
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ছিনতাই, মারামারি এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা পদ পেয়েছেন। কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন অছাত্ররা। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে সর্বোচ্চ ১২১ সদস্যের কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও কমিটিতে পদ পেয়েছেন ৩৮৮ জন। অন্যান্য শাখা কমিটিতে পদ থাকার পরও ঘোষিত কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন কয়েকজন। আবার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকে পদ পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।
চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস্ বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আকতারুজ্জামান সোহেলকে সভাপতি এবং দর্শন বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান লিটনকে সাধারণ সম্পাদক করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করা হয়। বিজ্ঞপ্তি মঙ্গলবার রাত সোয়া ৯টায় ছাত্রলীগের অফিশিয়াল ফেইসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। রাত সোয়া ১২টায় বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক তাসমিয়া মেহরিনকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। অফিশিয়ালি ঘোষণার পর কমিটিতে সংযোজন-বিয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহান খান বৃহৎ এই কমিটিকে শুভঙ্করের ফাঁকি বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘কমিটিতে বহিষ্কৃত কারও থাকা অন্যায়। ছাত্রলীগে এ ধরনের কমিটি হতে পারে না। কোনো ইউনিটে পদে থাকা অবস্থায় নতুন করে অন্য ইউনিটের পদে থাকা ছাত্রলীগের জন্য অবমাননাকর।’
জাবি ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি হয়েছেন ১০১ জন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ১১ জন, সাংগঠনিক সম্পাদক ১১ জন, সহ-সম্পাদক ৬৬ জন ও সদস্য ৫৫ জন। বিভিন্ন সম্পাদক ও উপ-সম্পাদক পদে আরও ১৪২ জন পদ পেয়েছেন। এছাড়া, একজন সভাপতি ও একজন সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর একটি ভ্রমণবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাড়ে পঁচানব্বই হাজার টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন ও কর্মী সৈয়দ লায়েব আলীর বিরুদ্ধে। লিটন বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আর সৈয়দ লায়েব আলী সহ-সভাপতির পদ পেয়েছেন।
২০১৯ সালের ৩০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীর জামাতাকে মারধর করে ছিনতাই ও তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে বহিষ্কৃত সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আল-রাজি সরকার পেয়েছেন উপ-ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদকের পদ এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শাহ মোস্তাক আহমেদ সৈকত হয়েছেন সহ-সভাপতি।
২০১৯ সালের ২২ জুলাই রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের ঘটনায় ১১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। তাদের মধ্যে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ফয়জুল ইসলাম নীরব পেয়েছেন উপ-ক্রীড়া সম্পাদকের পদ ও ইতিহাস বিভাগের সারোয়ার হোসেন সাকিল হয়েছেন উপ-কৃষি সম্পাদক।
২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে লাঞ্ছনা এবং এক সংবাদকর্মীকে মারধরের ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কৃত বাংলা বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শুভাশীষ ঘোষ পেয়েছেন উপ-ধর্ম সম্পাদকের পদ।
চলতি বছরের ২ আগস্ট বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের অতিথিকক্ষে এক সাংবাদিককে নির্যাতনের দায়ে বহিষ্কৃত আইন ও বিচার বিভাগের মাসুম বিল্লাহ হয়েছেন সহ-সম্পাদক। আর গত ৬ আগস্ট মওলানা ভাসানী হল ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধরের ঘটনায় সাময়িক বহিষ্কৃত খালিদ হাসান ও সাব্বির হোসেন পেয়েছেন সদস্য পদ।
চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি ডিশ ও ইন্টারনেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাটে অভিযুক্তদের মধ্যে সহ-সভাপতি হয়েছেন সাজ্জাদুল ইসলাম ও এহসানুল হক, আর সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন ফারসাদ হোসেন ও মেহেদী জয়।
এছাড়া র্যাগিং, মারধর প্রভৃতি কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানা মেয়াদে বহিষ্কৃত এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় বিতর্কিত আরও অন্তত ২০ জন কমিটিতে পদ পেয়েছেন।
এর বাইরে শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত নন এমন অনেকেই পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্নাতকোত্তর শেষ হয়েছে। পরীক্ষায় ফেল করে নানাভাবে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখলেও বড়জোর ৪৪তম ব্যাচ পর্যন্ত ছাত্রত্ব আছে। অথচ পূর্ণাঙ্গ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে স্থান পেয়েছেন ৪২ ও ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়া কেউ কমিটিতে পদ পাওয়ার যোগ্য নন।
পদবঞ্চিত কর্মীরা বলছেন, কিছু নেতাকর্মী জেলা-উপজেলায় পদে থাকার পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকা জেলা উত্তরের সহ-সভাপতি শান্ত মাহবুবকে দেওয়া হয়েছে ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদকের পদ। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা হয়েছেন কর্মসংস্থান সম্পাদক এবং বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি থোয়াই মহাজন হয়েছেন সদস্য।
নতুন কমিটির উপ-মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা সম্পাদক ফারহান আনজুম তানজিল বলেন, ‘কমিটিতে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, অবৈধভাবে হলে থাকা পোষ্য কোটায় ভর্তি শিক্ষার্থী ও মাদক কারবারে অভিযুক্তরাও পদ পেয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘যেসব ছাত্রলীগ নেতাকর্মী অনেকদিন ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং ইতিমধ্যে শিক্ষাজীবন শেষ করেছে তাদের করোনা-পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান দিয়েছি। আর বিভিন্ন সময়ে যারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা-ে যুক্ত ছিল তাদের দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করেছি এবং শুধরানোর সুযোগ দিয়েছি। তাই অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার পরও তাদের কমিটিতে রেখেছি।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা বলেন, ‘কমিটি গঠনে কোনো অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তার ব্যাখ্যা দেবেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য মুঠোফোনে কল ও বার্তা পাঠালেও তারা সাড়া দেননি।
মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ খালেদ নর্ডিনের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন শিক্ষা সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব)-এর সদস্যরা। শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের একটি হোটেলে এই মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
ইরাব সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে মোহাম্মদ খালেদ নর্ডিন মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সুবিধা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বৃদ্ধির কথা জানান।
এ সময় খালেদ নর্ডিন বলেন, মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এসব শিক্ষার্থীদের জন্য মালয়েশিয়া সরকার নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে। ক্রমান্বয়ে তা আরও বাড়ানো হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, গুণগত শিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন র্যাংকিংয়ে ভালো করছে। প্রচুরসংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী এখানে পড়তে আসছে। আবার অন্যদিকে আমাদের বিদেশে গিয়ে ক্যাম্পাস খুলছে।
পূ্র্ব নির্ধারিত এই অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষামন্ত্রীর হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন ইরাব সভাপতি মীর মোহাম্মদ জসিম ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসাইন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ইরাব উপদেষ্টা সাব্বির নেওয়াজ, নিজামুল হক ও শরীফুল আলম সুমন প্রমুখ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পাখি মেলা-২০২৩ অনুষ্ঠিত হলো। শুক্রবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম। পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বাড়াতে ২০০১ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখি মেলা হয়ে আসছে। এবার ছিল মেলার ২১তম আসর।
উদ্বোধনকালে উপাচার্য বলেন, আমরা সচেতন হতে পারলে পাখিদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি সম্ভব। ক্যাম্পাসে উচ্চ শব্দে কোনো অনুষ্ঠান করা থেকে বিরত থাকলে এবং পাখিদের বিরক্ত না করলে তারা নিরাপদ পরিবেশ পাবে।
পাখিমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মো. নুহু আলম, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম, অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ, পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা রেজাউল করিম প্রমুখ।
'পাখপাখালি দেশের রত্ন আসুন সবাই করি যত্ন' স্লোগানে অনুষ্ঠিত এ মেলায় বিগ বার্ড প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের সম্মাননা, গণমাধ্যমে পাখিবিষয়ক সেরা প্রতিবেদন এবং পাখিবিষয়ক গবেষণা প্রতিবেদন পুরস্কার প্রদান করা হয়।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত পাখি মেলায় ছোটদের পাখিবিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, কুইজ, বই-পোস্টার প্রদর্শনী, সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পাখি দেখা, পাখি চেনার প্রতিযোগিতা, পাখিবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতি বছরের জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগ বার্ষিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক্রিকেট ও ফুটবল প্রতিযোগিতার পাশাপাশি অন্যান্য খেলারও আয়োজন থাকে। এ টুর্নামেন্ট গুলোর জন্য উন্মুখ হয়ে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তবে এবছরের আয়োজন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগ। আর্থিক সংকটের কারণে টুর্নামেন্ট চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহেল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে, সর্বশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তঃবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতা হয়। আর ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। করোনাকালীন পরবর্তী এক বছর পেরুলেও নতুন করে টুর্নামেন্ট চালু করতে পারেনি শারীরিক শিক্ষা বিভাগ। এতে ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা গত ২৫ জানুয়ারি আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট ও ফুটবল প্রতিযোগিতা চালুর দাবিতে শারীরিক শিক্ষা বিভাগে তালা ঝুঁলিয়ে আন্দোলন শুরু করে। পরে একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে শিগগিরই টুর্নামেন্ট শুরু হবে প্রক্টরিয়াল বডির এমন আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা। উক্ত দিনেই আন্তঃবিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চালু হবে মর্মে স্ব-স্ব বিভাগগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছে শারীরিক শিক্ষা দপ্তর। তবে চাপের মুখে চিঠি পাঠালেও বাজেট না থাকায় টুর্নামেন্ট চালু নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরটি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, প্রত্যেক বছর খেলাধুলা বাবদ আমাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু টুর্নামেন্টগুলো নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে না। বাজেট নেই এমন কথা বলে কর্তৃপক্ষ। অথচ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে টুর্নামেন্ট শুরু হয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রশাসন আসার পরে খেলাধুলার প্রতি গুরুত্ব কমে গেছে। অতিসত্বর টুর্নামেন্ট আয়োজন না করলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
এ বিষয়ে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ সোহেল বলেন, আমি টুর্নামেন্ট চালুর জন্য সব সময় প্রস্তুত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাকে বাজেট দিয়ে সহযোগিতা না করলে আমি কীভাবে ব্যবস্থা করবো। বাজেটের অভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বাস্কেটবল বল টিম আমি পাঠাতো পারবো কিনা জানি না।
তিনি আরও বলেন, একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট করতে কমপক্ষে দুই লাখের অধিক টাকার প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফা জানানোর পরেও অগ্রগতি হয়নি। ফলে সঠিক সময়ে টুর্নামেন্ট চালু হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, খেলাধুলায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনন্য ঐতিহ্য রয়েছে। আন্তঃবিভাগ টুর্নামেন্ট চালুর জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাজেট পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে বাজেট কম হলেও টুর্নামেন্ট হবে।
মালয়শিয়ার ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে তার প্রথম আন্তর্জাতিক ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।
শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে দেশটির উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী দাতো সেরি মোহাম্মদ খালেদ নরডিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই শাখা ক্যাম্পাস চালুর ঘোষণা দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়ালালামপুর মূল ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি এ ঘোষণা দেন।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশে প্রথম শাখা ক্যাম্পাস হিসেবে সরকারের অনুমোদন লাভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ক্যাম্পাসটি রাজধানী ঢাকার বনানীতে স্থাপন করা হচ্ছে এবং এ বছরের মে মাসে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করবে।
অনুষ্ঠানে উচ্চশিক্ষামন্ত্রী দাতো সেরি মোহাম্মদ খালেদ নরডিন বলেন, এই শাখা উদ্বোধনটি মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষাকে মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিকীকরণের পরিকল্পনার অংশ।
মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, ইউসিএসাই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার একটি বৈশ্বিক শিক্ষার হার হিসেবে মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার মালয়েশিয়ান ব্যান্ডটি গুণমানের সমার্থক এবং আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব ফেলতে পারি।
ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর দাতুক ড. সিতি হামিসাহ তাপসীর বলেন, উচ্চ শিখরে এগিয়ে যাওয়ার আগে ইউসিএসাই এর নতুন ক্যাম্পাস প্রাথমিকভাবে শিক্ষাদান এবং শেখার ওপর গুরুত্ব প্রদান করবে।
উপাচার্য বলেন, কাঙ্ক্ষিত স্নাতক ফলাফল এবং জীবনের সম্ভাবনা উন্নত করতে আমরা এমন প্রোগ্রাম অফার করব যা আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের দ্বারা বর্ণিত চাহিদা এবং অর্থনৈতিক প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে, আমরা নতুন ক্যাম্পাসের কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গবেষণা, নির্বাহী শিক্ষা এবং ক্রস ক্যাম্পাস সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দিতে এগিয়ে যাব।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকার বনানীতে ৪৫ হাজার বর্গফুটের ইউসিএসআই এর বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে ২৪ ডিগ্রি এবং মাস্টার্স প্রোগ্রাম শুরু হবে। এরমধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞান, ব্যবসা, প্রকৌশল, স্থাপত্য, সামাজিক বিজ্ঞান এবং ডিজাইনের বিষয়গুলো অন্যতম। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির কুয়ালালামপুর মূল ক্যাম্পাসে ১০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টি আগামী সাত বছরের মধ্যে বাংলাদেশে শাখা ক্যাম্পাসে প্রায় ৫০০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করার আশা প্রকাশ করছে। এই সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম তিন একরের জমিতে নির্মিত স্থানে স্থানান্তরিত হবে। যেখানে ২০ হাজার বর্গফুটের বেশি আধুনিক স্থাপনার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র্যাঙ্কিং-২০২৩ এ ইউসিএসআই হল মালয়েশিয়ার শীর্ষ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। রেটিং ২৮৪ নম্বরে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, কুচিং, এবং পোর্ট ডিকসনে তিনটি ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (রাজনৈতিক) রেহানা পারভিন উপস্থিত ছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় গুরুতর আহত প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। এই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার প্রতিবাদে নিরাপদ ক্যাম্পাসসহ চার দফা দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে রাতে বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে গেরুয়াগামী সড়কের মওলানা ভাসানী হল সংলগ্ন স্থানে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে।
এতে গুরুতর আহত হন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের (৫১তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী মো. জাহিদ হাসান। তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আহত জাহিদকে ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়ার পর এখন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আনিস বলেন, জাহিদের এখনও জ্ঞান ফেরেনি। তার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাথার একটি হাড় ভেঙে গেছে। এখন আমরা তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। শুক্রবার এমআরআই করে বিস্তারিত বলা যাবে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে গেরুয়া বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন জাহিদ। মওলানা ভাসানী হলের কাছে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা তার কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে দেখা হয়। তখন সে রাস্তা পার হওয়ার জন্য সড়কের ডান দিকে এগোলে পেছন থেকে মোটরসাইকেল এসে ধাক্কা দেয় তাকে। এতে গুরুতর আহত হন তিনি। মোটরসাইকেলটি চালাচ্ছিলেন দর্শন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফেরদৌস মাহমুদ। একই সড়ক ধরে তিনিও গেরুয়া বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন।
দুর্ঘটনার সময় একই স্থানে ছিলেন জাহিদের সহপাঠী আসিফ ইকবাল। তিনি অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, মোটরসাইকেলের গতি ছিল বেশি। মোটরসাইকেলটি চাকার নিচে নিয়ে প্রায় আট থেকে দশ ফুট দূরে গিয়ে ফেলে জাহিদকে।
গত মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম ব্যাচের ক্লাস শুরু হয়েছে। মাত্র দুদিন আগে ক্যাম্পাসে আসা একজন শিক্ষার্থীর এমন দুর্ঘটনার শিকার হওয়া নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করছেন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা। একইসঙ্গে ক্যাম্পাসের সড়কের বিশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কিত তারা।
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সভাপতি রাকিব আহমেদ বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে একজন শিক্ষার্থী মেধার প্রমাণ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। ক্যম্পাসে আসার দুদিনের মাথায় তার সাথে ঘটে যাওয়া এমন দুর্ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে বেপারোয়া গতিতে গাড়ি চালানো নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। আমরা চাই, এই দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। গাড়ির লাইসেন্স ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো বিষয়গুলো যাচাই করে প্রচলিত আইনে যেন সঠিক বিচার হয় তার জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুর্ঘটনায় আহত ছেলেটির ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখছি। আমরা দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখবো।
এদিকে মোটরসাইকেলে ধাক্কায় শিক্ষার্থী আহতের খবর শুনে বিক্ষুব্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ও পড়াশোনার খরচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বহন করা, দুর্ঘটনায় দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া, রিকশাসহ যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং প্রত্যেক হলের সামনে গতিরোধক স্থাপনের চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। রাত পৌনে তিনটায় দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে উপাচার্যের আশ্বাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা।
তবে প্রথমদিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করার জন্য উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যেতে চাইলে বাধা দিয়ে তাদের হলে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চৌরঙ্গী এলাকায় পৌঁছালে ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বাঁধা দেন। তখন অনেকে হলে ফিরে যান। আবার হল থেকে বের হতে চাইলেও অনেকে বের হতে পারেননি।
উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পূরণ করা হবে। এ ধরণের দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আনন্দের কথা, পরিতুষ্টি ও তৃপ্তির কথা আগামীকাল আমি যেন পুনর্জন্ম লাভ করতে যাচ্ছি। এই কসমোপলিটন অথচ বায়ুদূষণে সেরা শহরের ঘিঞ্জি অলিগলি থেকে উদার উন্মুক্ত পরিবেশে সুরম্য সুউচ্চ সুবিস্তৃত রাজস্ব ভবন হিসেবে আমার দ্বার উদঘাটন হবে রবিবার। আমাকে সবাই চিনে না। তবে সমাজের যাদের আয়-রোজগার ভালো, যারা ব্যবসাপাতি করে খায়, জাহাজের খবর যারা রাখে তাদের তো আমারে চেনার কথা। শুনেছি অনেকে আমাকে চেনে, অনেকে আমার নাম শুনেছে, জানে। কিন্তু আমাকে পাশ কাটিয়ে যেতে চায়, আমার সঙ্গে দেখা না হলে ভালো, এমন মনে করে কেউ কেউ। নিজের দেশে না খাটিয়ে, কাজ-কাম সৃষ্টি না করে চুরি-বাটপারির টাকা যারা হরহামেশা বিদেশে পাঠায় তারা তো আমাকে চিনেও চিনবে না, জেনেও জানবে না, তাদের কাছে আমার বার্তা পৌঁছাতে আমি নব বলে বলীয়ান হতে যাচ্ছি। দেশে যারা সুবোধ সুশীল সদাচারে সুশাসনে ন্যায্যতায় বিশ্বাসী তাদের আরও উন্নত সেবা দেওয়ার সক্ষমতা পাবএ প্রত্যাশা ও প্রতিজ্ঞায় সবাইকে নতুন রাজস্ব ভবনে স্বাগত জানাই।
মিডিয়ার বন্ধুদের প্রতি আমি সবিশেষ কৃতজ্ঞ। তারাই তো আমার কথা ও ছবি হরহামেশা প্রকাশ ও প্রচার করে। বিট আপা, বিট ভাইয়ারা আমার খোঁজ করেন, আমার এখানে যাতায়াত করেন। আমার কাজকর্মের তারিফ যতটা না করেন তার চেয়ে আমার ভেতরের অনেক বিষয়-আশয় নিয়ে খোঁচাখুঁচি করেন বেশি। এটাকে আমি স্বাগত জানাই, কারণ সবার সঙ্গে আমার জানাশোনা যত বাড়বে তত আমাদের সবার জন্য ভালো। আমার সঙ্গে যাদের আনন্দ(?) কিংবা বিরাগ-বিষাদের যোগাযোগ তাদের সহায়তা করতে সাহায্য করার বিষয়ে মিডিয়ার ভূমিকাকে আমি বড় মূল্যবান মনে করি। আমার কর্মকাণ্ডের পরিসংখ্যানের সুচতুর সমালোচনায় ঘরে-বাইরে ও সবার মধ্যে যে কাণ্ডজ্ঞান ও দায়িত্ববোধ বাড়ে, সেদিকে তারা নজর যেমনটি দিচ্ছেন, সেটি যেন আরও জোরদার, রাজস্ব আহরণের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। এটি সবাইকে বোঝাতে চাই এ দেশ অর্থনীতি, সমাজ একান্তভাবে আমাদের, এর আয়-উন্নতি আমাদের জন্য দরকার। দূরে কিংবা কাছের জনের পরামর্শ, খবরদারি, শর্ত মেনে আমাকে চলতে হবে কেন। আমাদের যার যা আছে তা দিয়েই তো আমরা আমাদের উন্নতি, উন্নয়ন করতে পারি। নতুন রাজস্ব ভবন থেকে একটি স্বাবলম্বী, স্বয়ম্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার আহ্বান আমরা জানাতেই পারি। স্বাধীনতার পাঁচ দশক পেরিয়ে বর্তমানে আমরা যে পর্যায়ে পৌঁছেছি, সে সাফল্যের মর্মমূলে, মিডিয়ার সৌজন্যে সাড়া জাগাতে পেরেছি এটা কম কীসে।
এই আমার নিজের আবাসস্থলের কথাই ধরুন। পুরনো প্যাঁচানো সরকারি ভবনে আমার বাল্যকাল, কৈশোরকাল পেরিয়ে সাত দশক পার করেছি। আমার ছানা-পোনারা অমুকের গলি, তমুকের আস্তানায় এখনো ভাড়া থাকে। হায়রে কপাল, ভাড়াটিয়া হয়ে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে মাসোহারা পাই কেমনে? লোকে সেই ভাড়াটিয়া বাড়িতে বছরে একবার-দুবার আসে, গন্ধে মুখ সিটকায়। অন্ধকার ঘরে আগের হিসাব-কিতাবের কাগজ ঠিকমতো রাখার পারি না। ঘনঘন বাসা পাল্টানোয় তারা আমার আস্তানা ঠিক মনে রাখতে পারে না। সবাই কর মেলায় যেতে চায়। কর মেলার পরিবেশ পেতে চায়। এখন অনলাইনে সব সারার জন্য সবাই উন্মুখ। অনলাইন সবাইরে দেওয়ার জন্য, দেখভাল করার জন্য, তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণের জন্য যে যোগ্য মানুষ দরকার, পরিবেশ প্রয়োজন সে জন্য আমি এখনো চেয়েচিন্তে চলেছি। নতুন আবাসে সার্ভার সুস্থ-সক্রিয় ও সুরক্ষা পাবেএ আশায় বুক বেঁধে আছি। আমি ভেবে রেখেছি শুধু ভবন সুন্দর হলে চলবে না, আমার কাজের মান, সবার সঙ্গে আচার-আচরণ, ব্যবহারের মাত্রায়ও যেন পরিবর্তন আসে, আমাকে আরও দায়িত্ব-কর্তব্যসচেতন হতে হবে।
আগামীকাল আমি নতুন গৃহে খাসা একটি বাড়ি জম্পেশ আয়োজনে যেতে যাচ্ছি। রাজধানী শহরে এ রকম একটা বাড়ি পেতে কতটাকাল অপেক্ষা করেছি জানেন? মোটামুটি প্রায় দুই দশক। হায়রে কপাল, আমার আশপাশে, দূরে-অদূরে কত শত সুরম্য ভবন হলো যাদের নির্মাণের নামে আমারই আহরিত টাকা ব্যয়ের খেলা আমি শুধু দেখেই চলেছি, সেসব ভবন বানানেওয়ালারা সুরম্য ভবন নির্মাণের মধ্যে গুড়ের সন্ধান পেয়েছে বলেই সেগুলো সত্বর তৈরি হয়েছে। আমি যে টাকা জোগাড় করি সেই টাকা এদিক-ওদিক করে অনেকের দেশ বিদেশে ঘরবাড়ি বানানো বাড়ছে অথচ আমার ঘর বাঁধার টাকা ও লোক সময়মতো পাওয়া যায় না। আমাকে যারা পছন্দ করে না তারা তুষ্টির ঢেকুর তোলে আমাকে ভাড়াবাড়িতে রেখে। উপজেলাপর্যায়েও অনেকের নিজস্ব বাড়ি আছে। আমার বেলায় ন্যূনতম নতুন জেলা শহরেও নগেনের গলি খগেনের আস্তানায় থাকার ব্যবস্থা চলছে তো চলছেই। গবেষণা, কর্মপরিকল্পনা, সবাইকে এক শামিয়ানায় আনা? উপজেলায় পয়সাওয়ালাদের সংখ্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। আর তাদের দোরগোড়ায় গিয়ে যে খোঁজখবর করব তা আমি পারি না। তাহলে এটা কারণ কি না সবাই হয়তো বুঝবার পারছেন আমার সক্ষমতা বাড়ুক এটা তারাই চান না যাদের কাছ থেকে আমি সবার জন্য রাজস্ব সংগ্রহ করি। হায়রে যাদের সঙ্গে আমার নিত্য-সাক্ষাৎ হওয়ার কথা আলাপ-আলোচনা দরকার তারাই আমার জনপ্রিয়তা বাড়–ক চায় না। স্বাধীনতার পর প্রথম দশক ছিল পুনর্বাসন পুনর্গঠন, সে সময় বিদেশের অনুদানে চলা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না, অর্থনীতির যে অবয়ব, সেখান থেকে রাজস্ব আহরণের অবকাশ তেমন মেলেনি। কিন্তু আশির দশকে? যখন বিদেশি দেনায় একশ ভাগের বেশি উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়িত চলেছে তখনো আমার কথা কেউ ভাবেননি। বিদেশেও মুখাপেক্ষী হতে গিয়ে আমাদের নিজস্ব আয়-উপার্জনে নজর দেওয়া হয়নি। আমার লোকবল ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্প্রসারণের দাবি বরাবরই উপেক্ষিত হয়েছে। নব্বইয়ের দশকে এসে টনক নড়তে শুরু করে, কিন্তু অর্থনীতি যেভাবে হঠাৎ করে বড় হয়েছে, সেই অর্থনীতি থেকে রাজস্ব আয়ে আমার সক্ষমতা বাড়ানো যায়নি, অর্থনীতির অগ্রযাত্রার সঙ্গে আমার পথচলায় সমীকরণ মেলেনি বলেই আমাকে আজ নানান কথা শুনতে হচ্ছে, আইন সংস্কারে বিলম্ব, মেশিন দিতে বিলম্ব, অনলাইনে যেতে বিড়ম্বনাসব এখন আমাকে মাথায় নিতে হচ্ছে। আমাকে এড়িয়ে চলাদের গতি ও শক্তি বাড়ছে জ্যামিতিক হারে আর আমি গাণিতিক হারে সক্ষমতা বাড়াতে গিয়ে হোঁচট খেয়েই চলেছি।
আসলে আমাকে তো আইনকানুন কষে ধরে-বেঁধে রাজস্ব নিতে হয়, এর জন্য যে মেধা, যে প্রজ্ঞা, যে পারদর্শিতা দরকার তা আমার না বাড়ুক এটা তো তারা প্রকারান্তরে চাইবেনই না, ভাবখানা এই যে, আমি যেন তাদের ফাঁকি-যুকির নিয়ন্ত্রণে সবলতায় সফলতায় বড় হই। সেই প্রমাণই পেলাম দুই দশক সময় নিয়ে বানানো আমার নয়া বাড়ি, নিজের বাড়ি ‘রাজস্ব ভবন’-এ গৃহ প্রবেশের সময়। আমার পুরনো বাড়ির কাছে একসময় একটি বড় পুকুর ছিল, হিসাব নিরীক্ষা বিভাগের জুনিয়র অফিসাররা আশির দশকের শুরুতে সেখানে অডিট বিভাগের দপ্তর হবে, নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হতে হতে ওই অফিসাররা রিটায়রমেন্টে চলে গিয়েছেন।
আমাকে লোকবল না দিয়ে, আমার সক্ষমতা না বাড়িয়ে, পারঙ্গম হতে সহায়তা না করে আমাকে খালি খালি রাজস্ব আহরণের মোটা তাজা লক্ষ্যমাত্রা ধরিয়ে দেওয়ায় যাদের আমি চিনি, জানি শুধু তাদের কাছ থেকে বারবার বেশি করে চাইতে থাকি। কীভাবে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে হাঁটতে গিয়ে আমি যা-যা করি তাকে অনেকে অযথা হয়রানি বলে থাকেন। নিজে ফাঁকি দেওয়ার পথ খুঁজবেন, আমাকে পারঙ্গম না করে এড়িয়ে চলার পথ খুঁজবেন, তাদের কাছে ন্যায্য হিসাবমতো রাজস্ব চাইতে গেলে, পাইতে গেলে আমার ভূমিকাকে ভিন্নভাবে দেখানো হয়, যা সংগ্রহ করি তাও আবার খাজাঞ্চিখানায় ঠিকমতো যায় না, সবাই হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবেন, চাই ফাঁকি দিতে, ফন্দি আঁটবেন আর তার সব দোষ-দায়-দায়িত্ব আমার ওপর চাপানো। অস্বীকার করি না, সুশাসন ও জবাবদিহির দুর্বলতায় রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রেও স্বভাবচরিত্রে কিছু বদ-অভ্যাস গেঁড়ে বসেছে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার পথে সহায়ক ভূমিকা পালনে প্রলুব্ধ করতে বা হতে এসব ঘটে। চারদিকে এ ধরনের খেলা যখন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়, তখন তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে, আমাকে খাতায় আনতে গিয়ে, আমাকে জোত-জমিদার, পাইক-বরকন্দাজের মতো হতে হয়। এ বদ-খাসলত সবার মধ্যে এক দিনে গড়ে ওঠেনি। এর জন্য আমরা উভয়ই দায়ী। আর দায়ী আমার আহরিত টাকা নয়-ছয় (দেশের ব্যাংকের বিতর্কিত সুদের হার নয়) করে, নীতি-নৈতিকতার মাথা খেয়ে ‘আরও চাই’-এর স্বভাবের কৌশলের কারণে।
দোষারোপে লাভ নেই, জাতীয় রাজস্ব আয়-উন্নতির পথ পেতে হবে, সঠিক পথে উঠতে হবে। সবাই যেন যার যার দায়িত্ব (আমার বেলায় ন্যায়নীতি নিয়মকানুন, এসআরও অর্থবিধি আইন হার ধারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করে, হিসাব কষে) আর কর্তব্য (রাষ্ট্রের ন্যায্য পাওনা পরিশোধে সবার) পালনে এগিয়ে আসতেই হবে, নইলে আমরা সবাই বড় ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাব। নতুন রাজস্ব ভবন হয়েছে, সুরম্য সুউচ্চ প্রাসাদ হয়েছে কিন্তু সেখানে সবার মধ্যে এই ভবনের নীতি-আদর্শের দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের উপলব্ধি উপলব্ধিতে পরিণত যদি না হয় তাহলে লাখ টাকায় ঝাড়বাতিটা নিশুতি রাতে কেঁদেই মরবে।
আমাকে ঘর দেওয়া হয়েছে ভালো বর চাই। সহজ আলাপে সংসার নির্মাণ চাই, স্বনির্ভর হতে চাই। সামনে দিন খারাপ। ঘরে-বাইরে সমস্যারা পান-তামাক খেয়ে কোমরের বাঁধন কষে এগিয়ে আসছে, ধেয়ে আসছে। সেখানে নিজের সম্পদ আহরণ করে যদি আমরা বলশালী না হয়ে তাদের মোকাবিলায় না নামি তাহলে তাদের সঙ্গে পারব কেমনে। বল ও কর্মক্ষমতা ধার-কর্জ করে বাড়ানো যায় না, লক্ষ্য অর্জন করা যায় না। অন্যের শর্ত-সাবুদ মেনে তাদের বানানো পোশাক পরে তাদের আইনের ভাষায় ও চোখে তাকালে আমার খাবার খাদ্য জোগাড় তো ভেজালমুক্ত হবে না। আমার নতুন বাড়িতে সবাইকে সাদর সম্ভাষণ। আশা করি এখানে সবাই ভালো ব্যবহার পাবেন এবং আপনারা সবাই নিজ গুণে, উপলব্ধিতে নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসবেন। এটা মনে রাখতে হবে, আমরা সবাই এক হাঁড়ির ভাত খাই। আমাদের আয়োজন আমাদেরই করতে হবে।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
একাদশ সংসদে উপনির্বাচনের সুযোগ আবার তৈরি হোক তা চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। উপনির্বাচন নিয়ে একধরনের জটিলতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে বলে মনে করছে টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকা দলটি। উপনির্বাচনের পরে নানা আলোচনা-সমালোচনায় বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখি পড়তে হয় সরকার ও দলকে। বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ৬টি আসনে গত বুধবার অনুষ্ঠিত উপনির্বাচন ঘিরেও নানা বিষয় সামনে আসছে। এর আগে গাইবান্ধা উপনির্বাচন নিয়েও বিতর্কের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ।
তাই নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের অঙ্কে আগের চিত্র পাল্টে ফেলেছে সরকারি দল। যে কারণে একাদশ সংসদের সদস্য থাকা কারও জন্য রাষ্ট্রপতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
গুরুত্বপূর্ণ ওই নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আলোচনায় থাকা স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন না, অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র আরও জানিয়েছে, সব বিবেচনায় রাষ্ট্রপতি আলোচনায় এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার সদস্য স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। টেকনোক্রেট কোটায় টানা তিনবার সরকারের মন্ত্রী তিনি। আস্থা-বিশ্বাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এই মন্ত্রীর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে মনে করেই রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাকে নিয়ে আলোচনা এখন সবচেয়ে বেশি। তবে গণমাধ্যমে আসা অন্য নেতাদের নামও কমবেশি আলোচনায় রয়েছে এখনো। দুই দিন পর আগামী রবিবার সবাই জেনে যাবেন কে হচ্ছেন দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপনির্বাচনে অনীহার কারণে রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নিতে পারেননি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সংসদ নেতা শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে কেন্দ্রীয় ওই নেতারা আরও বলেন, বর্তমান সংসদে থাকা কোনো সদস্যকে রাষ্ট্রপতি বানানোর ব্যাপারে এই মুহূর্তে নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগপ্রধান। এর অন্যতম কারণ উপনির্বাচনে অনীহা দেখা দেওয়া।
সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের জন্য উপনির্বাচনের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। গাইবান্ধার উপনির্বাচন তাদের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করেছে। দেশের ইতিহাসে ভোট বাতিল করার নজির সৃষ্টি করেছে ওই উপনির্বাচন। ফলে আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একধরণের ভুল-বোঝাবুঝি ও দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে নানা মহলে আলোচনা আছে; যা একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত আওয়ামী লীগের জন্য। সর্বশেষ গত বুধবার বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ৬টি আসনের উপনির্বাচনেও সমালোচনামুক্ত থাকেনি।
দলের আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম ও দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রায় চূড়ান্ত জানিয়ে দিলেও তিনি রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন না, তা মোটামুটি নিশ্চিত। তার এ দাবির পেছনে দুটি যুক্তি দাঁড় করান তিনি। আওয়ামী লীগের প্রবীণ এ নেতা বলেন, স্পিকার হিসেবে শিরীন শারমিন বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। টানা স্পিকার হিসেবে অভিজ্ঞতাও হয়ে গেছে। ফলে একাদশ সংসদ পরিচালনায় এমন দক্ষ ও অভিজ্ঞ স্পিকার প্রয়োজন রয়েছে। তাকে রাষ্ট্রপতি বানানো হলে সংসদ সামলে নেওয়া যে কারও জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। সেটা ভেবে তার সম্ভাবনা কম বলে দাবি করছেন ওই নেতা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই একজন নারী নেতাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চেয়েছেন বলেই স্পিকারকে এগিয়ে রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয় কারণ, উপনির্বাচনে অনীহা। স্পিকারকে রাষ্ট্রপতি করা হলে তার ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচন করতে হবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর আরেক সদস্য নাম প্রকাশ না করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হবেন ওই ব্যক্তি, যাকে প্রধানমন্ত্রী ‘আপনি’ সম্বোধন করেন তাকে। মহামান্য পদটি প্রধানমন্ত্রী ‘তুই’ বা ‘তুমি’ সম্বোধন করা কাউকে সেভাবে চাচ্ছেন না। সে ক্ষেত্রে স্পিকারের রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ কমই দেখছেন তিনি।
দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা এবং পরদিন যাচাই-বাছাই। ১৪ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। এরই মধ্যে রাষ্ট্রপতি কে হবেন এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। গণমাধ্যমে যাদের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে স্পিকার ছাড়াও রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এ ছাড়া দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের নামও আলোচনায় এসেছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো নেওয়া হয়নি বলে আমি জানি। সেই জন কে, সংসদ নেতা নিজের ভেতরে রেখেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘একজন নারী রাষ্ট্রপতি দেখতে চান প্রধানমন্ত্রী, এটা তার বহু আগের স্বপ্ন। আবার রাজনীতির বাইরে কাউকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতে চান না আওয়ামী লীগ সভাপতি এমন একটি ব্যাপারও আমার জানা ছিল।’
উপদেষ্টা পরিষদের ওই সদস্য বলেন, ‘এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো চাওয়ার প্রতিফলন না-ও ঘটতে পারে। পরিস্থিতির কারণে রাজনৈতিক নেতার বাইরে রাষ্ট্রপতি হলেও হতে পারে।’ তিনি বলেন, নানা দিক বিবেচনায় রেখে রাজনীতিবিদ না হলেও রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা কোনো সজ্জন ব্যক্তিও এবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে আসতে পারেন। খানিকটা অস্পষ্টতা রেখেই প্রবীণ এ নেতা আরও বলেন, ‘চমকও থাকতে পারে এ ক্ষেত্রে। আমাদের কারোরই আলোচনায় নেই এমন একজন নারীও চলে আসতে পারেন। সে ক্ষেত্রে চমকে দেওয়ার মতো কিছু ঘটারও সুযোগ আছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি নিয়ে এখনো কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা চলছে। তবে যিনি হবেন, নিশ্চয়ই তিনি গ্রহণযোগ্য হবেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনীত ব্যক্তিটির নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের ভেতরেই রেখেছেন।’
আরেক সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। এখতিয়ারবহির্ভূত বিষয়ে জানার আগ্রহও আমার কম।’
খেলা তখন গড়িয়েছিল ৪৩ মিনিটে। বাংলাদেশ এগিয়ে ২-১ গোলে। আর সেই সময়েই মাথায় চোট পান অনূর্ধ্ব–২০ নারী দলের অধিনায়ক শামসুন্নাহার। নেপালের এক ডিফেন্ডার ট্যাকল করলে মাটিতে পড়ে যান তিনি। মাথায় আঘাত পেয়ে প্রায় মিনিট দুয়েক মাটিতে শুয়ে ছিলেন।
ম্যাচের বিরতির সময় শামসুন্নাহার ডাগআউটে শুয়ে ছিলেন বেশ কিছুক্ষণ। এরপর ম্যাচ শেষ হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে দলের ফিজিও গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেন তাকে। কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলেও খেলার মতো ফিট ছিলেন না তিনি। বিরতিতে শামসুন্নাহারকে উঠিয়ে কোচ গোলাম রব্বানী মাঠে নামান আইরিন খাতুনকে।
শামসুন্নাহারের চোট যদিও তত গুরুতর নয় বলেই জানিয়েছেন কোচ গোলাম রব্বানী। তারপরও তাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চান না তিনি। যে কারণে শামসুন্নাহারকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে কোচ বলেন, ‘শামসুন্নাহার ব্যথা পাওয়ার পর কিছু সময় স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য সে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। তারপরও কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য দলের সঙ্গে থাকা চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। তবে আমি আশা করি, পরশু দিন সে ঠিক হয়ে যাবে।’
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে রুদ্ধশ্বাস এক খেলায় টাইব্রেকারে হারিয়ে আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতেছে। কিলিয়ান এমবাপ্পে হ্যাটট্রিক করলেও শেষ বিশ্বকাপের শিরোপা উঠেছে লিওনেল মেসির হাতে। এ দুই ফাইনালিস্টের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে অনেকের কৌতূহল।
পিএসজিতে মেসির সতীর্থ এমবাপ্পে। দুজনের সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষার শুরু বিশ্বকাপ জেতার পর আর্জেন্টাইন দলের উৎসবকে কেন্দ্র করে। কাতার থেকে দেশে ফেরার পর আর্জেন্টিনা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ এমবাপ্পের পুতুল হাতে নিয়ে তাকে কটাক্ষ করে বিতর্কের জন্ম দেন। পাশে থাকলেও মেসি কেন বাধা দেননি, এমন কথাও বলেন কেউ কেউ।
বিশ্বকাপের পর মেসি-এমবাপ্পের ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেমন! আর্জেন্টিনার ‘ওলে’ পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আর্জেন্টিনা অধিনায়ক সেই কৌতূহল মিটিয়েছেন।
বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে দুজনের মধ্যে প্যারিসে আড্ডাও হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেসি, ‘বিশ্বকাপ ফাইনাল নিয়ে আমরা দুজন কথা বলেছি। আর্জেন্টিনায় বিশ্বকাপ জেতার পর যে উৎসব হয়েছে, এমবাপ্পে সেটি নিয়ে আমার কাছে জানতে চেয়েছে। এর বাইরে আর কিছু হয়নি। ভালো, খুবই ভালো আমাদের দুজনের সম্পর্ক।’
বিশ্বকাপ ফাইনাল হারার অনুভূতিটা এমবাপ্পের কেমন ছিল, তা নিয়ে মেসি সতীর্থের সঙ্গে কোনো কথাই বলেননি বলে জানিয়েছেন, ‘দেখুন, আমিও ফাইনালে খেলেছি। আমিও হেরে যেতে পারতাম। আমি তাঁর কাছে এ নিয়ে কিছু জানতে চাইনি। আসল কথা হচ্ছে, এমবাপ্পের সঙ্গে আমার কোনো সমস্যা নেই। বরং মানুষ যেটা ভাবে আমাদের সম্পর্ক তার ঠিক উল্টো।’
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
তার কলাম মানেই সেদিন বাংলার বাণী অফিস সরগরম। সকাল থেকেই ফোন আসত। বিভিন্ন আড্ডায়ও আলোচনা হতো সেই কলাম নিয়ে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়-আশয় এবং দেশের সমসাময়িক বিষয়গুলো আকর্ষণীয় এবং সহজ করে পাঠকের কাছে তুলে ধরতেন এই সাংবাদিক। এর বাইরে প্রকৃতি, পাহাড়, নদী ও দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে লিখতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের লাল পাহাড়ের মানুষের জীবনের গল্পও তুলে আনতেন। প্রায় দেড় দশক নিরবচ্ছিন্নভাবে তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। লিখেছেন অসংখ্য কলাম।
যখন সাংবাদিকতা করতেন তখন তার কাজের জায়গাটিতে তিনি ছিলেন সেরা। ছাত্ররাজনীতির জন্য যেমন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন, ছাত্রনেতা হিসেবেও পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়। সফল হয়েছেন প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রী হিসেবে। দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং ইতিহাসসমৃদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি সফল। তৃতীয়বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বাইরে তার আরও অনেক পরিচয়ের মধ্যে সাংবাদিক পরিচয়টাও অনেক বেশি উজ্জ্বল।
ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন স্পষ্টবাদী, সাহসী ও দেশপ্রেমিক। পাকিস্তান আমলে ছাত্র ও গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা এ নেতা ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এবং কোম্পানীগঞ্জ থানা মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। ওই ভয়াল রাতে নিহত হন তার ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি তখন দৈনিক বাংলার বাণীর সম্পাদক। ফলে পত্রিকাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৮১ সালে পত্রিকাটি আবার ছাপার অনুমতি পায়। ওই সময় ওবায়দুল কাদের জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেন। সেই সঙ্গে লেখালেখি। দ্বিতীয়বার শেখ ফজলুল করিম সেলিমের (বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য) সম্পাদনায় বাংলার বাণী পত্রিকার ছাপা শুরু হওয়ার পর যুক্ত হন ওবায়দুল কাদের। তিনি পত্রিকাটির সহকারী সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য ও পরে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের আগপর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
টানা ১৫ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে ওবায়দুল কাদের অসংখ্য কলাম লিখেছেন বাংলার বাণীতে। ‘ও কাদের’ নামে তিনি কলাম লিখতেন। প্রতিদিন সকালে অফিসে আসতেন। সম্পাদকীয় বিভাগ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে মিটিং করতেন। সম্পাদকীয় বিভাগের বাইরে সেই সময় তিনি বাংলার বাণীর আন্তর্জাতিক পাতাটি নিজের দায়িত্বে বের করতেন। আন্তর্জাতিক বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি খুব বেশি সচেতন ও আগ্রহী ছিলেন।
ওবায়দুল কাদেরের সেই সময়কার সহকর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সহকর্মী হিসেবে তিনি চমৎকার ছিলেন। তাছাড়া সাংবাদিক হিসেবেও খুব পেশাদার ছিলেন। তিনি যদি রাজনীতি না করে সাংবাদিক থাকতেন, তার অনেক লেখা এবং অসংখ্য বই আমরা পেতাম। যদিও তিনি এখন রাজনীতিতে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কিন্তু আমরা যারা তাকে পেয়েছি, তারা তার লেখা মিস করছি। তার লেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। যেহেতু বাংলার বাণী ছিল বিরোধী ঘরানার পত্রিকা, তাই সাধারণ মানুষেরও আগ্রহ থাকত।
ওবায়দুল কাদেরের লেখালেখি ও তার কলাম সম্পর্কে জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত কবীর চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘যখনি সংকট, যখনই এক অপয়া অন্ধকার ওঁৎ পেতে আসে, যখনই সমাজ ধূসরতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, যখনই মিথ্যা ও ইতিহাস বিকৃতির গোলকধাঁধায় নয়া প্রজন্মকে দিগভ্রান্ত করার অপচেষ্টা, যখনই রাজনীতির গৌরব কলুষতায় ঢেকে দেওয়ার অপপ্রয়াস তখনই ওবায়দুল কাদেরের এই জীবন ঘনিষ্ঠ, সত্য ও সুন্দরের আরাধনাময় সাহসী রচনা সমাজকে আলোর ইতিহাস শোনাতে পারে।’
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকতা জীবনে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়, রাজনৈতিক কলাম লিখেছেন অসংখ্য। কবি নির্মলেন্দু গুণ তার সম্পর্কে বলেছেন, ‘বাংলার বাণী পত্রিকায় সম্পাদকীয় বিভাগে আমার সহকর্মী ছিলেন, কলাম লেখক হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছিলেন।... আমি তার অলংকৃত কাব্যিক ভাষায় বক্তৃতার একজন ভক্তশ্রোতা।’
প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের মূল্যায়ন ছিল, ‘ওবায়দুল কাদের শুধু রাজনীতিক নন, তিনি সাংবাদিক, তিনি বাগ্মী, তিনি লেখক। বক্তৃতায় বাংলা শব্দ উচ্চারণ, ছন্দের ব্যবহারে চারণকবি তিনি। নিবন্ধ লেখক হিসেবে যুক্তি ও বিশ্লেষণে তীব্র লক্ষ্যভেদী তিনি।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন বাংলার বাণীতে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৮৯ সালে বাংলার বাণীতে যখন জয়েন করি তখন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাদের ভাইকে পাই। আমরা বার্তাকক্ষে বসতাম আর তিনি তখন অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটরদের রুমে বসতেন। ওনাদের আলাদা রুম ছিল। তিনি রুম থেকে বের হয়ে সবসময় আমাদের খোঁজখবর নিতেন। মাঝেমধ্যে আমাদের এখানে এসে গল্প করতেন। তিনি সহকর্মী হিসেবে খুবই আন্তরিক ও সহকর্মীবান্ধব ছিলেন।’
সেই সময়ে বাংলার বাণীতে ওবায়দুল কাদেরের আরেক সহকর্মী ও পাক্ষিক ক্রীড়াজগৎ পত্রিকার সম্পাদক দুলাল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি তাকে ১৯৮৫ সালে পেয়েছি। আমি তখন সহ-সম্পাদক হিসেবে জয়েন করেছি বাংলার বাণীতে। ওবায়দুল কাদের তখন সহকারী সম্পাদক ছিলেন। তিনি কলাম লিখতেন। তার কলাম পাঠকের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তার লেখার মধ্যে সাহিত্য ছিল। লেখা খুব আকর্ষণীয় ছিল। পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জায়গায় যেতেন, সেসব বিষয় নিয়েও লিখতেন। তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা ছিল চট্টগ্রাম, পাহাড়-সমুদ্র খুব পছন্দ করতেন এবং এসব নিয়েও তিনি লেখালেখি করতেন। তিনি খুব আবেগী লোক ছিলেন এবং লেখার মধ্যে সেটা ফুটে উঠত। তার লেখা পাঠক পড়তে বাধ্য হতেন।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতির মানুষ হলেও অফিসে ঢুকলে একজন সংবাদকর্মী হিসেবেই থাকতেন ওবায়দুল কাদের। রাজনীতির বিষয়টা বাইরে রাখতেন। বরাবরই তিনি শৌখিন টাইপের লোক ছিলেন। ভালো কাগজ-কলম ব্যবহার করতেন লেখার সময়। লেখার সময় আলাদা একটা মেজাজে থাকতেন। তখন খুব জরুরি না হলে কোনো বিষয় অ্যালাউ করতেন না। লেখা শেষ করলে বেশ ফুরফুরে থাকতেন। তখন আমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, গল্প করতেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে তার মনোভাব আমরা দেখতে পেয়েছি।’
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাংবাদিক সুভাষ চন্দ বাদল বাংলার বাণী পত্রিকায় ওবায়দুল কাদেরের সহকর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কাদের ভাইকে ছাত্ররাজনীতি থেকেই চিনতাম। ১৯৭৫ সালের পর যখন তিনি কারাগারে যান তখন আমিও কারাগারে। তাকে কারাগারে দেখেছি বই নিয়ে ডুবে থাকতে। বাংলার বাণীতে এসে তাকে নতুন করে পেয়েছি। সেই সময় আজিজ মিসির ও তার কলাম ছিল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। তিনি সাংবাদিকবান্ধব। বাংলার বাণী অফিসেও সহকর্মীদের সবসময় সহযোগিতা করতেন। আমি রিপোর্টার হিসেবে যদি কখনো কোথাও আটকে যেতাম তিনি সহযোগিতা করতেন। কাদের ভাই সাংবাদিক হিসেবে ছিলেন মেধাবী ও জ্ঞানী। তার সাহসের ঘাটতি ছিল না। তার কলামেও এর প্রভাব দেখেছি।’
ওবায়দুল কাদের ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নেন। বাবা মোশারফ হোসেন সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন। মা ফজিলাতুন্নেছা। ওবায়দুল কাদের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কলেজজীবন থেকে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন।
১৯৭৫-এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুবার সভাপতি ছিলেন।
তার সেই সময়ের সহকর্মীরা বলেন, সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের তথা কাদের ভাই মানেই অন্যরকম। তিনি ছিলেন খুব সংবেদনশীল। সবাইকে মেনে নেওয়ার একটা ক্ষমতা ছিল। তিনি যে এত বড় একজন রাজনীতিক ও মুক্তিযোদ্ধা, এত বড় ছাত্রনেতা, তা কখনই সাংবাদিকদের কাছে মনে হতো না। মনে হতো, কাদের ভাই যেন সাংবাদিকতার মধ্যেই ডুবে আছেন। কোনো রিপোর্টার বা সাব-এডিটর অনুবাদ করতে সমস্যায় পড়েছেÑ কাদের ভাইয়ের কাছে গেলেই সমাধান। নিজের রুমে, ডেস্কে বসিয়ে বুঝিয়ে দিতেন। আর তার টেবিলে ছিল সবসময়ই গাদা গাদা বই।
বাংলার বাণীর সেই সময়ের একাধিক সাংবাদিক ওবায়দুল কাদের সম্পর্কে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কাদের ভাই ছিলেন সাংবাদিকতার প্রতি পুরো নিষ্ঠাবান। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দীর্ঘক্ষণ কোথাও বসে থাকতেন না। কাজের ফাঁকে ফাঁকেই তিনি রুম থেকে বেরিয়ে অন্য সহকর্মীদের টেবিলে টেবিলে আড্ডা দিতেন। সেখানে হয়তো আমরা চায়ের অর্ডার দিয়েছি। চা আসতে না আসতেই তিনি উঠে যেতেন। তারপর আবার তাকে চায়ের কাপ নিয়ে খুঁজতে হতো কাদের ভাই কই...।