গণ কমিশন-হেফাজতে ইসলাম পাল্টাপাল্টি বিবৃতি
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি | ১২ মে, ২০২২ ২০:৫৫
জঙ্গি অর্থায়ন ও দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে কাজ করছে এমন অভিযোগে ১১৬ ধর্মীয় বক্তার একটি তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে ‘গণ কমিশন’।
‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক গণমাধ্যমে প্রকাশিত গণ কমিশনের শ্বেতপত্রে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়।
এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। তা প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে গণ কমিশন।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে হেফাজত আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘আমরা আজ ঘাদানিকের সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত গণ কমিশনের করা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এই ভুঁইফোড় সংগঠনটি বরাবরের মতো নিজেদের ইসলাম বিদ্বেষী চেহারা জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। তাদের এ শ্বেতপত্র যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং মিথ্যা তথ্যে ভরপুর, এটি সমগ্র দেশবাসীর সামনে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার’।
হেফাজত আমির বলেন, ‘শাহবাগী এ সংগঠন প্রতিষ্ঠাকাল থেকে নানাভাবে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পাঁয়তারা চালিয়ে আসছে। সর্বশেষ তারা দেশবরেণ্য ওলামা-মাশায়েখ এবং ইসলামি আলোচকদের তালিকা প্রকাশ করে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি’।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘দেশবরেণ্য ইসলামি আলোচকদের নামে অমূলক এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ করে তথাকথিত গণ কমিশনের দায়িত্বশীলরা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। বাস্তবতা বিবর্জিত এসব কথাবার্তা বলে নিজেদের জাতির সামনে চরম উপহাসের পাত্রে পরিণত করেছে’।
হেফাজতের আমির আরো বলেন,’ ওয়াজ মাহফিল শান্তি-সমৃদ্ধি ও আদর্শ সমাজ গঠন ও সমাজসংস্কারের উত্তম মাধ্যম। এর মাধ্যমে মানুষকে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের পথনির্দেশ করা হয়। সমাজের সব অনাচার, অন্যায় এবং ভুল থেকে মানুষকে বিরত রাখা হয়’।
মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘আজ দেশ ও জাতির জন্য পরম কল্যাণকর এ কাজটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে তথাকথিত গণ কমিশন। দুদকে এই মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে তারা দেশ-জাতি, সমাজ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তারা আজ আলেম ওলামাদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চক্রান্ত করছে’।
বৃহস্পতিবার গণ কমিশনের সদস্যসচিব ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ স্বাক্ষরিত হেফাজতের পাল্টা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দীর্ঘ এক বছর মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে সন্ত্রাস বিশেষজ্ঞ, গবেষক, সাংবাদিক, মানবাধিকার নেতা এবং হেফাজত নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের বক্তব্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে আমাদের শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধান ও অভিযোগ সত্য কিনা সেটা প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। হেফাজতে ইসলাম আমাদের হুমকি দিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশের নামে হেফাজতে ইসলাম যে মহাতাণ্ডব ও সন্ত্রাস সংঘটিত করেছে সে বিষয়ে দেশবাসী বিলক্ষণ অবগত আছেন। সেদিন তারা মহাখালীতে নির্মূল কমিটির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সংগঠনের বহু নেতাকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুরুতরভাবে আহত করেছে। ৫ ও ৬ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এবং সারা দেশে হেফাজতের সন্ত্রাসী তাণ্ডবের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ এবং নিহতদের পরিবারবর্গের বক্তব্য ও আহতদের বক্তব্য আমরা শ্বেতপত্রে প্রকাশ করেছি।’
এ ছাড়া বিবৃতিতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সুরক্ষিত ও সমুন্নত রাখার প্রয়োজনে অবিলম্বে হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য জঙ্গি, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সংগঠনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার দাবি জানানো হয়।
শেয়ার করুন
এই পাতার আরো খবর
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি | ১২ মে, ২০২২ ২০:৫৫

জঙ্গি অর্থায়ন ও দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে কাজ করছে এমন অভিযোগে ১১৬ ধর্মীয় বক্তার একটি তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে ‘গণ কমিশন’।
‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক গণমাধ্যমে প্রকাশিত গণ কমিশনের শ্বেতপত্রে তাদের নাম উল্লেখ করা হয়।
এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। তা প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে গণ কমিশন।
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে হেফাজত আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘আমরা আজ ঘাদানিকের সমন্বয়ে গঠিত তথাকথিত গণ কমিশনের করা অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এই ভুঁইফোড় সংগঠনটি বরাবরের মতো নিজেদের ইসলাম বিদ্বেষী চেহারা জাতির সামনে উন্মোচিত করেছে। তাদের এ শ্বেতপত্র যে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট এবং মিথ্যা তথ্যে ভরপুর, এটি সমগ্র দেশবাসীর সামনে দিবালোকের ন্যায় পরিষ্কার’।
হেফাজত আমির বলেন, ‘শাহবাগী এ সংগঠন প্রতিষ্ঠাকাল থেকে নানাভাবে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার পাঁয়তারা চালিয়ে আসছে। সর্বশেষ তারা দেশবরেণ্য ওলামা-মাশায়েখ এবং ইসলামি আলোচকদের তালিকা প্রকাশ করে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি’।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘দেশবরেণ্য ইসলামি আলোচকদের নামে অমূলক এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ করে তথাকথিত গণ কমিশনের দায়িত্বশীলরা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। বাস্তবতা বিবর্জিত এসব কথাবার্তা বলে নিজেদের জাতির সামনে চরম উপহাসের পাত্রে পরিণত করেছে’।
হেফাজতের আমির আরো বলেন,’ ওয়াজ মাহফিল শান্তি-সমৃদ্ধি ও আদর্শ সমাজ গঠন ও সমাজসংস্কারের উত্তম মাধ্যম। এর মাধ্যমে মানুষকে ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণের পথনির্দেশ করা হয়। সমাজের সব অনাচার, অন্যায় এবং ভুল থেকে মানুষকে বিরত রাখা হয়’।
মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘আজ দেশ ও জাতির জন্য পরম কল্যাণকর এ কাজটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে তথাকথিত গণ কমিশন। দুদকে এই মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে তারা দেশ-জাতি, সমাজ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। তারা আজ আলেম ওলামাদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চক্রান্ত করছে’।
বৃহস্পতিবার গণ কমিশনের সদস্যসচিব ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ স্বাক্ষরিত হেফাজতের পাল্টা বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দীর্ঘ এক বছর মাঠপর্যায়ে তদন্ত করে সন্ত্রাস বিশেষজ্ঞ, গবেষক, সাংবাদিক, মানবাধিকার নেতা এবং হেফাজত নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের বক্তব্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে আমাদের শ্বেতপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের অনুসন্ধান ও অভিযোগ সত্য কিনা সেটা প্রমাণের দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। হেফাজতে ইসলাম আমাদের হুমকি দিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে এটাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশের নামে হেফাজতে ইসলাম যে মহাতাণ্ডব ও সন্ত্রাস সংঘটিত করেছে সে বিষয়ে দেশবাসী বিলক্ষণ অবগত আছেন। সেদিন তারা মহাখালীতে নির্মূল কমিটির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতর্কিত হামলা চালিয়ে সংগঠনের বহু নেতাকর্মী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুরুতরভাবে আহত করেছে। ৫ ও ৬ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এবং সারা দেশে হেফাজতের সন্ত্রাসী তাণ্ডবের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ এবং নিহতদের পরিবারবর্গের বক্তব্য ও আহতদের বক্তব্য আমরা শ্বেতপত্রে প্রকাশ করেছি।’
এ ছাড়া বিবৃতিতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সুরক্ষিত ও সমুন্নত রাখার প্রয়োজনে অবিলম্বে হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য জঙ্গি, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সংগঠনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করার দাবি জানানো হয়।