সেই বন্ধু সেই মধুর স্মৃতি
শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম | ২৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত পুনর্মিলনী উৎসবে রবীন্দ্রনাথের সেই গানের কথাগুলোই যেন বারবার বাজছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে। পুরনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে বারবার সবাই ফিরে যাচ্ছিল অনেক মধুর স্মৃতিবিজড়িত অতীতের সেই দিনগুলোতে।
পুনর্মিলনী উৎসব উপলক্ষে শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশনে বসেছিল নবীন-প্রবীণের মিলনমেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র সত্তরোর্ধ্ব সিরাজুল ইসলাম যেমন যোগ দিয়েছিলেন উৎসবে, একইভাবে সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করা ৪৯তম ব্যাচের ইমরান হাসানও। বয়সের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই এক দিনের জন্য ফিরে গিয়েছিলেন ক্যাম্পাসজীবনের সেই বাঁধভাঙা তারুণ্যের সময়গুলোতে। বহু বছরের পুরনো চেনামুখগুলোকে কাছে পেয়ে মেতে উঠেছিলেন অন্যরকম এক আনন্দ উৎসবে।
৫৩ বছর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন দেশ-বিদেশের নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুশ শহীদ, সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম, বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. মুসলিম চৌধুরী, সাবেক চাকসু ভিপি মাজহারুল হক শাহ, সর্বশেষ নির্বাচিত ভিপি নাজিম উদ্দিন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিনসহ অনেকে। উৎসবে গিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুদের নিয়ে মেতে উঠেছেন আড্ডায় আর আনন্দ উচ্ছ্বাসে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে হারিয়ে যান ক্যাম্পাসের সেই দিনগুলোতে। পুনর্মিলনী উপলক্ষে বিভিন্ন ব্যাচের ছাত্রদের একই রঙের টি-শার্ট আর ছাত্রীদের একই রঙের শাড়ি অনুষ্ঠানে যেন বাড়িয়ে দেয় রঙের সমাহার। জিইসি কনভেনশন হলে মূল অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে ছবি তোলার জন্য বানানো হয় একাধিক ফটোস্পট। দল বেঁধে শিক্ষার্থীরা সেখানে ছবি তোলায় মেতে ওঠেন। পুরনো ক্যাম্পাসের টং দোকানগুলোর আদলে তৈরি করা হয় বেশকিছু স্টল। ‘মউর দোয়ান’, ‘কেনে চলর’, ‘কথা কিন্তু সত্য’, ‘ভাইনার দোয়ান’, ‘অঁাই কিত্তাম’ ইত্যাদি নানা নামে নামকরণ করা হয় দোকানগুলোর। লাইন ধরে সেখানে চা, কপি, মোয়া, পান ইত্যাদির জন্য ভিড় করেন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, বহুদিন পর আজ চেনামুখগুলো দেখছি। বারবার ফিরে যাচ্ছি অতীত স্মৃতিতে। যদি আবার সেই জীবনে ফিরে যেতে পারতাম, যদি আবারও শাটল ট্রেনে বসে গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে ক্যাম্পাসে যেতে পারতাম, তবে অনেক বেশি ভালো লাগত।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুশ শহীদ দেশ রূপান্তরের কাছে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, অতীত স্মৃতি মানুষকে কীভাবে কাতর করে তোলে এখানে এসে তা প্রতিনিয়ত টের পাচ্ছি। সেই কবে চার যুগ আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আমার ব্যাচের আরেকজনকে এখানে পেলাম। পেলাম প্রথম ব্যাচের একজনকে। অনেকগুলো বছর পর কাছে থেকে দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বেশকিছু চেনামুখ। তিনি আফসোসের সঙ্গে বলেন, আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকতাম তখন পাহাড় আর জঙ্গলঘেরা ক্যাম্পাসে শেয়ালের ডাক শyনতাম। ভয় পেলেও সেই ডাক ভালো লাগত। এখন তো শেয়ালের ডাক নয়, জঙ্গলও খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে। চাকসুর সাবেক ভিপি মাজহারুল হক শাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ পুনর্মিলনী উৎসবের মধ্য দিয়ে যেন আবারও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ফিরে গিয়েছি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, নানা আন্দোলন সংগ্রাম, চাকসু ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন– সবকিছুই বারবার মনে পড়ছে।
পুনর্মিলনী উৎসবে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন। নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শাটল ট্রেনে যাতায়াত করতাম। তখন মনের ভেতরে একটি সুপ্ত বাসনা ছিল এই শাটল ট্রেন যেন হৃদয়ে অনন্তকাল জাগরূক থাকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাইয়ের শাটল ট্রেন সেই সুযোগ এনে দিয়েছে।
শেয়ার করুন
শামসুল ইসলাম, চট্টগ্রাম | ২৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত পুনর্মিলনী উৎসবে রবীন্দ্রনাথের সেই গানের কথাগুলোই যেন বারবার বাজছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে। পুরনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে বারবার সবাই ফিরে যাচ্ছিল অনেক মধুর স্মৃতিবিজড়িত অতীতের সেই দিনগুলোতে।
পুনর্মিলনী উৎসব উপলক্ষে শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি কনভেনশনে বসেছিল নবীন-প্রবীণের মিলনমেলা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র সত্তরোর্ধ্ব সিরাজুল ইসলাম যেমন যোগ দিয়েছিলেন উৎসবে, একইভাবে সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করা ৪৯তম ব্যাচের ইমরান হাসানও। বয়সের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই এক দিনের জন্য ফিরে গিয়েছিলেন ক্যাম্পাসজীবনের সেই বাঁধভাঙা তারুণ্যের সময়গুলোতে। বহু বছরের পুরনো চেনামুখগুলোকে কাছে পেয়ে মেতে উঠেছিলেন অন্যরকম এক আনন্দ উৎসবে।
৫৩ বছর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন দেশ-বিদেশের নানা স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন ব্যাচ ও বিভাগের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুশ শহীদ, সাবেক মুখ্য সচিব আবদুল করিম, বিদ্যুৎ সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. মুসলিম চৌধুরী, সাবেক চাকসু ভিপি মাজহারুল হক শাহ, সর্বশেষ নির্বাচিত ভিপি নাজিম উদ্দিন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিনসহ অনেকে। উৎসবে গিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুদের নিয়ে মেতে উঠেছেন আড্ডায় আর আনন্দ উচ্ছ্বাসে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে হারিয়ে যান ক্যাম্পাসের সেই দিনগুলোতে। পুনর্মিলনী উপলক্ষে বিভিন্ন ব্যাচের ছাত্রদের একই রঙের টি-শার্ট আর ছাত্রীদের একই রঙের শাড়ি অনুষ্ঠানে যেন বাড়িয়ে দেয় রঙের সমাহার। জিইসি কনভেনশন হলে মূল অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে ছবি তোলার জন্য বানানো হয় একাধিক ফটোস্পট। দল বেঁধে শিক্ষার্থীরা সেখানে ছবি তোলায় মেতে ওঠেন। পুরনো ক্যাম্পাসের টং দোকানগুলোর আদলে তৈরি করা হয় বেশকিছু স্টল। ‘মউর দোয়ান’, ‘কেনে চলর’, ‘কথা কিন্তু সত্য’, ‘ভাইনার দোয়ান’, ‘অঁাই কিত্তাম’ ইত্যাদি নানা নামে নামকরণ করা হয় দোকানগুলোর। লাইন ধরে সেখানে চা, কপি, মোয়া, পান ইত্যাদির জন্য ভিড় করেন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, বহুদিন পর আজ চেনামুখগুলো দেখছি। বারবার ফিরে যাচ্ছি অতীত স্মৃতিতে। যদি আবার সেই জীবনে ফিরে যেতে পারতাম, যদি আবারও শাটল ট্রেনে বসে গলা ছেড়ে গান গাইতে গাইতে ক্যাম্পাসে যেতে পারতাম, তবে অনেক বেশি ভালো লাগত।
অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুশ শহীদ দেশ রূপান্তরের কাছে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, অতীত স্মৃতি মানুষকে কীভাবে কাতর করে তোলে এখানে এসে তা প্রতিনিয়ত টের পাচ্ছি। সেই কবে চার যুগ আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আমার ব্যাচের আরেকজনকে এখানে পেলাম। পেলাম প্রথম ব্যাচের একজনকে। অনেকগুলো বছর পর কাছে থেকে দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বেশকিছু চেনামুখ। তিনি আফসোসের সঙ্গে বলেন, আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকতাম তখন পাহাড় আর জঙ্গলঘেরা ক্যাম্পাসে শেয়ালের ডাক শyনতাম। ভয় পেলেও সেই ডাক ভালো লাগত। এখন তো শেয়ালের ডাক নয়, জঙ্গলও খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে। চাকসুর সাবেক ভিপি মাজহারুল হক শাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ পুনর্মিলনী উৎসবের মধ্য দিয়ে যেন আবারও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ফিরে গিয়েছি। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, নানা আন্দোলন সংগ্রাম, চাকসু ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন– সবকিছুই বারবার মনে পড়ছে।
পুনর্মিলনী উৎসবে এসেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন। নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে দেশ রূপান্তরকে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শাটল ট্রেনে যাতায়াত করতাম। তখন মনের ভেতরে একটি সুপ্ত বাসনা ছিল এই শাটল ট্রেন যেন হৃদয়ে অনন্তকাল জাগরূক থাকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাইয়ের শাটল ট্রেন সেই সুযোগ এনে দিয়েছে।