
বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ফ্রিজ উৎপাদকের দেশে রূপান্তরিত হলো বাংলাদেশ। শীর্ষ গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ওয়ালটন উন্মোচন করলো জায়ান্টটেক সিরিজের এআইওটি বেজড স্মার্ট নতুন তিন মডেলের রেফ্রিজারেটর। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম উৎপাদনকৃত ফোর ডোর রেফ্রিজারেটর এবং বিশ্বের প্রথম 'এইট ইন ওয়ান' কনভার্টিবল সাইড বাই সাইড ডোর ফ্রিজ। ওয়ালটনের জায়ান্টটেক সিরিজের এসব ফ্রিজের মধ্য দিয়ে হাই-টেক রেফ্রিজারেটর উৎপাদন ও বিপণনে নতুন যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। যা সৃষ্টি করলো প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও সক্ষমতার অনন্য নজির।
বুধবার রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে জায়ান্টটেক সিরিজের নতুন মডেলের ফ্রিজের উদ্বোধন উপলক্ষে জমকালো এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্বের সর্বাধুনিক ফ্রিজের উন্মোচন করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি'র ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও গোলাম মুর্শেদ। লঞ্চিং প্রোগ্রাম সঞ্চালনা করেন দেশের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আমিন খান।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি 'র ম্যানেজিং ডিরেক্টর গোলাম মুর্শেদ বলেন, বাংলাদেশের সব পণ্যই আগে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভর ছিল। ওয়ালটন এর হাত ধরে ইলেকট্রনিক্স পণ্য এখন দেশে উৎপাদন করা হচ্ছে। ওয়ালটন পণ্য উৎপাদন না করলে ডলার সংকটের এই মুহূর্তে ডলার খরচ করে এসব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। আমরা কথা দিচ্ছি বিদেশি কোম্পানিগুলো যেসব উন্নত মানের পণ্য তৈরি করে আমরা আপনাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে সেসব পণ্য পৌঁছে দেব। জায়ান্টটের সিরিজের ফ্রিজের মডেল ডেভলমেন্টের জন্য ইউরোপ, আমেরিকা, কোরিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বহুদেশের ফ্রিজ এক্সপার্টসদের নিয়ে কাজ করেছি।
বাংলাদেশে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন (আরএন্ডআই) সেন্টার ও প্রকৌশলী টিম গঠনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে ওয়ালটন। ওয়ালটনের শক্তিশালী আরঅ্যান্ডআই এর দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীগণসহ প্রোডাকশন, কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টসহ সব বিভাগের সদস্যরা গত পাঁচবছর ধরে জায়ান্টটেক সিরিজ ফ্রিজের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচার নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করেছেন। এরই প্রতিফলন হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম ফোর-ডোর ফ্রিজ উৎপাদনকারী দেশের মর্যাদা লাভ করলো বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বিশ্বের প্রথম 8in1 কনভার্টিবল সাইড বাই সাইড রেফ্রিজারেটর উৎপাদন ও বাজারজাতকারী দেশে বাংলাদেশের আবির্ভাব হলো। এর মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ফ্রিজ উৎপাদনকারী দেশে বাংলাদেশের রপান্তর ঘটলো। আমাদের এ ধরনের উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
ওয়ালটন ফ্রিজের সিবিও তোফায়েল আহমেদ বলেন, জায়ান্টটেক সিরিজের রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও ফিচার। বিশ্বের সকল আধুনিক দেশগুলোর বেঞ্চমার্ক উপযোগি করে জায়ান্টটেক সিরিজের রেফ্রিজারেটরগুলো তৈরি করা হয়েছে। এসব ফ্রিজে গ্রাহকেরা স্মার্ট সব প্রযুক্তি ও ফিচার পাবেন।
ওয়ালটনের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ইয়ুন মগ ইয়াং জানান, জায়ান্টটেক সিরিজের ফ্রিজে ব্যবহৃত হয়েছে থ্রি ডি এমএসও ইনভার্টার টেকনোলজি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট বেজড এই প্রযুক্তি এনভায়রনমেন্ট টেম্পেরেচারের থ্রিডি) ডাটা সংগ্রহের পাশাপাশি দরজা খোলা অবস্থায় ও ফ্রিজ কম্পার্টমেন্টের সঠিক টেম্পেরেচার অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফ্রিজের তাপমাত্রা সেট করে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ খরচে সর্বোচ্চ কুলিং পারফরমেন্স নিশ্চিত করবে। এছাড়া, বিশ্বের সর্বোচ্চ কনভার্টিবল মুডসমৃদ্ধ ওয়ালটনের জায়ান্টটেক রেফ্রিজারেটরের ফ্রিজ ও ফ্রিজার কম্পার্টমেন্টের কুলিং পারফরমেন্স গ্রাহক তার পছন্দমত সেট করতে পারবেন। এতে বিদ্যুৎ খরচ হবে অনেক কম।
ওয়ালটন রেফ্রিজারেটর ডিজাইন অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ইতসুরো সুজুকি জানান, নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মির মাধ্যমে ওয়ালটন ফ্রিজে সংরক্ষিত ফলমূল ও শাক-সবজি প্রকৃতির মতো সজীব রাখে। ফলে ওয়ালটন ফ্রিজে সংরক্ষিত ফল ও সবজির ভিটামিন, মিনারেলসহ অন্যান্য খাদ্যগুণ ও পুষ্টি অক্ষুণ্ণ থাকে। এসব ফ্রিজের ইউভি-সি টেকনোলজি বায়ুবাহিত ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থেকে ফ্রিজে রাখা খাবারকে সুরক্ষিত রাখে। ইন্টেলিজেন্ট জার্ম টার্মিনেটর টেকনোলজি বায়ুবাহিত জীবাণু ধ্বংস করে। থ্রি-লেয়ার ওডোর সেফ গার্ড অনাকাক্ষিত গন্ধ দূর করে খাবারের স্বাদ রাখে অটুট। স্মার্ট কন্ট্রোল ফিচার থাকায় উপরের দরজায় হাতের স্পর্শের মাধ্যমেই ফ্রিজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এরজন্য ফ্রিজের দরজা খোলার প্রয়োজন পরে না। ৬১৯ লিটার থেকে ৬৬০ লিটার ধারণক্ষমতার ওয়ালটনের জিটি সিরিজের রেফ্রিজারেটরগুলো বাজারে আসবে চলতি মাসেই। এই মডেলগুলোর দাম পড়বে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যে।
ওয়ালটনের জায়ান্টটেক সিরিজের মধ্যে রয়েছে ৬৬০ লিটারের জিটি প্রো ম্যাক্স, ৬৪৬ লিটারের জিটি প্রো এবং ৬১৯ লিটারের জিটি মডেলের রেফ্রিজারেটর। গ্রাহকেরা স্মার্টফোনে ওয়ালটন স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্সের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে এসব ফ্রিজ পরিচালনা করার পাশাপাশি অনলাইন শপিং ও ইউটিউবে কুকিং রেসিপি ব্রাউজ করতে পারবেন। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও সর্বাধিক ফিচারসমৃদ্ধ ওয়ালটনের এসব ফ্রিজ বাড়িয়ে দেবে ঘরের আভিজাত্য। নতুন এসব মডেলের রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার কমপার্টমেন্টের জন্য রয়েছে টারবো ও ইকো ফিচারসমৃদ্ধ ডুয়ো কুলিং সেটিংস। এসব ফ্রিজের এমএসও (ম্যাট্রিক্স স্পিড অপটিমাইজেশন) ইনভার্টার টেকনোলজি বাইরের তাপমাত্রা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ সর্বোচ্চ কুলিং পারফরমেন্স নিশ্চিত করবে। বিশ্বের সর্বোচ্চ কনভার্টিবল মুডসমৃদ্ধ ওয়ালটনের জায়ান্টটেক রেফ্রিজারেটরের ফ্রিজ ও ফ্রিজার কম্পার্টমেন্টের কুলিং পারফরমেন্স গ্রাহক তার পছন্দমত সেট করতে পারবেন। এতে বিদ্যুৎ খরচ হবে অনেক কম। এসব ফ্রিজ নিশ্চিত করবে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত স্বাস্থ্যকর ফ্রেস খাবার।
যেসব সুবিধা থাকছে
ওয়ালটনের ফোর-ডোর জিটি প্রো ম্যাক্স ও সাইড বাই সাইড ডোর জিটি প্রো মডেলের বিশেষ ফিচারের মধ্যে রয়েছে ওয়াটার ডিসপেন্সার। এছাড়া জিটি প্রো ম্যাক্স মডেলে ২১.৫ ইঞ্চি ও জিটি মডেলে ১৫.৬ ইঞ্চির মাল্টিমিডিয়া এলসিডি ডিসপ্লে। এতে ইউটিউব ব্রাউজিং, অনলাইন গ্রোসারি শপিং, অফলাইন ভিডিও ও অডিও কাউন্টডাউন ক্লক, অনলাইন রেসিপি, ক্লক, ক্যালেন্ডার, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, সেলফি ক্যামেরা, ওয়েদার আপডেট ইত্যাদি ফিচার রয়েছে। এছাড়া সাইড বাই সাইড জিটি প্রো মডেলে রয়েছে ডিজিটাল ডিসপ্লে। জিটি সিরিজের তিনটি মডেলেই স্মার্ট কন্ট্রোল ফিচার থাকায় উপরের দরজায় হাতের স্পর্শের মাধ্যমেই ফ্রিজ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এরজন্য ফ্রিজের দরজা খোলার প্রয়োজন পরে না। ফলে ম্যাক্সিমাম কুলিং পারফরমেন্সের সঙ্গে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় ।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি'র অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর শোয়েব হোসেন নোবেল, ওয়ালটন প্লাজা'র চিফ এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মোহাম্মদ রায়হান, ওয়ালটন হাই-টেকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর নজরুল ইসলাম সরকার, এমদাদুল হক সরকার, মো. হুমায়ুন কবীর ও মো. ইউসুফ আলী, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এম জাহিদ হাসান, আমিন খান, দিদারুল আলম খান (চিফ মার্কেটিং অফিসার), তোফায়েল আহমেদ (ওয়ালটন ফ্রিজের চিফ বিজনেস অফিসার), মো. ফিরোজ আলম, আজমল ফেরদৌস (হেড অব রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সেন্টার), আনিসুর রহমান মল্লিক, মো. শাহজাদা সেলিম (ইনচার্জ পিআর, মিডিয়া অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং) প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ওয়ালটন জায়ান্টটেক সিরিজের রেফ্রিজারেটগুলোর বিশেষ ফিচারের মধ্যে রয়েছে আয়োনাইজার, ওজোনাইজার ও ইউভি ফিচারসমৃদ্ধ ইন্টেলিজেন্ট জার্ম টার্মিনেটর (আইডিটি), ইলোকট্রনিক কন্ট্রোল ফিচার, ডোর ওপেনিং অ্যালার্ম, চাইন্ড লক, থ্রি লেয়ার ওডোর গার্ড, হিউম্যান ডিটেক্টর, ফিঙ্গার প্রিন্ট রেসিস্ট্যান্ট মেটাল ডোর, ইন্টার্নাল অটোমেটিক আইস মেকার, সিরামিক কোডেট প্রিমিয়াম গ্লাস এবং এলিগ্যান্ট কার্ভড ডিজাইন মেটাল ডোর ইত্যাদি।
ওয়ালটনের এসব ফ্রিজে ১ বছরের রিপ্লেসমেন্টসহ কম্প্রেসরে ১২ বছরের গ্যারান্টি এবং ৫ বছরের ফ্রি বিক্রয়োত্তর সেবার সুবিধা পাবেন ক্রেতারা। এছাড়া রয়েছে আইএসও সনদপ্রাপ্ত দেশব্যাপী বিস্তৃত ৭৯টি সার্ভিস সেন্টার থেকে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা।
টানা দ্বিতীয় মাসের মতো দেশের বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের নিচে। গেল আগস্টে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশে। আগের মাসে এটি ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ ছিল। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কমেছে দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ২২ মাস আগে ২০২১ সালের অক্টোবরে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
ব্যাংকাররা বলছেন, ব্যাংকে তারল্য সংকটের প্রভাব পড়েছে ঋণ বিতরণে। আমানতে কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি না হওয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। ফলে আগের অর্থবছরের চেয়ে কম প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংক খাত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পদ্ধতিগত কারণে বাজার থেকে টাকা উঠে যাওয়া এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আমানতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে খুব কম। এর মধ্যে বেনামি ঋণসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখছেন। এতে করে সৃষ্ট তারল্য সংকটের কারণে শরিয়াহভিত্তিক পাঁচটিসহ মোট আটটি ব্যাংক অনেক দিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) রাখতে পারছে না। এমনকি জরিমানার টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না কোনো কোনো ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। আগের বছরের আগস্ট শেষে যা ছিল ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা। ঋণস্থিতির হিসাব হয় সুদসহ। ফলে নিট ঋণ যে এত বেড়েছে তা নয়। বেসরকারি খাতে পরিস্থিতি এ রকম হলেও সরকারের ঋণ বাড়ছে দ্রুত। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ঋণ পরিশোধে মনোযোগী হয়েছে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরিশোধ করছে।
সাধারণভাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে থাকে। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রথমবারের মতো তা নেমে যায় ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে। করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর পর ব্যাপক হারে কমে গিয়ে ২০২০ সালের মে মাসের শেষে প্রবৃদ্ধি নামে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে। তবে পরের মাস জুন থেকে তা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ঠিক থাকার পরও ২০২১ সালের অক্টোবরের পর টানা দুই মাস বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি এক অঙ্কের ঘরে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেসরকারি খাতে ঋণ কমে গেলে নতুন কর্মসংস্থানে তা বাধা তৈরি করে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট, মুদ্রা পাচার এবং আমদানি কমে যাওয়ায় দেশে উৎপাদন কমেছে। এটা নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া সার্বিকভাবে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পরিবেশ না থাকায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাংলাদেশ ব্যাংকের করা প্রাক্কলনের চেয়েও কম। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ। আর আগে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর প্রাক্কলন করা হয়েছিল ১৪ দশমিক ১০ শতাংশ। এরও আগের অর্থবছর ২০২১-২০২২-এ প্রাক্কলন করেছিল ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। যদিও প্রাক্কলিত হারের চেয়ে লক্ষ্যমাত্রার অর্জন ছিল অনেক কম।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের আগস্ট শেষে দেশের ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ঋণের পরিমাণ ছিলো ২ লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকা। এসব ঋণের বেশিরভাগই নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। যদিও চলতি অর্থবছর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ কমানোর চেষ্টা করছে সরকার। ব্যাংকারদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাজারে টাকা ছাড়ার ফলে নোটের পরিমাণ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১ টাকা বাজারে ছাড়লে তা ৫ গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এসব বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া মানে বাজারে টাকা ছাড়া, যা মুদ্রাস্ফীতি ও লেনদেন ভারসাম্যের (বিওপি) ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। অর্থায়ন কমে যায় বেসরকারি খাতে। ফলে কমে যেতে পারে নতুন কর্মসংস্থান। জনগণের হাতে অতিরিক্ত অর্থ থাকলে পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে, যা দাম বৃদ্ধি করবে। বিপুল পরিমাণ অর্থ বাজারে ছাড়লে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক এই কর্মকর্তা। অর্থের প্রচলন বেড়ে গেলে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা বেড়ে যায়, যার ফলে আমদানিও বাড়ে।
ফ্রস্টেড এলিগেন্স ডিজাইনের দারুণ চমকে দেশে যাত্রা শুরু করছে ভিভো ওয়াই ১৭এস। আকর্ষনীয় গিস্নটার পার্পেল এবং ফরেস্ট গ্রিন রঙের ভিভো ওয়াই ১৭এস স্মার্টফোনটিতে রয়েছে ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি, ৮৪০ নিটস হাই ব্রাইটনেস ডিসপ্লে, ৫০ মেগাপিক্সেল এইচডি ক্যামেরাসহ দারুণ সব ফিচার।
স্মার্টফোনে রঙের ব্যবহারে বরাবরই বেশ রুচিশীল গেস্নাবাল স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিভো। এবার ভিভো ওয়াই১৭এস এর ব্যাক সাইডের রঙ নির্বাচনেও পাওয়া যাচ্ছে এমনই রুচিশীলতার পরিচয়।
প্রথম লুকেই গিস্নটার পার্পেল কিংবা ফরেস্ট গ্রিন রং দেবে চোখের আরাম, মনে আসবে এক ধরনের প্রশািন্তর অনুভূতি আর সেই অভিব্যক্তি মুখের ভাষায় হবে ‘অসাধারণ’। ব্যাক সাইডে ক্যামেরার চারপাশে স্কয়ার শেপের অভিনব গস্নসি ডিজাইন নজর কাড়বে সবার। ২.৫ডি কার্ভড ডিজাইন এবং কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালের সিল্কি স্মুথ ফিনিশ দেবে দুর্দান্ত গ্রিপ। তাই লুকে বাজিমাত করার পাশাপাশি মাত্র ১৮৬ গ্রামের স্মার্টফোনটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাওয়া যাবে স্মুথ ও লাইট অভিজ্ঞতা।
এবার আসি, কেমন পারফরমেন্স করবে ভিভো ওয়াই ১৭এস। স্মার্টফোনটির ডান পাশেরই রয়েছে সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানার যা অত্যন্ত দ্রুত লক-আনলক করতে সক্ষম। রয়েছে ফেস ওয়াক। এই দুইটি ফিচার যেমন দ্রুত কাজ করে সময় বাঁচাবে তেমনি ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা দিয়ে ব্যবহারকারীকে রাখবে নিশ্চিন্ত। চাইলে ব্যবহারকারী ঠিক করতে পারবে তার স্মার্টফোন অন্যরা দেখার সময় কোনো অ্যাপ বা ইন্টারফেস দেখতে পারবে কি না। এমনকি নিরাপত্তার স্বার্থে লোকেশন এবং ব্যক্তিগত তথ্য বাদ দিয়ে ছবি শেয়ার করতে পারবে ব্যবহারকারী।
প্রসেসর হিসেবে মিডিয়াটেক হেলিও জি৮৫ এবং অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে ফানটাচ ও এস ১৩ রয়েছে ভিভো ওয়াই ১৭এস- এ। দুয়ে মিলে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা দেবে স্মার্টফোনটি। ৬.৫৬ ইঞ্চি এলসিডি মাল্টিটাচ ক্যাপাসিটিভ ডিসপ্লেতে পাওয়া যাবে ১৬১২ ও ৭২০ রেজুলেশন। এর ২৬৯ পিপিআই পিক্সেল ডেন্সিটি রঙের আসল উজ্জ্বলতা তুলে দেবে কন্টেন্ট উপভোগের অন্যন্য অভিজ্ঞতা। ৮৪০ নিটস পর্যন্ত ব্রাইটনেস থাকায় যেকোনো আলোতে ডিসপ্লে ব্যবহারে আলো-জটিলতা থেকে মুক্তি মিলবে সহজেই। যা এই বাজেটের মধ্যে এবারই প্রথম।
একাধিক অ্যাপ ব্যবহারের পাশাপাশি স্পিলিট স্ক্রিন মুড অন করে দুইটি অ্যাপ এক সাথে একই স্ক্রিনে কাজ করা যাবে। মাল্টিটাস্কিং এ অন্যন্য অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে ভিভো ওয়াই১৭এসে। রয়েছে ৬ জিবি র্যামের পাশাপাশি আরো ৬ জিবি র্যাম বাড়ানোর সুযোগ। স্টোরেজের দুশ্চিন্তা দূর করতে রয়েছে ১২৮ জিবি রমের সুবিধা।
১৩ ঘণ্টা টানা সট ভিডিও দেখা, ১৯ ঘণ্টার বেশি অনলাইনে কন্টেন্ট উপভোগ কিংবা ৬০ ঘণ্টা অনলাইনে গান শোনা-ভিভো ওয়াই১৭এস এর পাঁচ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি সুবাদে এই সকল সুবিধা উপভোগ করতে পারবে গ্রাহক। সাথে রয়েছে ১৫ ওয়াটের টাইপ সি ফ্ল্যাশ চার্জার। একবার চার্জে সারা দিনে ব্যবহারের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা মিলবে নিমিষেই।
৫০ মেগাপিক্সেল রেয়ার ক্যামেরা লেন্সের পাওয়া যাবে ১.৮ এফ অ্যাপারচার। পারফেক্ট সেলফির জন্য রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা এবং ২ মেগাপিক্সেল বোকেহ। সাথে রয়েছে চমৎকার সব ক্যামেরা মুড। রাতের ছবির জন্য রয়েছে সুপার নাইট মুড। রাতের দুর্দান্ত সব ছবি ধরা দেবে এই ক্যামেরা মুডে। আরো রয়েছে প্যানোরামা, লাইভ ফটো, স্লো-মো, টাইম-ল্যাপস, প্রো, ডকুমেন্টস মোড। তাই ক্যামেরায় নিজের হোক কিংবা অন্যের, ছবি হবে দশে দশ।
ভিভোর যেকোনো অথোরাইজড শো রুম কিংবা ই-স্টোরের আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ১৫ হাজার ৯৯৯ টাকায় হাতের নাগালে পাওয়া যাবে দুর্দান্ত ভিভো ওয়াই ১৭এস ।
জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটেগরিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২২’ পেয়েছে টেকনো মিডিয়া লিমিটেড। মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২২’ বিতরণ অনুষ্ঠান হয়।
অনুষ্ঠানে টেকনো মিডিয়া লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. যশোদা জীবন দেবনাথের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ বছর ছয় ক্যাটেগরিতে মোট ১২ টি প্রতিষ্ঠানকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার ২০২২’ প্রদান করল শিল্প মন্ত্রণালয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিতদের হাতে স্বর্ণখচিত ক্রেস্ট, সম্মাননাপত্র তুলে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মো. মাহবুবুল আলম।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে এবং শিল্প উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানকে শিল্প খাতের অবদানের স্বীকৃতি প্রদান, প্রণোদনা সৃষ্টি ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিতীয় বারের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. যশোদা জীবন দেবনাথ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার বেসরকারি খাতের প্রতি সরকারের ধারাবাহিক পৃষ্ঠপোষকতার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। এ স্বীকৃতি উদ্ভাবনি ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের অন্যতম সহযোগি হিসেবে কাজ করতে আমাদের আরও অনুপ্রাণিত করবে।’
টেকনো মিডিয়া লিমিটেড সারাদেশে এটিএম বুথ, নোট সর্টিং মেশিন, নোট বাইন্ডিং মেশিন, ব্যাংকিং সফওয়্যার, অনলাইন চেক ক্লিয়ারিং সফটওয়্যারসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকে। দেশের এটিএম সেবার ৭০ শতাংশই প্রদান করে থাকে টেকনো মিডিয়া।
গত অর্থবছর সরকার ব্যাংক খাত থেকে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল। যার অধিকাংশই নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। তবে চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে মনোযোগী হয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণের প্রবাহ বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২৬ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা ঋণ শোধ করেছে। এজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ২৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। অর্থাৎ অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এতে ব্যাংক খাতে সরকারের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের শেষে এই ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানান, দেশের ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট চলছে। এর কারণে অনেক ব্যাংক তাদের চাহিদা মেটাতে অন্যদের কাছ থেকে ধার করছে চলছে। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকও বড় অঙ্কের ধার দিচ্ছে। অনেক ব্যাংক ঋণের অর্থ আদায় করতে পারছে না। একইসঙ্গে আমানতের পরিমাণও আগের তুলনায় কমছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার কিনতেও ব্যাপক পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো থেকে সরকার ঋণ নিলে তারল্য সংকট আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার যে ঋণ নিয়েছে চলতি বছরের জুন শেষে সেই ঋণের স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। আর ২৫ সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকে ২৬ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। আর জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণস্থিতি ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ২৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা।খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের সুদ ব্যয় কমাতে নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্রে ঋণ কমেছে। এই চাপ সামাল দিতে ব্যাংকের উপর নির্ভরতা বেড়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববাজারে তেল ও সারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত অর্থবছর ব্যাংক খাত থেকে মাত্রাতিরিক্ত ঋণ নিয়েছে, যা মূল্যস্ফীতির উপর বড় ধরণের প্রভাব ফেলেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে সবাই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমানো পরামর্শ দিয়েছেন। আর সেই পরামর্শের আলোকেই কমেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থেকে সরকারের ঋণ।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইয়ে ব্যাংক, ডাকঘর ও সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে গ্রাহকরা বিভিন্ন স্কিমে ৭ হাজার ৮৬০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। একই সময়ে মূল সঞ্চয়পত্রের অর্থ ও মুনাফা পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। ফলে জুলাই শেষে এ খাতে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছিল ৩৯৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের একই মাসের তুলনায় খাতটিতে বিক্রি বেড়েছে।
যদিও এই খাত থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে মাত্র ১৮ হাজার কোটি টাকা নেবে সরকার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা বা ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্য ঠিক করা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রজ্ঞাপন জারি করে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়েছিল সরকার। একই প্রজ্ঞাপনে কয়েকটি স্তর করে দিয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)। এর পর থেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমতে থাকে। সরকার এ খাতে সুদ ব্যয় কমাতে এমন কঠোর উদ্যোগ নিয়েছে। চলতি অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। আগের অর্থবছরে এ খাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।
গত ৪১ মাসের মধ্যে (বছরের হিসাবে সাড়ে তিন) সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে সদ্যসমাপ্ত সেপ্টেম্বর মাসে। সেপ্টেম্বরে দেশে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। আগের মাসে অর্থাৎ আগস্টে প্রায় ১৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিলে সর্বনিম্ন ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
বিশ্লেষকরা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলের চেয়ে খোলা বাজারে যখন ডলারের দামের ব্যবধান বেশি হয় তখন হুন্ডি বেড়ে যায়। আর যখন হুন্ডির চাহিদা বাড়ে তখন রেমিট্যান্স কমে যায়। গত মাসে ব্যাংকের চেয়ে খোলা বাজারে ডলারের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা বেশি ছিল। তাই বেশি লাভের আশায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। এ অঙ্ক আগের বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১৯ কোটি ৫৯ লাখ বা ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাংকিংয়ের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের রেট অনেক বেশি। ফলে প্রবাসীদের হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে আগ্রহ বাড়ছে। প্রবাসী আয়ের ওপর দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এ দুই শতাংশ প্রণোদনাসহ প্রতি ডলারের বিনিময়ে ব্যাংক থেকে যে টাকা পাওয়া যায়, খোলাবাজারে এর চেয়ে ৪-৬ টাকা বেশি পাওয়া যায়। ফলে আগে যারা বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করে টাকা পাঠাতেন, তারা এখন হুন্ডির পথ বেছে নিয়েছেন।
তাদের মতে, কিছু প্রবাসীর বৈধ কাগজপত্র থাকে না। ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানো সম্ভব হয় না। তারা হুন্ডিতে টাকা পাঠাতে বাধ্য হন। তা ছাড়া প্রবাসীদের একটা বড় অংশ অল্প শিক্ষিত। ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করা কিংবা টাকা পাঠাতে তাদের আগ্রহ কম থাকে। বিপরীতে হুন্ডিতে টাকা পাঠানো সহজ। যার মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়, তিনি সরাসরি ওই দেশের মুদ্রা নিয়ে দেশে টাকা দেন। এতে কোনো ঝামেলাই হয় না।
সৌদি আরব প্রবাসী কাজী জাবের ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রথম দিকে ব্যাংকে টাকা পাঠাতাম। কিন্ত হিসাব করে দেখলাম হুন্ডিতে টাকা পাঠালে ৫-৭ হাজার টাকা বেশি লাভ হয়। তাই কয়েকমাস ধরে এভাবে টাকা পাঠাচ্ছি।
ওমান প্রবাসী বুরহান উদ্দীন ফোনে দেশ রূপান্তরকে বলেন, মাসে একটা নির্দিষ্ট দিনে একজন এসে এ দেশের টাকা নিয়ে যায়, আর পরেরদিন দেশে টাকা দেয়। এখানে আরেকটা সুবিধা হলো টাকা না থাকলেও ওই হুন্ডি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দেশে টাকা পাঠানো যায়, মাস শেষে বেতন পেলে এই টাকা পরিশোধ করি।
ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১৮ আগস্ট ৯ বছরের শিশু আরাফাতের মৃত্যু হয়। সপ্তাহ না যেতেই ২৫ আগস্ট মারা যায় আরাফাতের ছোট বোন ৬ বছরের রাইদা। রাজধানীর মধ্যপাইকপাড়ার ছাপাখানা মোড়ের একটি বাসায় দুই সন্তান আরাফাত ও রাইদাকে নিয়ে থাকতেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম ও রাবেয়া আক্তার দম্পতি। সন্তানদের মৃত্যুর পর জীবনটাই বদলে গেছে তাদের। তছনছ হয়ে গেছে সাজানো সংসার। ইব্রাহিম ও রাবেয়া দম্পতির মতো বহু পরিবার এবার সর্বস্বান্ত হয়েছে ডেঙ্গুজ¦রের থাবায়। সন্তান হারানো এমন বাবা-মায়েরা পাগলপ্রায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৮৬ এবং নারী ৯১ জন। এবার শুধু শহর নয়, গ্রামেও ছড়িয়েছে ডেঙ্গু। সেখানেও মারা গেছে অনেক শিশু। এ বছর ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যু নিয়মিত ঘটনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এই রোগে এত শিশুর মৃত্যু আগে কখনো হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছর শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ৬৩ হাজার ৯১৯ জন; যা মোট আক্রান্তের ৩২ শতাংশ। এর মধ্যে নারী ২৩ হাজার ৬১৭ এবং পুরুষ ৪০ হাজার ৩০২ জন। ডেঙ্গুতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। তথ্য বলছে, ডেঙ্গুতে শিশুদের আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার কম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের যারা সুস্থ হয়ে উঠছে, তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডেঙ্গুর বর্তমান সংক্রমণের মধ্য দিয়ে শিশুদের জন্য নতুন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। তাদের মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতি শিশুদের নতুন বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বিরূপ প্রভাব শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। মস্তিষ্ক ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এর প্রভাব থাকতে পারে। এতে তাদের মেধাবিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাদের যদি কিডনি কিংবা লিভারের মতো অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেই ভার সারা জীবন বহন করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিশুদের মৃত্যু নিয়ে ভালোভাবে অ্যানালাইসিস করতে পারছি না। এসব মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে অটোপসি করতে পারলে ভালো হতো। বিভিন্ন দেশে মৃত্যু নিয়ে ডেথ রিভিউ বা অটোপসি করা হয়। এটি করতে পারলে বাংলাদেশে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।’
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। কোনো শিশুর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলে পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, ১ মাস থেকে ১২ বছর বয়সী মুমূর্ষু শিশু রোগীদের পৃথক পিআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। তবে দেশে পিআইসিইউ সংকট রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পিআইসিইউর জন্য স্বজনদের হাহাকার করতে দেখা গেছে। হাসপাতালগুলোতে দেখা গেছে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ শিশুকে সেবা দিতে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা যেমন বেশি, সেখানে শিশু রোগীও উল্লেখযোগ্য। এই দুটি হাসপাতালে একেকটি শয্যায় একাধিক শিশু রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড খুলেছে কর্তৃপক্ষ। ৭০ থেকে ৮০ জনের সেবা পাওয়ার কথা, কিন্তু সেখানে প্রতিদিন সেবা নিচ্ছে প্রায় ৩০০ শিশু। ঢামেক হাসপাতালের ২৫ শিশুকে একসঙ্গে পিআইসিইউতে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। কিন্তু মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো পিআইসিইউ নেই।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখানে শিশুদের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পিআইসিইউ নেই, তবে এনআইসিইউ (নিউনেটাল আইসিইউ বা নবজাতকদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) আছে।
এদিকে শিশু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গু শনাক্তে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। শিশুদের ডেঙ্গুর চিকিৎসা প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা ইয়াসমীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিশুদের জ্বর আসার তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে। এবার অনেকের মধ্যে হঠাৎ করে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। ফলে তারা দেরিতে চিকিৎসা নিতে আসছে। দেখা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে যেসব শিশু মারা গেছে, তারা বাড়ি থেকেই জটিলতা নিয়ে এসেছে। এখানে একটি বিষয় লক্ষ রাখতে হবে, শুধু প্লাটিলেট কমা আশঙ্কার নয়, রক্তচাপ কমে যাওয়া প্লাটিলেট কমার চেয়ে ভয়ের। তাই আমাদের শিশুদের রক্তচাপ নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে।’
স্যাংশন নিয়ে ভয় না পাওয়ার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার মেথডিস্ট সেন্ট্রাল হলে নাগরিক সংবর্ধনায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি পাল্টা স্যাংশন দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
সংবিধান অনুযায়ী সরকারের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে জানান তিনি। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ইস্যু সম্পর্কে প্রশ্ন রাখেন, সাজাপ্রাপ্ত কাউকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় কোন দেশ?
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশের সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠায় বলতে পারেন? কোনো দেশে পাঠায়? তারা এটা দাবি করে। আমাদের কেউ কেউ আঁতেল আছে। তারা বলে, একটু কী সহানুভূতি দেখাতে পারেন না! সে এভারকেয়ার, বাংলাদেশের সবথেকে দামি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। আর রোজই শুনি এই মরে মরে, এই যায় যায়। বয়সতো আশির ওপর। মৃত্যুর সময় তো হয়ে গেছে। তার মধ্যে অসুস্থ। এখানে এত কান্নাকাটি করে লাভ নাই।
স্যাংশনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। আপনাদেরও বলব, স্যাংশন নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসন ‘অসুস্থ’ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে শর্ত দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই শর্তের অন্যতম ইস্যু হচ্ছে, বিএনপিকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। এমন ঘোষণার পরপরই খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিদেশে যাওয়ার অনুমতি মিলবে। কিন্তু সরকারের সেই শর্তে রাজি নন খালেদা জিয়া। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো শর্তের বিনিময়ে তিনি মুক্তি চান না। ফলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার সরকারের যে চেষ্টা, সেটা এ দফায় সফল হচ্ছে না বলে মনে করছেন আন্দোলনে থাকা নেতারা। তাদের মতে, সরকার ফাঁদ পাতলেও এতে পা না দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে বেগম জিয়ার। বরং আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলতে চান তারা। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করেই আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ লক্ষ্যে প্রায় অর্ধশত দল নিয়ে গত প্রায় এক বছর ধরে আন্দোলনে রয়েছেন তারা।
শর্তের বিনিময়ে মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে গত রবিবার রাতে কিশোরগঞ্জে বিএনপির রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে শর্ত দেওয়া হয়েছিল তিনি যদি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে চান, তাহলে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আসতে হবে। বিএনপি থেকে উত্তর দেওয়ার আগেই অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া বিদ্রোহ করে বলেছেন, তার জীবনে গণতন্ত্রের জন্য কোনো শর্ত নেই। ভোটের অধিকারের জন্য, এই দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য কোনো শর্ত নেই। কোনো শর্ত খালেদা জিয়ার নামের সঙ্গে যায় না এবং আমরাও তা মানি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়া ৫৪ দিন ধরে টানা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়মিতই খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ অবস্থা খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এ সময় বেশ কয়েকবার শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়লে দলের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের দেওয়ার বক্তব্যের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কয়েকজন সম্পাদক ও সদস্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। সূত্রগুলো বলছে, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কথা প্রসঙ্গে এ ধরনের প্রসঙ্গেও ইঙ্গিত দিলে খালেদা জিয়ার শর্ত দিয়ে মুক্ত হতে চান না বলে পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও এর আগে শর্ত দিয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে দল যাতে সম্মত না হয়, সে কথা নেতাদের আগেই বলে রেখেছিলেন একসময় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এ নেত্রী। কোনো অবস্থায় শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না এবং এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সমঝোতাও নয়Ñ এ ব্যাপারেও খালেদা জিয়ার স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করেন। সাক্ষাৎ শেষে বেরিয়ে এসে মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের এ আন্দোলনে উনার সমর্থন আছে। আমাদের একজন নেতা (ওই বৈঠকে) বলেছেন, সরকার একটা নির্বাচনের জাল বিছানোর চেষ্টা করছে। উনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, কোনো অবস্থায় এ সরকারের অধীনে নির্বাচনী ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।’
এর আগে ৮ মে রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সাক্ষাৎ শেষে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছিলেন, কেউ কেউ বলছেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়া উচিত। এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন, প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে আমি কোনো অনুমতি দেব না।
এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি মনে করছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি এখন সরকারের বিদায়ের ওপর নির্ভর করছে। আন্দোলনে এ সরকারকে বিদায় করতে না পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দরজা খুলবে না। তাই এখন আন্দোলনের মাধ্যমে এ ইস্যুর সমাধান করবে তারা। এজন্য চলমান এক দফার আন্দোলনের সঙ্গে এখন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা ইস্যুটি জোরালোভাবে সম্পৃক্ত করতে চান তারা। এতে সরকারবিরোধী আন্দোলন বড় ধরনের মোড় নিতে পারে বলে তাদের বিশ্বাস।
গতকাল সোমবার স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সভায় খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। আগামী ৫ অক্টোবর বিএনপি ঘোষিত রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ হবে। এর আগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি।
জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘দাবার ঘুঁটি হিসেবে খালেদা জিয়াকে ব্যবহারের চিন্তা তারা কীভাবে করে সেটাই বোধগম্য নয়। সরকারের এ ধরনের চিন্তা বা পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে বিএনপিপ্রধানের পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদনের ওপর গত রবিবার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে বলেছে, সাজা স্থগিত থাকাবস্থায় তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই। যদি যেতে হয়, তাহলে সাজা স্থগিতের আদেশ বাতিল করতে হবে। কিন্তু সেটা করে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে বিদেশে পাঠানোর অনুমতির জন্য আদালতে যেতে রাজি নয় খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপি।
আবার গতকাল নিজ কার্যালয়ে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মেহেদী হাছান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি কিংবা আপিল বিভাগে আবেদন করতে পারেন। তবে তার আগে তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যেতে হবে। রাষ্ট্রপতি বা আপিল বিভাগের খালেদা জিয়ার পরিবার আবেদন করবে না বলে দলীয় আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন নেই বলেই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভয়ংকর তামাশা করা হয়েছে। যে নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেখানে বলা হয়েছে, তাকে “দেশে চিকিৎসা নিতে হবে”, তার বদলে “দেশে বা বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারবেন” বলাই যথেষ্ট। এর বাইরে দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেই।’
এদিকে চিকিৎসক সূত্র জানা গেছে, বর্তমানে খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল তার আলট্রাসনোগ্রাম ও ইকো করা হয়েছে।
দেশে এ বছর ভয়বাহ আকার ধারণ করছে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বর। প্রায় প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গুর জীবানুবাহী এডিস মশা এবং ডেঙ্গুজ্বরের উপসর্গেও।
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা পার করেছে হাজারের ঘর। এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষের মনে জাগছে নানা রকম প্রশ্ন। এমনই কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তক সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা। যা দেয়া হল এখানে,
ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী মশার নাম এডিস এজিপ্টি যা আমাদের দেশে ডেঙ্গু মশা নামেই বেশি পরিচিত।
এডিস মশা কামড়ানোর কারণেই ডেঙ্গু জ্বর হয়। যদিও এই মশা কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জ্বর হয় না।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা সাবেরা গুলনাহার বলেন, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হবার পর থেকে লক্ষ্মণ দেখা দিতে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে।
এই সময়কে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড।
সাধারণত এডিস মশা কামড়ানোর পাঁচ থেকে সাত দিন মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর আসে। আর এই জ্বর থাকে পাঁচ থেকে ছয় দিন পর্যন্ত।
চিকিৎসকদের মতে, ডেঙ্গু ভাইরাসের চার রকম সেরোটাইপ পাওয়া যায়। এগুলো হলো- ডেন - ১, ডেন - ২, ডেন - ৩ এবং ডেন - ৪।
সহজ কথায়, একজন মানুষ তার সারা জীবনে সর্বোচ্চ চার বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন।
অর্থাৎ একবার একটি ধরনে আক্রান্ত হবার পর তা সেরে গেলে, তার শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয়, তা সারা জীবনের জন্য কাজ করে।
এরপর যদি তিনি পুনরায় আক্রান্তও হন, সেটি হবে ডেঙ্গুর ভিন্ন কোন ধরন।
অধ্যাপক গুলনাহার বলছেন, যতদিন রক্তে ভাইরাস থাকবে, ততদিন রোগীর শরীরে জ্বর থাকবে।
কেবলমাত্র রক্ত জীবাণুমুক্ত হলেই ডেঙ্গু জ্বর সেরে যায় একজন আক্রান্ত ব্যক্তির।
অধ্যাপক গুলনাহার বলছেন, প্রথমবার ডেঙ্গু হলে অনেকেই তা বুঝতে পারেন না। সামান্য শরীর ব্যথা ও একটু জ্বরের লক্ষ্মণ থাকলেও সাধারণত এসময় সর্দিকাশিও থাকে না।
একে ব্রেকবোন ফিভারও বলা হয়। পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই এই জ্বর ভালো হয়ে যায়।
তবে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে, অর্থাৎ অন্য আরেকটি সেরোটাইপে আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে জটিলতা তৈরি হয়।
কারণ প্রথম বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয়, সেটার সঙ্গে নতুন ভাইরাসের এন্টিজেনের এক ধরনের রিএকশন হয়। যার ফলে হেমোরেজ বা প্লাটিলেট কমে যাওয়ার মতো জটিলতা তৈরি হয়।
ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে, ক্ষেত্রবিশেষে প্রথমে খুব জ্বর ওঠার পর তা কমে যায়। এসময় কিছুটা সুস্থ বোধ হলেও, এটিই আসলে সবচেয়ে জটিল পর্যায়। কেননা এসময়েই আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে প্লাটিলেট কমে যায় এবং রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এ সময় সুস্থ বোধ করায় শিশুরাও খেলাধুলা করতে চায়। তবে এটা একেবারেই করা যাবে না। এই সময়ে যেকোনো ধরনের পরিশ্রমের কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সম্পূর্ণ বিশ্রাম করতে হবে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলছেন, একটি পূর্ণ বয়স্ক এডিস মশা গড়ে ১৫-৪০ দিন বাঁচে।
মূলত তাপমাত্রার ওপর এডিস মশার আয়ু নির্ভর করে।
যেমন, শীতকালে এডিস মশা বেশি বাঁচে, আবার গরম কালে এডিস মশার বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার দ্রুত হয় বলে এ সময়ে এডিস মশা কম বাঁচে।
একসময় বলা হতো ডেঙ্গু মশা শুধুমাত্র দিনের বেলা কামড়ায়। কিন্তু সে ধারণা এখন আর কাজ করছে না।
কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এডিস মশা তার চরিত্র বদলেছে। এখন দিনে বা রাতে সব বেলাতেই কামড়াতে পারে এডিস এজিপ্টি, বিশেষ করে রাতে যদি ঘর আলোকিত থাকে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাসার বলেছেন, ল্যাবে করা পরীক্ষায় দেখা গেছে, একটি এডিস মশা জীবদ্দশায় গড়ে চার থেকে ছয় বার কামড়ায়।
কেবল মাত্র স্ত্রী মশাই কামড়ায়। ফলে একমাত্র স্ত্রী এডিস মশাই ডেঙ্গুর জীবাণু বহন করে। আর স্ত্রী এডিস মশাও কেবল মাত্র পেটে ডিম থাকা অবস্থাতে কামড়ায়।
এডিস মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু হয়- এমন একটি ভুল ধারনা অনেকের মধ্যেই প্রচলিত রয়েছে, যা সঠিক নয়।
আরেকটি ভুল ধারনা হলো যে আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পর পরই সুস্থ একজনকে কামড়ালে তারও ডেঙ্গু জ্বর হবে।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশার মাধ্যমে তখনই একজন ব্যক্তি ডেঙ্গু আক্রান্ত হবেন, যখন মশাটি ভাইরাস ইনফেক্টেড অথবা ভাইরেমিক হবে।
একটা এডিস মশা ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে কামড়ে যখন ভাইরাস ছড়ানোর উপযোগী হয় তখন এটাকে বলা হয় ভাইরেমিক। মূলত আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর পর ডেঙ্গু মশাকে ভাইরাস বিস্তারের উপযোগী হতে একটি জীবনচক্র পূরণ করতে হয়।
অর্থাৎ আক্রান্ত কাউকে কামড়ানোর মাধ্যমে মশার দেহে ভাইরাসটি প্রবেশ করে। এরপর ডিম পারা এবং বংশবিস্তারের মাধ্যমে ওই মশা ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়াতে সক্ষম হয়, অর্থাৎ ভাইরেমিক হয়। এরপর যতদিন মশাটি বেঁচে থাকবে ততদিন পর্যন্ত ডেঙ্গুর জীবাণু ছড়াতে পারবে।
এছাড়াও জীবাণু বহনকারী ওই মশা যত ডিম পারে, তার সবগুলোতেই ভাইরাস থেকে যায়। আর সেই ডিম যদি প্রকৃতিতে অনুকূল পরিবেশ পায় তবে সেখান থেকে জন্মানো মশার কামড়েও ডেঙ্গুর ভাইরাস ছড়াতে পারে। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ট্রান্সওভারিয়াল ট্রান্সমিশন।
এভাবে ভাইরাসের বাহক হয়ে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ ডেঙ্গু মশা জন্মাতে পারে বলে জানান কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার।
ডেঙ্গু কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়, এটি কেবল মাত্র মশার মাধ্যমেই ছড়ায়। মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না।
অর্থাৎ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে স্পর্শ করলে, একই বিছানায় ঘুমালে কিংবা তার ব্যবহৃত কিছু ব্যবহার করলে, অন্য কারো এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
এডিস মশা ব্যতীত স্পর্শ বা অন্য কোনভাবে এই রোগ ছড়ানোর উপায় নেই।
এমনকি অন্য প্রজাতির মশার মাধ্যমেও ডেঙ্গু ছড়ায় না।
রোগীকে স্বাভাবিক সব ধরণের নরম খাবার খেতে দেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা
ডেঙ্গু হলে রোগীকে স্বাভাবিক সব ধরণের নরম খাবার খেতে দেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
অধ্যাপক গুলনাহার বলেন, ডেঙ্গু হলে রোগীর শরীরে পানি স্বল্পতা হয়। তাই এই সময় তরল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়াতে হয়।
সেইসাথে বাড়িতে ফল থেকে বের করা জুস, স্যুপ, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, বা অন্যান্য তরল খাবার প্রচুর পরিমাণে দেয়া যেতে পারে। এগুলো শরীরের পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে খাবারে কিছু বিধিনিষেধ থাকতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
“খাবারের মধ্যে ভারসাম্য থাকতে হবে, অনেককে দেখেছি দিনে ১০-১২টা ডাব খেতে, অনেকে লিটারে লিটারে পানি খাচ্ছে এগুলো অস্বাভাবিক।
আবার কিছু না করাও ঠিক না। যদি কারও দিনে তিন চার ঘণ্টা পর পর প্রস্রাব হয়, প্রস্রাবের রং হলুদ না হয়, তারমানে তার আর্দ্রতা স্বাভাবিক আছে” বলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ।
বাড়ির আশপাশ যতটা সম্ভব পরিষ্কার রাখতে চেষ্টা করুন।
ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব কিংবা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন এবং ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত তিন বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম রাখতে পারেন সঙ্গে।
সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করতে পারেন।
যেখানে সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির পাশাপাশি ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
বাড়ির ছোট সদস্যদের ফুল হাতা জামা পরিয়ে রাখুন এবং মশা যাতে না কামড়াতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। প্রয়োজনে মশা নিধন ক্রিম ব্যবহার করুন।
তিনি জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রণীত আইনের অধীনে ধানমন্ডিতে যে বাড়ি পেয়েছিলেন শেখ রেহানা, বিএনপি ক্ষমতায় এসে সে বাড়ি উচ্ছেদ করে। সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি করছে আর ‘লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে’ সেই পুলিশ ফাঁড়ি উদ্বোধন করেছে খালেদা জিয়া। ছেলে কোকোর মৃত্যুর পর তাকে (শেখ হাসিনা) খালেদা জিয়ার বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি না দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কীভাবে খালেদা জিয়ার জন্য আমার কাছ থেকে আরও সহানুভূতি আশা করে।’
লন্ডনের মেথোডিস্ট সেন্ট্রাল হল ওয়েস্টমিনস্টারে তার সম্মানে আয়োজিত একটি কমিউনিটি সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলা বিএনপির পক্ষে শোভা পায় না কারণ তারা জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ধোকাবাজি খেলেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একটি প্রহসনমূলক নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার দেড় মাসের মধ্যেই দেশের জনগণ তাদের ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। তিনি বলেন, দেশের জনগণ কখনই ভোট কারচুপিকারীদের ক্ষমতায় বসতে দেয় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে তার ওপর ন্যস্ত নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে এতিমদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতির মামলায় কারাদণ্ড স্থগিত করার পর খালেদা জিয়াকে তিনি বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আইন অনুযায়ী যা করতে পারেন তাই করেছেন। অনেকেই এখন যুক্তি দিচ্ছেন, ‘আইন নিজের গতিতে চললেও খালেদা জিয়ার প্রতি আমি বেশি সহানুভূতি দেখাতে পারি’।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজেদুর রহমান ফারুক।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই গুরুতর। গত সোমবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। আবেদনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। গতকাল রাত ৮টা পর্যন্ত তাকে অনুমতি দেওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি বলে খালেদা জিয়ার একান্ত সহকারী জানিয়েছেন।
পাশাপাশি সরকারের অনুমতি পেলে দ্রুততম সময়ে তাকে বিদেশে নিতে ভিসা-প্রক্রিয়া শুরু থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ প্রয়োজনীয় সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সরকারের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় ভিসা করানো যাচ্ছে না।
গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে এসব কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার মেজো বোন সেলিমা ইসলাম।
তিনি বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালের খোঁজখবর নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান। শারীরিক অবস্থা বেশি খারাপ থাকলে প্রথমে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হতে পারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নত হলে অন্য দেশে নেওয়া হবে।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমার বোন হেঁটে জেলে গেলেন। জেলে থাকাবস্থায় অসুস্থ হলে তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এরপর করোনার কারণে সরকার তাকে দুটি শর্তে মুক্তি দেয়। তখন থেকেই আমরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে আবেদন করে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে না পারায় দিনের পর দিন তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে আমার বোন।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এবিএম আব্দুস সাত্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা সার্বক্ষণিক চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আমরা সরকারের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে আমরা দ্রুততম সময়ে চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠাতে পারব।’
জিয়া পরিবারের সদস্যরা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তারা সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন। অনুমতি পাওয়া মাত্র সব ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। ইতিমধ্যে ভিসা প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিদেশে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, ব্যক্তিগত সহকারী ফাতেমা ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। তখন থেকেই তিনি হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সেবায় সার্বক্ষণিক থাকছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজ (গতকাল শুক্রবার) ম্যাডাম শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে বিকেলে তাকে তৃতীয়বারের মতো কেবিন থেকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়। রাতে আবার তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২২ সেপ্টেম্বর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হওয়ায় হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। পরে অবস্থার উন্নতি হলে তাকে ফের কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিএনপি গঠিত চিকিৎসক দলের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। একই বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসকরা জানান, তিনি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দলীয় মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা তখন জানিয়েছিলেন, তাদের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু করার ছিল, তারা তা করেছেন। পরবর্তী চিকিৎসা যুক্তরাজ্য, জার্মানি অথবা যুক্তরাষ্ট্রে করার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবারকে বলেছেন। পরের বছর জুন মাসে খালেদা জিয়ার হার্টে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটিতে রিং পরানো হয়। এখনো তার হার্টে দুটি ব্লক রয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের পাশাপাশি আমরা বিএনপি নেতারা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। সরকার অনুমতি দিলে দ্রুতই চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানো হবে।’
গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহিলা দলের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যে মানুষটি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ সরকার গৃহবন্দি করে রেখেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হলেও তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমরা আশা করি, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার যে আবেদন করেছে, তা সরকার বাস্তবায়ন করবে।’
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আটক রাখা হয়েছে। কারণ উনি মুক্ত থাকলে ওনাদের ক্ষমতায় থাকা কঠিন হয়ে যাবে। উনি মুক্ত থাকলে দেশের গণতন্ত্র মুক্ত থাকবে। উনি মুক্ত থাকলে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী, সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়াকে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছে। ফলে এখন জেলে যাওয়া বা আদালতের আশ্রয় নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। ওই ৪০১ ধারাতেই বলা আছে, নির্বাহী আদেশে শর্ত ছাড়াই মুক্তি দেওয়া যায়। এমনকি সরকার সাজা মওকুফও করতে পারে। ফলে সরকারই শর্তহীন মুক্তি দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।’
গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠানোর বিষয়ে দুই-তিন দিন আগে তার ভাই শামীম এস্কান্দার এসেছিলেন। তিনি আবেদন জমা দিলে তা আইনমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে ব্যাখ্যার জন্য।
আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে থাকা বিএনপি নেতারা।
তারা গত বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছেন। খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। তারাও অপেক্ষা করছেন যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাবেন ওই নেতারা।
খালেদা জিয়াকে জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশে^র যে কয়েকটি দেশে সম্ভব, জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এরপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও অবশ্য খালেদা জিয়াকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্রে জটিলতা, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের নানা সমস্যায় ভুগছেন। এ ছাড়া তার মেরুদ-, হাত ও হাঁটুতে বাতের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আরও সাত বছরের সাজা হয় খালেদা জিয়ার। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল সরকার। এরপর থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে।