
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি মধ্যে নালের বেড়া ওরে হাত বাড়ায়া দিতে পান কপাল দেখি পোড়া, প্রাণ কোকিলা রে এই গানের গীতিকবি কে? তার বিখ্যাত দুটি কাব্যর নাম কী কী? প্রশ্নটির সঠিক উত্তর হাতে লিখে পাঠান ধ্রুপদির ঠিকানায়। নির্বাচিত সঠিক উত্তরদাতাদের একজন পাবেন ধ্রুপদির সৌজন্যে মহামূল্যবান বই। উত্তর ধ্রুপদির ডেস্কে পৌঁছতে হবে ১৭ জানুয়ারির আগে। ধ্রুপদি কুইজ ১ এর সঠিক উত্তর জীবনানন্দ দাশ, কমলালেবু এবং কলকাতা। অজস্র উত্তরের মধ্যে শতভাগ সঠিক কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। ৬৬% সঠিক উত্তরের মধ্যে লটারি করে মহামূল্যবান বই জিতেছেন ফিরিঙ্গিবাজার কোতোয়ালির মো. সেলিম। আপনাকে অভিনন্দন। আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে মহামূল্যবান বই
লিট ফেস্টের সমাপনী দিনে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এলোমেলো হাঁটছিলাম। যেন ফুলের বাগান, দিকে দিকে থইথই করছে মৌ মৌ ঘ্রাণ। পথ যেখানেই টানুক ক্ষতি নাই, এমন হেলদোলে নানানভাষী কলকাকলিতে, বিচিত্রবর্ণের মানুষের সম্মেলনের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করি। কিন্তু বিদায়ের সুর! প্রিয়জনের বিয়োগের মতো রক্তক্ষরণ নিয়ে এক সেশন থেকে আরেক সেশনে যাই। মন দিয়ে কথাবার্তা শুনি। মাঝেমধ্যে একাডেমির পুকুরপাড়ে গিয়ে বসি। জনারণ্য থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে মিহিরাতের দিকে তাকিয়ে ভাবি, আচ্ছা কী এত কথা বলছে এঁরা! মানুষ যখন বনে-জঙ্গলে বাস করত, শিকার করে খেতো তখন সাহিত্য কোন স্তরে ছিল! কোনো এক সন্ধ্যায় একদল মানুষ জড়ো হয়ে যখন মাংস পুড়িয়ে খাচ্ছিল তখনো তাদের আলোচনায় সাহিত্য ছিল? তারপরেই এক শিকারি তার খাবার পাত্রে ঝলসানো মাংসের সঙ্গে একটা গমের দানার স্বাদ পেল আর লোভে পড়ে ক্রমান্বয়ে গমের দিকে, উৎপাদন আর চাষের দিকে হাঁটা তারপর কৃষিবিপ্লব সক্ষমভাষা, বাকশক্তির উন্মেষ। হারিয়ে গেল মানুষের আদি যাপন আমাদের পূর্বপুরুষরা গৃহপালিত প্রাণীতে পরিণত হলো। আহা! সেই গমের দানা! সেটা যদি সেদিন না ফুটত তাহলে আজ আমি হয়তো এই লিট ফেস্টেই থাকতাম না। মানুষের এই পরিবর্তনটা অদ্ভুত সুন্দর।
এবার ঢাকা লিট ফেস্ট বেশ কিছু কাকতালীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। কবি-লেখক-সাহিত্যিকের মধ্যে আফ্রিকা প্রাধান্য পেয়েছে। আলোও কেড়েছে। আব্দুলরাজাক গুরনাহ আর নুরুদ্দিন ফারাহ। আফ্রিকার বঞ্চনার ইতিহাস, সংগ্রাম কীভাবে সাহিত্যে প্রবল তা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। আফ্রিকার অজস্র ভাষা-ঐতিহ্য ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে মার খেতে খেতে খাদের কিনারে পৌঁছেছে। দাসপ্রথা আর বণবৈষম্যের রোমহর্ষক ঘটনা কে না জানে! এইতো সেদিন তারা এসবের নাগপাশ পেরুলো! আবার সাহিত্যঙ্গনে বীরদর্পে উত্থানও হয়েছে। শুধু তানজানিয়ারই যত নিজস্ব ভাষা, যত বৈচিত্র্য তা তো ভাবায়! এই আফ্রিকার সঙ্গেই একসময় এশিয়াসহ ভারতবর্ষ ছিল। আমরা ছিলাম! আফ্রিকার মানুষের সঙ্গে সভ্যতার বেড়ে ওঠার সঙ্গে যেসব অন্যায় হয়েছে টেকটোনিক প্লেট সরে আসায় আমাদের সঙ্গে তা ঘটেনি। হয়তো তেমনটা না হলে আমরা একই ভূখণ্ডে বাস করতাম তাদের আর আমাদের ভিন্ন বলে কোনোও সংস্কৃতি থাকত না! দূরেই যে শুধু সরে এসেছি তাই-ই নয় ভিন্ন ভাষা, রীতিনীতি ও যাপনে, বলনে-চলনে, খাদ্যাভ্যাসেও ভিন্নতর! কী আশ্চর্য! অথচ আজ আবার একই বিন্দুতে উপনীত করেছে শুধু সাহিত্য। সাহিত্যের এই শক্তি, শিল্পের এই যে ক্ষমতা তা সব কিছুকে এভাবেই সংগঠিত করে মানুষ ও মনুষ্যত্বের জন্য।
ভাষা নিয়ে আমরাও নিপীড়নে পড়েছিলাম। সেই আগ্রাসনে আমরা ভাষাভিত্তিক একটা দেশই বানিয়ে ফেললাম। মায়ের ভাষাও রক্ষা হলো। অথচ এই লিট ফেস্টে মহান ভাষা আন্দোলন নিয়ে কিছুই উপস্থাপিত হলো না! না ভাষাসৈনিক, না আছে তাদের বীরত্বের বর্ণনা না আছে ইতিহাস-আলোচনা! কেন? এমনকি সব সাইনবোর্ড হোর্ডিংগুলো পর্যন্ত বাংলা ভাষার অক্ষরহীন। আব্দুলরাজাক গুরনাহ শেষের দিনের আলোচনাতেও তার সোহায়েলি ভাষার জন্য আবেগাপ্লুত বক্তব্য দিয়েছেন। কেন তিনি মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনা করতে পারেননি তাও বলেছেন। তাঁর ১০টা বই সবই ইংরজিতে। হয়তো আজ তার নোবেলপ্রাপ্তি কিংবা বিশ্বাঙ্গনে তাকে পরিচিত করে তুলতে সহায়তা করেছে ইংরেজি। কিন্তু মাতৃভাষা! তার জন্য বেদনায় তিনি ন্যুব্জ হয়ে আছেন। মায়ের ভাষাই যে সবার আগে তা বাংলা ভাষার কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদাও উচ্চারণ করেছেন। ট্রানজিট ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে গ্রহণ করা যেতেই পারে। ভাষার সক্ষমতা থাকলে ভিনভাষার যেকোনো শব্দের যদি অনায়াস প্রবেশও ঘটে তাতে ক্ষতি কি! বাংলাভাষায় বহু ভিনদেশি শব্দের ব্যবহার আছে। আমরা গ্রহণ করেছি। আমরা আত্মস্থ করেছি।
চারদিনের আয়োজনে দেশ-বিদেশের ৫ শতাধিক কবি-লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিক-চিন্তকদের লিট ফেস্টের এই সমাবেশ ১০ বছরে এসে ঠেকল। এবার মোট সেশন হলো ১৭৫টি। ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকেও বাংলাদেশে সাহিত্য নিয়ে এমন সরগরম আয়োজন ছিল না। আশির দশকে বইমেলার শুরু। বইমেলা একুশের চেতনায় সমুজ্জ্বল সেখানে যেমন অন্যভাষার রচনাবলি নিয়ে স্টল-প্যাভেলিয়ন থাকে না তেমনি ভিনভাষীদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণও জানানো হয় না। ফলে এই ধরনের সম্মিলন থাকে না কেবল পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের উপস্থিতি ছাড়া। সেই অর্থে লিট ফেস্ট-ই একমাত্র আয়োজন যেখানে বহু ভাষার, বহুচিন্তার-সাহিত্যের মিলন ঘটে। এখানে যে যে পেশারই থাকুক তারা উৎসব চলাকালীন সাহিত্যেরই সেবা করছে। ব্যাপারটা ভালো। সে ভলান্টিয়ার থেকে শুরু করে পেশায় চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলী। তাদের আচরণ, কথাবার্তা সবই সাহিত্যসুলভ। আহা! যদি বারো মাসই থাকত! সাহিত্যের সঙ্গে তেমন যোগসূত্র নেই তারাও এই শীত উপেক্ষা করে দূর-দূরান্ত থেকে উৎসবে হাজির। এই যে টান! এটাই সাহিত্যের জয়। এই সর্বজনীনতাই সাহিত্যকে সবার মধ্যে একটা আন্দোলনের পথে ধাবিত করতে পারে। যেখানে সবারই কণ্ঠ এক, সুরও এক। লিট ফেস্টেরও জয় সেখানে।
দুয়েকটা ব্যতিক্রম বাদে আমাদের সংস্কৃতি কেমন তা না বলেও, ঘটা করে সেসব বিষয়ে কথা না বললেও বাংলাদেশে এসে ভিনভাষীরা তা বুঝে গেছেন। সামান্য যে কয়েকটা পরিবেশনা ছিল তাতেই মুগ্ধ তারা। রবীন্দ্রসংগীত আর ত্রিপুরা নৃত্যের কথা আলাদাভাবে বলা যায়। এখানেই আমাদের স্বাতন্ত্র্য, স্বকীয়তা, ঐতিহ্য আর পরম্পরার প্রকাশ ঘটেছে। বাঙালিয়ানা নিয়ে আয়োজন ছিল সীমিত, তাতেও ফুটে উঠেছে। আমাদের পিঠাপুলি, গ্রামীণ রীতিনীতি, বাংলার যাত্রা, পুতুলনাচ, লোকশিল্প, হস্ত-কুটিরশিল্প সবই ছিল। বিদেশি সাহিত্যিক যারা এর আগে বাংলাদেশে আসেননি তারা ভাবতেন এদেশের মানুষ গোড়া, নারীরা সবাই বোরকা পরে থাকে, কথা বলে-টলে না। ধর্মান্ধ, মৌলবাদীই বেশি। কিন্তু পথেঘাটে স্বাধীন মানুষ, তাদের আচরণ, কথাবার্তা, আতিথেয়তা, সৌজন্য দেখে ধারণা পাল্টেছে। সাহিত্যমনস্কতা-উন্মাদনায় তাদের হতবিহ্বলতা আড়াল করতে পারেনি। তাদের কাছে আমাদের সাহিত্য পৌঁছেনি। পৌঁছে দেওয়ার আকুলতা বাংলাভাষী সাহিত্যিকদের তাও সামনে এসেছে। অনুবাদ নিয়ে কাজ করার আহ্বান ছিল সবার কণ্ঠেই। কিন্তু কে করবে সেই কাজ তা নিয়ে কোনো সুচিন্তিত বার্তা কেউ-ই দিতে পারেননি। একমাত্র ব্যতিক্রম সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বাংলা বিশ্বসাহিত্য সভার আলোচনাটাকে তিনি জীবন্ত করেছেন। এমন একটা আয়োজনে শুধু বাংলা সাহিত্যবিষয়ক দীর্ঘ আলোচনা থাকবে বিশ্বসাহিত্যের সাহিত্যিকদের জন্য। যেখানে শুধু বাংলাকেই তুলে ধরা হবে। নোবেলপ্রাপ্তির তালিকায় বাংলা সাহিত্যের অন্তত ৮/১০ জনের নাম থাকা অবাক হওয়ার নয় এমন চাউর হওয়া কথাটা কিন্তু অমূলক নয়।
আমাদের শুধু প্রয়োজন ছিল পরিকল্পনার। এই লিট ফেস্ট নিয়ে সংস্কৃতজনদের পরামর্শ নেওয়া হলে হয়তো তারাও ভূমিকা রাখতে পারতেন। সেটা হয়নি। বিদেশি লেখকরা বাংলা সাহিত্য জানেন না। একই লেখককে পরপর তিনবার অতিথি করলে এদেশীয় সাহিত্য সম্পর্কে তারা অবগত হতে পারতেন। ‘মন খারাপ হয়ে যায় যখন ক্যামেরার লেন্সে ভিনভাষী নোবেলজয়ীদের ছবি তুলতে হয় অথচ আমি চাই আমার দেশের, বাংলা ভাষার লেখকদের ছবি তুলতে।’ এমন আক্ষেপ নিয়ে প্রখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন বললেনও বেশ কজন সাহিত্যিকের নাম।
সাধারণ দর্শনার্থী যারা টিকিট কেটে উৎসবে এসেছেন কিংবা দেশীয় সাহিত্যিকরা। তারাও সর্বাবস্থায় শিল্প-সাহিত্য-কলা-সংগীত নানা বিষয়ে আড্ডায় মেতেছিলেন। থরে-থরে এই যে আলোচনা তার সৌন্দের্য সাদা চোখেও রঙিন লাগে। কথা হলো মূল সেশনগুলোতে বাংলার ভাববাদ-দর্শন, আউল-বাউল, সুফিদের নিয়ে আলোচনা থাকতে পারত। উঠে আসতে পারত লালন, হাছন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাছনের কথা গত শতাব্দীতে বলেছিলেন ব্রিটেনে এক আলোচনায়। অজপাড়াগাঁর এক সাধক-কবি, কত বড় মাপের দার্শনিক! আমরা তাকেও তুলে আনতে পারলাম না লিট ফেস্টে। লালনের সাহিত্য-দর্শন, আরজ আলী মাতবরদের চিন্তা বিশ্ববাসীকে জানানোর একটা প্লাটফর্ম তো লিট ফেস্ট-ই হতে পারত! সেই আফসোসটা রয়ে গেল।
নোবেলজয়ীদের দেখতে, কথা শুনতে টিকিট কেটে ঢুকতে হবে? এমন প্রশ্ন ছিল দিকে দিকে। আবার বিশ্বখ্যাত লেখকদের ভিড়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিক্রিয়াও আছে। নির্মলেন্দু গুণের মতোন কবিকে এবার পায়নি ঢাকা লিট ফেস্ট। গুণকে ছাড়া লিট ফেস্ট তাও আবার তাঁর জীবদ্দশায়! এই দৈন্য কার! আয়োজকরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে বিদেশি সাহিত্যিক আনতে পারলে কেন ১০ হাজার টাকা সম্মানীও বাংলাভাষার কবির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় না? তাঁর কবিতা পড়েছেন উৎসবে আয়োজকদের আমন্ত্রিত পশ্চিমবঙ্গের কবি জয় গোস্বামী। এই ঘটনা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আয়োজকদের আহাম্মকও বলেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাভাষার গুরুত্বর্পণ কবি-লেখকরা আয়োজনে থাকলে হয়তো তাদের সেশনগুলোতে বাংলা ভাষা-সাহিত্যসহ নানাবিধ বিষয়ে অভিজ্ঞতা নিতে পারতেন ভিনভাষীরা। তুলনামলূক সাহিত্য আলোচনা থেকে বঞ্চিত থেকে গেল বিশ্বসাহিত্য। উৎসবজুড়ে বাংলার ব্যবহারও ছিল দৃষ্টিকটু, সীমিত। বাংলাদেশি কবি-সাহিত্যিকদের ভিনভাষীদের সেশনে উপস্থিত থাকা ছাড়া সম্ভবত আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ সেই অর্থে ছিল না। কবিতা পাঠেও যারা আমন্ত্রিত হওয়ার কথা সেখানেও উপেক্ষিত থেকে গেছেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়, এই মেলা নিয়ে একটি যোগ্য সমালোচনার দরকার ছিল, সামনের দিনগুলোতে এসব দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য। সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা ছিল, সম্ভবত, এদেশে যারা সত্যিকারের সাহিত্যচর্চা করেন, তাদের অনুপস্থিতি। সেখানে জায়গা করে নিয়েছেন এনজিও এবং করপোরেট কর্তাব্যক্তিরা। ধনী ব্যক্তিদের সাহিত্য মেলাই হয়েছে। কিছু কিছু প্যানেলে যাদের ধরে আনা হয়েছে, প্যানেল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আয়োজক সংস্থায় কাজ করা বা তাঁদের বন্ধুবান্ধব হওয়া ছাড়া তাঁদের নিজেদের কন্টেন্ট সম্পর্কে পাবলিকের ধারণা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।’
একই ভাবে হাসনাত আবদুল হাইয়ের মতো বর্ষীয়ান লেখককে শুধুমাত্র শ্রোতা হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো নিয়েও আয়োজকদের পিণ্ডি চটকেছেন লাঞ্ছিত-বঞ্চিত লেখকরা।
লিট ফেস্ট এলিটদের নাকি প্রলেতারিয়েতদের? এমন বিতর্ক নিয়েও কথা বলেছেন কবি-লেখকরা। তবে এসব বাদে, মিলনমেলা যাকে বলা যায় তার অনেক কিছুই উঠে এসেছে। ভিনভাষীদের সঙ্গে সাহিত্যবিষয়ক আড্ডা-আলোচনা-বিনিময়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির সঙ্গে উগ্রবাদ- মৌলবাদের নিন্দা একই সঙ্গে উদারবাদের পক্ষে অবস্থান এক শিল্পিত চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছে। সমস্ত রকমের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ভাষা এবং সংস্কৃতিকে উচ্চকিত রাখার প্রশ্নে এই যে সবাই একমত, নিঃসন্দেহে তা আনন্দের। স্বাধীনতা হরণ কিংবা দখলদারিত্ব আর একনায়ত্বসূলভ শাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠ মিলিয়েছেন সাহিত্যিকরা। নুরুদ্দিন ফারাহ্’র প্যানেল আলোচনাতেও তা ধ্বনিত হয়েছে।
চিন্তা ও চিন্তকদের সম্মিলন, বড় চিন্তা কিংবা বড় লেখক সবাই সত্যিকারের সাহিত্য নিবেদিত বলেই মনে হয়েছে। ভার্চুয়াল এই সময়ে মানুষের সম্পর্ক এবং কবিতা-সাহিত্য কীভাবে দিনবদলের পন্থায় পরিচালিত করা যায় এবং তার প্রয়োগ ঘটানো যায় সেইসব মতামত গুরুত্ব পেয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি, যুদ্ধ, নারীর ক্ষমতায়ন, বৈষম্য হ্রাস, মি-টু আন্দোলন, উদ্ভিদ বা প্রাণ-প্রকৃতির সুরক্ষায় লেখকদের ভূমিকা কী হতে পারে সেসবের দীর্ঘ সেশন দরকার ছিল।
বাংলা একাডেমিতে এই আয়োজন না করে আয়োজকরা কোনো পাঁচতারা হোটেল কিংবা নিজেদের মালিকানাধীন ইউল্যাব ক্যাম্পাসে ব্যক্তিগত প্রদর্শনী হিসেবে করলে অবশ্য এত সমালোচনার কিছুই হয়তো উঠত না।
প্রযুক্তির এই বিকাশমান সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি-বিনোদনে মানুষের অনাগ্রহকেই যেখানে স্বাভাবিক আচরণ ভাবা হয় সেখানে সেইসব দিক বিবেচনায় দশম আসরের এই লিট ফেস্ট আয়োজন কিছুটা হলেও হালে পানি সঞ্চার করেছে। তর্ক আর প্রতিতর্কের এই যে উপলক্ষ তৈরি করে দেওয়া এ উৎসব তো সেখানেই সফল।
একটা বাচ্চারে সারপ্রাইজ দিলাম।
বাচ্চা খুশি। আমিও।
অফিস টাইম শেষে, খুব সম্ভবত ডে-কেয়ার থেকে বের হয়ে, বাবার হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিল একটা বাচ্চা। তার বাম হাতে বাবার হাত আর ডান হাতে ছিল একটা কাগজের ফুল। একটা ৩+ ছেলে বাচ্চা। আদুরে গড়ন এবং তাগড়া মেজাজ। আমি ছিলাম ১৩ ফুট পেছনে। বাচ্চার হাত থেকে যখন ফুল রাস্তায় পড়ে গেল আমি তখন ৭ ফুট পেছনে। অসচেতন হইলে এই ফুল আমার পায়ে পিষ্ট হইতে পারত আলবত। রাস্তায় যেহেতু আমি মানুষ দেখি তাই অসচেতন হয়ে হাঁটলে আমার লস হয়ে যায়। আমার সচেতন পর্যবেক্ষণ এইখানে আলোচনার বিষয় না হইলেও, ঠিক এই কারণেই পায়ের কাছে কাগজের ফুল কোনো আচম্বিত ব্যাপার হয়ে থাকে নাই। উপরন্তু, যুদ্ধের সিজনে বাচ্চার হাতে লাল-সাদা কাগজের ফুলের যে রাজনৈতিক-শৈল্পিক ব্যঞ্জনা থাকতে পারে এই ভেবে খুব সম্ভবত তাদের ফটো তুলতে ইচ্ছা হয়েছিল। ফুল যদি হাত না ফসকাতো, আমি হয়তো পেছন থেকে বাপ-বেটার একটা ফটো তুলে ফেইসবুকে কিছু লাভ রিয়েকশন হাসিল করতে পারতাম। ভুতুম নাম্নী আমার নিজের বাচ্চার থেকে যেহেতু আমি শিখছি, তাই এই ফুলের অতি নিকট ভবিষ্যৎ প্রয়োজনটা বুঝতে আমাকে মাথা খাটাতে হয় নাই।
কুড়িয়ে নেওয়া লাল-সাদা ফুল হাতে আমি বাপ-বেটার পেছনে হাঁটলাম খানিক। কদম সাতেক কি আটেক পিছু নেওয়ার পরই বাচ্চা তার বাপকে টেনে থামাল। আদুরে জেদের ভঙ্গিতে, মা-বাপের ওপর বাচ্চার সব গোস্বার আনডিফাইন্ড শর্তে, হারিয়ে যাওয়া ফুল ফেরত চায় সে। আর সেই মুহূর্তেই, একদম সেই মুহূর্তেই, কিছুটা নাটকীয় ভঙ্গিতে সেই ফুল হাতে আমি বাপ-বেটার পার্শ্বে অবতীর্ণ হই। তারা দুজনেই আমাকে দেখে যেন কিছুটা চমকে যায়। যেন-বা তারা একজন ম্যাজিশিয়ান দেখল; আমিও কপট জাদুকরী গাম্ভীর্য অটুট রেখে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে বাচ্চার হাতে ফুল তুলে দেই। কথা না বলে বরং মুচকি হাসি স্থায়ী রাখি, যতক্ষণ না ফুল বিনিময় করে আমি তাদের অতিক্রম করে যাই। বাচ্চাটা আমার দিকে চেয়ে থাকবে আরও কিছুক্ষণ, অন্তত যতক্ষণ আমাকে দেখা যায়। বাপও হয়তো বাচ্চার দৃষ্টি ফলো করে থাকবে।
আমি কিন্তু আর পেছন ফিরে দেখি নাই। সচেতনভাবেই আর তাকাই নাই। আমাকে আরেকবার দেখতে চাইবার আগ্রহ যদি তাদের হয়, সেই আগ্রহ না মিটাইলে বাচ্চাটার মেমরিতে আমি তো খানিকক্ষণ কিছুটা ম্যাজিক্যাল ক্যারেকটার হয়ে থাকলাম হয়তো।
গল্প শেষ।
এই গল্পের নাম স্ট্রবেরি
কালারের ললিপপ
ফাঁকা রাস্তায় একটা মোটর গাড়ির সাবলীল আনন্দের গতিকে আচমকা প্রবলভাবে ডিনাই করলে যেমন শব্দ হয় আমার পেছনে ঠিক এমন একটা শব্দ হলো। সিনেমায় প্রাণঘাতী অ্যাক্সিডেন্টের শব্দ যেমন হয় আরকি, বিকট। আমি একটা লেন পার হয়ে রোড ডিভাইডারের ওপরে অবস্থান করছিলাম আরেকটা লেন পার হওয়ার বাসনায়। শব্দটা অনুসরণ করে পেছন ফিরে তাকাই। এই তাকানো সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল না; ঘটনার আশপাশের সবাই প্রাইমারি রিফ্লেক্সের কারণেই ত্বরিত সেই গাড়ির দিকে তাকায়। কিন্তু প্রথমেই আমার চোখ গাড়ির দিকে না গিয়ে থমকে গেল একটা স্ট্রবেরি কালারের ললিপপের দিকে। মধ্য রাস্তায় পড়ে আছে, ভর দুপুরের প্রখর আলোয় জ্বলজ্বল করছে। তার পাশে কালো রং পুড়ে ছাই রং হওয়া বোরখা পরিহিত মহিলা। যে ঘটনা প্রায় আমরা কেউ দেখি নাই তিনি সেই ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল, এখনো কোনো রিয়েকশন দেখাতে শুরু করেন নাই। মহিলার বাম পাশে যে টয়োটা হাইএস গাড়ি দাঁড়ানো দেখলাম সেটা কি তখনো গতি জড়তা সামাল দিতে সাসপেনশনে ঝাঁকি খেয়ে থিতু হওয়ার দশায়, বোঝা গেল না। অতটা দ্রুততার সাথে আমি মনে হয় পেছনে তাকাই নাই। দেখার ভুল। নাকি শব্দের সাথে মাথা এমনটা কল্পনা করে নিয়েছে। হতে পারে সিনেমার ইমপ্যাক্ট।
কিন্তু যা সত্যই ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে তা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বিশ্বাস করতেও চাইছিলাম না। দেখতেও চাইছিলাম না। আবার মুখ ঘুরিয়ে চলেও যেতে পারছিলাম না। মনে হলো গাড়ির সামনের অংশ ঘেঁষে উপুড় হয়ে বসে থাকা মহিলার হাঁটুর কাছে একটা বাচ্চার মাথা, মনে হচ্ছে যেন শরীরের বাকি অংশ গাড়ির নিচে। মাথা কি না তা রেজিস্টার করতে করতেই তিন বা চার বছরের একটা অপুষ্ট মেয়ে বাচ্চা বের হয়ে আসলো গাড়ির তল থেকে। ভাবলেশহীন চোখমুখ। আমার পাশ থেকে কারা যেন খুব শব্দ করে সুবহানাল্লাহ ধ্বনি তুলল। আমি সম্ভবত একইভাবে তাকিয়ে ছিলাম।
সিনেমার দৃশ্য হলে হয়তো মা জড়িয়ে ধরে চুমু খেতো, কিন্তু এইখানে ঘটল ভিন্ন ঘটনা, অক্ষত বাচ্চাকে দেখে মা উচ্চশব্দে মরা কান্না জুড়ে দিলেন। কাঁদতে শুরু করার সাথে মেয়েকে মারতেও শুরু করেন। ক্লাস সিক্সে হাত ভেঙ্গে ঘরে ফিরলে আমার আম্মা আগে আমাকে দুইটা থাপ্পড় দিয়েছিলেন। আছে হয়তো কোন রিলেশন। একরকম মারতে মারতেই টেনে রোড ডিভাইডারে উঠলেন। কালো-বেঁটে করে ড্রাইভার সাহেব গাড়ি থেকে নেমে জীবিত বাচ্চার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ, আর এদিক-সেদিক তাকালেন কোনো নির্দিষ্ট দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে। তাকে চারপাশ থেকে মানুষজন যে বাহবা দিয়ে যাচ্ছে সেই দিকে মনোযোগ দেওয়ার মতো মানসিক স্টেইটে মনে হয় তিনি নাই এখন। গাড়িতে চড়ে বসলেন কোনো কথা না বলে।
ডিভাইডারে দাঁড়িয়ে মা দোয়া দরুদ পড়ছেন আর খুব ভালো করে বাচ্চাকে চেক করছেন কোথাও কোনো আঘাত লাগল কিনা। আমারও ইচ্ছা করছিল হাত দিয়ে দেখি বাচ্চাটা আসলে জীবিত আছে কি না। মনে হচ্ছিল হয়তো ঘটনা অন্য কিছু ঘটে গেছে। হয়তো আমার দুর্বল মন সত্য মেনে নিতে না চেয়ে নিজের গড়া ঘটনা দেখছে। বাচ্চাটাকে একটু ছুঁয়ে দেখা দরকার। ভয় লাগছিল ছুঁয়ে দিলে যদি সত্যি ঘটনা রিভিল হয়ে যায়।
জ্যাম লেগে গেছে এতক্ষণে। পেছনের মানুষ তো জানে না এখানে কী ঘটছে তাই স্বভাবসুলভ উচ্চ শব্দে হর্ন বাজিয়ে পরিবেশ অতিষ্ঠ করে তুলছে। আমি সম্ভবত একইভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মুহূর্তে যেমন করে মানুষের জমায়েত হয়েছিল আবার মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল। আমি সময় নিচ্ছিলাম হজম করার জন্য।
গাড়ি চলতে শুরু করল আবার। কয়েকটা গাড়ি চলে গেল, ললিপপটা অক্ষত থেকে জ্বলজ্বল করছিল তখনো। আমি ললিপপটা চূর্ণ হয়ে যেতে দেখতে চাইছিলাম না কিন্তু তবুও তাকিয়ে ছিলাম। কেন যেন চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। মা, বাচ্চা কোলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর দোয়া দরুদ পড়ে ফুঁ দিয়ে চলেছেন।
বাচ্চাটাও দেখলাম আধখাওয়া স্ট্রবেরি ললিপপটার দিকেই চেয়ে আছে। আরও কিছুক্ষণ ললিপপটা গাড়ির চাকার সংস্পর্শ থেকে বেঁচে থাকুক। রোদে জ্বল জ্বল করতে থাকুক।
আকিরা কুরোসাওয়া, জাপানি চলচ্চিত্রের সম্রাট, সিনেমা বানিয়েছিলেনএবং একদিক থেকে ভেবে দেখতে গেলে, তিনি সেই অর্থে নিছক সিনেমা বানানোর চক্করে ছিলেন না। এমনকি যখন সত্যতর অর্থে, শ্যুটিং প্রস্তুতির জন্য রিসোর্সের অভাব বোধ করতেন, তিনি ভবিষ্যতে নির্মাণের জন্য সিনেমার প্রস্তুতি নিতেনপ্রতিটি ডিটেলের কথা নিখুঁতভাবে চিন্তা করে। ক্রিটিক এবং জাপানি সিনেমার ইতিহাসবেত্তা ডোনাল্ড রিচি ‘পরিচালকের স্মরণে’ শীর্ষক এক রচনায় জাপানি চলচ্চিত্রের সংজ্ঞায়নে অন্য যে কারও চেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন কুরোসাওয়ার ‘পণ্যটিকে নিখুঁত করবার ভাবনা’কথাটির ওপর। ‘যদিও অনেক চলচ্চিত্র সংস্থা-ই হয়তো নির্মাতার এমন আত্মনিবেদনে আলোকিত হয়ে উঠত’, রিচি লেখেন, ‘জাপানি স্টুডিওগুলো প্রায়ই ইনোভেশনের চেয়ে সহযোগিতায় অধিকতর মুগ্ধ হয়।’
কুরোসাওয়ার পক্ষে, তার চলচ্চিত্র যাত্রাপথে, উচ্চাভিলাষী প্রজেক্টের জন্য, টাকাপয়সা সংগ্রহ কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। রিচি সত্তর দশকের একসময়ের কথা স্মরণ করেন, ‘তিনি বুঝেছিলেন কাগেমুশা বাস্তবিক আলোর মুখ দেখবে না, কুরোসাওয়া সময় কাটাচ্ছিলেন প্রতিটি দৃশ্য এঁকে, এই সংগ্রহটি অবাস্তবায়িত চলচ্চিত্রের জায়গা নিতে পারত। তিনি অন্য কোনো কোনো পরিচালকের মতো স্টোরি বোর্ড ব্যবহার করতেন। এখন সেসব গ্যালারির প্রশস্ততাকে উজ্জ্বল করছেঅনির্মিত মাস্টারপিসের প্রদর্শনকক্ষ।’ যখন সিনেমা নির্মাণে অপারগ ছিলেন তিনি সেসব লিখে ফেলতেন, লেখা সাঙ্গ হলে নেমে পড়তেন আঁকায়।
‘আমার উদ্দেশ্য ভালো মতো পেইন্ট করা ছিল না। আমি নানা রকম জিনিসকে নিজের হাত দিয়ে নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম’। কিন্তু আপনারা যেমন দেখতে পাচ্ছেন, সম্রাট জানতেন তিনি কী চান, সুনির্দিষ্ট শটটি স্পষ্টভাবেই আগেই দৃশ্যকল্পনায় তার প্রচুর সময় ও শক্তি খরচের ব্যাপারটি রিপ্রেজেন্ট করত। মাঝেমধ্যে কুরোসাওয়ার নিজের আর্টওয়ার্ক কম পরিচিত সিনেমার অফিশিয়াল পোস্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো, (কম পরিচিত মানে, কুরোসাওয়ার বিশাল কাজের প্রেক্ষিতে) ব্যক্তিগত কাজ যেমন সত্তর দশকের ডোডোসকাদেন কিংবা শেষ কাজ, ১৯৯৩-এর ম্যাদাদেও।
আমরা নথিভুক্ত করতে পারি চলচ্চিত্র পরিচালকের চিত্রকলার প্রতি আগ্রহএবং হয়তো ফিল্ম নির্মাণে, বেশির ভাগটাই তার বড় ভাই হেইগোর প্রভাব, টোকিও শহরে উনিশশো তেইশের পহেলা সেপ্টেম্বরের প্রবল ভূমিকম্পের পর কুরোসাওয়া দাদার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। নির্বাক চলচ্চিত্রের একজন সজীব ধারাভাষ্যকার এবং প্রলেতারিয়ান আর্টিস্ট লিগের প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী হেইগো, ১৯৩৩ সালে তার রাজনৈতিক বিশ্বাস ভঙ্গ ও নিজের কেরিয়ার-বিধ্বংসী সবাক চলচ্চিত্রের আবির্ভাবের দরুন আত্মহত্যা করেন। তরুণ আকিরা এক দশক পর পরিচালনার উদ্বোধনী কাজটি করেন, পঞ্চান্ন বছর ধরে ধারাবাহিক থাকবেন তিনি পরিচালনায়। আমরা নিশ্চিত জানি, সব সম্ভাব্য স্তরেই হেইগো ছোট ভাইয়ের জন্য গর্বিত হতেন।
ধ্রুপদি চলচ্চিত্র ‘দ্য সেভেন্থ সিল’-এর দাবা খেলাটা দেখেছেন!
দৃশ্যটি বিশ্বের অসংখ্য সিনেমাশিক্ষার্থী, প্রেমিক, ভাবুককে ভাবিয়েছে। সিনেমার কেন্দ্রীয় ঘটনা এটি। কত অল্প আয়োজনে বিশ্বের চিন্তাজগৎ আলোড়িত করা যায় এ তার এক অনুপম দৃষ্টান্ত। যদিও দাবা খেলায় আগ্রহী স্টুয়ার্ট রুবেন খানিক ভিন্ন মত দিয়েছেন। ‘ভিন্ন’ বলেই তুলে ধরা দরকার।
আন্তোনিয়াস ব্লক, একজন নাইট, ক্লান্ত, ক্রুসেডের যুদ্ধ থেকে ফিরছেন নিজভূমে। নিজের প্রিয়তম দেশ প্লেগে মহামারীতে বিধ্বস্ত। ব্লক সহসা আবিষ্কার করলেন, আহত হৃদয়কে অপমান করতেই মৃত্যু তাঁকে নিতে এসেছে। তাই তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন, এমনকি মৃত্যুকে। যদি তিনি জেতেন পরিবারের কাছে ফেরা; নইলে খেল খতম! জীবন ও নশ্বরতা বিষয়ে ভাবানোর মতন মন্তব্য করলেও এই দাবাযুদ্ধ দাবায় উৎসাহীদের প্রামাণ্যতা সম্পর্কে করে তোলে উৎসাহী। ‘চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ভুলভাল করা স্বাভাবিক।’ স্টুয়ার্ট রুবেন, এক দাবাচিন্তক মন্তব্য করেন। তিনি আরও যোগ করেন, ‘যদিও চতুর্দশ শতক সিনেমার পটভূমি, এই তথ্য প্রায় নিশ্চিত যে নিয়মটিতে তারা খেলছিলেন তার প্রতিষ্ঠা পঞ্চদশ শতকে। মৃত্যু একটি চাল দেয়, সাদা রাজাকে চেক দেওয়ার পর, কালো তার রাজা তুলে নেয়, তারপর খেলা ডিজলভ হয়ে যায়।’
খেলা শেষ। কালো জেতে। মনে হতে পারে, এই খেলাটিতে কোনো দাবা পরামর্শক ছিলেন না। খেলাটা এত দ্রুত! সাদা খেলা শুরু করে (ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগের নিয়ম সাদা সবসময় শুরু করবে), খেলাটা সাদায় শুরু হলো পরে বদলে গেল এবং মৃত্যু যে রানী অধিকার করল সেটাকে বড় চাল হিসেবে দেখানো হয়েছে; অথচ তখন রানী কম শক্তির ঘুঁটি ছিল, তাই এই বড় করে দেখানো কোনো অর্থ বহন করে না। ‘ঘটনা হচ্ছে, খেলা গড়ায় না।’ রুবেন লেখেন এক নিবন্ধে। ‘আপনি যা আশা করেন তা হলো, খেলা যত গড়াবে ঘুঁটি কমবে বোর্ডে। আপনি কখনো আশা করবেন না ঘুঁটি কাটা পড়া সত্ত্বেও অনেক অনেক ঘুঁটি থাকবে।’
সুতরাং এ ছবিটি কী? রুবেন বুঝে উঠতে পারেন না। ব্যারিম্যানসুলভ বিমূর্ততা ও অস্তিত্বের ক্লান্তি নিয়ে মন্তব্য না স্রেফ এক সাজানো জিনিস! দাবাচিন্তক সিদ্ধান্ত টানেন, ‘কোনোটাই না।’
হয়তো ফিল্ম ক্রুদের মধ্যে ঘটা অসংখ্য খেলার একটা এটা। খেলাটা তারা দূর থেকে যেকোনো এক অবস্থানে তুলে ধরেছেন। কেননা খেলার শেষ দিকে বোর্ডে অধিক ভিড় অযৌক্তিক লাগে। আমি আসলে শেষ দশাটা কেন চেক মেট ঠিকঠাক দেখে উঠতে সক্ষম হইনি।
দেখেননি এখনো? সিনেমাটা এবার দেখে ফেলুন।
বিদেশি নিবন্ধ অবলম্বনে সৈকত দে
জয়েসের জন্য দরুদ
ছড়ানো ছিটানো শহরের পথে পথে
একলা এবং অনেকে একসাথে
আমরা খেলেছি আদম হাওয়ার খেলা
নাম দিলো যে সকল বস্তুকে
রাতের প্রবল ঢালুরেখা ধরে ধরে
ছুটে চলা কোন সুবেহ্ সাদিকে
আমরা খুঁজেছি শব্দ এবং মানে
(এখনো স্মরণে আছে)
কাকে বলে চাঁদ, মৃত্যু এবং আলো
মানুষের যত ভুলে যাওয়া ডাকনাম
ইমেজিজমে আমরা ছিলাম বেশ
কিউবিজমের ঝুলে পড়া বাটখারা
আমরা ছিলাম প্রথাগত সংঘের
বিশ্ব-বিদ্যা-লয় করে যার পূজা
আমরা রচেছি দাড়িকমাহীন যত
অক্ষর যার নাই ঘরদোরছাদ
পঙ্ক্তির পরে পঙ্ক্তি মেলেছে ডানা
আলেহান্দ্রার পাঠাগার করে ফাঁকা
তুমি তো তখন পরবাসে ছিলে একা
দূর শহরে শান দিয়ে গেছো ধীরে
একলা তোমার বেছে নেয়া অস্ত্রের
শিল্পের যত চোরাগলি, রাজপথে
একলা গড়েছো জটিল গোলকধাঁধা
ক্ষুদ্রের থেকে ক্ষুদ্র অথচ অসীম
ইতিহাস থেকে বেশি মানুষের ভিড়
সমীহ জাগানো কুখ্যাতি কুড়িয়েছো
আমরা হয়তো মরেই যেতাম কবে
না দেখে তোমার অদ্ভুতুড়ে পশু
অথবা গোলাপ গোলকধাঁধার চোখে
স্মৃতি ধরে রাখা উজ্জ্বল কেরামতি
প্রতিধ্বনি করে যেন ঠিক ভার্জিল
রাত্রির যত রাস্তায় ঘুরে ঘুরে
ছুটেছে তোমার গুলজার নরকেরা
জ্বলজ্বল করে সুর আর রূপকের
স্বর্ণের মতো যেখানে তোমার ছায়া
কী হয় যদি-বা আমরা কাপুরুষ
পৃথিবীতে থাকে একজনও যদি বীর
কী আসে যায় এইসব বেদনায়
কখনো নিজেকে সুখী কেউ যদি ভাবে
কী আসে যায় হারালে প্রজন্মেরা
ন্যায্যতা দিলে শত শত পুস্তকে
আমিও যাহার আয়নায় চোখ রেখে
হারিয়েছিলাম নিজেকে সেই কবে
আমি হই সেই ছন্নছাড়ার দলে
একগুঁয়ে তুমি রক্ষা করেছো যাদের
দেখোনি কখনো চর্মচক্ষে তবু
আজও দূর থেকে করছো পরিত্রাণ
জেমস জয়েস
একজন মানুষের একটি দিনের ভেতরেই থাকে
এ যাবৎ জন্ম নেয়া সবগুলি দিন, সেই অচিন্ত্যনীয়
প্রথম দিনের থেকে, যখন এক জাহাঁবাজ খোদা
আলাদা করেছিলেন দিনগুলি এবং বেদনাগুলিকে,
সেই অপরের থেকে, যখন সময়ের এক ঐহিক
সর্বব্যাপী স্রোত ফিরে যায় তার উৎসে, অনন্তের দিকে;
এবং প্রজ্বলিত করে বর্তমান, অতীত আর ভবিষ্যৎকে
যা এখন এই আমার ভেতরে বহমান।
সকাল আর সন্ধ্যার অন্তস্তলে কুণ্ডলি পাকিয়ে থাকে
এই জগতের ইতিহাস। আর রাত্রির মহাফেজখানায়
আমার পায়ের কাছে আমি দেখি ইহুদির সদাভ্রাম্যমানতা
তরবারির মুখে কার্থেজের পতন, বেহেশত আর দোযখ।
হে প্রভু, সেই সাহস আর আনন্দ আমাকে দাও
যেন আরোহণ করতে পারি এই দিবসের চূড়ায়।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।