নির্মাণকাজ ৬ বছরেও শেষ হয়নি
সাইফুর রহমান মিরণ | ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্মকাণ্ড পরিচালনায় যুগোপযোগী সুবিধা পেতে বরিশালে বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ হয় প্রায় সাত বছর আগে প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের সময়। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে মেয়র আহসান হাবিব কামাল দায়িত্বে থাকাকালে প্রকল্পটির কার্যাদেশ হয়। এর কাজ পায় মেসার্স মোমেন শিকদার। নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি অডিটরিয়ামটির উদ্বোধন হয়। এরপরও পার হয়েছে ২ বছর ৯ মাস। কিন্তু প্রকল্পটির পুরো কাজ গত ছয় বছরে শেষ হয়নি। শুরু থেকেই কাজের নিমœমান ও দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ উঠলেও বেড়েছে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয়। এসব নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিককর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাট্যজন সৈয়দ দুলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বরিশাল পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় শহরে রূপ নিয়েছে অনেক আগে। দীর্ঘদিনেও বরিশালে একটি আধুনিক অডিটরিয়াম নির্মাণ হয়নি। নাটকসহ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। নাট্য ও সাংস্কৃতিককর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি অডিটরিয়াম নির্মাণে উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে ঠিকাদারের গাফিলতিতে ছয় বছরেও তার নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। আগামী বছর মুজিববর্ষ পালিত হবে। আমরা চাই, মুজিববর্ষ পালন যেন ওই অডিটরিয়ামে করতে পারি। তার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বরিশালের ২৭টি সংগঠনের জোট বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বরিশালে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার একমাত্র কেন্দ্র হচ্ছে অশ্বিনী কুমার হল। সাউন্ডপ্রুফ না হওয়া, কোলাহলপূর্ণ হওয়ায় এখানে কোনো নাটক, অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয় না। বিষয়টি নিয়ে আমরা বর্তমান মেয়রের কাছে দাবি জানিয়েছি। তিনি দ্রুত ওই অডিটরিয়াম নির্মাণকাজ শেষ করার কথা বলেছেন।
বরিশালে বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম নির্মাণে ২০১৪ সালে ব্যয় ধরা হয় ১৭ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ৫৫০ টাকা। ভবন নির্মাণে মাটির নিচে ভীত শক্ত করার জন্য ১২০ ফুট গভীরে সিটু পাইল করার কথা থাকলেও তা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ কোটি টাকা। তবে নির্মাণকাজ এখনো শেষ করেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পের তথ্য জানতে বিভিন্ন সময় প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তবে প্রকল্প পরিচালক, ঠিকাদার, পাইল মিস্ত্রি, কারিগরি পর্যবেক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বিক্ষিপ্ত তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৪ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে কথা হয় প্রকল্পের পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খান মো. নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৭০টি পাইল করা হয়েছে। প্রতিটি পাইলের গভীরতা ৭৮ ফুট। তৎকালীন সময়ে ওই কার্যালয়েই কথা হয় ঠিকাদার এমএস মোমেন শিকদারের সঙ্গে। তিনিও ৭৮ ফুট গভীরে পাইল করা হয়েছে জানান। অডিটরিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের কারিগরি পর্যবেক্ষক হাফিজুর রশীদ জানান, অডিটরিয়ামের জন্য ১৭০টি পাইল করা হয়েছে। প্রতিটি পাইলের গভীরতা ৮০ ফুট। প্রধান মিস্ত্রি রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, গভীরতা ৯০ ফুট। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরশনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, পাইলের গভীরতা মাত্র ৪০-৪৫ ফুট হবে। এ বিষয় তখনকার সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য সহযোগিতা চাইলেও তা পাওয়া যায়নি। ২০১৪ সালের ৭ মে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় তথ্য চেয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খান মো. নূরুল ইসলামের কাছে আবেদন করা হয়। তিনি ২০১৪ সালের ২২ মে শুধু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম, দরপত্র ও কার্যাদেশের তারিখ জানান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে মন্তব্য করে বাকি তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকেন তিনি। এরপর ২০১৪ সালের ১৭ জুন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর ১০ জুলাই কর্তৃপক্ষ ডাকযোগে দেওয়া চিঠিতে শুধু প্রকল্প ব্যয় জানায়।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিচুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম প্রকল্পটি প্রায় সাত বছর আগে নেওয়া হয়। কিন্তু কার্যাদেশ হয় সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের সময়। ওই সময় কাজ নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। তবে সে ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তা জানা নেই। প্রকল্প ব্যয় বাড়ালেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। অসম্পূর্ণ অবস্থায় উদ্বোধন হলেও আর কাজ এগোয়নি। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য বলেছেন। সেই প্রক্রিয়া চলছে।
অডিটরিয়াম নির্মাণ কাজের শেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে ঠিকাদার মোমেন শিকদারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
শেয়ার করুন
সাইফুর রহমান মিরণ | ২৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্মকাণ্ড পরিচালনায় যুগোপযোগী সুবিধা পেতে বরিশালে বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ হয় প্রায় সাত বছর আগে প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের সময়। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে মেয়র আহসান হাবিব কামাল দায়িত্বে থাকাকালে প্রকল্পটির কার্যাদেশ হয়। এর কাজ পায় মেসার্স মোমেন শিকদার। নির্মাণকাজ অসম্পূর্ণ অবস্থায় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রম্নয়ারি অডিটরিয়ামটির উদ্বোধন হয়। এরপরও পার হয়েছে ২ বছর ৯ মাস। কিন্তু প্রকল্পটির পুরো কাজ গত ছয় বছরে শেষ হয়নি। শুরু থেকেই কাজের নিমœমান ও দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ উঠলেও বেড়েছে প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয়। এসব নিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিককর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাট্যজন সৈয়দ দুলাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বরিশাল পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় শহরে রূপ নিয়েছে অনেক আগে। দীর্ঘদিনেও বরিশালে একটি আধুনিক অডিটরিয়াম নির্মাণ হয়নি। নাটকসহ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। নাট্য ও সাংস্কৃতিককর্মীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি অডিটরিয়াম নির্মাণে উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে ঠিকাদারের গাফিলতিতে ছয় বছরেও তার নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। আগামী বছর মুজিববর্ষ পালিত হবে। আমরা চাই, মুজিববর্ষ পালন যেন ওই অডিটরিয়ামে করতে পারি। তার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
বরিশালের ২৭টি সংগঠনের জোট বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, বরিশালে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার একমাত্র কেন্দ্র হচ্ছে অশ্বিনী কুমার হল। সাউন্ডপ্রুফ না হওয়া, কোলাহলপূর্ণ হওয়ায় এখানে কোনো নাটক, অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয় না। বিষয়টি নিয়ে আমরা বর্তমান মেয়রের কাছে দাবি জানিয়েছি। তিনি দ্রুত ওই অডিটরিয়াম নির্মাণকাজ শেষ করার কথা বলেছেন।
বরিশালে বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম নির্মাণে ২০১৪ সালে ব্যয় ধরা হয় ১৭ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার ৫৫০ টাকা। ভবন নির্মাণে মাটির নিচে ভীত শক্ত করার জন্য ১২০ ফুট গভীরে সিটু পাইল করার কথা থাকলেও তা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ কোটি টাকা। তবে নির্মাণকাজ এখনো শেষ করেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পের তথ্য জানতে বিভিন্ন সময় প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তবে প্রকল্প পরিচালক, ঠিকাদার, পাইল মিস্ত্রি, কারিগরি পর্যবেক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে বিক্ষিপ্ত তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১৪ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন কার্যালয়ে কথা হয় প্রকল্পের পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খান মো. নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ১৭০টি পাইল করা হয়েছে। প্রতিটি পাইলের গভীরতা ৭৮ ফুট। তৎকালীন সময়ে ওই কার্যালয়েই কথা হয় ঠিকাদার এমএস মোমেন শিকদারের সঙ্গে। তিনিও ৭৮ ফুট গভীরে পাইল করা হয়েছে জানান। অডিটরিয়াম নির্মাণ প্রকল্পের কারিগরি পর্যবেক্ষক হাফিজুর রশীদ জানান, অডিটরিয়ামের জন্য ১৭০টি পাইল করা হয়েছে। প্রতিটি পাইলের গভীরতা ৮০ ফুট। প্রধান মিস্ত্রি রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, গভীরতা ৯০ ফুট। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরশনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, পাইলের গভীরতা মাত্র ৪০-৪৫ ফুট হবে। এ বিষয় তখনকার সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের তথ্য সহযোগিতা চাইলেও তা পাওয়া যায়নি। ২০১৪ সালের ৭ মে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় তথ্য চেয়ে প্রকল্প কর্মকর্তা এবং বরিশাল সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খান মো. নূরুল ইসলামের কাছে আবেদন করা হয়। তিনি ২০১৪ সালের ২২ মে শুধু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম, দরপত্র ও কার্যাদেশের তারিখ জানান। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে মন্তব্য করে বাকি তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকেন তিনি। এরপর ২০১৪ সালের ১৭ জুন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর ১০ জুলাই কর্তৃপক্ষ ডাকযোগে দেওয়া চিঠিতে শুধু প্রকল্প ব্যয় জানায়।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিচুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়াম প্রকল্পটি প্রায় সাত বছর আগে নেওয়া হয়। কিন্তু কার্যাদেশ হয় সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের সময়। ওই সময় কাজ নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। তবে সে ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল তা জানা নেই। প্রকল্প ব্যয় বাড়ালেও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। অসম্পূর্ণ অবস্থায় উদ্বোধন হলেও আর কাজ এগোয়নি। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দ্রুত কাজ শুরু করার জন্য বলেছেন। সেই প্রক্রিয়া চলছে।
অডিটরিয়াম নির্মাণ কাজের শেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে ঠিকাদার মোমেন শিকদারের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।