৩৪ ভিসির পদত্যাগ দেখা আমার খুবই শখ: ড. জাফর ইকবাল
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১০:১৯
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘দেশের ৩৪ জন ভিসি বলেছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করলে সবাই পদত্যাগ করবেন। আমার খুবই শখ এই জিনিসটা দেখতে। আমাদের দেশে এমন ভিসি আছে, যার আদর্শ অনেক বেশি, যার জন্য অন্যরা পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আমার ধারণা সেই শখ সহজে মিটবে না। আর এই ৩৪ ভিসির ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে।’
বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের দেখতে এসে এসব কথা বলেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করলে দেশের ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, তোমাদের এই আন্দোলনের ফলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা মডিফিকেশন হয়েছে। এটা নতুন করে বিশ্লেষণ করতে হবে যাকে ভিসি হিসেবে পাঠানো হয়েছে তিনি কি ভিসি হওয়ার যোগ্য কিনা! আমি অনেক কিছু জানি কিন্তু নিজেদের দুর্বলতা বলতে ভালো লাগে না। তোমরা যা করেছো সেটার কোনো তুলনা নাই। যে আন্দোলনটা তৈরি করেছো দেশের প্রত্যেকটা ইয়ং ছেলেমেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছে। অনেক বড় বড় মানুষ যোগাযোগ করেছেন সে জন্য আমি এখানে আসলাম।’
এর আগে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে মঙ্গলবার ভোর চারটায় ক্যাম্পাসে পৌঁছান মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং তার স্ত্রী ও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক।
সেখানে তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পে গিয়ে খোঁজ-খবর নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের বিষয়ে তাকে বিস্তারিত জানান।
তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙতে অনুরোধ করলে পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা কথা দেন অনশন ভাঙার। তবে অনশনরত যেসব শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাদের সবাইকে নিয়ে অনশন ভাঙবেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
এ সময় ইয়াসমিন হক বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে ঢাকা থেকে সিআইডি গ্রেপ্তার করেছে কিন্তু আমরা সিআইডি পুলিশ বুঝি না, আমাদের কথা দিয়েছে ছেলেদের ছেড়ে দেবে, তারা কালকেই ছেড়ে দেবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা আমাকে কথা দিয়েছ বাচ্চাগুলোর অনশন ভাঙাবা, আশা করবো কথা রাখবা।’
এতে সবাই সহমত পোষণ করেন।
তিনি আরও বলেন, তোমরা টের পাচ্ছো না তোমরা কি করেছো। আমি যখন দুপুরে কথা বলছিলাম আমি ধরেই নিয়েছিলাম এখানে একটি ডাক্তারের টিম আছে, নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছে কিন্তু এখানে এসে খবর পেলাম শুধু যে ডাক্তার নাই সেটা না, যারা ছিল তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দূর করে দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বড় অমানবিক ব্যাপার আর কি হতে পারে। এটা অলমোস্ট ছেলেমেয়েদের মার্ডার করার একটা পরিকল্পনা। আমি শুনে খুবই দুঃখ পেলাম, সম্ভব হলে আমি উপরের মহলকে জানাবো।
‘আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম যে ওরা নিজেরাই ক্যানোলা ঢুকিয়ে স্যালাইন দিচ্ছে। যাদের আমি দেখতে তাদের অবস্থা যদি এত খারাপ হয়, তাহলে বাকি বিশজনের কি অবস্থা। তাদের সাহায্য করা যাবে না, এর চেয়ে বড় অমানবিক কাজ হতে পারে না।’
অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, কোনো ব্যক্তি ভিসি থাকার পর যখন দ্বিতীয়বার থেকে যেতে চায় তখন ভালোভাবে যাচাই করে দেওয়া উচিত। তাহলে এমন ব্যক্তি আসবে না। আবার উনাকে ভিসি বানানোতে ছেলেমেয়েরা হতাশ হয়েছে। তিন বছরের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। ক্যাম্পাসের আলস পিকচার নেওয়া উচিত। আমাদের ভিসি হতে বলা হয়েছিল কিন্তু আমরা ভিসি হতে চাই নাই। আমরা কথা দিচ্ছি সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, তোমরা যেটা এচিভ করার কথা সেটা তোমরা এচিভ করেছো। বাংলাদেশের একটা বড় পলিটিক্যাল পার্টি এ রকম তোমাদের মত সাধারণ মানুষের মাঝে পৌঁছাতে পারেনি।
এ সময় আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র জাফর ইকবালকে বলেন, স্যার আপনি আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, এই ভয়ংকর লোকটার অধীনে যাতে আমাদের থাকতে না হয়। এখান থেকে দ্রুত যেন চলে যায়। আমরা তাকে এখানে দেখতে চাই না।
উত্তরে তিনি বলেন, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। তোমরা জানো না তোমরা কি করেছো।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি | ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১০:১৯

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, ‘দেশের ৩৪ জন ভিসি বলেছেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করলে সবাই পদত্যাগ করবেন। আমার খুবই শখ এই জিনিসটা দেখতে। আমাদের দেশে এমন ভিসি আছে, যার আদর্শ অনেক বেশি, যার জন্য অন্যরা পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আমার ধারণা সেই শখ সহজে মিটবে না। আর এই ৩৪ ভিসির ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে।’
বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের দেখতে এসে এসব কথা বলেন তিনি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করলে দেশের ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, তোমাদের এই আন্দোলনের ফলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা মডিফিকেশন হয়েছে। এটা নতুন করে বিশ্লেষণ করতে হবে যাকে ভিসি হিসেবে পাঠানো হয়েছে তিনি কি ভিসি হওয়ার যোগ্য কিনা! আমি অনেক কিছু জানি কিন্তু নিজেদের দুর্বলতা বলতে ভালো লাগে না। তোমরা যা করেছো সেটার কোনো তুলনা নাই। যে আন্দোলনটা তৈরি করেছো দেশের প্রত্যেকটা ইয়ং ছেলেমেয়ে তোমাদের সঙ্গে আছে। অনেক বড় বড় মানুষ যোগাযোগ করেছেন সে জন্য আমি এখানে আসলাম।’
এর আগে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে মঙ্গলবার ভোর চারটায় ক্যাম্পাসে পৌঁছান মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং তার স্ত্রী ও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক।
সেখানে তারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। অনশনে থাকা শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পে গিয়ে খোঁজ-খবর নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের বিষয়ে তাকে বিস্তারিত জানান।
তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙতে অনুরোধ করলে পরবর্তীতে আন্দোলনকারীরা কথা দেন অনশন ভাঙার। তবে অনশনরত যেসব শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি আছেন তাদের সবাইকে নিয়ে অনশন ভাঙবেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
এ সময় ইয়াসমিন হক বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে ঢাকা থেকে সিআইডি গ্রেপ্তার করেছে কিন্তু আমরা সিআইডি পুলিশ বুঝি না, আমাদের কথা দিয়েছে ছেলেদের ছেড়ে দেবে, তারা কালকেই ছেড়ে দেবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘তোমরা আমাকে কথা দিয়েছ বাচ্চাগুলোর অনশন ভাঙাবা, আশা করবো কথা রাখবা।’
এতে সবাই সহমত পোষণ করেন।
তিনি আরও বলেন, তোমরা টের পাচ্ছো না তোমরা কি করেছো। আমি যখন দুপুরে কথা বলছিলাম আমি ধরেই নিয়েছিলাম এখানে একটি ডাক্তারের টিম আছে, নিয়মিত চিকিৎসা দিচ্ছে কিন্তু এখানে এসে খবর পেলাম শুধু যে ডাক্তার নাই সেটা না, যারা ছিল তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দূর করে দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে বড় অমানবিক ব্যাপার আর কি হতে পারে। এটা অলমোস্ট ছেলেমেয়েদের মার্ডার করার একটা পরিকল্পনা। আমি শুনে খুবই দুঃখ পেলাম, সম্ভব হলে আমি উপরের মহলকে জানাবো।
‘আমি শুনে অবাক হয়ে গেলাম যে ওরা নিজেরাই ক্যানোলা ঢুকিয়ে স্যালাইন দিচ্ছে। যাদের আমি দেখতে তাদের অবস্থা যদি এত খারাপ হয়, তাহলে বাকি বিশজনের কি অবস্থা। তাদের সাহায্য করা যাবে না, এর চেয়ে বড় অমানবিক কাজ হতে পারে না।’
অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক বলেন, কোনো ব্যক্তি ভিসি থাকার পর যখন দ্বিতীয়বার থেকে যেতে চায় তখন ভালোভাবে যাচাই করে দেওয়া উচিত। তাহলে এমন ব্যক্তি আসবে না। আবার উনাকে ভিসি বানানোতে ছেলেমেয়েরা হতাশ হয়েছে। তিন বছরের ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে। ক্যাম্পাসের আলস পিকচার নেওয়া উচিত। আমাদের ভিসি হতে বলা হয়েছিল কিন্তু আমরা ভিসি হতে চাই নাই। আমরা কথা দিচ্ছি সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, তোমরা যেটা এচিভ করার কথা সেটা তোমরা এচিভ করেছো। বাংলাদেশের একটা বড় পলিটিক্যাল পার্টি এ রকম তোমাদের মত সাধারণ মানুষের মাঝে পৌঁছাতে পারেনি।
এ সময় আন্দোলনকারীদের এক মুখপাত্র জাফর ইকবালকে বলেন, স্যার আপনি আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, এই ভয়ংকর লোকটার অধীনে যাতে আমাদের থাকতে না হয়। এখান থেকে দ্রুত যেন চলে যায়। আমরা তাকে এখানে দেখতে চাই না।
উত্তরে তিনি বলেন, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। তোমরা জানো না তোমরা কি করেছো।