
চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে দলীয় জনসভায় আজ রবিবার বিকেল ৩টায় ভাষণ দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরী ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। তাকে স্বাগত জানিয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন তোরণ এবং ঝলমলে আলোকসজ্জায় বর্ণিল চট্টগ্রাম।
জনসভায় যোগ দিতে ইতিমধ্যে পলোগ্রাউন্ডে আসতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা।
রবিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই সমাবেশস্থলে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জমায়েত হতে থাকে।
সকাল থেকে ব্যান্ডের বাজনার সঙ্গে নেতাকর্মীরা প্রবেশ করতে শুরু করেন। তাদের হাতে দেখা যায় প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, নৌকা। অনেকে রঙিন গেঞ্জি ও ক্যাপ পরে দলীয় পতাকা নিয়ে শোভাযাত্রা করে জনসভাস্থলে পৌঁছেছেন।
সরেজমিনে জনসভাস্থল পরিদর্শন করে দেখা যায়, মাঠজুড়ে প্রচারণায় রাখা হয়েছে প্রায় ৬০টি বেলুন। প্রচারণার জন্য ওড়তে থাকা বেলুনগুলো বাড়িয়েছে সভাস্থলের সৌন্দর্যও। মাঠে চারটি স্তরে বাঁশ ব্যারিকেড রাখা হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে। তৈরি করা হয়েছে পাঁচটি ফটক (গেট) এরমধ্যে পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথকভাবে দুইটি প্রবেশের ও দুইটি বাইরে যাওয়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া মঞ্চের পেছনে রাখা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রবেশ ও বাইরে যাওয়ার ফটক।
এছাড়া রয়েছে একটি মেডিকেল পয়েন্টসহ প্রায় ৫০টি ভ্রাম্যমাণ টয়লেট ও একটি শরবতের গাড়ি।
ইতিমধ্যে প্রদানমন্ত্রী চট্টগ্রাম পৌঁছেছেন। সকাল ৯টায় চট্টগ্রামের ভাটিয়ারীতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে (বিএমএ) রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পলোগ্রাউন্ডে এর আগে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মহাসমাবেশে শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছিলেন।
চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, ব্যথানাশক ক্রিমসহ বিভিন্ন নকল পণ্য উৎপাদন করে আসছিল 'জে বি কেয়ার' নামে একটি প্রতিষ্ঠান। বিএসটিআই এর অনুমোদনহীন এই কারখানায় নোংরা পরিবেশে এসব পণ্য উৎপাদন করে বাজারজাত করে আসছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। খবর পেয়ে আজ রবিবার সকালে বায়েজিদ বোস্তামি থানার শাহ হাবিবুল্লাহ সড়কে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত।
এ সময় প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. খায়রুজ্জামান রাজুকে হাতেনাতে আটক করে এক বছরের কারাদণ্ড এবং চার লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় প্রতিষ্ঠান থেকে সাবান, শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, গ্লিসারিন, ফেসওয়াশ, ব্রেস্ট ক্রিম, ব্যথানাশক ক্রিম ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেটসহ বিভিন্ন প্রসাধনী ও ওষুধ তৈরির কাঁচামাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়।
জেলা প্রশাসনের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জব্দ করা সাবানগুলোতে বিএসটিআইয়ের লোগো ছিল। কিন্তু এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, কারখানাটির প্রসাধনী ও ওষুধ উৎপাদনের কোনো অনুমোদন নেই। পরিবেশও ছিল খুবই নোংরা। অভিযানে চারজনকে আটক করা হলেও তিনজনকে বয়স বিবেচনায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ব্যবস্থাপক খায়রুজ্জামানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কারখানাটির মালিকের বিরুদ্ধে থানায় নিয়মিত মামলা দায়ের হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজপথের দল। দিয়াশলাইয়ের কাঠিতে যেমন খোঁচা দিলে জ্বলে ওঠে তেমনি আমাদের নেতাকর্মীদের একটা গুণ হলো খোঁচা দিলে জ্বলে ওঠে। তারা আমাদের খোঁচা দিয়েছে, আমরা জ্বলে উঠেছি। আমরা রাজপথে নেমেছি। আগামী নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনা ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আর ঘরে ফিরে যাবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচনে তাদের কোনো সম্ভাবনা নাই, তাই তারা অনেক ষড়যন্ত্র এঁকেছে, তারা নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা করার ষড়যন্ত্র করেছে। তারা এখন যদিও বা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের বাহানা করছে, সুযোগ পেলেই তারা আবার নাশকতা করবে, জনগণকে ছোবল মারবে। তাই নেতাকর্মীদের অনুরোধ জানাব, সতর্ক থাকতে হবে। রাজপথে নেমেছি, নির্বাচন পর্যন্ত রাজপথে থাকব। কাউকে দেশে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায় আওয়ামী লীগ জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের প্রতিহত করবে।
শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ন সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনীর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দুনিয়ার কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নাই, আছে শুধু পাকিস্তানে। বাংলাদেশ পাকিস্তানকে অনুকরণ করে না, পাকিস্তান এখন বাংলাদেশকে অনুকরণ করে। বাংলাদেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। সমস্ত সংসদীয় গণতান্ত্রিক দেশে যেই সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করে। আমাদের দেশেও নির্বাচনকালীন জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকবেন, তার সরকার নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। আর নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে।
তিনি বলেন, বিএনপি আজকে সমগ্র বাংলাদেশে আটটি জায়গায় সমাবেশের ডাক দিয়েছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি করা। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে বিএনপি ও তার জোট ধারাবাহিকভাবে নানা কর্মসূচি পালন করছে।
বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের প্রতারণা মামলায় চট্টগ্রামের প্রাইম ডিস্ট্রিবিউশন গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ রাশিদুল আলম মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম বন্দর থানা পুলিশ।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের দক্ষিণ মধ্য হালিশহরের বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বন্দর থানার ডিউটি অফিসার এসআই মোহাম্মদ হাসান।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার রাশিদুল আলম মামুন ও তার ভাই মইনুল আলম সায়মন বাংলাদেশ ফাইন্যান্স থেকে পাঁচ কোটি টাকা হোম লোন সুবিধা নিয়ে ঢাকার গুলশানে ২৭৬৮ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনে ঋণের টাকা পরিশোধ না করেই প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে দায়বদ্ধ ফ্ল্যাটটি গোপনে অন্যত্র হস্তান্তর করার চুক্তি করেন।
পরবর্তীতে বিষয়টি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের নজরে আসলে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজস্ট্রেট আদালতে রাশিদুল আলম মামুন ও তার ভাই মইনুল আলম সায়মনের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৪২০/৪০৬/৪৬২বি/৩৪ ধারায় প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে মামলা দায়ের করলে আদালত আসামিদের গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেন।
প্রসঙ্গত, বিচারাধীন অভিযোগ ছাড়াও প্রাইম এএমআর এক্সচেঞ্জ ও প্রাইম কমিউনিকেশন নামে আরও একাধিক ঋণ নিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসামি মামুনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপী ও প্রতারণার অভিযোগে প্রায় শতাধিক মামলা চলমান রয়েছে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে লোন নিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার ও জঙ্গি সংগঠনের অর্থায়নের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন গ্রেপ্তার মামুনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে বলে জানা যায়।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টার দিকে পাহাড়তলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আজ বিকেলে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তার মরদেহ শনাক্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছে। শনাক্ত হওয়ার পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার’র (আইএআরসি) অনুমিত হিসাব বলছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজারই মারা যান।
‘ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় ও যত্নে ঘাটতি অতিক্রম করতে হবে’ স্লোগানকে সামনে রেখে চট্টগ্রামস্থ অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালে বিশ্ব ক্যান্সার দিবসে জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
শনিবার সকাল ১১টায় হাসপাতাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রবিউল হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. আনানথ এন রাও।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত রোগীদের মধ্যে চিকিৎসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বক্তব্য উপস্থাপন ও প্রশ্ন উত্তর পর্বে অংশগ্রহণ করেন- আব্দুল হান্নান, মোহাম্মদ জুলফিকার ও রাফায়েত। অনুষ্ঠান সমাপ্তি ঘোষণা করেন অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের পরিচালনা প্রধান রিয়াজ হোসেন। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ডা. ইফাত শারমিন। ডা. রবিউল হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে এখনো পরিপূর্ণ ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি- তাই আমাদেরকে এই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সেই লক্ষে আমরা ভারতের স্বনামধন্য চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান অ্যাপোলো হাসপাতালের সাথে যৌথভাবে কাজ করছি।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে স্বল্প খরচে রক্তের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতাল। বর্তমানে টেলিহেলথ ব্যবস্থার মাধ্যমে অ্যাপোলো হাসপাতালের অন্যান্য দেশের চিকিৎসকদের সাথে চট্টগ্রামের অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে- যা ক্যান্সার রোগীদের সঠিক রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ, ক্যান্সার রোগীদের অপারেশন কিংবা কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি পরবর্তী চিকিৎসা ও চেকআপ চট্টগ্রামেই করা যাবে এবং এতে ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা সাশ্রয়ী হবে।
অনুষ্ঠানে ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাপোলো ইমপেরিয়াল হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের এসোসিয়েট কনসালটেন্ট ডা. ফাহমিদা আহমেদ।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী দেশে মোট মৃত্যুর ৬৭ শতাংশ মানুষ মত্যুবরণ করেন ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে। চিকিৎসকদের মতে জনসচেতনতার অভাবেই ক্যান্সারের প্রকোপ বাড়ছে। ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ উপদান হলো প্রাথমিক প্রতিরোধ, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সূচনায় ক্যান্সার নির্ণয়, চিকিৎসা ও প্রশমন সেবা বা পেলিয়েটিভ চিকিৎসা। তাই ক্যান্সার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে থাকা আর্সেনালের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান কমিয়ে আনার সুযোগ ছিল ম্যানচেস্টার সিটির। আজ বড় সেই সুযোগটা তারা হাতছাড়া করেছে। হ্যারি কেইনের রেকর্ড গড়া গোলে টটেনহামের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে গেছে পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা।
বল দখলে সিটি শুরু থেকে একচেটিয়া আধিপত্য দেখিয়ে আসছিল। তবে ম্যাচের ১৫ মিনিটে সিটির রক্ষণের ভুলে বল পেয়ে টটেনহামকে এগিয়ে দেন কেইন। সিটির ডিফেন্ডার মানুয়েল আকনজির দুর্বল পাসে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে পিয়া-এমিল হয়বিয়া বাড়ান কেইনকে। প্রথম স্পর্শে ডান পায়ের শটে গোলটি করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
এই গোলে তিনি টটেনহামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের মালিক হয়ে গেছেন। ২৬৭ গোল করে তিনি পেছনে ফেলেছেন টটেনহাম কিংবদন্তি জিমি গ্রিভসকে। ১৯৭০ সাল থেকে এই রেকর্ড নিজের করে রেখেছিলেন গ্রিভস।
ছন্দে থাকা সিটির তরুণ ফরোয়ার্ড আর্লিং হলান্ড এ দিন পুরোটা সময় নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন। তার দিনটা আজ ভালো কাটেনি। গোল করার তেমন কোনো সুযোগই পাননি সিটির এই নরওয়েজিয়ান স্ট্রাইকার।
এই হারে যদিও লিগ টেবিলে সিটির অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে আজ জিতে গেলে আর্সেনালের সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধানটা কমিয়ে আনতে পারত তারা। ২১ ম্যাচ খেলে ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ৪৫। একটি ম্যাচ কম খেলে আর্সেনালের পয়েন্ট ৫০। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে ম্যানচেস্টার সিটির মুখোমুখি হবে আর্সেনাল। ২২ ম্যাচে ৩৯ পয়েন্ট নিয়ে টটেনহামের অবস্থান পঞ্চম। তৃতীয় স্থানে আছে নিউক্যাসল ইউনাইটেড (৪০ পয়েন্ট)।
অপেক্ষার অবসান হলো। হ্যারি কেইনের হাত ধরে যেন জিমি গ্রিভস সাম্রাজ্যের সাম্রাজ্যের পতন হলো। ৫৩ বছর ধরে যে রেকর্ড তিনি দখল করে রেখেছিলেন। সেটাই আজ ভাঙলেন হ্যারি কেইন। প্রিমিয়ার লিগের ইংলিশ ক্লাব টটেনহামের সর্বোচ্চ গোলের মালিক এখন হ্যারি।
রাতে ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ গোলে হারিয়েছে টটেনহাম। জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক কেইন। ম্যাচের ১৫ মিনিটে সিটির ডিফেন্ডার মানুয়েল আকনজির দুর্বল পাসে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে পিয়া-এমিল হয়বিয়া বাড়ান কেইনকে। প্রথম স্পর্শে ডান পায়ের শটে গোলটি করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
আর এই গোলে তিনি টটেনহামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলের মালিক হয়ে গেছেন। ২৬৭ গোল করে তিনি পেছনে ফেলেছেন টটেনহাম কিংবদন্তি জিমি গ্রিভসকে। ১৯৭০ সাল থেকে এই রেকর্ড নিজের করে রেখেছিলেন গ্রিভস।
লন্ডনের ক্লাব টটেনহাম হটস্পার দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কোনো শিরোপা জেতে না। তবুও ইংলিশ লিগে তারাই সেরা দল। দলটির অন্যতম ভরসার নাম হ্যারি কেইন। ইংলিশ এই স্ট্রাইকার ২০০৯ সালে যোগ দেওয়া ক্লাবটির হয়ে গড়ে চলেছেন একের পর এক রেকর্ড।
গত বছরের আগস্টে সার্জিও আগুয়েরোকে টপকে প্রিমিয়ার লিগে এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের কীর্তি গড়েন কেইন। গত ২৩ জানুয়ারি তিনি স্পর্শ করেছিলেন জিমি গ্রিভসকে। আজ ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে গোল করে তাকে ছাঁড়িয়ে যান তিনি। ভেঙে ফেলেন পাঁচ দশকের রেকর্ড।
রেকর্ডগড়া গোলে ম্যানসিটির বিপক্ষে টটেনহামকে জিতিয়ে ক্লাবটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা বনে যান কেইন। তিনি ছাড়িয়ে যান জিমি গ্রিভসকে। কেইনের বর্তমান গোল সংখ্যা ২৬৭। সঙ্গে লন্ডন ডার্বিতে সবচেয়ে বেশি গোলের (৪৮) রেকর্ডও তার দখলে।
এই ম্যাচে প্রিমিয়ার লিগে ৩০০ ম্যাচ খেলার রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। সিটির বিপক্ষে গোল করে এই লিগে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ২০০ গোল করার মাইলফলক স্পর্শ করেছেন কেইন। তার ওপরে আছেন শুধু অ্যালান শিয়ারার (২৬০) ও ওয়েন রুনি (২০৮)।
টটেনহাম ইতিহাসের শীর্ষ ৭ গোলদাতা
খেলোয়াড় |
গোল |
সময়কাল |
হ্যারি কেইন |
২৬৭ |
২০০৯-বর্তমান |
জিমি গ্রিভস |
২৬৬ |
১৯৬১-১৯৭০ |
ববি স্মিথ |
২০৮ |
১৯৫৫-১৯৬৪ |
মার্টিন গিভারস |
১৭৪ |
১৯৬৮-১৯৭৬ |
ক্লিফ জোন্স |
১৫৪ |
১৯৫৮-১৯৬৮ |
জারমেইন ডিফো |
১৪৩ |
২০০৩-২০০৮ |
সন হিউং-মিন |
১৩৯ |
২০১৫-বর্তমান |
আগামী ১ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে ইংল্যান্ড সিরিজ। তার আগেই চূড়ান্ত হয়ে গেছে টাইগারদের প্রধান কোচ। এবার চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সহকারী নির্বাচনের পালা। জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বিসিবিও। সেই তালিকায় বিদেশি কোচ যেমন আছেন তেমনি দেশি কোচরাও বাদ যাননি। দুই তালিকাতেই একাধিক কোচকে রেখে এগোচ্ছে বোর্ড। তবে বিদেশিদের শেষ পর্যন্ত না পাওয়া গেলে সহকারী হিসেবে দেশি কোচই দীর্ঘমেয়াদে বিসিবির ডাক পাবেন।
টানা খেলার চাপ থেকে একটু বিরতি নিতে হাথুরু ছুটিতে গেলে সহকারী কোচ জাতীয় দলকে সামলাবেন। এমন গুরু দায়িত্ব কোনো সিরিজে পড়ে গেলে তা স্থানীয় কোচদের পক্ষে সামলানো কঠিন। এজন্য বিদেশিতে নজর বিসিবির।
হাথুরুসিংহের নিয়োগের ঘোষণার দিনেই এই আভাস দিয়েছিলেন বোর্ড প্রধান নাজমুল হাসান পাপন, ‘আমরা এমন একজনকে খুঁজছি যাকে হেড কোচ পছন্দ করবে। আমাদের সূচিতে এত খেলা যে, একজন কোচের পক্ষে সব দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। আমরা একজন সহকারী কোচ নিয়োগ দেব, তালিকায় ৫ জন আছে। এর মাঝে উপমহাদেশের তিনজন। তারা দেশে এসে সাক্ষাৎকার দেবে।’
বিসিবির চিন্তা জুড়েই শ্রীধরন শ্রীরাম আছেন এখনো। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে এই কোচের। তাকেই ছোট ফরম্যাটের দায়িত্ব দিতে চেয়েছিল বিসিবি। কিন্তু আইপিএল ছুটি নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় এখনো দুপক্ষের আলোচনা ‘আলোনাধীন’ রয়েছে। তাই বারবার, ‘আমি এখনো কিছু জানি না’ বলে যাওয়া শ্রীরাম কালও একই কথা জানালেন দেশ রূপান্তরকে।
বাংলাদেশ দলে দেশি কোচদের সহকারী হিসেবে থাকা নতুন কিছু নয়। মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের সহকারী কোচ ছিলেন। এরপর ২০০৯-১০ মেয়াদে খালেদ মাহমুদ সুজন সহকারী কোচ ছিলেন। এ ছাড়া সবচেয়ে বেশিবার জাতীয় দলের সঙ্গে ছিলেন সোহেল ইসলাম। ২০১৪ সালে প্রথমবার ফিল্ডিং কোচ হিসেবে যুক্ত হওয়া এই স্পিন বোলিং কোচ পরে স্পিন কোচ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সবশেষ ২০২১ সালে পাকিস্তান সিরিজে স্পিন কোচ রঙ্গনা হেরাথের বদলি হিসেবে খন্ডকালীন দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় দলের সহকারী হিসেবে তাই পূর্ব অভিজ্ঞতার বিচারে সোহেল ইসলাম-ই সবচেয়ে এগিয়ে। দীর্ঘমেয়াদে জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে কোচ হিসেবে অনেকটা এগিয়ে যাবেন বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন রংপুর রাইডার্সের এই কোচ, ‘লম্বা সময়ের জন্য রাখলে, সুযোগ পেলে তো অবশ্যই ভালো হয়। এভাবেই তো দেশি কোচরা এগিয়ে যাবে, মানে শুরুতে সহকারী কোচ থাকবে এরপর মূল কোচ হবে। এই দায়িত্ব পেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ক্রিকেটারদের কীভাবে সামলাতে হয়, কী কাজ করতে হয়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার থাকে এগুলো শেখা হবে। সবসময় তো বিদেশি কোচের ওপর নির্ভর করার বিষয়... মানে নিজেদের কোচদেরও তো উন্নত করা বা তৈরি করতে হবে। সহকারী কোচ হিসেবে দেশিদের যে অভিজ্ঞতা হবে, সেটা তারা নিজেরা যখন দেশের দলগুলোর কোচ হবে সেখানে আন্তর্জাতিকের অভিজ্ঞতা কিন্তু কাজে লাগাতে পারবে।’
আসন্ন এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে রোহিত শর্মাদের পাঠাতে চায় না ভারত। টুর্নামেন্ট সরিয়ে নেওয়া হতে পারে সেখান থেকে। এমন ইঙ্গিত দিয়েছে বিসিসিআই ও এসিসি। যদিও সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে জয় শাহরা সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে বিশ্বকাপ পাকিস্তান বয়কট করবে বলে হুমকি দিয়েছে পিসিবি।
ভারত যদি এশিয়া কাপ খেলতে না আসে তা হলে তারাও বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে যাবে না। এমন ঘোষণা গত বছরই দিয়েছিলেন পিসিবির তৎকালিন চেয়ারম্যান রমিজ রাজা। এবার একই সুরে হুমকি দিলেন নাজাম শেঠিও।
প্রাক্তন প্রধানের সুরে বর্তমান চেয়ারম্যানের কণ্ঠে পুরনো হুমকি নতুন আসার খবর নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো।
বাহরাইনে এসিসির বৈঠক-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাতে দ্য নিউজ জানায়, পাকিস্তানের মাটিতে এশিয়া কাপ আয়োজনে সভায় কঠোর অবস্থান নেন পিসিবিপ্রধান। নাজাম শেঠি জয় শাহকে বলেন, ভারত ক্রিকেট দল পাকিস্তানে খেলতে না গেলে পাকিস্তানও ভারতে যাবে না। পিসিবি চেয়ারম্যানের এমন মন্তব্যে বিস্মিত হন বিসিসিআই সচিব, ‘শেঠির এমন অবস্থান জয় শাহর প্রত্যাশার বাইরে ছিল।’
প্রাথমিকভাবে সবকিছু ঠিকই ছিল। সূচি অনুযায়ী এ বছরের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে হবে এশিয়া কাপ। তবে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জয় শাহ গত অক্টোবরে ঘোষণা করেন, এশিয়া কাপ খেলতে পাকিস্তানে যাবে না ভারত। নিরপেক্ষ ভেন্যুতে এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হবে। তার পর থেকেই শুরু হয় বাকযুদ্ধ। সেটার সমাধান খুঁজতেই নাজাম শেঠির অনুরোধে বাহরাইনে এসিসির জরুরি সভা ডাকা হয়।
জয় শাহ ও নাজাম শেঠির এই বৈঠকের দিকে অনেকের চোখ ছিল। সেখানেই এশিয়া কাপে ভারত পাকিস্তানে না গেলে, পাকিস্তানও ভারতে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ বয়কটের হুমকি দেয়।
পিসিবি ভাবছে, পাকিস্তানের মাটিতে বহুপক্ষীয় টুর্নামেন্ট আয়োজনের জটিলতা এখনই সমাধা করে ফেলা উচিত। নয়তো ভবিষ্যতের জন্য বিপরীত দৃষ্টান্ত তৈরি হয়ে থাকবে।
ক্রিকেটপাকিস্তান জানিয়েছে, শনিবারের বৈঠকে কয়েকটি বিকল্প নিয়েও কথা বলেছে সদস্য দেশগুলো। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ভেন্যু বানানোর কথা আগেই বলে রেখেছে বিসিসিআই। নতুন করে এসেছে পার্শ্ববর্তী কাতারের নামও। আবার মধ্যপ্রাচ্য বিপুল ব্যয়ের কথা চিন্তা করে এশিয়া কাপ শ্রীলঙ্কায় সরিয়ে নেওয়ার কথাও বিবেচনায় আছে।
তবে টুর্নামেন্ট সরিয়ে নিতে হলে আগে পাকিস্তান সরকারের অনুমতি লাগবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন পিসিবিপ্রধান। আগামী এক মাসের মধ্যে এসিসির অন্য সদস্যদেশগুলোও নিজ নিজ সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবে বলে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিসিবিপ্রধান নাজাম শেঠি।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা খরচের হিসাব ধরে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৭২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে খরচের বেশিরভাগ অর্থ জোগাড়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ১৯ শতাংশ বাড়ানো হবে। আসছে জুনের প্রথমভাগে জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আগামী বাজেট হবে জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এখানে নেওয়া কোনো পদক্ষেপে যেন আওয়ামী লীগ সরকার সমালোচনার মুখে না পড়ে এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্টদের থাকছে বিশেষ নজর। এ ছাড়া রয়েছে অর্থনৈতিক সংকট। তাই সংকট ও নির্বাচন দুটোই মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে মন্ত্রণালয়ে মোটাদাগে একটি রূপরেখা পাঠানো হয়েছে। নতুন পরিকল্পনার পাশাপাশি গত তিন মেয়াদে সরকার কী কী উন্নয়ন করেছে আগামী বাজেট প্রস্তাবে তা মনে করিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি নীতিনির্ধারকদের উপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো আগামী বাজেটের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আর গত সপ্তাহে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি পাঠিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে হিসাব ধরে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রস্তাব প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছে তা কয়েক দফা খতিয়ে দেখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ-বিয়োগ করে আবারও অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার আগেও অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ডলার সংকটে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র বা এলসি খুলতে পারছেন না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পণ্যের দাম বাড়ছে। কাঁচামাল সংকটে বিপাকে শিল্প খাত। ব্যাংক খাতে অস্থিরতা। নতুন চাকরির সুসংবাদ নেই বললেই চলে। দফায় দফায় জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। খুব শিগগিরই এসব সংকট কেটে যাবে বলে মনে করছেন না অর্থনীতিবিদরা। অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ঋণদাতা সংস্থার কঠিন শর্তের বেড়াজালে আছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতেই আগামী অর্থবছরের বাজেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশি^ক অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবে তা আগামী বাজেটে স্পষ্ট করা হবে। দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট দূর করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনার কথাও বলা হবে। তবে শত সংকটের মধ্যেও আগামী বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী যতটা সুবিধা দেওয়া সম্ভব তা দিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষভাবে কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দিতে হিসাব কষা হচ্ছে।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানি রপ্তানি প্রায় বন্ধ। ব্যবসা-বাণিজ্যে সংকটকাল চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী বাজেটে আমাদের দাবি অনুযায়ী নগদ সহায়তা দিতে হবে। রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। কর অবকাশ ও কর অব্যাহতি বাড়াতে দিতে হবে।’
ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া সংস্কারের শর্ত মানার অঙ্গীকার করে সরকার ঋণ পেয়েছে। শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে ঋণের যেকোনো কিস্তি আটকে দিতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। পর্যায়ক্রমে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এসব সংস্কার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়ন করা হবে। আসছে বাজেটে শর্ত মানার চেষ্টা থাকবে। বিশেষভাবে অতীতের মতো ঢালাওভাবে কর অব্যাহতি দেওয়া হবে না। আর্থিক খাতের সংস্কারের কিছু ঘোষণা থাকবে। বিশেষভাবে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হবে। আইএমএফের সুপারিশে এরই মধ্যে ভ্যাট আইন চূড়ান্ত হয়েছে। আয়কর আইন মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন হয়েছে। শুল্ক আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। এ তিন আইন অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ের কৌশল নির্ধারণ করা হবে। আসছে বাজেটে টেকসই অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করার কথা বলা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছু উদ্যোগের কথা শোনানো হবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঋণদাতা সংস্থার শর্ত মানার কথা বলা হলেও সব আগামী বাজেটে একবারে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে অর্থনীতির গতি কমে যাবে।’
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে এনবিআর-বহির্ভূত খাত এবং এনবিআর খাতের জন্য মোট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৯ শতাংশ বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা হবে। এনবিআর এ লক্ষ্যমাত্রা কমানোর জোরালো আবেদন করেছে। কিন্তু তা আমলে আনেননি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রায় ৩৫ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) হিসেবে, ৩৪ শতাংশ বা ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা আয়কর হিসেবে এবং ৩১ শতাংশ বা বাকি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হিসেবে সংগ্রহ করার কথা বলা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রার কথা শুধু বললেই হবে না। কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা না থাকলে প্রতিবারের মতো ঘাটতি থাকবে। রাজস্ব ঘাটতি হলে অর্থনীতিতে আয় ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত।’
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য নির্ধারিত এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে এনবিআর উৎসে করের আওতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। সম্পদশালীদের ওপর নজর বাড়ানো হবে। শুধু বেশি সম্পদ থাকার কারণে অতিরিক্ত কর গুনতে হবে। সারচার্জ বহাল রাখা হবে। সুপারট্যাক্স গ্রুপকে উচ্চহারে গুনতে হবে কর। আগামী অর্থবছরেও অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুবিধা থাকবে। অর্থ পাচারোধে আইনের শাসন কঠোর করা হবে। অর্থ পাচার আটকাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হবে। করপোরেট কর কমানোর দাবি থাকলেও তা মানা হবে না। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় করমুক্ত আয় সীমা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করতে খোদ অর্থমন্ত্রী বললেও রাজস্ব আদায় কমে যাবে এমন যুক্তি দেখিয়ে এনবিআর রাজি নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে। কমানো হবে শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানি শুল্ক। ডলারের ওপর চাপ কমাতে বেশি ব্যবহৃত পণ্য আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হবে। বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমাতে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হবে। তৈরি পোশাক খাতের সব সুবিধা বহাল রাখা হবে। শিল্পের অন্যান্য খাতেও কতটা সুবিধা বাড়ানো যায় তা নিয়ে এনবিআর হিসাব করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া বাজেট প্রস্তুতিবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং ঘাটতি ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হতে পারে। আগামী অর্থবছরে জিডিপির ৬ শতাংশ ঘাটতি ধরে ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হতে পারে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হতে পারে বলে জানা যায়। ঋণদাতা সংস্থার কাছ থেকে ভর্তুকি কমানোর চাপ থাকলেও আগামীবার এ খাতে বেশি ব্যয় ধরা হতে পারে। এ খাতে ১ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হতে পারে। চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি ব্যয় আছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, গত সোমবার রাতে আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণদাতা সংস্থাটির কাছ থেকে বাংলাদেশ ছয় কিস্তিতে তিন বছরে ৪৭০ কোটি ডলার পাচ্ছে। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের দিন আইএমএফ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক নিয়ে পূর্বাভাস দেয়। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা হতে পারে ৭ দশমিক ১ শতাংশ।
এতে রিজার্ভ সম্পর্কে বলা হয়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমে দাঁড়াবে ৩ হাজার কোটি ডলার। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে বাড়বে এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।