সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৪ মে, ২০২২ ১৯:০৪
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের পর ছাত্রদল ক্যাম্পাস ছাড়লেও টিএসসি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মধুর ক্যানটিনে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া মোটরসাইকেল শোডাউনও চলছে।
মঙ্গলবার সকালে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে আসতে গেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় তাঁদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এক পর্যায়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যান ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।
তবে, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানান, ছাত্রদল আবারও ঢাবি ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারে, এমন ধারণা থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় এখনো অবস্থান নিয়ে আছেন তারা। তাঁদের অনেকের হাতে স্টাম্প ও লাঠিসোঁটা দেখা গেছে।
এ ছাড়া ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীকে মোটরসাইকেলে করে পুরো ক্যাম্পাসে ‘শোডাউন’ করতে দেখা গেছে। তবে ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, তাঁরা আজ আর ক্যাম্পাসে আসবেন না।
ঘটনার সূত্রপাত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদের এক বক্তব্যের জের ধরে গত রবিবার সন্ধ্যায় টিএসসি এলাকায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করেন।
ফের হামলা
হামলার প্রতিবাদ ও সাইফ মাহমুদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল।
ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে আসার খবর পেয়ে সকাল থেকেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, মধুর ক্যানটিন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন। সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা মিছিল বের করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মিছিলে কোনো স্লোগান দেওয়া হয়নি।
সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রদলের মিছিলের ওপর ফের হামলা করে ছাত্রলীগ।
হকিস্টিক, রড, চাপাতি ও দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রদল জানিয়েছে। পরে সাড়ে ১১টার দিকে দোয়েল চত্বর ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইট ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।
একপর্যায়ে শহীদুল্লাহ হলের ড্রেনে ফেলে ছাত্রদলের দুই নেতা–কর্মীকে পেটাতে দেখা যায়। এমনকি হাসপাতালে নেওয়ার পথে আহত ওই দুজনের একজনকে রিকশা থেকে ফেলে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মী আল আমিন বাবলুকে শহীদুল্লাহ হলের ড্রেনে ফেলে পেটাতে দেখা গেছে। মারধর করার পর তাঁদের রিকশায় তুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে মিনহাজুলকে রিকশা থেকেও লাথি দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। পরে অবশ্য একটি রিকশায় করে মিনহাজুলকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মানসুরা আলমসহ অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে ছাত্রদল জানিয়েছে। ছাত্রলীগ বলছে, এ হামলা 'প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ'। দেশি অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করায় তাঁদের প্রতিহত করেছে ছাত্রলীগ।
ঢাবি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ক্যাম্পাসে বছরের পর বছর ধরে সহাবস্থান চলছে। ক্যাম্পাসে কী এমন হয়েছে, জঙ্গি মনোভাব নিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য লাঠিসোঁটা হাতে ক্যাম্পাসে ঢুকতে হবে? আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলা হয়েছে, কার কী রাজনৈতিক পরিচয় সেটি আমাদের বিবেচনার বিষয় নয়। ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে ভোরবেলা যারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, কী ঘটেছে, সে বিষয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের কাছেও প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে৷ প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব৷
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৪ মে, ২০২২ ১৯:০৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের পর ছাত্রদল ক্যাম্পাস ছাড়লেও টিএসসি, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মধুর ক্যানটিনে লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করছেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া মোটরসাইকেল শোডাউনও চলছে।
মঙ্গলবার সকালে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে আসতে গেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় তাঁদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া–পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এক পর্যায়ে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে যান ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।
তবে, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানান, ছাত্রদল আবারও ঢাবি ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারে, এমন ধারণা থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকায় এখনো অবস্থান নিয়ে আছেন তারা। তাঁদের অনেকের হাতে স্টাম্প ও লাঠিসোঁটা দেখা গেছে।
এ ছাড়া ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীকে মোটরসাইকেলে করে পুরো ক্যাম্পাসে ‘শোডাউন’ করতে দেখা গেছে। তবে ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বলেছেন, তাঁরা আজ আর ক্যাম্পাসে আসবেন না।
ঘটনার সূত্রপাত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদের এক বক্তব্যের জের ধরে গত রবিবার সন্ধ্যায় টিএসসি এলাকায় ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করেন।
ফের হামলা
হামলার প্রতিবাদ ও সাইফ মাহমুদের বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল।
ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে আসার খবর পেয়ে সকাল থেকেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, মধুর ক্যানটিন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন। সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা মিছিল বের করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, মিছিলে কোনো স্লোগান দেওয়া হয়নি।
সকাল ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রদলের মিছিলের ওপর ফের হামলা করে ছাত্রলীগ।
হকিস্টিক, রড, চাপাতি ও দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রদল জানিয়েছে। পরে সাড়ে ১১টার দিকে দোয়েল চত্বর ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইট ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে।
একপর্যায়ে শহীদুল্লাহ হলের ড্রেনে ফেলে ছাত্রদলের দুই নেতা–কর্মীকে পেটাতে দেখা যায়। এমনকি হাসপাতালে নেওয়ার পথে আহত ওই দুজনের একজনকে রিকশা থেকে ফেলে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মী আল আমিন বাবলুকে শহীদুল্লাহ হলের ড্রেনে ফেলে পেটাতে দেখা গেছে। মারধর করার পর তাঁদের রিকশায় তুলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে মিনহাজুলকে রিকশা থেকেও লাথি দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। পরে অবশ্য একটি রিকশায় করে মিনহাজুলকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
হামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মানসুরা আলমসহ অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে ছাত্রদল জানিয়েছে। ছাত্রলীগ বলছে, এ হামলা 'প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ'। দেশি অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করায় তাঁদের প্রতিহত করেছে ছাত্রলীগ।
ঢাবি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ক্যাম্পাসে বছরের পর বছর ধরে সহাবস্থান চলছে। ক্যাম্পাসে কী এমন হয়েছে, জঙ্গি মনোভাব নিয়ে সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য লাঠিসোঁটা হাতে ক্যাম্পাসে ঢুকতে হবে? আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বলা হয়েছে, কার কী রাজনৈতিক পরিচয় সেটি আমাদের বিবেচনার বিষয় নয়। ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে ভোরবেলা যারা সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, কী ঘটেছে, সে বিষয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের কাছেও প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে৷ প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করব৷