
লেখক প্রকাশকদের আড্ডায় শুধু পরচর্চা আর বিষোদগার হয় না, দারুণ কিছুও যে হয় তার নজির মিলবে এবার বইমেলায়। তুষার দাশ, সিদ্ধার্থ হক, ফারুক মঈনুদ্দীন এবং সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। চার বন্ধু, চার আড্ডাসারথি। তাতে যুক্ত হন কখনো কখনো অন্য লেখক-প্রকাশকরাও। চারজনের মধ্যে তিন কবিবন্ধুর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে অমর একুশে বইমেলায়। তুষার দাশ এবং সিদ্ধার্থ হকের বই আগে প্রকাশিত হলেও এবারই প্রথম প্রখ্যাত সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার কবিতার বই প্রকাশিত হচ্ছে। তার প্রথম কবিতার বইয়ের নাম ‘আপন আলাপ’। প্রায় বিশ বছর ধরে লেখালেখির পর কবি ও সাংবাদিক বন্ধুদের চাপে কবিতার বই করছেন বলে জানান তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কত কবিতা হারিয়ে গেছে! সংগ্রহে রাখতে পারিনি। বাসা বদলে কবিতার খাতা হারিয়েছে। বন্ধুদের চাপেই আবার লেখা শুরু এবং প্রকাশ করা।’ বইটিতে দীর্ঘ সময়ে লেখা তার কবিতাগুলো থেকে বাছাই করা ৪২টির বেশি কবিতা স্থান পেয়েছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আইয়ুব আল আমিন।
ইশতিয়াক রেজার দুই প্রখ্যাত কবিবন্ধু তুষার দাশ ও সিদ্ধার্থ হকের কবিতার বই দুটির নাম যথাক্রমে দুর্বৃত্তের উপাসনালয় এবং অন্ধকার। নির্জনপ্রিয় এই দুই কবির বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা ও রাজীব দত্ত। পাঞ্জেরীর প্রকাশক কামরুল হাসান শায়ক জানান, ‘এক তুমুল সাহিত্য আড্ডায় এই চারবন্ধুর বই প্রকাশের পরিকল্পনা হয়, পরিকল্পনা মোতাবেক তিন বন্ধুর কবিতা এবং এক বন্ধুর প্রবন্ধের বই করছি আমরা, প্রবন্ধের বই হচ্ছে কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক ফারুক মঈনুদ্দীনের। বইটির নাম ‘মার্কেসের জাদু, নোবেলের বাস্তবতা ও অন্যান্য’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত। বইমেলায় পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ৯ নম্বর প্যাভিলিয়নে চার বন্ধুকেই আড্ডা দিতে দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশক।
সামনে বইমেলা, তাও ব্যস্ততা নেই বইপাড়ায়। অস্বাভাবিকভাবে কাগজের দাম বাড়ায় নতুন বই প্রকাশে গতি নেই সৃজনশীল বই প্রকাশকদের। সব ধরনের কাগজে একই হারে দাম না বাড়লেও নানা পদের মধ্যে রিমপ্রতি সর্বোচ্চ ১৯-২০ হাজার টাকা বেড়েছে লেজার কাগজের দাম। পাইকারিতে কাগজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বইসংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম বেড়েছে, হয়েছে অন্তত দ্বিগুণ। একুশে বইমেলা নিয়ে দুশ্চিন্তার রেখা পড়েছে প্রকাশকদের কপালে। সেই রেখার সংক্রমণ লেখক পাঠকদের মধ্যেও যে ছড়াবে না, তার নিশ্চয়তা নেই।
বাংলাদেশের বইবাজারখ্যাত বাংলাবাজার এলাকায় সরেজমিনে প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই মাসে পাইকারি বাজারে কাগজের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। রিমপ্রতি যে কাগজ তারা ১৭০০ টাকায় কিনতেন, সেই কাগজই এখন ৩৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘এই সময়ে আমরা বইমেলার প্রস্তুতি নিই। আবার অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান ডায়েরি, ক্যালেন্ডার করায়। এ জন্য কাগজের ব্যবসা ভালো থাকে। এবার ছাপার কাজটা আপাতত বন্ধ রেখে বাদবাকি করতে হচ্ছে, যাতে কাগজের দাম কমলে দ্রুত ছাপার কাজ সেরে নেওয়া যায়। কিন্তু সেটাও এখন অনিশ্চিত, কাগজের দাম না কমে বরং বেড়েই চলছে।’
ভাষাচিত্র প্রকাশনীর প্রকাশক খন্দকার সোহেল বলেন, ‘কাগজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে মূলত সিন্ডিকেটের কারণে। সরকার যদি এই সিন্ডিকেট ভেঙে কাগজ সহজলভ্য করতে দাম নির্ধারণ করে দেয় তাহলে প্রকাশকদের জন্য ভালো হবে। সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া আসলে কিছুই করার নেই। আর এভাবে কাগজের দাম বহুগুণ বেড়ে গেলে এর চাপটা প্রকাশনার থেকে পাঠকের ওপরেই বেশি পড়বে। ফলে বইয়ের দাম পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে, তারা বই কিনবে না। এতে বইবাজারে ধস নামার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
রাজধানীর কাঁটাবন এলাকার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার প্রকাশনাগুলোতেও কাজের গতি কমে এসেছে। অন্যান্য বছর এ সময় প্রকাশনাগুলো ঘিরে লেখকদের জটলা লেগে থাকে। এ বছর তেমন কোনো লেখকের আনাগোনা নেই, ব্যস্ততাও নেই প্রকাশনাগুলোতে। কাগজের দাম বাড়ায় কাগজের অপচয় হয় এমন মানহীন বই প্রকাশ না করার তাগিদ দিয়ে পেন্ডুলাম পাবলিশার্সের প্রকাশক রুম্মান তার্শফিক বলেন, ‘আগে থেকেই কাগজের দাম বেশি ছিল এবং বছরের এ সময়ে দাম বেড়ে যেত। কিন্তু এবার সবার টনক নড়ে উঠল কারণ এবার দাম প্রায় তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে। এটা আসলে প্রকাশনীর জন্য চিন্তার বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাগজের দাম তো প্রকাশক বহন করেন না। বহন করেন পাঠক। বইয়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাঠকরা বই কিনতে আগের তুলনায় আরও সর্তক হবেন। সেক্ষেত্রে প্রকাশকদের বই প্রকাশে আরও সাবধান হতে হবে।’
প্রকাশকরা ব্যবসায়ী বলেই হয়তো সাবধানী বেশি। নামি প্রকাশকরাও হাতেগোনা বই প্রকাশ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশক বললেন সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হচ্ছে, বইমেলায় যে বই লেখকরা নিজেরাই কিনে নেবেন সে রকম বই।
ভালো মানের বই প্রকাশ করলে পাঠক দাম বেশি হলেও কিনবেন, কেউ কেউ এমনটা ভাবলেও অন্য প্রকাশকরা তেমনটা মনে করছেন না। পাঠক সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কাই অধিকাংশ প্রকাশকের। চৈতন্য প্রকাশনার প্রকাশক রাজীব চৌধুরী বলেন, ‘অস্বাভাবিকভাবে কাগজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লেট, বাঁধাই, লেমিনেশনের খরচও বাড়ছে। আমরা যেখানে বইমেলায় ৩০-৩৫টা বই করি সেখানে ১০টা বইই করতে হিমশিম খাচ্ছি। তার ওপর বইয়ের মূল্যও বেশি রাখতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। এতে পাঠক সংখ্যাও কমে যাওয়ার শঙ্কায় আছি।’
পেন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, কাগজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রকাশনা শিল্পের জন্য চরম অশনিসংকেত। তিনি বলেন, প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে শুধু প্রকাশক একা নন বরং পুস্তক বাঁধাই, প্রিন্টিং প্রেস, বাজারজাতসহ অনেকেই জড়িত। বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর জন্য কাগজের দাম বৃদ্ধি সত্যি বিপর্যয় ডেকে আনবে। বই প্রকাশ কম হবে। বইয়ের দাম বেশি হবে। সাধারণ পাঠকের জন্য বইকেনা দুরূহ হয়ে পড়বে।’
কাগজের দাম বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যেই বইয়ের দামও বেড়েছে দ্বিগুণ। আর বইয়ের দাম বাড়ায় রাজধানীর বুকশপগুলোতেও বিক্রি কমেছে অনেকটাই। রাজধানীর বৃহৎ বুকশপ পাঠক সমাবেশের এক বিক্রয়কর্মী জানান, আগে যে পরিমাণ বই বিক্রি হতো, সেটা এখন আর হচ্ছে না। বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ঠিক একই কথা জানান বাতিঘর ও বেঙ্গল বুকশপের বিক্রয়কর্মীরা। বাতিঘরে বই কিনতে আসা মিজান বলেন, ‘আগে প্রতি সপ্তাহেই আমি নতুন নতুন বই কিনতাম। কিন্তু এখন কিনতে পারছি না। সাম্প্রতিক প্রকাশিত বইগুলোর দাম এত বেশি রাখা হয়েছে যে, আগে আমি যে টাকায় তিন চারটা বই কিনতাম সেই টাকায় এখন দুই একটা বই কিনতে পাচ্ছি। অনেক সময় তাও হচ্ছে না।’
কবি কামাল চৌধুরীর ৬৬তম জন্মদিন ২৮ জানুয়ারি। জন্মদিনে বাংলা ভাষার বিশিষ্ট এই কবিকে ‘ধ্রুপদি’র শুভেচ্ছা।
যুদ্ধ
এই একটি গল্প সীমান্ত পেরিয়ে যাচ্ছে
তোমারও সীমানা জানা নেই
অস্ত্রের পরেও আমি গম রুটি নিয়ে যুদ্ধ করতে শিখে গেছি
কারণ যা ঘটবে, যা ঘটতে দেখেছি,
যা ইতিহাসে লেখা আছে সেখানে
তুমিও উদ্বাস্তু শিবিরের ছেলে
হয়তো পরের বছর তুমি আটলান্টিক পাড়ি দেবে
সমুদ্রে লংমার্চ শেষে যারা মরে যাবে তারাও সার্বভৌম নয়
যেখানে তটরেখা অস্পষ্ট, পতাকার রং মুছে যেতে যেতে
সেখানে লোনাপানির চিৎকার আছড়ে পড়ে
তিমিসমান ঢেউ
সেখানে বোমার শব্দে তড়িঘড়ি ফেলে আসা
সুটকেসের মতো তোমাকেও খুঁজে পাবেনা কেউ
কারণ তুমি পরিত্যক্ত বাড়ি, তুমি চুরমার তৈজসপত্র,
তুমি রক্তস্রোত, রাস্তায় পড়ে থাকা ছিন্নভিন্ন শরীর-
তোমাকে তাড়িয়ে নিচ্ছে সীমান্তহীন ট্যাংক ও দানব
শস্যখেতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তোমার মনে
পড়ছে ভাতের থালা, রুটি মাংস, দ্রাক্ষানিবাস
হয়তো-বা পাশের বাড়ির মেয়েটিকেও
যে তোমাকে সীমা অতিক্রম করতে দেয়নি কখনো...
অনুশীলন
তোমাকে লিখেছি আমি বারবার, পুনরুক্তি নেই
কলমের পাশে তবু প্রতিশব্দ অনুশীলনের
সাদাখাতা খুললেই রোদ ভেঙে নার্সিসাস আসে
তোমাকে খুঁজছি একা, প্রতিজন্মে, অচেনা মায়ায়।
শরীরে বারুদগন্ধ, ধ্বংসকাল, ভেঙে পড়ছে মেরু
হয়তো পরের দৃশ্যে পেয়ে যাবো গলিত তুষার
আমার কবিতা অস্ত্র, ধেয়ে আসছে ট্যাংকের বহর
নিরাপত্তা আমি দেবো, এ কবিতা ভূমি দখলের।
ভাষা ফের নম্র করি, যুদ্ধ নয়, অপেক্ষার ভাষা
আলো এসে ঠিকরে পড়ে, ধূলি লেখে অপূর্ণ সময়
সমস্ত পৃথিবী যদি পা-ুলিপি, আমিও মুকুটহীন,
একটি পঙ্ক্তি শুধু বেঁচে থাক, এই স্বপ্নে লিখি।
আশ্চর্য সমুদ্র তীরে তবু হাওয়াবালিকার ধুলো
যে ভিখিরি গান গায়, তার পাত্রে ঝাউ বিনিময়;
আমাকে উড়িয়ে নিলে, মনে হয় চাঁন্দের গাড়িতে
অনন্ত ভ্রমণগুচ্ছে এইপথ হারাতে এসেছি।
প্রেমনীতি
এই প্রেম রাজনীতি জানে
এই প্রেম জীবনে মরণে
লিফলেট বিলি করে যাবে
রাতজাগা চাঁদের কিরণে।
শান্তি
পাখিরা উড়ুক, জানালাটা রাখো খোলা
নদীজলে রাখো নৌকার পাল তোলা
বসন্ত হাসুক পথে পথে বারবার
আজ পৃথিবীর শান্তিই দরকার।
আঁধারে ফুটুক আলোর সূর্যমুখী
আমরা মানুষ শান্তির অভিমুখী।
বহুপ্রতিভাবান তিনি। একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, কবি, গীতিকবি ও প্রখ্যাত স্থপতি। ২০১৯ সালে তিনি বইমেলার স্থাপত্য নকশা করে বদলে দিয়েছিলেন বইমেলার চেহারাই। অমর একুশে বইমেলা শুরুর আগে হঠাৎই শোনা গেল এবার নকশা করছেন না এনামুল করিম নির্ঝর। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশিত হলো তার সঙ্গে ধ্রুপদির আলাপচারিতা।
শিমুল সালাহ্উদ্দিন : নির্ঝর ভাই কেমন আছেন?
এনামুল করিম নির্ঝর : আমার মতোন ভালো আছি!
এবার বইমেলার মাঠের নকশা কেন করলেন না?
আমাকে করতে বলা হয়নি বলে। আসলে করিনি বললে ভুল হবে। গত ২০১৯ থেকে পরপর চার বছর অমর একুশে বইমেলার পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলাম। সেই সময়টায় বাংলা একাডেমি কর্র্তৃপক্ষ ঠিক সময়মতো বেশ আগেই নোটিস দিয়ে মিটিংয়ে ডাকত, পরামর্শ নিত। যে কারণে মূল আয়োজনের শুরু থেকেই পুরোপুরি সম্পৃক্ত থাকতাম। এবার তারা সময়মতো কিছুই জানায়নি। গত চার বছরে আমার সম্পৃক্ততার জন্য সবাই অনুমান করেছে আমি আগের মতোই যুক্ত হয়ে এবারের বইমেলার পরিকল্পনা এবং নকশা করছি। সে কারণে যখন আমাকে বিভিন্ন কারণে যোগাযোগ করতে শুরু করে তখন আমি না পেরে সামাজিক মাধ্যমে একটা পোস্ট দিয়ে লিখে দিই যে, যেহেতু এবার বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আমাকে প্রয়োজন মনে করেনি, সে কারণে আসলে আমি এর সঙ্গে যুক্ত নই। তার বেশ কয়েকদিন পর বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আমাকে সাজসজ্জা উপ-কমিটির একজন সদস্য হিসেবে দুপুরবেলায় চিঠি পাঠিয়ে বিকেলেই মিটিংয়ে যোগ দিতে বলে। আমি একজন খুব সামান্য পেশাজীবী হলেও তো মোটামুটি ব্যস্ততার মধ্যে থাকি। তারা সৌজন্য হিসেবে আমি এই কমিটিতে আদৌ থাকতে চাই কি না বা আমি সময় দিতে পারব কি না সময় দিতে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করেনি। পরে আমি অপারগতা প্রকাশ করে তাদের চিঠি দিয়ে আমার নাম প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাই। এই চিঠির উত্তর আমি এখনো পাইনি। আসলে পুরো ব্যপারটা নিয়ে আমি একটু অস্বস্তি এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছি।
বাংলা একাডেমির সঙ্গে ৪ বছর স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে কাজ করে কী পেলেন?
আমি যেহেতু জাতীয় স্বার্থে কাজটা করেছি, সে কারণে এখানে কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। যেটুকু চেষ্টা করেছি তার প্রভাব যদি ভবিষ্যতে তারা ব্যবহার করতে পারে। আমার উদ্যোগটা তো একটা প্রক্রিয়া ছিল, যা দুই-তিন-চার বছরে করে শেষ করার মতো বিষয় না। এটা একটা চর্চায় পরিণত করতে হলে একটা নির্দিষ্ট আগ্রহী দলকে তৈরি করা জরুরি। আমি স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছিলাম এমন একটা প্রক্রিয়া তৈরি করতে, যেন সেই প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতের সৃজনশীল পেশাজীবীরা পেশাগতভাবে নিয়মিত কাজটা করতে পারে।
তাদের অবজ্ঞার কারণে অকৃতজ্ঞ মনে হয়েছে ঠিক, তবে সেটা আমি এভাবে বলতে চাই না। মনে হবে আমাকে ডাকেনি তাই বলছি। অনেক ভালো কিছুও হতে পারে এবার।
বাংলা একাডেমির তখনকার মহাপরিচালক প্রকৌশলী কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী আপনাকে মেলার নকশা করার কাজে যুক্ত করেছিলেন। সিরাজী ভাইয়ের প্রস্থানেই কি চার বছর স্বেচ্ছাসেবা দেওয়া একজন স্থপতি কবি চলচ্চিত্র নির্মাতা লেখক অপমানিত হলেন?
সিরাজী ভাই জয়েন করার আগ থেকেই আমি কিন্তু পরিচালনা পরিষদের সদস্য ছিলাম। তারপরে উনি যখন এলেন তখন আমি আরও শক্তি পেলাম এবং প্রকৌশলী হিসেবে উনি আমাকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছেন, সহায়তা করেছেন এবং সব সময় আমার সঙ্গে ছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবা দিলে আসলে কোনো আকাক্সক্ষা থাকে না। আর আমি মনে করি আমার সম্মানটা এতটা ঠুনকো নয় যে আমাকে একবার বাংলা একাডেমি ডাকল না এতে অপমানিত বোধ করলাম। সেটা মনে করি না। বরং আমার মনে হয় যে এ ধরনের আয়োজনগুলোতে উৎসাহী যারা এগিয়ে আসে তাদের যদি সুযোগ দিই তাহলেই আসলে বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হবে।
সামনের বছর মেলা বিন্যাসের কাজে কি আমরা আপনাকে দেখব?
এটা আমি জানি না আসলে। তবে যদি রাষ্ট্র আমাকে সুযোগ দেয় তাহলে এই পুরো ব্যাপারটাকে আমাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক উদ্যোগ হিসেবে একটা অনন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার একটা চিন্তা আছে গত চার বছরের অভিজ্ঞতা থেকে। যাতে করে ভবিষ্যতে যারা স্থপতি, শিল্পী, গ্রাফিক ডিজাইনার এবং যারা যারা আছেন এমনকি যারা এই ব্যবসাটা করেন তাদেরও সম্পৃক্ত করে আমরা একটা প্রক্রিয়া হিসেবে কিছু করতে পারি।
এবার মেলায় আপনার কী কী বই প্রকাশিত হচ্ছে?
আমি তো নিয়মিত লেখক নই। তবে ঢাকা শহরে আসার আগে আমার প্রথম যে কবিতার বইটা প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে, সেটা চল্লিশ বছর পর পুনঃপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। এই বইটা প্রকাশ হওয়ার পরে কবি হিসেবে আমার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু এই পুনঃপ্রকাশের মাধ্যমে কী হয়, আমি জানি না। ‘চৌদ্দ গোষ্ঠীর উদ্ধার পর্ব’ পুনঃপ্রকাশ করছে বৈতরণী।
মেলায় হাজারো মানুষ অংশ নেবেন, তাদের প্রতি কী বলতে চান?
তাদের প্রতি আসলে একটাই বলার আছে যে বইমেলাটি আমাদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়। গত চার বছর ধরে চেষ্টা করছি একে স্বাধীনতা স্তম্ভের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার এবং আমাদের পুরো প্রাঙ্গণটার মধ্যে সবাইকে সম্পৃক্ত করে আন্তরিক করে তোলার। সেই জন্য মনে হয় যে সবাই যেন এদিকে আন্তরিক থাকে এবং যেন উদ্দেশ্যগুলো সফল হয়।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ নির্ঝর ভাই।
ধ্রুপদি, দেশ রূপান্তর এবং আপনাকেও।
লাইভ রিয়েলিটি শো চলছে। শরীর থেকে আত্মা বেরিয়ে যাবে, কেবল চড়া দামে টিকিট কাটনেওয়ালারাই স্বচ্ছ কাচের দেয়ালের এপাশ থেকে দেখতে পাবেন আত্মাকে, দেখবেন ওটা কীভাবে শরীরের দখল ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সাধারণভাবে মানুষের চোখ এসব দেখতে সক্ষম নয়। এর জন্য বিশেষ আলোকরশ্মির ব্যবস্থা করা হয়েছে। দীর্ঘ কাল রোগে ভুগে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাহিল হতে হতে নিস্তেজ হয়ে পড়া মুমূর্ষু লোকটার ওপর সেই বিশেষ আলোকরশ্মি ফেলে অপেক্ষা করা হচ্ছে, পানিতে ছিপ ফেলে যেভাবে অপেক্ষা করতে হয় মাছের। আয়োজকদের বক্তব্য হচ্ছে, বিশেষ আলোকরশ্মির মাঝে নাকি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে আত্মার শরীর ত্যাগের ঘটনা।
স্বচ্ছ কাচের ওপাশে স্তব্ধ আলোকরশ্মি। প্রথমে ফিসফাস চললেও একটা পর্যায়ে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। আত্মা হালকা মেঘের মতো বেরিয়ে ভাসতে থাকবে, এমনটিই ভাবছিল সবাই। উত্তেজনার পারদ চড়তে চড়তে শরীরটা কখন আত্মাছাড়া হবে ভাবতে ভাবতে অপেক্ষার অস্থিরতায় যখন সবাই ভাবছিল মানুষটা মরতে এত দেরি করছে কেন, সেইমাত্র শরীরের ভেতর থেকে লাফিয়ে উঠল আত্মাটা। সেই শো’তে উপস্থিত থাকতে পারা ভাগ্যবানদের একজন হিসেবে বলছি, দয়া করে এরকম দৃশ্য কখনো দেখতে চাইবেন না। শরীরের খাঁচার ভেতর অচিন পাখি ভেবে আত্মাকে নিয়ে যত মায়ামমতা দেখান না কেন, ওটার জন্য মায়া দেখানোর আসলে কিছু নেই। দেখতে ওটা স্বচ্ছ আলোয় জমাটবাঁধা হালকা মেঘ বটে, তবে তা কী রকম জান্তব তা আসলে বলে বোঝাতে পারছি না! পিঁড়িপেতে বসার মতো করে শূন্যে বসে থেকে তাকিয়ে দেখে শরীরটাকে, যার দখল সে এইমাত্র ত্যাগ করেছে। দেখে মনেই হয় না, দুরারোগ্য ব্যাধির সাথে লড়াই করে শরীরের মতো বিপর্যস্ত এ-ও। দেখে মনে হয়, অকালে দখল হারাতে হলো বলে রোষে ফুঁসছে। সেই রোষ কখনোই মানুষের জগতের জন্য স্বস্তিকর নয়। শিরশিরে অনুভূতি শরীরে থাকা পিঠের মাঝখানে বরফ নামিয়ে দেয়, দিয়েছিল সকলেরই। আত্মাটা বুঝি এখনো মুক্ত হতে পারেনি বলে আমাদের শরীরের খাঁচায় আটকে পড়া আত্মাসমূহকে ধিক্কার দিচ্ছে। আমরা যার যার আত্মাকে যার যার শরীরের ভেতর বসবাসের কাকুতি জানাই। যদিও টের পাই, কাজ হচ্ছে না। আমাদের আত্মারা সমব্যথী হয়ে ওঠে সেই আত্মার। সম্মিলিত আত্মারা যুক্তির কাসিদা শোনায় এরকম বেশি একটা বয়স তো ছিল না মৃত শরীরের। জীবনের রূপরসগন্ধ চেখে দেখতে আরও অনেক দিন পারত, যদি শরীর সে সুযোগ তাকে দিত।
এতক্ষণে বুঝতে পারি, আত্মাটা কেন মুক্ত হয়েও রোষে গজরাচ্ছিল। জীবনের রূপরসগন্ধ আরও অনেক দিন চেখে দেখতে পারেনি সে শরীরের ব্যর্থতায়। শরীরের প্রতি আত্মার রোষ আমাদের আত্মাদের আহ্বান করে, ব্যর্থ শরীরের জন্য মায়া ছাড়ো। চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নাও শারীরিক ব্যর্থতা ঢেকে দাও বা পুড়িয়ে দাও, একটা কিছু করো।
একটা কিছু তো করতেই হবে। আমরা তাই আত্মাহীন ব্যর্থ শরীরটাকে সরিয়ে নিতে তৎপর হয়ে উঠি। দ্রুত, খুব দ্রুত জঞ্জালের মতো ওটাকে আড়ালে নিতে হবে, আড়াল করতে হবে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমাদের দুই হাত ঐ শরীরটার ঠান্ডা অসহায়ত্ব স্পর্শ করতেই আমাদের এখনো জীবিত থাকা শরীরের মেরুদ-ে আগুন জ্বলে উঠেছিল। কণ্ঠস্বর ছিঁড়ে বেরুতে চাইছিল প্রতিবাদ। এ কথা কি সত্য নয় যে, আত্মার যথেচ্ছাচার মানতে গিয়ে শরীরের এই হাল? শরীর আর ব্যবহারের যোগ্য নেই বলেই তো ছিঁড়েকেটে বেরিয়ে এসেছে আত্মা। এইসব শারীরিক সত্য হাহাকার জন্মায় শরীরে। প্রয়োজন ফুরালেই ছেড়ে যায় স্বার্থপরটা! অথচ জীবনভর আত্মার খোরাকি মেটাতে শরীরকে কতভাবেই না ব্যবহার করা হয়!
ওদিকে জমাটবাঁধা হালকা মেঘ হয়ে আত্মাটা কোথাও মিলিয়ে গিয়েছিল। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি। নতুন আরেকটি শরীরের খোঁজে হয়তো মেঘটা নেমে এসেছিল বৃষ্টির সাথে। হয়তো সে ধান্দাবাজ চিলের মতো বেছে নিয়েছিল ভ্রুণ এক, দখলের লোভে জড়িয়ে ধরেছিল ওকে, ফিসফিস করে বলছিল অবিরাম জীবন দেখতে চাই! জীবন দেখতে চাই! জীবন... সেই ফিসফিসানিকেই হৃৎপি-ের ঠিকঠাক স্পন্দন ঠাউরে ক্যামন বোকা হই আমরা, বলুন তো!
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।