
একটা বাচ্চারে সারপ্রাইজ দিলাম।
বাচ্চা খুশি। আমিও।
অফিস টাইম শেষে, খুব সম্ভবত ডে-কেয়ার থেকে বের হয়ে, বাবার হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিল একটা বাচ্চা। তার বাম হাতে বাবার হাত আর ডান হাতে ছিল একটা কাগজের ফুল। একটা ৩+ ছেলে বাচ্চা। আদুরে গড়ন এবং তাগড়া মেজাজ। আমি ছিলাম ১৩ ফুট পেছনে। বাচ্চার হাত থেকে যখন ফুল রাস্তায় পড়ে গেল আমি তখন ৭ ফুট পেছনে। অসচেতন হইলে এই ফুল আমার পায়ে পিষ্ট হইতে পারত আলবত। রাস্তায় যেহেতু আমি মানুষ দেখি তাই অসচেতন হয়ে হাঁটলে আমার লস হয়ে যায়। আমার সচেতন পর্যবেক্ষণ এইখানে আলোচনার বিষয় না হইলেও, ঠিক এই কারণেই পায়ের কাছে কাগজের ফুল কোনো আচম্বিত ব্যাপার হয়ে থাকে নাই। উপরন্তু, যুদ্ধের সিজনে বাচ্চার হাতে লাল-সাদা কাগজের ফুলের যে রাজনৈতিক-শৈল্পিক ব্যঞ্জনা থাকতে পারে এই ভেবে খুব সম্ভবত তাদের ফটো তুলতে ইচ্ছা হয়েছিল। ফুল যদি হাত না ফসকাতো, আমি হয়তো পেছন থেকে বাপ-বেটার একটা ফটো তুলে ফেইসবুকে কিছু লাভ রিয়েকশন হাসিল করতে পারতাম। ভুতুম নাম্নী আমার নিজের বাচ্চার থেকে যেহেতু আমি শিখছি, তাই এই ফুলের অতি নিকট ভবিষ্যৎ প্রয়োজনটা বুঝতে আমাকে মাথা খাটাতে হয় নাই।
কুড়িয়ে নেওয়া লাল-সাদা ফুল হাতে আমি বাপ-বেটার পেছনে হাঁটলাম খানিক। কদম সাতেক কি আটেক পিছু নেওয়ার পরই বাচ্চা তার বাপকে টেনে থামাল। আদুরে জেদের ভঙ্গিতে, মা-বাপের ওপর বাচ্চার সব গোস্বার আনডিফাইন্ড শর্তে, হারিয়ে যাওয়া ফুল ফেরত চায় সে। আর সেই মুহূর্তেই, একদম সেই মুহূর্তেই, কিছুটা নাটকীয় ভঙ্গিতে সেই ফুল হাতে আমি বাপ-বেটার পার্শ্বে অবতীর্ণ হই। তারা দুজনেই আমাকে দেখে যেন কিছুটা চমকে যায়। যেন-বা তারা একজন ম্যাজিশিয়ান দেখল; আমিও কপট জাদুকরী গাম্ভীর্য অটুট রেখে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে বাচ্চার হাতে ফুল তুলে দেই। কথা না বলে বরং মুচকি হাসি স্থায়ী রাখি, যতক্ষণ না ফুল বিনিময় করে আমি তাদের অতিক্রম করে যাই। বাচ্চাটা আমার দিকে চেয়ে থাকবে আরও কিছুক্ষণ, অন্তত যতক্ষণ আমাকে দেখা যায়। বাপও হয়তো বাচ্চার দৃষ্টি ফলো করে থাকবে।
আমি কিন্তু আর পেছন ফিরে দেখি নাই। সচেতনভাবেই আর তাকাই নাই। আমাকে আরেকবার দেখতে চাইবার আগ্রহ যদি তাদের হয়, সেই আগ্রহ না মিটাইলে বাচ্চাটার মেমরিতে আমি তো খানিকক্ষণ কিছুটা ম্যাজিক্যাল ক্যারেকটার হয়ে থাকলাম হয়তো।
গল্প শেষ।
এই গল্পের নাম স্ট্রবেরি
কালারের ললিপপ
ফাঁকা রাস্তায় একটা মোটর গাড়ির সাবলীল আনন্দের গতিকে আচমকা প্রবলভাবে ডিনাই করলে যেমন শব্দ হয় আমার পেছনে ঠিক এমন একটা শব্দ হলো। সিনেমায় প্রাণঘাতী অ্যাক্সিডেন্টের শব্দ যেমন হয় আরকি, বিকট। আমি একটা লেন পার হয়ে রোড ডিভাইডারের ওপরে অবস্থান করছিলাম আরেকটা লেন পার হওয়ার বাসনায়। শব্দটা অনুসরণ করে পেছন ফিরে তাকাই। এই তাকানো সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল না; ঘটনার আশপাশের সবাই প্রাইমারি রিফ্লেক্সের কারণেই ত্বরিত সেই গাড়ির দিকে তাকায়। কিন্তু প্রথমেই আমার চোখ গাড়ির দিকে না গিয়ে থমকে গেল একটা স্ট্রবেরি কালারের ললিপপের দিকে। মধ্য রাস্তায় পড়ে আছে, ভর দুপুরের প্রখর আলোয় জ্বলজ্বল করছে। তার পাশে কালো রং পুড়ে ছাই রং হওয়া বোরখা পরিহিত মহিলা। যে ঘটনা প্রায় আমরা কেউ দেখি নাই তিনি সেই ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল, এখনো কোনো রিয়েকশন দেখাতে শুরু করেন নাই। মহিলার বাম পাশে যে টয়োটা হাইএস গাড়ি দাঁড়ানো দেখলাম সেটা কি তখনো গতি জড়তা সামাল দিতে সাসপেনশনে ঝাঁকি খেয়ে থিতু হওয়ার দশায়, বোঝা গেল না। অতটা দ্রুততার সাথে আমি মনে হয় পেছনে তাকাই নাই। দেখার ভুল। নাকি শব্দের সাথে মাথা এমনটা কল্পনা করে নিয়েছে। হতে পারে সিনেমার ইমপ্যাক্ট।
কিন্তু যা সত্যই ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে তা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বিশ্বাস করতেও চাইছিলাম না। দেখতেও চাইছিলাম না। আবার মুখ ঘুরিয়ে চলেও যেতে পারছিলাম না। মনে হলো গাড়ির সামনের অংশ ঘেঁষে উপুড় হয়ে বসে থাকা মহিলার হাঁটুর কাছে একটা বাচ্চার মাথা, মনে হচ্ছে যেন শরীরের বাকি অংশ গাড়ির নিচে। মাথা কি না তা রেজিস্টার করতে করতেই তিন বা চার বছরের একটা অপুষ্ট মেয়ে বাচ্চা বের হয়ে আসলো গাড়ির তল থেকে। ভাবলেশহীন চোখমুখ। আমার পাশ থেকে কারা যেন খুব শব্দ করে সুবহানাল্লাহ ধ্বনি তুলল। আমি সম্ভবত একইভাবে তাকিয়ে ছিলাম।
সিনেমার দৃশ্য হলে হয়তো মা জড়িয়ে ধরে চুমু খেতো, কিন্তু এইখানে ঘটল ভিন্ন ঘটনা, অক্ষত বাচ্চাকে দেখে মা উচ্চশব্দে মরা কান্না জুড়ে দিলেন। কাঁদতে শুরু করার সাথে মেয়েকে মারতেও শুরু করেন। ক্লাস সিক্সে হাত ভেঙ্গে ঘরে ফিরলে আমার আম্মা আগে আমাকে দুইটা থাপ্পড় দিয়েছিলেন। আছে হয়তো কোন রিলেশন। একরকম মারতে মারতেই টেনে রোড ডিভাইডারে উঠলেন। কালো-বেঁটে করে ড্রাইভার সাহেব গাড়ি থেকে নেমে জীবিত বাচ্চার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ, আর এদিক-সেদিক তাকালেন কোনো নির্দিষ্ট দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে। তাকে চারপাশ থেকে মানুষজন যে বাহবা দিয়ে যাচ্ছে সেই দিকে মনোযোগ দেওয়ার মতো মানসিক স্টেইটে মনে হয় তিনি নাই এখন। গাড়িতে চড়ে বসলেন কোনো কথা না বলে।
ডিভাইডারে দাঁড়িয়ে মা দোয়া দরুদ পড়ছেন আর খুব ভালো করে বাচ্চাকে চেক করছেন কোথাও কোনো আঘাত লাগল কিনা। আমারও ইচ্ছা করছিল হাত দিয়ে দেখি বাচ্চাটা আসলে জীবিত আছে কি না। মনে হচ্ছিল হয়তো ঘটনা অন্য কিছু ঘটে গেছে। হয়তো আমার দুর্বল মন সত্য মেনে নিতে না চেয়ে নিজের গড়া ঘটনা দেখছে। বাচ্চাটাকে একটু ছুঁয়ে দেখা দরকার। ভয় লাগছিল ছুঁয়ে দিলে যদি সত্যি ঘটনা রিভিল হয়ে যায়।
জ্যাম লেগে গেছে এতক্ষণে। পেছনের মানুষ তো জানে না এখানে কী ঘটছে তাই স্বভাবসুলভ উচ্চ শব্দে হর্ন বাজিয়ে পরিবেশ অতিষ্ঠ করে তুলছে। আমি সম্ভবত একইভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মুহূর্তে যেমন করে মানুষের জমায়েত হয়েছিল আবার মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল। আমি সময় নিচ্ছিলাম হজম করার জন্য।
গাড়ি চলতে শুরু করল আবার। কয়েকটা গাড়ি চলে গেল, ললিপপটা অক্ষত থেকে জ্বলজ্বল করছিল তখনো। আমি ললিপপটা চূর্ণ হয়ে যেতে দেখতে চাইছিলাম না কিন্তু তবুও তাকিয়ে ছিলাম। কেন যেন চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। মা, বাচ্চা কোলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর দোয়া দরুদ পড়ে ফুঁ দিয়ে চলেছেন।
বাচ্চাটাও দেখলাম আধখাওয়া স্ট্রবেরি ললিপপটার দিকেই চেয়ে আছে। আরও কিছুক্ষণ ললিপপটা গাড়ির চাকার সংস্পর্শ থেকে বেঁচে থাকুক। রোদে জ্বল জ্বল করতে থাকুক।
লিট ফেস্টের সমাপনী দিনে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এলোমেলো হাঁটছিলাম। যেন ফুলের বাগান, দিকে দিকে থইথই করছে মৌ মৌ ঘ্রাণ। পথ যেখানেই টানুক ক্ষতি নাই, এমন হেলদোলে নানানভাষী কলকাকলিতে, বিচিত্রবর্ণের মানুষের সম্মেলনের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করি। কিন্তু বিদায়ের সুর! প্রিয়জনের বিয়োগের মতো রক্তক্ষরণ নিয়ে এক সেশন থেকে আরেক সেশনে যাই। মন দিয়ে কথাবার্তা শুনি। মাঝেমধ্যে একাডেমির পুকুরপাড়ে গিয়ে বসি। জনারণ্য থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে মিহিরাতের দিকে তাকিয়ে ভাবি, আচ্ছা কী এত কথা বলছে এঁরা! মানুষ যখন বনে-জঙ্গলে বাস করত, শিকার করে খেতো তখন সাহিত্য কোন স্তরে ছিল! কোনো এক সন্ধ্যায় একদল মানুষ জড়ো হয়ে যখন মাংস পুড়িয়ে খাচ্ছিল তখনো তাদের আলোচনায় সাহিত্য ছিল? তারপরেই এক শিকারি তার খাবার পাত্রে ঝলসানো মাংসের সঙ্গে একটা গমের দানার স্বাদ পেল আর লোভে পড়ে ক্রমান্বয়ে গমের দিকে, উৎপাদন আর চাষের দিকে হাঁটা তারপর কৃষিবিপ্লব সক্ষমভাষা, বাকশক্তির উন্মেষ। হারিয়ে গেল মানুষের আদি যাপন আমাদের পূর্বপুরুষরা গৃহপালিত প্রাণীতে পরিণত হলো। আহা! সেই গমের দানা! সেটা যদি সেদিন না ফুটত তাহলে আজ আমি হয়তো এই লিট ফেস্টেই থাকতাম না। মানুষের এই পরিবর্তনটা অদ্ভুত সুন্দর।
এবার ঢাকা লিট ফেস্ট বেশ কিছু কাকতালীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। কবি-লেখক-সাহিত্যিকের মধ্যে আফ্রিকা প্রাধান্য পেয়েছে। আলোও কেড়েছে। আব্দুলরাজাক গুরনাহ আর নুরুদ্দিন ফারাহ। আফ্রিকার বঞ্চনার ইতিহাস, সংগ্রাম কীভাবে সাহিত্যে প্রবল তা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। আফ্রিকার অজস্র ভাষা-ঐতিহ্য ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে মার খেতে খেতে খাদের কিনারে পৌঁছেছে। দাসপ্রথা আর বণবৈষম্যের রোমহর্ষক ঘটনা কে না জানে! এইতো সেদিন তারা এসবের নাগপাশ পেরুলো! আবার সাহিত্যঙ্গনে বীরদর্পে উত্থানও হয়েছে। শুধু তানজানিয়ারই যত নিজস্ব ভাষা, যত বৈচিত্র্য তা তো ভাবায়! এই আফ্রিকার সঙ্গেই একসময় এশিয়াসহ ভারতবর্ষ ছিল। আমরা ছিলাম! আফ্রিকার মানুষের সঙ্গে সভ্যতার বেড়ে ওঠার সঙ্গে যেসব অন্যায় হয়েছে টেকটোনিক প্লেট সরে আসায় আমাদের সঙ্গে তা ঘটেনি। হয়তো তেমনটা না হলে আমরা একই ভূখণ্ডে বাস করতাম তাদের আর আমাদের ভিন্ন বলে কোনোও সংস্কৃতি থাকত না! দূরেই যে শুধু সরে এসেছি তাই-ই নয় ভিন্ন ভাষা, রীতিনীতি ও যাপনে, বলনে-চলনে, খাদ্যাভ্যাসেও ভিন্নতর! কী আশ্চর্য! অথচ আজ আবার একই বিন্দুতে উপনীত করেছে শুধু সাহিত্য। সাহিত্যের এই শক্তি, শিল্পের এই যে ক্ষমতা তা সব কিছুকে এভাবেই সংগঠিত করে মানুষ ও মনুষ্যত্বের জন্য।
ভাষা নিয়ে আমরাও নিপীড়নে পড়েছিলাম। সেই আগ্রাসনে আমরা ভাষাভিত্তিক একটা দেশই বানিয়ে ফেললাম। মায়ের ভাষাও রক্ষা হলো। অথচ এই লিট ফেস্টে মহান ভাষা আন্দোলন নিয়ে কিছুই উপস্থাপিত হলো না! না ভাষাসৈনিক, না আছে তাদের বীরত্বের বর্ণনা না আছে ইতিহাস-আলোচনা! কেন? এমনকি সব সাইনবোর্ড হোর্ডিংগুলো পর্যন্ত বাংলা ভাষার অক্ষরহীন। আব্দুলরাজাক গুরনাহ শেষের দিনের আলোচনাতেও তার সোহায়েলি ভাষার জন্য আবেগাপ্লুত বক্তব্য দিয়েছেন। কেন তিনি মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনা করতে পারেননি তাও বলেছেন। তাঁর ১০টা বই সবই ইংরজিতে। হয়তো আজ তার নোবেলপ্রাপ্তি কিংবা বিশ্বাঙ্গনে তাকে পরিচিত করে তুলতে সহায়তা করেছে ইংরেজি। কিন্তু মাতৃভাষা! তার জন্য বেদনায় তিনি ন্যুব্জ হয়ে আছেন। মায়ের ভাষাই যে সবার আগে তা বাংলা ভাষার কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদাও উচ্চারণ করেছেন। ট্রানজিট ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে গ্রহণ করা যেতেই পারে। ভাষার সক্ষমতা থাকলে ভিনভাষার যেকোনো শব্দের যদি অনায়াস প্রবেশও ঘটে তাতে ক্ষতি কি! বাংলাভাষায় বহু ভিনদেশি শব্দের ব্যবহার আছে। আমরা গ্রহণ করেছি। আমরা আত্মস্থ করেছি।
চারদিনের আয়োজনে দেশ-বিদেশের ৫ শতাধিক কবি-লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিক-চিন্তকদের লিট ফেস্টের এই সমাবেশ ১০ বছরে এসে ঠেকল। এবার মোট সেশন হলো ১৭৫টি। ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকেও বাংলাদেশে সাহিত্য নিয়ে এমন সরগরম আয়োজন ছিল না। আশির দশকে বইমেলার শুরু। বইমেলা একুশের চেতনায় সমুজ্জ্বল সেখানে যেমন অন্যভাষার রচনাবলি নিয়ে স্টল-প্যাভেলিয়ন থাকে না তেমনি ভিনভাষীদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণও জানানো হয় না। ফলে এই ধরনের সম্মিলন থাকে না কেবল পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের উপস্থিতি ছাড়া। সেই অর্থে লিট ফেস্ট-ই একমাত্র আয়োজন যেখানে বহু ভাষার, বহুচিন্তার-সাহিত্যের মিলন ঘটে। এখানে যে যে পেশারই থাকুক তারা উৎসব চলাকালীন সাহিত্যেরই সেবা করছে। ব্যাপারটা ভালো। সে ভলান্টিয়ার থেকে শুরু করে পেশায় চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলী। তাদের আচরণ, কথাবার্তা সবই সাহিত্যসুলভ। আহা! যদি বারো মাসই থাকত! সাহিত্যের সঙ্গে তেমন যোগসূত্র নেই তারাও এই শীত উপেক্ষা করে দূর-দূরান্ত থেকে উৎসবে হাজির। এই যে টান! এটাই সাহিত্যের জয়। এই সর্বজনীনতাই সাহিত্যকে সবার মধ্যে একটা আন্দোলনের পথে ধাবিত করতে পারে। যেখানে সবারই কণ্ঠ এক, সুরও এক। লিট ফেস্টেরও জয় সেখানে।
দুয়েকটা ব্যতিক্রম বাদে আমাদের সংস্কৃতি কেমন তা না বলেও, ঘটা করে সেসব বিষয়ে কথা না বললেও বাংলাদেশে এসে ভিনভাষীরা তা বুঝে গেছেন। সামান্য যে কয়েকটা পরিবেশনা ছিল তাতেই মুগ্ধ তারা। রবীন্দ্রসংগীত আর ত্রিপুরা নৃত্যের কথা আলাদাভাবে বলা যায়। এখানেই আমাদের স্বাতন্ত্র্য, স্বকীয়তা, ঐতিহ্য আর পরম্পরার প্রকাশ ঘটেছে। বাঙালিয়ানা নিয়ে আয়োজন ছিল সীমিত, তাতেও ফুটে উঠেছে। আমাদের পিঠাপুলি, গ্রামীণ রীতিনীতি, বাংলার যাত্রা, পুতুলনাচ, লোকশিল্প, হস্ত-কুটিরশিল্প সবই ছিল। বিদেশি সাহিত্যিক যারা এর আগে বাংলাদেশে আসেননি তারা ভাবতেন এদেশের মানুষ গোড়া, নারীরা সবাই বোরকা পরে থাকে, কথা বলে-টলে না। ধর্মান্ধ, মৌলবাদীই বেশি। কিন্তু পথেঘাটে স্বাধীন মানুষ, তাদের আচরণ, কথাবার্তা, আতিথেয়তা, সৌজন্য দেখে ধারণা পাল্টেছে। সাহিত্যমনস্কতা-উন্মাদনায় তাদের হতবিহ্বলতা আড়াল করতে পারেনি। তাদের কাছে আমাদের সাহিত্য পৌঁছেনি। পৌঁছে দেওয়ার আকুলতা বাংলাভাষী সাহিত্যিকদের তাও সামনে এসেছে। অনুবাদ নিয়ে কাজ করার আহ্বান ছিল সবার কণ্ঠেই। কিন্তু কে করবে সেই কাজ তা নিয়ে কোনো সুচিন্তিত বার্তা কেউ-ই দিতে পারেননি। একমাত্র ব্যতিক্রম সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বাংলা বিশ্বসাহিত্য সভার আলোচনাটাকে তিনি জীবন্ত করেছেন। এমন একটা আয়োজনে শুধু বাংলা সাহিত্যবিষয়ক দীর্ঘ আলোচনা থাকবে বিশ্বসাহিত্যের সাহিত্যিকদের জন্য। যেখানে শুধু বাংলাকেই তুলে ধরা হবে। নোবেলপ্রাপ্তির তালিকায় বাংলা সাহিত্যের অন্তত ৮/১০ জনের নাম থাকা অবাক হওয়ার নয় এমন চাউর হওয়া কথাটা কিন্তু অমূলক নয়।
আমাদের শুধু প্রয়োজন ছিল পরিকল্পনার। এই লিট ফেস্ট নিয়ে সংস্কৃতজনদের পরামর্শ নেওয়া হলে হয়তো তারাও ভূমিকা রাখতে পারতেন। সেটা হয়নি। বিদেশি লেখকরা বাংলা সাহিত্য জানেন না। একই লেখককে পরপর তিনবার অতিথি করলে এদেশীয় সাহিত্য সম্পর্কে তারা অবগত হতে পারতেন। ‘মন খারাপ হয়ে যায় যখন ক্যামেরার লেন্সে ভিনভাষী নোবেলজয়ীদের ছবি তুলতে হয় অথচ আমি চাই আমার দেশের, বাংলা ভাষার লেখকদের ছবি তুলতে।’ এমন আক্ষেপ নিয়ে প্রখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন বললেনও বেশ কজন সাহিত্যিকের নাম।
সাধারণ দর্শনার্থী যারা টিকিট কেটে উৎসবে এসেছেন কিংবা দেশীয় সাহিত্যিকরা। তারাও সর্বাবস্থায় শিল্প-সাহিত্য-কলা-সংগীত নানা বিষয়ে আড্ডায় মেতেছিলেন। থরে-থরে এই যে আলোচনা তার সৌন্দের্য সাদা চোখেও রঙিন লাগে। কথা হলো মূল সেশনগুলোতে বাংলার ভাববাদ-দর্শন, আউল-বাউল, সুফিদের নিয়ে আলোচনা থাকতে পারত। উঠে আসতে পারত লালন, হাছন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাছনের কথা গত শতাব্দীতে বলেছিলেন ব্রিটেনে এক আলোচনায়। অজপাড়াগাঁর এক সাধক-কবি, কত বড় মাপের দার্শনিক! আমরা তাকেও তুলে আনতে পারলাম না লিট ফেস্টে। লালনের সাহিত্য-দর্শন, আরজ আলী মাতবরদের চিন্তা বিশ্ববাসীকে জানানোর একটা প্লাটফর্ম তো লিট ফেস্ট-ই হতে পারত! সেই আফসোসটা রয়ে গেল।
নোবেলজয়ীদের দেখতে, কথা শুনতে টিকিট কেটে ঢুকতে হবে? এমন প্রশ্ন ছিল দিকে দিকে। আবার বিশ্বখ্যাত লেখকদের ভিড়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিক্রিয়াও আছে। নির্মলেন্দু গুণের মতোন কবিকে এবার পায়নি ঢাকা লিট ফেস্ট। গুণকে ছাড়া লিট ফেস্ট তাও আবার তাঁর জীবদ্দশায়! এই দৈন্য কার! আয়োজকরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে বিদেশি সাহিত্যিক আনতে পারলে কেন ১০ হাজার টাকা সম্মানীও বাংলাভাষার কবির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় না? তাঁর কবিতা পড়েছেন উৎসবে আয়োজকদের আমন্ত্রিত পশ্চিমবঙ্গের কবি জয় গোস্বামী। এই ঘটনা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আয়োজকদের আহাম্মকও বলেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাভাষার গুরুত্বর্পণ কবি-লেখকরা আয়োজনে থাকলে হয়তো তাদের সেশনগুলোতে বাংলা ভাষা-সাহিত্যসহ নানাবিধ বিষয়ে অভিজ্ঞতা নিতে পারতেন ভিনভাষীরা। তুলনামলূক সাহিত্য আলোচনা থেকে বঞ্চিত থেকে গেল বিশ্বসাহিত্য। উৎসবজুড়ে বাংলার ব্যবহারও ছিল দৃষ্টিকটু, সীমিত। বাংলাদেশি কবি-সাহিত্যিকদের ভিনভাষীদের সেশনে উপস্থিত থাকা ছাড়া সম্ভবত আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ সেই অর্থে ছিল না। কবিতা পাঠেও যারা আমন্ত্রিত হওয়ার কথা সেখানেও উপেক্ষিত থেকে গেছেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়, এই মেলা নিয়ে একটি যোগ্য সমালোচনার দরকার ছিল, সামনের দিনগুলোতে এসব দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য। সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা ছিল, সম্ভবত, এদেশে যারা সত্যিকারের সাহিত্যচর্চা করেন, তাদের অনুপস্থিতি। সেখানে জায়গা করে নিয়েছেন এনজিও এবং করপোরেট কর্তাব্যক্তিরা। ধনী ব্যক্তিদের সাহিত্য মেলাই হয়েছে। কিছু কিছু প্যানেলে যাদের ধরে আনা হয়েছে, প্যানেল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আয়োজক সংস্থায় কাজ করা বা তাঁদের বন্ধুবান্ধব হওয়া ছাড়া তাঁদের নিজেদের কন্টেন্ট সম্পর্কে পাবলিকের ধারণা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।’
একই ভাবে হাসনাত আবদুল হাইয়ের মতো বর্ষীয়ান লেখককে শুধুমাত্র শ্রোতা হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো নিয়েও আয়োজকদের পিণ্ডি চটকেছেন লাঞ্ছিত-বঞ্চিত লেখকরা।
লিট ফেস্ট এলিটদের নাকি প্রলেতারিয়েতদের? এমন বিতর্ক নিয়েও কথা বলেছেন কবি-লেখকরা। তবে এসব বাদে, মিলনমেলা যাকে বলা যায় তার অনেক কিছুই উঠে এসেছে। ভিনভাষীদের সঙ্গে সাহিত্যবিষয়ক আড্ডা-আলোচনা-বিনিময়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির সঙ্গে উগ্রবাদ- মৌলবাদের নিন্দা একই সঙ্গে উদারবাদের পক্ষে অবস্থান এক শিল্পিত চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছে। সমস্ত রকমের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ভাষা এবং সংস্কৃতিকে উচ্চকিত রাখার প্রশ্নে এই যে সবাই একমত, নিঃসন্দেহে তা আনন্দের। স্বাধীনতা হরণ কিংবা দখলদারিত্ব আর একনায়ত্বসূলভ শাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠ মিলিয়েছেন সাহিত্যিকরা। নুরুদ্দিন ফারাহ্’র প্যানেল আলোচনাতেও তা ধ্বনিত হয়েছে।
চিন্তা ও চিন্তকদের সম্মিলন, বড় চিন্তা কিংবা বড় লেখক সবাই সত্যিকারের সাহিত্য নিবেদিত বলেই মনে হয়েছে। ভার্চুয়াল এই সময়ে মানুষের সম্পর্ক এবং কবিতা-সাহিত্য কীভাবে দিনবদলের পন্থায় পরিচালিত করা যায় এবং তার প্রয়োগ ঘটানো যায় সেইসব মতামত গুরুত্ব পেয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি, যুদ্ধ, নারীর ক্ষমতায়ন, বৈষম্য হ্রাস, মি-টু আন্দোলন, উদ্ভিদ বা প্রাণ-প্রকৃতির সুরক্ষায় লেখকদের ভূমিকা কী হতে পারে সেসবের দীর্ঘ সেশন দরকার ছিল।
বাংলা একাডেমিতে এই আয়োজন না করে আয়োজকরা কোনো পাঁচতারা হোটেল কিংবা নিজেদের মালিকানাধীন ইউল্যাব ক্যাম্পাসে ব্যক্তিগত প্রদর্শনী হিসেবে করলে অবশ্য এত সমালোচনার কিছুই হয়তো উঠত না।
প্রযুক্তির এই বিকাশমান সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি-বিনোদনে মানুষের অনাগ্রহকেই যেখানে স্বাভাবিক আচরণ ভাবা হয় সেখানে সেইসব দিক বিবেচনায় দশম আসরের এই লিট ফেস্ট আয়োজন কিছুটা হলেও হালে পানি সঞ্চার করেছে। তর্ক আর প্রতিতর্কের এই যে উপলক্ষ তৈরি করে দেওয়া এ উৎসব তো সেখানেই সফল।
আকিরা কুরোসাওয়া, জাপানি চলচ্চিত্রের সম্রাট, সিনেমা বানিয়েছিলেনএবং একদিক থেকে ভেবে দেখতে গেলে, তিনি সেই অর্থে নিছক সিনেমা বানানোর চক্করে ছিলেন না। এমনকি যখন সত্যতর অর্থে, শ্যুটিং প্রস্তুতির জন্য রিসোর্সের অভাব বোধ করতেন, তিনি ভবিষ্যতে নির্মাণের জন্য সিনেমার প্রস্তুতি নিতেনপ্রতিটি ডিটেলের কথা নিখুঁতভাবে চিন্তা করে। ক্রিটিক এবং জাপানি সিনেমার ইতিহাসবেত্তা ডোনাল্ড রিচি ‘পরিচালকের স্মরণে’ শীর্ষক এক রচনায় জাপানি চলচ্চিত্রের সংজ্ঞায়নে অন্য যে কারও চেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন কুরোসাওয়ার ‘পণ্যটিকে নিখুঁত করবার ভাবনা’কথাটির ওপর। ‘যদিও অনেক চলচ্চিত্র সংস্থা-ই হয়তো নির্মাতার এমন আত্মনিবেদনে আলোকিত হয়ে উঠত’, রিচি লেখেন, ‘জাপানি স্টুডিওগুলো প্রায়ই ইনোভেশনের চেয়ে সহযোগিতায় অধিকতর মুগ্ধ হয়।’
কুরোসাওয়ার পক্ষে, তার চলচ্চিত্র যাত্রাপথে, উচ্চাভিলাষী প্রজেক্টের জন্য, টাকাপয়সা সংগ্রহ কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। রিচি সত্তর দশকের একসময়ের কথা স্মরণ করেন, ‘তিনি বুঝেছিলেন কাগেমুশা বাস্তবিক আলোর মুখ দেখবে না, কুরোসাওয়া সময় কাটাচ্ছিলেন প্রতিটি দৃশ্য এঁকে, এই সংগ্রহটি অবাস্তবায়িত চলচ্চিত্রের জায়গা নিতে পারত। তিনি অন্য কোনো কোনো পরিচালকের মতো স্টোরি বোর্ড ব্যবহার করতেন। এখন সেসব গ্যালারির প্রশস্ততাকে উজ্জ্বল করছেঅনির্মিত মাস্টারপিসের প্রদর্শনকক্ষ।’ যখন সিনেমা নির্মাণে অপারগ ছিলেন তিনি সেসব লিখে ফেলতেন, লেখা সাঙ্গ হলে নেমে পড়তেন আঁকায়।
‘আমার উদ্দেশ্য ভালো মতো পেইন্ট করা ছিল না। আমি নানা রকম জিনিসকে নিজের হাত দিয়ে নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম’। কিন্তু আপনারা যেমন দেখতে পাচ্ছেন, সম্রাট জানতেন তিনি কী চান, সুনির্দিষ্ট শটটি স্পষ্টভাবেই আগেই দৃশ্যকল্পনায় তার প্রচুর সময় ও শক্তি খরচের ব্যাপারটি রিপ্রেজেন্ট করত। মাঝেমধ্যে কুরোসাওয়ার নিজের আর্টওয়ার্ক কম পরিচিত সিনেমার অফিশিয়াল পোস্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো, (কম পরিচিত মানে, কুরোসাওয়ার বিশাল কাজের প্রেক্ষিতে) ব্যক্তিগত কাজ যেমন সত্তর দশকের ডোডোসকাদেন কিংবা শেষ কাজ, ১৯৯৩-এর ম্যাদাদেও।
আমরা নথিভুক্ত করতে পারি চলচ্চিত্র পরিচালকের চিত্রকলার প্রতি আগ্রহএবং হয়তো ফিল্ম নির্মাণে, বেশির ভাগটাই তার বড় ভাই হেইগোর প্রভাব, টোকিও শহরে উনিশশো তেইশের পহেলা সেপ্টেম্বরের প্রবল ভূমিকম্পের পর কুরোসাওয়া দাদার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। নির্বাক চলচ্চিত্রের একজন সজীব ধারাভাষ্যকার এবং প্রলেতারিয়ান আর্টিস্ট লিগের প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী হেইগো, ১৯৩৩ সালে তার রাজনৈতিক বিশ্বাস ভঙ্গ ও নিজের কেরিয়ার-বিধ্বংসী সবাক চলচ্চিত্রের আবির্ভাবের দরুন আত্মহত্যা করেন। তরুণ আকিরা এক দশক পর পরিচালনার উদ্বোধনী কাজটি করেন, পঞ্চান্ন বছর ধরে ধারাবাহিক থাকবেন তিনি পরিচালনায়। আমরা নিশ্চিত জানি, সব সম্ভাব্য স্তরেই হেইগো ছোট ভাইয়ের জন্য গর্বিত হতেন।
ধ্রুপদি চলচ্চিত্র ‘দ্য সেভেন্থ সিল’-এর দাবা খেলাটা দেখেছেন!
দৃশ্যটি বিশ্বের অসংখ্য সিনেমাশিক্ষার্থী, প্রেমিক, ভাবুককে ভাবিয়েছে। সিনেমার কেন্দ্রীয় ঘটনা এটি। কত অল্প আয়োজনে বিশ্বের চিন্তাজগৎ আলোড়িত করা যায় এ তার এক অনুপম দৃষ্টান্ত। যদিও দাবা খেলায় আগ্রহী স্টুয়ার্ট রুবেন খানিক ভিন্ন মত দিয়েছেন। ‘ভিন্ন’ বলেই তুলে ধরা দরকার।
আন্তোনিয়াস ব্লক, একজন নাইট, ক্লান্ত, ক্রুসেডের যুদ্ধ থেকে ফিরছেন নিজভূমে। নিজের প্রিয়তম দেশ প্লেগে মহামারীতে বিধ্বস্ত। ব্লক সহসা আবিষ্কার করলেন, আহত হৃদয়কে অপমান করতেই মৃত্যু তাঁকে নিতে এসেছে। তাই তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন, এমনকি মৃত্যুকে। যদি তিনি জেতেন পরিবারের কাছে ফেরা; নইলে খেল খতম! জীবন ও নশ্বরতা বিষয়ে ভাবানোর মতন মন্তব্য করলেও এই দাবাযুদ্ধ দাবায় উৎসাহীদের প্রামাণ্যতা সম্পর্কে করে তোলে উৎসাহী। ‘চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ভুলভাল করা স্বাভাবিক।’ স্টুয়ার্ট রুবেন, এক দাবাচিন্তক মন্তব্য করেন। তিনি আরও যোগ করেন, ‘যদিও চতুর্দশ শতক সিনেমার পটভূমি, এই তথ্য প্রায় নিশ্চিত যে নিয়মটিতে তারা খেলছিলেন তার প্রতিষ্ঠা পঞ্চদশ শতকে। মৃত্যু একটি চাল দেয়, সাদা রাজাকে চেক দেওয়ার পর, কালো তার রাজা তুলে নেয়, তারপর খেলা ডিজলভ হয়ে যায়।’
খেলা শেষ। কালো জেতে। মনে হতে পারে, এই খেলাটিতে কোনো দাবা পরামর্শক ছিলেন না। খেলাটা এত দ্রুত! সাদা খেলা শুরু করে (ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগের নিয়ম সাদা সবসময় শুরু করবে), খেলাটা সাদায় শুরু হলো পরে বদলে গেল এবং মৃত্যু যে রানী অধিকার করল সেটাকে বড় চাল হিসেবে দেখানো হয়েছে; অথচ তখন রানী কম শক্তির ঘুঁটি ছিল, তাই এই বড় করে দেখানো কোনো অর্থ বহন করে না। ‘ঘটনা হচ্ছে, খেলা গড়ায় না।’ রুবেন লেখেন এক নিবন্ধে। ‘আপনি যা আশা করেন তা হলো, খেলা যত গড়াবে ঘুঁটি কমবে বোর্ডে। আপনি কখনো আশা করবেন না ঘুঁটি কাটা পড়া সত্ত্বেও অনেক অনেক ঘুঁটি থাকবে।’
সুতরাং এ ছবিটি কী? রুবেন বুঝে উঠতে পারেন না। ব্যারিম্যানসুলভ বিমূর্ততা ও অস্তিত্বের ক্লান্তি নিয়ে মন্তব্য না স্রেফ এক সাজানো জিনিস! দাবাচিন্তক সিদ্ধান্ত টানেন, ‘কোনোটাই না।’
হয়তো ফিল্ম ক্রুদের মধ্যে ঘটা অসংখ্য খেলার একটা এটা। খেলাটা তারা দূর থেকে যেকোনো এক অবস্থানে তুলে ধরেছেন। কেননা খেলার শেষ দিকে বোর্ডে অধিক ভিড় অযৌক্তিক লাগে। আমি আসলে শেষ দশাটা কেন চেক মেট ঠিকঠাক দেখে উঠতে সক্ষম হইনি।
দেখেননি এখনো? সিনেমাটা এবার দেখে ফেলুন।
বিদেশি নিবন্ধ অবলম্বনে সৈকত দে
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি মধ্যে নালের বেড়া ওরে হাত বাড়ায়া দিতে পান কপাল দেখি পোড়া, প্রাণ কোকিলা রে এই গানের গীতিকবি কে? তার বিখ্যাত দুটি কাব্যর নাম কী কী? প্রশ্নটির সঠিক উত্তর হাতে লিখে পাঠান ধ্রুপদির ঠিকানায়। নির্বাচিত সঠিক উত্তরদাতাদের একজন পাবেন ধ্রুপদির সৌজন্যে মহামূল্যবান বই। উত্তর ধ্রুপদির ডেস্কে পৌঁছতে হবে ১৭ জানুয়ারির আগে। ধ্রুপদি কুইজ ১ এর সঠিক উত্তর জীবনানন্দ দাশ, কমলালেবু এবং কলকাতা। অজস্র উত্তরের মধ্যে শতভাগ সঠিক কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। ৬৬% সঠিক উত্তরের মধ্যে লটারি করে মহামূল্যবান বই জিতেছেন ফিরিঙ্গিবাজার কোতোয়ালির মো. সেলিম। আপনাকে অভিনন্দন। আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে মহামূল্যবান বই
জয়েসের জন্য দরুদ
ছড়ানো ছিটানো শহরের পথে পথে
একলা এবং অনেকে একসাথে
আমরা খেলেছি আদম হাওয়ার খেলা
নাম দিলো যে সকল বস্তুকে
রাতের প্রবল ঢালুরেখা ধরে ধরে
ছুটে চলা কোন সুবেহ্ সাদিকে
আমরা খুঁজেছি শব্দ এবং মানে
(এখনো স্মরণে আছে)
কাকে বলে চাঁদ, মৃত্যু এবং আলো
মানুষের যত ভুলে যাওয়া ডাকনাম
ইমেজিজমে আমরা ছিলাম বেশ
কিউবিজমের ঝুলে পড়া বাটখারা
আমরা ছিলাম প্রথাগত সংঘের
বিশ্ব-বিদ্যা-লয় করে যার পূজা
আমরা রচেছি দাড়িকমাহীন যত
অক্ষর যার নাই ঘরদোরছাদ
পঙ্ক্তির পরে পঙ্ক্তি মেলেছে ডানা
আলেহান্দ্রার পাঠাগার করে ফাঁকা
তুমি তো তখন পরবাসে ছিলে একা
দূর শহরে শান দিয়ে গেছো ধীরে
একলা তোমার বেছে নেয়া অস্ত্রের
শিল্পের যত চোরাগলি, রাজপথে
একলা গড়েছো জটিল গোলকধাঁধা
ক্ষুদ্রের থেকে ক্ষুদ্র অথচ অসীম
ইতিহাস থেকে বেশি মানুষের ভিড়
সমীহ জাগানো কুখ্যাতি কুড়িয়েছো
আমরা হয়তো মরেই যেতাম কবে
না দেখে তোমার অদ্ভুতুড়ে পশু
অথবা গোলাপ গোলকধাঁধার চোখে
স্মৃতি ধরে রাখা উজ্জ্বল কেরামতি
প্রতিধ্বনি করে যেন ঠিক ভার্জিল
রাত্রির যত রাস্তায় ঘুরে ঘুরে
ছুটেছে তোমার গুলজার নরকেরা
জ্বলজ্বল করে সুর আর রূপকের
স্বর্ণের মতো যেখানে তোমার ছায়া
কী হয় যদি-বা আমরা কাপুরুষ
পৃথিবীতে থাকে একজনও যদি বীর
কী আসে যায় এইসব বেদনায়
কখনো নিজেকে সুখী কেউ যদি ভাবে
কী আসে যায় হারালে প্রজন্মেরা
ন্যায্যতা দিলে শত শত পুস্তকে
আমিও যাহার আয়নায় চোখ রেখে
হারিয়েছিলাম নিজেকে সেই কবে
আমি হই সেই ছন্নছাড়ার দলে
একগুঁয়ে তুমি রক্ষা করেছো যাদের
দেখোনি কখনো চর্মচক্ষে তবু
আজও দূর থেকে করছো পরিত্রাণ
জেমস জয়েস
একজন মানুষের একটি দিনের ভেতরেই থাকে
এ যাবৎ জন্ম নেয়া সবগুলি দিন, সেই অচিন্ত্যনীয়
প্রথম দিনের থেকে, যখন এক জাহাঁবাজ খোদা
আলাদা করেছিলেন দিনগুলি এবং বেদনাগুলিকে,
সেই অপরের থেকে, যখন সময়ের এক ঐহিক
সর্বব্যাপী স্রোত ফিরে যায় তার উৎসে, অনন্তের দিকে;
এবং প্রজ্বলিত করে বর্তমান, অতীত আর ভবিষ্যৎকে
যা এখন এই আমার ভেতরে বহমান।
সকাল আর সন্ধ্যার অন্তস্তলে কুণ্ডলি পাকিয়ে থাকে
এই জগতের ইতিহাস। আর রাত্রির মহাফেজখানায়
আমার পায়ের কাছে আমি দেখি ইহুদির সদাভ্রাম্যমানতা
তরবারির মুখে কার্থেজের পতন, বেহেশত আর দোযখ।
হে প্রভু, সেই সাহস আর আনন্দ আমাকে দাও
যেন আরোহণ করতে পারি এই দিবসের চূড়ায়।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মাত্র এক বছরেই পাল্টে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়ে ঋণদাতা হিসেবে গর্ব করা দেশের মানুষের এখন নাকাল দশা। বিদেশি মুদ্রা বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে সরকার জরুরি অনেক পণ্য আমদানি করতে পারছে না। এতে সরবরাহজনিত সংকট তৈরি হয়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম।
একই কারণে জ¦ালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। গরম আর লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মানুষ। হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বাধ্য হয়ে সরকার অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাস সংকটে শিল্পোৎপাদন কমে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এটিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, নিত্যপণ্য আর বিদ্যুতে ভয়াবহ সংকটে আছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ মে মাসের মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সংগতি না মেলায় ধার করে চলতে হচ্ছে অনেককে। এখন গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে খরচ করতে হচ্ছে বেশি। যেটি কয়েক মাস আগেও গ্রামে বেশি ছিল। ব্যয়ের চাপ সামলাতে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু আমদানি পণ্যে নয়, দেশে উৎপাদিত পণ্য ঘিরেও নানান সিন্ডিকেট সক্রিয়। এসব সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সব পণ্য। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশে^র প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
২০২১ সালের আগস্টে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। করোনায় আমদানি কমে যাওয়ায় এবং অনেক ঋণপত্রে (এলসি) নিষ্পত্তি ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে দেওয়ায় রিজার্ভ ওই পরিমাণে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ সব পণ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক বছরের মধ্যে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে আসে। বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের চাপ এবং আমদানির পুরনো দায় পরিশোধের চাপে বেসামাল হয়ে পড়ে সরকার।
ফলে ২০২১ সালে যেখানে শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ২০২২ সালে সেই বাংলাদেশকেই ডলার ধারের জন্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে হাত পাততে হয়েছে। নানা রকম শর্ত মেনে আইএমএফের কাছ থেকে ধার নিতে হয় বাংলাদেশকে। সংস্থাটির কাছ থেকে সাড়ে তিন বছরের কিস্তিতে ৪৭০ কোটি ডলার ধারের প্রথম কিস্তি পেলেও দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আইএমএফের শর্তের কারণে রিজার্ভ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে গিয়ে আমদানি সীমিত করে আনতে হয়েছে। অনেক আমদানির বিলও বকেয়া পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, এখন জরুরি প্রয়োজনের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা, এলএনজির মতো জ¦ালানিও আনতে পারছে না।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সর্বশেষ হিসাব বলছে, শিল্পের অবদান কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপিতে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সামগ্রিক এই সংকটের বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ¦ালানি সংকট সমাধানে যেগুলো ডেফার্ড পেমেন্ট আছে সেগুলো দিতে হবে। সেগুলো দিয়ে যে সাপ্লাই চেইন বন্ধ আছে সেগুলোকে সচল করতে হবে। এটাকে প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে। দরকার হলে অন্য জায়গায় যে প্রকল্পগুলো আছে সেসব প্রকল্পে ধীরে যেতে হবে। প্রকল্পের টাকা এখানে নিয়ে আসতে হবে। কারণ আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। ডলার খরচের ক্ষেত্রে জ¦ালানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন জ¦ালানি না কিনে যদি রিজার্ভ বাড়ানোর চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি করতে পারছেন না। কারণ তারা উৎপাদন করতে পারছেন না। তখন রপ্তানি আয়ও কমে যাবে। তখন রিজার্ভে অন্য সমস্যা আসবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদ্ধতি কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তাফিজ বলেন, বাজারে খুব দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রানীতি দুটোই ব্যবহার করতে হবে। এখন টাকার সরবরাহ যা আছে তা কমাতে হবে। সুদহারকে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। আর যেসব জায়গায় প্রয়োজন আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। পেঁয়াজের বাজারে কী হলো সেটি তো দেখা গেছে। উৎপাদন কত, চাহিদা কত এগুলো ঠিক মতো পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময়মতো আমদানি করলে তো এটি এতটা বাড়ত না।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির এমন পরিস্থিতিতে ফ্যামিলি কার্ড বাড়াতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করে কিছুটা সামাল দিতে হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।