
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আসা মোহাম্মদ জিয়া উদ্দিন (২৫) নামে এক যাত্রীর কাছ থেকে প্রায় ৩২টি সোনার বার উদ্ধার করেছে কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগ। প্যান্ট, জুতা এবং পায়ুপথে সোনার বারগুলো পাওয়া যায়। উদ্ধার করা সোনার দাম তিন কোটি টাকার বেশি। ৩২টি স্বর্ণের বারের ওজন ৩ কেজি ৭২৮ গ্রাম। স্বর্ণালঙ্কারসহ ৩ কেজি ৮২৭ গ্রাম।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ভোর ৬টা ১৮ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে দুবাই থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করেন ওই যাত্রী। তার বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ধলই ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের যুগ্ম পরিচালক সাইফুর রহমান জানান, কাস্টমসের গোয়েন্দা টিম ইমিগ্রেশন শেষ হওয়ার পর দুবাই ফেরত যাত্রী জিয়া উদ্দিনকে হেফাজতে নিয়ে তল্লাশি করে। প্রথমে তার প্যান্ট থেকে ১৫টি ও জুতার ভেতর থেকে ৮টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে পেটের ভেতরে করে আরও স্বর্ণের বার আনার কথা স্বীকার করেন জিয়া উদ্দিন। পরে পায়ুপথে আনা ৯টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তার শরীরে আরও ৯৯ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধে পতেঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে।
চট্টগ্রামে আজাদুর রহমান নামের এক যুবককে হত্যার ঘটনায় স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবদুল মান্নান খোকনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রোববার খুলনার পাইকগাছা থেকে আজাদ হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়ে ওই নেতার বাসায় অভিযানও চালিয়ছে গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিবির উপকমিশনার আলী হোসেন সোমবার (৫ জুন) রাত ৯টার দিকে দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আব্দুল মান্নান খোকনের বাসায় বসে খুনিরা আজাদকে হত্যার পরিকল্পনা করেছে বলে গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামি জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।আজাদ হত্যায় খোকনকে জিজ্ঞাসাবাদ করব। তার বাসায় গতকাল রাতে অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি (খোকন) ২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটনের ছোট ভাই।
গ্রেপ্তার দুই আসামি হলেন- হালিশহরের মো.আবুল হাসনাত রাজু (৩৪) ও পাহাড়তলী থানার পানিরকল এলাকার মো. ওসমান (৩৫)। মৃত্যুর আগে একটি ভিডিওতে হামলাকারী হিসেবে রাজু ও ওসমানের নাম বলে যান আজাদ। ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা আলী হোসেন বলেন, আজাদ হত্যার পর ওসমান ও রাজু খুলনা পালিয়ে গিয়েছিল। তারা সাতক্ষীরা হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। এর আগেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি সূত্র জানায়, নিহত আজাদুর রহমান এবং তার বড় ভাই মফিজুর রহমান নয়াবাজার মোড়ে একটি খালি জায়গার প্রহরী হিসেবে কাজ করতেন। ২৭ মে মধ্যরাতে ওই জায়গার গেটের সামনে প্রস্রাব করা নিয়ে টমি নামের এক যুবকের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয় মফিজের। বাগবিতণ্ডার পর টমি ও অন্যরা খোকনের বাসায় যান। সেখানে তারা বৈঠক করে আজাদকে খুনের পরিকল্পনা করেন। ভোরে টমি, ফাহিম, ওসমান ও রাজু মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আজাদের সঙ্গে ফের বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। এরপর মোটরসাইকেল থেকে নেমে টমি প্রথমে আজাদকে ছুরিকাঘাত করে, পরে ফাহিমসহ অন্যরা তাকে আঘাত করে। হত্যাকাণ্ডের পর টমির বাসায় গিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি দু’টি রেখে আসেন তারা। এরপর পরনের কাপড় পাল্টে সেগুলো ভিজিয়ে রাখেন। আজাদকে ছুরিকাঘাত করার পরে তারা আবার খোকনের বাসায় গিয়ে কিছু সময় অবস্থান করেন। পরে তারা একে একে সটকে পড়েন। গত ২৮ মে ভোরে চট্টগ্রাম নগরের পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া নয়াবাজার মুজিবুর রহমান প্লাজার সামনে খুন হন আজাদুর রহমান।
পরিবারের অভিযোগ, চাঁদা নিতে বাঁধা দেওয়ায় স্থানীয় কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটনের ছোট ভাইয়ের অনুসারীরা আজাদকে খুন করেছে। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরদিন রাঙ্গামাটি থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৭।
একদিনের মাথায় আরেকটি স্বর্ণের চালান ধরা পড়েছে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
সোমবার (৫ জুন) সকাল সাড়ে ৯টায় জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর যৌথভাবে চালানটি জব্দ করে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।
এর আগে, রোববার (৪ জুন) অভিনব কায়দায় স্বর্ণ পাচার করতে গিয়ে শুল্ক গোয়েন্দাদের হাতে আটক হন আবদুর রহমান সজন নামে ফেনীর এক যুবক। তার লাগেজ তল্লাশি করে স্বর্ণ দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরি দরজার ১২টি কবজা উদ্ধার করা হয়।
বিমানবন্দর সূত্র জানায়, আজ সোমবার টার্মিনালের আন্তর্জাতিক আগমনী কনভেয়ার বেল্টের কাছ থেকে যাত্রীবিহীন ১টি ব্যাগ থেকে আনুমানিক ৭৩৬ গ্রাম ওজনের ১২টি লম্বা দণ্ড আকৃতির স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ৬৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৯৬ টাকা।
ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় আজাদ খুনের মূল অভিযুক্ত আবুল হাসনাত রাজু (৩৪) ও ওসমানকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
রোববার (৪ জুন) খুলনার পাইকগাছা থানাধীন শোলাদানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কারখানার সামনে প্রস্রাব করা নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে গত ২৮ মে মধ্যরাতে হুমকি দিয়ে ভোরে পাহাড়তলী নয়াবাজার এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে আজাদকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় মারা যান আজাদ। তবে মৃত্যুর আগে রাজু ও ওসমান তাকে ছুরিকাঘাত করার কথা পরিবারকে জানিয়েছিলেন আজাদ। হত্যাকাণ্ডের পর গা ঢাকা দেন রাজু ও ওসমান।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর) আলী হোসেন জানান, গ্রেপ্তারের পর আজাদ খুনে ব্যবহৃত দুটি ছোরা উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে রাজু ও ওসমান গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তাদের জানান, নিহত আজাদের সঙ্গে নয়াবাজার বিশ্বরোড এলাকায় চাঁদা আদায়ের বিষয় নিয়ে তাদের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এর জেরে আজাদকে অপরাপর সহযোগিদের নিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে মারাত্মক আহত করে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আজাদ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিদেশিদের কাছে রোজ রোজ নালিশ করা ছাড়া বিএনপির কোন কাজ নেই। তারা বিদেশে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে শুধু নালিশ করেন। কিন্তু বিশ্বে ক্রমাগত সরকারের ভাবমূর্তি উন্নত হয়েছে।
রোববার (০৪ জুন) দুপুরে শহরের নওজোয়ান মাঠে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আব্দুল জলিলের স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগ এই স্মরণ সভার আয়োজন করে।
প্রয়াত আব্দুল জলিলের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আব্দুল জলিল জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নওগাঁকে, নওগাঁর মানুষকে ভালোবেসে গেছেন। নওগাঁর উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তার মত কর্মবীর ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া কঠিন। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত। দুর্নীতি ও অন্যায়ের সাথে তিনি আপোষ করেননি। দুঃসময়ে তিনি আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে ধরে রেখেছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা জনগণের কোন সন্ধান পাননা, অথচ আজরাইলের খোঁজ পেলেন কিভাবে? মির্জা ফখরুল প্রতি রাতে শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখেন, দিবা স্বপ্নও দেখেন। তিনি স্বপন দেখেন ক্ষমতার, দেখেন ময়ূর সিংহাসনের।
তিনি বলেন, বিগত ডিসেম্বরে থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি। আগামী জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্তও পারবেন না। দেখতে দেখতে চলে গেছে ১৪ বছর, আন্দোলন হবে কোন বছর। মরা গাঙ্গে কখনও জোয়ার আসে না।
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পর বিগত ৪৮ বছরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মত দেশের গরিব মানুষের আপনজন আর কেউ হতে পারেননি। এই ৪৮ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মত সৎ, পরিশ্রমী, দক্ষ নেতা আর পাওয়া যায়নি। তার মত দেশ বিদেশ থেকে এতো সম্মান আর প্রশংসা বাংলাদেশের আর কোন প্রধানমন্ত্রী অর্জন করতে পারেননি।
দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, কেবল আমাদের দেশে নয়, গোটা বিশ্বের একই চিত্র। বিশ্বে নানা প্রতিকুলতার কারনে, নানা ইস্যুতে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারনে গোটা বিশ্বে মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। যার মূল্য বাংলাদেশকেও দিতে হচ্ছে। তবে এ পরিস্থিতি বেশী দিন থাকবে না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও দেশের মানুষের কথা সব সময় ভাবেন, অর্থনীতির কথা ভাবেন, মানুষের কল্যাণের কথা ভাবেন। পুরো সময় কিভাবে মানুষের কিভাবে দেশের উন্নয়ন করা যায় সেই চিন্তায় মগ্ন থাকেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, খাদ্যমন্ত্রী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার, ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম ও আনোয়ার হোসেন হেলাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাজিব বৈদ্য নামে এক দালালকে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ রবিবার সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের ৩৩ নম্বর গাইনি ওয়ার্ডের অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে তাকে আটক করেন ওয়ার্ড মাস্টার মো. কামরুজ্জামান।
তবে কামরুজ্জামানের অভিযোগ, রাজিবের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়েরের আগেই ৮৮ ধারায় (সন্দেহজনক ঘোরাফেরা) চালান দিয়ে তাকে আদালতে চালান দিয়েছে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।
তিনি জানান, রাজীব ও শুভ দাস নামে দুই দালালকে এর আগেও আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আইনের ফাঁকফোকরে ছাড়া পেয়ে ফের তারা গাইনী ওয়ার্ডে ঢুকে রোগীর ওষুধের স্লিপ নিয়ে বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিন মজুমদার জানান, আসামিকে আটকের পর দুপুর ১২টার আগেই সংশ্লিষ্ট আদালতে উপস্থাপন করতে হয়। আটক রাজিবকে বেলা ১টার দিকে চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের কাছে সোপর্দ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে ওয়ার্ড মাস্টার থানায় আসেন বেলা ২টার দিকে।
তিনি বলেন, আর এ সময়ে মামলা রেকর্ড করে উপস্থাপন করলে আদালত আসামি গ্রহণ না করে ফেরত দেন। তা ছাড়া চমেক পরিচালকের সঙ্গে আলাপ করে রাজিবের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
রাজিব বৈদ্যর গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। চমেক হাসপাতালের বাইরে ‘একুশে ফার্মেসি’নামে একটি ওষুধের দোকানের হয়ে দালালি করেন তিনি। বক্তব্য জানতে রবিবার দুপুরে ফোন করলে চমেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নুরুল আলম আশেক সাড়া দেননি।
জানা যায়, চমেকের ৩২ ও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড ঘিরেই দালালদের তৎপরতা বেশি দেখা যায়। দলালদের চক্রে আছেন চমেকের নার্স, চতুর্থ শ্রেণির স্টাফ এবং কিছু আনসার সদস্য। দীর্ঘ ছয় মাসের চেষ্টায় গত ২৭ এপ্রিল ‘দালাল’ চক্রের সদস্য রাজিব বৈদ্য, শুভ দাশ, সজল চৌধুরী এবং তুফানকে আটক করেছিল চমেক প্রশাসন।
তারা চমেকের বাইরের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনা ও পরীক্ষা করানোসহ বিভিন্নভাবে রোগীর স্বজনদের হয়রানি করেন।
লিওনেল মেসি ঘোষণা দিলেন, ‘আমি ইন্টার মিয়ামিতে যাচ্ছি।’
রাতে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে এ ঘোষণা দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
ডারিও স্পোর্টকে তিনি জানান, ‘আমার ইউরোপের আরেক ক্লাব থেকে প্রস্তাব ছিল। কিন্তু ওই প্রস্তাব দেখিওনি, কারণ আমি ইউরোপে খেললে বার্সেলোনায় খেলতে চেয়েছে। বিশ্বকাপ জেতার এবং বার্সাতে না যেতে পারায়, এখন সময় যুক্তরাষ্ট্র লিগে খেলার এবং ভিন্নাভাবে ফুটবলকে উপভোগ করার। তবে দায়িত্ব থাকবে একই এবং আকাঙ্খা থাকবে জেতার এবং অবশ্যই ভালো করার। তবে আরো শান্তিপূর্ণভাবে।’
মেসি জানান, ‘বুসকেটস আর জর্ডি আলবার সাথে যোগাযোগ ছিল, কখনো তাদের সাথে একই জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে কথা হয়নি। আমি আমার সিদ্ধান্ত নিজে নিয়েছি।’
শৈশবের ক্লাব বার্সেলোনা থেকে মনের কষ্ট নিয়েই ২০২১ সালে স্পেন ছেড়ে ফ্রান্সের পিএসজিতে যোগ দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। দু'বছর পর আবার বার্সেলোনায় ফিরতে চেয়েছিলেন খুব করে। তার জন্য বাধা হয়ে দাড়ানো লা ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে'র অনুমোদনও দিয়েছিল লিগা কর্তৃপক্ষ। মেসি চাচ্ছিলেন আগের বার তাকে যেভাবে চলে যেতে হয়েছিল বার্সেলোনা ছেড়ে, সেটা যেন না হয় পরে।
দুদিন ধরে এ নিয়ে কথাবার্তা হলেও বার্সেলোনা সেই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। মেসির কাছে ছিল দুটি অপশন- সৌদি ক্লাব আল-হিলালের দুবছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব গ্রহণ করা নয়তো মেজর লিগ সকারের ক্লাব ইন্টার মিয়ামির প্রস্তাব গ্রহণ করা। আল হিলালকে এক বছরের জন্য অপেক্ষায় থাকবে বলেছিলেন মেসি দুদিন আগে। বাকি ইন্টার মিয়ার প্রস্তাব। সেটাই গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রে ক্লাব ফুটবল খেলতে যাচ্ছেন।
মেসির সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি হচ্ছে ইন্টার মায়ামির। প্রতিবছর শেষ মেসি ক্লাব ছেড়ে দিতে পারবেন, না দিলে সয়ংক্রিয় ভাবে তিনি পরের বছর খেলবেন। বছর প্রতি ৫৪ লাখ ডলার পারিশ্রমিক পাবেন তিনি।
এবার অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ।
বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২২-২৩ হিসাববছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে লভ্যাংশের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ১ জুন কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে পণ্য বিক্রি করে আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। উৎপাদন, পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় সমন্বয়ের পর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এতে করে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা (ইপিএস) দাঁড়ায় ৮৭ পয়সার কিছুটা বেশি।
তবে এফআরসির বিধান অনুযায়ী, শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে নতুন ইস্যু করা শেয়ার বিবেচনায় নয় মাসে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৫৮ পয়সা। এই আয় থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরে মৃতপ্রায় এমারেল্ড। উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোম্পানিটির প্রধান উদ্যোক্তা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের। এ কারণে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে টানা পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। মিনোরির তত্ত্বাবধানে এখন লভ্যাংশ দেওয়া শুরু করেছে কোম্পানিটি।
মিনোরির নতুন বিনিয়োগের বিপরীতে গত ১০ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের আরও ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে এসইসি, যা মিনোরি বাংলাদেশের নামে ইস্যু করা হবে। এর আগে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ শেয়ার কেনে মিনোরি বাংলাদেশ। নতুন শেয়ার যুক্ত হলে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় উন্নীত হবে।
বুরুশিয়া ডর্টমুন্ডে দারুণ একটা মৌসুম কাটিয়েছেন জুড বেলিংহাম। অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে নজর কেড়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের। আর তাই তো নতুন মৌসুম শুরু করবেন এই ক্লাবের জার্সি গায়ে। ইংল্যান্ডের এই মিডফিল্ডারকে দলে নিতে ১০৩ মিলিয়ন ইউরো খরচ করতে রাজি হয়েছে ব্ল্যাঙ্কোরা।
এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে ডর্টমুন্ড। তারা জানিয়েছে, স্প্যানিশ দলটি ১০৩ মিলিয়ন ইউরো দিতে সম্মত হয়েছে। যেখানে আনুসাঙ্গিক আরও অনেক বিষয় জড়িয়ে। যদি সেটা অর্জন করা সম্ভব হয়, তবে চুক্তিটি ১৩৩.৯ মিলিয়ন ইউরোতে পৌঁছতে পারে।
২০২০ সালের জুলাইয়ে বার্মিংহাম সিটি থেকে ডর্টমুন্ডে যোগ দেন ১৯ বছর বয়সী বেলিংহাম। কাতার বিশ্বকাপেও ইংলিশদের সেরা পারফরমার ছিলেন তিনি। ম্যানচেস্টার সিটি ও লিভারপুল উভয় ক্লাবই তাকে পাওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত মাদ্রিদে পাড়ি দিচ্ছেন।
এই চুক্তির মাধ্যমে বেলিংহামে বিশ্বের তৃতীয় দামি তরুণ ফুটবলার হতে চলেছেন। ২০১৯ সালে ইডেন হ্যাজার্ড ১১৫ মিলিয়ন ইউরোতে চেলসি থেকে রিয়ালে পাড়ি জমিয়েছিলেন।
বেলিংহাম এই মৌসুমে তার ক্লাবের হয়ে ৪২ ম্যাচ খেলে ১৪ গোল করেছেন। সাতটি গোল তিনি করিয়েছেন।
ফুটবল কিংবদন্তী পেলের গোটা জীবন কেটেছে ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসে। বিশ্ব ফুটবলে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে যিনি আলো ছড়িয়েছেন, তিনি ক্যারিয়ারের সেরা সময় যাননি ইউরোপের কোনো ক্লাবে।
তবে ১৯৭৪ সালে ৩৪ বছর বয়সে সান্তোসের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানেন ফুটবল সম্রাট। পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে।
১৯৭৫ সালে নিউ ইয়র্ক কসমসে যোগ দেন। সেই বছরের ১৫ জুন ক্লাবটিতে নাম লিখিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসেন।
যে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষজন একটা সময় ফুটবল খেলাই দেখতে যেতেন না, পেলে যোগ দেওয়ার পর ৮০ হাজার ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। সেদিনই পেলে নিউইয়র্ক জয় করেছিলেন।
পেলে কসমসে যাওয়ার ১৫ বছর পর ফের বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টুর্নামেন্টের অভিষেক আসরের তৃতীয় স্থান অর্জনকারী যুক্তরাষ্ট্র। সেই থেকে শুধুমাত্র ২০১৮ সাল ছাড়া প্রতিটি বিশ্বকাপেই খেলেছে তারা। ২০০২ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন। কাতার বিশ্বকাপেও শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিয়ে হয়েছে ১৪তম দল হয়ে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।