সংকট-অর্জন নিয়ে ৪২ বছরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইমানুল সোহান, ইবি | ২২ নভেম্বর, ২০২০ ১৩:২৫
হাঁটিহাঁটি পা পা করে ৪১টি বছর পার করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রশাসন ভবন চত্বরে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান।
পতাকা উত্তোলন শেষে প্রশাসন ভবন চত্বরে শান্তি ও আনন্দের প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে ৪২টি ফলজ ও বনজ গাছের চারাও রোপণ করা হয়। এ সময় রেজিস্ট্রার ভারপ্রাপ্ত এম এম আব্দুল লতিফসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী অংশ নেন।
পরে প্রশাসন ভবনের সভাকক্ষে কেক কাটা হয়। তবে এ বছর করোনা মহামারির কারণে আনন্দ শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সংকট ও অর্জনের গল্প:
১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের।
এরপর ১৯৮১ সালের ৩১ জানুয়ারি দুটি অনুষদের অধীনে চারটি বিভাগে মোট ৩০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আটটি অনুষদে ৩৪টি বিভাগে ১৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এবং চারশত শিক্ষক রয়েছেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা সংকটে আটকা এই বিশ্ববিদ্যালয়। ৪১ বছর পার করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পান না পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। সেশনজট, আবাসন সংকট, মাদক, র্যাগিং সমস্যা, শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা, পরিবহনের অপ্রতুলতা, গবেষণায় অনগ্রসরতা, একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজের ধীরগতি, অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষকদের রাজনীতি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, ছাত্রসংগঠনগুলোর হল দখল, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন বিভাগে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংকট ইত্যাদি কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। প্রতিষ্ঠার পর সমাবর্তন হয়েছে মাত্র চারটি।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন, পরিবহন, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকট।
এ ছাড়া কিছু বিভাগে রয়েছে সেশনজট। অবকাঠামো নির্মাণ ব্যতিরেকই নতুন বিভাগ খোলার কারণে অনেক বিভাগ পায়নি নিজস্ব শ্রেণিকক্ষসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার।
মোট আটটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থী বাস করছেন প্রায় আট হাজার। এর মধ্যে ছাত্রদের পাঁচটি আর ছাত্রীদের তিনটি। ফলে আবাসন সংকট রয়েই গেছে।
আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও তা আজও সম্ভব হয়নি। ফলে পরিবহন নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে।
তবে সংকটের সঙ্গে দিনের পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ঝুলিতে অর্জনেরও কমতি নেই। বর্তমানে ৮টি অনুষদের অধীন ৩৪টি বিভাগে চলছে পাঠদান।
বাংলা বিভাগের আওতায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’। যেখানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিস্তর পঠন, পাঠন ও গবেষণা চলবে। শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নির্মাণ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’। যা দেশের দ্বিতীয় উচ্চতম বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল।
মুক্তিযুদ্ধের উপর বিস্তর জ্ঞান অর্জনে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এছাড়াও সেশনজটের গ্লানি ৮০ শতাংশ মুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত আগস্ট মাসে একনেকের মাধ্যমে পেয়েছে ৫ শত ৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকার মেগা প্রকল্প। এর আওতায় নির্মিত হবে ৯টি দশতলা ভবন। তৈরি হবে একটি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার। ওই মেগা প্রকল্পের অধীনে কিছু ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে।
আন্তর্জাতিকীকরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে অর্ধশতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য পাশ হয়েছে অর্গানোগ্রাম।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস গত বছরের ৭ জানুয়ারি হয়ে যাওয়া ৪র্থ সমাবর্তন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের উপস্থিতিতে এতে অংশ নিয়েছিলেন এগারো হাজার শিক্ষার্থী।
প্রতিষ্ঠার ৪২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে জানতে চাইলে ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম বলেন, ‘এ কথা সত্য, প্রতিষ্ঠার ৪১ বছর পার করলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন এখনো যথেষ্ট নয়। পরিবহন, শ্রেণিকক্ষ আর আবাসন সমস্যা সমাধানসহ গবেষণা খাতে আরও জোর দিতে হবে। তবেই বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে যাবে অনন্যগতিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, প্রান্তিক জনপদের এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। যুগের চাহিদানুযায়ী এখানের প্রতিটি বিভাগকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের দুর্গ হিসেবে গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
ইমানুল সোহান, ইবি | ২২ নভেম্বর, ২০২০ ১৩:২৫

হাঁটিহাঁটি পা পা করে ৪১টি বছর পার করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় প্রশাসন ভবন চত্বরে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান।
পতাকা উত্তোলন শেষে প্রশাসন ভবন চত্বরে শান্তি ও আনন্দের প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে ৪২টি ফলজ ও বনজ গাছের চারাও রোপণ করা হয়। এ সময় রেজিস্ট্রার ভারপ্রাপ্ত এম এম আব্দুল লতিফসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী অংশ নেন।
পরে প্রশাসন ভবনের সভাকক্ষে কেক কাটা হয়। তবে এ বছর করোনা মহামারির কারণে আনন্দ শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সংকট ও অর্জনের গল্প:
১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের। এরপর ১৯৮১ সালের ৩১ জানুয়ারি দুটি অনুষদের অধীনে চারটি বিভাগে মোট ৩০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আটটি অনুষদে ৩৪টি বিভাগে ১৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এবং চারশত শিক্ষক রয়েছেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা সংকটে আটকা এই বিশ্ববিদ্যালয়। ৪১ বছর পার করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পান না পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। সেশনজট, আবাসন সংকট, মাদক, র্যাগিং সমস্যা, শিক্ষক-শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা, পরিবহনের অপ্রতুলতা, গবেষণায় অনগ্রসরতা, একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজের ধীরগতি, অপরিকল্পিত অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষকদের রাজনীতি ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, ছাত্রসংগঠনগুলোর হল দখল, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন বিভাগে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংকট ইত্যাদি কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয়টি। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। প্রতিষ্ঠার পর সমাবর্তন হয়েছে মাত্র চারটি।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা আবাসন, পরিবহন, শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ সংকট।
এ ছাড়া কিছু বিভাগে রয়েছে সেশনজট। অবকাঠামো নির্মাণ ব্যতিরেকই নতুন বিভাগ খোলার কারণে অনেক বিভাগ পায়নি নিজস্ব শ্রেণিকক্ষসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার।
মোট আটটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থী বাস করছেন প্রায় আট হাজার। এর মধ্যে ছাত্রদের পাঁচটি আর ছাত্রীদের তিনটি। ফলে আবাসন সংকট রয়েই গেছে। আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও তা আজও সম্ভব হয়নি। ফলে পরিবহন নির্ভরতা দিন দিন বাড়ছে।
তবে সংকটের সঙ্গে দিনের পরিক্রমায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ঝুলিতে অর্জনেরও কমতি নেই। বর্তমানে ৮টি অনুষদের অধীন ৩৪টি বিভাগে চলছে পাঠদান।
বাংলা বিভাগের আওতায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’। যেখানে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বিস্তর পঠন, পাঠন ও গবেষণা চলবে। শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নির্মাণ হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’। যা দেশের দ্বিতীয় উচ্চতম বঙ্গবন্ধুর মুর্যাল।
মুক্তিযুদ্ধের উপর বিস্তর জ্ঞান অর্জনে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার এবং একুশে কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
এছাড়াও সেশনজটের গ্লানি ৮০ শতাংশ মুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত আগস্ট মাসে একনেকের মাধ্যমে পেয়েছে ৫ শত ৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকার মেগা প্রকল্প। এর আওতায় নির্মিত হবে ৯টি দশতলা ভবন। তৈরি হবে একটি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার। ওই মেগা প্রকল্পের অধীনে কিছু ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে।
আন্তর্জাতিকীকরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে অর্ধশতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। আগামী পাঁচ বছরের জন্য পাশ হয়েছে অর্গানোগ্রাম।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস গত বছরের ৭ জানুয়ারি হয়ে যাওয়া ৪র্থ সমাবর্তন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের উপস্থিতিতে এতে অংশ নিয়েছিলেন এগারো হাজার শিক্ষার্থী।
প্রতিষ্ঠার ৪২ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রত্যাশার কতটুকু পূরণ করতে পেরেছে জানতে চাইলে ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আব্দুল আলিম বলেন, ‘এ কথা সত্য, প্রতিষ্ঠার ৪১ বছর পার করলেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জন এখনো যথেষ্ট নয়। পরিবহন, শ্রেণিকক্ষ আর আবাসন সমস্যা সমাধানসহ গবেষণা খাতে আরও জোর দিতে হবে। তবেই বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে যাবে অনন্যগতিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, প্রান্তিক জনপদের এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছি। যুগের চাহিদানুযায়ী এখানের প্রতিটি বিভাগকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের দুর্গ হিসেবে গড়ে তোলাই আমার প্রধান লক্ষ্য।