
ভারত থেকে আমদানি করা ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পেঁয়াজ তীব্র তাপদাহে পচে নষ্ট হওয়ার অভিযোগ করেছেন আমদানিকারক ও আড়তদাররা। পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক দীর্ঘদিন সীমান্তে আটকে থাকার কারণে এমনটা হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
দিনাজপুরে হিলি স্থল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সহ-সভাপতি শাহিনুর রেজা বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলেও কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানির অনুমোদন বা আইপি দিতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মত দেরি করে। এই দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকার কারণে ট্রাকে পড়ে থেকে পেঁয়াজগুলো পচে গেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
রেজা বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী পেঁয়াজ আমদানির কথা বলার পরপরই বন্দরের আমদানিকারকরা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ট্রাকে পেঁয়াজ বোঝাই করতে বলেছিলেন। কিন্তু কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে বিলম্বের কারণে এই ট্রাক বোঝাই বস্তাবন্দি পেঁয়াজগুলো বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের ভেতরে দীর্ঘ দিন ধরে আটকে পড়ে ছিল। তীব্র গরমের মধ্যে এতো লম্বা সময় ধরে আটকে থাকায় পেঁয়াজের চালানের বড় অংশ পচে নষ্ট হয়ে যায়।
আমদানিকারকদের এই দাবি কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব রবিন্দ্রশ্রী বড়ুয়া।
তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুরোধ জানানো মানে এই নয় যে আমদানিকারকরা ট্রাক বোঝাই করতে শুরু করবেন।
বড়ুয়া বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে আইপি ইস্যু করা হলেই ব্যবসায়ীরা এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারবেন। এরপর ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে। আমদারিকারকরা আমাদের কিছু অবহিত করেনি।
বর্তমানে ভারত থেকে আসা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক থেকে টনের পর টন নষ্ট পেঁয়াজ বের হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন হিলি স্থল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সহ-সভাপতি শাহিনুর রেজা
তিনি বলেন, ‘ভারতের এই পেঁয়াজগুলো নাসিক, ইন্দোর থেকে লোড হয়। সেখান থেকে হিলি বন্দর পর্যন্ত আসতে ৪/৫ দিন সময় লাগে। আবার আইপির অপেক্ষা। সব মিলিয়ে এখন পঁচা মাল ঢুকছে। একটা ট্রাকের ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পেঁয়াজই নষ্ট।’এখনও এমন আরও দুই থেকে আড়াইশ পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক দশ দিন ধরে হিলি বন্দরে আটকে আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ট্রাকের ওপরের কিছু পেঁয়াজ ভালো থাকলেও নিচের বস্তাবন্দি পেঁয়াজগুলোর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ বলে তিনি জানান। এই অবস্থায় আমদানিকারকরা এই বিপুল পরিমাণ পচা পেঁয়াজ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ কারণে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় আছেন তারা।
রেজা বলেন, ‘এসব পেঁয়াজ ভারতে পঁচলেও যেহেতু আমরা অর্ডার করে ফেলেছি এবং দ্রুত মালামাল খালাসের কথা বলেছি তাই ক্ষতির পুরো দায়ভার আমাদেরকেই নিতে হবে। পুরো লোকসান আমাদের। কারণ সিদ্ধান্তে বিলম্ব আমাদের দিক থেকে হয়েছে। এখানে আমদানিকারকরা লোকসান গুনে শেষ করতে পারবে না।’
বর্তমানে শ্রমিকরা বস্তাগুলো নামিয়ে সেখান থেকে ভালো পেয়াজ, আংশিক নষ্ট পেঁয়াজ এবং পুরোপুরি পঁচে গলে যাওয়া পেঁয়াজ আলাদা করছে। বাছাই করা ভালো ও আংশিক ভালো পেঁয়াজগুলো হিলির গুদামগুলোয় ফ্যানের বাতাসে শুকানো হচ্ছে। এবং পচা পেয়াজগুলো নামমাত্র দামে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। হিলির মোকামগুলোয় ৫০ কেজির পঁচা পেঁয়াজের বস্তা ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
চট্টগ্রামের হিলি বন্দর দিয়ে খাতুনগঞ্জে আসা পেঁয়াজের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্থানীয় নিম্নবিত্ত মানুষ এই পচা পেঁয়াজগুলো সংগ্রহ করে আবার রাস্তার পাশে পাঁচ থেকে আট টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। আশেপাশের নিম্নমানের হোটেলগুলো রান্নার জন্য এই পঁচা পেঁয়াজগুলো কিনে নিচ্ছে। ফলে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পেরে ও কিনতে পেরে এই নিম্ন আয়ের মানুষগুলো দারুণ খুশি বলে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে দিনাজপুরের হিলিতে আংশিক নষ্ট পেঁয়াজগুলো পাইকারি বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মোকামগুলোয় ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২-৩৫ টাকা কেজিতে। খুচরা বাজারে তা ৪০-৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা আমদানি শুরুর আগে ৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
খাতুনগঞ্জের আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, ১৫ দিন আগে সরকার আইপি (আমদানি অনুমোদন) দিলে এমন ঝামেলা হতো না। এতদিন ট্রাকগুলো বর্ডারে আটকে ছিল। দেশে ঢুকতে ঢুকতে অর্ধেক মালই নষ্ট। ইন্ডিয়াতে থাকতেই নষ্ট হয়েছে। আংশিক পচন ধরা পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে ২৮ থেকে ৩২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান
অন্যদিকে ভালো পেয়াজগুলো বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৪ টাকায়। যা খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৫০ টাকায় উঠে যাওয়ার কথা।
এদিকে খাতুনগঞ্জের স্থানীয় ভ্যান চালক ও রিকশাচালকদের পুরোপুরি নষ্ট পেঁয়াজগুলো সংগ্রহ করে ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এখনও বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বন্দরের পথে আছে আরও অন্তত দুই থেকে তিনশ ট্রাক ভর্তি পেয়াজ।
এই নতুন পেঁয়াজগুলো মানে ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পেঁয়াজ যেহেতু কাঁচামাল এবং দ্রুত পচনশীল পণ্য তাই কাস্টমসের প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত যেন এটি বন্দর থেকে আমদানিকারকরা খালাস করে নিতে পারেন বন্দর কর্তৃপক্ষ তার জন্য সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বলে জানান কাশেম। হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সাধারণত প্রতিদিন ১৪ টন ধারণ ক্ষমতার ১৫ থেকে ২০ ট্রাক ভর্তি পেঁয়াজ ঢোকে। যার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার কেজি।
আমদানির অনুমতি না থাকায় সেই সাথে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন যথেষ্ট রয়েছে এমনটা দাবি করে গত ১৬ই মার্চ থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দেশটিতে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। আড়াই মাসের মাথায় পেঁয়াজের দাম দফায় দফায় বাড়তে বাড়তে তিন গুণ ছাড়িয়ে যায়।
অর্থাৎ খুচরা বাজারে যে পেয়াজ মার্চের শুরুতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেটা কয়েক দফায় বেড়ে জুন মাসের শুরুতে কেজিতে ১১০ টাকায় দাঁড়ায়। সে সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির আভাস দেয়। পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ও আমদানির অনুমতি দিলে ৫ই জুন ভারত থেকে পুনরায় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। সূত্র: বিবিসি
দুই সপ্তাহ পরও সরকারি দেওয়া দামে বাজারে মিলছে না আলু ও পেঁয়াজ। কিন্তু এর মধ্যেই দাম বেড়েছে কাঁচা মরিচের। রাজধানীর বাজারগুলোতে তিন দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ১০০-১২০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকায়। অথচ কয়েক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৬০ টাকায়। এর আগে ঈদুল আজহায় মরিচ নিয়ে লঙ্কাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটে। প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছিল ৮০০-৮৫০ টাকায়। অনেকটা বাধ্য হয়ে সরকার গত ২৫ জুন মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়। ধীরে ধীরে বাজারে দাম কমে এলেও নতুন করে আবারও দাম বেড়েছে এই পণ্যটির।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে চলতি বছর কাঁচা মরিচের ফলন কম হয়েছে। উৎপাদন কম হওয়ায় স্থানীয়ভাবে পণ্যটির চাহিদা মিটছে না। যার ফলে চাহিদা মেটাতে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে মরিচ। কিন্তু ভারতে এই পণ্যের দাম বাড়তি থাকায় দেশের বাজারেও দাম বেড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, সব শেষ দুই অর্থবছরে মোট ১০ হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) পুরো সময়ে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছিল ২ হাজার ২১ টন। ও ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৭ হাজার ৪৬৭ টন কাঁচা মরিচ।
আজ রবিবার (০১ অক্টোবর) রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেঁধে দেওয়া দাম ৩৫ টাকা হলেও আলু কিনতে হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। দেশি পেঁয়াজ অন্তত ৮৫ আর আমদানির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকার ওপরে। এ ছাড়া প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৬০ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতারা সুমন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে মরিচের সিজন নেই। তবে অতি বৃষ্টির কারণে চলতি বছর মরিচের চারাগুলো টিকে থাকেনি। যার ফলে উৎপাদন কম হয়েছে। এ ছাড়া, ভরতের স্থানীয় বাজারেও হঠাৎ করে মরিচের দাম বাড়তি হওয়ায় আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। সব মিলিয়ে মরিচের বাজার চড়া যাচ্ছে।
কাঁঠাল বাগান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সোলায়মান একই সুরে কথা বলেন। তিনি জানান, আমাদের উৎপাদিত মরিচ দিয়ে দেশের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। যার কারণে মরিচের আমদানি করতে হচ্ছে। আমাদের। যেহেতু ভারতে মরিচের দাম বেড়েছে। তাই আমাদের দেশেও এই পণ্যটির দাম বাড়াটা স্বাভাবিক বিষয়।
কিন্তু বাজারে আসা ক্রেতারা ব্যবসায়ীদের দাবিকে বাহানা উল্লেখ করে ভোক্তারা বলছেন, আমাদের ব্যবসায়ীরা ভোক্তার পকেট লুটের উৎসবে মেতেছে। প্রেক্ষাপট বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার খবরে দেশের বাজারে তর তর করে ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। কিন্তু যখনই খবরের শিরোনাম হয়, যে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমেছে। তখন দেশের ব্যবসায়ীমহল বলে, তাদের পূর্বের বেশি দামে পণ্য কেনা থাকায় কম দামে তা বিক্রি করতে পারছে না। এসবই তাদের বাহানা।
তেজতুরী কাঁচা বাজারে আসার নিগার সুলতানা দেশ রূপান্তরকে জানান, আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে কারচুপির প্রবণতা অনেক বেড়েছে। পাইকার থেকে খুচরা ব্যবসায়ী যে যেভাবে পারছে ভোক্তাকে জোগাচ্ছে। তাদের কারণে বাজারে সব ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তি। কেবল আমাদের দাম নেই।
সম্প্রতি সময়ে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। লাগাম টানতে সরকার তিনটি পণ্যের দাম বেঁধে দেয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর। তবে তা আলোর মুখ দেখেনি। বাজার সরবরাহ ঠিক রাখতে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করলে ব্যবসায়ীদের দমাতে পারেনি। বেঁধে দেওয়া দামের থেকে ১৫ টাকা বাড়তি দিয়ে প্রতি কেজি আলু কিনতে হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি আলু ৫০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ৮৫ আর আমদানির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।
সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা মোট ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। দেশের প্রবাসী আয়ের এ অঙ্ক গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এর চেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছিল ১০৯ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত আগস্টের তুলনায়ও সেপ্টেম্বরে প্রবাসী আয় কমেছে ২৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার বা প্রায় ১৬ শতাংশ। আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে এসেছে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স। এ অঙ্ক আগের বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ১৯ কোটি ৫৯ লাখ বা ১২ দশমিক ৭২ শতাংশ কম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসে প্রবাসীরা ১৬৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। তার আগের অর্থবছরের একই মাসে যা ছিল ২০১ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ৯৪১ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা মাত্র ১ দশিমক ১৩ শতাংশ বেশি।
আয়কর আইন, ২০২৩ এর ১২৪ ধারা অনুযায়ী সেবা, রেভিনিউ শেয়ারিং বাবদ পাওয়া রেমিট্যান্সের ওপর উৎসে কর আদায় করতে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনে নিয়জিত অনুমোদিত ডিলার ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগের পরিচালক (এফইপিডি) মো. সরোয়ার হোসেন এ নির্দেশনা দেন। জাতীয় রাজস্ব আহরণের স্বার্থে নির্দেশনাটি যথাযথভাবে পরিপালন করতে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা চেয়ে গত ১২ সেপ্টেম্বর কর কমিশনারের কার্যলয় থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
তাতে বলা হয়, বিদেশে থেকে পাঠানো অর্থ ব্যক্তির হিসাবে পরিশোধ করার আগে জমাকৃত অর্থের ও ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে নেওয়ার বিধান করা হয়েছে। কর বাবদ কেটে নেওয়া অর্থ ব্যাংক ঢাকার কর অঞ্চল-১১ এর অনুকূলে নিয়ম অনুযায়ী জমা দেবে।
দেশের ১৫ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নতির নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক তার পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়কদের মাধ্যমে এই নির্দেশ দিয়েছে।
রাজধানীর মতিঝিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়কদের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
বর্তমানে আটটি ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক আছে। এগুলো হলো- সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।
এছাড়া সাতটি ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- ন্যাশনাল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।
মূলত ঋণ নিয়ে অনিয়ম ও কেলেঙ্কারি শনাক্তে ব্যাংকগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ক নিয়োগ দিয়েছে।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, গভর্নর পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়কদের এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে বলেছেন।
বেসিক ব্যাংকের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মেজবাউল হক বলেন, গভর্নর ওই সব ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট ও পরিচালনা পর্ষদকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর কোনো সহানুভূতি দেখাবে না।
এদিকে পর্যবেক্ষক নিয়োগের পরও এসব ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতি অব্যাহত আছে। যেমন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষক থাকা সত্ত্বেও জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৫ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৭ সালের শেষে ব্যাংকটির মন্দ ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা। এরপর চলতি বছরের মার্চ শেষে তা বেড়ে হয় ১৪ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ শেষে যা ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ১১ দশমিক ৪ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে সুশাসনের অবনতি মোকাবিলায় পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়কদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে, অন্যথায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
পর্যবেক্ষক নিয়োগের এই রীতি ১৯৯৪ সালে শুরু হয়েছিল। তখন ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল এবং তাদের সুশাসনের বিষয়টি সমাধানে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক করা হয়েছিল।
অন্যদিকে আবদুর রউফ তালুকদার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগদানের পর চলতি বছর থেকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, দেশের বড় ব্যবসায়ীদের মুড়ি, চানাচুর বা আচারের মতো পণ্য তৈরি করার দরকার নেই।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় 'নবম বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো-২০২৩' এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সবকিছু যদি বড় ব্যবসায়ীরা তৈরি করে, তাহলে ছোটরা কী করবে?
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, তৈরি পোশাকের পর রপ্তানির দিক থেকে যদি কোনো খাত ভালো অবস্থানে থাকে, তা হলো খাদ্যপণ্য।
তিনি বলেন, সরকারি অফিসে ব্যবসায়ীদের প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। তাই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে হবে। তারা যদি বিষয়গুলোকে একটু ইতিবাচকভাবে দেখেন, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
প্রদর্শনীর আয়োজক কমিটির চেয়ারপারসন ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারের পরিচয় করিয়ে দিতে এবং আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি ও পণ্যের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে এই প্রদর্শনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এবং রেইনবো এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড যৌথভাবে তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর আয়োজন করছে।
তিন দিন ব্যাপী এই প্রদর্শনী ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এখানে ভারত, চীন, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, স্লোভেনিয়াসহ ২০টি দেশের দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে।
একদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানির দিকে হাঁটছে, অন্যদিকে রপ্তানি আয় স্বাভাবিক থাকলেও প্রবাসী আয় গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যেই বিদেশি ঋণে বড় ধাক্কার মুখে বাংলাদেশ। সরকারি কর্মকর্তাদের অদক্ষতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় একদিকে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে, অন্যদিকে ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমেই বাড়ছে। আগস্ট শেষে ঋণ পরিশোধ করতে গত বছরের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি, বিপরীতে অর্থছাড় কম হয়েছে ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ এ বছর ঋণ পাওয়ার চেয়ে ঋণ পরিশোধের চাপ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারে। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমেছে ১৭ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে অর্থছাড় কমেছে। তাছাড়া ঋণ পরিশোধে আরও বেশি চাপের মুখে পড়তে হবে বলেও মনে করেন তারা।
ইআরডির হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছর আগস্ট শেষে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছে ৪০ কোটি ডলার বা ৪ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। অথচ গত বছর একই সময়ে সুদসহ ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ডলার বা ২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৩৮ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। ঋণ থেকে সুদকে আলাদা করলে দেখা যায়, সুদের চাপও দ্বিগুণ হয়েছে। আগস্ট শেষে সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ১৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের শুরু থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে উন্নয়ন প্রকল্পে বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীর মূল্য ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও এলসি ওপেনিং নিয়ে অনেক প্রকল্পে জটিলতায় পড়তে হয়েছে। এ কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হার কম ছিল। এ ছাড়া সক্ষমতার অভাবে এডিপিতে বৈদেশিক ঋণের বরাদ্দের ব্যবহার এর আগের অর্থবছরের চেয়ে কিছুটা কম ছিল।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগে আমরা বড় বড় প্রকল্পের যেসব ঋণ নিয়েছিলাম, অধিকাংশ ঋণের ম্যাচিউরিটি শেষ হয়েছে। এ ঋণগুলোর সুদহারও বেশি আবার গ্রেস পিরিয়ডও কম। গ্রেস পিরিয়ড কম অর্থাৎ আমাদের ঋণ পরিশোধের সময় দ্রুততর হয়ে আসছে।’
সংস্থাগুলো সুদের হার বাড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা সময় ছিল গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর দেওয়া হতো, এখন বেশিরভাগ ঋণেই ৫ বছর দেওয়া হয়। সুদের হার বাড়াচ্ছে ঋণদাতা সংস্থাগুলো। ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে কথা বলেছে, অথচ তারা আমাদের শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ ঋণ দিত।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঋণদাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে এ দুই মাসে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে জাপান। এ দেশের কাছ থেকে ছাড় হয়েছে ৩০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এডিবির কাছ থেকে। এ সংস্থার কাছ থেকে ঋণের অর্থছাড় হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ করেছে বিশ^ব্যাংক। এ সংস্থার আইডিএ প্রোগ্রামের অর্থছাড় হয়েছে ১৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে অর্থছাড় কম হলেও এ সময়ে ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে প্রায় চারগুণ। আগস্ট শেষে অনুদানসহ বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৩০ কোটি ৪৯ লাখ ডলারের। এ সময়ে পাইপলাইনে থাকা সম্ভাব্য ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭০ কোটি ডলারের বেশি।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সুদের হার বৃদ্ধির ফলে সরকারের বৈদেশিক ঋণের পরিশোধের চাপ বেড়েছে। এর ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয়েছিল ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
ইআরডির হিসাবে, সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল মিলিয়ে ২ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে সুদ হিসাবে পরিশোধ করেছে ৯৩৫ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলার আর আসল পরিশোধ করেছে ১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করেছে ২ দশমিক ০১৭ বিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে আসল ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন এবং সুদ ৪৯১ মিলিয়ন ডলার।
ইআরডির কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) রেট বেড়ে ৫ শতাংশের বেশি হয়েছে। এ কারণে বাজারভিত্তিক ঋণের জন্য বাংলাদেশকে এখন ৫ শতাংশের বেশি সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের আগে এই রেট ছিল ১ শতাংশের কম।
ঋণের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে। যদিও এখন পর্যন্ত রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের শতাংশ হিসাবে বা জিডিপির শতাংশ হিসাবে এটি কম। কিন্তু তারপরও এটি ধীরে ধীরে বেড়ে এখন ৩৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। এমন সময়ে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে যখন আমাদের রিজার্ভও চাপে আছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের প্রতিবছর প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স মিলিয়ে আমাদের আয় ৮০ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থ আবার আমদানির জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে। রিজার্ভের নিরিখে এটি এখন অবশ্যই চাপ। যখন রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল তখন এ চাপ অনুভূত হয়নি। এখন রিজার্ভ কমতির দিকে আর ঋণ পরিশোধের দায়ভার বৃদ্ধির দিকে।’
বর্তমানে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য সরকার যে ঋণ নিয়েছে, সেসব ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হলে ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছে ইআরডি।
সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রের প্রভাব পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে। এডিপি বাস্তবায়নও চলছে ঢিমেতালে। অর্থ সংকট ছিল না, এমন প্রকল্পের অগ্রগতিও আশানুরূপ হয়নি। অগ্রাধিকার পাওয়া মেগা প্রকল্পের কাজও চলছে ঢিমেতালে। আর ব্যয় করতে না পারায় বিদেশি ঋণের অর্থছাড় কমে গেছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের সিংহভাগই এসেছে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির মতো বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে পাইপলাইনে বৈদেশিক ঋণ রয়েছে ৪৪.৭ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ ঋণের জন্য সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে।
ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৪৫ ডেঙ্গু রোগীর। আর গত এক সপ্তাহেই মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। চলতি বছর সব মিলিয়ে জেলাটিতে এ নিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৬১ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এবার ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৬৩২। এর আগে এক বছরে এত আক্রান্ত আর মৃত্যু দেখেনি জেলাটি। রোগীর চাপে বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালের বারান্দা ও সিঁড়িতে। তাতে ব্যাহত হচ্ছে অন্য রোগীদের চিকিৎসাসেবাও।
ডেঙ্গুতে জেলার এমন পরিস্থিতির জন্য সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব কার্যক্রম চলমান। সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিভিন্ন এলাকায় মশা নিধন কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন হাসপাতালে বিনামূল্যে স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাবে এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১২ হাজার ৬৩২ রোগী। বর্তমানে ফরিদপুরে ভর্তি হয়ে ৮২৪ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে সেবা নিচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সঙ্গে যেন পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে মৃত্যুও। এদের অধিকাংশই নারী। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গত এক মাসে এ জেলার হাসপাতালগুলোতে মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। এর মধ্যে ফরিদপুরের ৩১ এবং অন্যান্য জেলার ১৪ জন। আর এ বছর জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ৬১ জন। এর মধ্যে ফরিদপুরে ৪১ জন, বাকি ২০ জন রাজবাড়ী, মাগুরা, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের।
হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শয্যা সংকটের পাশাপাশি তীব্র গরমে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন সেবা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। তবে ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে দিন-রাত চেষ্টা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে সব স্কুল-কলেজ, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই সবার সমন্বয়ে ডেঙ্গু মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
সিভিল সার্জন অফিস বলছে, বিভিন্ন হাসপাতালে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ২ হাজারের অধিক রোগী। ফলে রোগীদের চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সব বিভাগের কর্মীরা দিন-রাত কাজ করছেন। তবে শুধু সেবা দিলেই চলবে না। এর প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে মৃত্যুর মিছিল থামানো যাবে না। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল শুধু ফরিদপুর নয়, এ অঞ্চলের ৫ থেকে ৬টি জেলার রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীদের বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘গত এক মাসে এ জেলায় অতিরিক্ত ডেঙ্গু রোগীর চাপ লক্ষ করা গেছে। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জেলার সব হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে সর্বোচ্চ সেবা দিতে বলেছি। তিনি জানান, ফরিদপুরে এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১২ হাজার ৬৩২ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে ১১ হাজার ৭৪৭ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৬১ জনের। গতকাল সোমবার জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ৮২৪ জন।
ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ, নীতি ও দর্শন বর্তমান বিশ্বের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ বন্ধে মহাত্মা গান্ধীর শান্তি ও সম্প্রীতিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধী উভয়ে অসাম্প্রদায়িক নেতা। তাদের মতাদর্শ বিশ্বের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট ক্যাম্পাসে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক যুব পিস ক্যাম্পের শেষ দিন ও মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) জীবন কানাই দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নোয়াখালী-১ আসনের সাংসদ এইচ এম ইব্রাহিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবিব, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খায়রুল আনম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খান সোহেল প্রমুখ। অনুষ্ঠান শুরুর আগে গান্ধীর ম্যুরালের সামনে প্রভাত প্রার্থনা ও ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। শেষে গান্ধী আশ্রম প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী এবং মহাত্মা গান্ধীর ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক যুব পিস ক্যাম্পের সমাপনী ঘোষণা করা হয়। ক্যাম্পে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশের দেড় শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজ দেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। কারণ এ সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছে। তার মুক্তির বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে। এরা কাপুরুষ। এরা জানে খালেদা জিয়া সুস্থ হলে তাদের ক্ষমতার মসনদ ভেঙে পড়বে। বন্দি রেখে খালেদা জিয়াকে এরা হত্যা করতে চায়।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তির’ দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দল আয়োজিত কৃষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন নেতাকর্মীরা। কাকরাইল থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত সড়কে হলুদ-সবুজ রঙের টুপি মাথায় দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী ‘খালেদা জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনা কবে যাবি’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য তারা (সরকার) বিভিন্ন রকম আইনকানুন দেখাচ্ছে। যখন আপনার (শেখ হাসিনার) কানের সমস্যা হয়েছিল তখন আপনি আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন। যান নাই? আজকে খালেদা জিয়ার যখন জীবন-মরণের সমস্যা তখন এইসব কথা বলছেন কেন? কারণ রাজনৈতিকভাবেই তারা বেগম জিয়াকে হিংসা করে, তাকে সুস্থ করতে চায় না। বেগম জিয়াকে রাজনীতি করতে দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সম্পূর্ণ লক্ষ্য একটাই, এ দেশে কোনো বিরোধী দল থাকবে না, তারাই সরকার চালাবে, সরকারে থাকবে। তাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হবে তারাই শুধু এ দেশের মালিক আর আমরা সব প্রজা।’
তিনি আরও বলেন, ‘পিটার হাসকে (মার্কিন রাষ্ট্রদূত) নিয়ে তারা (সরকার) খুব রেগেছে। তাদের নেতা-মন্ত্রীরা সমস্ত ডিপ্লোমেটিক নর্মসকে উপেক্ষা করে তার বিরুদ্ধে কথাবার্তা বলছে। তাদের বংশবদ টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মিথ্যাচার করছে। এরা এত দায়িত্বজ্ঞানহীন। যে দেশটাতে আমরা সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি করি, সেই দেশের সঙ্গে সমস্যা তৈরি করেছে। আরেকটা খবর আছে, সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স এসেছে। এর অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর তাদের আস্থা নেই। সেজন্য তারা অর্থ পাঠাচ্ছে না।’
দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা খালেদা জিয়া উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) তো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। তারা পাকিস্তানের সরকারের ভাতা খেয়েছিলেন।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে কেনো বিকল্প নেই। একটাই পথ। সরকারকে সরাসরি বলতে চাই, এখনো সময় আছে মানে মানে পদত্যাগ করে একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন, সংসদ বিলুপ্ত করুন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় দেশের মানুষ জানে কীভাবে স্বৈরাচারকে, ফ্যাসিবাদকে দূর করতে হয়।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে আমাদের রংপুর-দিনাজপুরের মানুষ আছেন। এক কৃষক নেতা ব্রিটিশ পিরিয়ডে বিদ্রোহ করেছিলেন। কৃষককে ডাক দিয়েছিলেন, কোনঠে বাহে জাগো সবাই। এই হচ্ছে ডাক। কোথায় আছেন, সবাই জাগেন, জেগে ওঠেন। প্রতিরোধ গড়ে তুলি, সমস্ত নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই।’
বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘সরকারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে দেশের কৃষকরা পণ্যের ন্যায্যমূল্য, সার-কীটনাশক-বীজ কোনো কিছুই পাচ্ছেন না। মেগা প্রকল্পের নামে সরকার লুটপাট করে বিদেশে অর্থ পাচার ও বাড়িঘর করে আখের গোছাচ্ছে।’
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লা বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, ফরহাদ হালিম ডোনার, রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ বক্তব্য দেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশর (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান। গতকাল সোমবার বিজিবির সিলেট সেক্টর সদর দপ্তরে সব পর্যায়ের বিজিবি কর্মকর্তা ও সৈনিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ নির্দেশনা দেন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে বিজিবির প্রতিটি সদস্যকে সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনেরও আহ্বান জানান।
এর আগে ডিজি বিজিবির বিভিন্ন ইউনিটের অপারেশনাল, প্রশিক্ষণ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিদর্শনের অংশ হিসেবে গত রবিবার ও গতকাল সোমবার বিজিবির সিলেট সেক্টর সদর দপ্তর এবং আওতাধীন সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) এবং অধীনস্থ ১০ নম্বর পোস্ট ও পাথরকোয়ারি বিওপি, সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (২৮ বিজিবি) এবং অধীনস্থ দুর্গম ডুলুরা বিওপি এবং জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধীনস্থ আমলশিদ বিওপি ও রহিমপুর খাল পরিদর্শন করেন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে জকিগঞ্জে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের সংযোগস্থল বন্ধ রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশি কৃষকরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে গত জুন মাসে বিজিবি-বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলনে বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি অত্যন্ত জোরালোভাবে উত্থাপন করা হয়। বিএসএফ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য বিজিবিকে আশ্বাস দেন। এরই ধারাবাহিকতায় রহিমপুর খালের সংযোগস্থল পুনঃউন্মুক্তকরণ কাজের অগ্রগতি সরেজমিনে পরিদর্শনের জন্য বিজিবি মহাপরিচালক গতকাল রহিমপুর খাল পরিদর্শন করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।