সাভারে খাস পুকুরে বহুতল ভবন উচ্ছেদ কার্যক্রম
নথি চালাচালিতেই ৪ বছর
ওমর ফারুক, সাভার | ১৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০
আশুলিয়ায় খাস খতিয়ানভুক্ত একটি সরকারি পুকুর ভরাট করে প্রায় ১০ বছর আগে বহুতল ভবন গড়ে তুলেছে কসমোপলিটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (সিআইপিএল) নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ভবনটিতে বর্তমানে চলছে একটি তৈরি পোশাক কারখানার কার্যক্রম। সাভার উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেল থেকে চার বছর আগে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে ভবনটি উচ্ছেদের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।
এ পরিস্থিতিতে তথ্য অধিকার আইনে করা আলাদা দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, উচ্ছেদের নথির কার্যক্রম এখনো চলমান। তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এই বক্তব্যকে রহস্যজনক বলে মনে করছে এলাকার বাসিন্দারা।
সাভার উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আশুলিয়া ইউনিয়নের বড় আশুলিয়া মৌজার ২.৭৭ একর (২৭৭ শতাংশ) আয়তনের খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি পুকুরটি ২০১৭ সালে মাছ চাষের জন্য ‘জাগ্রত মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু সরেজমিনে ওই খাস পুকুরটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। পুকুরটির চারদিকের প্রায় অধিকাংশ জায়গাই বালু-মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। প্রায় ১০ বছর আগে পুকুরটির অর্ধেক অংশ দখল করে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে কসমোপলিটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। পুকুরের বাকি অংশে রয়েছে তিনটি বাড়ি ও গবাদি পশুর একটি খামার।
সরকারি পুকুর দখল করে ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইপিএলের মানবসম্পদ কর্মকর্তা তাসলিম আহম্মেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিন মাতবরের মাধ্যমে জমিটি কিনেছি। কারখানার ভবন নির্মাণকাজের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। সেজন্য জমির যাবতীয় বিষয়ে চেয়ারম্যান সাহেবই ভালো বলতে পারবেন।’ সিআইপিএল কর্মকর্তার করা মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিন মাতবরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
এদিকে তথ্য অধিকার আইনে করা এক আবেদনের জবাবে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তথ্যে দাবি করা হয়েছে, বড় আশুলিয়া মৌজার এই খাস পুকুরটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পুকুরটি ইজারা নেওয়া ‘জাগ্রত মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ বলছে, পুকুরের অধিকাংশ জায়গা ইতিমধ্যে ভরাট করে ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। তাই বর্তমানে পুকুরটি মাছ চাষের অযোগ্য।
সরকারি পুকুর ভরাট করে গড়ে তোলা বহুতল ভবনটি উচ্ছেদের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রায় চার বছর আগে খাস পুকুরে বহুতল ভবনটি উচ্ছেদের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তবে এখনো ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
উচ্ছেদ কার্যক্রমের সর্বশেষ তথ্য জানতে একটি দৈনিক পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি মতিউর রহমান তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। এর জবাবে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চলতি বছর ১৪ মে সরবরাহ করা তথ্যে জানানো হয়, খাস পুকুরের বহুতল ভবন উচ্ছেদ কার্যক্রম (মোকাদ্দমা নং-১১৮/২০১৬ আশুলিয়া) নথিটি চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে ঢাকার জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খানের মোবাইল ফোনে কল হলেও তিনি তা ধরেননি। তবে চার বছর ধরে উচ্ছেদ কার্যক্রম থমকে থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (এডিসি-রাজস্ব) মেহেদী হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অফিশিয়াল বিভিন্ন কাজের চাপে উচ্ছেদ করতে একটু সময় লাগছে। অচিরেই এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
শেয়ার করুন
ওমর ফারুক, সাভার | ১৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০

আশুলিয়ায় খাস খতিয়ানভুক্ত একটি সরকারি পুকুর ভরাট করে প্রায় ১০ বছর আগে বহুতল ভবন গড়ে তুলেছে কসমোপলিটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (সিআইপিএল) নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ভবনটিতে বর্তমানে চলছে একটি তৈরি পোশাক কারখানার কার্যক্রম। সাভার উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেল থেকে চার বছর আগে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে ভবনটি উচ্ছেদের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়।
এ পরিস্থিতিতে তথ্য অধিকার আইনে করা আলাদা দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, উচ্ছেদের নথির কার্যক্রম এখনো চলমান। তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এই বক্তব্যকে রহস্যজনক বলে মনে করছে এলাকার বাসিন্দারা।
সাভার উপজেলা ভূমি কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আশুলিয়া ইউনিয়নের বড় আশুলিয়া মৌজার ২.৭৭ একর (২৭৭ শতাংশ) আয়তনের খাস খতিয়ানভুক্ত সরকারি পুকুরটি ২০১৭ সালে মাছ চাষের জন্য ‘জাগ্রত মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু সরেজমিনে ওই খাস পুকুরটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। পুকুরটির চারদিকের প্রায় অধিকাংশ জায়গাই বালু-মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। প্রায় ১০ বছর আগে পুকুরটির অর্ধেক অংশ দখল করে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে কসমোপলিটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। পুকুরের বাকি অংশে রয়েছে তিনটি বাড়ি ও গবাদি পশুর একটি খামার।
সরকারি পুকুর দখল করে ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইপিএলের মানবসম্পদ কর্মকর্তা তাসলিম আহম্মেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা আশুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিন মাতবরের মাধ্যমে জমিটি কিনেছি। কারখানার ভবন নির্মাণকাজের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। সেজন্য জমির যাবতীয় বিষয়ে চেয়ারম্যান সাহেবই ভালো বলতে পারবেন।’ সিআইপিএল কর্মকর্তার করা মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান শাহাবউদ্দিন মাতবরের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
এদিকে তথ্য অধিকার আইনে করা এক আবেদনের জবাবে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তথ্যে দাবি করা হয়েছে, বড় আশুলিয়া মৌজার এই খাস পুকুরটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পুকুরটি ইজারা নেওয়া ‘জাগ্রত মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র’ বলছে, পুকুরের অধিকাংশ জায়গা ইতিমধ্যে ভরাট করে ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। তাই বর্তমানে পুকুরটি মাছ চাষের অযোগ্য।
সরকারি পুকুর ভরাট করে গড়ে তোলা বহুতল ভবনটি উচ্ছেদের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রায় চার বছর আগে খাস পুকুরে বহুতল ভবনটি উচ্ছেদের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তবে এখনো ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
উচ্ছেদ কার্যক্রমের সর্বশেষ তথ্য জানতে একটি দৈনিক পত্রিকার সাভার প্রতিনিধি মতিউর রহমান তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন। এর জবাবে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে চলতি বছর ১৪ মে সরবরাহ করা তথ্যে জানানো হয়, খাস পুকুরের বহুতল ভবন উচ্ছেদ কার্যক্রম (মোকাদ্দমা নং-১১৮/২০১৬ আশুলিয়া) নথিটি চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে ঢাকার জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খানের মোবাইল ফোনে কল হলেও তিনি তা ধরেননি। তবে চার বছর ধরে উচ্ছেদ কার্যক্রম থমকে থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (এডিসি-রাজস্ব) মেহেদী হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অফিশিয়াল বিভিন্ন কাজের চাপে উচ্ছেদ করতে একটু সময় লাগছে। অচিরেই এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’