আন্দোলনে ‘সংহতি’ জানাতে শাবি ক্যাম্পাসে আ. লীগ নেতারা
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি | ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:৩২
শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে
পুলিশি হামলার ঘটনায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ক্যাম্পাসে গেছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে শিক্ষার্থীদের সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তার সঙ্গে ছিলেন সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক হোসেন।
চলমান আন্দোলনের আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাম্পাসে এসেছেন বলে জানান নাদেল। এ সময় ‘ন্যক্কারজনক হামলার’ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সংগতি জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে নাদেল বলেন, ‘এক ব্যক্তির হাতে বিশ্ববিদ্যালয় জিম্মি হতে পারে না।’
সোমবার দুপুর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছে শিক্ষার্থীরা। নাদেল এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করেছেন। জানান, তিনিও স্বাক্ষর দিতে যান।
আরও বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা জন্য তারা চেষ্টা করছেন।
এ দিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিভিন্ন হল থেকে একের পর এক মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
গোলচত্বর থেকে মিছিল নিয়ে সোমবারের মতো উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে। একইসঙ্গে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় প্রক্টরিয়াল কমিটি এবং ছাত্র উপদেষ্টাকেও সরে যেতে হবে।
উল্লেখ্য, অসদাচরণের অভিযোগ এনে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শাবি শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা।
এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন তারা।
এরই মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরতদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
রবিবার বেলা আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হলে উপাচার্যের পিছু নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় উপাচার্য ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে আশ্রয় নিলে শিক্ষার্থীরা সেখানে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
বিকেল ৫টার দিকে উপাচার্যকে উদ্ধারে শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জের পাশাপাশি তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশের ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
এছাড়া পুলিশের হামলায় ছত্রভঙ্গ শিক্ষার্থীরা আবারও জড়ো হলে পরে ছাত্রলীগ তাদের ধাওয়া করে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
শিক্ষার্থীরা সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
এদিকে ক্যাম্পাসের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর সার্বিক তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি | ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ১৩:৩২

পুলিশি হামলার ঘটনায় উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে ক্যাম্পাসে গেছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা।
মঙ্গলবার বেলা ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে শিক্ষার্থীদের সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তার সঙ্গে ছিলেন সিলেট মহানগর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক হোসেন।
চলমান আন্দোলনের আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাম্পাসে এসেছেন বলে জানান নাদেল। এ সময় ‘ন্যক্কারজনক হামলার’ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সংগতি জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে নাদেল বলেন, ‘এক ব্যক্তির হাতে বিশ্ববিদ্যালয় জিম্মি হতে পারে না।’
সোমবার দুপুর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছে শিক্ষার্থীরা। নাদেল এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করেছেন। জানান, তিনিও স্বাক্ষর দিতে যান।
আরও বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা জন্য তারা চেষ্টা করছেন।
এ দিকে মঙ্গলবার সকাল থেকেই বিভিন্ন হল থেকে একের পর এক মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা।
গোলচত্বর থেকে মিছিল নিয়ে সোমবারের মতো উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের একটাই দাবি উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে। একইসঙ্গে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়ায় প্রক্টরিয়াল কমিটি এবং ছাত্র উপদেষ্টাকেও সরে যেতে হবে।
উল্লেখ্য, অসদাচরণের অভিযোগ এনে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শাবি শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ৩টা পর্যন্ত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীরা।
এ নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন তারা।
এরই মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরতদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল বিভাগের ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
রবিবার বেলা আড়াইটার দিকে একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং শেষে রেজিস্ট্রার ভবন থেকে বের হলে উপাচার্যের পিছু নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় উপাচার্য ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি ভবনে আশ্রয় নিলে শিক্ষার্থীরা সেখানে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
বিকেল ৫টার দিকে উপাচার্যকে উদ্ধারে শিক্ষার্থীদের লাঠিচার্জের পাশাপাশি তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশের ক্রাইসিস রেসপন্স টিমের সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
এছাড়া পুলিশের হামলায় ছত্রভঙ্গ শিক্ষার্থীরা আবারও জড়ো হলে পরে ছাত্রলীগ তাদের ধাওয়া করে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
শিক্ষার্থীরা সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
এদিকে ক্যাম্পাসের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর সার্বিক তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।