
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০১৬-১৭ সেশনের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রাব্বি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করেছেন। রাব্বির গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার উলচাপাড়া গ্রামে৷
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্রামের বাড়িতে তার রুমের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করেন পরিবারের লোকজন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাব্বির পরিবার থেকে জানা যায়, অন্যান্য দিনের মতই গতকাল রবিবার রাতে নিজ রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমাতে যান রাব্বি। তবে সোমবার দুপুর পর্যন্তও রাব্বি ঘুম থেকে না উঠায় সন্দেহ জাগে পরিবারের লোকজনের মনে। তখন অনেক চেষ্টা করেও কোন সাড়া না পেয়ে রাব্বির রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পান স্বজনরা।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ছেলেটি আমার নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হওয়ার কারণে খুব কাছ থেকে চিনতাম। সে খুব অমায়িক ছেলে ছিল। আমি যতটুকু জানি তার প্রেমঘটিত বা অর্থনৈতিক কোনো সমস্যা ছিল না। এক বছর আগে তার বাবা মারা যান। এজন্য তার মন খারাপ ছিল। আমি সবসময় চেষ্টা করেছি রাব্বির খোঁজ খবর রাখতে। কিন্তু মাঝে সে আর যোগাযোগ করেনি৷ রাব্বির মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্রই আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি।
এদিকে রাব্বির এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার নিজ বিভাগ ও জেলার শিক্ষার্থীদের মাঝে। সোমবার রাত ১০টায় সদর উপজেলার উলচাপাড়া মসজিদে রাব্বির জানাযা অনুষ্ঠিত হবে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ‘বিয়ে’র পর চারমাস সংসার করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী মেয়ে।
তার অভিযোগ, ‘হুজুর ডেকে বিয়ে করে চারমাস সংসার করার পরে তাকে স্ত্রী বলে অস্বীকার করছেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।’ তবে ছাত্রলীগ নেতার দাবি সে তার ‘ছোট বোন’।
কিন্তু বিয়ের কোনো তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেননি ওই ছাত্রী। তিনি বলেছেন, ‘ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে আমি তখন বিয়েটা করেছি।’
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার নাম মমিনুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি। তার বাড়ি নড়াইল জেলায়। অভিযোগকারী ছাত্রী রাজশাহীর একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।
লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্র মমিনুল ইসলাম একজন হুজুরকে ডেকে এনে মিথ্যা বিয়ের নাটক করে এবং স্বামী—স্ত্রীর পরিচয়ে আমার একসঙ্গে বসবাস করি। বিগত চারমাস আমি তার সঙ্গে সংসার করেছি। কিন্তু কিছুদিন ধরে তার আচার-ব্যবহার খুবই খারাপ দেখি এবং আমার সাথে সে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এই সময় আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নাই। আমার বাবা পঙ্গু, তার সাথে আমার যোগাযোগ নাই। আমার মা হার্টে রোগী। আমার কোনো অভিভাবক নাই। সেই সুযোগে সে আমাকে রাজনৈতিক ভয় দেখাচ্ছে।’
অভিযোগের বিষয়ে ওই ছাত্রী বলেন, ‘মমিনের সঙ্গে আমার ছয় মাসের সম্পর্ক। বিগত চার মাস ধরে মমিন আমার সঙ্গে থাকছে। আমরা কাজলায় একটা ভাড়া বাসায় থাকতাম। বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে আমরা ঘুরতেও গিয়েছি। কিন্তু এখন সে আমাকে অস্বীকার করছে। বিষয়টি নিয়ে আমি মতিহার থানায় গিয়েও কথা বলেছি। থানা থেকে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দিতে বলেছে।’
বিয়ের প্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে বিয়ের কোনো প্রমাণ নেই। ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে আমি তখন বিয়েটা করেছি। এখন সে অস্বীকার করায় আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আজকে আত্মহত্যাও করতে গিয়েছিলাম। পরে চেয়ার পড়ার শব্দ শুনে বাসার লোকজন আমাকে উদ্ধার করে ৯৯৯ ফোন করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা মমিনুল ইসলাম বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে ‘ছোট বোন’ বলে দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ‘একটা অভিযোগপত্র পেয়েছি। এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর সাইকা কবির নিতুকে আহ্বায়ক করে জহুরুল আনিস এবং মাহফুজুর রহমানসহ তিন সদস্যের একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলবে। এটি যেহেতু বাইরের কেস তাই অভিযোগের সত্যতা মিললে সমাধানের জন্য থানায় পাঠানো হবে।’
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সহকারী প্রক্টর সাইকা কবির নিতু বলেন, ‘প্রক্টর স্যারের মাধ্যমে অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছি। কালকে কমিটির সদস্যদের নিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করব।’
জানতে চাইলে মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন বলেন, ‘মৌখিকভাবে ওই শিক্ষার্থী আমাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পিতৃত্বকালীন ছুটি চালু হয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪তম সিন্ডিকেট সভায় এ ছুটির বিধান প্রণয়ন করা হয়।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পিতৃত্বকালীন ছুটি ১৫ দিন করা হয়েছে।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহ্ আজমের সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ড. ফিরোজ আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব জহুরুল ইসলাম, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সুব্রত ভৌমিক, লেজিসলেটিভ বিভাগের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান শারমিন সুলতানা এবং রেজিস্ট্রার মো. সোহরাব আলী।
এ বিষয়ে উপাচার্য শাহ্ আজম বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটির পাশাপাশি পিতৃত্বকালীন ছুটি চালু করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে দুই শিক্ষার্থীকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় দোষী ছাত্রলীগ নেতাদের বিচারের দাবিতে ক্যাম্পাসে প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের ছাত্রত্ব বাতিলসহ ৬ দফা দাবি আদায়ে ক্যাম্পাস প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২ অক্টোবর) সকালে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে এই কর্মসূচি পালন করে তারা।
প্রতিবাদী এই অবস্থান কর্মসূচিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আবু নাঈম নোমান নামের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের একজন শিক্ষার্থী। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, দুই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিলেও গত ৬ দিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ক্যাম্পাস প্রশাসন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঢাকা কলেজে সাংবাদিক শিক্ষার্থীকে গেস্টরুমে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়মিত র্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছে সাধারণ ছাত্ররা। বিশেষ করে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। এই ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে ওঠার সাহস করে না। যারা ওঠে তারাও নেতা নামীয় কিছু বড় ভাইয়ের দ্বারা দিনের পর দিন নির্যাতিত হয়ে আসছে। কিন্তু ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। আজ ৬দিন পার হতে চলছে। কিন্তু এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ক্যাম্পাস প্রশাসন। আমাদের প্রশ্ন তাদের হাত পা কোথায় বাঁধা, তারা এখন পর্যন্ত কেন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি? ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আন্দোলনকারীরা বলেন, যাদের দুজনকে নির্যাতন করা হয়েছে তারা দুজনই সাংবাদিক এবং ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য। স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায় যেই ক্যাম্পাসে সাংবাদিকরাই নিরাপদ নয়, যেখানে রাতভর একজন মানুষকে রুমে আটকে নির্যাতন করার পরও প্রশাসন জানে না, কোনো ব্যবস্থা নেয় না। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কতটুকু নিরাপদে পড়ালেখা করতে পারে এবং কতটুকু নিরাপদে থাকে?
আন্দোলনকারীরা আরও বলেন, এই প্রতিবাদী কর্মসূচিতে অংশ নিতে বন্ধের দিনেও বহু শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে এসেছে। কিন্তু সিনিয়র নেতারা শো-ডাউন করে হুমকি দিচ্ছে, তাই সবাই দাঁড়ানোর সাহস করেনি। তবে একজন হলেও আমি প্রতিবাদ চালিয়ে যাব। আমাদের এই প্রতিবাদ কোনো দল বা নেতারা বিরুদ্ধে নয়। আমরা প্রতিবাদ করছি গুটি কয়েক সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে।
লিখিত বক্তব্যে ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করতে ৬ দফা দাবি তুলে ধরে তারা বলেন, দাবি আদায় না হলে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে কলেজের শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। তাদের দাবিগুলো হলো- ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফরহাদ ছাত্রাবাসে ২ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে; ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ শহীদ ফরহাদ হলের হল সুপারকে প্রত্যাহার করতে হবে; মেধা ও প্রয়োজনীয়তার বিবেচনায় প্রথম বর্ষ থেকে ছাত্রাবাসে বৈধ সিট নিশ্চিত করা; গেস্টরুম বা গণরুম কালচার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং অছাত্রদের হল থেকে বের করে ছাত্রদের সুযোগ দিতে হবে।
উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের কর্মী সমাবেশের প্রস্তুতি নিতে গত বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা কলেজের শহিদ মো. ফরহাদ ছাত্রাবাসের গেস্টরুমে সবাইকে আহ্বান করে সেই হলের ছাত্রলীগ নেতারা। এ সময় সেখানে আসতে দেরি করায় ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফয়সাল আহমেদকে মারধর করে ছাত্রলীগ নেতারা। নির্যাতনের শিকার ফয়সাল আহমেদ ডেইলি বাংলাদেশ পত্রিকার ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি ও ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির সদস্য।
ফয়সালকে মারধরের ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে সংবাদ প্রচার করায় একই ছাত্রবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ও বাংলা ট্রিবিউনের কলেজ প্রতিনিধি ওবায়দুর সাঈদকে আটক করে বৃহস্পতিবার রাতভর নির্যাতন করা হয়। দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টা আটকে রাখার পর শুক্রবার দুপুরে ওবায়দুরকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে হস্তান্তর করে ছাত্রলীগ নেতারা। পরে অধ্যক্ষ তার ভাইকে ডেকে ওবায়দুরকে নিয়ে যেতে বলেন। এ ঘটনায় গণমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার মুখে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কর্মী রাউফুর রহমান ওরফে সোহেল, এ বি এম আলামিন, সজিব আহসান, আবরার হোসাইন ওরফে সাগর, সৈয়দ আব্দুল্লাহ শুভ ও ফাহমিদ হাসান ওরফে পলাশকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।
ক্যাডার বৈষম্যের নিরসন চেয়ে ৭ দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ইডেন কলেজের শিক্ষকরা। এ সময় শিক্ষকগণ কলেজের সকল ক্লাস বা পরীক্ষা বর্জন করেন।
আজ সোমবার (০২ অক্টোবর) দুপুরে ইডেন মহিলা কলেজ গেটে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি, ইডেন মহিলা কলেজ ইউনিটের আয়োজনে এই কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। কর্মবিরতির এই অবস্থান কর্মসূচি বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে বলে জানান শিক্ষকরা। এ সময় ইডেন কলেজের প্রায় ২৬০ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় শিক্ষকগণ ক্যাডার বৈষম্যের নিরসন চেয়ে ৭টি দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো আন্তক্যাডার বৈষম্য নিরসন; সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি; অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীতকরণ; অর্জিত ছুটি প্রদান এবং ক্যাডার কম্পোজিশনের সুরক্ষা; প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি বাতিল; শিক্ষা ক্যাডার তফসিলভুক্তপদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভুতদের প্রত্যাহার এবং প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি।
বক্তারা বলেন, আমরা সকাল থেকেই ক্যাডার বৈষম্যের নিরসনে আন্দোলনে নেমেছি। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করলেও সেটাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। আমরা যোগ্য হয়েও আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। আমাদের নিজস্ব মন্ত্রণালয়ে আমাদের শিক্ষা ক্যাডারের লোকবল রেখে অন্য ক্যাডার থেকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে যা একটা বৈষম্য। আমাদের বাৎসরিক ছুটি থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আমরা চাই আমাদের শিক্ষা ক্যাডারে নতুন পদ সৃষ্টি করা হোক এবং আমাদের পদোন্নতিসহ সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
ঢাকা কলেজে রাতভর সাংবাদিক নির্যাতনের প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার (২ অক্টোবর) কলেজের মূল ফটকের সামনে এই প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে তারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়মিত র্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছে সাধারণ ছাত্ররা। বিশেষ করে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। এই ভয়ে অনেক শিক্ষার্থী ছাত্রাবাসে ওঠার সাহস করে না। যারা ওঠে তারাও নেতা নামীয় কিছু বড় ভাইয়ের দ্বারা দিনের পর দিন নির্যাতিত হয়ে আসছে। কিন্তু ভয়ে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। গত বুধবার রাতে একাডেমিক অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কর্মসূচিতে না যাওয়ায় ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এবং শহীদ ফরহাদ ছাত্রাবাসের আবাসিক শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদকে রুমে এনে চড়-থাপ্পড় ও লাঠি দিয়ে ঘণ্টাব্যাপী নির্যাতন করে ছাত্রলীগকর্মী আল আমিন, সজিব আহমেদ, সাগর ও ইকরাম।
তারা বলেন, এ ঘটনার সংবাদ প্রচারের জেরে বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে ১৮ ঘণ্টা আটকে রেখে বাংলা ট্রিবিউনের ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি ও ঢাকা কলেজ সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক ওবায়দুর সাঈদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে রউফুর রহমান সোহেলসহ কয়েকজন ছাত্রলীগকর্মী। ঘটনা গত বুধবারের, আজ ছয় দিন পার হতে চলছে। কিন্তু এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ক্যাম্পাস প্রশাসন। আমাদের প্রশ্ন তাদের হাত পা কোথায় বাঁধা, তারা এখন পর্যন্ত কেন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি?
বক্তারা আরও বলেন, স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায় যেই ক্যাম্পাসে সাংবাদিকরাই নিরাপদ নয়, যেখানে রাতভর একজন মানুষকে রুমে আটকে নির্যাতন করার পরও প্রশাসন জানে না, কোনো ব্যবস্থা নেয় না। সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কতটুকু নিরাপদে পড়ালেখা করতে পারে এবং কতটুকু নিরাপদে থাকে। তাই ঢাকা কলেজের ছাত্রাবাসে দুই শিক্ষার্থীকে অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতের দাবিতে আমাদের এই অবস্থান।
অবস্থান কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা ৬টি দাবি জানান কলেজ প্রশাসনের কাছে। দাবিগুলো হলো ক্যাম্পাসে সকল শিক্ষার্থীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে; আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ফরহাদ ছাত্রাবাসে দুই শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় দোষীদের সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে; ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ শহীদ ফরহাদ হলের হল সুপারকে প্রত্যাহার করতে হবে; মেধা ও প্রয়োজনীয়তার বিবেচনায় প্রথম বর্ষ থেকে ছাত্রাবাসে বৈধ সিট নিশ্চিত করা; গেস্টরুম বা গণরুম কালচার নিষিদ্ধ করা এবং অছাত্রদের হল থেকে বের করে ছাত্রদের সুযোগ দিতে হবে।
এ সময় তারা প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। এই সময়ের মধ্যে কলেজ প্রশাসন তাদের দাবিসমূহ মেনে না নিলে এবং সন্তোষজনক ব্যবস্থা গ্রহন না করলে তারা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক বিস্ময় হাওরের ওপর অত্যাচারের যেন শেষ নেই। ধান-মাছের এই বিপুল ভান্ডার রক্ষার নামে একদিকে চলে স্থায়ী-অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণে সীমাহীন দুর্নীতি; যার কারণে যখন-তখন হাওরডুবিতে ঘটে ফসলহানি। পাশাপাশি আরেক দিকে চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের নামে অবৈজ্ঞানিকভাবে যত্রতত্র বাঁধ-রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ধুম; ফলে পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মরতে বসেছে হাওর। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে শেষমেশ সরকারপ্রধান হুকুম দিয়েছেনে ‘হাওরে আর কোনো সড়ক নয়।’
এই পরিস্থিতিতে দেশ রূপান্তরের চোখে ধরা পড়েছে আরেক অশনিসংকেত। এবার শিল্পপতিদের চোখ পড়েছে হাওরে। কোথাও কোথাও থাবাও পড়তে শুরু করেছে। তেমনি সব ক্ষতচিহ্ন দেখা গেছে ভাটি অঞ্চলের প্রবেশদ্বার হবিগঞ্জ জেলার সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে। এখানে গড়ে উঠেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদনের কারখানা। তৈরি হচ্ছে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প। হাওরের ‘লিলুয়া’ বাতাসে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে কারখানার দুর্গন্ধ। ‘চান্নি পসর রাইতে’ এখন আর শোনা যায় না বাউলকণ্ঠের দরদি সুর। প্রায় দিনই শিল্পপতিদের আনাগোনার অশুভ পদধ্বনি শুনতে পান হাওরবাসী।
অথচ যেকোনো ধরনের স্থাপনা তৈরি বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য হওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ও জীবনাচরণ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনা আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গত ১৮ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে হাওর অঞ্চলের সড়কগুলো এলিভেটেড করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর থেকে হাওরাঞ্চলে কোনো সড়ক করতে হলে এলিভেটেড পদ্ধতিতে করতে হবে, যাতে সেখানকার জীববৈচিত্র্য রক্ষা পায়। সরকারপ্রধানের এমন নির্দেশের পরও থামেনি হাওর ধ্বংসের তৎপরতা।
হাওরে জমি কেনাবেচার হিড়িক
বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট বাজারের অদূরে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের নিচু জমি ভরাট করে বিশাল আকৃতির ছয়টি শেডসহ অনেক স্থাপনা নিয়ে ‘কাজী ফার্ম’ গড়ে তুলেছে মুরগির ডিম ও কম্পোস্ট সার উৎপাদন কেন্দ্র। উপজেলার বাগদাইরসহ আরও কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের একমাত্র পথের ধারেই কাজী ফার্মের এই প্রতিষ্ঠান। এখনই নাকে কাপড় দিয়ে দ্রুত পার হতে হয় রাস্তা; আর প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ ডিম উৎপাদনের এই বিশাল কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে দুর্গন্ধে বসবাস করা যাবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন এলাকাবাসী। স্নানঘাট ভূমি কার্যালয় থেকে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯ একর ৮০ শতক জমি নামজারি হয়েছে। আরও কয়েক একর জমি কিনেছে তারা, যা নামজারির অপেক্ষায়।
গত ১৮ জুন হাওর লাগোয়া বাগদাইর গ্রামের রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয় স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের সদস্য আলেকজান বিবির সঙ্গে। তিনিসহ আরও কয়েকজন নারী-পুরুষ দেশ রূপান্তরকে বললেন, হাওরের ফসলি জমি ভরাট করে এ ফার্মটি গড়া হয়েছে। এভাবে শিল্প গড়ে উঠলে হাওরের অস্তিত্ব বিলীন হতে আর সময় লাগবে না।
স্থানীয় লিটন মিয়া বললেন, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের ইলাম এলাকায় আকিজ গ্রুপেরও ১৮ বিঘা জমি রয়েছে। উঁচু পাড় বেঁধে আপাতত মাছ চাষ করছে তারা। আগে জমিটির মালিক ছিলেন সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী। আব্দুল কাদির চৌধুরী জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার নিজের জমি ছাড়াও আশপাশের আরও ৫০ বিঘা জমি কিনেছে আকিজ গ্রুপ। আপাতত পুকুর করেছে। ভবিষ্যতে কী করবে, কোম্পানিই জানে।
দীর্ঘদিন ধরে জমি কেনাবেচায় মধ্যস্থতা (দালালি) করেন হারুন মিয়া। তিনি জানান, শুকনো মৌসুমে মাসের ১০ দিনই তাকে হাওরে জমি দেখাতে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে যেতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তার মাধ্যমে জমির মালিকদের কথাবার্তা চলছে।
একই পেশার আলী আমজদ বলেন, ইদানীং গুঙ্গিয়াজুরী হাওর এলাকায় ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার লোকজনের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। সালাউদ্দিন নামে ঢাকার এক বাসিন্দা গত মার্চে বন্ধুদের নিয়ে হাওর ঘুরে গেছেন। রাস্তার পাশে তিনি কমপক্ষে ১৫-২০ একর জমি কিনতে চান। তার সঙ্গে আলাপ করে আমজাদ যা বুঝতে পেরেছেন, জমিতে তারা সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে আগ্রহী।
লন্ডনপ্রবাসী নাঈম চৌধুরী জানান, তার ১২ বিঘা জমি কেনার জন্য দামদর ঠিক করেন ঢাকার ব্যবসায়ী জুয়েল খান। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর অজ্ঞাত কারণে তিনি সরে যান। নাঈম চৌধুরী পরে জানতে পারেন, কমিশন নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আইনি পরামর্শক জুয়েল খানকে নিরুৎসাহিত করেন।
হাওর গ্রাসের যত কৌশল
নিচু এলাকা হওয়ায় হাওরে জমির দাম তুলনামূলক কম। এখনো এক বিঘা (৩৩ শতক) জমি ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে বেচাকেনা হয়। পুটিজুরী গ্রামের বাসিন্দা টেনু মিয়া বলেন, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলা অংশে গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই-চার কিলোমিটার দূরেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, বিবিয়ানা গ্যাস কূপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আবার হাওর এলাকা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিও তেমন থাকে না। ফলে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে জমি থেকে বালু তুলে অন্য অংশ ভরাট করে ফেলা সহজ হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ভরাট করা হয়। এভাবে সহজেই হাওরের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা হয়।
স্থানীয় নবীর হোসেন বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমোদন নেওয়া সময়সাপেক্ষ ও বেশ ঝামেলার কাজ। নবীগঞ্জ ও বাহুবল ভূমি অফিসের কয়েকজন তহশিলদারের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ ক্ষেত্রে তাদের না জানিয়েই শিল্পপতিরা সব কাজ সেরে ফেলেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়ম অনুযায়ী কৃষিজমিতে শিল্প বা আবাসিক এলাকা তৈরির জন্য জমি কেনার আগেই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হয়। আবেদনটি প্রথমে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে পাঠাবেন। ইউএনও তখন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে প্রতিবেদন চাইবেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সরেজমিন পরিদর্শন এবং কৃষি, মৎস্য ও বন বিভাগের মতামত পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবেন। এর পর জেলা প্রশাসক সেই অনুমোদন দিতে পারেন।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, কোনো অনুমোদনেরই তোয়াক্কা করেন না শিল্পপতিরা। আবার কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করলে তখন চাপের মুখে স্থানীয় প্রশাসনকে শিল্পপতিদের পক্ষেই প্রতিবেদন দিতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরেজমিন পরিদর্শনে ভূমির যে শ্রেণি পাওয়া যায়, সেই মোতাবেক ভূমি কর আদায় করে নতুন শ্রেণির বৈধতা দিয়ে দেওয়া হয়।
শিল্পপতিরা রাস্তার পাশে প্রথমে এক-দুই একর জমি একটু বেশি দাম দিয়ে কিনে পরে পেছনের জমি প্রায় পানির দরে কেনেন বলে জানান স্নানঘাট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আবুল কালাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সাধারণত শিল্প মালিকরা দালাল দিয়ে জমি কিনতে চান। কারণ, তারা সরাসরি কিনতে এলে দাম বেশি চাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আরেক মধ্যস্থতাকারী শামসু মিয়া বলেন, ‘বেশি জমি কেনার ইচ্ছা থাকলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। আমরা কম দামে কিনে দিয়ে বেশি কমিশন নেওয়ার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের আয়ের একটা অংশ ভূমি শাখার কর্মকর্তাদেরও দিতে হয়। নইলে জমির কাগজপত্র যত স্বচ্ছই হোক, তারা “ঘিয়ের মধ্যে কাঁটা” বের করার চেষ্টা করেন।’
এ ছাড়া স্থানীয় বা বহিরাগতদের উদ্যোগে পুকুরের নাম করে হাওর এলাকার যেখানে-সেখানে মাটি খনন করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আইন বা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ড্রেজার বসিয়ে কৃষিজমি থেকে দেদার বালু তোলা হচ্ছে।
জমি নিয়ে লুকোচুরি
হবিগঞ্জের ১৩টি হাওরের মোট আয়তন ৭৩ লাখ ৫৭৯ একর। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের অবস্থান জেলার বাহুবল, নবীগঞ্জ, বানিয়াচঙ্গ ও সদর উপজেলা ঘেঁষে। এই হাওরে কী পরিমাণ জমি ছিল বা এখন কতটুকু আছে, তার প্রকৃত হিসাব পাওয়া যায়নি সরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেও।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সর্বশেষ হিসাবে, এই হাওরের জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ৮৩৩ একর। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ৬৪ হাজার ২২০ একর। ৮ বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৭ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত হিসাবে হাওরের আয়তন দেখানো হয়েছে ১৬ হাজার ৪২৯ একর। জেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছে, এই হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৩৯৯ একর ৪ শতক। চারটি অফিসের কর্মকর্তারাই তাদের হিসাব সঠিক বলে দাবি করছেন। আরেকটি রহস্যময় বিষয় হলো, চারটি উপজেলা ঘেঁষে এই হাওরের অবস্থান হলেও ওই চার সরকারি প্রতিষ্ঠানই বানিয়াচঙ্গ ছাড়া বাকি তিন উপজেলার হিসাব দেখাচ্ছে।
১০ বছর আগে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে জমির পরিমাণ কত ছিল জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ এক মাস সময় নিয়েও কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ওদিকে ২০১৬ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন হাওর ও জলাভূমি অধিদপ্তরের প্রকাশিত ‘ক্লাসিফিকেশন অব ওয়েটল্যান্ড অব বাংলাদেশ ভলিউম-৩’-এ দেখা যায়, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের মোট আয়তন ৬৯ হাজার ৮২৯ একর ৩৭ শতক। এর মধ্যে বাহুবল উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫৬ একর ২০ শতক, বানিয়াচঙ্গ উপজেলায় ১৭ একর ২০ শতক, হবিগঞ্জ সদর ১৫ হাজার ৯০১ একর ৮৬ শতক ও নবীগঞ্জে ২৩ হাজার ৭৫৩ একর ৯৯ শতক।
হাওর এলাকায় দিনে দিনে জনবসতি বৃদ্ধি, হাজার হাজার পুকুর তৈরি, জমি ভরাট করে শিল্প-কারখানা স্থাপনের কারণে আগের চেয়ে এখন কৃষিজমির পরিমাণ অনেকটাই কমে আসছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী।
গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের আওতাধীন বাহুবল উপজেলার সাতকাপন ও স্নানঘাট ইউনিয়নের ছয়টি মৌজার নাম উল্লেখ করে গত ১০ বছরে কী পরিমাণ জমি বিক্রি করা হয়েছে, উল্লিখিত সময়ে জমির মূল্য কত ছিল জানতে চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার সুশান্ত ঘোষ এবং জেলা রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মৌজা হিসাব করে জমি কেনাবেচার তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। এসব উত্তর দিতে হলে প্রতিটি দলিল তল্লাশি করে বের করতে হবে, যা ব্যয় ও সময়সাপেক্ষ।’
আবেদন-অনুমোদন খেলা
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, কাজী ফার্মের বিক্রি হওয়া জমির মধ্যে ৭৮ বিঘায় আগে তারা বর্গাচাষ করেছেন দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালের দিকে জমির মালিকরা কাজী ফার্ম লিমিটেডের কাছে বিক্রি করে দেন। পরে কাজী ফার্ম প্রায় দুই বছর ধরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে পুরো জমি উঁচু করে নেয়। তবে নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, এই জমির আগের মালিকের দলিল এবং বর্তমানে কাজী ফার্মের দলিল- দুই জায়গাতেই এটি এখনো ‘কৃষি’ শ্রেণি হিসেবেই আছে।
সরেজমিনে জানা যায়, চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের তলদেশ থেকে বালু তুলে বাহুবলে নির্মাণাধীন কয়েকটি স্থাপনা ও ছয় লেনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করতে স্নানঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। হাওরে থাকা তার জমিতে ‘দেশীয় মাছের অভয়ারণ্য’ বানানোর কথা বলে মাটি কেটে পাড় তৈরির অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন তিনি। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান এ বিষয়ে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রতিবেদন দিতে বলেন। অভিযোগ উঠেছে, ওই সিন্ডিকেট বাহুবল উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন করায়। প্রতিবেদন পেয়ে কয়েকটি শর্ত দিয়ে জেলা প্রশাসক মাটি কাটার অনুমোদন দেন। বাণিজ্যিক কাজে তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের দীর্ঘদিন ধরে বালু তোলার বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানান স্থানীয় কৃষকরা। এ নিয়ে দেশ রূপান্তরসহ স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এর সত্যতা পায় এবং অনুমোদন বাতিল করে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বালু তোলা বন্ধ হলেও এখনো ড্রেজার মেশিন ও পাইপলাইন সরানো হয়নি।
গত ১৪ আগস্ট পরিবেশ অধিদপ্তর, হবিগঞ্জ কার্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, কাজী ফার্ম বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ডিজাইন না দেওয়ায় তাদের পরিবেশ ছাড়পত্রের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। একই দিন জেলা প্রশাসন অফিসের রাজস্ব শাখায় যোগাযোগ করে জানা গেছে, কাজী ফার্ম বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। অফিস সহকারী আব্দুল ওয়াদুদ বিভিন্ন ফাইলপত্র ঘেঁটে ওই কোম্পানির মাধবপুর উপজেলায় কয়েকটি প্রজেক্টের জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন পেয়েছেন।
আব্দুল ওয়াদুদ জানান, গুঙ্গিয়াজুরী হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় ৫ একর ৭৪ শতক জমি শ্রেণি পরিবর্তনের জন্য আকিজ ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে একটি কোম্পানির আবেদন গত ২৩ জানুয়ারি মঞ্জুর হয়েছে। এ ছাড়া ওই কোম্পানি হাওর থেকে দুই-তিন কিলোমিটর দূরে পশ্চিম ম-লকাপন, হায়দরচক মৌজার ৬টি প্রজেক্টের জন্য প্রায় ৬৩ একর জমি কিনেছে। এগুলোর মধ্যে দুই-একটি বাদে বাকিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে গড়া না হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য হাওরের দিকেই ধাবিত হয়ে সর্বনাশ ডেকে আনবে।
শিল্পপতি পক্ষের ভাষ্য
জানতে চাইলে কাজী ফার্মের ম্যানেজার (অ্যাডমিন) জিয়াউল হক দেশ রূপান্তরের কাছে দাবি করেন, তাদের প্রতিষ্ঠানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আছে। গত ৭ আগস্ট মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে জিয়াউল হক জানান, বাহুবল স্নানঘাটে তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিম উৎপাদন পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। এখানে লেয়ার মুরগির ডিম ছাড়াও কম্পোস্ট সার উৎপাদন হবে। এসব মুরগি খুবই স্পর্শকাতর। পরিবেশ একটি বড় বিষয়। যদি এখানকার পরিবেশ অনুকূলে থাকে, তাহলে আরও কী কী উৎপাদন করা যাবে তা পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিশে^র নামকরা প্রতিষ্ঠান জার্মানির ‘বিগ ডাচম্যান’-এর সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। ফলে প্রকট দুর্গন্ধ বেরোনোর শঙ্কা খুবই কম। তবে তিনি এও বলেন, সব প্রাণীর শরীরেই গন্ধ থাকে। লাখ লাখ মুরগি যেখানে থাকবে, সেখানে কিছু গন্ধ তো হবেই।
মুরগির বিষ্ঠা সংরক্ষণের ব্যাপারে জিয়াউল হক বলেন, এর গন্ধ বের হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ রাসায়নিক ব্যবহারের মাধ্যমে গন্ধ দূর করা হয়। হাওরের জমি ভরাট করে শিল্প গড়ার আইনি দিক সম্পর্কে প্রশ্ন তুললে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ছাড়া এ-সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।’
গত ২৪ আগস্ট বাহুবল উপজেলার আব্দাকামাল এলাকায় আকিজ ভেঞ্চার গ্রুপের নির্মাণাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ম্যানেজার (অ্যাডমিন) হাবিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপজেলার পুটিজুরী, সাতকাপন, স্নানঘাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মৌজায় আকিজ গ্রুপের জমি রয়েছে। বর্তমানে আব্দাকামাল এলাকায় প্রায় ৬৫ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প স্থাপনের কাজ চলছে। গুঙ্গিয়াজুরী হাওর থেকে দুই কিলোমিটারের মতো দূরে এই ‘শিল্পপার্ক’ নির্মাণের পর হাওরের সমুদ্রফেনা মৌজায় তাদের আরও যে ৫৭৪ শতক জমি রয়েছে, তাতে ফ্লাওয়ার মিল, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ শিল্প গড়ে তোলা হবে। তিনি দাবি করেন, ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছ থেকে তারা জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেছেন।
‘খুবই অন্যায় হবে’
পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, হাওরে নিচু জমি ভরাট করে যদি শিল্প গড়া হয়, তাহলে পরিবেশের ওপর খুবই অন্যায় করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে হাওরের পানি প্রবাহ ও পানি ধরে রাখার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে এমন অবকাঠামো করা যাবে না। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের সময় হাওরের পানি প্রবাহ যাতে সঠিক থাকে, এ জন্য তিনি সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডিকে।
তিনি আরও বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানির সঙ্গে বালু আসার ফলে অধিকাংশ হাওরের বুক বালুমাটি এসে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। হাওর ও বিলগুলোকে পুনঃখনন করে পানি ধারণক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এখন সেখানে যদি মাটি ভরাট করে শিল্প গড়া হয়, সেটা কখনোই কাম্য নয়।’
লাক্সারিয়াস জীবন পাওয়ার জন্য এখন মানুষ দিনরাত শুধুই কাজ করে চলেছেন। যার মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে কাজ করেন এমন মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেয়ারে বসে ল্যাপটপের সামনে তাকিয়ে থাকা রীতিমতো যন্ত্রণাদায়ক।
শুধু তাই নয়, এটা স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। যারা অফিসে ডেস্কে কাজ করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।
সারাদিন যারা ডেস্কে বসে কাজ করেন তাদের অন্যতম অভিযোগও এটি। তারা বলে থাকেন, চেয়ারে বসে কাজ করে মোটা হয়ে যাচ্ছি! তবে এই অজুহাতকে একেবারে সত্য বলার সুযোগ নেই। কারণ ডেস্কে বসে কাজ করেও স্লিম ও ফিট থাকা সম্ভব। এজন্য মেনে চলুন পাঁচটি টিপস।
হাঁটুনফিট ও কর্মক্ষম থাকতে নিয়মিত হাঁটুন। দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় বসে থাকলে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করুন। এমনকি কাজের ফাঁকেও ১০ মিনিটের ব্রেক নিয়ে হেঁটে আসতে পারেন।
সোজা হয়ে বসুনচেয়ারে মেরুদণ্ড সোজা রেখে বসুন। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে অনেক চাপ পড়ে, সেই সঙ্গে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডের পাশের মাংসপেশি ও লিগামেন্টের ওপর। কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় মনিটরটি চোখের সমান স্তরে রাখুন। মাউস ব্যবহার করার সময় শুধু আপনার কব্জি নয় পুরো হাত ব্যবহার করুন।
চাপ এড়িয়ে চলুনএটা খুব কঠিন কাজ, চাপমুক্ত থাকা। বিশেষ করে যখন চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। তবে মানসিক স্থিরতা ধরে রাখুন, নিজেকে মোটিভেট করুন। কোনও চাপই বেশি দিন থাকে না, এগুলো নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে নিজের কাজে মনোযোগ বাড়ান। এক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে অনলাইনে কিছু যোগা শিখে অভ্যাস করুন।
চোখের যত্নকম্পিউটারে কাজ করার সময় স্ক্রিনে একটানা ১০-১৫ মিনিটের বেশি তাকিয়ে থাকবেন না। নিয়মিত চোখের পাতা ফেলুন। স্ক্রিনে পর্যাপ্ত আলো রাখুন, যেন চোখের ওপর বাড়তি চাপ না পড়ে।
হাড়ের যত্ন বসে থাকার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতিও হতে পারে। এজন্য নজর দিতে হবে প্রতিদিনের খাবারে স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে নিয়মিত ডিম, দুধ, দই ও বাদাম রাখুন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কোন দেশে ভালো চিকিৎসা হতে পারে তার খোঁজ নিচ্ছে বিএনপি। এর অংশ হিসাবে ঢাকায় জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসা জার্মানিতে হতে পারে কিনা জানতে চেয়েছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। মঙ্গলবার জানতে চাইলে ঢাকায় জার্মানির সিডিএ জান রল্ফ জানোস্কি বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুলের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। মিসেস জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার ধরন সম্পর্কে জেনেছি। তার ভালো চিকিৎসা বিশ্বের খুব কম দেশে সম্ভব। জার্মানিতে এসব সমস্যার খুব ভালো চিকিৎসা আছে। সরকারের অনুমোদন পেলে তিনি জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে পারেন।’ এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি তিনি।
৯ আগস্ট অসুস্থ হয়ে পড়লে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর লিভারের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিডনির কর্মক্ষমতা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। এ কারণে কয়েকবার তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছিল। এখন কেবিনে মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) লিভার, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ সার্বিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে সম্প্রতি দুবার সিসিইউতে নিতে হয়। এখন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, মেডিকেল বোর্ড মনে করে সর্বসম্মতভাবে তাদের পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত বিদেশে লিভার প্রতিস্থাপনে সম্মিলিত আধুনিক মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া জরুরি। তাহলেই তিনি শঙ্কা মুক্ত হতে পারেন বলে বোর্ড রিকমেন্ডেশনে বলেছেন।
এর আগে ১৩ জুন রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ওই সময় ৫ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। গত বছরের জুনে খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা হলে তার হৃদযন্ত্রে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর একটিতে রিং পরানো হয়। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রারাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হৃদরোগে ভুগছেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা, চিকিৎসা, বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান নিয়ে আজ বুধবার জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা রয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা শঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে উন্নত চিকিৎসায় বিদেশে পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবারই সরকার সেসব আমলে না নিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন দলীয় ফোরামে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আগের মতোই লিভারের জটিলতার পাশাপাশি ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে শঙ্কিত তার চিকিৎসকরা। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার ফুসফুস থেকে পানি বের করা হয়েছে। শরীরে ক্যাথেডর লাগানো হয়েছে। আগে যেখানে দুই-তিন দিন পরপর পানি বের করা হয়েছে, এখন প্রতিদিনই পানি বের করতে হচ্ছে। তার কেবিনে মঙ্গলবার আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। ওই চিকিৎসক আরও বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি নেই। লিভার সিরোসিসের সঙ্গে কিডনির জটিলতাও বাড়ছে। তার লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া সামনে বিকল্প নেই। এর জন্য খুব দ্রুত উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ পাঠানো দরকার।