দুদক শুধু কাগজ-কলমে স্বাধীন, বাস্তবে নয় : টিআইবি
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:৫১
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্বাধীনতা শুধু কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে তারা স্বাধীন নয়। বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি যতটা সক্রিয়, সরকার ঘনিষ্ঠদের বিষয়ে ততটাই নিষ্ক্রিয়। সরকার ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শুধু দুদকের করিডর পর্যন্ত যেতে হয়। এরপর তার অগ্রগতি থাকে না।
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ‘দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ উদ্যোগ : বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর একটি ফলোআপ গবেষণা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ শেষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছরের তথ্য নিয়ে টিআইবি প্রতিবেদনে বলেছে, দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক ৬০ স্কোর পেয়েছে, যা মধ্যমশ্রেণির। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ৬৭ থেকে ১০০ স্কোর উচ্চশ্রেণি। আন্তর্জাতিক মান অর্জনে দুদককে দুর্নীতি অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়ের, ব্যাংক খাতের দুর্নীতি, সম্পদ আত্মসাৎসহ এ ধরনের দুর্নীতি মোকাবিলায় আরও উন্নতি করতে হবে।
গবেষণায় ছয়টি ড়্গেত্র ভাগ করে ৫০টি নির্দেশক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা, কমিশনারদের নিয়োগ ও অপসারণ, কাজের আওতা, আইনি স্বাধীনতাসহ ২১টিতে দুদক উচ্চশ্রেণি (ভালো সক্ষমতা), ১৮টি মধ্যম ও ১১টি নিমœ শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়ের নির্দেশকটি সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছে।
টিআইবি বলছে, গবেষণাকালে দুদকে মোট ৪৭ হাজার ৫৩৯টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ২০৯টি তদন্তের জন্য আমলে নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩০ শতাংশ অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্বাধীনতা ও মর্যাদার ড়্গেত্রে বলা হয়েছে, দুদক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। বিরোধী রাজনীতিকদের হয়রানি করা হলেও ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সঙ্গীদের প্রতি নমনীয়তা দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। এ নির্দেশকে নিম্ন স্কোর অর্জন করেছে দুদক। সহযোগিতা ও বাহ্যিক ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব থেকে শূন্য সহনশীলতার (জিরো টলারেন্স) ওপর জোর দেওয়া হলেও কোনো কোনো উদ্যোগের মাধ্যমে দুদকের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির অভিযোগ পেলে পূর্বানুমতি ছাড়া গ্রেপ্তার না করার বিধানের সমালোচনা করে টিআইবি বলেছে, আইনটি অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক।
অন্যদিকে প্রতিরোধমূলক, শিক্ষামূলক ও আউটরিচ কার্যক্রমে দুদক সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে। এ ক্ষেত্রের আওতাভুক্ত আটটি নির্দেশকের মধ্যে চারটি স্কোর উচ্চ ও চারটি মধ্যম মান অর্জন করেছে। তবে এখানেও বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও দুদকের দুর্নীতি বিষয়ে নিজস্ব গবেষণা নেই। ২০১৮ সালে তিনটি গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত কোনোটিই সম্পাদন ও প্রকাশ করা হয়নি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বড় দুর্নীতির চেয়ে ছোটখাটো দুর্নীতির দিকে দুদকের আগ্রহ বেশি। দুর্নীতি অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা করার ড়্গেত্রে তাদের ওপর রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। বেসিক ব্যাংকসহ বড় লুটপাটের ঘটনা এখনো তদন্তের বাইরে। এতে জনগণের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের ধারণা, প্রতিষ্ঠানটি ক্ষমতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত উচ্চ ব্যক্তিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু করতে পারে না। কোনো কোনো ড়্গেত্রে নমনীয়। কিন্তু সরকারবিরোধী রাজনীতিকদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ত্রুটি সত্ত্বেও দুদক তাদের কাজের অগ্রগতি বজায় রেখেছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা এগিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অর্জন করতে হলে আরও অনেক কাজ করতে হবে।’
দুদক শক্তিশালী করতে টিআইবির প্রতিবেদনে ১৬টি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাম্মী লায়লা ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ড. পারভীন হাসান, উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের প্রমুখ।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:৫১

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্বাধীনতা শুধু কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে তারা স্বাধীন নয়। বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি যতটা সক্রিয়, সরকার ঘনিষ্ঠদের বিষয়ে ততটাই নিষ্ক্রিয়। সরকার ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে শুধু দুদকের করিডর পর্যন্ত যেতে হয়। এরপর তার অগ্রগতি থাকে না।
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমণ্ডিতে ‘দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান শক্তিশালীকরণ উদ্যোগ : বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনের ওপর একটি ফলোআপ গবেষণা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ শেষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছরের তথ্য নিয়ে টিআইবি প্রতিবেদনে বলেছে, দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদক ৬০ স্কোর পেয়েছে, যা মধ্যমশ্রেণির। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ৬৭ থেকে ১০০ স্কোর উচ্চশ্রেণি। আন্তর্জাতিক মান অর্জনে দুদককে দুর্নীতি অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়ের, ব্যাংক খাতের দুর্নীতি, সম্পদ আত্মসাৎসহ এ ধরনের দুর্নীতি মোকাবিলায় আরও উন্নতি করতে হবে।
গবেষণায় ছয়টি ড়্গেত্র ভাগ করে ৫০টি নির্দেশক বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা, কমিশনারদের নিয়োগ ও অপসারণ, কাজের আওতা, আইনি স্বাধীনতাসহ ২১টিতে দুদক উচ্চশ্রেণি (ভালো সক্ষমতা), ১৮টি মধ্যম ও ১১টি নিমœ শ্রেণিভুক্ত হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়ের নির্দেশকটি সবচেয়ে কম নম্বর পেয়েছে।
টিআইবি বলছে, গবেষণাকালে দুদকে মোট ৪৭ হাজার ৫৩৯টি অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ২০৯টি তদন্তের জন্য আমলে নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৩০ শতাংশ অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। অনুসন্ধান ও তদন্ত কাজে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেন ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্বাধীনতা ও মর্যাদার ড়্গেত্রে বলা হয়েছে, দুদক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে। বিরোধী রাজনীতিকদের হয়রানি করা হলেও ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সঙ্গীদের প্রতি নমনীয়তা দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। এ নির্দেশকে নিম্ন স্কোর অর্জন করেছে দুদক। সহযোগিতা ও বাহ্যিক ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব থেকে শূন্য সহনশীলতার (জিরো টলারেন্স) ওপর জোর দেওয়া হলেও কোনো কোনো উদ্যোগের মাধ্যমে দুদকের ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮-এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির অভিযোগ পেলে পূর্বানুমতি ছাড়া গ্রেপ্তার না করার বিধানের সমালোচনা করে টিআইবি বলেছে, আইনটি অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক।
অন্যদিকে প্রতিরোধমূলক, শিক্ষামূলক ও আউটরিচ কার্যক্রমে দুদক সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে। এ ক্ষেত্রের আওতাভুক্ত আটটি নির্দেশকের মধ্যে চারটি স্কোর উচ্চ ও চারটি মধ্যম মান অর্জন করেছে। তবে এখানেও বলা হয়েছে, ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও দুদকের দুর্নীতি বিষয়ে নিজস্ব গবেষণা নেই। ২০১৮ সালে তিনটি গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত কোনোটিই সম্পাদন ও প্রকাশ করা হয়নি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বড় দুর্নীতির চেয়ে ছোটখাটো দুর্নীতির দিকে দুদকের আগ্রহ বেশি। দুর্নীতি অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা করার ড়্গেত্রে তাদের ওপর রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। বেসিক ব্যাংকসহ বড় লুটপাটের ঘটনা এখনো তদন্তের বাইরে। এতে জনগণের মধ্যে এক ধরনের অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের ধারণা, প্রতিষ্ঠানটি ক্ষমতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত উচ্চ ব্যক্তিদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু করতে পারে না। কোনো কোনো ড়্গেত্রে নমনীয়। কিন্তু সরকারবিরোধী রাজনীতিকদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ত্রুটি সত্ত্বেও দুদক তাদের কাজের অগ্রগতি বজায় রেখেছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা এগিয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অর্জন করতে হলে আরও অনেক কাজ করতে হবে।’
দুদক শক্তিশালী করতে টিআইবির প্রতিবেদনে ১৬টি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাম্মী লায়লা ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ড. পারভীন হাসান, উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের প্রমুখ।