রঙিন পাখি, সাদা বাঘ
নয়ন চক্রবর্ত্তী | ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০
১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের ফয়’স লেক এলাকায় ছয় একর জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে বর্তমানে বাঘ ভাল্লুক , সিংহ , হরিণ, কুমির, জেব্রা উট পাখি, অজগর , কুমিরসহ প্রায় ৬৭ প্রজাতির সাড়ে তিন শতাধিক পশু পাখি।
বর্তমানে শিশুদের বিনোদনের জন্য চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় মূল আকর্ষণ রঙিন পাখি, বিরল সাদা বাঘ। আসছে ক্যাঙ্গারু। আছে শিশু কর্নার, পাখি এভিয়ারি, জেব্রা, আকর্ষণ সাদা বাঘে। কিন্তু নেই ফটকের হাতি, জিরাফ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এ চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে।
পাখিশালা নতুন রূপে: চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বসেছে একঝাঁক পাখির মেলা। হল্যান্ড থেকে আনা ছয় প্রজাতির এই পাখির মেলায় রয়েছে : রিংনেক প্যারট ১০ জোড়া, লাফিং ডাভ ৫০ জোড়া, ফিজেন্ট বা ধনেশ পাখি ১০ জোড়া, ঝুঁটিওয়ালা কাকাতুয়া বা ককাটিয়েল ৫০ জোড়া, লাভ বার্ড ৫০ জোড়া এবং এক জোড়া ম্যাকাও পাখি। চিড়িয়াখানার ঘেরাওয়ের মধ্যে গাছের ডালে প্রাকৃতিক পরিবেশে ওদের বসবাসের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। নতুন এই পাখির আগমনীতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দর্শকদের আগমনও বেশ বেড়ে গেছে। দেশের চিড়িয়াখানার মধ্যে পাখি নিবাসের এমন প্রকল্প এটিই প্রথম বলে জানায় চিড়িয়াখানার কিউরেটর শাহাদাত হোসাইন শুভ।
চিড়িয়াখানার প্রবেশমুখে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৫ ফুট প্রস্থের পক্ষীশালার খাঁচা তৈরি করে রীতিমতো তাক লাগিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এ পক্ষীশালাটি নির্মাণে খরচ পড়েছে ২২ লাখ আর ১০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে খরচ হয়েছে পাখি সংগ্রহে।
আর আকর্ষণ বাড়াতে একাধিক সংস্কার শেষে এবং পাখি সংগ্রহ বাড়িয়ে আফ্রিকান জেব্রাসহ অনেক নতুন প্রাণী আনার কারণে দর্শনার্থীদের ভিড় নিত্যদিনের।
২১ নভেম্বর উদ্বোধনের পর জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে পক্ষীশালা আর সাদা বাঘের কারণে সবার আগ্রহের জায়গা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা।
তিনি আরো বলেন, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে এ এভিয়ারি, চিড়িয়াখানাটির রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ আসে দর্শনার্থীদের কাছে টিকিট বিক্রি থেকে। চিড়িয়াখানা পরিচালনার জন্য সরকার থেকে কোনো অর্থায়ন হয় না বলে জানান জেলা প্রশাসক।
সাদা বাঘ : চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আলোচিত প্রাণী সাদা বাঘ, কমলা-কালো ডোরা বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রাজপরীর দুটি ছানার একটি হলো ‘হোয়াইট টাইগার’।
কোনো প্রাণী সচরাচর যে রঙের হয় তার চেয়ে ভিন্ন রঙের হলে সেটি প্রাণিবিজ্ঞানের ভাষায় পরিচিত ‘এলবিনো’ হিসেবে। প্রাণিবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এখন কোনো হোয়াইট টাইগার (এলবিনো) নেই। এমনকি বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কেও ছিল না এ ধরনের কোনো বাঘ। সাদা কুমির ‘হোয়াইট ডায়মন্ড’ ও ‘ক্লাউডি’, গোলাপি ডলফিন ‘পিংকি’, সাদা তিমি ‘রিয়েল মবি ডিক’সহ বিশ্বব্যাপী এরকম ব্যতিক্রম ও আলোচিত প্রাণীর তালিকায় যোগ হলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার এই বাঘের ছানাটি।
ভিন্নতায় অনন্য সাড়ে পাঁচ মাস বয়সী বাঘিনীর নাম শুভ্রা বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর ও চিকিৎসক ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ। তিনি আরো বলেন, মা-বাবার জিনে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে কিছুটা ভিন্নতার কারণে এ ধরনের প্রাণীর জন্ম হয়। এলবিনো দুই ধরনের হয়ে থাকে, পার্শিয়াল ও ফুল পার্শিয়াল। এই বাঘের ছানাটি ফুল পার্শিয়াল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমত বলেন, বাঘ অথবা বাঘিনীর জিনে মেলানিনের মতো রঞ্জক পদার্থ কমে গেলে সাদা রঙের প্রাণীর জন্ম হয়।
এ চিড়িয়াখানা নতুন রূপে সাজাতে নানা ধরনের উদ্যোগের মধ্যে পক্ষীশালাও একটি বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব ও হাটহাজারী উপজেলার ইউএনও রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, ‘চিড়িয়াখানাটি দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাঘ, জেব্রা আনা হয়েছে, সামনে সংযোজিত হবে ক্যাঙ্গারু। তৈরি করা হয়েছে বিদেশি পাখি নিয়ে এভিয়ারি।’
পর্যায়ক্রমে আরো নানা ধরনের পাখির সংখ্যা বাড়ানোর কথাও জানান চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব রুহুল আমিন।
শেয়ার করুন
নয়ন চক্রবর্ত্তী | ২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০

১৯৮৯ সালে চট্টগ্রামের ফয়’স লেক এলাকায় ছয় একর জায়গা নিয়ে তৈরি করা হয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে বর্তমানে বাঘ ভাল্লুক , সিংহ , হরিণ, কুমির, জেব্রা উট পাখি, অজগর , কুমিরসহ প্রায় ৬৭ প্রজাতির সাড়ে তিন শতাধিক পশু পাখি।
বর্তমানে শিশুদের বিনোদনের জন্য চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় মূল আকর্ষণ রঙিন পাখি, বিরল সাদা বাঘ। আসছে ক্যাঙ্গারু। আছে শিশু কর্নার, পাখি এভিয়ারি, জেব্রা, আকর্ষণ সাদা বাঘে। কিন্তু নেই ফটকের হাতি, জিরাফ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এ চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে।
পাখিশালা নতুন রূপে: চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বসেছে একঝাঁক পাখির মেলা। হল্যান্ড থেকে আনা ছয় প্রজাতির এই পাখির মেলায় রয়েছে : রিংনেক প্যারট ১০ জোড়া, লাফিং ডাভ ৫০ জোড়া, ফিজেন্ট বা ধনেশ পাখি ১০ জোড়া, ঝুঁটিওয়ালা কাকাতুয়া বা ককাটিয়েল ৫০ জোড়া, লাভ বার্ড ৫০ জোড়া এবং এক জোড়া ম্যাকাও পাখি। চিড়িয়াখানার ঘেরাওয়ের মধ্যে গাছের ডালে প্রাকৃতিক পরিবেশে ওদের বসবাসের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। নতুন এই পাখির আগমনীতে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় দর্শকদের আগমনও বেশ বেড়ে গেছে। দেশের চিড়িয়াখানার মধ্যে পাখি নিবাসের এমন প্রকল্প এটিই প্রথম বলে জানায় চিড়িয়াখানার কিউরেটর শাহাদাত হোসাইন শুভ।
চিড়িয়াখানার প্রবেশমুখে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৫ ফুট প্রস্থের পক্ষীশালার খাঁচা তৈরি করে রীতিমতো তাক লাগিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এ পক্ষীশালাটি নির্মাণে খরচ পড়েছে ২২ লাখ আর ১০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে খরচ হয়েছে পাখি সংগ্রহে।
আর আকর্ষণ বাড়াতে একাধিক সংস্কার শেষে এবং পাখি সংগ্রহ বাড়িয়ে আফ্রিকান জেব্রাসহ অনেক নতুন প্রাণী আনার কারণে দর্শনার্থীদের ভিড় নিত্যদিনের।
২১ নভেম্বর উদ্বোধনের পর জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে পক্ষীশালা আর সাদা বাঘের কারণে সবার আগ্রহের জায়গা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা।
তিনি আরো বলেন, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি করা হয়েছে এ এভিয়ারি, চিড়িয়াখানাটির রক্ষণাবেক্ষণের অর্থ আসে দর্শনার্থীদের কাছে টিকিট বিক্রি থেকে। চিড়িয়াখানা পরিচালনার জন্য সরকার থেকে কোনো অর্থায়ন হয় না বলে জানান জেলা প্রশাসক।
সাদা বাঘ : চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় আলোচিত প্রাণী সাদা বাঘ, কমলা-কালো ডোরা বেঙ্গল টাইগার দম্পতি রাজপরীর দুটি ছানার একটি হলো ‘হোয়াইট টাইগার’।
কোনো প্রাণী সচরাচর যে রঙের হয় তার চেয়ে ভিন্ন রঙের হলে সেটি প্রাণিবিজ্ঞানের ভাষায় পরিচিত ‘এলবিনো’ হিসেবে। প্রাণিবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এখন কোনো হোয়াইট টাইগার (এলবিনো) নেই। এমনকি বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কেও ছিল না এ ধরনের কোনো বাঘ। সাদা কুমির ‘হোয়াইট ডায়মন্ড’ ও ‘ক্লাউডি’, গোলাপি ডলফিন ‘পিংকি’, সাদা তিমি ‘রিয়েল মবি ডিক’সহ বিশ্বব্যাপী এরকম ব্যতিক্রম ও আলোচিত প্রাণীর তালিকায় যোগ হলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার এই বাঘের ছানাটি।
ভিন্নতায় অনন্য সাড়ে পাঁচ মাস বয়সী বাঘিনীর নাম শুভ্রা বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার কিউরেটর ও চিকিৎসক ডা. শাহাদাত হোসেন শুভ। তিনি আরো বলেন, মা-বাবার জিনে স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে কিছুটা ভিন্নতার কারণে এ ধরনের প্রাণীর জন্ম হয়। এলবিনো দুই ধরনের হয়ে থাকে, পার্শিয়াল ও ফুল পার্শিয়াল। এই বাঘের ছানাটি ফুল পার্শিয়াল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী সৈয়দ মোহাম্মদ আসমত বলেন, বাঘ অথবা বাঘিনীর জিনে মেলানিনের মতো রঞ্জক পদার্থ কমে গেলে সাদা রঙের প্রাণীর জন্ম হয়।
এ চিড়িয়াখানা নতুন রূপে সাজাতে নানা ধরনের উদ্যোগের মধ্যে পক্ষীশালাও একটি বলে জানিয়েছেন চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব ও হাটহাজারী উপজেলার ইউএনও রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, ‘চিড়িয়াখানাটি দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাঘ, জেব্রা আনা হয়েছে, সামনে সংযোজিত হবে ক্যাঙ্গারু। তৈরি করা হয়েছে বিদেশি পাখি নিয়ে এভিয়ারি।’
পর্যায়ক্রমে আরো নানা ধরনের পাখির সংখ্যা বাড়ানোর কথাও জানান চিড়িয়াখানা পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব রুহুল আমিন।