
লেখক প্রকাশকদের আড্ডায় শুধু পরচর্চা আর বিষোদগার হয় না, দারুণ কিছুও যে হয় তার নজির মিলবে এবার বইমেলায়। তুষার দাশ, সিদ্ধার্থ হক, ফারুক মঈনুদ্দীন এবং সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। চার বন্ধু, চার আড্ডাসারথি। তাতে যুক্ত হন কখনো কখনো অন্য লেখক-প্রকাশকরাও। চারজনের মধ্যে তিন কবিবন্ধুর কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে অমর একুশে বইমেলায়। তুষার দাশ এবং সিদ্ধার্থ হকের বই আগে প্রকাশিত হলেও এবারই প্রথম প্রখ্যাত সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার কবিতার বই প্রকাশিত হচ্ছে। তার প্রথম কবিতার বইয়ের নাম ‘আপন আলাপ’। প্রায় বিশ বছর ধরে লেখালেখির পর কবি ও সাংবাদিক বন্ধুদের চাপে কবিতার বই করছেন বলে জানান তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কত কবিতা হারিয়ে গেছে! সংগ্রহে রাখতে পারিনি। বাসা বদলে কবিতার খাতা হারিয়েছে। বন্ধুদের চাপেই আবার লেখা শুরু এবং প্রকাশ করা।’ বইটিতে দীর্ঘ সময়ে লেখা তার কবিতাগুলো থেকে বাছাই করা ৪২টির বেশি কবিতা স্থান পেয়েছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন আইয়ুব আল আমিন।
ইশতিয়াক রেজার দুই প্রখ্যাত কবিবন্ধু তুষার দাশ ও সিদ্ধার্থ হকের কবিতার বই দুটির নাম যথাক্রমে দুর্বৃত্তের উপাসনালয় এবং অন্ধকার। নির্জনপ্রিয় এই দুই কবির বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা ও রাজীব দত্ত। পাঞ্জেরীর প্রকাশক কামরুল হাসান শায়ক জানান, ‘এক তুমুল সাহিত্য আড্ডায় এই চারবন্ধুর বই প্রকাশের পরিকল্পনা হয়, পরিকল্পনা মোতাবেক তিন বন্ধুর কবিতা এবং এক বন্ধুর প্রবন্ধের বই করছি আমরা, প্রবন্ধের বই হচ্ছে কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক ফারুক মঈনুদ্দীনের। বইটির নাম ‘মার্কেসের জাদু, নোবেলের বাস্তবতা ও অন্যান্য’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত। বইমেলায় পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডের ৯ নম্বর প্যাভিলিয়নে চার বন্ধুকেই আড্ডা দিতে দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন প্রকাশক।
সামনে বইমেলা, তাও ব্যস্ততা নেই বইপাড়ায়। অস্বাভাবিকভাবে কাগজের দাম বাড়ায় নতুন বই প্রকাশে গতি নেই সৃজনশীল বই প্রকাশকদের। সব ধরনের কাগজে একই হারে দাম না বাড়লেও নানা পদের মধ্যে রিমপ্রতি সর্বোচ্চ ১৯-২০ হাজার টাকা বেড়েছে লেজার কাগজের দাম। পাইকারিতে কাগজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বইসংশ্লিষ্ট পণ্যের দাম বেড়েছে, হয়েছে অন্তত দ্বিগুণ। একুশে বইমেলা নিয়ে দুশ্চিন্তার রেখা পড়েছে প্রকাশকদের কপালে। সেই রেখার সংক্রমণ লেখক পাঠকদের মধ্যেও যে ছড়াবে না, তার নিশ্চয়তা নেই।
বাংলাদেশের বইবাজারখ্যাত বাংলাবাজার এলাকায় সরেজমিনে প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই মাসে পাইকারি বাজারে কাগজের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। রিমপ্রতি যে কাগজ তারা ১৭০০ টাকায় কিনতেন, সেই কাগজই এখন ৩৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘এই সময়ে আমরা বইমেলার প্রস্তুতি নিই। আবার অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান ডায়েরি, ক্যালেন্ডার করায়। এ জন্য কাগজের ব্যবসা ভালো থাকে। এবার ছাপার কাজটা আপাতত বন্ধ রেখে বাদবাকি করতে হচ্ছে, যাতে কাগজের দাম কমলে দ্রুত ছাপার কাজ সেরে নেওয়া যায়। কিন্তু সেটাও এখন অনিশ্চিত, কাগজের দাম না কমে বরং বেড়েই চলছে।’
ভাষাচিত্র প্রকাশনীর প্রকাশক খন্দকার সোহেল বলেন, ‘কাগজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে মূলত সিন্ডিকেটের কারণে। সরকার যদি এই সিন্ডিকেট ভেঙে কাগজ সহজলভ্য করতে দাম নির্ধারণ করে দেয় তাহলে প্রকাশকদের জন্য ভালো হবে। সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া আসলে কিছুই করার নেই। আর এভাবে কাগজের দাম বহুগুণ বেড়ে গেলে এর চাপটা প্রকাশনার থেকে পাঠকের ওপরেই বেশি পড়বে। ফলে বইয়ের দাম পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে, তারা বই কিনবে না। এতে বইবাজারে ধস নামার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।’
রাজধানীর কাঁটাবন এলাকার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার প্রকাশনাগুলোতেও কাজের গতি কমে এসেছে। অন্যান্য বছর এ সময় প্রকাশনাগুলো ঘিরে লেখকদের জটলা লেগে থাকে। এ বছর তেমন কোনো লেখকের আনাগোনা নেই, ব্যস্ততাও নেই প্রকাশনাগুলোতে। কাগজের দাম বাড়ায় কাগজের অপচয় হয় এমন মানহীন বই প্রকাশ না করার তাগিদ দিয়ে পেন্ডুলাম পাবলিশার্সের প্রকাশক রুম্মান তার্শফিক বলেন, ‘আগে থেকেই কাগজের দাম বেশি ছিল এবং বছরের এ সময়ে দাম বেড়ে যেত। কিন্তু এবার সবার টনক নড়ে উঠল কারণ এবার দাম প্রায় তিনগুণ বেড়ে গিয়েছে। এটা আসলে প্রকাশনীর জন্য চিন্তার বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাগজের দাম তো প্রকাশক বহন করেন না। বহন করেন পাঠক। বইয়ের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাঠকরা বই কিনতে আগের তুলনায় আরও সর্তক হবেন। সেক্ষেত্রে প্রকাশকদের বই প্রকাশে আরও সাবধান হতে হবে।’
প্রকাশকরা ব্যবসায়ী বলেই হয়তো সাবধানী বেশি। নামি প্রকাশকরাও হাতেগোনা বই প্রকাশ করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রকাশক বললেন সবচেয়ে বেশি প্রকাশিত হচ্ছে, বইমেলায় যে বই লেখকরা নিজেরাই কিনে নেবেন সে রকম বই।
ভালো মানের বই প্রকাশ করলে পাঠক দাম বেশি হলেও কিনবেন, কেউ কেউ এমনটা ভাবলেও অন্য প্রকাশকরা তেমনটা মনে করছেন না। পাঠক সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কাই অধিকাংশ প্রকাশকের। চৈতন্য প্রকাশনার প্রকাশক রাজীব চৌধুরী বলেন, ‘অস্বাভাবিকভাবে কাগজের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লেট, বাঁধাই, লেমিনেশনের খরচও বাড়ছে। আমরা যেখানে বইমেলায় ৩০-৩৫টা বই করি সেখানে ১০টা বইই করতে হিমশিম খাচ্ছি। তার ওপর বইয়ের মূল্যও বেশি রাখতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। এতে পাঠক সংখ্যাও কমে যাওয়ার শঙ্কায় আছি।’
পেন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, কাগজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রকাশনা শিল্পের জন্য চরম অশনিসংকেত। তিনি বলেন, প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে শুধু প্রকাশক একা নন বরং পুস্তক বাঁধাই, প্রিন্টিং প্রেস, বাজারজাতসহ অনেকেই জড়িত। বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর জন্য কাগজের দাম বৃদ্ধি সত্যি বিপর্যয় ডেকে আনবে। বই প্রকাশ কম হবে। বইয়ের দাম বেশি হবে। সাধারণ পাঠকের জন্য বইকেনা দুরূহ হয়ে পড়বে।’
কাগজের দাম বৃদ্ধিতে ইতিমধ্যেই বইয়ের দামও বেড়েছে দ্বিগুণ। আর বইয়ের দাম বাড়ায় রাজধানীর বুকশপগুলোতেও বিক্রি কমেছে অনেকটাই। রাজধানীর বৃহৎ বুকশপ পাঠক সমাবেশের এক বিক্রয়কর্মী জানান, আগে যে পরিমাণ বই বিক্রি হতো, সেটা এখন আর হচ্ছে না। বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ঠিক একই কথা জানান বাতিঘর ও বেঙ্গল বুকশপের বিক্রয়কর্মীরা। বাতিঘরে বই কিনতে আসা মিজান বলেন, ‘আগে প্রতি সপ্তাহেই আমি নতুন নতুন বই কিনতাম। কিন্তু এখন কিনতে পারছি না। সাম্প্রতিক প্রকাশিত বইগুলোর দাম এত বেশি রাখা হয়েছে যে, আগে আমি যে টাকায় তিন চারটা বই কিনতাম সেই টাকায় এখন দুই একটা বই কিনতে পাচ্ছি। অনেক সময় তাও হচ্ছে না।’
কবি কামাল চৌধুরীর ৬৬তম জন্মদিন ২৮ জানুয়ারি। জন্মদিনে বাংলা ভাষার বিশিষ্ট এই কবিকে ‘ধ্রুপদি’র শুভেচ্ছা।
যুদ্ধ
এই একটি গল্প সীমান্ত পেরিয়ে যাচ্ছে
তোমারও সীমানা জানা নেই
অস্ত্রের পরেও আমি গম রুটি নিয়ে যুদ্ধ করতে শিখে গেছি
কারণ যা ঘটবে, যা ঘটতে দেখেছি,
যা ইতিহাসে লেখা আছে সেখানে
তুমিও উদ্বাস্তু শিবিরের ছেলে
হয়তো পরের বছর তুমি আটলান্টিক পাড়ি দেবে
সমুদ্রে লংমার্চ শেষে যারা মরে যাবে তারাও সার্বভৌম নয়
যেখানে তটরেখা অস্পষ্ট, পতাকার রং মুছে যেতে যেতে
সেখানে লোনাপানির চিৎকার আছড়ে পড়ে
তিমিসমান ঢেউ
সেখানে বোমার শব্দে তড়িঘড়ি ফেলে আসা
সুটকেসের মতো তোমাকেও খুঁজে পাবেনা কেউ
কারণ তুমি পরিত্যক্ত বাড়ি, তুমি চুরমার তৈজসপত্র,
তুমি রক্তস্রোত, রাস্তায় পড়ে থাকা ছিন্নভিন্ন শরীর-
তোমাকে তাড়িয়ে নিচ্ছে সীমান্তহীন ট্যাংক ও দানব
শস্যখেতের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তোমার মনে
পড়ছে ভাতের থালা, রুটি মাংস, দ্রাক্ষানিবাস
হয়তো-বা পাশের বাড়ির মেয়েটিকেও
যে তোমাকে সীমা অতিক্রম করতে দেয়নি কখনো...
অনুশীলন
তোমাকে লিখেছি আমি বারবার, পুনরুক্তি নেই
কলমের পাশে তবু প্রতিশব্দ অনুশীলনের
সাদাখাতা খুললেই রোদ ভেঙে নার্সিসাস আসে
তোমাকে খুঁজছি একা, প্রতিজন্মে, অচেনা মায়ায়।
শরীরে বারুদগন্ধ, ধ্বংসকাল, ভেঙে পড়ছে মেরু
হয়তো পরের দৃশ্যে পেয়ে যাবো গলিত তুষার
আমার কবিতা অস্ত্র, ধেয়ে আসছে ট্যাংকের বহর
নিরাপত্তা আমি দেবো, এ কবিতা ভূমি দখলের।
ভাষা ফের নম্র করি, যুদ্ধ নয়, অপেক্ষার ভাষা
আলো এসে ঠিকরে পড়ে, ধূলি লেখে অপূর্ণ সময়
সমস্ত পৃথিবী যদি পা-ুলিপি, আমিও মুকুটহীন,
একটি পঙ্ক্তি শুধু বেঁচে থাক, এই স্বপ্নে লিখি।
আশ্চর্য সমুদ্র তীরে তবু হাওয়াবালিকার ধুলো
যে ভিখিরি গান গায়, তার পাত্রে ঝাউ বিনিময়;
আমাকে উড়িয়ে নিলে, মনে হয় চাঁন্দের গাড়িতে
অনন্ত ভ্রমণগুচ্ছে এইপথ হারাতে এসেছি।
প্রেমনীতি
এই প্রেম রাজনীতি জানে
এই প্রেম জীবনে মরণে
লিফলেট বিলি করে যাবে
রাতজাগা চাঁদের কিরণে।
শান্তি
পাখিরা উড়ুক, জানালাটা রাখো খোলা
নদীজলে রাখো নৌকার পাল তোলা
বসন্ত হাসুক পথে পথে বারবার
আজ পৃথিবীর শান্তিই দরকার।
আঁধারে ফুটুক আলোর সূর্যমুখী
আমরা মানুষ শান্তির অভিমুখী।
বহুপ্রতিভাবান তিনি। একাধারে চলচ্চিত্র নির্মাতা, কবি, গীতিকবি ও প্রখ্যাত স্থপতি। ২০১৯ সালে তিনি বইমেলার স্থাপত্য নকশা করে বদলে দিয়েছিলেন বইমেলার চেহারাই। অমর একুশে বইমেলা শুরুর আগে হঠাৎই শোনা গেল এবার নকশা করছেন না এনামুল করিম নির্ঝর। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশিত হলো তার সঙ্গে ধ্রুপদির আলাপচারিতা।
শিমুল সালাহ্উদ্দিন : নির্ঝর ভাই কেমন আছেন?
এনামুল করিম নির্ঝর : আমার মতোন ভালো আছি!
এবার বইমেলার মাঠের নকশা কেন করলেন না?
আমাকে করতে বলা হয়নি বলে। আসলে করিনি বললে ভুল হবে। গত ২০১৯ থেকে পরপর চার বছর অমর একুশে বইমেলার পরিচালনা কমিটির সদস্য ছিলাম। সেই সময়টায় বাংলা একাডেমি কর্র্তৃপক্ষ ঠিক সময়মতো বেশ আগেই নোটিস দিয়ে মিটিংয়ে ডাকত, পরামর্শ নিত। যে কারণে মূল আয়োজনের শুরু থেকেই পুরোপুরি সম্পৃক্ত থাকতাম। এবার তারা সময়মতো কিছুই জানায়নি। গত চার বছরে আমার সম্পৃক্ততার জন্য সবাই অনুমান করেছে আমি আগের মতোই যুক্ত হয়ে এবারের বইমেলার পরিকল্পনা এবং নকশা করছি। সে কারণে যখন আমাকে বিভিন্ন কারণে যোগাযোগ করতে শুরু করে তখন আমি না পেরে সামাজিক মাধ্যমে একটা পোস্ট দিয়ে লিখে দিই যে, যেহেতু এবার বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আমাকে প্রয়োজন মনে করেনি, সে কারণে আসলে আমি এর সঙ্গে যুক্ত নই। তার বেশ কয়েকদিন পর বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ আমাকে সাজসজ্জা উপ-কমিটির একজন সদস্য হিসেবে দুপুরবেলায় চিঠি পাঠিয়ে বিকেলেই মিটিংয়ে যোগ দিতে বলে। আমি একজন খুব সামান্য পেশাজীবী হলেও তো মোটামুটি ব্যস্ততার মধ্যে থাকি। তারা সৌজন্য হিসেবে আমি এই কমিটিতে আদৌ থাকতে চাই কি না বা আমি সময় দিতে পারব কি না সময় দিতে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করেনি। পরে আমি অপারগতা প্রকাশ করে তাদের চিঠি দিয়ে আমার নাম প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠাই। এই চিঠির উত্তর আমি এখনো পাইনি। আসলে পুরো ব্যপারটা নিয়ে আমি একটু অস্বস্তি এবং বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছি।
বাংলা একাডেমির সঙ্গে ৪ বছর স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে কাজ করে কী পেলেন?
আমি যেহেতু জাতীয় স্বার্থে কাজটা করেছি, সে কারণে এখানে কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। যেটুকু চেষ্টা করেছি তার প্রভাব যদি ভবিষ্যতে তারা ব্যবহার করতে পারে। আমার উদ্যোগটা তো একটা প্রক্রিয়া ছিল, যা দুই-তিন-চার বছরে করে শেষ করার মতো বিষয় না। এটা একটা চর্চায় পরিণত করতে হলে একটা নির্দিষ্ট আগ্রহী দলকে তৈরি করা জরুরি। আমি স্বেচ্ছাসেবা দিচ্ছিলাম এমন একটা প্রক্রিয়া তৈরি করতে, যেন সেই প্রক্রিয়ায় ভবিষ্যতের সৃজনশীল পেশাজীবীরা পেশাগতভাবে নিয়মিত কাজটা করতে পারে।
তাদের অবজ্ঞার কারণে অকৃতজ্ঞ মনে হয়েছে ঠিক, তবে সেটা আমি এভাবে বলতে চাই না। মনে হবে আমাকে ডাকেনি তাই বলছি। অনেক ভালো কিছুও হতে পারে এবার।
বাংলা একাডেমির তখনকার মহাপরিচালক প্রকৌশলী কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী আপনাকে মেলার নকশা করার কাজে যুক্ত করেছিলেন। সিরাজী ভাইয়ের প্রস্থানেই কি চার বছর স্বেচ্ছাসেবা দেওয়া একজন স্থপতি কবি চলচ্চিত্র নির্মাতা লেখক অপমানিত হলেন?
সিরাজী ভাই জয়েন করার আগ থেকেই আমি কিন্তু পরিচালনা পরিষদের সদস্য ছিলাম। তারপরে উনি যখন এলেন তখন আমি আরও শক্তি পেলাম এবং প্রকৌশলী হিসেবে উনি আমাকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছেন, সহায়তা করেছেন এবং সব সময় আমার সঙ্গে ছিলেন।
স্বেচ্ছাসেবা দিলে আসলে কোনো আকাক্সক্ষা থাকে না। আর আমি মনে করি আমার সম্মানটা এতটা ঠুনকো নয় যে আমাকে একবার বাংলা একাডেমি ডাকল না এতে অপমানিত বোধ করলাম। সেটা মনে করি না। বরং আমার মনে হয় যে এ ধরনের আয়োজনগুলোতে উৎসাহী যারা এগিয়ে আসে তাদের যদি সুযোগ দিই তাহলেই আসলে বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হবে।
সামনের বছর মেলা বিন্যাসের কাজে কি আমরা আপনাকে দেখব?
এটা আমি জানি না আসলে। তবে যদি রাষ্ট্র আমাকে সুযোগ দেয় তাহলে এই পুরো ব্যাপারটাকে আমাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক উদ্যোগ হিসেবে একটা অনন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আমার একটা চিন্তা আছে গত চার বছরের অভিজ্ঞতা থেকে। যাতে করে ভবিষ্যতে যারা স্থপতি, শিল্পী, গ্রাফিক ডিজাইনার এবং যারা যারা আছেন এমনকি যারা এই ব্যবসাটা করেন তাদেরও সম্পৃক্ত করে আমরা একটা প্রক্রিয়া হিসেবে কিছু করতে পারি।
এবার মেলায় আপনার কী কী বই প্রকাশিত হচ্ছে?
আমি তো নিয়মিত লেখক নই। তবে ঢাকা শহরে আসার আগে আমার প্রথম যে কবিতার বইটা প্রকাশিত হয় ১৯৮২ সালে, সেটা চল্লিশ বছর পর পুনঃপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। এই বইটা প্রকাশ হওয়ার পরে কবি হিসেবে আমার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু এই পুনঃপ্রকাশের মাধ্যমে কী হয়, আমি জানি না। ‘চৌদ্দ গোষ্ঠীর উদ্ধার পর্ব’ পুনঃপ্রকাশ করছে বৈতরণী।
মেলায় হাজারো মানুষ অংশ নেবেন, তাদের প্রতি কী বলতে চান?
তাদের প্রতি আসলে একটাই বলার আছে যে বইমেলাটি আমাদের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়। গত চার বছর ধরে চেষ্টা করছি একে স্বাধীনতা স্তম্ভের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার এবং আমাদের পুরো প্রাঙ্গণটার মধ্যে সবাইকে সম্পৃক্ত করে আন্তরিক করে তোলার। সেই জন্য মনে হয় যে সবাই যেন এদিকে আন্তরিক থাকে এবং যেন উদ্দেশ্যগুলো সফল হয়।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ নির্ঝর ভাই।
ধ্রুপদি, দেশ রূপান্তর এবং আপনাকেও।
লাইভ রিয়েলিটি শো চলছে। শরীর থেকে আত্মা বেরিয়ে যাবে, কেবল চড়া দামে টিকিট কাটনেওয়ালারাই স্বচ্ছ কাচের দেয়ালের এপাশ থেকে দেখতে পাবেন আত্মাকে, দেখবেন ওটা কীভাবে শরীরের দখল ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। সাধারণভাবে মানুষের চোখ এসব দেখতে সক্ষম নয়। এর জন্য বিশেষ আলোকরশ্মির ব্যবস্থা করা হয়েছে। দীর্ঘ কাল রোগে ভুগে মৃত্যুযন্ত্রণায় কাহিল হতে হতে নিস্তেজ হয়ে পড়া মুমূর্ষু লোকটার ওপর সেই বিশেষ আলোকরশ্মি ফেলে অপেক্ষা করা হচ্ছে, পানিতে ছিপ ফেলে যেভাবে অপেক্ষা করতে হয় মাছের। আয়োজকদের বক্তব্য হচ্ছে, বিশেষ আলোকরশ্মির মাঝে নাকি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠবে আত্মার শরীর ত্যাগের ঘটনা।
স্বচ্ছ কাচের ওপাশে স্তব্ধ আলোকরশ্মি। প্রথমে ফিসফাস চললেও একটা পর্যায়ে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। আত্মা হালকা মেঘের মতো বেরিয়ে ভাসতে থাকবে, এমনটিই ভাবছিল সবাই। উত্তেজনার পারদ চড়তে চড়তে শরীরটা কখন আত্মাছাড়া হবে ভাবতে ভাবতে অপেক্ষার অস্থিরতায় যখন সবাই ভাবছিল মানুষটা মরতে এত দেরি করছে কেন, সেইমাত্র শরীরের ভেতর থেকে লাফিয়ে উঠল আত্মাটা। সেই শো’তে উপস্থিত থাকতে পারা ভাগ্যবানদের একজন হিসেবে বলছি, দয়া করে এরকম দৃশ্য কখনো দেখতে চাইবেন না। শরীরের খাঁচার ভেতর অচিন পাখি ভেবে আত্মাকে নিয়ে যত মায়ামমতা দেখান না কেন, ওটার জন্য মায়া দেখানোর আসলে কিছু নেই। দেখতে ওটা স্বচ্ছ আলোয় জমাটবাঁধা হালকা মেঘ বটে, তবে তা কী রকম জান্তব তা আসলে বলে বোঝাতে পারছি না! পিঁড়িপেতে বসার মতো করে শূন্যে বসে থেকে তাকিয়ে দেখে শরীরটাকে, যার দখল সে এইমাত্র ত্যাগ করেছে। দেখে মনেই হয় না, দুরারোগ্য ব্যাধির সাথে লড়াই করে শরীরের মতো বিপর্যস্ত এ-ও। দেখে মনে হয়, অকালে দখল হারাতে হলো বলে রোষে ফুঁসছে। সেই রোষ কখনোই মানুষের জগতের জন্য স্বস্তিকর নয়। শিরশিরে অনুভূতি শরীরে থাকা পিঠের মাঝখানে বরফ নামিয়ে দেয়, দিয়েছিল সকলেরই। আত্মাটা বুঝি এখনো মুক্ত হতে পারেনি বলে আমাদের শরীরের খাঁচায় আটকে পড়া আত্মাসমূহকে ধিক্কার দিচ্ছে। আমরা যার যার আত্মাকে যার যার শরীরের ভেতর বসবাসের কাকুতি জানাই। যদিও টের পাই, কাজ হচ্ছে না। আমাদের আত্মারা সমব্যথী হয়ে ওঠে সেই আত্মার। সম্মিলিত আত্মারা যুক্তির কাসিদা শোনায় এরকম বেশি একটা বয়স তো ছিল না মৃত শরীরের। জীবনের রূপরসগন্ধ চেখে দেখতে আরও অনেক দিন পারত, যদি শরীর সে সুযোগ তাকে দিত।
এতক্ষণে বুঝতে পারি, আত্মাটা কেন মুক্ত হয়েও রোষে গজরাচ্ছিল। জীবনের রূপরসগন্ধ আরও অনেক দিন চেখে দেখতে পারেনি সে শরীরের ব্যর্থতায়। শরীরের প্রতি আত্মার রোষ আমাদের আত্মাদের আহ্বান করে, ব্যর্থ শরীরের জন্য মায়া ছাড়ো। চোখের সামনে থেকে সরিয়ে নাও শারীরিক ব্যর্থতা ঢেকে দাও বা পুড়িয়ে দাও, একটা কিছু করো।
একটা কিছু তো করতেই হবে। আমরা তাই আত্মাহীন ব্যর্থ শরীরটাকে সরিয়ে নিতে তৎপর হয়ে উঠি। দ্রুত, খুব দ্রুত জঞ্জালের মতো ওটাকে আড়ালে নিতে হবে, আড়াল করতে হবে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমাদের দুই হাত ঐ শরীরটার ঠান্ডা অসহায়ত্ব স্পর্শ করতেই আমাদের এখনো জীবিত থাকা শরীরের মেরুদ-ে আগুন জ্বলে উঠেছিল। কণ্ঠস্বর ছিঁড়ে বেরুতে চাইছিল প্রতিবাদ। এ কথা কি সত্য নয় যে, আত্মার যথেচ্ছাচার মানতে গিয়ে শরীরের এই হাল? শরীর আর ব্যবহারের যোগ্য নেই বলেই তো ছিঁড়েকেটে বেরিয়ে এসেছে আত্মা। এইসব শারীরিক সত্য হাহাকার জন্মায় শরীরে। প্রয়োজন ফুরালেই ছেড়ে যায় স্বার্থপরটা! অথচ জীবনভর আত্মার খোরাকি মেটাতে শরীরকে কতভাবেই না ব্যবহার করা হয়!
ওদিকে জমাটবাঁধা হালকা মেঘ হয়ে আত্মাটা কোথাও মিলিয়ে গিয়েছিল। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি। নতুন আরেকটি শরীরের খোঁজে হয়তো মেঘটা নেমে এসেছিল বৃষ্টির সাথে। হয়তো সে ধান্দাবাজ চিলের মতো বেছে নিয়েছিল ভ্রুণ এক, দখলের লোভে জড়িয়ে ধরেছিল ওকে, ফিসফিস করে বলছিল অবিরাম জীবন দেখতে চাই! জীবন দেখতে চাই! জীবন... সেই ফিসফিসানিকেই হৃৎপি-ের ঠিকঠাক স্পন্দন ঠাউরে ক্যামন বোকা হই আমরা, বলুন তো!
জুলাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ হারে বাংলাদেশ দল। যে সিরিজে চট্টগ্রামে ঘরের মাঠে টাইগাররা ২-১ ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিল। আর এই সিরিজে পরাজয়ের পেছনে বড় কারণ অধিনায়ক তামিম ইকবাল! এমনটাই মনে করেন বাংলাদেশ দলের বর্তমান অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আফগানদের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ শেষে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তামিম। একদিন পরে অবশ্য অবসর ভাঙলেও সেই সিরিজ আর খেলেননি তিনি। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তিতে সাকিব সেই সিরিজ হারের দায় দিলেন তামিমের ওপরই।
'আফগানিস্তানের সঙ্গে সিরিজ হারটা আমি পুরোপুরি একজনকে দায় দেব, অধিনায়ক। এক ম্যাচ পরে আমাদের হাতে আরও দুই ম্যাচ ছিল। আমরা তৃতীয় ম্যাচে ঠিকই কামব্যাক করেছি কিন্তু একটা ম্যাচ সময় লেগেছে আমাদের। সুতরাং এটা আর কারো দায় নয়, পুরো সিরিজটায় দায় একজনের ওপর। বিশ্বের কোথাও অন্তত দেখিনি যে এক ম্যাচ পরেই এরকম অধিনায়ক এসে ইমোশনালি বলে ফেলেন যে আমি ভাই খেলব না আর ক্রিকেট।’
সাকিব বলেন, 'আমার ধারণা যদি কোনো অধিনায়কের দায়িত্ববোধ থাকত, সে এটা করতে পারত না। আমার কাছে মনে হয়, এটা দলকে অনেক বাজে একটা পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে এবং আমার মনে হয় ওইটাই এখনো রিকভার করতে সময় লাগছে, যেটা আমি অনুভব করি।’
৯ দফার ভিত্তিতে ১৫টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন নিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভোটাধিকার, সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস, সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্বে 'ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য' আত্মপ্রকাশ করেছে।
আজ শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের মুখপাত্র হিসেবে এ ঘোষণা করেন। ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়কারী করা হয়েছে ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খানকে।
জোটভুক্ত হতে যাচ্ছে যেসব ছাত্রসংগঠন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জেএসডি), গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি), নাগরিক ছাত্র ঐক্য, জাগপা ছাত্রলীগ, ছাত্র ফোরাম (গণফোরাম মন্টু), ভাসানী ছাত্র পরিষদ, জাতীয় ছাত্রসমাজ (কাজী জাফর), জাতীয় ছাত্রসমাজ (পার্থ), জাগপা ছাত্রলীগ (লুৎফর) ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্র সংহতি এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলন।
ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের দাবিসমূহ
১. বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারে আন্দোলনরত দলগুলোর ৩১ দফা বাস্তবায়ন করা।
২. শিক্ষা ব্যবস্থার লক্ষ্য হবে মানবিকতার বিকাশ, নৈতিকতা বোধের উন্নতি, মানুষে মানুষে বৈষম্যবিরোধী চিন্তার অনুশীলন এবং এই লক্ষ্য পূরণে শিক্ষাকাঠামো, পাঠদানপদ্ধতি, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সমস্ত ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপির অন্তত ৫ ভাগ বরাদ্দ করে সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে করে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান দক্ষতা ও সৃজনশীলতা বিকাশের উপযোগী হয়ে জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়। একটি উৎপাদনমুখী অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এর প্রয়োজন মেটাতে বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ। বুনিয়াদি শিক্ষাকে সার্বজনীন, অবৈতনিক ও মানসম্মত করার উদ্যোগ গ্রহণ।
৩. সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং সাইবার সিকিউরিটি আইনসহ নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করতে হবে।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্যাতনবিরোধী আইন করে শিক্ষাঙ্গনগুলোকে সন্ত্রাস ও দখলদারিত্ব মুক্ত করা, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন, প্রথম বর্ষ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রদের সিট পাওয়ার বৈধ অধিকারের স্বীকৃতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ। সর্বোপরি দলমত নির্বিশেষে সকল সংগঠনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
৫. শিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর পুনর্নির্ধারণ, মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধার পুনর্বিন্যাসসহ বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ। শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি করে পর্যাপ্ত উপকরণ ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও মনোযোগের কথা মাথায় রেখে মিড ডে মিল চালু করতে হবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাট (মূল্য সংযোজনী কর) আরোপ করা চলবে না। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি কমাতে হবে এবং অভিন্ন নীতিমালা ও বেতন কাঠামো নির্ধারণ করতে হবে।
৬. জ্ঞানকে গভীর করার জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ফলে সারা বিশ্বের সমস্ত ধ্রুপদী সাহিত্য ও পাঠ্যপুস্তককে মাতৃভাষায় রূপান্তরের জন্য একটি জাতীয় অনুবাদ সংস্থা স্থাপন করে দ্রুততার সাথে এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
৭. বর্তমান সরকার যেভাবে ইতিহাসের ব্যক্তিকেন্দ্রিক বয়ান তৈরি করেছে এবং জনগণের ভূমিকাকে নির্বাসিত করেছে তার বদলে বাংলাদেশের জনগণের নির্ধারক ভূমিকাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ইতিহাসে সকল ব্যক্তির যার যা অবদান আছে তার স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের সামনে প্রকৃত ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার জরুরি কাজটি করার জন্য পাঠ্যপুস্তক সংস্কার করতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সমস্ত ব্যবস্থা এবং শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সহজ শর্তে শিক্ষা ঋণ দিতে হবে। সকল শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যবিমার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার জন্য সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে।
৯. সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীর সুযোগের সমতা এবং নাগরিক অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে গিয়ে সত্যায়ন নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েননি দেশে এমন চাকরিজীবী কিংবা চাকরি প্রত্যাশী খুঁজে পাওয়া যাবে না। চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে ছবি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, অভিজ্ঞতা সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্রে প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মাধ্যমে সত্যায়ন করার নিয়ম চালু রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে।
বিড়ম্বনা এড়াতে অনেক চাকরি প্রত্যাশীরা নীলক্ষেতে গিয়ে কোনো এক গেজেটেড কর্মকর্তার নামে সিল-প্যাড তৈরি করেন। এসব সিল-প্যাড বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, মেসে ছড়িয়ে পড়ে। এসব সিল-প্যাডের ছাপ দিয়ে, স্বাক্ষর নকল করে নিজেরাই নিজেদের কাগজ সত্যায়িত করেন। ।
এ পরিস্থিতিতে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, খুব দ্রুত চাকরিতে আবেদনের ক্ষেত্রে 'সত্যায়ন' প্রক্রিয়া বাতিল হচ্ছে। গত বুধবার দেশ রূপান্তরের সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
ফরহাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চাকরি প্রত্যাশীদের বিড়ম্বনা এড়াতে খুব দ্রুতই সত্যায়ন প্রক্রিয়া বাতিল হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও অনেক খোঁজ-খবর নিয়েছি। সত্যি বলতে সত্যায়নের কোনো দরকার নেই। এমনো হয়, যে শিক্ষার্থীরা নিজেই নিজের কাগজ সত্যায়িত করছেন, আবার যার নামে সিল তৈরি হয়েছে তিনি নিজেই হয়তো তা জানেন না।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, গ্রামের একটা ছেলে, যার আত্মীয়-স্বজন কেউ প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরি করেন না। আবার সরকারি চাকরী করেন এমন কেউ তার পরিচিত নন। এ ক্ষেত্রে ওই চাকরি প্রত্যাশী বিড়ম্বনায় পড়েন। ফলে বাধ্য হয়ে অপরিচিত কারও কাছে তিনি কাগজপত্র সত্যায়িত করতে নিয়ে যান। যার কাছে কাগজ নিয়ে যান তিনিও হয়তো আগ্রহ দেখান না, অনেক ক্ষেত্রে বিরক্ত হন।
ঠিক কবে নাগাদ এ সিদ্ধান্তের কার্যকর হবে এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকারের চলতি মেয়াদেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।
কুমিল্লার লাকসামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ৭ জনকে গুরুতর আহত করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পৌর সদরের ৭নং ওয়ার্ডের গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন— ফারুক, রাশেদ, শাহজাহান ও মনির হোসেন। প্রাথমিকভাবে এদের নাম জানা যায়। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত ব্যক্তির নাম মনির হোসেন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে অনুষ্ঠানের আয়োজক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের অভিযোগ করে বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছেন বলে তিনি দাবি করছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় গাজীমূড়া আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মিলাদ ও বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন উপলক্ষে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান। সকালে শান্তিপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়। তবে চারটার দিকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর অনুসারী ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবিদার জাহাঙ্গীর আলম, লাকসাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শিহাব খান এবং পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফ খানের নেতৃত্বে শতাধিক লোক মাদ্রাসার ফটকে তালা দেন। এ সময় আবদুল মান্নান তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আবদুল মান্নানের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সেখানে হামলা হয়। এতে আহত হয়েছেন সাতজন। হামলার সময় রামদা দিয়ে মনির হোসেন নামের এক হকারের হাত ও পা কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। পরে দ্রুত তাঁকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) এর অনুষ্ঠান করি। বিকেলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে দোয়ার আয়োজন করি। এ সময় জাহাঙ্গীর, শিহাব ও স্বাধীনের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমার এলাকার লোকজনের ওপর হামলা করেন। মনির নামের এক হকার অনুষ্ঠান দেখতে আসেন। তাঁকে কোপানো হয়েছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মন্ত্রীর লোকজন এই হামলা করেছেন। আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইব। সামাজিক এই কর্মসূচিতে হামলা চালানো হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক ঘটনা।
এ ঘটনার অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, শিহাব ও সাইফের মুঠো ফোনে বার বার কল দিও বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও লাকসাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুস ভূঁইয়া বলেন, আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের জাহাঙ্গীরকে প্রথমে মান্নান মারধর করে। এরপর সেখানে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি।
লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নানের কর্মসূচিতে একজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। তবে এ নিয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করলে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির আওতায় আসতে পারেন যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এমন কথাই জানিয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
একইসঙ্গে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসসহ অন্য সকল কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ছাড়াও নাগরিকদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রসঙ্গটিও উঠে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমি এখন নির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপ ঘোষণা করতে যাচ্ছি না। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের ঘোষণা অনুসারে বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত থাকার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সরকার এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর ভীসা নীতি কার্যকর করার পদক্ষেপ আমরা শুরু করেছি।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ মে ভিসা নীতি ঘোষণার সময় আমরা এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি। আমরা ভিসা নীতির কথা বলেছি তবে কারও নাম উল্লেখ করিনি। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দুর্বল ও বাধাগ্রস্থ করার কাজে দায়ী কিংবা জড়িত যেকোনও বাংলাদেশির ক্ষেত্রে এই ভিসা নীতি কার্যকর হবে। অন্য যেকোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি আমরা মনে করি তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে আমরা এই নীতি প্রয়োগ করব।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নিতে চায় তার পরিবার। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছেন জার্মান বিএনপি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বিএনপি নেতারা।
তারা বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জার্মানিতে নেওয়ার কথা ছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সে সময় শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়। এবার চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে আনার কথা শুনছি। জার্মানিতে খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা দরকার তার আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা জার্মানিতে রয়েছে। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি যদি চেয়ারপারসনকে জার্মানিতে আনা হয় তাহলে আমরা তার জন্য কিছু করার সুযোগ পাব। জার্মানিতে তার ভালো চিকিৎসা হবে।’
এর অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল জার্মান দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (সিডিএ) জান রল্ফ জানোস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন। জবাবে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জানোস্কি বলেছেন, ‘খালেদা জিয়া যে ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে সম্ভব জার্মানি তার অন্যতম। বাংলাদেশ সরকার অনুমতি দিলে জার্মানিতে তার সুচিকিৎসা হতে পারে।’
গত ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খালেদা জিয়া ঢাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লিভার সিরোসিসের কারণে খালেদা জিয়ার হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লিভার সমস্যার কারণে ম্যাডামের শ্বাস কষ্ট হয়। ইতোমধ্যে তাকে দুইবার করোনারী কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছিল। লিভার প্রতিস্থাপন করতে পারলে শ্বাসকষ্টটা হতো না।’
এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতির লক্ষণ না থাকায় তার পরিবার ও বিএনপির পক্ষ থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে নেওয়া হতে পারে এমন খবরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও খোঁজখবর নিচ্ছেন জার্মান বিএনপি নেতারা।
জার্মান বিএনপির সভাপতি আকুল মিয়া বৃহস্পতিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জার্মানিতে ম্যাডামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য আনা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। আমরা খুবই খুশি। কারণ জার্মানিতে আসলে আমরা তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করতে পারব। চেয়ারপারসনের যে চিকিৎসা দরকার তা সকল ব্যবস্থা জার্মানিতে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যাডামের মুক্তি, তার উন্নত চিকিৎসা ও গণতন্ত্র ফেরাতে দেশে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে জার্মানিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ৯ অক্টোবর আমাদের কর্মসূচি রয়েছে। জার্মান বিএনপির উদ্যোগে রোডমার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করব জার্মান পার্লামেন্টের সামনে। ’
আকুল মিয়া বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যখন বিদেশে নেওয়ার আলোচনা চলছিল তখনও জার্মানিতে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তারেক রহমানের সেবা করতে না পারলেও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেবা করতে পারব বলে আশা করছি। তার চিকিৎসা জার্মানিতে করতে পারলে আমরা ধন্য হবো।’
গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।’
গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত অভিযোগে দেশের কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টা বক্তব্য দিতেও শুরু করেছে। এতে বিরোধীপক্ষেরই ঝুঁকি দেখছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই সবপক্ষই চাপে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা হলেও মূলত নির্বাচনী রাজনীতিতে এক ধরনের পরিবর্তন আসবে। একপক্ষ নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিলেও সেই পথ থেকে তাদেরও সরতে হবে। আবার সরকারপক্ষ যেনতেন নির্বাচন করে ক্ষমতায় বসে যাবে সেই সুযোগও থাকছে না। যে যাই বলুক নির্বাচনী রাজনীতিতে সামনের দিনগুলোতে এ পরিবর্তন আসতেই হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবপক্ষের জন্য। তাদের অবস্থানে বিএনপি উৎফুল্ল হয়ে যাবে, আর আওয়ামী লীগ ধরাশায়ী হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। বরং এতে এক ধরনের সমাধানের পথ খুলে যেতে পারে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ না দিলেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে হবে এমন আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু গত বছর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়ে আসছে। তাদের একাধিক প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনে সমর্থনের কথা জানিয়ে গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। যার প্রয়োগের কথা জানানো হলো গত শুক্রবার।
এর আগে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসানীতি প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার অনড় অবস্থানের বিষয়টি আবার জানাল। দেশটির এ অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দেখছে দুভাবে। একটি হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখা। দ্বিতীয়টি হলো, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন করা বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। এর বাইরে অন্য কোনো বিরূপ প্রভাব দেখছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকার এত দিন যেটা চেয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই আশা করছে।
তবে বিএনপি ভিসানীতির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে এবং সেটা তাদের নেতাকর্মীদের এক দফা আন্দোলনে আরও উজ্জীবিত করবে, এমন দাবি করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কারণে আগামী নির্বাচন যেনতেনভাবে হয়ে যাবে সেটি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রস্তুতি সবাইকে নিতে হবে। এর বাইরে কোনো রাজনৈতিক দল, গোষ্ঠী, বাহিনী ও সরকারি কর্মকর্তা যেই হোক শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রভাবিত করা বা একপেশে করার চিন্তা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে চাইলে, পড়তে হবে ভিসানীতির আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনড় অবস্থান এখন পর্যন্ত সেটাই ইঙ্গিত করে।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে এক দফা দিয়ে আন্দোলনে আছে বিএনপি। অন্যদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য এক দফা ঘোষণা করেছে। তারাও শান্তি-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকারও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। সেটা নিশ্চিত করতে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ এটাও বলে আসছে, তাদের সরকারের চাওয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া একই।
নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনড় অবস্থানকে আওয়ামী লীগ দুভাবে দেখলেও দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে নানা রকম কানাঘুষা রয়েছে। ভেতরে-ভেতরে ‘ভেঙে পড়লেও’ ওপরে শক্ত মনোভাব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তারা বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন কিছু নয়। দুপক্ষের অবস্থান একই বলেও দাবি করেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যে অবস্থান তাতে বিএনপিরই ক্ষতি, কারণ তারা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন হতে দেবে না।’ তিনি বলেন, সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা ও আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় সরকার। সেখানে সব দল নির্বাচনে আসুক সেই আহ্বানও জানানো হয়েছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত এবং সহযোগিতা করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই ব্যক্তিদের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা রয়েছেন। শান্তিপূর্ণ উপায়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা জোরালোভাবে দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তো বিএনপির দাবি সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান সেখানে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে এসব বলা হয়নি। ফলে ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করায় আওয়ামী লীগ বা সরকার কেন বেকায়দায় পড়বে? আমরা মনে করি, বিএনপিই তো বেকায়দায় রয়েছে। কারণ, তাদের দাবি অসাংবিধানিক। আর অসাংবিধানিক উপায় অবলম্বন করছে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এই অনড় অবস্থান বিএনপির বিরুদ্ধে গেছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খানের দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত বিএনপি। তারা তো বিএনপির একটা দাবির কথাও বলে নাই।’ সরকার বা আওয়ামী লীগ ভীত ও শঙ্কিত নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের উচিত বিএনপির প্রতিক্রিয়া জানা।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘আমরা যেমন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই, আমেরিকারও একই রকম চাওয়া।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র যে এমন কিছু করবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। এটা সিম্পল ব্যাপার আমাদের জন্য।’
ভিসা বিধিনিষেধের আওতায় বিরোধী দল আছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে বক্তব্য এসেছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিবৃতিতে কোন বিরোধী দলের কথা বলা হয়েছে তা স্পষ্ট করা হয়নি। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। তবে আজকে দেশে গণতন্ত্রের যে সংকট তার জন্য সরকার এককভাবে দায়ী। তা ছাড়া এর আগে বাইডেন প্রশাসন তাদের দেশে যে গণতন্ত্রের সম্মেলন করেছে তাতে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি।’
ভিসানীতি প্রয়োগের জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগ বিগত দুটি বিতর্কিত সংসদ নির্বাচন করার পর আবারও আগামী নির্বাচন একতরফা করতে যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। এর দায় সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগকে নিতে হবে। আজকে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আগের ঘোষণার ধারাবাহিকতা। প্রথমদিকে নিষেধাজ্ঞা ও ভিসানীতি বাংলাদেশের রাজনীতিতে, সাধারণ মানুষের ভেতর যে বড় ধাক্কা মনে হয়েছিল, ঘোষণা আসার পর সেটা মনে হয়নি। তবে কোনো একটা সমীকরণ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এর প্রভাব কত দূর যাবে সেটা এখনো পরিষ্কার নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনে কী বার্তা যাবে সেটা পরিষ্কার নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা তাদের বৈশি^ক চর্চারই অংশ। মূল কথা হলো, এটা সবার জন্যই চাপ।’
বিশ্বকাপের দল ঘোষণা নিয়ে চলছে নানা নাটকীয়তা। রাতটা পোহালেই বাংলাদেশ দল উড়াল দেবে ভারতের গোয়াহাটিতে। তবে এখনও ঘোষণা করা হয়নি দল। বিসিবি জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে চলমান তৃতীয় ওয়ানডের ম্যাচ শেষেই জানানো হবে বিশ্বকাপের দল।
প্রচুর আলোচনা ও জল্পনা–কল্পনার পর আজ বিশ্বকাপে নিজেদের স্কোয়াড ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বিসিবির ফেসবুক পেজে আজ দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। সেখানে দেখা যায় বিসিবির লোগোসংবলিত বক্সে করে গুরুত্বপুর্ণ কিছু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভিডিও–র শেষে প্রশ্ন করা হয়েছে, বলুন তো ভেতরে কি?
বিকেল ৫টা ৪৩ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় সন্ধ্যা পৌণে ৬টায় ঘোষণা করা হবে দল। কিন্তু ৫টা ৪০ মিনিটে আরেকটি পোস্টে জানানো হয় তৃতীয় ওয়ানডের শেষেই দল ঘোষনা করা হবে।
তার নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। একসময় সুইডেন ছিলেন বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন স্ইুডেন আসলাম নামে। তেজগাঁও এলাকার এই শীর্ষ সন্ত্রাসী একসময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড বা অপরাধ জগৎ কাঁপাতেন। ২৭ বছর ধরে আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে। হত্যাসহ ১৭ মামলার একটি ছাড়া বাকিগুলোতে জামিন পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বহু দিনের পুরনো প্রতিপক্ষের হাতে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় জামিনের জন্য আবেদন করছেন না তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালও জামিনের আবেদন করছেন না। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে থাকা হেলালের বিরুদ্ধে আছে অন্তত এক ডজন মামলা। বেশিরভাগ মামলায় জামিন হয়ে গেছে। এই দুজনের মতোই কারা হাজতে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছেন না। এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে কেউ সাক্ষ্যও দিতে আসেন না আদালতে। তারা বছরের পর বছর ধরে কারাগারে থাকলেও সমস্যা হচ্ছে না। অনেকেই অসুস্থ না হয়েও বছরের পর বছর হাসপাতালে আরামে
থাকছেন। বাইরে থাকা তাদের সহযোগীদের সঙ্গেও যোগাযোগ থাকছে। এই সহযোগীরাই তাদের হয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ করছেন।
পুলিশের তালিকায় ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম আছে যাদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। অবশ্য এই তালিকায় সুইডেন আসলাম নেই। তালিকা করা হয় ২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর। এদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। কারাগারে আছেন ৬ জন, মারা গেছেন ৩ জন। একজনের কোনো হদিস নেই।
এই শীর্ষ সন্ত্রাসীদের আটজনকে ১ লাখ টাকা এবং ১৫ জনকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে পিচ্চি হান্নান র্যাবের ক্রসফায়ার, গণপিটুনিতে আলাউদ্দিন ও কামাল পাশা ওরফে পাশা কারাগারে মারা গেছেন। কালা জাহাঙ্গীর বেঁচে আছেন নাকি আত্মগোপনে, কেউ বলতে পারছেন না। পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল ও কিলার আব্বাস কারাগারে আছেন। খোরশেদ আলম ওরফে রাশু কিছুদিন আগে ছাড়া পেলেও কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আবার আটক করেছে। মশিউর রহমান কচি, সুব্রত বাইন, আমিন রসুল সাগর. ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, মোল্লা মাসুদ, শামীম আহমেদ, হারিস আহমেদ, তানভিরুল ইসলাম জয়, জাব্বার মুন্না, জাফর আহমেদ, কামরুল হাসান হান্নান ওরফে ছোট হান্নান দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তাদের ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিস জারি করা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি আন্ডারওয়ার্ল্ডে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও গুলিবিদ্ধ এক পথচারী সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে আছেন। এ ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন জড়িত বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আন্ডারওয়ার্ল্ড উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও। দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছে। এর মধ্যে কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত হতে চাইছে। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর সব কটি ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, যেসব সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তাদের একটি তালিকা করেছে একটি সংস্থা। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও তারা জামিন নেওয়ার চেষ্টা করছে না। তারা কারাগারকেই নিরাপদ মনে করছে।
কারা সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম একটি মামলায় জামিন না নেওয়ায় কারাগারে আছেন। বাকি সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। ২৭ বছরের কারাজীবনে তার দুইবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেশিরভাগ সময় কেটে যাচ্ছে হাসপাতালে থেকেই। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন সব সময়। মোবাইল ফোনে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ করেন সহযোগীদের সঙ্গে। তার স্ত্রী আয়েশা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
সুইডেন আসলামের বিষয়ে তার এক আত্মীয় দেশ রূপান্তরকে বলেন, এলাকায় তার যখন একক আধিপত্য ছিল, তখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল। তারাই এখন তার বিরুদ্ধে। সুইডেন আসলাম বের হয়ে এলে প্রতিপক্ষরাই তাকে মেরে ফেলবে, এমন শঙ্কা আছে। এসব দিক বিবেচনা করেই তিনি বের হতে চাইছেন না। কারাগারেই তিনি ভালো আছেন।
জানা গেছে, সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে মামলাগুলোতে কোনো সাক্ষীও পাওয়া যায় না। ১৯৮৬ সালে তিনি অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকা-সহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২৪ সাক্ষীর মধ্যে পুলিশ চারজনকে আদালতে হাজির করতে পেরেছে। বাকিরা আর আসেননি এবং এই মামলায় তিনি জামিনও নেননি।
দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও আসলাম মোবাইল ফোনে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। স্ত্রী আয়েশা আকতার নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বলা চলে রাজার হালেই আছেন তিনি।
মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২২ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ১১টি মামলার জামিন হয়েছে। একটি মামলার জামিন হতে বাকি আছে। তা ছাড়া কমিশনার নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি। আরেকটি মামলার শুনানি চলছে উচ্চ আদালতে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিলার আব্বাসের এক সহযোগী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করে আসি। দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি কারাগার থেকে বের হতে চাচ্ছেন না। জামিন চাইলে তিনি জামিন পেয়ে যাবেন। কিন্তু ভাই তা করবেন না। কারণ প্রতিপক্ষ সক্রিয় আছে। তার প্রাণ শঙ্কা আছে। আমরা ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় জামিন নিয়ে ভাইকে বের করে আনতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরেক সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালেরও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। শুধু একটা মামলার জামিন বাকি আছে। তিনি যখন কারাগারে, তখন বিএনপি তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করেছিল। অথচ হেলাল বিএনপির রাজনীতি করেন। জেলে বসেই মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানম-ি, মিরপুর এলাকার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছেন। মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড দখল ও চাঁদাবাজি চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে মিরপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদতের ভালো যোগাযোগ। মোবাইল ফোনে নিয়মিত কথা বলেন তারা। তার আরেক সহযোগী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পারছে না রাষ্ট্রপক্ষ। ইচ্ছে করে জামিনও নিচ্ছেন না তাজ। গ্রেপ্তারের আগে দীর্ঘদিন ভারত পালিয়ে ছিলেন। ২০০৮ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার কয়েক মাস পর তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীর কাফরুলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে হত্যা করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তা ছাড়া কলেজছাত্র কামরুল ইসলাম ওরফে মোমিন হত্যার সঙ্গেও জড়িত তাজ। মতিঝিল থানার সাবেক ওসি এ কে এম রফিকুল ইসলামের আশ্রয়-প্রশয়ে থাকতেন তিনি। কয়েক বছর আগে ওসি রফিক মারা যান।’
মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করে আলোচনায় আসে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৫ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। একবার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে ফেলে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা থাকলেও দুটি মামলা বাদে সব কটিতে জামিন পেয়েছেন। বাকি মামলাগুলোতে ইচ্ছা করে জামিন নিচ্ছেন না বলে তার এক স্বজন জানিয়েছেন।
সেভেন স্টার গ্রুপের একসময়ের সদস্য ফ্রিডম সোহেল ধানম-ি ৩২ নম্বরে গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার আসামি। সাজা কমিয়ে কারাগারেই থাকার চেষ্টা করছেন সোহেল। তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা আছে। ৯টি মামলায় জামিন পেয়েছেন। একটি মামলায় সাজা হয়েছে। আরেকটি মামলায় জামিন নিচ্ছেন না।
তার সহযোগী পুরস্কারঘোষিত সন্ত্রাসী রাশু কিছুদিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ তাকে আটক করে। তার এক স্বজন দেশ রূপান্তরকে জানান, মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ মামলায় জামিন হয় রাশুর। তার কোনো ইচ্ছা ছিল না কারাগার থেকে বের হওয়ার। আর এ কারণে ইচ্ছা করেই একটি সংস্থাকে কারাগার থেকে বের হওয়ার তথ্য দিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। কারণ তিনি বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে মেরে ফেলবে এমন আশঙ্কা ছিল। আরেক সন্ত্রাসী লম্বু সেলিম একটি মামলা বাদে সব মামলায় জামিনে আছেন। ভারতের কলকাতা থেকে তাকে পুশব্যাক করা হয়েছিল। প্রায় আট বছর ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালে থাকেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে জেল থেকে বের হচ্ছেন না তিনি।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সন্ত্রাসীদের কর্মকা- রোধ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নানা কৌশলে কাজ করছে। তারা সরগরম হলেও কাজ হবে না। যারা দেশের বাইরে আছে, তাদের চিহ্নিত করে ইন্টারপোলের মাধ্যমে ধরার চেষ্টা চলছে। যারা দেশে আছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে পুলিশ-র্যাব কাজ করছে। তবে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কেউ বিশ্ঙ্খৃলা তৈরি করতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো সন্ত্রাসী জামিন না নিলে এটা আমাদের করার কিছু নেই। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয়, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।’
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চোরাকারবারিসহ ভিন্ন ধরনের অপরাধীরা দুবাই, মালয়েশিয়া, ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদের সহযোগীরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অপরাধমূলক কর্মকা- চালিয়ে আসছেন। তাদের নির্দেশে হত্যাকান্ডের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছেন তারা। মতিঝিলে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু হত্যাকান্ডের পেছনে বিদেশ কানেকশন।
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকান্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডারবাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তানভীর ইসলাম জয়ও সক্রিয় আছেন। কলকাতা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ঘুরে তার অবস্থান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। নির্বাচনে কী উপায়ে নিরাপত্তা দেওয়া হবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। তবে সরকারের হাইকমান্ড থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে তথ্য এসেছে, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা ও সদস্য সরকারবিরোধীদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রাখছে। পুলিশের একটি প্রতিবেদনেও তথ্য এসেছে সারা দেশে অন্তত আড়াইশো কর্মকর্তা আছেন তারা সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তাদের পুরো কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এদিকে, চলতি মাস ও আগামী মাসের মধ্যে পুলিশে আরও বড় ধরনের রদবদল করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তালিকাও করা হয়েছে। পাশাপাশি উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদিও কেনার চেষ্টা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সামনের দিনগুলোতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। এ নিয়ে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা আগাম সতর্কবার্তাও দিয়েছে। যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করতে কিছুদিন আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সবকটি ইউনিট প্রধান ও জেলার এসপিদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে। বার্তায় বলা হয়েছে রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশের মধ্যে কোনো সদস্য সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার তথ্য পেলে জানাতে বলা হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই সব পুলিশ সদস্যকে সতর্ক থাকতে হবে। নির্বাচনকালীন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। পেশাদার সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরতে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঘাপটি মেরে থাকা পুলিশের কিছু সদস্যের কর্মকান্ড নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এই সংখ্যা প্রায় আড়াইশো মতো হবে। সংখ্যা আরও বাড়তেও পারে। ইতিমধ্যে তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিতও করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য পুলিশকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশে উদ্বেগ আছে। বৈধ অস্ত্রের সংখ্যার খোঁজ নেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্র কারবারিদের গ্রেপ্তার করতে বিশেষ অভিযান চালাতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযানের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। হুট করেই আমরা বিশেষ অভিযান শুরু করব। কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন যথাসময়ে হবে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো মহল বা চক্র নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সতর্ক আছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন) আনোয়ার হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের সবধরনের প্রস্তুতি আছে। দাগি সন্ত্রাসীসহ অন্য অপরাধীদের ধরা ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অভিযান চালানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
পুলিশ সূত্র জানায়, আড়াইশো পুলিশ কর্মকর্তার কর্মকান্ড নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের মোবাইল নম্বর সার্বক্ষণিক ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ রাখা হচ্ছে। নজরদারির মধ্যে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সুপার, অ্যাডিশনাল পুলিশ সুপার, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর আছেন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সাপোর্ট দেওয়া আমাদের কাজ না। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র ও যানবাহন ক্রয় করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৫০ লাখের মতো রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড কেনা হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে আসবে বলে আশা করছি। ডিএমপি, সিএমপি, কেএমপি, আরএমপি, বিএমপি, এসএমপি, আরপিএমপি, জিএমপি কমিশনার, বিশেষ শাখা (এসবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ, পিবিআই, টুরিস্ট পুলিশ, এটিইউ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, এপিবিএন, হাইওয়ে, শিল্পাঞ্চল পুলিশ প্রধান, সব অ্যাডিশনাল আইজিপি, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রংপুর রেঞ্জে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি পাঠানো হবে। ইতিমধ্যে ইউনিট প্রধানরা পুলিশ সদর দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন। বিষয়টি আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারবিরোধীরা নানা ষড়যন্ত্র করছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছে তারা। বিএনপি আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও করছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করছে। যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। আর এসব মোকাবিলা করতে পুলিশকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।