‘পুলিশ দিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা কোনো উপাচার্যের চরিত্র হতে পারে না’
অনলাইন ডেস্ক | ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ১৯:৩৩
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রথমে ছাত্রলীগ ও পরে পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন অনেকে।
রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনরতদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, রবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড হামলার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ।
সোমবার তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আগের দিন ছাত্রলীগকে দিয়ে, পরের দিন পুলিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ এটা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চরিত্র হতে পারে না। অথবা উপাচার্যের ভূমিকা এটা হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলাটা হয়েছে, সেটা যদি প্রশাসনের জ্ঞাতসারে না হয়ে থাকে, তাদের ইচ্ছায় না হয়ে থাকে তাহলে তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তাদের বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই ঘটনায় প্রশাসনের ইন্ধন ছিল।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা দুটি ভাগ দেখি। একটা ভাগ হলো বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থী। প্রশাসনের কাছে যাদের গুরুত্ব খুব কম। আরেকটা ভাগে ক্ষুদ্র একটা অংশ আছে, যারা সরকারি ছাত্র সংগঠন। যারা সন্ত্রাস করে, হল দখল করে কিংবা হলের সিট বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে, চাঁদাবাজি করে। এই গ্রুপটা দেখা যায়, প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় নানা সময় এই গ্রুপটাকে ব্যবহার করে তাদের সন্তুষ্ট রেখে তারা নিজেদের পদ নিশ্চিত করতে চায়। তার কারণ, সরকার চায় উপাচার্য এমন একজন লোক হোক যে অনুগত থাকবে। সরকারের যে সমস্ত পরিকল্পনা সেগুলো বাস্তবায়ন করবে।’
শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের শিক্ষকেরা বিরক্ত হয়, ক্ষুব্ধ হয়, গুরুত্ব দেয় না যা খুবই দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘এটা একটা অচিন্তনীয় ব্যাপার যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সমস্যা থাকতে পারে। আলোচনা করবে। শিক্ষকেরা যদি ঠিকমতো তাদের ভূমিকা পালন করে, ঠিকমতো চলে শিক্ষার্থীদের তো কথা না শোনার কথা না। শিক্ষকেরা সেই পথে না গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালাল। শুধু শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের আক্রমণ না, তার আগের দিন ছাত্রলীগকে দিয়ে হামলা করা হয়েছে।’
উপাচার্যের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশেও তো এ রকম উপাচার্য দেখেছি, যে রকম উপাচার্য আমরা চাই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাষ্ট্রীয় বাহিনী প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করেছে বলে পদত্যাগ করেছেন। উপাচার্যের ভূমিকা এ রকমই হওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্য তো একজন শিক্ষক। উনি পুলিশ বা মিলিটারি না। সেখানে শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর যেন কোনো সন্ত্রাসী হামলা না হয়, পুলিশি হামলা না হয় সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে যারা সমস্যার সমাধান করতে চায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালানোর যোগ্যতা রাখে না।’
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
অনলাইন ডেস্ক | ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ ১৯:৩৩

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রথমে ছাত্রলীগ ও পরে পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন অনেকে।
রবিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনরতদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ, রবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড হামলার বিষয়ে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ।
সোমবার তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আগের দিন ছাত্রলীগকে দিয়ে, পরের দিন পুলিশ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ এটা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চরিত্র হতে পারে না। অথবা উপাচার্যের ভূমিকা এটা হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলাটা হয়েছে, সেটা যদি প্রশাসনের জ্ঞাতসারে না হয়ে থাকে, তাদের ইচ্ছায় না হয়ে থাকে তাহলে তো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তাদের বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই ঘটনায় প্রশাসনের ইন্ধন ছিল।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা দুটি ভাগ দেখি। একটা ভাগ হলো বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষার্থী। প্রশাসনের কাছে যাদের গুরুত্ব খুব কম। আরেকটা ভাগে ক্ষুদ্র একটা অংশ আছে, যারা সরকারি ছাত্র সংগঠন। যারা সন্ত্রাস করে, হল দখল করে কিংবা হলের সিট বণ্টন নিয়ন্ত্রণ করে, চাঁদাবাজি করে। এই গ্রুপটা দেখা যায়, প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় নানা সময় এই গ্রুপটাকে ব্যবহার করে তাদের সন্তুষ্ট রেখে তারা নিজেদের পদ নিশ্চিত করতে চায়। তার কারণ, সরকার চায় উপাচার্য এমন একজন লোক হোক যে অনুগত থাকবে। সরকারের যে সমস্ত পরিকল্পনা সেগুলো বাস্তবায়ন করবে।’
শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বললে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের শিক্ষকেরা বিরক্ত হয়, ক্ষুব্ধ হয়, গুরুত্ব দেয় না যা খুবই দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘এটা একটা অচিন্তনীয় ব্যাপার যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সমস্যা থাকতে পারে। আলোচনা করবে। শিক্ষকেরা যদি ঠিকমতো তাদের ভূমিকা পালন করে, ঠিকমতো চলে শিক্ষার্থীদের তো কথা না শোনার কথা না। শিক্ষকেরা সেই পথে না গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালাল। শুধু শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের আক্রমণ না, তার আগের দিন ছাত্রলীগকে দিয়ে হামলা করা হয়েছে।’
উপাচার্যের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের দেশেও তো এ রকম উপাচার্য দেখেছি, যে রকম উপাচার্য আমরা চাই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাষ্ট্রীয় বাহিনী প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করেছে বলে পদত্যাগ করেছেন। উপাচার্যের ভূমিকা এ রকমই হওয়া উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্য তো একজন শিক্ষক। উনি পুলিশ বা মিলিটারি না। সেখানে শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে। শিক্ষার্থীদের ওপর যেন কোনো সন্ত্রাসী হামলা না হয়, পুলিশি হামলা না হয় সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিয়ে সমস্যা সমাধান করা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে যারা সমস্যার সমাধান করতে চায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালানোর যোগ্যতা রাখে না।’