ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৯নং ওয়ার্ড
দূষণ-দুর্গন্ধে দুর্বিষহ পশ্চিম ইসলামবাগ
রিয়াজ হোসেন | ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০
মুঘল আমল থেকেই ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুরান ঢাকার চকবাজার। ৪০০ বছরে এই এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও জনসংখ্যা বাড়লেও অলিগলি রাস্তাঘাট রয়েছে আগের মতোই। ফলে দূষণ-দুর্গন্ধে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে এলাকাবাসীর জীবন। এটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যস্ততম এলাকা ২৯নং ওয়ার্ড। আগে এটি ছিল ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর শায়েস্তা খাঁ রোড, পোস্তা, হাজী রহিম বক্স লেন, ওয়াটার ওয়ার্কার্স রোড, রহমতগঞ্জ লেন নিয়ে এই ওয়ার্ডটি। এর আয়তন ১ বর্গকিলোমিটার।
ওয়ার্ডের সড়কে ফুটপাত বলতে কিছু নেই। রিকশা ও পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ, ঠেলাগাড়িসহ সব ধরনের যানবাহনের গা ঘেঁষে পাশাপাশিই চলতে হয় মানুষকে। এরই মধ্যে সড়কে কাজ শুরু হওয়ায় চান্দিঘাট থেকে বেড়িবাঁধ রোড পর্যন্ত চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। এছাড়া ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রব বেড়েছে।
চান্দিঘাটের বাসিন্দা মাকসুদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, চান্দিঘাট থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত রাস্তাটিতে গত দুই মাস ধরে সংস্কারকাজ চলছে। সপ্তাহে দুদিন কাজ চললেও বাকি দিন বন্ধই থাকে। এই রাস্তায় প্রতিদিন শতাধিক মালবাহী ট্রাক যাতায়াত করে। রাস্তার পাশেই একটি খোলা ম্যানহোল দেখিয়ে বলেন, এটিতে প্রায় এক মাস ধরে সংস্কার চলছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, একদিকে ভারী যানবাহন অন্যদিকে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ধুলাবালির পরিমাণ বেড়েছে। আগে মাস্ক পরে ঘুরতাম। এখন মাস্কেও কাজ হয় না। এলাকার বেশিরভাগ মানুষের শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত।
ওয়াসার পানি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর, ওয়াসার সরবরাহ করা ময়লা-দুর্গন্ধময় পানি পান ও ব্যবহার করে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী। বাসিন্দারা এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ জানিয়েও কোনো ফল পাননি।
ওয়াটার ওয়ার্কাস রোডের বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন জানান, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি কালচে, ময়লাযুক্ত ও প্রকট দুর্গন্ধ আসে। মাঝেমধ্যে এ পানি পান করা তো দূরের কথা, গোসল, অজু করার পর শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয় । এ পানি কাপড় ধোয়া, রান্না করা, হাঁড়িপাতিল ধোয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহারের অযোগ্য।
ওয়ার্ডের কমিউনিটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা ও ডিএসসিসির টিকাদান কেন্দ্র। হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরিবার পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা পাঁচ মাস আগে অবসর নেওয়ার পর আর কেউ এখানে আসেনি। অন্যদিকে ডিএসসির টিকাদান কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ৬ মাসের ছুটিতে রয়েছে। ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
মশার উপদ্রব বাড়লেও নেই মশক নিধনের কার্যক্রম। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ড্রেনের জলাবদ্ধতায় মশার জন্ম হচ্ছে। বছরের এই সময় নালা-নর্দমায় ওষুধ দেয়ার কথা থাকলেও এবার দেয়নি।
ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, মহল্লার অলিগলিতে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। বাসিন্দারা মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। কয়েল জ্বালিয়েও মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। মশার উপদ্রব দিনে দিনে বাড়ছে মহল্লার নালাগুলো পরিষ্কার করা হয় না। এসব নালা থেকেই মশা জন্মায়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ২৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ওয়ার্ডের পানির সংকট রয়েছে। এ সমস্যা সমাধান করা দায়িত্ব ওয়াসার। আমি জনগণের প্রতিনিধি হয়ে ওয়াসা কতৃ©পক্ষকে জানিয়েছি। রাজধানীর জনগণের নিরাপদ পানি দিতে ওয়াসার মাস্টার প্ল্যানের কাজ চলছে। আশাকরি দু-এক মাসের মধ্যে সমাধান হবে। রাস্তার কাজের ধীরগতিকে ঠিকাদারকে দায়ী করে তিনি বলেন, রাস্তার কাজে সঙ্গে কাউন্সিলরদের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে তারা ইচ্ছেমতো কাজ করছে।
শেয়ার করুন
রিয়াজ হোসেন | ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০

মুঘল আমল থেকেই ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুরান ঢাকার চকবাজার। ৪০০ বছরে এই এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও জনসংখ্যা বাড়লেও অলিগলি রাস্তাঘাট রয়েছে আগের মতোই। ফলে দূষণ-দুর্গন্ধে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে এলাকাবাসীর জীবন। এটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যস্ততম এলাকা ২৯নং ওয়ার্ড। আগে এটি ছিল ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর শায়েস্তা খাঁ রোড, পোস্তা, হাজী রহিম বক্স লেন, ওয়াটার ওয়ার্কার্স রোড, রহমতগঞ্জ লেন নিয়ে এই ওয়ার্ডটি। এর আয়তন ১ বর্গকিলোমিটার।
ওয়ার্ডের সড়কে ফুটপাত বলতে কিছু নেই। রিকশা ও পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ, ঠেলাগাড়িসহ সব ধরনের যানবাহনের গা ঘেঁষে পাশাপাশিই চলতে হয় মানুষকে। এরই মধ্যে সড়কে কাজ শুরু হওয়ায় চান্দিঘাট থেকে বেড়িবাঁধ রোড পর্যন্ত চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। এছাড়া ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রব বেড়েছে।
চান্দিঘাটের বাসিন্দা মাকসুদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, চান্দিঘাট থেকে বেড়িবাঁধ পর্যন্ত রাস্তাটিতে গত দুই মাস ধরে সংস্কারকাজ চলছে। সপ্তাহে দুদিন কাজ চললেও বাকি দিন বন্ধই থাকে। এই রাস্তায় প্রতিদিন শতাধিক মালবাহী ট্রাক যাতায়াত করে। রাস্তার পাশেই একটি খোলা ম্যানহোল দেখিয়ে বলেন, এটিতে প্রায় এক মাস ধরে সংস্কার চলছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, একদিকে ভারী যানবাহন অন্যদিকে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ধুলাবালির পরিমাণ বেড়েছে। আগে মাস্ক পরে ঘুরতাম। এখন মাস্কেও কাজ হয় না। এলাকার বেশিরভাগ মানুষের শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত।
ওয়াসার পানি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর, ওয়াসার সরবরাহ করা ময়লা-দুর্গন্ধময় পানি পান ও ব্যবহার করে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী। বাসিন্দারা এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ জানিয়েও কোনো ফল পাননি।
ওয়াটার ওয়ার্কাস রোডের বাসিন্দা মো. আলাউদ্দিন জানান, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি কালচে, ময়লাযুক্ত ও প্রকট দুর্গন্ধ আসে। মাঝেমধ্যে এ পানি পান করা তো দূরের কথা, গোসল, অজু করার পর শরীর থেকে দুর্গন্ধ বের হয় । এ পানি কাপড় ধোয়া, রান্না করা, হাঁড়িপাতিল ধোয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহারের অযোগ্য।
ওয়ার্ডের কমিউনিটি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পরিবার পরিকল্পনা ও ডিএসসিসির টিকাদান কেন্দ্র। হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরিবার পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা পাঁচ মাস আগে অবসর নেওয়ার পর আর কেউ এখানে আসেনি। অন্যদিকে ডিএসসির টিকাদান কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ৬ মাসের ছুটিতে রয়েছে। ফলে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
মশার উপদ্রব বাড়লেও নেই মশক নিধনের কার্যক্রম। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ড্রেনের জলাবদ্ধতায় মশার জন্ম হচ্ছে। বছরের এই সময় নালা-নর্দমায় ওষুধ দেয়ার কথা থাকলেও এবার দেয়নি।
ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, মহল্লার অলিগলিতে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। বাসিন্দারা মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। কয়েল জ্বালিয়েও মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। মশার উপদ্রব দিনে দিনে বাড়ছে মহল্লার নালাগুলো পরিষ্কার করা হয় না। এসব নালা থেকেই মশা জন্মায়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ২৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাজী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ওয়ার্ডের পানির সংকট রয়েছে। এ সমস্যা সমাধান করা দায়িত্ব ওয়াসার। আমি জনগণের প্রতিনিধি হয়ে ওয়াসা কতৃ©পক্ষকে জানিয়েছি। রাজধানীর জনগণের নিরাপদ পানি দিতে ওয়াসার মাস্টার প্ল্যানের কাজ চলছে। আশাকরি দু-এক মাসের মধ্যে সমাধান হবে। রাস্তার কাজের ধীরগতিকে ঠিকাদারকে দায়ী করে তিনি বলেন, রাস্তার কাজে সঙ্গে কাউন্সিলরদের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে তারা ইচ্ছেমতো কাজ করছে।