
নির্বাচনের আর তিন দিন বাকি। বরিশালে দিন-রাত প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরের ফরেস্টার বাড়ি এলাকায় গণসংযোগ চালানোর সময় প্রচারপত্র বিলি করেন বরিশাল-৫ (সদর) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম। এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী দল। বিএনপিকে ভোট দিলে বাংলাদেশ সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তাই বিএনপিকে ভোট না দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ৩০ ডিসেম্বর সারা দিন নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় নগরীর বিসিক শিল্প এলাকায় গণসংযোগ করেন বরিশাল-৫ আসনের বিএনপি প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। তিনি বরিশালের উন্নয়ন, ‘অবরুদ্ধ গণতন্ত্র’ ও বেগম জিয়ার মুক্তি, আইনের শাসন কায়েম, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
এ সময় সরোয়ার অভিযোগ করে বলেন, ‘গত কয়েক দিনে বরিশালে বিএনপির ৭০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মনে হয়েছিল সেনাবাহিনী মোতায়েন হলে গণগ্রেপ্তার বন্ধ হবে। কিন্তু সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর গতকালও ১০ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। কোনোভাবেই গণগ্রেপ্তার বন্ধ হচ্ছে না। ক্ষমতাসীনরা বিএনপির একাধিক নির্বাচনী কার্যালয় ও প্রচার মাইক ভাঙচুর করেছে। তিনি গণগ্রেপ্তার এবং নির্যাতন বন্ধ করে সবাইকে ভোটের মাঠে থাকার সুযোগ সৃষ্টির জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
বরিশাল-৬ আসনের (বাকেরগঞ্জ) বাকেরগঞ্জ উপজেলার কামারখালী হাই স্কুল মাঠে গতকাল দুপুরে উঠান বৈঠকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ সহকারী এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার বিগত দিনের ভুলভ্রান্তি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে ৩০ ডিসেম্বর তার সহধর্মিনী নাসরিন জাহান রতœা আমীনকে লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
পুরান ঢাকার ওয়ারী, গেণ্ডারিয়া, সূত্রাপুর এবং কোতোয়ালি ও বংশাল এলাকার কিছু অংশ নিয়ে ঢাকা-৬ আসন। এটি ঢাকার একমাত্র আসন যেখানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সরাসরি কোনো প্রার্থী নেই। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার দুর্গ হিসেবে পরিচিত এই আসনে তার অনুপস্থিতিতে ছেলের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও শেষপর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের গণফোরামকে আসনটি ছেড়ে দেয় বিএনপি। অন্যদিকে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীর ধানের শীষ প্রতীকের বিপরীতে লাঙ্গল প্রতীকে লড়বেন জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।
বিভিন্ন দলের মোট আটজন প্রার্থী রয়েছেন আসনটিতে। কাজী ফিরোজ রশীদ প্রচারে নেমেছেন সেই শুরু থেকেই। পোস্টারে, গণসংযোগে এবং মাইকিংয়ে সর্বত্রই লাঙ্গলের উপস্থিতি। ধোলাইখাল, জনসন রোড, বাংলাবাজার, ওয়ারী, নবাবপুর রোড এলাকা ঘুরে শুধু লাঙ্গলের পোস্টারই চোখে পড়েছে। গেণ্ডারিয়া রোডে সিপিবির কাস্তে ও ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখার কিছু পোস্টার চোখে পড়লেও ধানের শীষের পোস্টার কোথাও চোখে পড়েনি।
পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং পুলিশের সহযোগিতায় তার ওপর একের পর এক হামলার অভিযোগ করেছেন অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘হামলার সময় পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখেছে। আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং হামলার শিকারদেরই নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করেছে। সহযোগিতা চাইলে তারা তামাশা করেছে।’ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সহযোগিতাও পাচ্ছেন না তিনি। অন্যদিকে ফিরোজ রশীদের পক্ষে প্রচারে সরব রয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাইকিং করে গানে গানে লাঙ্গলের প্রচার চলছে। বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী ববি হাজ্জাজকে দেখা গেছে তার হারিকেন প্রতীকের পক্ষে বংশাল এলাকায় মোটরসাইকেল, ট্রাক ও রিকশাযোগে বড় শোডাউন করতে। ধানের শীষের কোনো প্রচার চোখে না পড়লেও বিকেলে নয়াবাজার এলাকায় প্রচার চালানোর কথা দেশ রূপান্তরকে জানান সুব্রত চৌধুরী। স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, লাঙ্গল ছাড়া অন্য মার্কার পোস্টার বা প্রচার তারা দেখেননি। ধোলাইখাল এলাকার চা-বিক্রেতা মাহফুজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লাঙ্গল ছাড়া অন্য কোনো মার্কায় কেউ দাঁড়াইছে কি না জানি না।’ ওয়ারী এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা প্রণব কুমার সাহা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কোনো কনটেস্ট তো দেখি না। এদিকে লাঙ্গল আর ওদিকে শুধু নৌকা। অন্য কাউকে তো দেখি না। কিসের ভোট? কোনো কনটেস্ট নাই।’
ঢাকা-১৮ আসনে নৌকা প্রতীকের জোর প্রচার চালছে। তবে ধানের শীষের প্রচারের ছিটেফোঁটা নেই। আসনটিতে পরপর দুবার নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। এবারও তিনি জিতে হ্যাটট্রিক সাংসদ হতে চান। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ধানের শীষের শহীদউদ্দিন মাহমুদ দৃশ্যত প্রচারে নেই। ফলে নির্বাচনের মাঠ অতটা প্রতিদ্বন্দ্বিপূর্ণ নয় বলে ভোটাররা জানিয়েছেন।
এই আসনে প্রচারে কিছুটা সক্রিয় ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) আম প্রতীকের মাসুম বিল্লাহ। ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রার্থী টেলিভিশন প্রতীকের আতিকুর রহমান নাজিম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাতপাখা প্রতীকের আলহাজ আনোয়ার হোসেন।
ঢাকা-১৮ আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১, ১৭, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং উত্তরখান, দক্ষিণখান, খিলক্ষেত, তুরাগসহ উত্তরা এলাকা নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৭১৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৫৮ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৬৯ হাজার ৫৫৫ জন।
গত সোমবার বিমানবন্দর, খিলক্ষেত ও উত্তরা ৫, ৬, ৭ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোথাও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপনের কোনো পোস্টার-ব্যানার নেই। এমনকি প্রচার চালাতেও দেখা যায়নি তার কোনো কর্মী-সমর্থককে। তবে এ সময় চোখে পড়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী আলহাজ আনোয়ার হোসেনের দুয়েকটি মিছিল ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও এই আসনে প্রচারে ধানের শীষের প্রার্থী পিছিয়ে রয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় ভোটাররা। তবে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থকদের দাবি হামলার ভয়ে মাঠে নামতে পারছেন না তারা।
জানতে চাইলে তুরাগ থানার শুক্রভাঙ্গা এলাকার ভোটার নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঝুলছে সাহারা খাতুনের পোস্টার। বিএনপি প্রার্থীর নাম শুনিনি এখনো। শুনেছি জেএসডির এক নেতা ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন।
উত্তরা এলাকার তরুণ ভোটার রাফিউল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে জানান, ‘এ বছর প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেব। পুরো এলাকাজুড়েই আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহারা খাতুনের প্রচার চলছে। তবে নতুন ভোটার হিসেবে আমার একটাই প্রত্যাশাÑ যে সরকার ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা যেন দেশ থেকে বেকারত্ব সমস্যা দূর করেন।’
উত্তরখানের কাঁচাবাজারের দোকানি হানিফ বলেন, ‘বিগত সময়ে এই এলাকার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আগে একটু বৃষ্টি হলেই এই এলাকার সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতো। এখন সেটি হয় না, কারণ বড় বড় ড্রেন তৈরি করে উঁচু রাস্তা করা হয়েছে। তবে এ আসনের প্রার্থী কে আমি জানি না। কারো প্রচার দেখতে পারছি না এখনো।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপনের মিডিয়া সেলের দায়িত্বরত ফিরোজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হামলা-মামলার ভয়ে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী গণসংযোগে অংশগ্রহণ করতে পারছে না। ধানের শীষের পোস্টার লাগানোর পর সেগুলো ছিঁড়ে ফেলছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মীরা। আপাতত জেএসডির কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিয়ে গণসংযোগ করছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী।’
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে ভোটের লড়াইয়ে তৃতীয়বারের মতো মুখোমুখি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এবং রাজশাহীর সাবেক মেয়র বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। এরমধ্যে জমে উঠেছে এ দুই হেভিওয়েটের লড়াই। প্রচারে অন্য আসনে নৌকা প্রতীক এগিয়ে থাকলেও এই আসনে নৌকা এবং ধানের শীষ সমানে সমান।
পরপর দু’বার মহাজোট সমর্থিত এমপি বাদশা এবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট করছেন। আর ধানের শীষ নিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তিনবারের মেয়র এবং একবারের এমপি মিনু। ফলে এই আসনে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে শহরের এই আসনটি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। প্রভাবশালী দুই নেতার মধ্যে লড়াইটাও বেশ জমজমাট হবে বলেই মনে করছেন রাজশাহীর সাধারণ ভোটার ও সমর্থকরা। এর আগের দুই নির্বাচনেও তাদের মধ্যে জমেছিল লড়াই।
বরাবরই আসনটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে ২০০৮ সাল থেকে জোটগতভাবে দু’বার সংসদ সদস্য এবং ২০০৮ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় আসনটিতে শক্ত অবস্থানে এখন আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোট। এরমধ্যে ভোটযুদ্ধে মহাজোট মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে মাঠে সিটি মেয়র মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি লিটনসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সাবেক মেয়র ও মহানগর বিএনপি সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ দলটির নেতাকর্মীরা।
বাদশা আর মিনু সর্বপ্রথম মুখোমুখি হন ২০০২ সালের রাসিক নির্বাচনে। সেবার মিনুর কাছে হেরে যান তিনি। এরপরে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বী হন তারা। কারাগারে থেকে ভোটে লড়া মিনু সেবার বাদশার কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয়বার জোটের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন বাদশা। এবারও এ আসনে নৌকার কাণ্ডারি তিনি। রাসিকের তিনবারে ১৭ বছর মেয়র ছিলেন মিজানুর রহমান মিনু। পাশাপাশি ২০০১ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে দলটির যুগ্ম মহাসচিব ও রাজশাহী নগরের সভাপতি ছিলেন তিনি।
‘আমাকে একা ভোট দিয়েন, ভাই। আমি আপনাদেরই ছেলে। ৩০ ডিসেম্বর আমাকে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেন।’ গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের হাজীপাড়ায় এক ভোটারের উদ্দেশে কথাগুলো বলছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আফছারুল আমিন।
জবাবে সাইফুল্লাহ নামে ওই ভোটার আফছারুলকে বলেন, ‘চিন্তা ন গইজ্জন, নৌকাত ভোট দিয়ুম (চিন্তা করবেন না, নৌকায় ভোট দেব)।’ কথাগুলো শোনার পর প্রার্থী আফছারুল আমিন সাইফুল্লাহকে জড়িয়ে ধরে আরো বলেন, ‘সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে এই এলাকা ও দেশ আরো এগিয়ে যাবে। তাই সবাইকে বলবেন, যাতে নৌকায় ভোট দেয়।’
গতকাল আফছারুল আমিন নগরের ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডের টিঅ্যান্ডটি কলোনি, মৌলভীপাড়া, দাইয়াপাড়া, হাজীপাড়া, মোল্লাপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন। ওই সময় তার সমর্থকদের নৌকার লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায়। ওই এলাকাগুলোতে আফছারুল আমিনের অনেক পোস্টার ও ব্যানার দড়িতে ঝোলানো দেখা গেছে।
শেখ মুজিব রোড এলাকায় গণসংযোগের বহর পৌঁছালে এক ভোটারকে আফছারুল আমিন সালাম দেন। ওই সময় ভোটার বলে ওঠেন, ‘আমাদের এলাকার রোড-ঘাটগুলো আরেকটু উন্নত করতে হবে। আপনার কাছে সেই আশ্বাস চাই।’ জবাবে আফছারুল আমিন বলেন, ‘আরেকবার সুযোগ দিন, অবশ্যই করব।’
গণসংযোগকালে ২৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. জাকারিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আফছারুল আমিন ভাই এলাকার জন্য অনেক কিছু করেছেন। বিশেষ করে এলাকার অবকাঠামো, সড়ক সংস্কার ও শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করেছেন। অনেক বেকার যুবককে চাকরি দিয়েছেন। তাই এলাকার মানুষ উনাকে জয়যুক্ত করবেন।’
আফছারুল আমিন বলেন, ‘গত ১০ বছরে শেখ হাসিনা শুধু চট্টগ্রাম-১০ সংসদীয় আসন নয়, পুরো দেশটাকেই উন্নয়নের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। উন্নয়ন হয়েছে বলেই এলাকায় এলাকায় গণসংযোগে গেলে সবাই নৌকাকে সমর্থন দিচ্ছেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৫ হাজার ৩০০ ইয়াবাসহ পুলিশের এক কনস্টেবল আটক হয়েছে। আটক শিহাব রায় কক্সবাজার জেলায় কর্মরত। এয়ারপোর্ট আর্মড ব্যাটালিয়নের সিনিয়র এএসপি তারেক দেশ রূপান্তরকে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিমানবন্দর অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের ভেতর থেকে তাকে আটক করে কাস্টমস। পরে তার প্যান্টের বেল্টের ভেতর থেকে ৫ হাজার ৩০০ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, শিহাব সড়ক পথে কক্সবাজার থেকে চটগ্রামে আসে। পরে রিজেন্ট এয়ারে করে ঢাকায় পৌঁছায়। তাকে বিমানবন্দর থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে বিকেলে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল। আজ শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনা মো. হাশিম।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি শ্রমবাজারের জটিলতা নিয়ে আলাপ করবেন। কিভাবে দেশটিতে আমরা সহজে কর্মী পাঠাতে পারি; সেগুলো আলোচনায় উঠে আসবে। আমাদেরও কিছু প্রস্তাব রয়েছে। আমাদের কর্মীদের স্বার্থ আগে আমরা চাই, সবার জন্য বাজার খুলে দেওয়া হোক। নিয়োগকর্তার পছন্দমতো রিক্রুটিং এজেন্সি নিয়োগ— এটা আমরা চাই না। অভিবাসন ব্যয়
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার গত কয়েক বছর ধরে অস্থির। দেশটিতে প্রত্যাশিত শ্রমিক পাঠাতে পারছে না বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারটির জটিলতা নিরসনে আলোচনা করতে সংক্ষিপ্ত সফরে নেপাল হয়ে ঢাকায় আসছেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
তার সফরে শ্রমবাজারটি গতিশীল করতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পরিবর্তন, অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় কমানোসহ দেশের সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রস্তাব দেবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ২৪ ঘণ্টার সফরে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থার সঙ্গেও একটি বৈঠক করবেন।
'পাঠান' মুক্তির আগে থেকেই অনুরাগীদের সঙ্গে শাহরুখের যোগাযোগের একটাই মাধ্যম, টুইটার। শনিবার ফের টুইটারে 'আস্ক এসআরকে' সেশনে ধরা দিলেন শাহরুখ। হালকা মেজাজে, খোলামেলা আড্ডায় মাতলেন অনুরাগীদের সঙ্গে। অনুরাগীদের প্রশ্ন উত্তর দিলেন। সেখানেই একজন টুইটার ব্যবহারকারীর উপদেশ- বয়স অনুযায়ী চরিত্রে অভিনয়ের করার। পাল্টা জবাব দেন শাহরুখও। বলেন, 'তিনি হিরো ছিলেন, আছেন, থাকবেন'।
অনুরাগীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই ট্রোল করার লোকের সংখ্যাও কম নয় শাহরুখের সোশালে। বছর সাতান্নর 'তরুণ' এই অভিনেতাকে একজনের প্রশ্ন, 'আপনি কি এভাবেই হিরোর চরিত্রেই অভিনয় করবেন, নাকি কোনো দিন নায়ক-নায়িকার বাবার চরিত্র করার পরিকল্পনাও রয়েছে?' তাতে শাহরুখ যা জবাব দিয়েছেন, তা রীতিমত ছড়িয়ে পড়েছে সোশালে।
এমনিতেই রসিক মানুষ শাহরুখ। তবে কোন কথায় কাকে কী উত্তর দেবেন, তা ভালোই জানা তার। বাদশাহ লেখেন, 'তুই বাপ হ… আমি হিরোর চরিত্রেই ঠিক আছি।'
শনিবারের 'আস্ক এসআরক'-এ সেশনে, শাহরুখের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'পাঠান'-এর মোট আয়ের পরিসংখ্যান। তাকেও ফেরাননি শাহরুখ। উত্তর দিয়ে লেখেন, 'ভালোবাসা ৫ হাজার কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে, ৩ হাজার কোটি প্রশংসা, ৩২৫০ কোটি হাগ, ২০০০ কোটি হাসি এখনও গণণা চলছে। তোমার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কী বলছেন?'
'পাঠান' ঘিরে উন্মাদনা নজিরবিহীন। প্রেক্ষাগৃহের বাইরে এই ছবি দেখার ঢল। শাহরুখ অভিনীত ছবিটি লম্বা রেসের ঘোড়া, বলেছেন সিনেমা বিশেষজ্ঞরা। ৪ বছর পর শাহরুখ পর্দায় ফিরেছেন বলেই শুধু নয়, ৭ দিনে বক্স অফিসে ৭০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে 'পাঠান', যা বলিউডে বছরের সেরা ব্লকবাস্টার হিসাবে গণ্য হতে চলেছে।
দুঃসময় পিছু ছাড়ছে না লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগে টানা তিন ম্যাচে জয়হীন থেকে মাঠে নেমেছিল তারা। ভাঙতে চেয়েছিল ব্যর্থতার বৃত্ত। কিন্তু পারেনি, উল্টো উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সের ধরাশায়ী হয়েছে তারা। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দল হেরে গেছে বড় ব্যবধানে।
নিজেদের মাঠে শনিবার ৩-০ গোলে জিতেছে উলভস। লিভারপুলের বিপক্ষে লিগে আগের ১১ ম্যাচে হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছে তারা।
শুরুর ১২ মিনিটে দুই গোল হজম করে দিশেহারা লিভারপুল ঘুরে দাঁড়ানোর পথই খুঁজে পায়নি। দ্বিতীয়ার্ধে হজম করেছে আরও একটি গোল। তার আগেই ছিটকে যায় ম্যাচ থেকে। দারুণ জয়ে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন উলভসের ফুটবলাররা।
শুরু থেকে একের পর এক আক্রমণে লিভারপুলের রক্ষণ কাঁপাতে থাকে উলভস। দলটির সমর্থকরা আনন্দে মেতে ওঠার উপলক্ষ পেয়ে যায় পঞ্চম মিনিটে। আত্মঘাতী গোল করে লিভারপুল। বাইলাইনের কাছাকাছি গিয়ে হাং হি-চান শট নেওয়ার পরিস্থিতি না দেখে তিনি বক্সে বাড়ান বল, জোয়েল মাতিপের পায়ে লেগে বল পোস্ট ছুঁয়ে গোললাইন পেরিয়ে যায়। আলিসনের প্রাণপণ চেষ্টা যায় বিফলে।
দ্বাদশ মিনিটে আবারও গোল হজম করে বসে লিগে ধুঁকতে থাকা লিভারপুল। ইংলিশ ডিফেন্ডার ক্রেইগ ডসনের পায়ের জোরাল শটে বল খুঁজে নেয় জাল। উলভসের হয়ে অভিষেকেই গোল পেয়ে যান তিনি। ২-০ গোলের ব্যবধান নিয়ে বিরতিতে যায় উলভস।
বিরতির পরও চলে আক্রমণ আর পালটা আক্রমণ। ৭১তম মিনিটে মাঝমাঠে জো গোমেজ ও স্তেফান বাইচেতিস আটকাতে পারেননি জোয়াও মৌতিনিয়োকে। এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডারের পাস ধরে বক্সে আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান আদামা ত্রাওরো। নিখুঁত টোকায় বাকি কাজ সারেন রুবেন নেভেস। ম্যাচের ভাগ্যও লেখা হয়ে যায় অনেকটাই।
এই হারে লিগ টেবিলে সেরা চারে থাকার পথটা আরও কঠিন হয়ে গেল লিভারপুলের। ২০ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দশম স্থানে আছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। তাদের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে চার নম্বরে নিউক্যাসল ইউনাইটেড। ২১ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে উলভস।
ছবি মুক্তির ১০ দিন পার। এখনও বক্স অফিসে 'পাঠান' রাজ। শুধু দেশের মাটিতেই নয়, বিদেশেও অব্যাহত 'পাঠান' ঝড়। বিশ্বজুড়ে ৭০০ কোটির বেশি ব্যবসা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছে শাহরুখ খানের এই ছবি। এমনকি, ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানেও 'পাঠান' জ্বরে ভুগছেন আমজনতা। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সে দেশে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হলো 'পাঠান'। খালি রইল না প্রেক্ষাগৃহের একটি আসনও, হাউসফুল সেই শো।
অন্য ভারতীয় ছবির মতোই পাকিস্তানে মুক্তির ছাড়পত্র পায়নি সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত ছবি 'পাঠান'। তবে সে দেশের সিন্ধ সেন্সর বোর্ডের সেই নিষেধাজ্ঞাকে একপ্রকার বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শন করল শাহরুখের ছবি। কানায় কানায় ভর্তি প্রেক্ষাগৃহ দেখল রুপালি পর্দায় 'বাদশাহ ম্যাজিক'।
পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকার টিকিটেও হাউসফুল 'পাঠান'-এর শো। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বেআইনিভাবেই জোগাড় করে দেখানো হলো 'ওয়াইআরএফ স্পাই ইউনিভার্স'-এর এই ছবি।
পাকিস্তানের 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট' নামক এক সংস্থা আয়োজন করে 'পাঠান' ছবির প্রদর্শনের। ছবির টিকিটমূল্য রাখা হয় পাকিস্তানি মুদ্রায় ৯০০ টাকা। তাতেই ছবির টিকিট পাওয়ার জন্য কাউন্টারের বাইরে লম্বা লাইন পড়ে সিনেপ্রেমীদের। অল্প সময়ের মধ্যেই শো হাউসফুল ঘোষণা করে দেওয়া হয়। তবে পাকিস্তানি সেন্সর বোর্ডের কানে এ খবর যেতেই নড়েচড়ে বসে তারা। 'ফায়ারওয়ার্ক ইভেন্ট'কে অবিলম্বে 'পাঠান'-এর সব প্রদর্শন বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বিবৃতি জারি করে সিন্ধ সেন্সর বোর্ড। কেউ যদি এর পরেও বেআইনিভাবে 'পাঠান' প্রদর্শন করে, তাহলে অপরাধের শাস্তিস্বরূপ তার ১ লাখ টাকা জরিমানা থেকে ৩ বছরের জেল পর্যন্ত হতে পারে, হুঁশিয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
সাভারের আশুলিয়ায় মহাসড়কের পাশের একটি ডোবা থেকে মো. ইমাম হোসেন (৪৬) নামে এক ব্যক্তির ভাসমান লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পশ্চিম পাশের ডোবা থেকে নিহতের ক্ষতবিক্ষত মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইমাম হোসেন জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার ভালুকগড়ি গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে আশুলিয়ার জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
থানা পুলিশ জানায়, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী একটি ডোবা থেকে লুঙ্গি এবং জ্যাকেট পরিহিত অজ্ঞাত এক ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পিবিআইকে খবর দেওয়া হলে তারা এসে মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করে।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-মামুন কবির বলেন, ইমাম হোসেন বৃহস্পতিবার অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। মরদেহটি উদ্ধারের খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে লাশ শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তরা তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং নিহতের মরদেহটি ডোবার মধ্যে ফেলে গেছে।
মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা দায়েরের পাশাপাশি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার এবং গায়েব হওয়া অটোরিকশাটি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শ্রম পরিদর্শক পদে যোগ দেওয়ার ৩৪ বছর পর পদোন্নতি পেলেন মাহমুদুল হক। স্বপ্ন দেখতেন পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে একসময় প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে যাবেন। সেই স্বপ্ন আট বছরেই লুটিয়ে পড়ল জ্যেষ্ঠতার তালিকায়।
১৯৮৮ সালে যোগ দেওয়ায় ’৯৫ সালেই পদোন্নতি পাওয়ার কথা ছিল মাহমুদুল হকের। কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর প্রতিষ্ঠানপ্রধানের অদূরদর্শিতা সে স্বপ্ন শুরুতেই বাধা পেল। এন্ট্রি পোস্টে যোগ দেওয়ার পর তার মতো অন্য কর্মচারীরা যখন পদোন্নতির স্বপ্নে বিভোর, তখন তাতে গা-ই করলেন না সেই সময়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান।
মাহমুদুল অপেক্ষায় রইলেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য। সেই পরিবর্তন আসতে আসতে চাকরিতে কেটে গেল আঠারো বছর। আঠারোতে মানুষ প্রাপ্তবয়স্ক হয়। তিনিও ভাবলেন আঠারোতে তিনি না হয় ‘জব ম্যাচিউরিটি’তে পৌঁছালেন। চাকরির আঠারো বছরে পদোন্নতি পেলেও মন্দ হয় না।
কিন্তু অবাক ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিল, তবে মাহমুদুলকে ছাড়া। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনে কোথাও তার নাম নেই। হতাশায় মুষড়ে পড়লেন তিনি। জুনিয়র কর্মকর্তারদের নাম আছে, অথচ তার নাম নেই। প্রতিষ্ঠানের নীতি-নির্ধারকদের দরজায় দরজায় ঘুরলেন ন্যায়বিচারের আশায়। কিন্তু তারা পাত্তাই দিলেন না বিষয়টি।
তারা আমলে না নিলেও মাহমুদুলের স্বপ্ন তো সেখানেই থেমে যাওয়ার নয়। সেই স্বপ্ন পুঁজি করে তিনি গেলেন আদালতে। সেই ভিন্ন জগৎটাও কম চ্যালেঞ্জিং ছিল না। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে রায় দিল। মাহমুদুল আনন্দে আত্মহারা হলেন। কিন্তু সেই আনন্দ বেশি দিন স্থায়ী হলো না। সরকার আপিল করল প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনালে। মামলার ফল উল্টে গেল। হতাশায় ভেঙে না পড়ে তিনি গেলেন উচ্চ আদালতে। আপিল বিভাগে সিভিল আপিল মামলা করলে প্রশাসনিক আপিল আদালতের রায় বাতিল হয়। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল থাকে।
জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই করার মতো মাহমুদুল হকও যেন সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে নামলেন। আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন করল সরকারপক্ষ। একপর্যায়ে সরকার বুঝতে পারল কোনোভাবেই তারা এ মামলায় জিততে পারবে না। সরকারপক্ষে রিভিউ পিটিশন প্রত্যাহার করা হলো। আদালত সরকারের পদোন্নতির প্রজ্ঞাপনকে আইনের কর্তৃত্ববহির্ভূত বলে ঘোষণা করল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে যেদিন থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং যতবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে মাহমুদুল হককে পদোন্নতি দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। বকেয়া বেতন-ভাতাসহ সব পাওনা কড়ায়-গ-ায় পরিশোধের নির্দেশনা আসে।
আদালতের এই নির্দেশনা দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। এরপর আদেশ বাস্তবায়ন করতে সরকারের লেগে যায় প্রায় চার বছর। ২০২২ সালের ১১ মে তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ৩৪ বছর পর পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন মাহমুদুল হক। আবারও তাকে ঠকিয়েছে সরকার। জুনিয়র কর্মকর্তা যুগ্ম মহাপরিদর্শক হলেও তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয় তার দুই ধাপ নিচের সহকারী মহাপরিদর্শক পদে। উপমহাপরিদর্শক ও যুগ্ম মহাপরিদর্শক আরও ওপরের পদ। আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
কখনোই প্রজ্ঞাপন মাহমুদুল হকের জন্য ভালো বার্তা বয়ে আনেনি। পুরো চাকরিজীবন আদালতের বারান্দায় ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন অবসরের প্রান্তসীমায়। আর তিন মাস পরে তিনি অবসরে যাবেন। যৌবন ও মধ্য বয়সের দিনগুলোতে আদালতে ঘুরে বেড়ানোর শক্তি ও সাহস থাকলেও মাহমুদুল হক এখন সেই সাহস দেখাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করছেন। পারবেন তো শেষ সময়ে এসে সরকারের অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপসহীন মনোভাব দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে?
মাহমুদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, তিনি আদালতের কাছেই জানতে চাইবেন, আদালতের বিচার না মানার শাস্তি কী।
পুরো ঘটনা শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা শুনিয়ে জানতে চাইলেন, কতজনের পক্ষে মাহমুদুল হকের মতো লড়াকু মনোভাব দেখানো সম্ভব?
সীমাহীন আনন্দ নিয়ে মানুষ সরকারি চাকরিতে যোগ দেয়। এরপরই তার মধ্যে যে স্বপ্নটি দানা বাঁধে তা হচ্ছে পদোন্নতি। কার কীভাবে পদোন্নতি হবে তা আইনকানুন, নিয়ম-নীতি দিয়ে পোক্ত করা। পুরো বিষয়টি কাচের মতো স্বচ্ছ। এরপরও পদোন্নতি হয় না। দিন, মাস, বছর পার হয়ে যায়, কাক্সিক্ষত পদোন্নতির দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ২৬টি ক্যাডারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতি হয়। বাকি ক্যাডারে হতাশা। তার চেয়েও কঠিন পরিস্থিতি নন-ক্যাডারে। ক্যাডার কর্মকর্তারা নিজের পদোন্নতির ষোলো আনা বুঝে নিয়ে ঠেকিয়ে দেন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি। সংখ্যায় বেশি হওয়ায় নন-ক্যাডাররা একজন আরেকজনকে নানা ইস্যুতে আটকাতে গিয়ে পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেন। সরকারের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ কর্মচারী। সেই হিসেবে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনবলের পদোন্নতি হয় না। পে-কমিশন হলেই কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য করুণা উথলে ওঠে। এমনকি ব্লকপোস্টে যারা আছেন, তাদের জন্যও পদোন্নতির বিকল্প সুবিধা বাতলে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কর্মচারীদের পদোন্নতি উপেক্ষিতই থাকে।
যখন সময়মতো পদোন্নতি হয় না, তখন নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের চৌহদ্দি পেরিয়ে আমজনতাকেও প্রভাবিত করে। নন-ক্যাডার কর্মকর্তা আর সঙ্গে কর্মচারীরা যখন বুঝতে পারেন পদোন্নতির আশা তাদের নেই, তখন তারা দুহাতে টাকা কামানোর ধান্দায় মেতে ওঠেন। এতে করে ঘুষের সংস্কৃতি সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। অকার্যকর পথে হাঁটে রাষ্ট্র। সাধারণ মানুষ টাকা ছাড়া তাদের কাছ থেকে কোনো সেবা পায় না, ব্যবসায়ীরা নতুন কোনো আইডিয়া নিয়ে ব্যবসায় আসেন না, ব্যবসাবান্ধব পরিস্থিতি না থাকায় মুখ ফিরিয়ে নেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর বারবার আহ্বানেও বিনিয়োগকারীরা সাড়া দেন না। সাধারণ মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সেবা দেওয়ার বাণীতেও উদ্বুদ্ধ হন না সংশ্লিষ্টরা।
এই পরিস্থিতিতে অনিয়ম আটকে রাখার সব কৌশলই ব্যর্থ হচ্ছে। যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভাগীয় ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে গেছে। ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০টি অডিট আপত্তি ঝুলে থাকায় অডিট প্রতিষ্ঠানগুলোও আগ্রহ হারিয়ে নিজেরাই জড়িয়ে পড়ছে অনিয়মে। দন্তহীন বাঘে পরিণত হওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের জানান দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান নিজেই।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদোন্নতির বড় একটা অংশ আটকে রাখে মন্ত্রণালয়গুলো। এই আটকে রাখার কারণ হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের স্বার্থ। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিলে নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতিপ্রাপ্তদের ওপরের পদে বসাতে হবে। এতে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের এককালীন লাভ; অর্থাৎ টাকার বিনিময়ে একবার পদোন্নতি দেওয়া যাবে। কিন্তু পদোন্নতি না দিয়ে সংশ্লিষ্টদের চলতি দায়িত্ব দিলে বছরজুড়ে টাকা আয় করতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। দপ্তর, অধিদপ্তরে বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের আয় অনুসারে নীতিনির্ধারকদের মাসোহারা দিতে হয়। নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি দেওয়া হলে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে আইন বা বিধি-বিধানের ফাঁকফোকর গলিয়ে নন-ক্যাডার এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি আটকে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়।
সরকারি কর্মচারী সংহতি পরিষদের সভাপতি নিজামুল ইসলাম ভূঁইয়া মিলন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সচিবালয় এবং সারা দেশের সরকারি কর্মচারীদের পদোন্নতির মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। নন-ক্যাডারের কিছু বিষয় ছাড়া সচিবালয়ের কর্মচারীরা সময়মতো পদোন্নতি পায়। কিন্তু সচিবালয়ের বাইরে পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। সচিবালয়ে মাত্র ১০ হাজার কর্মচারী আছেন। সচিবালয়ের বাইরে আছেন ১০ লাখের বেশি। এসব কর্মচারীর পদোন্নতি নিয়ে বহু বছর ধরে চেষ্টা করছি। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। সর্বশেষ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি কিছু সুপারিশ করেছে। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এরপর এর কোনো অগ্রগতি নেই। যেখানে সরকারপ্রধান বলেন, চাকরিজীবনে সবাই যেন কমপক্ষে একটি পদোন্নতি পায়। সেখানে বহু কর্মচারী কোনো পদোন্নতি ছাড়াই অবসরে যাচ্ছেন। সরকারপ্রধানের নির্দেশনা উপেক্ষা করেন আমলারা। তাদের আগ্রহ কেনা-কাটায়, বিদেশ ভ্রমণে, নতুন জনবল নিয়োগে। এসব করলে তাদের লাভ। কর্মচারী পদোন্নতি দিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। এর নিশ্চয়ই একটা শেষ আছে। বৈষম্যের পরিণতি কী হয়, তা অনেক দাম দিয়ে বিডিআর বিদ্রোহে আমরা দেখেছি।’
কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি ঝুলছে বছরের পর বছর। এই অধিদপ্তরের কয়েক শ কর্মকর্তা পাঁচ বছর আগেই পদোন্নতির যোগ্য হয়েছেন। নানা কায়দা-কানুন করে তাদের পদোন্নতি ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক সংশ্লিষ্টদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করে তাদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নতুন করে জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার নামে সময়ক্ষেপণ করছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা করার পর এখন তাদের পারিবারিক সদস্যদের তথ্য যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদেরও তথ্য তালাশ করছে। তাদের আত্মীয়দের মধ্যে কে কোন দলের সমর্থক তার তথ্য নিচ্ছেন সংস্থার কর্মকর্তারা।
গত মাসে শেষ হওয়া জেলা প্রশাসক সম্মেলনে দায়িত্ব পালন করছিলেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের সুরম্য ভবনে দায়িত্ব পালন করলেও ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তার মনের অবস্থাটা মনোহর ছিল না। কেমন আছেন জানতে চাইলে ওই নন-ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো নেই। চাকরি করছি, পদোন্নতি নেই। ২০১৫ সালের আগে পদোন্নতি না পেলেও টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ছিল। তাও তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল সময়মতো পদোন্নতি হবে, ব্লকপোস্টধারীদের দেওয়া হবে বিশেষ আর্থিক সুবিধা। এসবের কোনোটাই হয়নি।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে একটি প্রশাসনিক আদেশ খুবই পরিচিত। সেই প্রশাসনিক আদেশ ১৬/২০১৮ অনুযায়ী ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগ হবে। আর ৩০ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। ৭০ ভাগ কর্মকর্তা সরাসরি নিয়োগের ফলে বিমানে বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় কর্মকর্তা বেশি। নীতিনির্ধারকদের নতুন জনবল নিয়োগে আগ্রহ বেশি। পুরনোদের পদোন্নতি দিয়ে ওপরের পদ পূরণের চেয়ে তারা নতুন নিয়োগে যান। ফলে কারও চাকরিজীবনে একবারও পদোন্নতি হয় না। নামমাত্র যে পদোন্নতি হয় তা অনিয়মে ভরপুর।
নন-ক্যাডার ছাড়াও ১৩তম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতি হয় না বললেই চলে। প্রতিটি দপ্তরে এসব গ্রেডের পদোন্নতি আটকে আছে। অথচ এসব গ্রেডেই বেশি লোক চাকরি করছেন। সরকারের মোট জনবল প্রায় ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৯২৭ জন। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ২৩ শতাংশ পদের মধ্যেও নন-ক্যাডার রয়েছেন। এ ছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ৭৭ শতাংশ পদই ১৩তম থেকে তার পরের গ্রেডের। এতে করে সহজেই বোঝা যায় সরকারের জনবলের বড় অংশই পদোন্নতির চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে। সরকারের জনবলের এই বিশাল অংশ যখন পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন, তখন তারা নানা অনিয়মে ঝুঁকে পড়েন।
বেশির ভাগ দপ্তর, অধিদপ্তর পরিচালনা করেন বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। তারা তাদের প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে প্রেষণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের দপ্তর, অধিদপ্তরে পাঠান। প্রেষণে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা শুধু রুটিন কাজটুকুই করতে চান। শূন্যপদে জনবল নিয়োগ বা পদোন্নতি রুটিন কাজ না হওয়ায় তা উপেক্ষিত থাকে। তা ছাড়া পদোন্নতি দিতে গিয়ে নানা জটিলতার সৃষ্টি হয়; বিশেষ করে মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রী বা সচিব তাদের পছন্দের লোককে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য সংস্থার প্রধানকে চাপ দেন। এই চাপ উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ না থাকায় অযোগ্য লোককে পদোন্নতি দিতে হয় সংস্থার প্রধানকে। এই জটিলতা থেকে দূরে থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের পদোন্নতি দেওয়া থেকেও দূরে থাকেন সংস্থার প্রধানরা।
নন-ক্যাডার কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের পদোন্নতি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বাইরের লোকের ইচ্ছাটাই জাগে না আমাদের পদোন্নতি দিতে। আমাদের দপ্তরপ্রধান মহাপরিচালক প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। অতিরিক্ত মহাপরিচালকও অনেক সময় প্রশাসন ক্যাডার থেকে প্রেষণে আসেন। তাদের কেন ইচ্ছা জাগবে আমাদের পদোন্নতি নিয়ে। যদি এসব পদে ফুড ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতেন, তাহলে তারা খাদ্য বিভাগের সমস্যা বুঝতেন। তা ছাড়া নিয়োগ বিধি সংশোধনের নামে আমরা দীর্ঘদিন একই পদে আটকে আছি।’
গত বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এক আবেদনে জানান, ‘বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কর্মরত। এর বিপরীতে ক্যাডারবহির্ভূত সংরক্ষিত পদের সংখ্যা ২৬৭টি, যা খুবই নগণ্য। ফলে একই পদে ২০-২২ বছরের বেশি সময় কর্মরত থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি না পাওয়ায় সৃষ্ট হতাশার ফলে কর্মস্পৃহা নষ্ট হচ্ছে।’
সরকার এ সমস্যা থেকে কীভাবে বের হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে সরকার সব সময়ই কাজ করে। কিন্তু এ চেষ্টা জটিলতার তুলনায় কম। এ বিষয়ে আরও এফোর্ট দিতে হবে।
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে বেসরকারিভাবে ১১২ কেন্দ্রের ফলাফলে ৯৫১ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন বহুল আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। একতারা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ১৯ হাজার ৪৮৬ ভোট। এ আসনে জয় পেয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু) সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম তানসেন। মশাল প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৩৭ ভোট।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বগুড়ার দুইটিসহ মোট ৬ আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির এমপিরা পদত্যাগের ঘোষণা দিলে এ আসনগুলো শূন্য হয়।
তখন, বগুড়া-৬ (সদর) এবং বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন হিরো আলম। নির্বাচন কমিশন একদফা তার প্রার্থিতা বাতিল করলেও পরে আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’
বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন হিরো আলম বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘সদরের কেন্দ্র সব দখল হয়্যা গ্যাছে। ডিসি-এসপিক কয়্যাও কোনো কাম হচ্চে না। সদরের আশা সব শ্যাষ। কাহালু-নন্দীগামের অনেক কেন্দ্র ঘুরে ঘুরে দেকছি। ভোট খুব সুষ্ঠু হচ্চে। মাঠের অবস্থা ভালো। কাহালু-নন্দীগ্রামে নিশ্চিত এমপি হচ্চি।’
এর আগে, সকালে সদর উপজেলার এরুলিয়া উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান তিনি। ভোট দেওয়ার পর হিরো আলম বলেন, ‘বগুড়া-৬ আসনে আগে থেকেই গোলযোগের আশঙ্কা করেছিলাম, সেটাই সত্যি হয়েছে। নির্বাচনি এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তবে বগুড়া-৪ আসনে ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে। এভাবে সুষ্ঠু ভোট হলে এই আসনে আমিই বিজয়ী হবো।’
এদিকে বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট বাদে অন্য এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ সকালে হিরো আলমসহ তিনজন প্রার্থী এ অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের এজেন্টদের বের করে দিয়েছেন বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়।