
জয়েসের জন্য দরুদ
ছড়ানো ছিটানো শহরের পথে পথে
একলা এবং অনেকে একসাথে
আমরা খেলেছি আদম হাওয়ার খেলা
নাম দিলো যে সকল বস্তুকে
রাতের প্রবল ঢালুরেখা ধরে ধরে
ছুটে চলা কোন সুবেহ্ সাদিকে
আমরা খুঁজেছি শব্দ এবং মানে
(এখনো স্মরণে আছে)
কাকে বলে চাঁদ, মৃত্যু এবং আলো
মানুষের যত ভুলে যাওয়া ডাকনাম
ইমেজিজমে আমরা ছিলাম বেশ
কিউবিজমের ঝুলে পড়া বাটখারা
আমরা ছিলাম প্রথাগত সংঘের
বিশ্ব-বিদ্যা-লয় করে যার পূজা
আমরা রচেছি দাড়িকমাহীন যত
অক্ষর যার নাই ঘরদোরছাদ
পঙ্ক্তির পরে পঙ্ক্তি মেলেছে ডানা
আলেহান্দ্রার পাঠাগার করে ফাঁকা
তুমি তো তখন পরবাসে ছিলে একা
দূর শহরে শান দিয়ে গেছো ধীরে
একলা তোমার বেছে নেয়া অস্ত্রের
শিল্পের যত চোরাগলি, রাজপথে
একলা গড়েছো জটিল গোলকধাঁধা
ক্ষুদ্রের থেকে ক্ষুদ্র অথচ অসীম
ইতিহাস থেকে বেশি মানুষের ভিড়
সমীহ জাগানো কুখ্যাতি কুড়িয়েছো
আমরা হয়তো মরেই যেতাম কবে
না দেখে তোমার অদ্ভুতুড়ে পশু
অথবা গোলাপ গোলকধাঁধার চোখে
স্মৃতি ধরে রাখা উজ্জ্বল কেরামতি
প্রতিধ্বনি করে যেন ঠিক ভার্জিল
রাত্রির যত রাস্তায় ঘুরে ঘুরে
ছুটেছে তোমার গুলজার নরকেরা
জ্বলজ্বল করে সুর আর রূপকের
স্বর্ণের মতো যেখানে তোমার ছায়া
কী হয় যদি-বা আমরা কাপুরুষ
পৃথিবীতে থাকে একজনও যদি বীর
কী আসে যায় এইসব বেদনায়
কখনো নিজেকে সুখী কেউ যদি ভাবে
কী আসে যায় হারালে প্রজন্মেরা
ন্যায্যতা দিলে শত শত পুস্তকে
আমিও যাহার আয়নায় চোখ রেখে
হারিয়েছিলাম নিজেকে সেই কবে
আমি হই সেই ছন্নছাড়ার দলে
একগুঁয়ে তুমি রক্ষা করেছো যাদের
দেখোনি কখনো চর্মচক্ষে তবু
আজও দূর থেকে করছো পরিত্রাণ
জেমস জয়েস
একজন মানুষের একটি দিনের ভেতরেই থাকে
এ যাবৎ জন্ম নেয়া সবগুলি দিন, সেই অচিন্ত্যনীয়
প্রথম দিনের থেকে, যখন এক জাহাঁবাজ খোদা
আলাদা করেছিলেন দিনগুলি এবং বেদনাগুলিকে,
সেই অপরের থেকে, যখন সময়ের এক ঐহিক
সর্বব্যাপী স্রোত ফিরে যায় তার উৎসে, অনন্তের দিকে;
এবং প্রজ্বলিত করে বর্তমান, অতীত আর ভবিষ্যৎকে
যা এখন এই আমার ভেতরে বহমান।
সকাল আর সন্ধ্যার অন্তস্তলে কুণ্ডলি পাকিয়ে থাকে
এই জগতের ইতিহাস। আর রাত্রির মহাফেজখানায়
আমার পায়ের কাছে আমি দেখি ইহুদির সদাভ্রাম্যমানতা
তরবারির মুখে কার্থেজের পতন, বেহেশত আর দোযখ।
হে প্রভু, সেই সাহস আর আনন্দ আমাকে দাও
যেন আরোহণ করতে পারি এই দিবসের চূড়ায়।
লিট ফেস্টের সমাপনী দিনে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এলোমেলো হাঁটছিলাম। যেন ফুলের বাগান, দিকে দিকে থইথই করছে মৌ মৌ ঘ্রাণ। পথ যেখানেই টানুক ক্ষতি নাই, এমন হেলদোলে নানানভাষী কলকাকলিতে, বিচিত্রবর্ণের মানুষের সম্মেলনের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করি। কিন্তু বিদায়ের সুর! প্রিয়জনের বিয়োগের মতো রক্তক্ষরণ নিয়ে এক সেশন থেকে আরেক সেশনে যাই। মন দিয়ে কথাবার্তা শুনি। মাঝেমধ্যে একাডেমির পুকুরপাড়ে গিয়ে বসি। জনারণ্য থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে মিহিরাতের দিকে তাকিয়ে ভাবি, আচ্ছা কী এত কথা বলছে এঁরা! মানুষ যখন বনে-জঙ্গলে বাস করত, শিকার করে খেতো তখন সাহিত্য কোন স্তরে ছিল! কোনো এক সন্ধ্যায় একদল মানুষ জড়ো হয়ে যখন মাংস পুড়িয়ে খাচ্ছিল তখনো তাদের আলোচনায় সাহিত্য ছিল? তারপরেই এক শিকারি তার খাবার পাত্রে ঝলসানো মাংসের সঙ্গে একটা গমের দানার স্বাদ পেল আর লোভে পড়ে ক্রমান্বয়ে গমের দিকে, উৎপাদন আর চাষের দিকে হাঁটা তারপর কৃষিবিপ্লব সক্ষমভাষা, বাকশক্তির উন্মেষ। হারিয়ে গেল মানুষের আদি যাপন আমাদের পূর্বপুরুষরা গৃহপালিত প্রাণীতে পরিণত হলো। আহা! সেই গমের দানা! সেটা যদি সেদিন না ফুটত তাহলে আজ আমি হয়তো এই লিট ফেস্টেই থাকতাম না। মানুষের এই পরিবর্তনটা অদ্ভুত সুন্দর।
এবার ঢাকা লিট ফেস্ট বেশ কিছু কাকতালীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। কবি-লেখক-সাহিত্যিকের মধ্যে আফ্রিকা প্রাধান্য পেয়েছে। আলোও কেড়েছে। আব্দুলরাজাক গুরনাহ আর নুরুদ্দিন ফারাহ। আফ্রিকার বঞ্চনার ইতিহাস, সংগ্রাম কীভাবে সাহিত্যে প্রবল তা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। আফ্রিকার অজস্র ভাষা-ঐতিহ্য ঔপনিবেশিক শক্তির কাছে মার খেতে খেতে খাদের কিনারে পৌঁছেছে। দাসপ্রথা আর বণবৈষম্যের রোমহর্ষক ঘটনা কে না জানে! এইতো সেদিন তারা এসবের নাগপাশ পেরুলো! আবার সাহিত্যঙ্গনে বীরদর্পে উত্থানও হয়েছে। শুধু তানজানিয়ারই যত নিজস্ব ভাষা, যত বৈচিত্র্য তা তো ভাবায়! এই আফ্রিকার সঙ্গেই একসময় এশিয়াসহ ভারতবর্ষ ছিল। আমরা ছিলাম! আফ্রিকার মানুষের সঙ্গে সভ্যতার বেড়ে ওঠার সঙ্গে যেসব অন্যায় হয়েছে টেকটোনিক প্লেট সরে আসায় আমাদের সঙ্গে তা ঘটেনি। হয়তো তেমনটা না হলে আমরা একই ভূখণ্ডে বাস করতাম তাদের আর আমাদের ভিন্ন বলে কোনোও সংস্কৃতি থাকত না! দূরেই যে শুধু সরে এসেছি তাই-ই নয় ভিন্ন ভাষা, রীতিনীতি ও যাপনে, বলনে-চলনে, খাদ্যাভ্যাসেও ভিন্নতর! কী আশ্চর্য! অথচ আজ আবার একই বিন্দুতে উপনীত করেছে শুধু সাহিত্য। সাহিত্যের এই শক্তি, শিল্পের এই যে ক্ষমতা তা সব কিছুকে এভাবেই সংগঠিত করে মানুষ ও মনুষ্যত্বের জন্য।
ভাষা নিয়ে আমরাও নিপীড়নে পড়েছিলাম। সেই আগ্রাসনে আমরা ভাষাভিত্তিক একটা দেশই বানিয়ে ফেললাম। মায়ের ভাষাও রক্ষা হলো। অথচ এই লিট ফেস্টে মহান ভাষা আন্দোলন নিয়ে কিছুই উপস্থাপিত হলো না! না ভাষাসৈনিক, না আছে তাদের বীরত্বের বর্ণনা না আছে ইতিহাস-আলোচনা! কেন? এমনকি সব সাইনবোর্ড হোর্ডিংগুলো পর্যন্ত বাংলা ভাষার অক্ষরহীন। আব্দুলরাজাক গুরনাহ শেষের দিনের আলোচনাতেও তার সোহায়েলি ভাষার জন্য আবেগাপ্লুত বক্তব্য দিয়েছেন। কেন তিনি মাতৃভাষায় সাহিত্য রচনা করতে পারেননি তাও বলেছেন। তাঁর ১০টা বই সবই ইংরজিতে। হয়তো আজ তার নোবেলপ্রাপ্তি কিংবা বিশ্বাঙ্গনে তাকে পরিচিত করে তুলতে সহায়তা করেছে ইংরেজি। কিন্তু মাতৃভাষা! তার জন্য বেদনায় তিনি ন্যুব্জ হয়ে আছেন। মায়ের ভাষাই যে সবার আগে তা বাংলা ভাষার কবি মুহাম্মদ নূরুল হুদাও উচ্চারণ করেছেন। ট্রানজিট ভাষা হিসেবে ইংরেজিকে গ্রহণ করা যেতেই পারে। ভাষার সক্ষমতা থাকলে ভিনভাষার যেকোনো শব্দের যদি অনায়াস প্রবেশও ঘটে তাতে ক্ষতি কি! বাংলাভাষায় বহু ভিনদেশি শব্দের ব্যবহার আছে। আমরা গ্রহণ করেছি। আমরা আত্মস্থ করেছি।
চারদিনের আয়োজনে দেশ-বিদেশের ৫ শতাধিক কবি-লেখক-শিল্পী-সাহিত্যিক-চিন্তকদের লিট ফেস্টের এই সমাবেশ ১০ বছরে এসে ঠেকল। এবার মোট সেশন হলো ১৭৫টি। ঊনবিংশ শতকের গোড়ার দিকেও বাংলাদেশে সাহিত্য নিয়ে এমন সরগরম আয়োজন ছিল না। আশির দশকে বইমেলার শুরু। বইমেলা একুশের চেতনায় সমুজ্জ্বল সেখানে যেমন অন্যভাষার রচনাবলি নিয়ে স্টল-প্যাভেলিয়ন থাকে না তেমনি ভিনভাষীদের বিশেষভাবে আমন্ত্রণও জানানো হয় না। ফলে এই ধরনের সম্মিলন থাকে না কেবল পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের উপস্থিতি ছাড়া। সেই অর্থে লিট ফেস্ট-ই একমাত্র আয়োজন যেখানে বহু ভাষার, বহুচিন্তার-সাহিত্যের মিলন ঘটে। এখানে যে যে পেশারই থাকুক তারা উৎসব চলাকালীন সাহিত্যেরই সেবা করছে। ব্যাপারটা ভালো। সে ভলান্টিয়ার থেকে শুরু করে পেশায় চিকিৎসক কিংবা প্রকৌশলী। তাদের আচরণ, কথাবার্তা সবই সাহিত্যসুলভ। আহা! যদি বারো মাসই থাকত! সাহিত্যের সঙ্গে তেমন যোগসূত্র নেই তারাও এই শীত উপেক্ষা করে দূর-দূরান্ত থেকে উৎসবে হাজির। এই যে টান! এটাই সাহিত্যের জয়। এই সর্বজনীনতাই সাহিত্যকে সবার মধ্যে একটা আন্দোলনের পথে ধাবিত করতে পারে। যেখানে সবারই কণ্ঠ এক, সুরও এক। লিট ফেস্টেরও জয় সেখানে।
দুয়েকটা ব্যতিক্রম বাদে আমাদের সংস্কৃতি কেমন তা না বলেও, ঘটা করে সেসব বিষয়ে কথা না বললেও বাংলাদেশে এসে ভিনভাষীরা তা বুঝে গেছেন। সামান্য যে কয়েকটা পরিবেশনা ছিল তাতেই মুগ্ধ তারা। রবীন্দ্রসংগীত আর ত্রিপুরা নৃত্যের কথা আলাদাভাবে বলা যায়। এখানেই আমাদের স্বাতন্ত্র্য, স্বকীয়তা, ঐতিহ্য আর পরম্পরার প্রকাশ ঘটেছে। বাঙালিয়ানা নিয়ে আয়োজন ছিল সীমিত, তাতেও ফুটে উঠেছে। আমাদের পিঠাপুলি, গ্রামীণ রীতিনীতি, বাংলার যাত্রা, পুতুলনাচ, লোকশিল্প, হস্ত-কুটিরশিল্প সবই ছিল। বিদেশি সাহিত্যিক যারা এর আগে বাংলাদেশে আসেননি তারা ভাবতেন এদেশের মানুষ গোড়া, নারীরা সবাই বোরকা পরে থাকে, কথা বলে-টলে না। ধর্মান্ধ, মৌলবাদীই বেশি। কিন্তু পথেঘাটে স্বাধীন মানুষ, তাদের আচরণ, কথাবার্তা, আতিথেয়তা, সৌজন্য দেখে ধারণা পাল্টেছে। সাহিত্যমনস্কতা-উন্মাদনায় তাদের হতবিহ্বলতা আড়াল করতে পারেনি। তাদের কাছে আমাদের সাহিত্য পৌঁছেনি। পৌঁছে দেওয়ার আকুলতা বাংলাভাষী সাহিত্যিকদের তাও সামনে এসেছে। অনুবাদ নিয়ে কাজ করার আহ্বান ছিল সবার কণ্ঠেই। কিন্তু কে করবে সেই কাজ তা নিয়ে কোনো সুচিন্তিত বার্তা কেউ-ই দিতে পারেননি। একমাত্র ব্যতিক্রম সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বাংলা বিশ্বসাহিত্য সভার আলোচনাটাকে তিনি জীবন্ত করেছেন। এমন একটা আয়োজনে শুধু বাংলা সাহিত্যবিষয়ক দীর্ঘ আলোচনা থাকবে বিশ্বসাহিত্যের সাহিত্যিকদের জন্য। যেখানে শুধু বাংলাকেই তুলে ধরা হবে। নোবেলপ্রাপ্তির তালিকায় বাংলা সাহিত্যের অন্তত ৮/১০ জনের নাম থাকা অবাক হওয়ার নয় এমন চাউর হওয়া কথাটা কিন্তু অমূলক নয়।
আমাদের শুধু প্রয়োজন ছিল পরিকল্পনার। এই লিট ফেস্ট নিয়ে সংস্কৃতজনদের পরামর্শ নেওয়া হলে হয়তো তারাও ভূমিকা রাখতে পারতেন। সেটা হয়নি। বিদেশি লেখকরা বাংলা সাহিত্য জানেন না। একই লেখককে পরপর তিনবার অতিথি করলে এদেশীয় সাহিত্য সম্পর্কে তারা অবগত হতে পারতেন। ‘মন খারাপ হয়ে যায় যখন ক্যামেরার লেন্সে ভিনভাষী নোবেলজয়ীদের ছবি তুলতে হয় অথচ আমি চাই আমার দেশের, বাংলা ভাষার লেখকদের ছবি তুলতে।’ এমন আক্ষেপ নিয়ে প্রখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পী নাসির আলী মামুন বললেনও বেশ কজন সাহিত্যিকের নাম।
সাধারণ দর্শনার্থী যারা টিকিট কেটে উৎসবে এসেছেন কিংবা দেশীয় সাহিত্যিকরা। তারাও সর্বাবস্থায় শিল্প-সাহিত্য-কলা-সংগীত নানা বিষয়ে আড্ডায় মেতেছিলেন। থরে-থরে এই যে আলোচনা তার সৌন্দের্য সাদা চোখেও রঙিন লাগে। কথা হলো মূল সেশনগুলোতে বাংলার ভাববাদ-দর্শন, আউল-বাউল, সুফিদের নিয়ে আলোচনা থাকতে পারত। উঠে আসতে পারত লালন, হাছন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাছনের কথা গত শতাব্দীতে বলেছিলেন ব্রিটেনে এক আলোচনায়। অজপাড়াগাঁর এক সাধক-কবি, কত বড় মাপের দার্শনিক! আমরা তাকেও তুলে আনতে পারলাম না লিট ফেস্টে। লালনের সাহিত্য-দর্শন, আরজ আলী মাতবরদের চিন্তা বিশ্ববাসীকে জানানোর একটা প্লাটফর্ম তো লিট ফেস্ট-ই হতে পারত! সেই আফসোসটা রয়ে গেল।
নোবেলজয়ীদের দেখতে, কথা শুনতে টিকিট কেটে ঢুকতে হবে? এমন প্রশ্ন ছিল দিকে দিকে। আবার বিশ্বখ্যাত লেখকদের ভিড়ে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিক্রিয়াও আছে। নির্মলেন্দু গুণের মতোন কবিকে এবার পায়নি ঢাকা লিট ফেস্ট। গুণকে ছাড়া লিট ফেস্ট তাও আবার তাঁর জীবদ্দশায়! এই দৈন্য কার! আয়োজকরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে বিদেশি সাহিত্যিক আনতে পারলে কেন ১০ হাজার টাকা সম্মানীও বাংলাভাষার কবির জন্য বরাদ্দ রাখা হয় না? তাঁর কবিতা পড়েছেন উৎসবে আয়োজকদের আমন্ত্রিত পশ্চিমবঙ্গের কবি জয় গোস্বামী। এই ঘটনা উল্লেখ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আয়োজকদের আহাম্মকও বলেছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাভাষার গুরুত্বর্পণ কবি-লেখকরা আয়োজনে থাকলে হয়তো তাদের সেশনগুলোতে বাংলা ভাষা-সাহিত্যসহ নানাবিধ বিষয়ে অভিজ্ঞতা নিতে পারতেন ভিনভাষীরা। তুলনামলূক সাহিত্য আলোচনা থেকে বঞ্চিত থেকে গেল বিশ্বসাহিত্য। উৎসবজুড়ে বাংলার ব্যবহারও ছিল দৃষ্টিকটু, সীমিত। বাংলাদেশি কবি-সাহিত্যিকদের ভিনভাষীদের সেশনে উপস্থিত থাকা ছাড়া সম্ভবত আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ সেই অর্থে ছিল না। কবিতা পাঠেও যারা আমন্ত্রিত হওয়ার কথা সেখানেও উপেক্ষিত থেকে গেছেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আমার মনে হয়, এই মেলা নিয়ে একটি যোগ্য সমালোচনার দরকার ছিল, সামনের দিনগুলোতে এসব দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য। সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা ছিল, সম্ভবত, এদেশে যারা সত্যিকারের সাহিত্যচর্চা করেন, তাদের অনুপস্থিতি। সেখানে জায়গা করে নিয়েছেন এনজিও এবং করপোরেট কর্তাব্যক্তিরা। ধনী ব্যক্তিদের সাহিত্য মেলাই হয়েছে। কিছু কিছু প্যানেলে যাদের ধরে আনা হয়েছে, প্যানেল পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আয়োজক সংস্থায় কাজ করা বা তাঁদের বন্ধুবান্ধব হওয়া ছাড়া তাঁদের নিজেদের কন্টেন্ট সম্পর্কে পাবলিকের ধারণা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।’
একই ভাবে হাসনাত আবদুল হাইয়ের মতো বর্ষীয়ান লেখককে শুধুমাত্র শ্রোতা হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো নিয়েও আয়োজকদের পিণ্ডি চটকেছেন লাঞ্ছিত-বঞ্চিত লেখকরা।
লিট ফেস্ট এলিটদের নাকি প্রলেতারিয়েতদের? এমন বিতর্ক নিয়েও কথা বলেছেন কবি-লেখকরা। তবে এসব বাদে, মিলনমেলা যাকে বলা যায় তার অনেক কিছুই উঠে এসেছে। ভিনভাষীদের সঙ্গে সাহিত্যবিষয়ক আড্ডা-আলোচনা-বিনিময়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতির সঙ্গে উগ্রবাদ- মৌলবাদের নিন্দা একই সঙ্গে উদারবাদের পক্ষে অবস্থান এক শিল্পিত চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছে। সমস্ত রকমের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ভাষা এবং সংস্কৃতিকে উচ্চকিত রাখার প্রশ্নে এই যে সবাই একমত, নিঃসন্দেহে তা আনন্দের। স্বাধীনতা হরণ কিংবা দখলদারিত্ব আর একনায়ত্বসূলভ শাসনের বিরুদ্ধে কণ্ঠ মিলিয়েছেন সাহিত্যিকরা। নুরুদ্দিন ফারাহ্’র প্যানেল আলোচনাতেও তা ধ্বনিত হয়েছে।
চিন্তা ও চিন্তকদের সম্মিলন, বড় চিন্তা কিংবা বড় লেখক সবাই সত্যিকারের সাহিত্য নিবেদিত বলেই মনে হয়েছে। ভার্চুয়াল এই সময়ে মানুষের সম্পর্ক এবং কবিতা-সাহিত্য কীভাবে দিনবদলের পন্থায় পরিচালিত করা যায় এবং তার প্রয়োগ ঘটানো যায় সেইসব মতামত গুরুত্ব পেয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি, যুদ্ধ, নারীর ক্ষমতায়ন, বৈষম্য হ্রাস, মি-টু আন্দোলন, উদ্ভিদ বা প্রাণ-প্রকৃতির সুরক্ষায় লেখকদের ভূমিকা কী হতে পারে সেসবের দীর্ঘ সেশন দরকার ছিল।
বাংলা একাডেমিতে এই আয়োজন না করে আয়োজকরা কোনো পাঁচতারা হোটেল কিংবা নিজেদের মালিকানাধীন ইউল্যাব ক্যাম্পাসে ব্যক্তিগত প্রদর্শনী হিসেবে করলে অবশ্য এত সমালোচনার কিছুই হয়তো উঠত না।
প্রযুক্তির এই বিকাশমান সময়ে সাহিত্য-সংস্কৃতি-বিনোদনে মানুষের অনাগ্রহকেই যেখানে স্বাভাবিক আচরণ ভাবা হয় সেখানে সেইসব দিক বিবেচনায় দশম আসরের এই লিট ফেস্ট আয়োজন কিছুটা হলেও হালে পানি সঞ্চার করেছে। তর্ক আর প্রতিতর্কের এই যে উপলক্ষ তৈরি করে দেওয়া এ উৎসব তো সেখানেই সফল।
একটা বাচ্চারে সারপ্রাইজ দিলাম।
বাচ্চা খুশি। আমিও।
অফিস টাইম শেষে, খুব সম্ভবত ডে-কেয়ার থেকে বের হয়ে, বাবার হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিল একটা বাচ্চা। তার বাম হাতে বাবার হাত আর ডান হাতে ছিল একটা কাগজের ফুল। একটা ৩+ ছেলে বাচ্চা। আদুরে গড়ন এবং তাগড়া মেজাজ। আমি ছিলাম ১৩ ফুট পেছনে। বাচ্চার হাত থেকে যখন ফুল রাস্তায় পড়ে গেল আমি তখন ৭ ফুট পেছনে। অসচেতন হইলে এই ফুল আমার পায়ে পিষ্ট হইতে পারত আলবত। রাস্তায় যেহেতু আমি মানুষ দেখি তাই অসচেতন হয়ে হাঁটলে আমার লস হয়ে যায়। আমার সচেতন পর্যবেক্ষণ এইখানে আলোচনার বিষয় না হইলেও, ঠিক এই কারণেই পায়ের কাছে কাগজের ফুল কোনো আচম্বিত ব্যাপার হয়ে থাকে নাই। উপরন্তু, যুদ্ধের সিজনে বাচ্চার হাতে লাল-সাদা কাগজের ফুলের যে রাজনৈতিক-শৈল্পিক ব্যঞ্জনা থাকতে পারে এই ভেবে খুব সম্ভবত তাদের ফটো তুলতে ইচ্ছা হয়েছিল। ফুল যদি হাত না ফসকাতো, আমি হয়তো পেছন থেকে বাপ-বেটার একটা ফটো তুলে ফেইসবুকে কিছু লাভ রিয়েকশন হাসিল করতে পারতাম। ভুতুম নাম্নী আমার নিজের বাচ্চার থেকে যেহেতু আমি শিখছি, তাই এই ফুলের অতি নিকট ভবিষ্যৎ প্রয়োজনটা বুঝতে আমাকে মাথা খাটাতে হয় নাই।
কুড়িয়ে নেওয়া লাল-সাদা ফুল হাতে আমি বাপ-বেটার পেছনে হাঁটলাম খানিক। কদম সাতেক কি আটেক পিছু নেওয়ার পরই বাচ্চা তার বাপকে টেনে থামাল। আদুরে জেদের ভঙ্গিতে, মা-বাপের ওপর বাচ্চার সব গোস্বার আনডিফাইন্ড শর্তে, হারিয়ে যাওয়া ফুল ফেরত চায় সে। আর সেই মুহূর্তেই, একদম সেই মুহূর্তেই, কিছুটা নাটকীয় ভঙ্গিতে সেই ফুল হাতে আমি বাপ-বেটার পার্শ্বে অবতীর্ণ হই। তারা দুজনেই আমাকে দেখে যেন কিছুটা চমকে যায়। যেন-বা তারা একজন ম্যাজিশিয়ান দেখল; আমিও কপট জাদুকরী গাম্ভীর্য অটুট রেখে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হেসে বাচ্চার হাতে ফুল তুলে দেই। কথা না বলে বরং মুচকি হাসি স্থায়ী রাখি, যতক্ষণ না ফুল বিনিময় করে আমি তাদের অতিক্রম করে যাই। বাচ্চাটা আমার দিকে চেয়ে থাকবে আরও কিছুক্ষণ, অন্তত যতক্ষণ আমাকে দেখা যায়। বাপও হয়তো বাচ্চার দৃষ্টি ফলো করে থাকবে।
আমি কিন্তু আর পেছন ফিরে দেখি নাই। সচেতনভাবেই আর তাকাই নাই। আমাকে আরেকবার দেখতে চাইবার আগ্রহ যদি তাদের হয়, সেই আগ্রহ না মিটাইলে বাচ্চাটার মেমরিতে আমি তো খানিকক্ষণ কিছুটা ম্যাজিক্যাল ক্যারেকটার হয়ে থাকলাম হয়তো।
গল্প শেষ।
এই গল্পের নাম স্ট্রবেরি
কালারের ললিপপ
ফাঁকা রাস্তায় একটা মোটর গাড়ির সাবলীল আনন্দের গতিকে আচমকা প্রবলভাবে ডিনাই করলে যেমন শব্দ হয় আমার পেছনে ঠিক এমন একটা শব্দ হলো। সিনেমায় প্রাণঘাতী অ্যাক্সিডেন্টের শব্দ যেমন হয় আরকি, বিকট। আমি একটা লেন পার হয়ে রোড ডিভাইডারের ওপরে অবস্থান করছিলাম আরেকটা লেন পার হওয়ার বাসনায়। শব্দটা অনুসরণ করে পেছন ফিরে তাকাই। এই তাকানো সচেতন সিদ্ধান্ত ছিল না; ঘটনার আশপাশের সবাই প্রাইমারি রিফ্লেক্সের কারণেই ত্বরিত সেই গাড়ির দিকে তাকায়। কিন্তু প্রথমেই আমার চোখ গাড়ির দিকে না গিয়ে থমকে গেল একটা স্ট্রবেরি কালারের ললিপপের দিকে। মধ্য রাস্তায় পড়ে আছে, ভর দুপুরের প্রখর আলোয় জ্বলজ্বল করছে। তার পাশে কালো রং পুড়ে ছাই রং হওয়া বোরখা পরিহিত মহিলা। যে ঘটনা প্রায় আমরা কেউ দেখি নাই তিনি সেই ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল, এখনো কোনো রিয়েকশন দেখাতে শুরু করেন নাই। মহিলার বাম পাশে যে টয়োটা হাইএস গাড়ি দাঁড়ানো দেখলাম সেটা কি তখনো গতি জড়তা সামাল দিতে সাসপেনশনে ঝাঁকি খেয়ে থিতু হওয়ার দশায়, বোঝা গেল না। অতটা দ্রুততার সাথে আমি মনে হয় পেছনে তাকাই নাই। দেখার ভুল। নাকি শব্দের সাথে মাথা এমনটা কল্পনা করে নিয়েছে। হতে পারে সিনেমার ইমপ্যাক্ট।
কিন্তু যা সত্যই ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে তা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। বিশ্বাস করতেও চাইছিলাম না। দেখতেও চাইছিলাম না। আবার মুখ ঘুরিয়ে চলেও যেতে পারছিলাম না। মনে হলো গাড়ির সামনের অংশ ঘেঁষে উপুড় হয়ে বসে থাকা মহিলার হাঁটুর কাছে একটা বাচ্চার মাথা, মনে হচ্ছে যেন শরীরের বাকি অংশ গাড়ির নিচে। মাথা কি না তা রেজিস্টার করতে করতেই তিন বা চার বছরের একটা অপুষ্ট মেয়ে বাচ্চা বের হয়ে আসলো গাড়ির তল থেকে। ভাবলেশহীন চোখমুখ। আমার পাশ থেকে কারা যেন খুব শব্দ করে সুবহানাল্লাহ ধ্বনি তুলল। আমি সম্ভবত একইভাবে তাকিয়ে ছিলাম।
সিনেমার দৃশ্য হলে হয়তো মা জড়িয়ে ধরে চুমু খেতো, কিন্তু এইখানে ঘটল ভিন্ন ঘটনা, অক্ষত বাচ্চাকে দেখে মা উচ্চশব্দে মরা কান্না জুড়ে দিলেন। কাঁদতে শুরু করার সাথে মেয়েকে মারতেও শুরু করেন। ক্লাস সিক্সে হাত ভেঙ্গে ঘরে ফিরলে আমার আম্মা আগে আমাকে দুইটা থাপ্পড় দিয়েছিলেন। আছে হয়তো কোন রিলেশন। একরকম মারতে মারতেই টেনে রোড ডিভাইডারে উঠলেন। কালো-বেঁটে করে ড্রাইভার সাহেব গাড়ি থেকে নেমে জীবিত বাচ্চার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ, আর এদিক-সেদিক তাকালেন কোনো নির্দিষ্ট দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ না করে। তাকে চারপাশ থেকে মানুষজন যে বাহবা দিয়ে যাচ্ছে সেই দিকে মনোযোগ দেওয়ার মতো মানসিক স্টেইটে মনে হয় তিনি নাই এখন। গাড়িতে চড়ে বসলেন কোনো কথা না বলে।
ডিভাইডারে দাঁড়িয়ে মা দোয়া দরুদ পড়ছেন আর খুব ভালো করে বাচ্চাকে চেক করছেন কোথাও কোনো আঘাত লাগল কিনা। আমারও ইচ্ছা করছিল হাত দিয়ে দেখি বাচ্চাটা আসলে জীবিত আছে কি না। মনে হচ্ছিল হয়তো ঘটনা অন্য কিছু ঘটে গেছে। হয়তো আমার দুর্বল মন সত্য মেনে নিতে না চেয়ে নিজের গড়া ঘটনা দেখছে। বাচ্চাটাকে একটু ছুঁয়ে দেখা দরকার। ভয় লাগছিল ছুঁয়ে দিলে যদি সত্যি ঘটনা রিভিল হয়ে যায়।
জ্যাম লেগে গেছে এতক্ষণে। পেছনের মানুষ তো জানে না এখানে কী ঘটছে তাই স্বভাবসুলভ উচ্চ শব্দে হর্ন বাজিয়ে পরিবেশ অতিষ্ঠ করে তুলছে। আমি সম্ভবত একইভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মুহূর্তে যেমন করে মানুষের জমায়েত হয়েছিল আবার মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল। আমি সময় নিচ্ছিলাম হজম করার জন্য।
গাড়ি চলতে শুরু করল আবার। কয়েকটা গাড়ি চলে গেল, ললিপপটা অক্ষত থেকে জ্বলজ্বল করছিল তখনো। আমি ললিপপটা চূর্ণ হয়ে যেতে দেখতে চাইছিলাম না কিন্তু তবুও তাকিয়ে ছিলাম। কেন যেন চোখ ফেরাতে পারছিলাম না। মা, বাচ্চা কোলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর দোয়া দরুদ পড়ে ফুঁ দিয়ে চলেছেন।
বাচ্চাটাও দেখলাম আধখাওয়া স্ট্রবেরি ললিপপটার দিকেই চেয়ে আছে। আরও কিছুক্ষণ ললিপপটা গাড়ির চাকার সংস্পর্শ থেকে বেঁচে থাকুক। রোদে জ্বল জ্বল করতে থাকুক।
আকিরা কুরোসাওয়া, জাপানি চলচ্চিত্রের সম্রাট, সিনেমা বানিয়েছিলেনএবং একদিক থেকে ভেবে দেখতে গেলে, তিনি সেই অর্থে নিছক সিনেমা বানানোর চক্করে ছিলেন না। এমনকি যখন সত্যতর অর্থে, শ্যুটিং প্রস্তুতির জন্য রিসোর্সের অভাব বোধ করতেন, তিনি ভবিষ্যতে নির্মাণের জন্য সিনেমার প্রস্তুতি নিতেনপ্রতিটি ডিটেলের কথা নিখুঁতভাবে চিন্তা করে। ক্রিটিক এবং জাপানি সিনেমার ইতিহাসবেত্তা ডোনাল্ড রিচি ‘পরিচালকের স্মরণে’ শীর্ষক এক রচনায় জাপানি চলচ্চিত্রের সংজ্ঞায়নে অন্য যে কারও চেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন কুরোসাওয়ার ‘পণ্যটিকে নিখুঁত করবার ভাবনা’কথাটির ওপর। ‘যদিও অনেক চলচ্চিত্র সংস্থা-ই হয়তো নির্মাতার এমন আত্মনিবেদনে আলোকিত হয়ে উঠত’, রিচি লেখেন, ‘জাপানি স্টুডিওগুলো প্রায়ই ইনোভেশনের চেয়ে সহযোগিতায় অধিকতর মুগ্ধ হয়।’
কুরোসাওয়ার পক্ষে, তার চলচ্চিত্র যাত্রাপথে, উচ্চাভিলাষী প্রজেক্টের জন্য, টাকাপয়সা সংগ্রহ কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। রিচি সত্তর দশকের একসময়ের কথা স্মরণ করেন, ‘তিনি বুঝেছিলেন কাগেমুশা বাস্তবিক আলোর মুখ দেখবে না, কুরোসাওয়া সময় কাটাচ্ছিলেন প্রতিটি দৃশ্য এঁকে, এই সংগ্রহটি অবাস্তবায়িত চলচ্চিত্রের জায়গা নিতে পারত। তিনি অন্য কোনো কোনো পরিচালকের মতো স্টোরি বোর্ড ব্যবহার করতেন। এখন সেসব গ্যালারির প্রশস্ততাকে উজ্জ্বল করছেঅনির্মিত মাস্টারপিসের প্রদর্শনকক্ষ।’ যখন সিনেমা নির্মাণে অপারগ ছিলেন তিনি সেসব লিখে ফেলতেন, লেখা সাঙ্গ হলে নেমে পড়তেন আঁকায়।
‘আমার উদ্দেশ্য ভালো মতো পেইন্ট করা ছিল না। আমি নানা রকম জিনিসকে নিজের হাত দিয়ে নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম’। কিন্তু আপনারা যেমন দেখতে পাচ্ছেন, সম্রাট জানতেন তিনি কী চান, সুনির্দিষ্ট শটটি স্পষ্টভাবেই আগেই দৃশ্যকল্পনায় তার প্রচুর সময় ও শক্তি খরচের ব্যাপারটি রিপ্রেজেন্ট করত। মাঝেমধ্যে কুরোসাওয়ার নিজের আর্টওয়ার্ক কম পরিচিত সিনেমার অফিশিয়াল পোস্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো, (কম পরিচিত মানে, কুরোসাওয়ার বিশাল কাজের প্রেক্ষিতে) ব্যক্তিগত কাজ যেমন সত্তর দশকের ডোডোসকাদেন কিংবা শেষ কাজ, ১৯৯৩-এর ম্যাদাদেও।
আমরা নথিভুক্ত করতে পারি চলচ্চিত্র পরিচালকের চিত্রকলার প্রতি আগ্রহএবং হয়তো ফিল্ম নির্মাণে, বেশির ভাগটাই তার বড় ভাই হেইগোর প্রভাব, টোকিও শহরে উনিশশো তেইশের পহেলা সেপ্টেম্বরের প্রবল ভূমিকম্পের পর কুরোসাওয়া দাদার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। নির্বাক চলচ্চিত্রের একজন সজীব ধারাভাষ্যকার এবং প্রলেতারিয়ান আর্টিস্ট লিগের প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী হেইগো, ১৯৩৩ সালে তার রাজনৈতিক বিশ্বাস ভঙ্গ ও নিজের কেরিয়ার-বিধ্বংসী সবাক চলচ্চিত্রের আবির্ভাবের দরুন আত্মহত্যা করেন। তরুণ আকিরা এক দশক পর পরিচালনার উদ্বোধনী কাজটি করেন, পঞ্চান্ন বছর ধরে ধারাবাহিক থাকবেন তিনি পরিচালনায়। আমরা নিশ্চিত জানি, সব সম্ভাব্য স্তরেই হেইগো ছোট ভাইয়ের জন্য গর্বিত হতেন।
ধ্রুপদি চলচ্চিত্র ‘দ্য সেভেন্থ সিল’-এর দাবা খেলাটা দেখেছেন!
দৃশ্যটি বিশ্বের অসংখ্য সিনেমাশিক্ষার্থী, প্রেমিক, ভাবুককে ভাবিয়েছে। সিনেমার কেন্দ্রীয় ঘটনা এটি। কত অল্প আয়োজনে বিশ্বের চিন্তাজগৎ আলোড়িত করা যায় এ তার এক অনুপম দৃষ্টান্ত। যদিও দাবা খেলায় আগ্রহী স্টুয়ার্ট রুবেন খানিক ভিন্ন মত দিয়েছেন। ‘ভিন্ন’ বলেই তুলে ধরা দরকার।
আন্তোনিয়াস ব্লক, একজন নাইট, ক্লান্ত, ক্রুসেডের যুদ্ধ থেকে ফিরছেন নিজভূমে। নিজের প্রিয়তম দেশ প্লেগে মহামারীতে বিধ্বস্ত। ব্লক সহসা আবিষ্কার করলেন, আহত হৃদয়কে অপমান করতেই মৃত্যু তাঁকে নিতে এসেছে। তাই তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন, এমনকি মৃত্যুকে। যদি তিনি জেতেন পরিবারের কাছে ফেরা; নইলে খেল খতম! জীবন ও নশ্বরতা বিষয়ে ভাবানোর মতন মন্তব্য করলেও এই দাবাযুদ্ধ দাবায় উৎসাহীদের প্রামাণ্যতা সম্পর্কে করে তোলে উৎসাহী। ‘চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ভুলভাল করা স্বাভাবিক।’ স্টুয়ার্ট রুবেন, এক দাবাচিন্তক মন্তব্য করেন। তিনি আরও যোগ করেন, ‘যদিও চতুর্দশ শতক সিনেমার পটভূমি, এই তথ্য প্রায় নিশ্চিত যে নিয়মটিতে তারা খেলছিলেন তার প্রতিষ্ঠা পঞ্চদশ শতকে। মৃত্যু একটি চাল দেয়, সাদা রাজাকে চেক দেওয়ার পর, কালো তার রাজা তুলে নেয়, তারপর খেলা ডিজলভ হয়ে যায়।’
খেলা শেষ। কালো জেতে। মনে হতে পারে, এই খেলাটিতে কোনো দাবা পরামর্শক ছিলেন না। খেলাটা এত দ্রুত! সাদা খেলা শুরু করে (ঊনবিংশ শতকের শেষ ভাগের নিয়ম সাদা সবসময় শুরু করবে), খেলাটা সাদায় শুরু হলো পরে বদলে গেল এবং মৃত্যু যে রানী অধিকার করল সেটাকে বড় চাল হিসেবে দেখানো হয়েছে; অথচ তখন রানী কম শক্তির ঘুঁটি ছিল, তাই এই বড় করে দেখানো কোনো অর্থ বহন করে না। ‘ঘটনা হচ্ছে, খেলা গড়ায় না।’ রুবেন লেখেন এক নিবন্ধে। ‘আপনি যা আশা করেন তা হলো, খেলা যত গড়াবে ঘুঁটি কমবে বোর্ডে। আপনি কখনো আশা করবেন না ঘুঁটি কাটা পড়া সত্ত্বেও অনেক অনেক ঘুঁটি থাকবে।’
সুতরাং এ ছবিটি কী? রুবেন বুঝে উঠতে পারেন না। ব্যারিম্যানসুলভ বিমূর্ততা ও অস্তিত্বের ক্লান্তি নিয়ে মন্তব্য না স্রেফ এক সাজানো জিনিস! দাবাচিন্তক সিদ্ধান্ত টানেন, ‘কোনোটাই না।’
হয়তো ফিল্ম ক্রুদের মধ্যে ঘটা অসংখ্য খেলার একটা এটা। খেলাটা তারা দূর থেকে যেকোনো এক অবস্থানে তুলে ধরেছেন। কেননা খেলার শেষ দিকে বোর্ডে অধিক ভিড় অযৌক্তিক লাগে। আমি আসলে শেষ দশাটা কেন চেক মেট ঠিকঠাক দেখে উঠতে সক্ষম হইনি।
দেখেননি এখনো? সিনেমাটা এবার দেখে ফেলুন।
বিদেশি নিবন্ধ অবলম্বনে সৈকত দে
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি মধ্যে নালের বেড়া ওরে হাত বাড়ায়া দিতে পান কপাল দেখি পোড়া, প্রাণ কোকিলা রে এই গানের গীতিকবি কে? তার বিখ্যাত দুটি কাব্যর নাম কী কী? প্রশ্নটির সঠিক উত্তর হাতে লিখে পাঠান ধ্রুপদির ঠিকানায়। নির্বাচিত সঠিক উত্তরদাতাদের একজন পাবেন ধ্রুপদির সৌজন্যে মহামূল্যবান বই। উত্তর ধ্রুপদির ডেস্কে পৌঁছতে হবে ১৭ জানুয়ারির আগে। ধ্রুপদি কুইজ ১ এর সঠিক উত্তর জীবনানন্দ দাশ, কমলালেবু এবং কলকাতা। অজস্র উত্তরের মধ্যে শতভাগ সঠিক কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। ৬৬% সঠিক উত্তরের মধ্যে লটারি করে মহামূল্যবান বই জিতেছেন ফিরিঙ্গিবাজার কোতোয়ালির মো. সেলিম। আপনাকে অভিনন্দন। আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে মহামূল্যবান বই
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।