বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়ার পর নিখোঁজ সফিউল বাড়ি ফিরলেন ৩০ বছর পর
পঞ্চগড় প্রতিনিধি | ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ১৯:৪৮
নাম তার সফিউল আলম ওরফে সমারু। বয়স পঁয়তাল্লিশের ঘরে। ৩০ বছর আগে বড় ভাই ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে ঝগড়া করে অভিমানে ১৫ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান সফিউল।
পরবর্তীতে পথ ভুলে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। পরিবারের লোকজন অনেক খুঁজেও পায়নি তাকে। সেই সফিউল তার ১৮ বছরের ছেলেকে নিয়ে হঠাৎ বাড়িতে ফিরেছেন। নিখোঁজের দীর্ঘ দিন পর বাড়ি ফিরে আসায় সফিউলের বাড়ি ও স্থানীয়দের মাঝে বইছে আনন্দের জোয়ার।
সরেজমিনে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভুট্টোজোত পাঠানপাড়া এলাকায় গিয়ে সফিউলের বড় ভাই ইসামইল হোসেনের বাড়িতে এমন চিত্র দেখা যায়। হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাইকে বড় ভাই ও ভাবিরা ফুলের মালা পীরয়ে বরণ করে নেয়ার পাশাপাশি স্থানীয় ও সফিউলের ছোটবেলার খেলার সঙ্গীরাও মালা পরিয়ে বরণ করে নেন।
জানা গেছে, সফিউল আলম পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা দেবনগড় ইউনিয়নের ভুট্টোজোত পাঠান পাড়া এলাকার আকবর আলীর দ্বিতীয় ছেলে। কৃষক বাবার ৬ ভাইবোনের মধ্যে সফিউল দ্বিতীয়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৩০ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯২ সালে হঠাৎ করে দরিদ্র কৃষক বাবার পরিবারের অভাব অনটন ও ভরপোষণ নিয়ে করে সফিউল ও তার বড় ভাই ইসমাইল হোসেনের ঝগড়া ও কথা কাটাকাটি হয়। পরে ভাইয়ের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সফিউল। বাড়ি থেকে বের হয়ে বাসে উঠে চলে যান ঠাকুরগাঁও। তিনি প্রথমে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, চট্রগ্রাম ও পরবর্তীতে বর্তমান ঠিকানা কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের হাজিয়ান এলাকায় এক চেয়ারম্যানের বাড়িতে কৃষি শ্রমিক হিসাবে কাজ শুরু করেন। সফিউল বেঁচে নেই এমন ধারণাই ছিল তার পরিবারের। এ ছাড়া ছেলে হারানো শোক নিয়ে মারাও যান সফিউলের মা সপিলা বেগম।
জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষি শ্রমিক হিসাবে কাজ শুরু করেন সফিউল। তবে তেমন পারিশ্রমিক পেতেন না। পরে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের সঙ্গে চট্রগ্রামে গিয়ে রোলিং মিলে কাজ শুরু করেন। ভারি কাজ তেমন না পারায় পরিচিত এক মানুষের সঙ্গে তিনি কক্সবাজার চকোরিয়া উপজেলায় যান। সেখানে এক প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে দীর্ঘ ১২ বছর শ্রমিক হিসাবে কাজ করলেও তিনি পারিশ্রমিক পেতেন না। ওই চেয়ারম্যানের মৃত্যু হলে সেই বাড়িতে আর টিকতে পারেনি সফিউল।
আরো জানা যায়, সফিউল চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে বের হয়ে আশপাশের এলাকার কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। সেখানে দীর্ঘ দিন শ্রমিকের কাজ করার পর স্থানীয়রা সবাই মিলে তাকে বিয়েও করি দেন। বিয়ের পর ক্ষেতমজুরের কাজ করে ১০ শতক জমি নিয়ে বাড়ি করেন। বর্তমানে স্ত্রী সাকিলা বেগমসহ পরিবারে তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে তার সংসার ৷
সফিউল জানান, বড় হয়ে ছেলে তাওহিদুল ইসলাম তাকে নিয়ে বের হয়ে তার পৈতৃক ঠিকানা খুঁজে বের করতে প্রথমে পঞ্চগড় আসেন। পরে পঞ্চগড়ে বাস থেকে নেমে দশমাইল নামক এক বাজারে গেলে সেই বাজারের কথা তার মনে পড়ে। বাবা মা-ভাই কিংবা গ্রামের নাম বলতে না পারলেও বড় দুলাভাই ও বড় বোনের নাম বলতে পারতেন। পরে বাজারে জয়নাল নামে তার দুলভাইয়ের নাম জিজ্ঞাসা করলে স্থানীয়রা তার দুলাভাইয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। বড় বোন ও দুলাভাই সফিউলকে চিনতে পেরে ভাইদের খবর দেন। বড় ভাই এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যান।
সফিউলের বড় ছেলে তওহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা ছোট বেলা থেকে হারিয়ে গেছেন এটা আমাদের বলতেন। তিনি একেক সময় একেক জেলায় তার বাড়ির কথা বলায় আমরাও জানতে পারিনি দাদার বাড়ি কোথায়। আমাদের ভাই-বোনদের জন্ম সনদের প্রয়েজন হওয়ায় বাবার দেওয়া ঠিকানা মতো পঞ্চগড়ে এসে খোঁজখবর নিয়ে আমরা সন্ধার পাই গ্রামের বাড়ির। অনেক ভাল লেগেছে দাদার বাড়িতে এসে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার ৭ নম্বর দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সলেমান আলী বলেন, নিখোঁজ হওয়ার ৩০ বছর পর সফিউল নামে এক ব্যাক্তি তার বাড়িতে ফিরে এসেছে হঠাৎ করে। এমন খবর পেয়ে প্রথমে গ্রাম পুলিশ ও পরে আমি ভূট্টোজো পাঠানপাড়া এলাকায় যাই৷পরে সফিউল ইসলাম ও তার পরিবার, ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি হারিয়ে যাওয়া সফিউলই হলো ওই ব্যাক্তি। সফিউল যদি স্থায়ীভাবে তার পৈতৃক ভিটায় বসবাস করতে চায়, তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সব সহযোগিতা করা হবে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
পঞ্চগড় প্রতিনিধি | ২৩ জানুয়ারি, ২০২২ ১৯:৪৮

নাম তার সফিউল আলম ওরফে সমারু। বয়স পঁয়তাল্লিশের ঘরে। ৩০ বছর আগে বড় ভাই ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে ঝগড়া করে অভিমানে ১৫ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান সফিউল।
পরবর্তীতে পথ ভুলে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। পরিবারের লোকজন অনেক খুঁজেও পায়নি তাকে। সেই সফিউল তার ১৮ বছরের ছেলেকে নিয়ে হঠাৎ বাড়িতে ফিরেছেন। নিখোঁজের দীর্ঘ দিন পর বাড়ি ফিরে আসায় সফিউলের বাড়ি ও স্থানীয়দের মাঝে বইছে আনন্দের জোয়ার।
সরেজমিনে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভুট্টোজোত পাঠানপাড়া এলাকায় গিয়ে সফিউলের বড় ভাই ইসামইল হোসেনের বাড়িতে এমন চিত্র দেখা যায়। হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাইকে বড় ভাই ও ভাবিরা ফুলের মালা পীরয়ে বরণ করে নেয়ার পাশাপাশি স্থানীয় ও সফিউলের ছোটবেলার খেলার সঙ্গীরাও মালা পরিয়ে বরণ করে নেন।
জানা গেছে, সফিউল আলম পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলা দেবনগড় ইউনিয়নের ভুট্টোজোত পাঠান পাড়া এলাকার আকবর আলীর দ্বিতীয় ছেলে। কৃষক বাবার ৬ ভাইবোনের মধ্যে সফিউল দ্বিতীয়।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, ৩০ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯২ সালে হঠাৎ করে দরিদ্র কৃষক বাবার পরিবারের অভাব অনটন ও ভরপোষণ নিয়ে করে সফিউল ও তার বড় ভাই ইসমাইল হোসেনের ঝগড়া ও কথা কাটাকাটি হয়। পরে ভাইয়ের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সফিউল। বাড়ি থেকে বের হয়ে বাসে উঠে চলে যান ঠাকুরগাঁও। তিনি প্রথমে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, চট্রগ্রাম ও পরবর্তীতে বর্তমান ঠিকানা কক্সবাজার জেলার চকোরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের হাজিয়ান এলাকায় এক চেয়ারম্যানের বাড়িতে কৃষি শ্রমিক হিসাবে কাজ শুরু করেন। সফিউল বেঁচে নেই এমন ধারণাই ছিল তার পরিবারের। এ ছাড়া ছেলে হারানো শোক নিয়ে মারাও যান সফিউলের মা সপিলা বেগম। জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষি শ্রমিক হিসাবে কাজ শুরু করেন সফিউল। তবে তেমন পারিশ্রমিক পেতেন না। পরে কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। তাদের সঙ্গে চট্রগ্রামে গিয়ে রোলিং মিলে কাজ শুরু করেন। ভারি কাজ তেমন না পারায় পরিচিত এক মানুষের সঙ্গে তিনি কক্সবাজার চকোরিয়া উপজেলায় যান। সেখানে এক প্রাক্তন ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে দীর্ঘ ১২ বছর শ্রমিক হিসাবে কাজ করলেও তিনি পারিশ্রমিক পেতেন না। ওই চেয়ারম্যানের মৃত্যু হলে সেই বাড়িতে আর টিকতে পারেনি সফিউল।
আরো জানা যায়, সফিউল চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে বের হয়ে আশপাশের এলাকার কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তিনি ভাড়া বাড়িতে ওঠেন। সেখানে দীর্ঘ দিন শ্রমিকের কাজ করার পর স্থানীয়রা সবাই মিলে তাকে বিয়েও করি দেন। বিয়ের পর ক্ষেতমজুরের কাজ করে ১০ শতক জমি নিয়ে বাড়ি করেন। বর্তমানে স্ত্রী সাকিলা বেগমসহ পরিবারে তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে তার সংসার ৷
সফিউল জানান, বড় হয়ে ছেলে তাওহিদুল ইসলাম তাকে নিয়ে বের হয়ে তার পৈতৃক ঠিকানা খুঁজে বের করতে প্রথমে পঞ্চগড় আসেন। পরে পঞ্চগড়ে বাস থেকে নেমে দশমাইল নামক এক বাজারে গেলে সেই বাজারের কথা তার মনে পড়ে। বাবা মা-ভাই কিংবা গ্রামের নাম বলতে না পারলেও বড় দুলাভাই ও বড় বোনের নাম বলতে পারতেন। পরে বাজারে জয়নাল নামে তার দুলভাইয়ের নাম জিজ্ঞাসা করলে স্থানীয়রা তার দুলাভাইয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। বড় বোন ও দুলাভাই সফিউলকে চিনতে পেরে ভাইদের খবর দেন। বড় ভাই এসে তাকে বাড়ি নিয়ে যান।
সফিউলের বড় ছেলে তওহিদুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা ছোট বেলা থেকে হারিয়ে গেছেন এটা আমাদের বলতেন। তিনি একেক সময় একেক জেলায় তার বাড়ির কথা বলায় আমরাও জানতে পারিনি দাদার বাড়ি কোথায়। আমাদের ভাই-বোনদের জন্ম সনদের প্রয়েজন হওয়ায় বাবার দেওয়া ঠিকানা মতো পঞ্চগড়ে এসে খোঁজখবর নিয়ে আমরা সন্ধার পাই গ্রামের বাড়ির। অনেক ভাল লেগেছে দাদার বাড়িতে এসে।
তেঁতুলিয়া উপজেলার ৭ নম্বর দেবনগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সলেমান আলী বলেন, নিখোঁজ হওয়ার ৩০ বছর পর সফিউল নামে এক ব্যাক্তি তার বাড়িতে ফিরে এসেছে হঠাৎ করে। এমন খবর পেয়ে প্রথমে গ্রাম পুলিশ ও পরে আমি ভূট্টোজো পাঠানপাড়া এলাকায় যাই৷পরে সফিউল ইসলাম ও তার পরিবার, ভাই-বোনদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি হারিয়ে যাওয়া সফিউলই হলো ওই ব্যাক্তি। সফিউল যদি স্থায়ীভাবে তার পৈতৃক ভিটায় বসবাস করতে চায়, তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সব সহযোগিতা করা হবে।