`আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ বেঁচে থাকবেন সৃজনে সংগ্রামে'
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২১ মে, ২০২২ ২২:২৫
গান-কবিতা আর স্মৃতিচারণে অনুষ্ঠিত হয়েছে আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফের নাগরিক স্মরণ সভা।
শনিবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই স্মরণানুষ্ঠান হয়।
‘শিল্পের ভুবনে সৃজনের অনিঃশেষ ফাল্গুধারা’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত এই স্মরণসভায় অংশ নেন রাজনীতিবিদ, নাট্যজন, শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিজনসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলনসহ সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে হাসান আরিফ রেখেছেন সাহসী ভূমিকা। এই কীর্তিমানের শরীরী মৃত্যু হলেও তিনি বেঁচে থাকবেন আপন সৃজনে সংগ্রামে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে হাসান আরিফের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন সকলে। পরে হাসান আরিফকে নিবেদিত সংগীত 'তোমারো পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি' পরিবেশন করেন জোটের সংগীতশিল্পীরা এবং হাসান আরিফ নির্দেশিত আবৃত্তি প্রযোজনা ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ পরিবেশন করেন জোটের আবৃত্তিশিল্পীরা। শোকবচন পাঠ করেন বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকবচন পাঠের পর সেটি তুলে দেওয়া হয় হাসান আরিফের বোন রওশন আরা তুলির হাতে।
স্মরণসভায় হাসান আরিফকে নিবেদিত কথামালায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা অধ্যাপক এম এম আকাশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান খান, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সংস্কৃতিজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ, ম. হামিদ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান, সাংবাদিক মুন্নী সাহা প্রমুখ।
সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সঞ্চালনা করেন জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী মো. আহ্কাম উল্লাহ্।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, হাসান আরিফের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল রাজপথে, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে। স্কুলজীবনে নিজে আবৃত্তিচর্চার কারণে তার ভক্ত ছিলাম। এই মানুষটি চলে গিয়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের যুদ্ধ এখনো থেমে যায়নি। এই বাংলাদেশে গেড়ে বসেছে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ। এই অপশক্তিকে হঠাৎ করে উপড়ে ফেলা কঠিন। তাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং জঙ্গিবাদ নির্মূলে জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আমাদের যুদ্ধ এখনো চলছে। সেই যুদ্ধে হাসান আরিফকে খুব প্রয়োজন ছিল।
নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, আরিফকে আমরা শুধু তার আবৃত্তির জন্য স্মরণ করছি না। হাসান আরিফের একটা দর্শন ছিল। আরিফ আমাদের এবং মানুষের যোগ সেতুতে পরিণত হয়েছিল।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, হেফাজত যখন শাপলা চত্বরে জড়ো হয়েছিল এবং আমাদের পার্টি অফিসে আগুন দিয়েছিল, তখন সাহস নিয়ে খুব কম মানুষই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এই মানুষটি তার সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে আমাদের পার্টি অফিসের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি একই সঙ্গে ছিলেন যোদ্ধা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অগ্রপথিক।
অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, রাজনীতির সমান্তরালে এই মানুষটি দেশের আবৃত্তিশিল্প তথা সংস্কৃতিচর্চায় অসামান্য অবদান রেখেছেন।
হাসান আরিফের বোন রওশন আরা তুলি বলেন, হাসান আরিফ আমাদের মাঝে নেই, এই কথাটি আজও বিশ্বাস হয় না। শরীরী অস্তিত্ব না থাকলেও আপন সৃজনে ও সংগ্রামে সে বেঁচে থাকবে। বেঁচে থাকবে তার কর্ম ও চিন্তায়।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, গত ৩৫ বছর দেশের এমন কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম নেই যেখানে আরিফের ভূমিকা নেই। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমৃত্যু গণতান্ত্রিক, শোষণমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে লালন করেছে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের মাধ্যমেই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে হবে তাকে। হাসান আরিফের সৃজনকর্ম সংরক্ষণে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক | ২১ মে, ২০২২ ২২:২৫

গান-কবিতা আর স্মৃতিচারণে অনুষ্ঠিত হয়েছে আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফের নাগরিক স্মরণ সভা।
শনিবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই স্মরণানুষ্ঠান হয়।
‘শিল্পের ভুবনে সৃজনের অনিঃশেষ ফাল্গুধারা’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত এই স্মরণসভায় অংশ নেন রাজনীতিবিদ, নাট্যজন, শিক্ষাবিদ, সংস্কৃতিজনসহ সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলনসহ সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে হাসান আরিফ রেখেছেন সাহসী ভূমিকা। এই কীর্তিমানের শরীরী মৃত্যু হলেও তিনি বেঁচে থাকবেন আপন সৃজনে সংগ্রামে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে হাসান আরিফের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করেন সকলে। পরে হাসান আরিফকে নিবেদিত সংগীত 'তোমারো পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি' পরিবেশন করেন জোটের সংগীতশিল্পীরা এবং হাসান আরিফ নির্দেশিত আবৃত্তি প্রযোজনা ‘মহাবিজয়ের মহানায়ক’ পরিবেশন করেন জোটের আবৃত্তিশিল্পীরা। শোকবচন পাঠ করেন বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। শোকবচন পাঠের পর সেটি তুলে দেওয়া হয় হাসান আরিফের বোন রওশন আরা তুলির হাতে।
স্মরণসভায় হাসান আরিফকে নিবেদিত কথামালায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা অধ্যাপক এম এম আকাশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান খান, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সংস্কৃতিজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ, জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ, ম. হামিদ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে, পথনাটক পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান, সাংবাদিক মুন্নী সাহা প্রমুখ।
সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সঞ্চালনা করেন জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী মো. আহ্কাম উল্লাহ্।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, হাসান আরিফের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল রাজপথে, এরশাদবিরোধী আন্দোলনে। স্কুলজীবনে নিজে আবৃত্তিচর্চার কারণে তার ভক্ত ছিলাম। এই মানুষটি চলে গিয়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের যুদ্ধ এখনো থেমে যায়নি। এই বাংলাদেশে গেড়ে বসেছে সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদ। এই অপশক্তিকে হঠাৎ করে উপড়ে ফেলা কঠিন। তাই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং জঙ্গিবাদ নির্মূলে জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আমাদের যুদ্ধ এখনো চলছে। সেই যুদ্ধে হাসান আরিফকে খুব প্রয়োজন ছিল।
নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, আরিফকে আমরা শুধু তার আবৃত্তির জন্য স্মরণ করছি না। হাসান আরিফের একটা দর্শন ছিল। আরিফ আমাদের এবং মানুষের যোগ সেতুতে পরিণত হয়েছিল।
অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, হেফাজত যখন শাপলা চত্বরে জড়ো হয়েছিল এবং আমাদের পার্টি অফিসে আগুন দিয়েছিল, তখন সাহস নিয়ে খুব কম মানুষই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এই মানুষটি তার সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে আমাদের পার্টি অফিসের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি একই সঙ্গে ছিলেন যোদ্ধা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অগ্রপথিক।
অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, রাজনীতির সমান্তরালে এই মানুষটি দেশের আবৃত্তিশিল্প তথা সংস্কৃতিচর্চায় অসামান্য অবদান রেখেছেন।
হাসান আরিফের বোন রওশন আরা তুলি বলেন, হাসান আরিফ আমাদের মাঝে নেই, এই কথাটি আজও বিশ্বাস হয় না। শরীরী অস্তিত্ব না থাকলেও আপন সৃজনে ও সংগ্রামে সে বেঁচে থাকবে। বেঁচে থাকবে তার কর্ম ও চিন্তায়।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, গত ৩৫ বছর দেশের এমন কোনো আন্দোলন-সংগ্রাম নেই যেখানে আরিফের ভূমিকা নেই। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে যুদ্ধাপরাধ বিরোধী আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমৃত্যু গণতান্ত্রিক, শোষণমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে লালন করেছে। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের মাধ্যমেই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে হবে তাকে। হাসান আরিফের সৃজনকর্ম সংরক্ষণে সরকারিভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।