দেশে সাড়ে ১১ মাসে পানিতে ডুবে ৩৭১ শিশুর মৃত্যু: সমষ্টি
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৪ নভেম্বর, ২০২০ ২৩:৫৯
পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বহুসংখ্যক শিশুকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ বিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’।
মঙ্গলবারের যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দাতা সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের সহযোগিতায় আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানিয়েছে সমষ্টি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে সমষ্টি পরিচালিত এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ২৫০টি ঘটনায় ৪৪৮ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা গেছে। এদের মধ্যে ৩১৭ জনের (৭০.৭৫ %) এর বয়স ৯ বছরের কম। মৃতদের মধ্যে ১৬৯ জন নারী বা কন্যাশিশু রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা পরিবারের অন্য সদস্যদের অগোচরে বাড়ির আশপাশের পুকুর বা জলাশয়ে চলে যায় এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় আগস্ট মাসে।
২০১৬ সালে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস, জন হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, দি সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বা সিআইপিআরবি এবং আইসিডিডিআরবি পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ৪০টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে ৩০ জন শিশুর বয়স পাঁচ বছরের কম।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৫ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রোগ-বালাইয়ের বাইরেও বাংলাদেশে প্রতিবছর বড় সংখ্যক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। তাই শিশুমৃত্যু নিয়ে এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জনে প্রতিরোধযোগ্য এ মৃত্যু কমানো জরুরি। এজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
কর্মশালায় আরও জানানো হয়, শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকে বৈশ্বিকভাবে এসডিজির অন্তর্ভুক্ত করা হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুকে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করা হয়নি। ফলে অসুস্থতাজনিত কারণে শিশু মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার প্রতিরোধে কর্মসূচি গ্রহণ না করা হলে সার্বিকভাবে শিশুমৃত্যুর উচ্চহার থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানিতে ডুবে মৃত্যু সারা বিশ্বে আঘাতজনিত কারণে শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর তিন লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যান। এদের ২০ শতাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হারে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম। বাংলাদেশে ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশের জন্য দায়ী পানিতে ডুবে যাওয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের মধ্যে ৩২ জনই চার বছরের কম বয়সী। বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজারে। এছাড়া পানিতে ডোবার কারণে আরও ১৩ হাজার শিশু স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে। এক লাখ শিশু পানিতে ডোবার কারণে বিভিন্নভাবে আহত হয়।
সমষ্টির পরিচালক ও চ্যানেল আইয়ের জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক মীর মাসরুর জামান এর পরিচালনায় এ কর্মশালায় জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমের আরও ২০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২৪ নভেম্বর, ২০২০ ২৩:৫৯

পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বহুসংখ্যক শিশুকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা থেকে রক্ষা করা সম্ভব বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ বিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’।
মঙ্গলবারের যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক দাতা সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের সহযোগিতায় আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানিয়েছে সমষ্টি।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে সমষ্টি পরিচালিত এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ২৫০টি ঘটনায় ৪৪৮ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা গেছে। এদের মধ্যে ৩১৭ জনের (৭০.৭৫ %) এর বয়স ৯ বছরের কম। মৃতদের মধ্যে ১৬৯ জন নারী বা কন্যাশিশু রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা পরিবারের অন্য সদস্যদের অগোচরে বাড়ির আশপাশের পুকুর বা জলাশয়ে চলে যায় এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয় আগস্ট মাসে।
২০১৬ সালে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস, জন হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, দি সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বা সিআইপিআরবি এবং আইসিডিডিআরবি পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ৪০টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে ৩০ জন শিশুর বয়স পাঁচ বছরের কম।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৫ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রোগ-বালাইয়ের বাইরেও বাংলাদেশে প্রতিবছর বড় সংখ্যক শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। তাই শিশুমৃত্যু নিয়ে এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জনে প্রতিরোধযোগ্য এ মৃত্যু কমানো জরুরি। এজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
কর্মশালায় আরও জানানো হয়, শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকে বৈশ্বিকভাবে এসডিজির অন্তর্ভুক্ত করা হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুকে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করা হয়নি। ফলে অসুস্থতাজনিত কারণে শিশু মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার প্রতিরোধে কর্মসূচি গ্রহণ না করা হলে সার্বিকভাবে শিশুমৃত্যুর উচ্চহার থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
পানিতে ডুবে মৃত্যু সারা বিশ্বে আঘাতজনিত কারণে শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর তিন লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যান। এদের ২০ শতাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হারে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম। বাংলাদেশে ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশের জন্য দায়ী পানিতে ডুবে যাওয়া।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের মধ্যে ৩২ জনই চার বছরের কম বয়সী। বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজারে। এছাড়া পানিতে ডোবার কারণে আরও ১৩ হাজার শিশু স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে। এক লাখ শিশু পানিতে ডোবার কারণে বিভিন্নভাবে আহত হয়।
সমষ্টির পরিচালক ও চ্যানেল আইয়ের জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক মীর মাসরুর জামান এর পরিচালনায় এ কর্মশালায় জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমের আরও ২০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।