
কলেজ থেকে বাসার উদ্দেশে যাত্রী ছাউনিতে এসেছে চার সহপাঠী। বেঞ্চে জায়গা নেই; অল্প জায়গায় আঁটসাঁট করে বসে আছে তারা। বামপাশে একজন হকার মোবাইল সিম বিক্রি করছে। ডানপাশে ফ্লোরে বসে একটা বাচ্চা শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে সবার কাছে সাহায্য চাচ্ছেন এক নারী। চারদিকে কোলাহল। যাত্রী ছাউনি ও ফুট ওভারব্রিজে জামাকাপড়, ফল, ইলেকট্রিক পণ্য বিক্রি করতে ব্যস্ত সেখানকার হকার। এমন চিত্র ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ১৭ নম্বর ওয়ার্ড খিলক্ষেত ট্রাফিক পুলিশ বক্স উত্তর ও দক্ষিণ পাশের যাত্রী ছাউনি ও ফুট ওভারব্রিজের চিত্র। সরেজমিন গিয়ে এমনটাই দেখা যায়।
কুর্মিটোলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী জেবুন নেছা নিপা দেশ রূপান্তরকে জানান, প্রতিদিন বাড্ডা থেকে খিলক্ষেত কলেজে আসতে হয়। কলেজে আসার জন্য প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয় ফুট ওভারব্রিজ। কিন্তু হকারদের কারণে ফুট ওভারব্রিজ ও যাত্রী ছাউনিতেও হয়রানির শিকার হেত হয়। তিনি আরো বলেন, যাত্রী ছাউনিতে হকারদের কারণে বসা যায় না। এ ছাড়াও বেঞ্চে ময়লা-আবর্জনা লেগেই থাকে। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। শান্তিপূর্ণভাবে আপনি এখানে বসে অপেক্ষা করবেন এমন সৌভাগ্য হয়তো আপনার হবে না। চারদিকে এত পরিমাণ শব্দদূষণ আপনার মাথা ধরে যাবে।
অনেকেই বলছে, ফুট ওভারব্রিজ ও যাত্রী ছাউনিতে হয়রানি শিকার হন সাধারণ পথচারী। প্রতিদিন ঘটছে ছোটবড় চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা। এমনটাই অভিযোগ রয়েছে সেখানে আসা সাধারণ পথচারীদের।
মাহাতাব উদ্দিন সরকার পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, সিটি করপোরেশন জনগণের সেবার জন্য বহু টাকা খরচ করে যাত্রী ছাউনি ও ফুট ওভারব্রিজ করেছে। কিন্তু এগুলো দেখভাল করার কেউ নেই। এ ছাড়া ঢাকার ফুটপাত আর ফুট ওভারব্রিজগুলো পথচারীদের দখলে থাকার কথা ছিল। ফুটপাত দিয়ে হাঁটা, আর ফুট ওভারব্রিজ দিয়ে পারাপার হবে মানুষ। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়। ফুটপাত উপেক্ষা করে প্রধান সড়ক ধরে হাঁটছে এবং চলতি যান থামিয়ে পারাপার হচ্ছে সাধারণ জনগণ। এর কারণে, সড়কের ফুটপাত আর ফুট ওভারব্রিজ ভাসমান দোকান ও ভিক্ষুকের দখলে বলে মনে করেন এই শিক্ষক।
নাম-পরিচয় গোপন রেখে এক পথচারী বলেন, ঈদকে সামনে রেখেই ব্যাপক চাঁদাবাজিতে মেতেছে অসাধু ট্রাফিক পুলিশ ও থানার কিছু পুলিশ কর্মকর্তা। প্রতিটা সময় যাত্রী ছাউনি ফুট ওভারব্রিজে হকারদের মেলা। যে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে তারাই সেখান থেকে প্রতিদিন মাসোহারা নেয়। প্রতিটা দোকান থেকে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ শ টাকা চাঁদা তোলা হয়। কিন্তু আপনি তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে দেখেন, তারা আপনাকে কিছুই বলবে না। কারণ তাদের ব্যবসা করতে হবে। সন্ধ্যা হলেই টহল পুলিশ এ জায়গা থেকে টাকা নিয়ে যায়।
তার এমন দাবি স্বীকার করে সেখানে থাকা ক'জন হকার। কিন্তু তারা তাদের নাম-পরিচয় বলতে রাজি হননি। একজন হকার বলেন, কি করব কোথায় যাব, যত জুলুম নির্যাতন আমাদের ওপর চলে। টাকা দিলে পুলিশ ব্যবসা করতে দেয়। কিছু করে খেয়ে পরিবার নিয়ে বাঁচতে তো হবে।
পুলিশের নাম করে ওই স্থানের দোকানিদের কাছ থেকে চাঁদা আদা বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ কমিশনার (পেট্রোল, ক্যান্টনমেন্ট জোন) খন্দকার রেজাউল হাসান দেশ রূপান্তরকে জানান, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। অনেকেই এই প্রশ্নটি করেন কিন্তু দালিলিক কোনো প্রমাণ দিতে পারেন না। তবুও আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আঞ্চলিক-১ নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার লাইন দেশ রূপান্তরকে জানান, প্রতিদিনই আমরা ওয়ার্ডগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা খুব শিগগিরই সেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করব। যাতে নির্বিঘ্নে যাত্রী ছাউনি ও ফুট ওভারব্রিজ সাধারণ জনগণ স্বাচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারে। এ ছাড়া পুনরায় কোনো হকার ওই স্থানটিতে না বসতে পারে তার জন্য খিলক্ষেত থানা ও খিলক্ষেত ট্রাফিক পুলিশের সাথে কথা বলব।
রাজধানীর গুলশানের ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (২) এ একটি নতুন মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারি উদ্বোধন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারা এক যোগে গ্যালারিটি উদ্বোধন করেন। ইংরেজিতে এর নাম রাখা হয়েছে লিবারেশন ওয়ার গ্যালারি।
এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমিও একজন মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে খুবই আনন্দিত যে ভারতীয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এই মুক্তিযুদ্ধ গ্যালারিটি তৈরি করেছে। মুক্তিযুদ্ধকালে আমি কতবার যে ভারতে ট্রেনিং ও সংগঠনের কাজে গিয়েছি তার ইয়ত্বা নেই। ভারতীয় জনগণ যে অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে এর ওপরই দাঁড়িয়ে আছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক। এই গ্যালারির জন্য আমি হাইকমিশনার ও ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।
গ্যালারিটিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ কিছু ছবি ও নথি প্রদর্শন করার মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্থায়ী বন্ধুত্বের সাক্ষ্য ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। এটি দর্শণার্থীদেরকে এই দুই দেশের ইতিহাসের অভ্যন্তরে একটি অনুপ্রেরণামূলক ভ্রমণের সুযোগ করে দেবে এবং বাংলাদেশের জনগণের বীরত্ব, প্রাণোচ্ছলতা ও অদম্য চেতনার প্রতীক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করে ভারতীয় হাইকমিশন।
হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা নতুন গ্যালারির উদ্বোধনকালে তার বক্তব্যে, বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের জন্যই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক তাত্পর্যের ওপর জোর দেন এবং বন্ধুত্ব ও সংহতির অটুট চেতনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থনকে নির্দেশ করে।
তিনি বলেন, গ্যালারিটি ১৯৭১ সালের চেতনাকে রক্ষা ও উদ্যাপন করতে ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ অঙ্গীকারকে তুলে ধরবে যা আমাদের সম্পর্ককে দিকনির্দেশনা প্রদান অব্যাহত রেখেছে।
হাই কমিশনার ভার্মা আশা প্রকাশ করেন যে, গ্যালারিটি ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের একটি স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে কাজ করবে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মসমূহ দেখতে আসবে এবং অনুপ্রেরণা পেতে থাকবে।
গ্যালারিটির সূক্ষ্মভাবে কিউরেট করা বিপুল সংখ্যক প্রদর্শনীসামগ্রীসমূহ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াইকারীদের সাহসিকতা, সংকল্প ও আত্মত্যাগকে তুলে ধরে। এটি নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং জীবন উৎসর্গকারী অজ্ঞাতনামা লাখো মানুষের স্মৃতিকে সম্মান জানায়।
আন্তরিক এই আয়োজনে নৃত্যগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। দেশের খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ, চলচ্চিত্রকার, মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকরা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন।
রাজধানীতে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে লোহার রড পড়ে শিশু নিহতের ঘটনায় করা মামলায় প্রকল্পের এক শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক সেকান্দার আলী মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাজধানীর মহাখালী এলাকায় সোমবার এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মাথায় রড পড়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শ্রমিক মো. হাসানের (৩২) বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ এনে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের বনানী-মহাখালীর সাইট ম্যানেজার হাসিব হাসান মামলা করেন।
ঢাকা রেলওয়ে থানায় সোমবার করা এ মামলায় বলা হয়, পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শ্রমিকরা কাজ করার সময় ২৮৬ ও ২৮৭ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি জায়গায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে শ্রমিক মো. হাসানের হাত থেকে ৫-৬ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি রড ওপর থেকে একটি ফাঁকা দিয়ে নিচে পড়ে।
রডটি নিচে রেললাইন দিয়ে হেঁটে যাওয়া একটি শিশুর মাথায় আঘাত করে এবং তার মাথায় ঢুকে যায়।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে ৫৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন অপরাধ ও গোয়েন্দা বিভাগ।
সোমবার (২৯ মে) সকাল ছয়টা থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩০ গ্রাম ৬৪৩ পুরিয়া হেরোইন, ৯ হাজার ৬৬৮ পিস ইয়াবা, ৫৫ কেজি ৬৭০ গ্রাম গাঁজা, ১০ বোতল বিদেশি মদ, ৭৫০ মি.লি. দেশি মদ ও ২০টি নেশা-জাতীয় ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩৫টি মামলা রুজু হয়েছে।
‘রকমারি বর্ণমালা অফার’-এর বিজয়ীদের হাতে মোটরসাইকেল ও স্মার্টফোন হস্তান্তর।
সোমবার (২৯ মে) রকমারি ডট কমের প্রধান কার্যালয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।
রকমারি ডট কমের শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দের উপস্থিতিতে মোটরসাইকেল বিজয়ী এন এম সাকিবের হাতে মোটরসাইকেল তুলে দেওয়া হয়। এছাড়াও ১২ জনের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মার্টফোন।
মোটরসাইকেল ও স্মার্টফোন তুলে দিতে উপস্থিত ছিলেন, রকমারি ডট কমের ফাউন্ডার ও সিইও খাইরুল আনাম রনি, কো-ফাউন্ডার ডিরেক্টর জুবায়ের বিন আমিন। উপহার পেয়ে বিজয়ীদের উল্লাস করতে দেখা যায়।
রকমারি ডট কমের সিইও মো. খায়রুল আনাম রনি বলেন, মানুষের জীবন সহজ করতে মোটরসাইকেলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেই ভাবনা থেকেই এমন উপহার দেওয়া। তিনি আরও বলেন, জীবন সহজ করার সাথে সাথে আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
এছাড়া রকমারি ডট কমের হেড অব পাবলিক রিলেশন অ্যান্ড ব্র্যান্ড স্ট্রাটেজি মাহমুদুল হাসান সাদি বলেন, আমরা এই ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময়ে অনেক ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। আমাদের গ্রাহক খুবই সুন্দরভাবে বিষয়টি গ্রহণ করেছেন। আমরা ভবিষ্যতে আরও কাজ করার আশা রাখি।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বর্ণমালা ক্যাম্পেইনের আওতায় রকমারি থেকে বই কিনলেই একটি বর্ণ কার্ড পাওয়া যেত। সেই কার্ড ঘষে র+ক+মা+রি মিলাতে পারলেই উপহার হিসেবে ছিল মোবাইল ফোন। এছাড়া যে কোনো একটি বর্ণ রঙ্গিন হলেই হিরো হাংক-১৫০ আর মোটরসাইকেল পুরস্কার হিসেবে ছিল।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জে) মো. ইসমাইল মোল্লা (৫৭) নামের এক কয়েদির মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ মে) ভোরে অসুস্থ অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কারারক্ষী শাহীন আলম জানান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ইসমাইল কয়েদি হিসেবে ছিলেন। ভোরের দিকে হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তার সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হবে। ময়নাতদন্তের পর কারা আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।