয়নে বিদ্যমান সুবিধ বহাল থাকছে।
সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, এনটিটিএন, ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিস, ওয়েব লিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিকস ডিজাইন, ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি অ্যান্ড প্রসেসিং, ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিকস, জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস, আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, সফটওয়্যার ল্যাব টেস্ট সার্ভিস, কল সেন্টার সার্ভিস, ওভারসিজ মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিস, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সার্ভিস, ডকুমেন্ট কনভারশন, রোবোটিকস প্রসেস আউটসোর্সিং ও সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস খাতে খরচ বাড়ানো হয়নি।
দেশে নিত্যপণ্যের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী সবজি ও মাছ-মাংসের দাম। পেঁপের দাম কিছুটা কমলে গুনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬০ টাকা। গ্রীষ্মকালীন সবজি-বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, চিচিঙ্গা, পটোল, করলাসহ অধিকাংশ সবজি ৬০-৮০ টাকার নিচে মিলছে না। এ ছাড়া মাছ বাজারেও দেখা গেছে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। মাংসের বাজার স্থিতিশীল থাকলে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যেই।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এবারে অনাবৃষ্টির কারণে খরিপ মৌসুমে সবজির উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে জোগান কম থাকায় সবজির মূল্য তরতর করে বাড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শান্তিনগর, হাতিরপুল ও কলাবাগান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে অধিকাংশ সবজি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি মিলছে না। ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৬০, বরবটি ৬০-৬৫, ৪০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০, টমেটোর কেজি ৫৫-৬০, কাঁচা মরিচ ১২০-১৩০, ঢেঁড়স ৬০, আকারভেদে প্রতি লাউ-চাল কুমড়া ৬০-৭০, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৬০, পটোল ৮০ ও বেগুনের কেজি ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে হাতিরপুল বাজারের সবজি ব্যবসায়ী হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, পাইকারি বাজারে বাড়তি দাম দিয়ে সবজি কিনতে হয়। সবজির দাম বেশি হলে আমাদের বিক্রি করতে সমস্যা হয়। প্রায় সময় দাম নিয়ে ক্রেতার সঙ্গে তর্কে জড়াতে হয়।
এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২২০ টাকার নিচে কোনো মাছ নেই। প্রতি কেজি পাঙাশ ২২০-২৩০, তেলাপিয়া মাছ ২২০, ২০ টাকা বেড়ে নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৪০, কার্পজাতীয় মাছ ২৩০-২৬০, ট্যাংরা মাছের কেজি ৭০০, জাটকার কেজি ২৫০-২৬০, চাষের কৈ ২৫০, হাইব্রিড পুঁটি ২৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে শান্তিনগর বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আজাদ কিছুটা ক্ষোভের স্বরে বলেন, ‘এহন ডর করে ঘরে মাছ লইয়া যাইতে। পইত্তেক হপ্তাহে মাছের দাম বাড়ে। ঘরে একটা ছোড ছাওয়াল আছে। ওর জন্য মাছ নিবার পরি না। হারাদিন মাছ বেইচ্চা যা ইনকাম করি, পরের দিন মোকামে গেলে লাভের টাকা চালান খাডাইতে হয়। দেশে এত মাছে হয়, তবুও কেন দাম বাড়ে তাই বুঝি না। তবে মাছের দাম বাইড়ার যাওয়ার জন্য মোকামের ব্যাপারীরাই দায়ী।’
মুরগি ও মাংসের বাজারে গিয়ে একই পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০, লেয়ার মুরগির কেজি ৩৪০-৩৫০ ও পাকিস্তানি কক মুরগি ৩০০-৩২০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ঈদের আগের বাড়তি দামে গরু ও খাসির মাংস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। সিটি করপোরেশনের বাজারগুলোতে ৫০ টাকা কমে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা করে বিক্রি হলে রাজধানীর অন্য বাজারগুলোতে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৮০০, ছাগলের মাংস ১ হাজার ও খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা করে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে ডিমের বাজার ঘুরে কোনো সুখবর পাওয়া যায়নি। বাড়তি দামে প্রতি হালি ডিম ৫০ ও প্রতি ডজন ডিম ১৪৭-১৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলাবাগান এলাকার ডিম বিক্রেতা শান্ত বলেন, ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও খাদ্য একই চেইনের অংশ। বাজারে খাদ্যের দাম বেশি থাকায় মুরগির ডিমের দাম বেড়েছে। পাইকারদের থেকে প্রতি পিস ডিম কেনা পড়ে ১১ টাকা। দোকান পর্যন্ত ডিম নিয়ে আসতে আরও তিন ধাপে খরচ যুক্ত হয়। সব খরচ মিলিয়ে ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে এক হালি ডিমের বিক্রয় মূল্য দাঁড়ায় ৫০ টাকা। এর নিচে ডিম বিক্রি করলে লোকসানে পড়তে হবে।
এ ছাড়া গতকালও বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ নারী জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের অন্যতম সেরা আঁখি খাতুন। সেই ছোট থেকেই গড়ন, উচ্চতা ও লড়াকু ফুটবল দিয়ে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন। মেয়েদের ফুটবলে বাংলাদেশের প্রায় সব সাফল্যেই ছিলেন অগ্রনায়ক হয়ে। সম্প্রতি তিনিও জাতীয় দলের ক্যাম্প ছেড়েছেন। তবে সতীর্থ সিরাত জাহান স্বপ্নার মতো অবসরের সিদ্ধান্ত নেননি। বরং নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাফুফের বন্দী জীবনকে বিদায় জানিয়েছেন।
সম্প্রতি চীনের বন্দরনগরী হাইকোউ শহরের একটি ফুটবল অ্যাকাডেমিতে খেলার পাশাপাশি পড়ালেখার প্রস্তাব পেয়েছেন আঁখি। এখন চলছে চীনের ভিসা নেওয়ার প্রক্রিয়া। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে ঈদের পর দেশ ছাড়বেন তিনি। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আঁখি।
তিনি যে আর দশজন ফুটবলারের মতো নন, তা আগেই বুঝিয়েছেন আঁখি। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর বিশ্ব ফুটবলের নজর কাড়েন দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার। তার নির্ভীক ফুটবল বড্ড মনে ধরে সুইডেনের শীর্ষ লিগের একটি ক্লাবের। সাফে বাংলাদেশ মাত্র একটি গোল হজম করেছিল।
এই কৃতিত্বের বড় দাবীদার সেন্টারব্যাক আঁখি। তাই সুইডিশ ক্লাবটি তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাবও দেয়। প্রথম নারী ফুটবলার হিসেবে ইউরোপের কোন দেশের শীর্ষ লিগে খেলার প্রস্তাবে আঁখি দেখতে শুরু করেছিলেন বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের স্বপ্ন। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের হঠকারি সিদ্ধান্তে সুইডেনে খেলতে যাওয়া হয়নি। জাতীয় দলের খেলা থাকবে বলে সুইডেনের দরজা বন্ধ করে দেয় বাফুফে। পরে অবশ্য অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে জাতীয় দলকে সিঙ্গাপুরে ফিফা ফ্রেন্ডলি ও মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে পাঠানো হয়নি।
বিষয়টা ভীষণ কষ্ট দিয়েছিল সদ্য এইচএসসি পাস করা আঁখিকে। অভিমানে কিছুদিন ক্যাম্প ছেড়েও চলে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ক্যাম্পে যোগ দেন। তবে হতাশা একটুও কমেনি। দিনের পর দিন লক্ষ্যহীণ পথ চলতে কারই বা ভালো লাগে? দেশের ফুটবলের যে ভবিষ্যত নেই ঢের বুঝতে পেরেছিলেন। তাই চীনের প্রস্তাবটাকে লুফে নেন আঁখি।
দেশ রূপান্তরের কাছে ক্যাম্প ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'আমি ওখান থেকে চলে এসেছি ঠিক, তবে ফুটবলেই থাকবো। চীনে ভাল অ্যাকাডেমিতে অনুশীলন ও লিগ খেলার সুযোগ পাচ্ছি। তাই ওইখানে যাবো। এখন ভিসা নিয়ে কাজ করছি। আমার জন্য দোয়া করবেন।'
গত ফেব্রুয়ারিতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন সিরাজগঞ্জের গর্ব আঁখি। দেশে সুযোগ ছিল বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। তবে তিনি যে স্বপ্ন বুনেছেন চীনে লেখাপড়া করার, ‘মূলত আমি ওখানে পড়াশোনা ও খেলা এক সঙ্গে করবো। এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। তবে ভর্তি হইনি।’
তার এই সিদ্ধান্ত বাফুফেকে জানিয়েই নেওয়া। তবে জাতীয় দলের প্রয়োজনে যেখানেই থাকেন না কেন, চলে আসবেন, 'আমি পল স্যারকে (বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি) জানিয়েই ক্যাম্প ছেড়েছি। তাকে এটাও বলেছি আমি যেখানেই থাকি, জাতীয় দলের প্রয়োজন হলে চলে আসবো।'
সম্প্রতি মেয়েদের ক্যাম্পে লেগেছে দ্রোহের আগুন। তিনদিন আগে অভিমানে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের অন্যতম স্ট্রাইকার স্বপ্না। একই দিনে মেয়েদের ফুটবলের সকল সাফল্যের রূপকার অভিজ্ঞ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। মূলত বাফুফের গঞ্জনার শিকার হয়েই ছোটনের এই সিদ্ধান্ত। তাতেই হুলস্থুল লেগে গেছে ফুটবল অঙ্গনে। সালাউদ্দিন-কিরণের হাতে বন্দী নারী ফুটবল নিয়ে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। প্রিয় কোচ ছোটনের জন্য ভীষণ মন খারাপ আঁখির, 'সত্যি খুব খারাপ লাগছে স্যারের সরে যাওয়ার কথা শুনে।'
তাকে সুইডেনে খেলতে যেতে দেওয়া হয়নি। স্বপ্নাকেও ভারতের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। আঁখি অবশ্য এই অপ্রিয় বিষয়গুলো এড়িয়েই যেতে চাইলেন। শুধু বলেছেন, 'স্বপ্না আপুর ভারতে খেলার সুযোগ ছিল। তার সঙ্গে কী হয়েছে, সেটা সবার জানা। আমার সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটেছে।'
শেষটায় আঁখি যা বলেছেন, তা দিয়েই নারী ফুটবলের ভেতরের চিত্রটা ফুটে উঠেছে। তারা দেশকে অসংখ্য সাফল্য এনে দিয়েছেন। গোটা দেশের কাছে তারা একেকজন খেলার মাঠের বীর সেনানী। তবে তাতে তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। বাফুফের চতুর্থ তলায় গাদাগাদি করে থাকতে হয়। মাস শেষে জুটে নামকোয়াস্তে পারিশ্রমিক। সেটা বাড়ানোর দাবী করলেই নাম কাটা যায় গুডবুক থেকে। আঁখির কথায়, 'ভাইয়া, আমরা তো মেয়ে। আর কত কষ্ট করবো যদি ঠিকভাবে পারিশ্রমিকই না পাই?'
দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল হওয়ার পরও আঁখিদের আকাশ ঢেকে আছে নিকশ কালো অন্ধকারে। এর দায় কী এড়াতে পারবেন, বছরের পর বছর মসনদ আঁকড়ে রাখা ফুটবল কর্তারা?
হার দিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করলো চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। অন্যদিকে ৫-০ গোলের দাপুটে জয়ে শেষ করেছে দ্বিতীয় স্থানের আর্সেনাল। জিতেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর ৪-৪ গোলে ড্র করেছে লিভারপুল। সাউদাম্পটনের অবনমন আগেই নিশ্চিত হয়েছিল। রবিবার তাদের সঙ্গে নেমে গেছে লিস্টার ও লিডস। লিডস ১-৪ গোলে হেরে গেছে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে। আর ২-১ গোলে ওয়েস্টহ্যামকে হারিয়েও লাভ হয়নি লিস্টারের। বেন্টফোর্ডের মাঠে হালান্ড-গুনদোয়ানসহ প্রথমসারির কয়েকজনকে খেলানইনি পেপ গার্দিওলা। সামনে ছিলেন আলভারেজ, মাহরেজ, তাদের পেছেন ফোডেন। ৮৫ মিনিট পর্যন্ত অরক্ষিত রেখেছিল সিটি তাদের গোল। ঠিক ওই সময়ে ব্রেন্টফোর্ডের ইথান পিনোক। পঞ্চম হার দিয়ে লিগ শেষ করে সিটি।
নগর প্রতিদ্বন্দ্বি ম্যানইউ ঘরের মাঠে জেডন সানচো ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের দ্বিতীয়ার্ধের দুগোলে ফুলহ্যামকে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছে। চেলসির সঙ্গে নিউক্যাসলে ১-১ গোলে ড্র করায় চতুর্থ স্থান নিয়ে শেষ করলো সৌদি যুবরাজের মালিকানধীন নিউক্যাসল। সাউদাম্পটনের সঙ্গে ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েও একপর্যায়ে ৪-২ গোলে পিছিয়ে পড়ে হারের শঙ্কায় পড়েছিল লিভারপুল। ৭২ ও ৭৩ মিনিটে কোডি গাকপো ও ডিয়েগো জোতার গোল ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে ইয়ুর্গেন ক্লপের শিষ্যরা। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম হয়েছে লিভারপুল। ব্রাইটন হয়েছে ষষ্ঠ। ঘরে মাঠে জাকার দুই ও সাকার এক গোলে উলভসের বিপক্ষে প্রথমার্ধেই ৩-০তে এগিয়ে যায় গানার্সরা। দ্বিতীয়ার্ধে জেসুস ও কিইয়োর আরো দুই গোল করলে বড় জয়ের স্বস্তিতে মৌসুম শেষ করে একসময় শিরোপা লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।
ত্রাসবুর্গের মাঠে তাদের বিপক্ষে ড্র করে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানের শিরোপা নিশ্চিত করেছে পিএসজি। তাই সময়টা এখন তাদের উৎসবের। সময়টা উপভোগ করতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন পিএসজি গোলরক্ষক সার্জিও রিকো। কিন্তু সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছেন তিনি।
বর্তমান রিকোকে ইনটেনসিভ কেয়ারে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। পিএসজির এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘রিকোর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’ পরে ক্লাব থেকে জানানো হয়, তার প্রিয়জনদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
লিগ ওয়ান শিরোপা নিষ্পত্তি হওয়ার পর প্যারিসে ছুটি না কাটিয়ে নিজ দেশ স্পেনের সেভিয়ায় ফিরে যান রিকো। সেখানেই দুর্ঘটনার শিকার হোন তিনি।
স্পেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, ২৯ বছর বয়সী রিকো স্পেনের হুয়েলভা অঞ্চলের এল রোসিওতে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে দৌড়ে থাকা আরেকটি ঘোড়ার সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হোন তিনি। রিকোকে দুর্ঘটনাস্থল থেকে সেভিয়ার এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় হেলিকপ্টারে করে।
সেভিয়ার সাবেক এই গোলরক্ষক ২০২০ সালে পিএসজিতে যোগ দেন। তার আগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে ধারে কাটান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব ফুলহামে। পিএসজির হয়ে রিকো ২৯ ম্যাচ খেলেছেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেভিয়া থেকে চলে যান তিনি।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।